PIB Headquarters
azadi ka amrit mahotsav

জল জীবন মিশন

₹২.০৮ লক্ষ কোটি টাকার কেন্দ্রীয় বরাদ্দে ১৫.৭২ কোটি গ্রামীণ পরিবারে নলকূপের মাধ্যমে বিশুদ্ধ জলের সরবরাহ

Posted On: 26 OCT 2025 10:38AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

 

মূল বিষয়বস্তু

১৫.৭২ কোটি গ্রামীণ পরিবার এখন নিরাপদ নলকূপের জল পাচ্ছে।

মিশন শুরুর সময় (২০১৯ সালে) মাত্র ৩.২৩ কোটি পরিবার নলকূপের জল পেত। এরপর থেকে অতিরিক্ত ১২.৪৮ কোটি পরিবারকে সংযুক্ত করা হয়েছে—যা ভারতের অন্যতম দ্রুততম পরিকাঠামো সম্প্রসারণ প্রকল্প।

নির্মাণকালীন পর্যায়ে এই মিশনের মাধ্যমে ৩ কোটি কর্মবর্ষের সমপরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে প্রায় ২৫ লক্ষ নারীকে মাঠপর্যায়ে জল পরীক্ষার কিট ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র হিসাব অনুযায়ী, নিরাপদ পানীয় জলের সরবরাহের ফলে দেশে প্রায় ৪ লক্ষ ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও, নিরাপদ পানীয় জলের সর্বজনীন কভারেজের ফলে প্রায় ১.৪ কোটি "ডিসএবিলিটি অ্যাডজাস্টেড লাইফ ইয়ারস" (DALYs) বাঁচানো যাবে।

WHO আরও জানায়, প্রত্যেক গ্রামীণ পরিবারে নলকূপের সংযোগ প্রদান করলে প্রতিদিন প্রায় ৫.৫ কোটি ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে—যার অধিকাংশ বোঝা থেকে মুক্তি পাবেন নারীরা।

দেশের ২,৮৪৩-টি জল পরীক্ষাগার ২০২৫–২৬ সালে ৩৮.৭৮ লক্ষ নমুনা পরীক্ষা করেছে, যার মাধ্যমে জলের মান কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

ভূমিকা

জল জীবন মিশন (হর ঘর জল)-এর অধীনে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে, দেশের ৮১ শতাংশেরও বেশি গ্রামীণ পরিবার এখন পরিষ্কার নলকূপের জল পাচ্ছে। ২২ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত, ১৫.৭২ কোটিরও বেশি গ্রামীণ পরিবারে নিরাপদ পানীয় জল পৌঁছে গেছে, যা গ্রামীণ ভারতের সর্বজনীন জল নিরাপত্তার দিকে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই মিশনের অধীনে কেন্দ্র সরকার রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে ₹২,০৮,৬৫২ কোটি টাকার কেন্দ্রীয় সহায়তা অনুমোদন করেছে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুষ্ঠুভাবে ব্যয়িত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৫ আগস্ট ২০১৯ তারিখে এই মিশন উদ্বোধন করেন, যার লক্ষ্য ছিল, প্রত্যেক গ্রামীণ পরিবারে নলকূপের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা। সে সময়ে মাত্র ৩.২৩ কোটি পরিবার (১৬.৭১ শতাংশ) নলকূপের জল পেত। এরপর থেকে ১২.৪৮ কোটি অতিরিক্ত পরিবারকে সংযুক্ত করা হয়েছে—যা গ্রামীণ ভারতের ইতিহাসে অন্যতম দ্রুত বুনিয়াদি পরিকাঠামো সম্প্রসারণের উদাহরণ।

জল জীবন মিশনের লক্ষ্য শুধু জল সরবরাহ নয়, বরং শতাব্দী প্রাচীন কষ্টকর প্রথা—যেখানে মা-বোনেরা পরিবারের জন্য দূর থেকে জল আনতেন—তা থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া। এই মিশন তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে জীবনযাত্রায় সহজতা এবং আত্মমর্যাদার অনুভূতি যোগ করছে।

মিশনটি সুস্থায়ী উন্নয়ন ও সমাজের অংশগ্রহণের ওপর সমান গুরুত্ব দেয়। এতে উৎস সুস্থায়ীকরণ উদ্যোগ যেমন ধূসরজল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুনঃব্যবহার, জল সংরক্ষণ, এবং বৃষ্টির জল আহরণ অন্তর্ভুক্ত। এটি সম্প্রদায়ভিত্তিক পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হয়, যেখানে তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ (IEC) কার্যক্রমের মাধ্যমে সচেতনতা ও মালিকানার অনুভূতি সৃষ্টি করা হয়।

এই মিশনের উদ্দেশ্য একটি “জন আন্দোলন” (জন অংশগ্রহণে জল সংরক্ষণ আন্দোলন) গঠন করা, যাতে জল জাতীয় অগ্রাধিকারের অন্যতম মূল স্তম্ভে পরিণত হয়।

উদ্দেশ্য

জল জীবন মিশনের মূল লক্ষ্যসমূহের মধ্যে রয়েছে:

জল জীবন মিশনের অগ্রগতি (২২ অক্টোবর, ২০২৫ পর্যন্ত)

জল জীবন মিশন ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে, ভারতের প্রত্যেক গ্রামীণ পরিবারের ঘরে নিরাপদ ও পর্যাপ্ত পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।

জেলা পর্যায়ের অগ্রগতি:
দেশের ১৯২-টি জেলায় সমস্ত পরিবার, বিদ্যালয় এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নলকূপের জল পৌঁছে গেছে। এর মধ্যে ১১৬-টি জেলা গ্রামসভা অনুমোদনের মাধ্যমে যাচাই করে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদপ্রাপ্ত হয়েছে।

ব্লক, পঞ্চায়েত ও গ্রাম পর্যায়ে অগ্রগতি:

ব্লক: ১,৯১২-টি ব্লক পূর্ণ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবেদন দিয়েছে, যার মধ্যে ১,০১৯-টি সনদপ্রাপ্ত।

গ্রাম পঞ্চায়েত: ১,২৫,১৮৫-টি পঞ্চায়েত রিপোর্ট করেছে, যার মধ্যে ৮৮,৮৭৫-টি সনদপ্রাপ্ত।

গ্রাম: ২,৬৬,২৭৩-টি গ্রাম রিপোর্ট করেছে, যার মধ্যে ১,৭৪,৩৪৮-টি “হর ঘর জল” উদ্যোগের অধীনে সনদপ্রাপ্ত হয়েছে।

১০০% অন্তর্ভুক্তি অর্জনকারী রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ:
গোয়া, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দাদরা ও নগর হাভেলি ও দমন ও দিউ, হরিয়ানা, তেলেঙ্গানা, পুদুচেরি, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, মিজোরাম এবং অরুণাচল প্রদেশ — এই ১১-টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমস্ত গ্রামীণ পরিবারে নলকূপের মাধ্যমে জলের সংযোগ নিশ্চিত করেছে।

প্রাতিষ্ঠানিক কভারেজ:
দেশব্যাপী ৯,২৩,২৯৭-টি বিদ্যালয় এবং ৯,৬৬,৮৭৬-টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নলকূপের মাধ্যমে নিরাপদ জল সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে।

‘রিপোর্টেড’ অর্থে বোঝায়, সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জল সরবরাহ দপ্তর নিশ্চিত করেছে যে উক্ত প্রশাসনিক ইউনিটের সকল পরিবার, বিদ্যালয় ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নলকূপের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হচ্ছে।

‘সার্টিফাইড’ অর্থে বোঝায়, জল সরবরাহ দপ্তরের দাবির সত্যতা যাচাই করে গ্রামসভা প্রস্তাব পাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে উক্ত গ্রামে সমস্ত পরিবার, বিদ্যালয় ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সত্যিই নলকূপের মাধ্যমে জল পৌঁছেছে। জল সরবরাহ দপ্তর প্রথমে গ্রাম পঞ্চায়েতকে আনুষ্ঠানিক সনদ প্রদান করে, তার ভিত্তিতেই এই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

গুণমান নিশ্চয়তা ও পর্যবেক্ষণ

জল জীবন মিশনের অধীনে গ্রামীণ এলাকায় নিরাপদ পানীয় জলের মান নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী গুণমান নিশ্চয়তা ও মনিটরিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। ২০২৫–২৬ অর্থবছরে (২১ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত), মোট ২,৮৪৩-টি পরীক্ষাগার (২,১৮৪টি প্রাতিষ্ঠানিক ও ৬৫৯-টি জল পরিশোধন কেন্দ্রভিত্তিক) দেশের ৪,৪৯,৯৬১টি গ্রামে ৩৮.৭৮ লক্ষ জল নমুনা পরীক্ষা করেছে।

সমাজভিত্তিক অংশগ্রহণ উৎসাহিত করতে, ২৪.৮০ লক্ষ নারীকে ফিল্ড টেস্টিং কিট (FTK) ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যা ৫.০৭ লক্ষ গ্রামে কার্যকরভাবে প্রয়োগ হয়েছে। এই জননেতৃত্বাধীন পদ্ধতি জল দূষণ দ্রুত শনাক্ত করতে সহায়তা করে এবং গ্রামীণ জলমান পর্যবেক্ষণে স্থানীয় মালিকানা শক্তিশালী করে।

জল জীবন মিশনের প্রধান উপাদানসমূহ

জল জীবন মিশনের উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের জন্য নিম্নলিখিত উপাদানগুলি নির্ধারিত হয়েছে:

গ্রামভিত্তিক নলকূপ জল সরবরাহ ব্যবস্থা: প্রত্যেক গ্রামীণ পরিবারে নলকূপের সংযোগ নিশ্চিত করতে পাইপযুক্ত জল সরবরাহ পরিকাঠামো গঠন।

সুস্থায়ী পানীয় জলের উৎস: দীর্ঘমেয়াদে নির্ভরযোগ্য ও স্থায়ী জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে নতুন উৎস তৈরি ও বিদ্যমান উৎসের উন্নয়ন।

বাল্ক ওয়াটার ট্রান্সফার ও বিতরণ ব্যবস্থা: বৃহৎ জল স্থানান্তর, পরিশোধন কেন্দ্র ও বিতরণ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা।

জলমান উন্নয়নে প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপ: জল দূষণ বা মানের সমস্যা থাকলে প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান প্রয়োগ।

বিদ্যমান প্রকল্পের পুনর্গঠন (Retrofitting): সম্পন্ন বা চলমান প্রকল্পগুলিকে আপগ্রেড করে প্রত্যেক পরিবারে কার্যকর নলকূপ সংযোগ প্রদান (প্রতি ব্যক্তি প্রতি দিনে ন্যূনতম ৫৫ লিটার পরিষেবা মানে)।

ধূসরজল ব্যবস্থাপনা: ব্যবহৃত জল পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ও পুনর্ব্যবহার করে জল সংরক্ষণকে উৎসাহিত করা।

সম্প্রদায় সক্ষমতা বৃদ্ধি: সুস্থায়ী জল ব্যবস্থাপনার জন্য সমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম।

জরুরী তহবিল (Contingency Funds): প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অনাকাঙ্ক্ষিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিশেষ তহবিল সংরক্ষণ।

ডিজিটাল উদ্ভাবনের মাধ্যমে গ্রামীণ জল সরবরাহে রূপান্তর

পানীয় জল ও স্যানিটেশন বিভাগ (DDWS), জল শক্তি মন্ত্রক কর্তৃক উন্নীত রুরাল পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম (RPWSS) মডিউলটি গ্রামীণ জল পরিষেবায় ডিজিটাল শাসনের এক বড় পদক্ষেপ।

এই নতুন ব্যবস্থা দেশের সমস্ত পাইপযুক্ত জল প্রকল্পের একটি ডিজিটাল নিবন্ধন তৈরি করবে এবং প্রত্যেক প্রকল্পকে একটি স্বতন্ত্র RPWSS আইডি প্রদান করবে, যা স্বচ্ছতা, তথ্যনির্ভর পর্যবেক্ষণ ও ট্রেসেবিলিটি বা অনুসন্ধানযোগ্যতা নিশ্চিত করবে। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নভেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে RPWSS আইডি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই প্ল্যাটফর্মটি GIS ম্যাপিং ও প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি পরিকল্পনার সাথে একীভূত, যা রিয়েল-টাইম ড্যাশবোর্ড, পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণ, এবং কার্যকর রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জাম সরবরাহ করে। এর মাধ্যমে পঞ্চায়েত ও গ্রামজল-স্যানিটেশন কমিটিগুলি যাচাইকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জল ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করতে সক্ষম হয়, এবং WASH (Water, Sanitation & Hygiene) ক্ষেত্রে স্থানীয় দক্ষতা বিকাশকে উৎসাহিত করে।

বর্তমানে চলমান RPWSS আইডি ক্রিয়েশন মডিউলটি জল জীবন মিশনের আওতায় দায়বদ্ধতা, সুস্থায়ীতা ও সমাজের অংশগ্রহণ আরও শক্তিশালী করছে।

জল জীবন মিশনের প্রভাব

জল জীবন মিশন (JJM) বাস্তবায়নের ফলে গ্রামীণ জীবনে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে — যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি দিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, প্রত্যেক গ্রামীণ পরিবারে নল-জল সংযোগ প্রদান করলে প্রতিদিন প্রায় ৫.৫ কোটি ঘণ্টা সাশ্রয় হবে — যার মূল উপকারভোগী হবেন নারীরা (এই সময়ের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ তাদেরই ব্যয় হয়)।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানায়, ভারতের প্রত্যেক পরিবারে নিরাপদ পানীয় জলের সার্বজনীন কভারেজ নিশ্চিত করা গেলে প্রতি বছর প্রায় ৪ লক্ষ  ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে, প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ DALYs বাঁচানো যাবে এবং স্বাস্থ্য ব্যয়ের ক্ষেত্রে ₹৮.২ লক্ষ কোটি টাকার সাশ্রয় ঘটবে।

SBI Research-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাড়ির বাইরে থেকে জল আনতে হয় এমন পরিবারের সংখ্যা ৮.৩% হ্রাস পেয়েছে, ফলে প্রায় ৯ কোটি নারী আর জল আনতে বাধ্য নন। এর ফলে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ৭.৪ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মাইকেল ক্রেমার-এর গবেষণা বলছে, নিরাপদ পানীয় জলের আওতা বাড়ালে পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুহার প্রায় ৩০% কমানো সম্ভব, অর্থাৎ প্রতি বছর ১ লক্ষেরও বেশি শিশুকে বাঁচানো যেতে পারে।

ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট বেঙ্গালুরু (IIMB) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর যৌথ গবেষণা অনুযায়ী, JJM-এর বাস্তবায়নের সময় প্রায় ৩ কোটি কর্ম-বর্ষের কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে প্রায় ২৫ লক্ষ নারীকে ফিল্ড টেস্টিং কিট ব্যবহারে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে।

সম্প্রদায়নির্ভর ও প্রযুক্তিনির্ভর সাফল্যের কাহিনি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন -
“জল জীবন মিশন আজ দেশের উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক হয়ে উঠেছে - প্রত্যেক ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে।”

জল জীবন মিশনের (JJM) সাফল্যের মূল শুধু পরিকাঠামো নির্মাণে নয়, বরং “জন-ভাগীদারির মাধ্যমে পেয়জল ব্যবস্থাপনা” বা community-led water governance এবং প্রযুক্তির নবীন প্রয়োগের মিলিত প্রয়াসে।

জল ব্যবস্থাপনায় নারীদের নেতৃত্ব – মহারাষ্ট্র

মহারাষ্ট্রের মাপান গ্রামে ‘অমৃতনাথ মহিলা সমূহ’ নামে এক স্বনির্ভর মহিলা গোষ্ঠী পুরো গ্রামের নল-জল প্রকল্প পরিচালনা করে।
তাদের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে পাম্প চালানো, রক্ষণাবেক্ষণ, মিটার রিডিং নেওয়া, বিল সংগ্রহ এবং অভিযোগ নিষ্পত্তি।
গোষ্ঠীটি ১০০% বিল সংগ্রহে সফল, যার ফলে প্রকল্পটি আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়েছে। দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তারা ₹১,৭০,০০০ আয় করে, যা গোষ্ঠীটিকে একটি সুস্থায়ী আয়ের উৎসে পরিণত করেছে এবং গ্রামীণ ইউটিলিটি ব্যবস্থাপনার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

উৎস সংরক্ষণ ও জলবায়ু সহনশীলতা – নাগাল্যান্ড

নাগাল্যান্ডের ওখা (Wokha) জেলায় মানুষ এখন জল উৎস রক্ষায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত। তারা “people-first, source-first” নীতি মেনে চলছে।
গ্রামবাসীরা বুঝেছেন, উৎস সংরক্ষণই সুস্থায়ী নল-জলের মূল চাবিকাঠি। JJM-এর সহায়তা ও বন, মাটি ও জল সংরক্ষণ দফতরের সঙ্গে মিলিত প্রচেষ্টায় তারা ক্ষয়প্রাপ্ত পাহাড় ঢাল পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা ট্রেঞ্চ, রিচার্জ পিট ও পারকোলেশন ট্যাংক নির্মাণ করে মাটি ক্ষয় রোধ ও বর্ষার জল মাটিতে প্রবেশে সহায়তা করছে। স্থানীয় আল্ডার, ওক, ও বাঁশ গাছ রোপণ করে মাটি স্থিতিশীল রাখা হচ্ছে। নারী গোষ্ঠীগুলি বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালনা করছে, আর যুব ক্লাবগুলি রিচার্জ কাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ করছে।

 স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি রূপান্তর – আসাম

অসমের বরবড়ি গ্রামে JJM-এর প্রচার ও সচেতনতা কার্যক্রমের ফলে বহুদিনের জলবাহিত রোগ নির্মূল হয়েছে।
২০২২–২৩ সালে ২৭-টি রোগের ঘটনা থেকে দুই বছরের মধ্যে তা শূন্যে নেমে এসেছে, মৃত্যুর ঘটনাও নেই। স্থানীয় নেত্রী বিন্দু দেবী নিজের জমি জল প্রকল্পের জন্য দান করেন এবং এক টেকসই রক্ষণাবেক্ষণ মডেল চালু করেন — প্রতিটি পরিবার প্রতিদিন ₹১ করে অবদান রাখে, যাতে প্রকল্পটি নির্বিঘ্নে চলতে পারে। এর ফলে, গ্রামে এক যৌথ দায়িত্ববোধ ও মালিকানার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবস্থাটিকে সুস্থায়ী করেছে।

জল সংকট থেকে জল নিরাপত্তায় রূপান্তর – রাজস্থান

রাজস্থানের বোথারা গ্রামে এক সম্প্রদায় বৈঠকে দেখা যায়, জল সংকট ও ভূগর্ভস্থ জলের অতিব্যবহারের হার ১০৩% ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা জল নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করে।
JJM-এর অধীনে নির্মিত নতুন কূপের পাশে কার্যকর রিচার্জ কাঠামো গড়ে তোলার প্রস্তাব আসে। গ্রামবাসীরা ridge-to-valley নীতি মেনে চেকড্যাম ও কনট্যুর ট্রেঞ্চ তৈরি করে। চেকড্যাম সম্পন্ন হওয়ার মাত্র ১০ দিনের মধ্যে কূপের জলস্তর ৭০ ফুট বৃদ্ধি পায়।
ফলস্বরূপ, গ্রামের বার্ষিক জল সঞ্চয় ক্ষমতা ১১.৭৭% বৃদ্ধি পায় এবং গ্রামবাসীরা মোট ব্যয়ের ৫% নিজেরা বহন করেন।

ডিজিটাল শাসন ও স্বচ্ছতা – পশ্চিমবঙ্গ

পশ্চিমবঙ্গের ‘জল মিত্র’ অ্যাপ্লিকেশন গ্রামীণ জল শাসন ব্যবস্থায় এক ডিজিটাল বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই মোবাইল ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনটি একটি Management Information System (MIS), যা জল জীবন মিশনের (JJM) লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি — প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে Functional Household Tap Connection (FHTC) নিশ্চিত করা, দীর্ঘমেয়াদি পরিষেবা বজায় রাখা, সম্প্রদায়ের মালিকানা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ চালু করা। এপ্রিল ২০২৪ থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত, এই ডিজিটাল MIS প্ল্যাটফর্মে ১৩.৭ কোটি সামাজিক কার্যক্রম-মূলক ট্র্যাক, ২২,১১১-টি গ্রামে ৮০.৩৯ লক্ষ পরিবারের কার্যক্ষমতা মূল্যায়ন, এবং ৪,৫২২-টি জল বাঁচাও কমিটি গঠনে সহায়তা করা হয়েছে। এর ফলে পূর্বের বিভক্ত ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে একটি রিয়েল-টাইম, ডেটা-নির্ভর ব্যবস্থা চালু হয়, যা দায়বদ্ধতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।

উপসংহার

মাত্র ছয় বছরে, জল জীবন মিশন ভারতের গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে এক নীরব বিপ্লব এনেছে, আজ ৮১% এরও বেশি পরিবারে নিরাপদ নল-জল পৌঁছে গেছে। “হর ঘর জল”-এর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এটি দ্রুত প্রসার, ডিজিটাল উদ্ভাবন ও সম্প্রদায়িক অংশগ্রহণের শক্তিকে একত্র করেছে। এই মিশন কেবল পরিকাঠামো নির্মাণ নয় - এটি গ্রামীণ জীবনের স্বাস্থ্য, জীবিকা, মর্যাদা ও সমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের সময় বাঁচছে, কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, জলবাহিত রোগ হ্রাস পাচ্ছে। সুস্থায়ীতা ও অন্তর্ভুক্তিকে মূল কেন্দ্রে রেখে, জল জীবন মিশন এক অনন্য প্রশাসনিক সাফল্যের উদাহরণ, যেখানে মানুষই পরিবর্তনের মুখ্য চালক।
এটি ভারতের প্রতিটি গ্রামকে সর্বজনীন ও নির্ভরযোগ্য জল নিরাপত্তার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র:

Ministry of Jal Shakti

PIB backgrounders

See in PDF

 

 

***
SSS/SS


(Release ID: 2182866) Visitor Counter : 2