Social Welfare
ভারতের ধ্রুপদী ভাষা
ভারতের ভাষাগত ঐতিহ্য সংরক্ষণ
Posted On:
27 OCT 2025 10:02AM
অক্টোবর ২৭, ২০২৫
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
২০২৪ সালের ০৩ অক্টোবর ভারত সরকার মরাঠি, পালি, প্রাকৃত, অসমিয়া এবং বাংলা ভাষাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’ মর্যাদা প্রদান করে।
২০২৫ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত, মোট ১১-টি ভারতীয় ভাষা ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেয়েছে।
এই মর্যাদা প্রাপ্তির আগে ২০০৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ছটি ভারতীয় ভাষা - তামিল, সংস্কৃত, কন্নড়, তেলুগু, মালয়ালম ও ওড়িয়া - ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেয়েছিল।
ভূমিকা
ভারতে এক সমৃদ্ধ, বৈচিত্র্যময় ভাষাগত ঐতিহ্য রয়েছে, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ভাষা ও উপভাষা প্রচলিত। ভারত সরকার নানান নীতি, কর্মসূচি এবং উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের এই ভাষাগত ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য কাজ করে। এই ধরনের স্বীকৃতি ও প্রসারের একটি মাধ্যম হল, যেসব ভাষার প্রাচীন শিকড় রয়েছে এবং যা হাজার হাজার বছর ধরে সাহিত্য, দর্শন ও সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার বহন করে ভারতের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে রূপ দিয়েছে, সেগুলিকে "ধ্রুপদী ভাষা"-এর মর্যাদা প্রদান করা।
ভারত সরকার সুনির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড পূরণকারী ভাষাকে "ধ্রুপদী ভাষা"-র মর্যাদা দেয় এবং এই ভাষাগুলির সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য সহায়তা প্রদান করে। ২০২৪ সালের ০৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মরাঠি, পালি, প্রাকৃত, অসমীয়া এবং বাংলাকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অনুমোদন দেয়, যার ফলে দেশে ধ্রুপদী ভাষার মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১১।
ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা কেন গুরুত্বপূর্ণ
কোন ভাষাকে ধ্রুপদী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হল তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং ভারতের সাংস্কৃতিক ও মননগত পরিচয়ের উপর তার গভীর প্রভাবকে সম্মান জানানোর একটি উপায়। এই মর্যাদা হাজার হাজার বছর ধরে প্রাচীন জ্ঞান, দর্শন ও মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও স্থানান্তরে ভাষাগুলির ভূমিকাকে স্বীকার করে।
এই মর্যাদা ভাষাগুলির শুধুমাত্র মর্যাদা বৃদ্ধি করে না, বরং এই ভাষাগুলিকে সুরক্ষিত, প্রচলিত এবং আরও গভীর গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তাও প্রদান করে। এর ফলে নিশ্চিত করা সম্ভব হয় যে এই ভাষাগুলি বর্তমান জগতেও নিজেদের গুরুত্ব বজায় রাখবে।
কীসের ভিত্তিতে একটি ভাষা 'ধ্রুপদী' হয়
ভারত সরকার, সংস্কৃতি মন্ত্রকের মাধ্যমে এবং ভাষাগত ও ঐতিহাসিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে, একটি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে মনোনীত করার জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
একটি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করার জন্য যে মানদণ্ডগুলি রয়েছে, সেগুলি নিম্নরূপ:
পুরোনো পাঠ্য বা নথিভুক্ত ইতিহাসের প্রাচীনত্ব, যা ১,৫০০ থেকে ২,০০০ বছর সময়কাল জুড়ে বিস্তৃত।
প্রাচীন সাহিত্য বা পাঠ্যের একটি সম্ভার, যা সেই ভাষার প্রজন্মের বক্তাদের দ্বারা ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত।
কবিতা, শিলালিপি এবং উৎকীর্ণলিপির প্রমাণ ছাড়াও জ্ঞানমূলক পাঠ্য, বিশেষত গদ্য পাঠ্যের উপস্থিতি।
ধ্রুপদী ভাষা এবং তার সাহিত্যকে অবশ্যই তার বর্তমান রূপ থেকে আলাদা হতে হবে বা মূল ভাষা থেকে উদ্ভূত পরবর্তী রূপগুলির সঙ্গে অবিচ্ছিন্নতা প্রদর্শন করতে হবে।
ভারতের ভাষাগত ঐতিহ্যের বিস্তার: ২০২৪ সালের নতুন সংযোজন
২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে মোট ছয়টি ভাষাকে - তামিল, সংস্কৃত, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম এবং ওড়িয়া - ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালের ০৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মরাঠি, পালি, প্রাকৃত, অসমিয়া এবং বাংলা ভাষাকে এই তালিকায় যুক্ত করার অনুমোদন দেয়, যার ফলে স্বীকৃত ধ্রুপদী ভাষার মোট সংখ্যা ১১-তে পৌঁছায়।
মারাঠি
মারাঠি একটি ভারতীয়-আর্য ভাষা, যা প্রধানত ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে কথিত হয়। এটির এক হাজার বছরেরও বেশি সময়ের সমৃদ্ধ সাহিত্যিক ইতিহাস রয়েছে। প্রায় ১১ কোটি স্থানীয় বক্তা নিয়ে মারাঠি বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ১৫-টি ভাষার মধ্যে অন্যতম।
এই ভাষার মূল শিকড় ২,৫০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন, যা প্রাচীন মহারাঠঠি, মারাহঠঠি, মহারাষ্ট্রী প্রাকৃত এবং অপভ্রংশ মারাঠির মতো ভাষাগুলি থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ভাষাটি দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেলেও, বিভিন্ন ঐতিহাসিক পর্যায় জুড়ে এটির অবিচ্ছিন্নতা বজায় রেখেছে।
আধুনিক মারাঠি এই অঞ্চলে কথিত প্রাচীন ভাষাগুলি থেকে বিবর্তিত হয়েছে। এর সূত্রপাত ঘটে মহারাষ্ট্রীয় প্রাকৃত ভাষা থেকে, যা ছিল সাতবাহন যুগে ( দ্বিতীয় খ্রিষ্টপূর্ব থেকে খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) প্রচলিত প্রাকৃত ভাষাগুলির একটি উপভাষা।
মারাঠি সাহিত্যের অবদান
'গাথাসপ্তশতী' হল মারাঠি সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন , যা প্রায় ২,০০০ বছরের পুরোনো এবং এটি প্রাথমিক মরাঠি কবিতার উৎকর্ষকে তুলে ধরে।
এটি সাতবাহন রাজা হাল-এর দ্বারা সংকলিত- কবিতার একটি সংকলন, যা প্রথম খ্রিষ্টাব্দে তৈরি হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। এরপরে প্রায় ৮০০ বছর আগে মারাঠি যখন একটি পরিণত ভাষাগত স্তরে পৌঁছায়, তখন 'লীলাচরিত্র' এবং 'জ্ঞানেশ্বরী' গ্রন্থগুলির উদ্ভব হয়।
পাথরের বহু শিলালিপি, তাম্রপত্র, পাণ্ডুলিপি এবং পুরোনো ধর্মীয় গ্রন্থাবলী মারাঠি ভাষার সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ক্ষেত্রে চমৎকারভাবে প্রদর্শন করে।
নানাঘাট শিলালিপিটি একটি অসাধারণ প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ, যা ২,৫০০ বছরেরও পূর্বে মারাঠির ব্যবহারের সাক্ষ্য বহন করে।
এছাড়াও, বিনয়পিটক, দীপবংস এবং মহাবংসের মতন প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে মারাঠির উল্লেখ পাওয়া যায়, এবং কালিদাস ও বররুচির মত দিকপাল সাহিত্যিকদের রচনাতেও এই ভাষার নাম রয়েছে।
সন্ত জ্ঞানেশ্বর, নামদেব এবং তুকারামের মত সাধক কবিদের কাজ মারাঠির সাহিত্যিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে এবং তাঁদের এই অবদানগুলি আজও ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
পালি ভাষা
পালি ভাষার অধ্যয়ন প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য অপরিহার্য, কারণ, এর সাহিত্য অতীত সম্পর্কে আলোকপাত করে এমন মূল্যবান উপাদান ধারণ করে। বহু পালি গ্রন্থ এখনও এমন পাণ্ডুলিপিতে লুকিয়ে আছে, যেগুলি সহজে প্রবেশযোগ্য নয়।
শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের মত বৌদ্ধপ্রধান দেশগুলিতে, এমনকি জাপান, কোরিয়া, তিব্বত, চিন ও মঙ্গোলিয়ার মতো যেসব অঞ্চলে অধিকাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বাস করেন, সেখানেও পালি ভাষার চর্চা এখনও অব্যাহত আছে।
পালি ভাষার প্রাচীনতম উল্লেখ বৌদ্ধ পণ্ডিত বুদ্ধঘোষের রচনাগুলিতে পাওয়া যায়।
পালি ভাষায় সাহিত্য অবদান
পালি হল বিভিন্ন উপভাষা দিয়ে বোনা এক সমৃদ্ধ বয়নশিল্প, যা প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধ ও জৈন সম্প্রদায় তাদের পবিত্র ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। গৌতম বুদ্ধ, যিনি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে তাঁর ধর্মপোদেশগুলি প্রচারের জন্য পালি ভাষা ব্যবহার করতেন, যার ফলে, এটি শিক্ষার একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে। বৌদ্ধ শাস্ত্রীয় সাহিত্যের সমগ্র সংগ্রহ পালি ভাষাতেই লেখা, যার মধ্যে ত্রিপিটক (যার অর্থ "তিনটি ডালি") হল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
প্রথম ডালি, অর্থাৎ বিনয় পিটক - বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য মঠের নিয়মাবলী বর্ণনা করে, যা নৈতিক আচরণ এবং সম্প্রদায়গত জীবনযাপনের একটি কাঠামো প্রদান করে।
দ্বিতীয় ডালি, সুত্ত পিটক - বুদ্ধের বক্তৃতা ও কথোপকথনের এক অমূল্য ভান্ডার, যেখানে তাঁর প্রজ্ঞা ও দার্শনিক অন্তর্দৃষ্টিগুলি নিহিত রয়েছে।
সবশেষে, অভিধর্ম পিটক - নীতিশাস্ত্র, মনোবিজ্ঞান এবং জ্ঞানতত্ত্ব সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, যা মন ও বাস্তবতার এক গভীর বিশ্লেষণ চিহ্ণিত করে।
পালি সাহিত্যের অন্তর্গত - জাতকের কাহিনী যা বোধিসত্ত্ব বা ভবিষ্যৎ বুদ্ধ হিসেবে বুদ্ধের পূর্ববর্তী জীবনকালের অশাস্ত্রীয় কাহিনি। এই গল্পগুলি ভারতের সাধারণ ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত, যা ভাগ করা নৈতিক মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যগুলিকে প্রতিফলিত করে। সব মিলিয়ে, এগুলি ভারতীয় চিন্তা ও আধ্যাত্মিকতা সংরক্ষণে পালি ভাষার ভূমিকা তুলে ধরে।
প্রাকৃত
প্রকৃত মধ্য ভারতীয়-আর্য ভাষাগুলির একটি বিস্তৃত পরিসর, যা ভারতের সমৃদ্ধ ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বোঝার জন্য অপরিহার্য। এই প্রাচীন ভাষাটি শুধুমাত্র বহু আধুনিক ভারতীয় ভাষার ভিত্তি হিসেবেই কাজ করে না, এটি এই উপমহাদেশের ঐতিহাসিক আখ্যানকে রূপদানকারী নানা ঐতিহ্য এবং দর্শনকেও ধারণ করে।
আদি শঙ্করাচার্যের মতে, "বাচঃ প্রাকৃত সংস্কৃতৌ শ্রুতিগিরো" - অর্থাৎ, প্রাকৃত এবং সংস্কৃত ভাষাই হল ভারতীয় প্রজ্ঞার প্রকৃত বাহন।
প্রাকৃত ভাষার অবদান
ভাষাবিদ ও পণ্ডিতদের মধ্যে প্রাকৃতের গুরুত্ব ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। পাণিনি, চন্দ, বররুচি এবং সামন্তভদ্রের মতো আচার্যগণ - এর ব্যাকরণকে সুসংগঠিত করেছিলেন। মহাত্মা বুদ্ধ ও মহাবীর তাঁদের ধর্মোপদেশ প্রচারের জন্য প্রাকৃত ভাষা ব্যবহার করতেন, যা তাঁদের বাণী সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল।
আঞ্চলিক সাহিত্যে এর প্রভাব সুস্পষ্ট; প্রাকৃতের নাটকীয়, কাব্যিক এবং দার্শনিক রচনাগুলি জ্যোতিষ, গণিত, ভূতত্ত্ব, রসায়ন ও উদ্ভিদবিদ্যার মতো ক্ষেত্রগুলিতে অবদান রেখেছে। ভারতীয় ভাষাতত্ত্ব ও উপভাষাগুলির জন্য প্রাকৃত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি এক সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার বহন করে। রাষ্ট্রভাষা হিন্দির ঐতিহ্য প্রাকৃত-অপভ্রংশ থেকেই বিকশিত হয়েছে।
এমনকি বৈদিক ভাষাতেও প্রাকৃতের উল্লেখযোগ্য উপাদান দেখা যায়, যা ভারতের ভাষাগত বিবর্তন বোঝার জন্য এই ভাষা অধ্যয়নের গুরুত্বকে তুলে ধরে। প্রাকৃত শিলালিপিগুলি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে কাজ করে, যা ভারতের অতীত সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। প্রাক-মৌর্য যুগ থেকে শুরু করে সম্রাট অশোক এবং খারবেলের শিলালিপিগুলি প্রধানত প্রাকৃত ভাষাতেই রচিত।
আচার্য ভরতমুনির প্রখ্যাত গ্রন্থ 'নাট্যশাস্ত্র'-এ প্রাকৃত ভাষাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতীয়দের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা শিল্পময় প্রকাশভঙ্গি এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এই স্বীকৃতি সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে প্রাকৃতের সহজলভ্যতা ও গুরুত্বকে তুলে ধরে।
হিন্দি, বাংলা এবং মারাঠির মত ভাষাগুলির বিকাশ প্রাকৃত থেকেই শুরু হয়েছে, যা আধুনিক ভাষাগুলির উৎস ও বিবর্তন সম্পর্কে একটি ব্যাপক ধারণা পেতে প্রাকৃত সাহিত্য বোঝার গুরুত্বকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে।
অসমিয়া
অসমের এই সরকারি ভাষার শিকড় সংস্কৃতের মধ্যে প্রোথিত, এবং এর বিকাশকাল সপ্তম খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে, এর সরাসরি পূর্বপুরুষ হল মগধি অপভ্রংশ যা পূর্ব প্রাকৃতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত একটি উপভাষা।
ভাষাবিদ জি.এ. গ্রিয়ারসন উল্লেখ করেছেন যে মগধি ছিল এই অঞ্চলের প্রধান উপভাষা, আর এর পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিরূপ, প্রাচ্য অপভ্রংশ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রসারিত হয়ে শেষ পর্যন্ত আধুনিক বাংলায় বিবর্তিত হয়। প্রাচ্য অপভ্রংশ যখন পূর্ব দিকে প্রসারিত হয়, তখন তা গঙ্গার উত্তর দিক অতিক্রম করে অসম উপত্যকায় পৌঁছায় এবং সেখানেই তা অসমিয়া ভাষায় রূপান্তরিত হয়।
অসমিয়া ভাষার প্রাচীনতম নথিভুক্তের উল্লেখ পাওয়া যায় কথা গুরুচরিতে। "অসমিয়া" শব্দটির ব্যুৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে; কিছু পণ্ডিত এটিকে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যুক্ত করেন, আবার অন্যেরা এটিকে ছয় শতাব্দী ধরে অঞ্চলটি শাসন করা অহম রাজবংশের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন।
মহাভারতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, যার মধ্যে উত্তরবঙ্গও অন্তর্ভুক্ত, তাকে 'প্রাগজ্যোতিষপুর' নামে এবং চতুর্থ খ্রিস্টাব্দে সমুদ্রগুপ্তের শিলালিপিতে 'কামরূপ' নামে উল্লেখ করা হয়েছে। "আসাম" শব্দটি "অসম" থেকে উদ্ভূত একটি ইংরেজি রূপ, যা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাকে নির্দেশ করে; এবং এটি থেকেই এই অঞ্চলে প্রচলিত ভাষাকে বোঝাতে "অসমিয়া" শব্দটি এসেছে।
অষ্টম খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই অসমিয়া ভাষা বেশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল।
অসমিয়া, ওড়িয়া এবং বাংলা - এই তিনটি ভাষারই উৎপত্তি একটি উপভাষা মগধি অপভ্রংশ থেকে, অর্থাৎ এদের সাধারণ ভাষাগত ঐতিহ্য রয়েছে।
অসমিয়া ভাষার সাহিত্যিক অবদান
প্রাক-আধুনিক অসমিয়া লিপির প্রাচীনতম উদাহরণ পাওয়া যায় চর্যাপদে, যা হল বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের দ্বারা রচিত প্রাচীন বৌদ্ধ তান্ত্রিক পাঠ্য এবং যার রচনাকাল অষ্টম থেকে দ্বাদশ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে।
চর্যাপদ অসমিয়া এবং অন্যান্য মগধি ভাষাগুলির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বহন করে, যা একাধিক ভারতীয় ভাষার বিবর্তনের পর্যায়গুলি উন্মোচিত করে।
চর্যাপদের শব্দভান্ডারে এমন শব্দ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেগুলি সুস্পষ্টভাবে অসমীয়া। এছাড়াও, ধ্বনিতত্ত্ব এবং রূপতত্ত্বের দিক থেকে, এই শব্দভান্ডারটি সাধারণ অসমিয়া শব্দগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ, যার মধ্যে বহু শব্দই আধুনিক ভাষাতেও রয়েছে।
বাংলা
ভারতের অন্যতম প্রধান ভাষা হিসেবে বাংলা এই উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। বাংলার কবি, সাহিত্যিক ও পণ্ডিতগণ শুধুমাত্র বাংলার সাংস্কৃতিক পরিচয়ই নয়, ভারতের জাতীয় চেতনাকেও রূপ দিয়েছেন।
বাংলা ভাষার প্রাচীনতম রচনাগুলি দশম থেকে দ্বাদশ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। সংস্কৃত মহাকাব্যগুলির প্রাচীনতম অনুবাদ থেকে শুরু করে উনিশ ও বিংশ শতাব্দীর বিপ্লবী লেখালেখি পর্যন্ত - বাংলা সাহিত্য সামাজিক, রাজনৈতিক এবং বৌদ্ধিক আন্দোলনগুলিকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে এক প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলা ভাষা, অসমিয়া ও ওড়িয়া ভাষার পাশাপাশি, মগধি, মৈথিলী এবং ভোজপুরীর মত ভাষাগুলির সঙ্গে মিলে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে একটি ভাষাগত গোষ্ঠী তৈরি করে। এর সরাসরি উৎস খুঁজে পাওয়া যায় মগধি প্রাকৃত-এ, যা প্রাচ্য প্রাকৃত নামেও পরিচিত এবং যার উৎপত্তি মগধ (বা বিহার) থেকে।
গৌড়-বঙ্গের ভাষা অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় ভাষাগুলির সঙ্গে মগধ অপভ্রংশ থেকে বিকশিত হয়েছে।
বংশানুক্রমিকভাবে দেখলে, বাংলা ভাষা ভারতীয় আর্য ভাষাগুলি থেকে এসেছে, যা ভারতীয়-ইউরোপীয় পরিবারের ভারতীয়-ইরানীয় শাখার ভারতীয় উপ-শাখাসমূহের অন্তর্গত।
বাংলা ভাষার সাহিত্যিক অবদান
প্রাচীন বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন হিসেবে বর্তমানে পরিচিত চার-টি অধ্যাত্ম সঙ্গীত হলো চর্যাপদ, যা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দ্বারা রচিত। চর্যাপদের এই গানগুলির ভাষাগত এবং সাহিত্যিক উভয় প্রকার মূল্য রয়েছে। চর্যাপদের রচয়িতা বা সিদ্ধাচার্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন লুইপা, ভুসুকুপা, কাহ্নপা এবং সবরপা।
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম কাজগুলি দশম থেকে দ্বাদশ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়, যার সূচনা হয়েছিল বিখ্যাত সংস্কৃত মহাকাব্যগুলির অনুবাদের মাধ্যমে। ষোড়শ শতাব্দীটি ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যখন শ্রীচৈতন্যদেবের নেতৃত্বে ধর্মীয় সংস্কার এবং রঘুনাথ ও রঘুনন্দনের দ্বারা পবিত্র আইন প্রণয়ন উৎসাহিত হয়েছিল। পরবর্তী শতকগুলিতে মুকুন্দ রামের (যাঁকে প্রায়শই "বাংলার চসার" বলা হয়) মতো প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মাধ্যমে এবং পরে ভারতচন্দ্র ও রামপ্রসাদের মতো সাহিত্যিকদের হাতে মৌলিক রচনার বিকাশ ঘটে।
ঊনবিংশ শতাব্দী ছিল বাংলা সাহিত্যের এক সোনালি যুগ, যেখানে রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
সংবাদ কৌমুদী, সোমপ্রকাশ এবং বন্দেমাতরম-এর মতো সংবাদপত্রগুলি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যা জনসাধারণকে সংগঠিত করতে লিখিত শব্দের শক্তিকে তুলে ধরে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলায় উপন্যাস সাহিত্যের সূচনা করেন। অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, সুকান্ত ভট্টাচার্য এবং কাজী নজরুল ইসলামের মতো কবিরা সাহিত্য বিপ্লবে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন, যা স্বাধীনতা সংগ্রামে বেশি পরিমাণে ইন্ধন জুগিয়েছিল।
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর 'জয় হিন্দ' এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'বন্দেমাতরম'-এর মতো স্লোগানগুলি সমগ্র জাতিতে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল এবং প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত আমাদের জাতীয় সঙ্গীত 'জনগণমন' এবং বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয় গীতি 'বন্দেমাতরম' - উভয়ই বাঙালি কবিদের হাত ধরে এসেছে।
ধ্রুপদী ভাষাগুলির প্রসারের জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহ
ধ্রুপদী ভাষাগুলি-সহ সকল ভারতীয় ভাষার প্রসারের কাজটি শিক্ষা মন্ত্রকের ভাষা ব্যুরোর অংশ সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস-এর মাধ্যমে করা হয়। এছাড়াও, ধ্রুপদী ভাষাগুলির অধ্যয়ন ও প্রসারের জন্য বিশেষ কেন্দ্রগুলি স্বাধীনভাবে সিআইআইএল-এর অধীনে স্থাপন করা হয়েছে।
২০২০ সালে, সংস্কৃত ভাষার অধ্যয়নের প্রসারের জন্য সংসদীয় আইনের মাধ্যমে তিনটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। এগুলি হল - নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় এবং শ্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জাতীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় , আর তিরুপতিতে জাতীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় । এর পাশাপাশি, আদর্শ সংস্কৃত মহাবিদ্যালয় এবং শোধ সংস্থাগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
শাস্ত্রীয় তামিল সাহিত্যের প্রচার ও সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ধ্রুপদী তামিল প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রাচীন তামিল পাঠ্য অনুবাদ, গবেষণায় সহায়তা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও পণ্ডিতদের জন্য ধ্রুপদী তামিলে পাঠ্যক্রম প্রদানের কাজ করে।
ধ্রুপদী ভাষাগুলির অধ্যয়ন ও সংরক্ষণকে আরও সহায়তা করতে, মহীশূরে অবস্থিত সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস-এর অধীনে ধ্রুপদী কন্নড়, তেলুগু, মালয়ালম এবং ওড়িয়া ভাষার উৎকর্ষ কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
ধ্রুপদী ভাষা কেন্দ্রগুলির প্রধান কার্যাবলী ও উদ্দেশ্যসমূহ
ভারতের ধ্রুপদী ভাষা ও সাহিত্যসমূহের প্রচার, প্রসার ও সংরক্ষণ।
গবেষণা ও নথিভুক্তিকরণ।
রাজ্য সংগ্রহশালা এবং মহাফেজখানার সহযোগিতায় পাণ্ডুলিপিগুলির ডিজিটাল রূপান্তর।
বই, গবেষণা প্রতিবেদন এবং পাণ্ডুলিপিগুলির তালিকা প্রকাশ।
ধ্রুপদী পাঠ্যগুলিকে ভারতীয় ও বিদেশী ভাষায় অনুবাদ করা।
শ্রবণ ও দৃশ্যমান তথ্য নথিভুক্তিকরণ :
বিখ্যাত পণ্ডিত এবং ধ্রুপদী পাঠ্যগুলির উপর তথ্যচিত্র তৈরি।
ধ্রুপদী ভাষাগুলির সঙ্গে শিলালিপি, প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব , মুদ্রাঙ্কন এবং প্রাচীন ইতিহাসের সংযোগ স্থাপনকারী অধ্যয়নগুলির প্রচার।
ধ্রুপদী ঐতিহ্যের সঙ্গে স্থানীয় জ্ঞান ব্যবস্থাগুলিকে যুক্ত করে জ্ঞানতাত্ত্বিক গবেষণা পরিচালনা করা।
চেন্নাইয়ে অবস্থিত কেন্দ্রীয় ধ্রুপদী তামিল প্রতিষ্ঠান প্রারম্ভিক কাল থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তামিলের ধ্রুপদী পর্যায় সম্পর্কিত ব্যাপক গবেষণা করছে। এর মধ্যে রয়েছে তোলকাপ্পিয়াম-এর মতো প্রাচীনতম বিদ্যমান তামিল ব্যাকরণ গ্রন্থ, নট্টিরিনাই, পুরানানুরু, কার নার্পতু এবং অন্যান্য মোট ৪১-টি প্রাচীন তামিল গ্রন্থ।
এই কেন্দ্র বহুবিধ কার্যকলাপের মাধ্যমে তামিল ভাষার প্রাচীনত্ব নিয়ে অধ্যয়নের জন্য বহু-শৃঙ্খলাযুক্ত পণ্ডিতদের যুক্ত করছে। এই কাজগুলির মধ্যে রয়েছে: দ্রাবিড় তুলনামূলক ব্যাকরণ ও তামিল উপভাষাগুলির উপর গবেষণা চালানো, বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তামিল আসন প্রতিষ্ঠা করা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গবেষকদের স্বল্পমেয়াদী গবেষণা প্রকল্পের জন্য অনুদান প্রদান করা।
এই কেন্দ্রটি প্রাচীন তামিল গ্রন্থগুলিকে একাধিক ভারতীয় ও বিদেশী ভাষায় অনুবাদ করছে। এই প্রকল্পের অধীনে, তিরুক্কুরাল গ্রন্থটি ২৮-টি ভারতীয় ভাষা এবং ৩০-টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ভাষা-সহ ব্রেইল লিপিতেও অনুবাদিত হয়েছে। কেন্দ্রটি ধ্রুপদী তামিল গ্রন্থগুলিকে ব্রেইল লিপিতে প্রকাশ করছে এবং একটি ধ্রুপদী তামিল শব্দভান্ডার সংকলন করছে।
ধ্রুপদী তেলুগু অধ্যয়নের উৎকর্ষ কেন্দ্র, যা সিআইআইএল-এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত, অন্ধ্রপ্রদেশের এসপিএসআর নেল্লোরের ভেঙ্কটাচলম ক্যাম্পাস থেকে কাজ করে।
সিইএসসিটি বিস্তারিত তথ্য-সহ প্রায় ১০,০০০ ধ্রুপদী মহাকাব্যর একটি তথ্যভান্ডার সংকলন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নাটক, অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানার মন্দির এবং গ্রাম সংক্রান্ত নথি ইত্যাদি। সমস্ত তেলুগু শিলালিপি সম্পাদনা করে "তেলুগু শাসনালু" নামক একটি গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।
তেলুগু ভাষার প্রথম ব্যাকরণ 'অন্ধ্র শব্দ চিন্তামণি' এবং ছন্দ বিষয়ে পথিকৃৎ রচনা 'কবিজনশ্রামম' ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
ধ্রুপদী কন্নড় অধ্যয়নের উৎকর্ষ কেন্দ্র, যা সিআইআইএল-এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত, মহীশূরের মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি উৎসর্গীকৃত গ্রন্থাগার, সাংস্কৃতিক গবেষণাগার এবং নতুন সম্মেলন সুবিধা নিয়ে কাজ করে।
সিইএসসিকে বিভিন্ন কার্যক্রমের সূচনা করেছে, যেমন পথপ্রদর্শক আলোচনা এবং তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে ধ্রুপদী কন্নড় ভাষার প্রচার। কেন্দ্রটি চারটি মৌলিক ক্ষেত্রে কাজ করে: গবেষণা, শিক্ষণ, নথিভুক্তিকরণ, এবং প্রচার। তারা সাতটি বই প্রকাশ করেছে এবং আরও ২২-টি বই প্রকাশের জন্য প্রস্তুত। কবি-সাধক আন্নামাচার্য-এর লেখা প্রথম সঙ্গীত স্বরলিপি 'সংকীর্তন লক্ষণম' (যা মূলত সংস্কৃতে রচিত ছিল) কন্নড় ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে।
ধ্রুপদী ওড়িয়া অধ্যয়নের উৎকর্ষ কেন্দ্র যা সিআইআইএল এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত, ভুবনেশ্বরের ইস্টার্ন রিজিওনাল ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টারে অবস্থিত। কেন্দ্রটি ধ্রুপদী ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য প্রচার, প্রসার ও সংরক্ষণের পাশাপাশি, গবেষণা ও নথিভুক্তিকরণের কাজ হাতে নেয় এবং উৎসাহিত করে। এই কেন্দ্রটি ওড়িয়া-সহ ধ্রুপদী ভাষার উৎসগুলির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শিলালিপি বিশ্লেষণ, দেওয়ালচিত্রের ভাষাতাত্ত্বিক অধ্যয়ন, প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ, পুরোনো তালপাতার পাণ্ডুলিপি, এবং বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থ থেকে তথ্য সংকলন।
ধ্রুপদী মালয়ালম অধ্যয়নের উৎকর্ষ কেন্দ্র, যা সিআইআইএল-এর অধীনে স্থাপিত, কেরল সরকার প্রদত্ত তিরুরের (তিরুর, মালাপ্পুরম) তুঞ্চাথ এজুথাচান মালয়ালম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
উপসংহার
"বিরাসত ভি, বিকাশ ভি" - ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই অনুপ্রেরণামূলক মন্ত্রটি দেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং প্রগতিশীল উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার মূল নির্যাসকে তুলে ধরে। দেশের ধ্রুপদী ভাষাগুলি - সংস্কৃত, তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম এবং ওড়িয়া - এই দৃষ্টিভঙ্গির সজীব প্রতীক হিসেবে আমাদের সভ্যতার বৌদ্ধিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদগুলিকে চিহ্ণিত করে।
এছাড়াও, মারাঠি, পালি, প্রাকৃত, অসমিয়া এবং বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত ভারতের মনস্তাত্বিক ঐতিহ্যকে রূপ দিতে এই ভাষাগুলির অনবদ্য ভূমিকার এক গভীর স্বীকৃতিকে প্রতিফলিত করে।
সরকারের এই প্রয়াসের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, পণ্ডিত এবং তরুণ প্রজন্ম আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ভাষাগুলিকে সুরক্ষিত করার মাধ্যমে; প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী সাংস্কৃতিক আত্মনির্ভরতা এবং জাতীয় সংহতির বৃহত্তর ধারণাকে শক্তিশালী করছেন, যা 'আত্মনির্ভর ভারত' এবং সাংস্কৃতিক মূল-সম্পন্ন ভারত গড়ে তোলার উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁর এই উৎসর্গের মাধ্যমে ভারতের ঐতিহাসিক কণ্ঠস্বর এক আধুনিক, আত্মবিশ্বাসী ভারতে প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে।
তথ্যসূত্র:
PMO INDIA
https://www.pmindia.gov.in/en/news_updates/highlights-from-the-pms-address-on-the-79th-independence-day/
https://www.pmindia.gov.in/en/news_updates/cabinet-approves-conferring-status-of-classical-language-to-marathi-pali-prakrit-assamese-and-bengali-languages/
Ministry of Culture, Government of India
https://www.indiaculture.gov.in/
Ministry of Education, Government of India
https://ccrtindia.gov.in/resources/literary-arts/
https://www.slbsrsv.ac.in/faculties-and-departments/faculty-sahitya-and-sanskriti/department-prakrit
Press Information Bureau:
https://www.pib.gov.in/newsite/PrintRelease.aspx?relid=103014
https://www.pib.gov.in/FeaturesDeatils.aspx?NoteId=153317&ModuleId+=+2
https://www.pib.gov.in/FeaturesDeatils.aspx?NoteId=153318&ModuleId%20=%202
https://www.pib.gov.in/FeaturesDeatils.aspx?NoteId=153320&ModuleId=2
https://www.pib.gov.in/FeaturesDeatils.aspx?NoteId=153322&ModuleId%20=%202
https://www.pib.gov.in/FeaturesDeatils.aspx?NoteId=153315&ModuleId+=+2#_ftn1
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2061660
Click here to see PDF
****
SSS/AS....
(Backgrounder ID: 155757)
Visitor Counter : 4
Provide suggestions / comments