প্রতিরক্ষা মন্ত্রক
অপারেশন সিঁন্দুর শুধু একটি সামরিক কার্যক্রম নয়, বরং এটি ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং রণকৌশলগত ইচ্ছার প্রতীক: প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
Posted On:
11 MAY 2025 2:36PM by PIB Agartala
নয়াদিল্লী, ১১ মে ২০২৫, পিআইবি।। “অপারেশন সিঁন্দুর কেবল একটি সামরিক কার্যক্রমই নয়, বরং এটি ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং কৌশলগত ইচ্ছাশক্তির একটি প্রতীক,” বলেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। উত্তরপ্রদেশের লখনৌ তে ১১ মে, ২০২৫ এ ব্রহ্মোস ইন্টিগ্রেশন এন্ড টেস্টিং ফ্যাসিলিটি সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল ভাষণে একথা বলেছেন শ্রী রাজনাথ সিং। এই অপারেশনটিকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের শক্তিশালী ইচ্ছাশক্তির পরিচয় ও সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা এবং সংকল্পের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি, যা ভারতের মাটিতে অ্যান্টি-ইন্ডিয়া এবং সন্ত্রাসী সংগঠনের হাতে প্রাণ হারানো নিষ্পাপ পরিবারগুলোর জন্য ন্যায় নিশ্চিত করেছে।

অপারেশন সিঁন্দুরকে একটি প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ভারত যখনই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তখন সীমান্তের অপর পাশে সন্ত্রাসীদের এবং তাদের মালিকদের জন্যও তা নিরাপদ নয়। উরি ঘটনার পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, পুলওয়ামা হামলার পর বিমান হামলা এবং এখন পহেলগাম হামলার পর একাধিক হামলার মাধ্যমে, বিশ্ব দেখেছে যে ভারত যদি তার সীমানার মধ্যে সন্ত্রাসী হামলা হয় তাহলে এর পরিনাম কি হতে পারে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতি অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এই নতুন ভারত সীমান্তের উভয় পাশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

শ্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, অপারেশনটি পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সন্ত্রাসী পরিকাঠামো ধ্বংস করার জন্য চালানো হয়েছিল, নিরীহ সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। কিন্ত পাকিস্তান ভারতের নাগরিক এলাকায় আক্রমণ করেছে এবং মন্দির, গুরুদোয়ারা ও গির্জায় আঘাত করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সাহস ও সংযম প্রদর্শন করে পাকিস্তানের অনেক সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করে প্রতিশোধ ফিরিয়ে দিয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "সীমান্ত লাগোয়া পাক সামরিক ঘাঁটিগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার সাথে সাথে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষোভ রাওয়ালপিন্ডিতেও পৌঁছেছে, যেখানে পাকিস্তানি সামরিক সদর দফতর অবস্থিত।”
ব্রহ্মোস ইন্টিগ্রেশন এন্ড টেস্টিং সেন্টার সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এটি ভারতের আত্মনির্ভরতার প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করবে এবং সরাসরি ও পরোক্ষভাবে চাকরি সৃষ্টির মাধ্যমে এই অঞ্চলের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করবে। জাতীয় প্রযুক্তি দিবসে এর উদ্বোধনটিকে একটি মাইলফলক মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি, যা ভারতের উদ্ভাবনী ক্ষমতার বৃদ্ধিকে প্রতিফলিত করে এবং উচ্চ-প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে দ্রুত বৈশ্বিক রূপান্তরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
শ্রী রাজনাথ সিং বলেন, ব্রহ্মস শুধুই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি নয়, বরং এটি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শক্তির একটি বার্তা, বিরোধীদের জন্য প্রতিরোধের একটি বার্তা এবং দেশের সীমান্ত রক্ষা করার ক্ষেত্রে অটল সংকল্পের একটি বার্তা। তিনি আরও বলেন, ব্রহ্মস ভারত ও রাশিয়ার শীর্ষ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিগুলোর একটি মিলনস্থল।
ভারতের মিসাইল ম্যান এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এপিজে আবদুল কালামের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যতক্ষন না ভারত বিশ্বে নিজেদের সম্মানে দাঁড়ায়, ততক্ষণ কেউ আমাদের সম্মান করবে না। এই জগতে ভয়ের কোনও স্থান নেই, কেবল শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা করে।' প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, ভারত আজ সবচেয়ে শক্তিশালী জাতিগুলির মধ্যে একটি এবং কেন্দ্র ভারতের শক্তি আরও বাড়াতে সাহায্য করবে।
উত্তর প্রদেশ প্রতিরক্ষা শিল্প করিডর (ইউপিডিসি) কে একটি গর্বের বিষয় বলে উল্লেখ করে শ্রী রাজনাথ সিং বলেন, এটি ইতিমধ্যে প্রায় ৫০০টি প্রত্যক্ষ এবং ১০০০টি পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, যা রাজ্যের প্রতিরক্ষা উৎপাদনের কেন্দ্র হিসাবে বাড়তে থাকা মর্যাদার প্রতিফলন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকারের করিডর স্থাপনের দৃষ্টিভঙ্গি রাজ্যকে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও রপ্তানি কেন্দ্র হিসাবে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি জানান, “এখন পর্যন্ত ইউপিডিসি-এ মোট ১৮০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে যার জন্য প্রস্তাবিত বিনিয়োগ হবে ৩৪,০০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই ৪,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিমান নির্মাণ, ইউএভি, ড্রোন, গোলাবারুদ, যৌগিক ও গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ, ছোট অস্ত্র, টেক্সটাইল এবং প্যারাশুট ইত্যাদিতে বড় বিনিয়োগ করা হয়েছে।" প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মতে, এক্ষেত্রে প্রধান বিষয় হলো জনসেবা এবং বেসরকারি খাত উভয়ের অংশগ্রহণ। লখনউতে, পিটিসি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক টাইটানিয়াম এবং সুপার অ্যালয় উপকরণের কারখানা শুরু হচ্ছে। এছাড়াও, সাতটি অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হচ্ছে। এটি প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের স্বনির্ভরতার গতি বাড়িয়ে দেবে বলে জানান তিনি।
শ্রী রাজনাথ সিং সরকারের ‘মেক-ইন-ইন্ডিয়া, মেক-ফর-দ্য-ওয়ার্ল্ড’ দর্শনের কথা পুনরায় উল্লেখ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, স্বনির্ভরতা মানে শুধুমাত্র ভারতের নিজস্ব নিরাপত্তার প্রয়োজন মেটানোই নয়, বরং এর উদ্দেশ্য দেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করা। স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে, তিনি বলেন, ২০২৪ সালে বিশ্বে সামরিক ব্যয় ২,৭১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এরকম বিশাল বাজার হল একটি সুযোগ যা ভারতকেও নিতে হবে। তিনি বলেন, "ব্রহ্মোস সুবিধার উদ্বোধন ভারতকে বিশ্বের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ইকোসিস্টেমে একটি উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ।"
৪০ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রী উত্তরপ্রদেশ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ, ডিআরডিওর বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য অংশীজনদের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমাদের সময় সীমাবদ্ধ ও দক্ষতার সঙ্গে আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জন করে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।" তিনি রাজ্য সরকারের একটি শক্তিশালী উন্নয়ন পরিবেশ তৈরি করার জন্য এবং ইউপিডিআইসি স্থাপন, লখনৌতে ডিআরডিওর প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন এবং ২০২০ সালে ডেফেক্সপো আয়োজনের মতো উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রকল্পটি স্থাপন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্র লখনৌকে একটি প্রতিরক্ষা উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। লখনৌতে এই সুবিধা 'মেক ইন ইন্ডিয়া' উদ্যোগ, আত্মনির্ভরতা এবং প্রতিরক্ষা উৎপাদনে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা উৎপাদনকে প্রচার করার উদ্যোগগুলোর বিষয়ে শ্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন যে, কাজটি ইউপিআইডিসি এর সমস্ত ছয়টি নোডের অধীনে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিরক্ষা উৎপাদন প্রকল্পের একটি তালিকা তিনি তুলে ধরেছেন, যা পাবলিক এবং প্রাইভেট উভয় শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করে গড়ে তোলা হচ্ছে।
‘অপারেশন সিন্ধুর’ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এটি বিশ্বের কাছে একটি বার্তা যে ভারত আর সন্ত্রাসবাদকে সহ্য করবে না। তিনি বলেন, সম্পূর্ণরূপে দমন করা ছাড়া সন্ত্রাসবাদের কোন সমাধান নেই।
লখনউর ২০০ একর জুড়ে ব্রহ্মোস ইন্টিগ্রেশন ও টেস্টিং ফ্যাসিলিটি সেন্টারে বুস্টার সাবঅ্যাসেমব্লি, অ্যাভিওনিক্স, প্রপেলেন্ট, রামজেট ইঞ্জিনের সমন্বয় থাকবে। ডিজাইন ও প্রশাসনিক ব্লকসহ প্রোগ্রাম কেন্দ্রও এখানে স্থাপন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
প্রায় ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের এই প্রকল্পটি শিল্প ও উদ্যোক্তাদের জন্য দক্ষতা উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একে সহায়তা করার জন্য অন্যান্য সহায়ক ও উপ-সহায়ক প্রতিরক্ষা পরিবেশ ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। এটি শিল্পায়ন এবং আইটিআই, সুপারভাইজার, প্রকৌশলীদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশাল সহায়তা করবে, যা নিশ্চিত করবে যে কর্মসংস্থানের জন্য অভিবাসী হতে হবে না।
ব্রহ্মোস অ্যারোস্পেস সুবিধাটি পরিচালনার জন্য ৩৬ জন প্রশিক্ষণার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছে। এই নতুন নির্বাচিত প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে পাঁচজনকে উদ্বোধনের অংশ হিসেবে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সম্মানিত করেছেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপ মুখ্যমন্ত্রী শ্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য এবং শ্রী ব্রজেশ পাঠক, মুখ্য সচিব শ্রী মনোজ কুমার সিং, প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের সচিব এবং ডিআরডিও'র চেয়ারম্যান ডঃ সামির ভি কামাত, ডিজি ব্রহ্মোস ডঃ জিতীর্থ আর জোশী, অন্যান্য জন প্রতিনিধি এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বরিষ্ঠ কর্মকর্তারাও।
***
KMD/DM
(Release ID: 2128187)
Visitor Counter : 2