নয়াদিল্লি, ০১ জুন, ২০২৫, পিআইবি।।মধ্যপ্রদেশ সরকারের সহযোগিতায়, ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রকের উদ্যোগে ৩১ মে ২০২৫ ভূপালের জাম্বুরি ময়দানে অনুষ্ঠিত লোকমাতা অহল্যাবাই হোলকরের ৩০০ তম জন্মবার্ষিকী স্মরণ করা হয়েছে, যিনি ছিলেন একজন উজ্জ্বল দূরদর্শী নেতা এবং সাংস্কৃতিক সংস্কারক।

   

মা ভারতী এবং ভারতের নারীদের আশীর্বাদ প্রার্থনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতা শুরু করেন, যারা ভারতের ‘নারীশক্তি’র ক্ষমতা এবং সম্ভাবনার প্রতিনিধিত্ব করেন। লোকমাতা অহল্যাবাই হোলকরের নিষ্ঠা, সুশাসন এবং সামাজিক সংস্কারের প্রতি অটল অঙ্গীকারের চিরন্তন উত্তরাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোকমাতা দেবী অহল্যাবাই হোলকরের ৩০০ তম জন্মবার্ষিকী ১৪০ কোটি ভারতবাসীর জন্য একটি অনুপ্রেরণার উপলক্ষ এবং দেশ গঠনের স্মারক প্রচেষ্টায় অবদান রাখার একটি মুহূর্ত। তিনি বলেন, “মাতা অহল্যাবাই দেশ গঠনে আমাদের নারী শক্তির অমূল্য অবদানের প্রতীক:”

নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি, সেই সাথে এর প্রভাব এবং সরকারের বিভিন্ন চলমান প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন।

* “আজ, বিপুল সংখ্যক মহিলা বিজ্ঞানী আমাদের সমস্ত প্রধান মহাকাশ মিশনে কাজ করছেন।” – প্রধানমন্ত্রী

* “যখন একজন মহিলা নিজে অর্থ উপার্জন করে, তখন ঘরে তাঁর আত্মসম্মান বৃদ্ধি পায়, এবং পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার অংশগ্রহণ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। গত এগারো বছরে, আমাদের সরকার ভারতবর্ষের মহিলাদের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করেছে।” – প্রধানমন্ত্রী

* "নাগরিক দেব ভব—নাগরিকই ঈশ্বর—এটি আমাদের শাসনের মন্ত্র হয়ে উঠেছে। আমাদের সরকার মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়নের দর্শনকে উন্নয়নের মূলস্রোতে পরিণত করছে" - প্রধানমন্ত্রী

* "আজ, দেশে ১০ কোটি নারী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নিযুক্ত রয়েছেন। সরকার এই নারীদের নতুন আয়ের উৎস তৈরি করতে সহায়তা করছে, যা কয়েক লাখ টাকার সমর্থন প্রদান করছে।" - প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, লোকমাতা অহল্যাবাই হলকর বিশ্বাস এবং দৃঢ়তার শক্তির প্রতীক৷ তিনি বলেন “দেবী অহল্যাবাই এই ধারণার প্রতীক যে ইচ্ছাশক্তি এবং দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে, যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, অসাধারণ সাফল্য অর্জন করতে পারেন।”

প্রধানমন্ত্রী এদিন দেড় থেকে তিন শতাব্দী পরেও দেবী অহল্যাবাইয়ের চিন্তা ও কর্মের দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকার, প্রভাব এবং চলমান প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কথা বলেছেন৷ দেবী অহল্যাবাই হোলকারের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সত্যিকারের সুশাসনের বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনার কথা তুলে ধরেছেন৷ তিনি বলেন, "অহল্যাবাই বলতেন যে, সত্যিকার শাসন হল জনগণের সেবা করা এবং তাদের জীবনের উন্নতি করা।" তিনি আরও বলেন যে, "মাতা অহল্যাবাই একটি দৃষ্টান্তমূলক শাসন মডেল গ্রহণ করেছিলেন, যেখানে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল।"

লোকমাতা অহল্যাবাই হোলকরের জীবন ও উত্তরাধিকার সম্পর্কে প্রদর্শনীঃ
এই অনুষ্ঠানটির একটি মূল আকর্ষণ ছিল লোকমাতা অহল্যাবাই হোলকরের জীবন ও উত্তরাধিকার সম্পর্কে একটি প্রদর্শনী। ইতিহাস এবং বর্ণনার নানা দিকসমূহের মধ্যে এই প্রদর্শনীটি মধ্যপ্রদেশ সরকারের সমন্বিত উদ্যোগে শিল্পীদের আঁকা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে এবং এটি সংস্কৃতি মন্ত্রকের স্মরণ বিভাগ দ্বারা কিউরেট করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে ৪টি মূল বিভাগ রয়েছে:

  
• অংশ ১: তার রূপদানকারী বছরগুলির প্রতি মনোযোগ: দেবী অহল্যাবাইয়ের ভাবী শ্বশুর মালহার রাওয়ের সাথে তাঁর সাক্ষাত, প্রশাসন, কোষাগার এবং হিসাব, মার্শাল আর্ট ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার শিক্ষাদানকে তুলে ধরা হয়েছে এখানে।

• অংশ ২ – তার সুশাসন এবং নেতৃত্বের ধারণাকে উদযাপন: তার শাসন ভগবান শিবের প্রতি উৎসর্গীকৃত ছিল এবং তিনি তার জনগণের রক্ষক হয়ে ওঠার এবং তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকার প্রতি মগ্ন থাকতেন, যা এখানে তুলে ধরা হয়েছে৷

• অংশ ৩ – তাঁর কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির ওপর আলোকপাত: এখানে বিভিন্ন মন্দিরের পুর্নগঠন ও পুনঃনির্মাণের কাজ এবং অন্যান্য পরিকাঠামোগত প্রকল্পগুলি তুলে ধরা হয়েছে৷

• অংশ ৪ – বস্ত্রশিল্পের সাথে তাঁর যুক্ত থাকার প্রদর্শনী:  মহেশ্বর কেল্লা ও আশেপাশের মন্দিরের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মহেশওয়ারী বুনন তৈরির বিষয় এই প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে, যার সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি৷

প্রধানমন্ত্রী হেমলতা জির সঙ্গেও কথা বলেছেন, যিনি মহেশওয়রি শাড়ি বোনার ৬ষ্ঠ প্রজন্মের একজন শিল্পী৷ সংস্কৃতি মন্ত্রকের সচিবের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সামগ্রিক প্রদর্শনীটির বিষয়ে একটি বিস্তারিত উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়েছে৷

স্মৃতিচারণমূলক ডাকটিকিট এবং মুদ্রার প্রকাশ
এই অনুষ্ঠানে লোকমাতা অহল্যাবাই হলকার এর ৩০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মৃতিচারণমূলক একটি মুদ্রা এবং ডাকটিকিটের প্রকাশ করা হয়েছে, যা ভারতের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি তার অমূল্য অবদানের একটি নিদর্শন৷

লোকমাতা অহল্যাবাই হোলকরের উপর ফিল্ম
সংস্কৃতি মন্ত্রকের স্মারক বিভাগ কর্তৃক লোকমাতা অহল্যাবাই হোলকরের উপর নির্মিত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ফিল্মও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়েছিল। ‘অহল্যাবাই হোলকর: সংস্কৃতির রক্ষণকর্তা, শাসনের শিল্পী’ শিরোনামে তৈরি এই ফিল্মে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, সংস্কার এবং আধ্যাত্মিক নিবেদনের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যা তাঁর অসাধারণ জীবনের প্রতি একটি সিনেম্যাটিক শ্রদ্ধাঞ্জলি৷
প্রধানমন্ত্রী এদিন ভূপালে শহুরে পরিকাঠামো, ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক পর্যটন উন্নত করার লক্ষ্যে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন৷

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, 'আজ ইন্দোর মেট্রো পরিষেবার উদ্বোধন করা হয়েছে, এবং দাতিয়া ও সাত্না থেকে বিমান পরিষেবা শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পগুলি মধ্যপ্রদেশে জনসাধারণের সুবিধা বাড়াবে, উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং বিভিন্ন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।’

প্রধানমন্ত্রী একজন বিশিষ্ট শিল্পী ড. জয়ামতী কাশ্যপকে, দেবী অহল্যবাই পুরস্কার প্রদান করেছেন, যিনি আদিবাসী, লোক এবং প্রচলিত শিল্পে অসাধারণ অবদান রেখে চলেছেন৷

এই স্মরণোৎসবটি ভারতের সমৃদ্ধ সভ্যতার উত্তরাধিকার উদযাপন করার এবং দেশের সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপনকারী চিন্তাবিদদের সম্মান জানানোর লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রকের ব্যাপক মিশনের একটি অংশ ছিল৷
 

*** 

 

DM/KMD

(Release ID: 2133159)