Social Welfare
রাষ্ট্রীয়য় একতা দিবস জাতীয় চেতনার এক স্তম্ভ
Posted On:
30 OCT 2025 11:48AM
৩০ অক্টোবর ২০২৫
মূল বিষয়সমূহ
* প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর পালিত হয় ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ হিসাবে। এই দিনে স্বাধীন ভারতের ঐক্যের প্রতিষ্ঠাতা সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদানকে স্মরণ করা হয়। দেশে নানা কাঠিন্যের মাঝেও এটি ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’-র বার্তা বহন করে।
* ২০২৫-এ সর্দার প্যাটেলের জন্মের ১৫০ বছর পালিত হবে।
* প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেভাড়িয়ার একতা নগরে ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’-এর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
* প্রতিবছর ‘রান ফর ইউনিটি’ ও ‘ইউনিটি মার্চ’-এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে সকল নাগরিক এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম ও সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা প্রসারিত হয়।
ভূমিকা
রাষ্ট্রীয় একতা দিবস, বা ‘ন্যাশনাল ইউনিটি ডে’, প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর পালিত হয় ভারতের ঐক্যের কারিগর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে। এই দিনটিতে স্বাধীন ভারতের জাতীয় ও রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্মরণ করা হয়।

রাষ্ট্রীয় একতা দিবস আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব, শান্তি ও অখণ্ডতা রক্ষায় ঐক্যের গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়। এই দিনে নাগরিকদের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আহ্বান জানানো হয়।
ভারত সরকার ২০১৪ এ সরদার প্যাটেলের জাতি গঠনের প্রতি অসামান্য অবদানকে সম্মান জানাতে এই দিনটি পালনের ঘোষণা করে। পরের বছর, ৩১ অক্টোবর ২০১৫-র রাষ্ট্রীয় একতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ কর্মসূচির সূচনা করেন। এর উদ্দেশ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ভাষাগত বন্ধন আরও বলিষ্ঠ করা।
এরপর থেকে একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রক, রাজ্য সরকার, বিদ্যালয়, কলেজ ও যুব সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দেশজুড়ে ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে থাকে।
এ বছর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী হওয়ায় জাতীয় ঐক্য দিবসের উদযাপন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রাতিষ্ঠানিক ঐতিহ্য
স্বাধীন ভারতের প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ও গৃহমন্ত্ৰী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল স্বাধীনতার পর দেশের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তাঁর ওপর ছিল প্রায় ৫৬০-টিরও বেশি দেশীয় রাজ্য বা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল-কে সংযুক্ত করার দায়িত্ব। এই রাজ্যগুলির আওতায় তখন ভারতের মোট ভূখণ্ড ও জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ।
ভারত স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী এসব রাজ্যের শাসকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন তাঁরা ভারতে যোগ দেবেন, পাকিস্তানে যোগ দেবেন, না স্বাধীন থাকবেন।
সর্দার প্যাটেল কূটনীতি ও প্রয়োজনে দৃঢ় প্রশাসনিক ব্যবস্থার মেলবন্ধন ঘটিয়ে বিভাজনকে প্রতিহত করেছিলেন। এর ফলে, আধুনিক ভারতের অখণ্ডতা নিশ্চিত হয়।
তাঁর এই প্রচেষ্টা দেশে সম্ভাব্য বিভাজন রোধ করে ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করে।
বিভিন্ন সংকটময় বিভাজনের সময় দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছিল।
তিনি দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা রক্ষার প্রয়োজনে এক সবল পরিকাঠামো হিসেবে ‘অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস’-এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।


এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত : সর্দার প্যাটেলের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলা
“এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত বা ইবিএসবি উদ্যোগ ৩১ অক্টোবর, ২০১৫-এ সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪০-তম জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষিত এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। এই কর্মসূচি সর্দার প্যাটেলের ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বহন করে। এটি দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়াকে উৎসাহিত করে এবং ভারতের বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যকে উদযাপন করে।
এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্যসমূহ—
* নাগরিকদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করা।
* রাজ্যগুলির মধ্যে পরিকল্পিত পারস্পরিক সংযোগের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যকে সবল করা।
* ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির প্রদর্শন ও প্রশংসা করা।
* স্থায়ী অংশীদারিত্ব গঠন করা।
* বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে পারস্পরিক শিক্ষা ও শ্রেষ্ঠ অনুশীলন বিনিময়কে উৎসাহিত করা।
“এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত” কর্মসূচি বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ধারণাকে বাস্তব রূপ দেয়। এটি ভাষা, সংস্কৃতি ও শিক্ষার বিনিময়ের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় একতা দিবসের বার্তা শুধু একটি দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, সারা বছর ধরে এক অবিচ্ছিন্ন জাতীয় সংহতির আন্দোলনের রূপ নেয়।
একতা দিবস থেকে অনুপ্রাণিত ইবিএসবির কিছু উদ্যোগ ও অনুষ্ঠানঃ
* ভাষা সঙ্গম অ্যাপ – ২২-টি সরকারি ভারতীয় ভাষায় প্রতিদিন ১০০-টিরও বেশি বাক্য শেখার জন্য তৈরি।
* সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী ও খাদ্য উৎসব – দেশের নানা প্রান্তের সংস্কৃতি ও রন্ধনশৈলীর মিলনমেলা।
* ছাত্র বিনিময় কর্মসূচি "যুব সঙ্গম” ও স্কুল-কলেজে গঠিত ইবিএসবি ক্লাব রাজ্যগুলির মধ্যে ছাত্র-যুবকদের আদানপ্রদানকে উৎসাহিত করে।
* কাশী তামিল সঙ্গম – কাশী ও তামিলনাড়ুর মধ্যে সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক বন্ধনকে উদযাপন করে।
* ডিজিটাল ও জনসংযোগের উদ্যোগ– মাই ভারত ডিজিটাল পোর্টাল ও ইবিএসবি কুইজ প্রতিযোগিতা নাগরিকদের অনলাইনে যুক্ত করে ঐক্য, দেশপ্রেম ও সাংস্কৃতিক জ্ঞানের প্রচার করে।
* ইবিএসবি পোর্টাল জাতীয় ঐক্য দিবসের ভাবনাকে ডিজিটাল মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যায়। এখানে আন্তঃরাজ্য সাংস্কৃতিক বিনিময়, যুব কার্যক্রম ও বিভিন্ন মন্ত্রকের উদ্যোগ নথিভুক্ত থাকে। এই পোর্টাল সারা বছর ধরে “দেখো নিজের দেশ” (পর্যটন) ও দেশীয় ক্রীড়া কর্মসূচির মতো বিভিন্ন উদ্যোগ প্রদর্শন করে। ইবিএসবি অয়ালের মাধ্যমে প্রতি মাসে ভারতের বৈচিত্র্য ও সম্মিলিত পরিচয়কে তুলে ধরা হয়।
২০২৫-এর গুরুত্ব: সর্দার প্যাটেলের ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী
এই বছরটিকে বছরব্যাপী জাতীয় উৎসব হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। এই মাইলফলক সরদার প্যাটেলের ভাবধারার স্থায়ী প্রাসঙ্গিকতাকে নতুন করে স্মরণ করায়, বিশেষত এমন সময়ে যখন বিশ্বজুড়ে ঐক্য ও সামাজিক সম্প্রীতি নানা কাঠিন্যের সম্মুখীন।
জাতীয় ঐক্য দিবসের চেতনা “এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত”-এর নীতির সঙ্গেই গভীরভাবে যুক্ত, যেখানে সাংস্কৃতিক বিনিময়, ভাষাগত মূল্যায়ন ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে বন্ধনকে আরও দৃঢ় করা হয়। এই দুই উদ্যোগ একত্রে “বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্য”-র ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করে, এবং জাতীয় ঐক্যকে উৎসব নয়, চলমান জন-আন্দোলনে পরিণত করে।
৩১ অক্টোবর সকাল প্রায় ৮টায় প্রধানমন্ত্রী স্ট্যাচু অফ ইউনিটিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এর পর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় ঐক্য দিবস উদযাপন অনুষ্ঠিত হবে।

সরদার@১৫০ ঐক্য যাত্রা
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রক ‘মাই ভারত’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সারা দেশে এক বিশাল ঐক্য যাত্রা আয়োজন করেছে। এর উদ্দেশ্য তরুণদের মধ্যে ঐক্যের চেতনা, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলা। এই উদ্যোগের মূল ভাবনা ‘এক ভারত, আত্মনির্ভর ভারত’।
এই কর্মসূচি ৬ অক্টোবর, ২০২৫ এ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডঃ মনসুখ মাণ্ডব্য ‘মাই ভারত’ পোর্টালে উদ্বোধন করেন। সামাজিক মাধ্যমে রিলস প্রতিযোগিতা, প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা এবং ‘সরদার@১৫০ ইয়ং লিডার্স’ কর্মসূচি এর অংশ। নির্বাচিত ১৫০ জন তরুণ পথিকৃৎ জাতীয় পদযাত্রায় অংশ নেবেন।
ঐক্য যাত্রা দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম পর্ব চলবে ৩১ অক্টোবর থেকে ২৫ নভেম্বর, পর্যন্ত। এই সময়ে দেশের প্রতিটি সংসদীয় কেন্দ্রের অন্তর্গত প্রতিটি জেলায় পদযাত্রা হবে। তার আগে সর্দার প্যাটেলের জীবন ও অবদান নিয়ে প্রবন্ধ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সেমিনার ও পথনাট্য আয়োজিত হবে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে।
পদযাত্রার পাশাপাশি চলবে জলাশয় পরিচ্ছন্নতা অভিযান, “সরদার উপবন” উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, মহিলাদের কল্যাণ শিবির, যোগ ও স্বাস্থ্য শিবির, এবং “ভোকাল ফর লোকাল” প্রচার অভিযানের মত নানা সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি।


রাষ্ট্রীয় একতা পদযাত্রা চলবে ২৬ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই যাত্রা সরদার প্যাটেলের জন্মস্থান গুজরাটের করমসদ থেকে কেভাডিয়ার স্ট্যাচু অফ ইউনিটি পর্যন্ত ১৫২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে। এনএসএস ছাত্রছাত্রী, এনসিসি ক্যাডেট, মাই ভারত স্বেচ্ছাসেবক ও তরুণরা বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মশিবিরে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন। যাত্রার সঙ্গে একটি প্রদর্শনীতে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সরদার প্যাটেলের জীবনগাথা তুলে ধরা হবে।
ঐক্যের জন্য দৌড়
রাষ্ট্রীয় একতা দিবস উপলক্ষে সারা দেশে অনুষ্ঠিত প্রধান কর্মসূচি হল, “ঐক্যের জন্য দৌড়”। এই প্রতীকী ম্যারাথন জাতীয় সংহতির পথে সম্মিলিত যাত্রার প্রতীক।
২০২৫ এ এই দৌড় ৩১ অক্টোবর প্রধান অনুষ্ঠানের আগেই অনুষ্ঠিত হবে। দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেবেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রাজধানীতে এই দৌড়ের সূচনা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমগ্র দেশের নাগরিকদের এই “ঐক্যের জন্য দৌড়”-এ অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সমাপ্তি
রাষ্ট্রীয় একতা দিবস আমাদের সর্দার প্যাটেলের দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি অসংখ্য দেশীয় রাজ্যকে একত্র করে এক ঐক্যবদ্ধ ভারতের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর সেই ভিত্তিই আজও দেশের অগ্রগতির মূল স্তম্ভ।
এই দিবসের অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিক শ্রদ্ধা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে শপথ, পদযাত্রা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মাধ্যমে সমসাময়িক নাগরিকদের স্বক্রিয় অংশগ্রহণ। এই উদযাপন কেবল অতীতের কৃতিত্ব স্মরণ নয়, এটি আধুনিক বিভাজনের প্রবণতাকেও প্রতিহত করে “এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত”-এর আদর্শকে বাস্তবায়িত করে।
রাষ্ট্রীয় একতা দিবস প্রতীকী হলেও, এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত কর্মসূচি সারা বছর নানা সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঐক্যের সেই বার্তাকে ছড়িয়ে দেয় । এই ধারাবাহিক উদ্যোগগুলি “বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্য”-র চেতনাকে সারা বছর জীবিত রাখে।
তথ্যসূত্র:
Press Information Bureau:
Ministry of Youth Affairs & Sports
Government of India
Click here to see PDF
******
SSS/RS/...
(Backgrounder ID: 155821)
Visitor Counter : 7
Provide suggestions / comments