সংস্কৃতি মন্ত্রক
পবিত্র এবং নিষ্কলঙ্ক মহাকুম্ভ ২০২৫ঃ পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে ব্যাপক উদ্যোগ
Posted On:
24 JAN 2025 6:59PM by PIB Agartala
নয়াদিল্লি, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫: মহাকুম্ভ ২০২৫ শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় মহামিলনই নয়, পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতার জন্যও একটি মডেল হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই উৎসব মেলায় অংশ নেওয়ার কারণে, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত আবশ্যক। তা নিশ্চিত করতে গিয়ে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নদী সংরক্ষণ এবং পরিবেশ-বান্ধব অনুশীলনের ক্ষেত্রে মহাকুম্ভ নতুন বৈশ্বিক মানদণ্ড স্থাপন করছে। উত্তর প্রদেশ সরকার একটি "নির্মল মহা কুম্ভ" নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক স্যানিটেশন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। উদ্ভাবনী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের কঠোর নিয়মকানুন এবং ব্যাপক সচেতনতা প্রচারের মাধ্যমে একটি সবুজ ও পরিচ্ছন্ন তীর্থযাত্রা তৈরি করা হয়েছে। এই উদ্যোগ পরিবেশগত তত্ত্বাবধানের প্রতি সরকারের দায়িত্বকে তুলে ধরে।
গঙ্গা ও প্লাস্টিক মুক্ত অঞ্চলের বিশুদ্ধতাঃ
মহাকুম্ভ ২০২৫-এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল গঙ্গার বিশুদ্ধতা বজায় রাখা। এর জন্য, দূষণ রোধে কঠোর নিয়মকানুন জারি করা হয়েছে এবং নদীর ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মেলা মাঠগুলিকে প্লাস্টিক-মুক্ত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক দ্রব্যের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই উদ্যোগটি তীর্থযাত্রীদের প্লাস্টিকের বর্জ্য এড়াতে এবং নির্ধারিত স্থানে তাদের আবর্জনা ফেলার আহ্বান জানিয়ে সচেতনতা মূলক প্রচারের মাধ্যমে আরও জোরদার করা হয়েছে।
বিশাল স্যানিটেশন পরিকাঠামোঃ
বিপুল সংখ্যক ভক্তদের থাকার জন্য একটি শক্তিশালী স্যানিটেশন পরিকাঠামো স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেঃ
সেপটিক ট্যাঙ্ক সহ বারো হাজার ফাইবার রিইনফোর্সড প্লাস্টিক (এফআরপি) টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। সোক পিট সহ ১৬ হাজার ১০০ প্রিফ্যাব্রিকেটেড স্টিলের টয়লেট রাখা হয়েছে। মেলার মাঠ জুড়ে ২০ হাজার কমিউনিটি শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে।
এই সুবিধাগুলির মাধ্যমে তীর্থযাত্রীদের পরিছন্ন এবং স্বাস্থ্যকর বিশ্রামাগারগুলিতে প্রবেশাধিকার রয়েছে, যা উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ এবং সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস করে।
দক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা
অনুষ্ঠানস্থল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব রাখতে একটি সুসংগঠিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা রয়েছে। এই সকল পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছেঃ
উৎসে বর্জ্য পৃথকীকরণের সুবিধার্থে ২০ হাজার আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন। বর্জ্য সংগ্রহ ও নিষ্পত্তির জন্য ৩৭.৭৫ লক্ষ লাইনার ব্যাগ। এবং বিশেষ করে প্রধান স্নানের পরে দ্রুত বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ স্যানিটেশন দল।
মিয়াওয়াকি বনঃ একটি সবুজায়নের উদ্যোগ
স্যানিটেশন ব্যবস্থার পাশাপাশি, সরকার প্রয়াগরাজে বায়ুর গুণমান বজায় রাখতে এবং সবুজায়ন বাড়ানোর জন্য 'মিয়াওয়াকি' বনায়ন কৌশল বাস্তবায়ন করেছে। ১৯৭০ এর দশকে বিখ্যাত জাপানি উদ্ভিদবিজ্ঞানী আকিরা মিয়াওয়াকি দ্বারা বিকশিত মিয়াওয়াকি কৌশলটি সীমিত স্থানে ঘন বন তৈরির জন্য একটি বৈপ্লবিক পদ্ধতি। প্রায়শই "পাত্র রোপণ পদ্ধতি" হিসাবে উল্লেখ করা হয়, এতে গাছ এবং লতাপাতার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য একে অপরের কাছাকাছি রোপণ করা হয়। এই কৌশলের সাহায্যে গাছপালা ১০ গুণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা শহরাঞ্চলের জন্য একটি কার্যকরী সমাধান। মিয়াওয়াকি কৌশল ব্যবহার করে লাগানো গাছগুলি বেশি কার্বন শোষণ করে, দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং প্রথাগত বনের তুলনায় সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করে।
প্রায় চার বছর আগে ২০২০-২১ সালে, প্রয়াগরাজে মিয়াওয়াকি প্রকল্পটি ছোট আকারে শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছিল যখন নেভাদা সামোগার, নাইনি শিল্প অঞ্চলে ৩৪,২০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে ৬৩ টি বিভিন্ন প্রজাতির ১১৯,৭০০ চারা রোপণ করা হয়েছিল। আগে, এই অঞ্চলটি শিল্প বর্জ্য দ্বারা ব্যাপকভাবে দূষিত ছিল, কারণ স্থানীয় কারখানাগুলি নিয়মিত তাদের বর্জ্য সেখানে ফেলত।
মিয়াওয়াকি প্রকল্পের আওতায় শহরের বৃহত্তম আবর্জনা ফেলার জায়গা বুশ্বরও উল্লেখযগ্যভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। একবার বর্জ্যে ভরা সাইটটি পরিষ্কার করা হয়েছিল এবং ২৭ টি বিভিন্ন প্রজাতির ২৭০০০ চারা রোপণের জন্য ৯০০০ বর্গ মিটারেরও বেশি ব্যবহার করা হয়েছিল। আজ, এই গাছগুলি একটি ঘন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে, যা পরিবেশের ব্যাপক উন্নতি করেছে। প্রয়াগরাজ শহর জুড়ে আরও ১৩টি স্থানে বন তৈরি করতে মিয়াওয়াকি কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় রোপণ করা প্রধান প্রজাতিগুলির মধ্যে রয়েছে আম, মহুয়া, নিম, পীপাল, তেঁতুল, অর্জুন, সেগুন, তুলসী, আমলা এবং বের। উপরন্তু, হিবিস্কাস, কদম্ব, গুলমোহর, জঙ্গল জিলেবি, বোগেনভেলিয়া এবং ব্রাহ্মির মতো শোভাময় এবং ঔষধি গাছও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সবুজ জায়গাগুলি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে (৪ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) জীববৈচিত্র্য বাড়াতে, বায়ু ও জল দূষণ কমাতে, মাটির ক্ষয় রোধ করতে এবং মহাকুম্ভ চলাকালীন সামগ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে সহায়তা করছে।
সামাজিক অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা প্রচারণা:
মহাকুম্ভ-এ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে জনসাধারণের অংশগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রশাসন তীর্থযাত্রীদের মেলা ময়দানে আবর্জনা না ফেলার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলার আহ্বান জানায়। নাগরিকদের যুক্ত করতে এবং সচেতনতা বাড়াতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছেঃ
প্রয়াগরাজ পৌরনিগম স্বচ্ছতা রথ যাত্রা অয়োজন করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে উৎসাহিত করতে শহরের বিভিন্ন পথ অতিক্রম করেছে।
পথ নাটক এবং সঙ্গীত পরিবেশন তীর্থযাত্রীদের যথাযথ বর্জ্য পৃথকীকরণ এবং নিষ্পত্তি সম্পর্কে শিক্ষিত করে। ঘাটগুলিতে জনসাধারণের সম্বোধন ব্যবস্থা ক্রমাগত ভক্তদের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বার্তা সম্প্রচার করে।
বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং দ্রুত পরিচ্ছন্নতা দলঃ
মূল স্নানের তারিখের পরে, মেলার মাঠগুলিতে স্যানিটেশন পুনরুদ্ধারের জন্য বৃহৎ আকারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হচ্ছে। বিশেষ স্যানিটেশন দল মোতায়েন করা হয়েছে। পাবলিক টয়লেটগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। মেলার সময় ব্যবহৃত পাবলিক টয়লেটগুলির জন্য একটি বড় আকারের পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হচ্ছে। এর জন্য স্যানিটেশন কর্মীদের অতিরিক্ত দল মোতায়েন করা হয়েছে। পার্কিং এলাকা থেকে ঘাট পর্যন্ত স্থাপিত শৌচাগারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।
তীর্থযাত্রীদের রেখে যাওয়া বর্জ্য অপসারণ :
বর্জ্য সংগ্রহ করার পর সেগুলোকে নিত্যদিন নির্ধারিত স্থানে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। সংগৃহীত বর্জ্য পদ্ধতিগতভাবে ব্ল্যাক লাইনার ব্যাগে নিষ্পত্তি করার জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। কালো লাইনার ব্যাগ ব্যবহার করে আবর্জনার নিয়মতান্ত্রিক নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। নিয়মিত জীবাণুনাশক এবং কুয়াশার স্প্রে করা, তীর্থযাত্রা পথ থেকে ধ্বংসাবশেষ, পাথর, ইট এবং অন্যান্ন আবর্জনা সহ সমস্ত নির্মাণ সামগ্রী অপসারণের নিয়মিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এসবের মধ্য দিয়ে এক পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হচ্ছে।
স্যানিটেশন কর্মীদের কল্যাণঃ
রাজ্য সরকার মহা কুম্ভে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে এবং স্বচ্ছ মহাকুম্ভ অভিযানকে একটি বিশাল সাফল্য অর্জনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে সাফাই মিত্র নামে স্যানিটেশন কর্মীদের কল্যাণের দিকটিতে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- যথাযথ আবাসন ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য স্যানিটেশন কলোনি। বিদ্যা কুম্ভ উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের সন্তানদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিক্ষা, ইউনিফর্ম এবং মধ্যাহ্নভোজের সুযোগ নিশ্চিত করা। সকল স্যানিটেশন কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার, বাসস্থান এবং সময়মতো বেতন প্রদান। এই প্রচেষ্টাগুলি শুধুমাত্র স্যানিটেশন বজায় রাখার ক্ষেত্রেই নয়, এর জন্য দায়ী শ্রমিকদের সহায়তা করার ক্ষেত্রেও প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে।
সবুজ মহাকুম্ভঃ একটি জাতীয় স্তরের পরিবেশগত আলোচনা:
পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে, এক হাজারেরও বেশি পরিবেশ ও জল সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞকে একত্রিত করে ২০২৫ সালের ৩১শে জানুয়ারি সবুজ মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস আয়োজিত জ্ঞান মহা কুম্ভ-২০৮১ সিরিজের অংশ হিসাবে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি যেসমস্ত বিষয়গুলির নজর দিয়েছে এর মধ্যে রয়েছে প্রকৃতি, পরিবেশ, জল এবং পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত বিষয়গুলি। প্রকৃতির পাঁচটি উপাদানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম অনুশীলন। নিবিষ্ট প্রচেষ্টা বজায় রেখে ভক্তদের জড়িত করার কৌশল। এই মহাকুম্ভ পরস্পরের মধ্যে জ্ঞানের আদান প্রদানের এবং পরিবেশগতভাবে দায়বদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেও এক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে।
মহা কুম্ভ ২০২৫ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সুস্থায়ী বিকাশ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতির এক প্রামাণ্য দিক হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং প্লাস্টিক-মুক্ত উদ্যোগ থেকে শুরু করে মিয়াওয়াকি বনাঞ্চলের উন্নয়ন এবং স্যানিটেশন কর্মী কল্যাণ কর্মসূচি পর্যন্ত, পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মেলার প্রতিটি দিক নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। গৃহীত পদক্ষেপগুলো কেবল একটি পরিচ্ছন্ন মহাকুম্ভ নিশ্চিত করে না বরং বিশ্বব্যাপী ভবিষ্যতের বৃহৎ আকারের অনুষ্ঠানের জন্যও অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে।
***
SKC/KG/PS/KMD
(Release ID: 2096302)
Visitor Counter : 8