স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায়মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ লোকসভায় বিধিসম্মত প্রস্তাব পেশ করেছেন

মণিপুরের সংঘর্ষে প্রাণ হারানোদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং গভীর শোক প্রকাশ করেছে লোকসভা

গত চার মাসে মণিপুরে কোনো সংঘর্ষ হয়নি

সরকার ত্রাণ শিবিরগুলোতে সমস্ত প্রয়োজনীয় সুবিধা, যেমন খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করছে

Posted On: 03 APR 2025 4:21PM by PIB Agartala

নয়াদিল্লি, ০৩ এপ্রিল ২০২৫: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায়মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ আজ লোকসভায় মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির অনুমোদনের জন্য বিধিসম্মত প্রস্তাব পেশ করেন। পরবর্তীতে নিম্নকক্ষে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়। একইসঙ্গে, মণিপুরের সংঘর্ষে প্রাণ হারানোদের প্রতি শ্রদ্ধা, সহানুভূতি এবং গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।

প্রস্তাব উত্থাপনের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায়মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ বলেন, মণিপুরে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল মণিপুর হাইকোর্টের একটি সিদ্ধান্ত থেকে উদ্ভূত সংরক্ষণ সংক্রান্ত এক বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে। তিনি উল্লেখ করেন, এটি দাঙ্গা বা সন্ত্রাস নয়, বরং হাইকোর্টের রায়ের ব্যাখ্যার ফলেই দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষ হয়। শ্রী শাহ আরও বলেন, গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় চার মাস ধরে মণিপুরে কোনো সহিংসতা ঘটেনি। এছাড়া, ত্রাণ শিবিরে খাদ্য, ওষুধ এবং চিকিৎসা পরিষেবার সমস্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রযুক্তিগত ও চিকিৎসা শিক্ষার জন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং প্রাথমিক শিক্ষার জন্য শিবিরের ভেতরেই শ্রেণিকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

শ্রী অমিত শাহ বলেন, কোনো ধরনের সহিংসতা হওয়া উচিত নয় এবং কোনো জাতিগত সংঘর্ষকে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংযুক্ত করাও উচিত নয়। তিনি উল্লেখ করেন, বিরোধী দল এমন একটি চিত্র উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে যে, জাতিগত সহিংসতা আমাদের শাসনকালেই ঘটেছে। তিনি সংসদকে জানান যে, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে মণিপুরে নাগা-কুকি সংঘর্ষ চলেছিল পাঁচ বছর ধরে, যেখানে ৭৫০ জন মানুষ প্রাণ হারান এবং এই সহিংসতার ঘটনা বিক্ষিপ্তভাবে এক দশক ধরে চলছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদিও আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের শাসনকালে এমন ঘটনা কখনোই ঘটা উচিত নয়; একটি দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্তের ফলে এই সহিংসতা সৃষ্টি হয়, যা তৎক্ষণাৎ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।। তিনি জানান, সংঘর্ষে মোট ২৬০ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৮০ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা সংঘর্ষের প্রথম মাসেই ঘটে, আর বাকি মৃত্যুগুলো পরবর্তী মাসগুলিতে ঘটে। তিনি আরও বলেন, ১৯৯৭-৯৮ সালের কুকি-পাইতে সংঘর্ষে ৫০টির বেশি গ্রাম ধ্বংস হয়, ৪০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন, ৩৫২ জন নিহত হন, শত শত মানুষ আহত হন এবং ৫,০০০ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আর, ১৯৯৩ সালে ছয় মাস ধরে চলা মৈতেই-পাঙ্গাল সংঘর্ষে ১০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিরোধীরা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে, যেন মণিপুরে এটিই প্রথমবারের মতো সংঘর্ষ এবং আমাদের প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তিনি উল্লেখ করেন, আগের সরকারের শাসনকালে তিনটি বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল, যা যথাক্রমে ১০ বছর, ৩ বছর এবং ৬ মাস ধরে চলেছিল। আর ওই সহিংস ঘটনাগুলোর পরে তৎকালীন সরকারের কেউই, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত, মণিপুর পরিদর্শনে যাননি।

শ্রী অমিত শাহ উল্লেখ করেন যে, বিজেপি ২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসে, এবং তার আগের পাঁচ বছরে, মণিপুরে কোনো জাতিগত সংঘর্ষ না ঘটলেও প্রতি বছর গড়ে ২১২ দিন বনধ এবং অবরোধ চলেছিল। তিনি জানান, ওই সময়ে ১,০০০-এর বেশি এনকাউন্টার হয়েছিল, যা সুপ্রিম কোর্টের নজরে আসে। শ্রী শাহ বলেন, হাইকোর্টের রায়ের আগে ২০১৭ সাল থেকে বিজেপির শাসনকালে মণিপুরে একদিনের জন্যও বনধ বা অবরোধ হয়নি, এবং কোনো সহিংসতার ঘটনাও ঘটেনি। তবে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে, যখন দুই সম্প্রদায় হাইকোর্টের রায়কে নিজেদের বিরুদ্ধে বলে মনে করে, তখন মাত্র দুই দিনের মধ্যেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায়মন্ত্রী বলেন, বিরোধীরা মণিপুরের সহিংসতাকে উপেক্ষা করার কথা বলে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। তিনি সংসদকে জানান যে, হাইকোর্টের রায় ঘোষণার দিনই বিমান বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর টিম মণিপুরে পাঠানো হয়েছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এই বিষয়ে সকলের উদ্বেগ এক এবং অভিন্ন। তাই এই ইস্যুকে রাজনীতিকরণ না করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদের সব সদস্যের প্রতি আহ্বান জানান, কারণ সরকার মণিপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, এই সহিংসতায় প্রতিটি প্রাণহানির জন্য সংসদের হৃদয়ে শ্রদ্ধা, সহানুভূতি এবং শোক থাকা উচিত।

শ্রী অমিত শাহ বলেন, মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর, দুই সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং উভয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করা হয়েছে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক শীঘ্রই একটি যৌথ বৈঠকের আয়োজন করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সহিংসতা বন্ধ করার পথ খোঁজার পাশাপাশি, সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। শ্রী শাহ আরও বলেন, গত চার মাসে মণিপুরে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি, শুধুমাত্র দু’জন আহত হয়েছেন এবং পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন যে, বাস্তুচ্যুত মানুষরা যতদিন ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন, ততদিন পরিস্থিতিকে সন্তোষজনক বলা যাবে না। তিনি আরও জানান, বাস্তুচ্যুতদের জন্য পুনর্বাসন প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা চলছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের পর রাজ্যপাল ৩৭ জন বিজেপি সদস্য, ৬ জন এনপিপি সদস্য, ৫ জন এনপিএফ সদস্য, ১ জন জেডি(ইউ) সদস্য এবং ৫ জন কংগ্রেস সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেন। যখন বেশিরভাগ সদস্য জানান যে, তারা সরকার গঠনের মত অবস্থানে নেই, তখন মন্ত্রিসভা মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করে, যা রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেন। শ্রী শাহ আরও বলেন, সরকার চায় মণিপুরে যত দ্রুত সম্ভব শান্তি ফিরিয়ে আনা হোক, পাশাপাশি পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালিত হোক এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের যন্ত্রণা নিরাময়ের ব্যবস্থা করা হোক।

***

KMD/AD


(Release ID: 2118612) Visitor Counter : 13


Read this release in: English