রেলমন্ত্রক
কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রকের ২০২২-এর বর্ষশেষ পর্যালোচনা
Posted On:
26 DEC 2022 1:30PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২
ভারতীয় রেল পরিষেবার ইতিহাসে এযাবৎকালের মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন হল সেমি-হাইস্পিড বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সূচনা। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ও প্রচেষ্টায় চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিতে নির্মিত এই ট্রেনগুলি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার গতিবেগসম্পন্ন। ছ’টি বন্দে ভারত ট্রেন ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি রেলপথে। যেমন, নয়াদিল্লি-বারাণসী এবং নয়াদিল্লি-শ্রীমাতা বৈষ্ণোদেবী কাটরার মধ্যে ২০১৯ থেকে চলাচল করছে দুটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন। বন্দে ভারত ট্রেনের নতুন ও উন্নত সংস্করণ সম্প্রতি চালু হয়েছে মুম্বাই সেন্ট্রাল-গান্ধীনগর, নয়াদিল্লি-অম্ব আন্দৌরা ও চেন্নাই-মহীশূর এবং নাগপুর-বিলাসপুরের মধ্যে।
ট্রেনের ভিস্টাডোম কোচগুলিতে দু’ধারের জানালা দিয়ে নৈসর্গিক দৃশ্য দেখার ব্যবস্থা রয়েছে, ট্রেনে সফরকালে যা যাত্রীদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। ৩০ নভেম্বর, ২০২২ থেকে ভারতীয় রেলের বিভিন্ন সেকশনে ৮২টির মতো ভিস্টাডোম কোচের সংযোজন হয়েছে।
চালু হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস রাজধানী ট্রেনগুলিও। ট্রেনের কোচগুলিতে স্বয়ংক্রিয় প্রবেশদ্বার, যাত্রীদের উদ্দেশে ঘোষণা, আগুন ও ধোঁয়া চিহ্নিতকরণ ক্ষমতা এবং সিসিটিভি ক্যামেরাযুক্ত এই কোচগুলিতে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। কোচগুলিতে রয়েছে উন্নতমানের শৌচাগার তথা বায়ো-টয়লেটও। আগরতলা-আনন্দবিহার রাজধানী এক্সপ্রেস, মুম্বাই-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস, মুম্বাই-নিজামুদ্দিন অগাস্ট ক্রান্তি রাজধানী এক্সপ্রেস, রাজেন্দ্রনগর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস (পাটনা রাজধানী) – এই চারটি রাজধানী ট্রেনের পরিবর্তে চালু হয়েছে তেজস স্লিপার কোচ যুক্ত তেজস রাজধানী এক্সপ্রেস।
বিভিন্ন সেকশনে চালু হয়েছে এসি ইকনমি কোচও। এই কোচগুলিতে একদিকে যেমন যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে তেমনই কোচগুলির যাত্রী বহন ক্ষমতাও যথেষ্ট বেশি। দেশের সাধারণ মানুষ যাতে অপেক্ষাকৃত সস্তায় অথচ এসি ক্লাসের স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেন সফর করতে পারেন তা নিশ্চিত করতেই রেল মন্ত্রকের এই বিশেষ পদক্ষেপ।
পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে ভারতীয় রেল। এপ্রিল-নভেম্বর, ২০২২ – শুধুমাত্র এই সময়কালেই রেলে পণ্য পরিবহণের মাত্রা ছুঁয়েছে ৯৭৮.৭২ মিলিয়ন টন। গত বছর ঐ একই সময়কালে এর মাত্রা ছিল ৯০৩.১৬ মিলিয়ন টন। অর্থাৎ, সাফল্যের নিরিখে এই হার বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ শতাংশের মতো।
ট্রেন চলাচল তথা যাত্রী নিরাপত্তার দিক থেকেও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারতীয় রেল মন্ত্রক। ইলেক্ট্রনিক ইন্টারলকিং সিস্টেম এখন ব্যবহৃত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলির ক্ষেত্রে। ২০২২ সালে দেশের ৪৮০টি স্টেশনে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। অন্যদিকে, ইন্টারলকিং সিস্টেম চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২,৮৩৭টি স্টেশনকে নিয়ে আসা হয়েছে এর আওতায়।
স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতিও চালু হয়েছে রেল চলাচলের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, আত্মনির্ভর ভারত কর্মসূচির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে জাতীয় স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে ‘কবচ’-এর মতো একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতিও। লেভেল ক্রসিং গেটগুলিতেও নিরাপত্তাকে জোরদার করে তুলতে ইন্টারলকিং পদ্ধতিকে কাজে লাগানো হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষণা হয়েছে ‘ওয়ান স্টেশন ওয়ান প্রোডাক্ট’ কর্মসূচিটির। এর লক্ষ্য হল, স্থানীয় শিল্পী ও কারিগর, তাঁতশিল্পী, কারুশিল্পী সহ বিভিন্ন জীবিকার সঙ্গে যুক্ত শ্রমজীবী মানুষের রুজি-রোজগারের বিশেষ সুযোগদান। এজন্য দেশের রেল স্টেশনগুলিতে শিল্পী ও কারিগরদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের বিপণনের জন্য চালু হয়েছে বিশেষ কাউন্টার।
ভারতীয় রেলের আরও একটি গৌরবময় সংযোজন হল ট্যুরিস্ট সার্কিট ট্রেন ‘ভারত গৌরব’-এর সূচনা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পর্যটকদের মধ্যে তুলে ধরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘ভারত গৌরব’ ট্রেনটি যা ‘শিরডি যাত্রা’ নামে সুপরিচিত তা চালু হয়েছে ১৪ জুন, ২০২২ থেকে। আবার, আইআরসিটিসি চালু করেছে ‘শ্রীরামায়ণ যাত্রা’ ট্রেনটির। দিব্য কাশী-আদি অমাবস্যা ট্যুরিস্ট ট্রেন এবং ওনাম হলিডে স্পেশাল ট্রেনগুলিও যাত্রা শুরু করেছে। কর্ণাটক ভারত গৌরব কাশী দর্শন ট্রেনটির সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ১১ নভেম্বর, ২০২২ তারিখে বেঙ্গালুরুতে।
দেশের বিভিন্ন রেল স্টেশনকে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সাজিয়ে তোলার কাজে উদ্যোগী হয়েছে ভারতীয় রেল। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য ও অভিজ্ঞতার প্রসারেই এই ব্যবস্থা বলে জানানো হয়েছে রেলের পক্ষ থেকে। নতুন করে সাজিয়ে তোলা স্টেশনগুলিতে রয়েছে রুফ প্লাজা, ফুড কোর্ট, ওয়েটিং লাউঞ্জ, চিল্ড্রেন প্লে এরিয়া ইত্যাদি। এই স্টেশনগুলির বাইরে যুক্ত থাকবে মেট্রো ও বাস পরিষেবা। স্টেশনের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে কাজে লাগানো হবে সবুজ প্রযুক্তিকে। শুধু তাই নয়, দিব্যাঙ্গজন যাতে এই স্টেশনগুলিতে সহজভাবে যাতায়াত করতে পারেন তার ব্যবস্থাও থাকবে সেখানে।
যাত্রীদের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধিতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপও পূরণ করেছে ভারতীয় রেল। টিকিট বুকিং থেকে শুরু করে সিজন টিকিট ক্রয়, বিশেষ ট্রেন ও কোচগুলির ক্ষেত্রে ভাড়ার বিশেষ তালিকা ইত্যাদিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রেলকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রসারের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই ভারতীয় রেল। এমএসিপি-র আওতায় নন-গেজেটেড কর্মীদের ক্ষেত্রে উচ্চতর বেতনের পাশাপাশি জাতীয় ছুটির দিনগুলিতে কাজ করার জন্য বিশেষ ভাতা মঞ্জুর, নন-গেজেটেড আরপিএফ, আরপিএসএফ জওয়ান ও কর্মীদের জন্য রেশন মানি অ্যালাওয়্যান্স, মহিলা রেলকর্মীদের জন্য ৬০ দিন পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা, ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য আরপিএফ ও আরপিএসএফ কর্মী ও জওয়ানদের জন্য ৩০ দিনের অ্যাডহক বোনাস, কোভিড-১৯ অতিমারীজনিত পরিস্থিতিতে লকডাউনকালে রেলকর্মীদের পরিবহণ ভাতা সম্পর্কিত নিয়মকানুন ইত্যাদির ব্যবস্থা রয়েছে এই সুবিধাগুলির মধ্যে।
মানবসম্পদের পরিচালন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও আনা হয়েছে সংশোধিত নতুন নিয়ম-নীতি। শ্রমশক্তি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে রেলকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ২০২১-এর সেপ্টেম্বর মাসে চালু হয়েছে ‘রেল কৌশল বিকাশ যোজনা’।
ভারতীয় রেলের সর্বত্র ২০২২-এ যোগ দিবস উদযাপনেরও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। ৭০০টিরও বেশি অঞ্চলে ২১ জুন তারিখে যোগ দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কোনারকের সূর্য মন্দিরে এই উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন স্বয়ং রেলমন্ত্রীও। দিউ ফোর্ট এবং দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েজের বাতাসিয়া লুপে যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুই কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রীও।
২০২২-এর ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রেলের ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮৪৩ জন শিক্ষানবীশকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অন্যদিকে, রেলের নন-গেজেটেড ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৭২ জন কর্মীকে দক্ষতা বৃদ্ধি সহ নানা ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণদানের ব্যবস্থা করা হয়। রেলের শ্রমশক্তিকে আরও বাস্তবমুখীও করে তোলা হয়েছে। ২০২২-এর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তুলে দেওয়া হয়েছে ২৭,০৪৩টি পদ। রেলের পরিচালন ও ব্যবস্থা সম্পর্কিত টেলিকম, মেকানিক্যাল, সিভিল এবং ইলেক্ট্রিক্যাল দপ্তরগুলিতে এ ব্যাপারে অনুসরণ করা হচ্ছে পাঁচটি মাপকাঠিকে।
রেল নিরাপত্তা, কর্মী প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবীশ মেলার আয়োজন, আত্মপ্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ ইত্যাদিরও ব্যবস্থা চালু হয়েছে ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে।
‘গতি শক্তি কর্মসূচি’কে রেল ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও যুক্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) বিল, ২০২২-কে কাজে লাগিয়ে ‘গতি শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’কে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় রূপে রূপান্তরিত করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
রেলের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য সমগ্র ব্যবস্থাটিকে বাস্তবমুখী করে তোলা হয়েছে। রেল রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রার্থীদের আধার-ভিত্তিক চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। এর ফলে রেলের নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলিতে অসাধু কাজকর্ম দমন ও বন্ধ করার ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
২০২২ সালে দেশের ২১টি রেল রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের পক্ষ থেকে ১৪ হাজার প্রার্থীর প্যানেল প্রস্তুত করে পাঠানো হয় রেলের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ইউনিটগুলির কাছে।
এ বছর ২২ অক্টোবর ও ২২ নভেম্বর তারিখে ভারতীয় রেল আয়োজন করে দুটি ‘রোজগার মেলা’র। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কর্মপ্রার্থীদের তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে তা ডিওপিঅ্যান্ডটি-এর পোর্টালে আপলোড করা হয়।
‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচি’টি সম্প্রসারিত হয়েছে ভারতীয় রেলের সার্বিক কর্মপরিচালনার মধ্যেও।
অডিট ও অ্যাকাউন্টস ক্ষেত্রেও সার্বিকভাবে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
ভারতীয় রেলের বিভিন্ন অঞ্চল ও ডিভিশনে তথা ওয়ার্কশপগুলিতে রেল পর্ষদের পক্ষ থেকে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয় ২৩টির মতো। এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন এবং প্রয়োজনীয় উন্নয়নের সুপারিশ পেশ করা হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
রেল ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতিগত পর্যালোচনার দিকটিও কোনভাবেই উপেক্ষিত নেই। বিভিন্ন কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে নীতিগত দিকগুলিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
অবসর গ্রহণের পর রেলের পেনশন গ্রহীতারা যাতে তাঁদের ক্ষোভ ও অভিযোগ নিরসনের সুযোগ পেতে পারেন তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে। তাঁদের ক্ষোভ ও অভিযোগগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য খোলা হয়েছে একটি বিশেষ পোর্টালও।
ভারতীয় রেলের সম্পত্তি এবং যাত্রী চলাচলের ক্ষেত্রগুলিতে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার সার্বিক দায়িত্ব রয়েছে রেল রক্ষী বাহিনীর (আরপিএফ)। যাত্রী সাধারণ যাতে সুরক্ষিত অবস্থায় নিরাপদে ট্রেন সফর করতে পারেন সেজন্য ২৪ ঘন্টাই কাজ করে চলেছে এই বাহিনী। যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রেনগুলি যাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারে তার দায়িত্বও রয়েছে রেল রক্ষী বাহিনীর ওপর।
মানব পাচার রোধে রেল রক্ষী বাহিনীর ভূমিকা ও দক্ষতা অনস্বীকার্য। হারিয়ে যাওয়া শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ, আশ্রয়দান ও উপযুক্ত অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের হাজির করার দায়িত্বও রয়েছে রেল রক্ষী বাহিনীর। মানব পাচার রোধ ও মোকাবিলার ক্ষেত্রেও বিশেষ তৎপর রয়েছেন বাহিনীর কর্মী ও সদস্যরা।
যাত্রী সাধারণের প্রাণরক্ষার কাজেও সদা তৎপর আরপিএফ। ‘অপারেশন জীবন রক্ষা’ কর্মসূচির আওতায় যে কোনও পরিস্থিতিতে যাত্রী সাধারণকে রক্ষা করার জন্য তারা সাহসিকতার সঙ্গেই এগিয়ে এসেছে। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তারা এইভাবেই প্রাণরক্ষা করেছে ৪৬৩ জন পুরুষ এবং ৩২৬ জন মহিলা যাত্রীর।
যাত্রী সাধারণের হারিয়ে যাওয়া মালপত্র ফেলে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তা চিহ্নিত ও পুনরুদ্ধার করে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থার কাজেও পিছিয়ে নেই রেল রক্ষী বাহিনী। ২০২২-এর নভেম্বর মাস পর্যন্ত ২২,৮২৯ জন রেলযাত্রী ৪১ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের মূল্যবান জিনিস সহ মালপত্র ফেলে গিয়েছিলেন। রেল রক্ষী বাহিনী তা চিহ্নিত করে সেগুলি উপযুক্ত মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এইভাবেই ২০২২-এর নভেম্বর পর্যন্ত ২২,৮২৯টি ক্ষেত্রে ৪১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকার ফেলে যাওয়া ও হারিয়া যাওয়া মাল উদ্ধার করেছে আরপিএফ।
মহিলা যাত্রীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ভারতীয় রেলের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সূচনা হয়েছে ‘মেরি সহেলি’ নামে এক বিশেষ উদ্যোগেরও। যে সমস্ত মহিলা একাকী দূরগামী ট্রেনের যাত্রী তাঁদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এর আওতায়। এজন্য মহিলা যাত্রীদের জন্য ট্রেনে পাহারা বা এসকর্ট দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। রেলের কোচ ও স্টেশনগুলিতে রয়েছে সিসিটিভিও। শহরতলির ট্রেনগুলির মহিলা যাত্রীদের কামরায় মহিলা এসকর্টেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
রেলের টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে দালাল রাজের যে দৌরাত্ম বন্ধ করতে ‘অপারেশন উপলব্ধ’ নামে একটি বিশেষ কর্মসূচিও চালু করা হয়েছে। দালাল রাজের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ১৪০টিরও বেশি বেআইনি সফটওয়্যার আটক করা হয়। এই সূত্রে ২০২২-এর নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৪,৬১৪টি ক্ষেত্রে বেআইনি কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে ৪,৯২০ জন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
রেলের সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্বও রয়েছে রেল রক্ষী বাহিনীর হাতে। এই কাজেও তারা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। রেল সম্পত্তি চুরি এবং তার ক্ষয়ক্ষতির কাজে যুক্ত থাকার অপরাধে ২০২২-এর নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৬,০১৩টি ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০,৩৩৭ জন ব্যক্তিকে।
মাদক চালান ও মাদক পাচারের বিরুদ্ধেও সক্রিয় রয়েছে আরপিএফ। ২০২২-এর নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১,৪৯০টি ক্ষেত্রে নেশা ও মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে ৭৭.৫ কোটি টাকার। এই সূত্রে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১,০২২ জনকে।
সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী এলাকায় অবৈধ চোরাচালান ও কারবারের অপরাধে ২০২২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১২১টি ঘটনার সঙ্গে ৪৭ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ট্রেনে সফরকালে আপৎকালীন ক্ষেত্রে যাত্রী সুরক্ষার কাজেও বরাবরই এগিয়ে এসেছে রেল রক্ষী বাহিনী। ২০২২-এর নভেম্বর পর্যন্ত ট্যুইটারের মাধ্যমে এবং হেল্পলাইন মারফৎ দায়ের করা অভিযোগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লক্ষ ৯৯২টি।
ট্রেন সফরকালে যাত্রীদের শরীরে দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও কারণে রক্তের প্রয়োজন দেখা দিলে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে এসেছে ভারতীয় রেল। রেল রক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে ২০২২-এর ১৭ ও ২০ ডিসেম্বর আয়োজন করা হয় বড় ধরনের দুটি রক্তদান অভিযানের। ৩,৯৪৬ জন আরপিএফ জওয়ানের সঙ্গে এই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে ৮২৯ জন স্বেচ্ছাসেবীও। তাঁরা সকলেই রক্তদানের মাধ্যমে এই অভিযানকে সফল করে তোলেন।
সবুজায়নের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৭ লক্ষ ৫০ হাজারের মতো গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে আরপিএফ-এর পক্ষ থেকে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘ঐক্যের জন্য দৌড়’ কর্মসূচিতে অংশ নেয় রেল রক্ষী বাহিনীর জওয়ান ও কর্মীরা।
স্বচ্ছতা অভিযান এবং অন্যান্য কল্যাণমূলক কর্মপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রেও ভারতীয় রেলের কর্মী ও জওয়ানদের অবদান এক কথায় অনস্বীকার্য।
স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে নানা কর্মপ্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সামিল হয়েছে ভারতীয় রেলও।
PG/SKD/DM
(Release ID: 1887131)