উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রক
মুম্বাইয়ে উত্তর-পূর্ব বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রোডশোতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ মানিক সাহা এবং কনরাড কে. সাংমা উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন
"উত্তর পূর্ব হল দক্ষিণে ভারতের প্রবেশদ্বার, সেখানে বিনিয়োগ করা হলে বিশাল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে প্রবেশাধিকার দেবে," - বলেন ডোনার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া
Posted On:
17 DEC 2024 9:16AM by PIB Agartala
উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের উদ্যোগে সোমবার মুম্বাইয়ে উত্তর-পূর্ব বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে এক বর্নাঢ্য রোডশো’র আয়োজন করা হয়। ভারতের শীর্ষস্থানীয় শহরগুলিতে বিগত এক বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে রোডশো-র আয়োজন করার পর, ভারতের অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে মুম্বাইয়ের রোডশো আকর্ষনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ও উন্নয়ন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য এম সিন্ধিয়া, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ মানিক সাহা, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব চঞ্চল কুমার, যুগ্ম সচিব মোনালিসা দাশ সহ মন্ত্রক ও উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির সরকারী আধিকারিকগণও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য এম সিন্ধিয়া প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উত্তর-পূর্ব ভারতের ধারাবাহিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। পাশাপাশি তিনি এই অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন, যাঁদের উচ্চতর দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিশ্রুতি বিগত দশক ধরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। তিনি এই অঞ্চলের বিপুল সম্ভাবনার উপর জোর দিয়ে বলেন, ১১% জিডিপি বৃদ্ধির হারের কারনে উত্তর-পূর্ব ভারত এখন দেশের প্রবৃদ্ধিতে বিরাট অবদান রাখতে প্রস্তুত। পরিকাঠামো, মানবসম্পদ এবং অন্যান্য বিশেষ ক্ষেত্রগুলির উন্নয়ন উত্তর-পূর্ব ভারতকে দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই অঞ্চলের অনন্য সুবিধাগুলি তুলে ধরে তিনি উল্লেখ করেন, উত্তর-পূর্ব ভারত এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বাজারে প্রবেশদ্বার হিসাবে স্থান করে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বানিজ্য নগরী মুম্বাই এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে ব্যবসায়িক সেতু নির্মাণের গুরুত্বের উপর জোর দেন। যাতে করে অর্থনৈতিক উদ্ভাবনের জন্য একটি নিরবচ্ছিন্ন পথ নিশ্চিত করা যায়। মন্ত্রী পর্যটন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, ক্রীড়া ও তথ্যপ্রযুক্তি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের অগ্রগতির রূপরেখা তুলে ধরেন এবং এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি গুণমান সমৃদ্ধ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেন যে এই অঞ্চলের যুবসমাজ, উচ্চ সাক্ষরতার হার এবং প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ এই অঞ্চলকে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ করে সুস্থায়ী কৃষি, উৎপাদন এবং প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রে একটি আদর্শ করিডোর হিসাবে গড়ে উঠেছে। ব্যবসায়িক দিক দিয়ে আর্থিক ভাবে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে এবং সমর্থন করার নীতি উত্তর-পূর্ব ভারত এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ বয়ে এনেছে, যা ভারতের বিশেষ করে যুবসমাজের বিকাশে অবদান রাখবে। সমাপনী ভাষণে তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানান এবং এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা নিশ্চিত করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উত্তর-পূর্ব ভারত, বিশেষ করে ত্রিপুরায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হচ্ছে। এছাড়াও, ভারত সরকারের অ্যাক্ট ইস্ট নীতি এই অঞ্চলের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ত্রিপুরা, অন্যতম শান্তিপূর্ণ রাজ্য হিসাবে স্বীকৃত, যে রাজ্যের মাথাপিছু আয় ১.৭৭.০০০ টাকা। এসকল সহ অর্থনৈতিক কক্রিয়াশীলতা দারুন ভাবে এগিয়ে চলেছে, যা ত্রিপুরা রাজ্যকে উত্তর-পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জিএসডিপি অবদানকারী করে তুলেছে। চমৎকার সড়ক, জল, বিমান ও রেল সংযোগ এবং একটি সহায়ক বিনিয়োগ পরিবেশ সহ শক্তিশালী পরিকাঠামো নিয়ে রাজ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অন্যতম পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠছে।
ত্রিপুরার প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন বাঁশ, রাবার এবং সুগন্ধি রজন এর উন্নত বিজ্ঞানসম্মত ও স্থায়ী কৃষি পদ্ধতির সাথে উদ্যান পালন, পর্যটন এবং উৎপাদনের মতো শিল্পে বৃদ্ধির জন্য দারুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেন শ্রী সাহা। তথ্যপ্রযুক্তি নীতি, ই-অফিস ও ই-ক্যাবিনেট ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং গ্রামে গ্রামে ব্যাপক ফোর-জি সংযোগের মাধ্যমে রাজ্যের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দেশের অন্যান্য রাজ্যের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উচ্চ সাক্ষরতার হারের (৯৫.১৬%) সুবিধা নিয়ে ত্রিপুরা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং দক্ষতা বিকাশে বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য সময়সীমার ছাড়পত্র প্রদান এবং 'উন্নতি' ২০২৪ (UNNATI 2024) প্রকল্পকে কাজে লাগানোর জন্য রাজ্য বিনিয়োগের অন্যতম প্রতিশ্রুতিপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। ত্রিপুরা রাজ্য ভারতের বিকাশে একটি অন্যতম প্রধান রাজ্য হয়ে উঠতে প্রস্তুত, যা ব্যবসায়ের সাফল্যের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরী করেছে।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী কনরাড কে সাংমা জানান, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কৌশলের ওপর জোর দিয়ে শক্তিশালী নেতৃত্বের মাধ্যমে মেঘালয় অন্যতম সফল রাজ্য হিসাবে সুনাম অর্জন করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশিত পথে, রাজ্য বিনিয়োগ-বান্ধব নীতি তৈরি করেছে এবং বিশেষত পর্যটন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাড়া পেয়েছে। শিলং-এ একটি নতুন বিমানবন্দরের নির্মাণ এবং বিলাসবহুল আবাসনগুলিতে বিনিয়োগ মেঘালয়কে একটি প্রধান পর্যটন গন্তব্য হিসাবে স্থান দিয়েছে। বিপুল পরিমাণ অব্যবহৃত সম্পদ, দক্ষ শ্রমশক্তি এবং কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও ক্রীড়ার মতো সমৃদ্ধ ক্ষেত্রের সঙ্গে রাজ্য উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়োগের জন্য নার্সদের প্রশিক্ষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ সৃষ্টির মতো উদ্যোগের মাধ্যমে যুব ক্ষমতায়নের উপর সরকার দৃষ্টি নিবদ্ধ করার ফলে উচ্চত প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে শক্তিশালী করেছে। একটি প্রাণবন্ত পর্যটন ক্ষেত্র, উচ্চমানের আতিথেয়তা প্রকল্প এবং দ্রুত বর্ধনশীল ক্রীড়া শিল্পের মাধ্যমে রাজ্যটি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রচুর সুযোগ প্রদান করতে প্রস্তুত। মেঘালয়কে ভারতের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ভূমিকা পালনকারী হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ।
উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব শ্রী চঞ্চল কুমার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জিডিপি-র অবদান ২.৯ শতাংশ, তবুও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিএজিআর জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে উন্নত পরিকাঠামো, স্থিতিশীল ও সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি ব্যবস্থা এবং এই অঞ্চলে বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশের কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চল আরও উচ্চ গতিশীল প্রবৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত। তিনি উল্লেখ করেন যে, গত ১০ বছরে এই অঞ্চলের সড়ক, রেল, বিমান, জল এবং ডিজিটাল সংযোগগুলি এমনকি সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছেছে। এছাড়াও, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আকর্ষণীয় নীতি গ্রহণ করেছে। তিনি এই অঞ্চলের বিপুল সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করেন এবং বিনিয়োগকারীদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব শ্রীমতি মোনালিসা দাশ গত এক দশক ধরে উন্নয়নমূলক উদ্যোগ ও প্রকল্পগুলির কথা তুলে ধরেন, যা স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিকে সরাসরি উপকৃত করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল খনিজ, জীববৈচিত্র্য এবং জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ সীমাহীন সুযোগের দেশ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে। ১৭টি বিমানবন্দর, একটি সম্প্রসারিত সড়ক ও রেল নেটওয়ার্ক এবং ২০টি জলপথ নিয়ে এই অঞ্চলটি একটি রূপান্তরমূলক যাত্রার দিকে এক অনন্য অভিজ্ঞতা লাভ করছে। 'উন্নতি" প্রকল্প, পিএম ডিভাইন এবং আয়ুষ্মান ভারতের মতো মূল প্রকল্পগুলোর দারুল সমর্থ ও সহায়তা নিয়ে সমগ্র অঞ্চল উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রাণবন্ত সংস্কৃতির আবাসস্থল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উচ্চ সাক্ষরতার হার, একটি উদীয়মান ক্রীড়া ক্ষেত্র এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সমৃদ্ধ পর্যটন শিল্প রয়েছে। পরিকাঠামোর উন্নতি এবং নীতিগুলি সারিবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে উত্তর-পূর্ব বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুত, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্তহীন সম্ভাবনা দেখাতে প্রস্তুত।
এফ. আই. সি. সি. আই-এর প্রতিনিধিদের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সরকারি আধিকারিকরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগের বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে অবগত হন। এই ইভেন্টটি উত্তর পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী বিনিয়োগের সম্ভাবনা প্রদর্শন করে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। উত্তর-পূর্ব বিনিয়োগকারীদের শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক-শীর্ষ সম্মেলনের অংশ হিসাবে, রাজ্য গোলটেবিল বৈঠক, প্রধান শহরগুলিতে রোডশো সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পরিচালিত হয়েছে। যা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সাড়া পেতে সক্ষম হয়েছে। মুম্বাই রোডশোতে যথেষ্ট আগ্রহ দেখা গেছে, যা উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জন্য সম্ভাব্য বিনিয়োগ এর আস্থার পরিবেশ তৈরী করেছে।
(Release ID: 2085321)
Visitor Counter : 13