সংস্কৃতি মন্ত্রক
মহাকুম্ভে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের অনন্য প্রদর্শনী ‘কলাগ্রাম’
অদ্বিতীয় এক সাংস্কৃতিক মহোৎসব: মহাকুম্ভে থাকছে প্রায় ১৫,০০০ খ্যাতনামা শিল্পীর পরিবেশনা
সাতটি সংস্কৃতি আঙ্গন: ভারতের সমৃদ্ধ কারুশিল্প ও রন্ধনশিল্পের ঐতিহ্য তুলে ধরার আয়োজন
অবিরল শাশ্বত কুম্ভ প্রদর্শনী: শিল্পকর্ম, ডিজিটাল ডিসপ্লে ও পোস্টার প্রদর্শনীর মাধ্যমে কুম্ভ মেলার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও গুরুত্বের উপস্থাপন
দিব্য বিস্ময় ও বৌদ্ধিক আলোচনা: মহাকুম্ভে সামগ্রিক অভিজ্ঞতার এক অভূতপূর্ব সমন্বয়
ডিজিটাল ও বৈশ্বিক সংযোগ: মহাকুম্ভ ২০২৫-এ প্রযুক্তির সঙ্গে ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ
Posted On:
12 JAN 2025 4:12PM by PIB Agartala
নয়াদিল্লি, ১২ জানুয়ারি ২০২৫: উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে চলেছে মহাকুম্ভের ঐতিহাসিক আয়োজন। এই পবিত্র উৎসবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৪০ কোটি পূণ্যার্থী সমবেত হবেন। আধ্যাত্মিকতা, পরম্পরা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এই মিলনক্ষেত্র আবারও ভারতের ঐক্য ও ভক্তির অটুট চেতনাকে দৃঢ় করবে। ইউনেস্কো স্বীকৃত এই মহাকুম্ভ মানবজাতির অমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে কেবলমাত্র একটি উৎসব নয়, এ এমন এক গভীর অভিজ্ঞতা যা সমস্ত সীমারেখা অতিক্রম করে বিশ্ববাসীর মিলন ঘটায়।
৪,০০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই মহাযজ্ঞ ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উন্নত সংগঠন দক্ষতার এক অপূর্ব সমন্বয়। এর কেন্দ্রে রয়েছে 'শাহী স্নান'— যা গঙ্গা, যমুনা ও পৌরাণিক সরস্বতী নদীর সঙ্গমে পবিত্র স্নান, যাকে পাপমোচন ও আত্মিক মুক্তির পথ বলে বিশ্বাস করা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী বিরল গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের ভিত্তিতে সূর্য, চন্দ্র ও বৃহস্পতির মহাজাগতিক সংযোগকে বিমূর্ত করে নির্ধারিত মহাকুম্ভ, যা ভারতের প্রাচীন জ্ঞানের গভীরতাকে তুলে ধরে। পৌরাণিক কাহিনি থেকে উৎসারিত এই চিরন্তন ঐতিহ্য, যা কোটি কোটি মানুষের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের এক গাঁথা, মহাজাগতিক শক্তি ও মানব আধ্যাত্মিকতার সংযোগের প্রতীক।
মহাকুম্ভে কলাগ্রাম: সীমারেখার ঊর্ধ্বে এক উদযাপন:
ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের উদ্যোগে মহাকুম্ভে স্থাপিত ‘কলাগ্রাম’ ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের প্রতিফলন। যা শিল্প, আধ্যাত্মিকতা এবং সংস্কৃতির অপূর্ব সংমিশ্রণে এক অম্লান অভিজ্ঞতা উপহার দেবে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের সহায়তায় এই উদ্যোগ ভারতের ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিকে আরও সুদৃঢ় করে এবং একইসঙ্গে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের কাছে এক রূপান্তরকারী যাত্রার সুযোগ এনে দেবে। ‘মহাকুম্ভ ২০২৫’-এ ‘কলাগ্রাম’ শুধুমাত্র একটি আয়োজনই নয়—এটি ভারতের গৌরবময় অতীত ও উজ্জ্বল বর্তমানের জীবন্ত ক্যানভাস, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে প্রস্তুত।
ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও উপস্থাপনার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন হলো কলাগ্রাম। যেখানে কারুশিল্প, রন্ধনশিল্প এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে দেশের চিরন্তন ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে, সেখানে ঘটবে আধ্যাত্মিকতা ও শিল্পের অপূর্ব সমন্বয়।
দর্শনার্থীরা প্রবেশ করবেন এক বিশাল ও নান্দনিক ৩৫ ফুট চওড়া ও ৫৪ ফুট উঁচু মুখ্য প্রবেশদ্বার দিয়ে, যা শোভিত থাকবে ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ এবং ভগবান শিবের ‘হলাহল পান করা’র পৌরাণিক কাহিনির নিখুঁত শিল্পচিত্রে। এই রাজকীয় প্রবেশপথ ভেতরের যাত্রাকে আরও মহিমান্বিত করে তুলবে।
বর্ণময় কলাগ্রামে থাকছে ১০,০০০ আসনবিশিষ্ট এক বিশাল গঙ্গা প্যান্ডেল, পাশাপাশি আরাইল, ঝুঁসি এবং ত্রিবেণী অঞ্চলে তিনটি আলাদা মঞ্চ, প্রতিটিতে ২,০০০ থেকে ৪,০০০ দর্শক বসতে পারবেন।
দৃষ্টিনন্দন সাংস্কৃতিক অঞ্চলসমূহ:
অনুভূতি মণ্ডপম: চমকপ্রদ ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্যশ্রাব্য অভিজ্ঞতা, যেখানে গঙ্গা অবতরণের ঐশ্বরিক মুহূর্ত জীবন্ত হয়ে উঠবে। এটি দর্শনার্থীদের জন্য এক আধ্যাত্মিক ও ইন্দ্রিয়জগতের বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা হবে।
অবিরল শাশ্বত কুম্ভ প্রদর্শনী অঞ্চল: ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই), ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় শিল্পকেন্দ্র (আইজিএনসিএ) এবং এলাহাবাদ মিউজিয়াম-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই অঞ্চলটিতে শিল্পকর্ম, ডিজিটাল ডিসপ্লে এবং পোস্টার প্রদর্শনীর মাধ্যমে কুম্ভ মেলার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও গুরুত্ব তুলে ধরা হবে।
বিখ্যাত শিল্পীদের অনন্য পরিবেশনা:
সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের অসাধারণ সহযোগিতায় আয়োজন করা হচ্ছে এক অনন্য সাংস্কৃতিক মহোৎসব। এই বিশাল আয়োজনে অংশ নেবেন প্রায় ১৫,০০০ খ্যাতনামা শিল্পী, যাদের মধ্যে থাকবেন পদ্ম পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং সঙ্গীত নাটক একাডেমির সম্মানিত ব্যক্তিরা। ঐতিহাসিক প্রয়াগরাজ শহরের বিভিন্ন মঞ্চে তাঁদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করবে।
মূল মঞ্চ:
এই মহোৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হবে এক মনোমুগ্ধকর ১০৪ ফুট X ৭২ ফুটের বিশাল মঞ্চ, যা শোভিত থাকবে পবিত্র চার ধামের অপূর্ব দৃশ্যপটে। এই রাজকীয় মঞ্চেই অনুষ্ঠিত হবে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনাগুলো।
পরিবেশনায় তারকা শিল্পীরা:
আধুনিক সংগীত জগতের কিংবদন্তি শিল্পীরা তাঁদের অনবদ্য পরিবেশনায় দর্শকদের মুগ্ধ করবেন। যাঁদের মধ্যে আছেন— শঙ্কর মহাদেবন, মোহিত চৌহান, কৈলাশ খের, হংসরাজ হংস, হরিহরণ, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি ও মৈথিলী ঠাকুর।
নাট্যশিল্পের অনন্য উপস্থাপনা:
দর্শকরা উপভোগ করবেন ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা এবং শ্রীরাম ভারতীয় কলাকেন্দ্র কর্তৃক পরিচালিত বিশেষ সপ্তাহব্যাপী নাট্য প্রদর্শনী। এই অনবদ্য নাটকগুলি অনুষ্ঠিত হবে মহাকাব্যিক কলাগ্রাম মঞ্চে, যা দর্শকদের এক নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ দেবে।
দুর্লভ শাশ্বত কুম্ভ প্রদর্শনী অঞ্চল:
এখানে দর্শনার্থীরা উপভোগ করবেন ভারতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ইতিহাসের দুর্লভ রত্নভাণ্ডার| যার উপস্থাপনায় থাকবে কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানসমূহ— ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই), ভারতীয় জাতীয় সংরক্ষণাগার (ন্যাশনাল আর্কাইভস অফ ইন্ডিয়া), ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় শিল্পকেন্দ্র (আইজিএনসিএ) এবং এলাহাবাদ মিউজিয়াম|
সংস্কৃতির সুরলহরী:
ধ্রুপদী নৃত্য থেকে শুরু করে প্রাণবন্ত লোকসংস্কৃতি—বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে শিল্প ও আধ্যাত্মিকতার অপূর্ব মেলবন্ধন সৃষ্টি হবে এখানে। এই বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উৎসব সংস্কৃতির সর্বজনীন ভাষার মাধ্যমে পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের একত্রিত করবে। এই অনন্য উদযাপন কোটি কোটি মানুষের মনে এক অমলিন ছাপ রেখে যাবে, যা তাঁদের আধ্যাত্মিক অভিযাত্রাকে সমৃদ্ধ করবে এবং ভারতের চিরন্তন ঐতিহ্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
শিল্প, রন্ধনশিল্প এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য:
সাতটি সংস্কৃতি অঙ্গন ভারতীয় কারুশিল্পের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য প্রদর্শন করবে| বিখ্যাত মন্দিরগুলির অনুপ্রেরণায় সাজানো এই আয়োজন দর্শকদের এক দৃশ্যমান এবং অভিজ্ঞতামূলক আনন্দ দেবে। যাদের আয়োজনে আছে: এন.জেড.সি.সি. (হরিদ্বার): কাঠের মূর্তি, পিতলের লিঙ্গম, উলের শাল। ডব্লিউ.জেড.সি.সি. (পুষ্কর): মৃৎশিল্প, পুতুল, মিনিয়েচার পেইন্টিং। ই.জেড.সি.সি. (কলকাতা): টেরাকোটার ভাস্কর্য, পটচিত্র, কাঁথাশিল্প। এস.জেড.সি.সি. (কুম্বকোনম): তাঞ্জোর পেইন্টিং, সিল্ক কাপড়, মন্দিরের গহনা। এন.সি.জেড.সি.সি. (উজ্জ্বয়ন): জনজাতিদের শিল্প, চাঁদেরি শাড়ি, পাথরের খোদাই। এন.ই.জেড.সি.সি. (গুয়াহাটি): বাঁশের কারুশিল্প, আসামের সিল্ক, জনজাতীয় গহনা। এস.সি.জেড.সি.সি. (নাসিক): পাইথানি শাড়ি, ওয়র্লি আর্ট, কাঠের কারুকাজ।
মহাকাশীয় বিস্ময় এবং বৌদ্ধিক সম্পৃক্ততা:
মহাজাগতিক আকাশ: বিশেষ কিছু রাতে আকাশগঙ্গা দেখার অভিজ্ঞতা থাকবে, যা দর্শকদের কাছে আকাশের সঙ্গে এক অতুলনীয় আধ্যাত্মিক সংযোগ এনে দেবে।
বই প্রদর্শনী: সাহিত্য একাডেমি এবং আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসমূহ দ্বারা নির্বাচিত বইয়ের প্রদর্শনী, যা চিরন্তন সাহিত্য রত্নগুলির প্রদর্শনী করবে।
সাংস্কৃতিক প্রামাণ্যচিত্র: আইজিএনসিএ, এসএনএ, এবং জেডসিসি কর্তৃক নির্মিত এই চলচ্চিত্রগুলি ভারতের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে।
প্রযুক্তি ও সমাজ মাধ্যমের প্রভাবশালীদের (ইনফ্লুয়েন্সার) মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সংযুক্তি:
মহাকুম্ভের (#MahaKumbh2025) বৈশ্বিক সংযুক্তির জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং সমাজ মাধ্যমের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। আকর্ষণীয় কনটেন্ট, কাউন্টডাউন পোস্ট, এবং সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের সঙ্গে টেকনিক্যাল গুরুজির বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির মিশ্রণ উপস্থাপন করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি করছে।
https://x.com/MinOfCultureGoI/status/1877386981405016094?ref_src=twsrc%5Etfw%7Ctwcamp%5Etweetembed%7Ctwterm%5E1877386981405016094%7Ctwgr%5Ef7dc44f625d42bfeb2f97d084e74cf20a65cc230%7Ctwcon%5Es1_&ref_url=https%3A%2F%2Fpib.gov.in%2FPressReleasePage.aspx%3FPRID%3D2092233
মহাকুম্ভ ২০২৫ শুধুমাত্র ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উদযাপনাই হবে না, এটি দেশের সাংগঠনিক সক্ষমতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা এবং সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের অঙ্গীকারের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকও হবে। কোটি কোটি মানুষের জন্য একটি রূপান্তর মূলক অভিজ্ঞতা প্রদান করবে, যেখানে ভারতের চিরন্তন ঐতিহ্য প্রদর্শিত হবে, এবং মহাকুম্ভ ভারতের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হবে।
Click here to download PDF
***
SKC/ADK/KMD
(Release ID: 2092383)
Visitor Counter : 14