প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর

জম্মু ও কাশ্মীরে ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন, জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ ও শিলান্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী

এই প্রথমবার জম্মু ও কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ ভারতের সংবিধানে প্রদেয় সামাজিক ন্যায়বিচারের আশ্বাস পাচ্ছেন

উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ৩৭০ ধারা বিলোপের মাধ্যমে নতুন জম্মু কাশ্মীর তৈরি হচ্ছে

Posted On: 20 FEB 2024 8:04PM by PIB Agartala

নয়াদিল্লি, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪৷৷ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ জম্মুতে ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ এবং শিলান্যাস করেছেন। প্রকল্পগুলি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রেল, সড়ক, বিমান চলাচল, পেট্রোলিয়াম এবং নাগরিক পরিকাঠামো সহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত। প্রধানমন্ত্রী জম্মু ও কাশ্মীরে প্রায় ১৫০০ নতুন সরকারি নিয়োগের আদেশও বন্টন করেছেন। 'বিকশিত ভারত বিকশিত জম্মু' কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছেন তিনি।

কিশতওয়ার জেলা থেকে আগত বীণা দেবী প্রধানমন্ত্রীকে জানান যে, তিনি উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধা গ্রহণ করেছেন, যা তাঁর জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলেছে৷

রাষ্ট্রীয় আজীবিকা অভিযানের সুফলভোগী কাঠুয়ার কীর্তি শর্মা একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি এবং তাঁর দলের সদস্যরা অনেক সরকারি প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন৷

পুঞ্চের এক কৃষক মিঃ লাল মহম্মদ প্রধানমন্ত্রীকে জানান যে তিনি সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা যেখানে সীমান্তের ওপার থেকে তাঁর মাটির বাড়িতে গোলাবর্ষণ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় পাকা বাড়ি তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। শ্রী লাল মহম্মদ প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে 'বিকশিত ভারত'-এর থিমের উপর একটি দোহাও আবৃত্তি করেছেন৷

স্বনির্ভর দলের সদস্য বান্দিপোরা থেকে আসা শাহিনা বেগম প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন যে, তিনি সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন কিন্তু বেকারত্বের কারণে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ২০১৮ সালে, তিনি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অংশ হয়েছিলেন এবং মধু চাষের ব্যবসা শুরু করার জন্য ঋণ নিয়েছিলেন এবং পরে জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সহায়তায় একে সম্প্রসারিত করেছিলেন, যা তাঁকে লাখপতি দিদি হতে সহায়তা করেছে। প্রধানমন্ত্রী স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার জন্য তার বাবা-মায়ের প্রশংসা এবং কাজের প্রতি তার নিষ্ঠার মনোভাবের প্রশংসা করেছেন৷

পুলওয়ামার রিয়াজ আহমেদ কোলি। জল জীবন মিশনের এক সুবিধাভোগী প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তাঁর গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে নলবাহিত জল রয়েছে, যার ফলে তাঁর পরিবারের জীবনযাত্রায় একটা বিরাট পরিবর্তন এসেছে। ৩৭০ ধারা বিলোপের পর তিনি তার জমির সম্পত্তির অধিকার অর্জন করেছেন। এতে তিনি এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছেন।

জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী জম্মু ও কাশ্মীরের জনসাধারণের উদ্দীপনার প্রশংসা করে বলেন, আজকের এই কর্মসূচি তাঁর কাছে একটি আশীর্বাদ। তিনি জানান, জম্মু ও কাশ্মীরের ২৮৫ টি ব্লকের নাগরিকরা এই কর্মসূচি প্রত্যক্ষ করছেন৷

সরকারি প্রকল্পগুলির সুফল সম্পর্কে সুবিধাভোগীরা তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় যেভাবে খুশি হয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তার প্রশংসা করেন। বিকশিত ভারত, বিকশিত জম্মু ও কাশ্মীর এবং বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার মানসিকতার জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেন, কোনও যোগ্য সুবিধাভোগীই পিছিয়ে থাকবে না। তিনি বলেন, আপনাদের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা অবশ্যই একটি বিকশিত জম্মু কাশ্মীর তৈরি করব। ৭০ বছর ধরে যে স্বপ্ন অপূর্ণ ছিল, তা শীঘ্রই পূরণ হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হতাশা ও বিচ্ছিন্নতাবাদের দিনগুলিকে পিছনে ফেলে জম্মু-কাশ্মীর বিকশিত হওয়ার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, আজকের ৩২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পগুলি শিক্ষা, দক্ষতা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, শিল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসার ঘটাবে। তিনি আইআইএম, আইআইটি এবং নিয়োগপত্রের জন্য দেশের যুবকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন৷

জম্মু ও কাশ্মীরে বহু প্রজন্ম ধরে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে শ্রী মোদী বলেন, "যাঁরা নিজেদের পরিবারের কল্যাণের কথা ভাবেন, তাঁরা কখনও সাধারণ নাগরিকদের কথা ভাববেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকশিত জম্মু ও কাশ্মীর গড়ে তুলতে সরকার দরিদ্র, কৃষক, যুবক ও নারী শক্তির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। শ্রী মোদী বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর দ্রুত শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশের একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠছে। ২০২৩ সালে এই একই স্থানে জম্মু ও কাশ্মীরে আইআইটি এবং আইআইএম গড়ে তোলার নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করে বলেন, সেই নিশ্চয়তা আজ পূরণ হচ্ছে৷

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, দশ বছর আগেও শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশ ক্ষেত্রের অগ্রগতি ছিল সুদূর বাস্তবতা। কিন্তু গত ১০ বছরে জম্মু ও কাশ্মীরে ৫০টি নতুন ডিগ্রি কলেজ সহ রেকর্ড সংখ্যক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যক্ষ করেছে দেশ। তিনি বলেন, ৪৫,০০০ নতুন শিশু যারা স্কুলে যায় না তাদের এখন ভর্তি করা হয়েছে৷

জম্মু ও কাশ্মীরে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার উন্নতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৪ সালে যেখানে ৪টি মেডিকেল কলেজ ছিল, সেখানে জম্মু ও কাশ্মীরে বর্তমানে ১২টি মেডিকেল কলেজ হয়েছে, ২০১৪ সালে যেখানে ৫০০টি আসন ছিল, সেখানে এমবিবিএস-এর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩০০-রও বেশি এবং পিজি মেডিক্যাল আসনের সংখ্যা ২০১৪ সালের কোথাও ছিল না এমন জায়গায় ৬৫০টিরও বেশি আসন রয়েছে। গত ৪ বছরে ৪৫টি নার্সিং ও প্যারামেডিক কলেজ তৈরির কথাও জানান তিনি। জম্মু ও কাশ্মীরে দুটি এইমস গড়ে উঠছে, যার মধ্যে জম্মু এইমসের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, গত ১০ বছরে দেশে ১৫টি নতুন এইমস অনুমোদিত হয়েছে।

৩৭০ ধারা বাতিল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন জম্মু-কাশ্মীর তৈরি হতে চলেছে, কারণ এর উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা দূর হয়েছে এবং এই অঞ্চল সুষম উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলেছে। তিনি আর্টিকেল ৩৭০ নিয়ে আসন্ন চলচ্চিত্রের কথাও উল্লেখ করেছেন। 

কেউই পিছিয়ে থাকবে না এবং দশকের পর দশক ধরে যাঁরা উপেক্ষিত বোধ করেছেন, তাঁরা এক কার্যকর সরকারের উপস্থিতি অনুভব করতে পারবেন বলে প্রধানমন্ত্রী যুবসমাজের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তোলেন। তিনি বলেন, পরিবারতন্ত্র ও তোষণের রাজনীতি পরিহার করে দেশে এক নতুন ঢেউ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, বর্তমান সরকার এই অঞ্চলের প্রাক্তন সেনাকর্মীদের সুবিধা দিয়ে এক পদ এক পেনশনের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছে।

বিধানসভায় তফসিলি জনজাতিদের জন্য সংরক্ষণ এবং পঞ্চায়েত ও শহরাঞ্চলের স্থানীয় সংস্থাগুলিতে ওবিসি সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াসের মন্ত্র জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের ভিত্তি।

জম্মু ও কাশ্মীরে উন্নয়নমূলক কাজের ফলে সবচেয়ে বেশি মহিলারা উপকৃত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী এবং পিএম আবাস যোজনায় মহিলাদের অধীনে পাকা বাড়ি নথিভুক্ত করা, হর ঘর জল প্রকল্পের আওতায় শৌচাগার নির্মাণ এবং আয়ুষ্মান কার্ড বিতরণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ৩৭০ ধারা বিলোপ মহিলাদের সেই অধিকার উপহার দিয়েছে যা থেকে তারা আগে বঞ্চিত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী নমো ড্রোন দিদি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে বিপুল সংখ্যক মহিলাকে ড্রোন পাইলট হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার কৃষিকাজ ও বাগানের কাজে সহায়তার জন্য হাজার হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে লক্ষ লক্ষ টাকার ড্রোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, সার বা কীটনাশক স্প্রে করার কাজ যেমন সহজ হবে তেমনি তাদের বাড়তি আয়ও হবে।

আজ সমগ্র দেশে একযোগে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন মানুষ কাশ্মীর থেকে ট্রেনে চেপে সারা দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন।

বন্দে ভারতের মতো আধুনিক ট্রেনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  জম্মু ও কাশ্মীরে দুটি বন্দে ভারত ট্রেন চলছে এবং মাতা বৈষ্ণোদেবীর যাতায়াত উন্নত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই অঞ্চলের সড়ক প্রকল্পগুলির একটি তালিকা এদিন তুলে ধরেছেন৷ আজকের প্রকল্পগুলির মধ্যে শ্রীনগর রিং রোডের দ্বিতীয় পর্যায়ের কথা উল্লেখ করে তিনি উল্লেখ করেন, যা মানসবল হ্রদ এবং ক্ষীর ভবানী মন্দিরে যাতায়াতকে আরও উন্নত করে তুলবে। একইভাবে, শ্রীনগর-বারামুলা-উরি হাইওয়ে কৃষক ও পর্যটনকে উপকৃত করবে। দিল্লি অমৃতসর কাটরা এক্সপ্রেসওয়ে জম্মু ও দিল্লির মধ্যে যাতায়াত সহজ করে তুলবে। 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক উপসাগরীয় দেশগুলিতে সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, আজ জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়ন সম্পর্কে সমগ্র বিশ্বে প্রচুর উৎসাহ রয়েছে,  যেখানে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিনিয়োগের বিষয়ে  বেশি ইতিবাচক। প্রধানমন্ত্রী মোদী জম্মু ও কাশ্মীরে আয়োজিত বেশ কয়েকটি জি-২০ বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, গোটা বিশ্ব এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ। শ্রী মোদী জানান, গত বছর জম্মু ও কাশ্মীরে ২ কোটিরও বেশি পর্যটক এসেছিলেন এবং অমরনাথজি এবং শ্রী মাতা বৈষ্ণোদেবী দর্শনার্থীর সংখ্যা গত দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছে।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে ভারতের অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতির উন্নতির ফলে কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিতে ব্যয় করার ক্ষেত্রে সরকারের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, উন্নত অর্থনীতির কারণে ভারত বিনামূল্যে রেশন, চিকিৎসা, পাকা বাড়ি, গ্যাস সংযোগ, শৌচাগার এবং প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি সরবরাহ করতে পারছে। এখন আমাদের আগামী পাঁচ বছরে ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এতে দেশের দরিদ্র কল্যাণ ও পরিকাঠামো খাতে ব্যয় করার সক্ষমতা বহুগুণ বাড়বে। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রতিটি পরিবার এর ফলে উপকৃত হবে।"

এদিনের এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর শ্রী মনোজ সিনহা এবং কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডঃ জিতেন্দ্র সিং৷

*****

SKC/SP/KMD

 


(Release ID: 2007518) Visitor Counter : 51


Read this release in: English