সারওরসায়নমন্ত্রক

‘জনঔষধি দিবস’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 07 MAR 2021 3:01PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি,  ০৭ মার্চ, ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ ‘জনঔষধি দিবস’ উদযাপন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে তিনি শিলং-এ অবস্থিত নর্থ ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ অ্যান্ড মেডিকেল সায়েন্স (এনইআইজিআরআইএইচএমএস)-এ দেশের ৭৫০০ তম জনঔষধি কেন্দ্রটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। এদিন তিনি ‘প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনঔষধি পরিযোজনা’র সুবিধাভোগীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মিলিত হন। এই ক্ষেত্রে যারা অসামান্য কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পুরষ্কৃতও করেন। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী ডি ভি সদানন্দ গৌরা, শ্রী মনসুখ মাণ্ডভিয়া, শ্রী অনুরাগ ঠাকুর, হিমাচল প্রদেশ এবং মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী দ্বয় এবং গুজরাট ও মেঘালয়ের উপ মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী এদিন হিমাচল প্রদেশের সিমলা, মধ্যপ্রদেশের ভোপাল, গুজরাটের আমেদাবাদ, দিউ-এর মারতি নগর এবং কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর - এই পাঁচটি স্থানে অবস্থিত জনঔষধি মিত্রের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সকলকেই একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, কম দামের কারণে রোগীরা তাঁদের প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে পারছেন, যার ফলে তাঁদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটছে। জনঔষধি আন্দোলনের বাহক যুব সম্প্রদায়ের ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন তিনি এবং তাঁদেরকে এই টিকাকরণ প্রক্রিয়া অভিযানে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী সুবিধাভোগীদের জনঔষধির সুফল বার্তা ছড়িয়ে দিতে বলেন। শ্রী মোদী জানান, “আপনারা হলেন আমার পরিবার এবং আপনাদের কেউ অসুস্থ হবার অর্থ আমার পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতা, এই কারণে আমি চাই সমস্ত দেশবাসী সুস্থ থাকুক”।

অনুষ্ঠানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, জনঔষধি পরিযোজনা দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে বড় বন্ধু হয়ে উঠেছে। এটি পরিষেবা এবং কর্মসংস্থান উভয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। শিলং-এ দেশের ৭৫০০ তম জনঔষধি কেন্দ্র উৎসর্গ করার মাধ্যমে উত্তর পূর্বে জনঔষধি কেন্দ্রগুলি ছড়িয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। শ্রী মোদী বলেন এই প্রকল্পটি পার্বত্য অঞ্চল, উত্তর পূর্ব এবং উপজাতি অঞ্চলের লোকেদের সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সরবরাহ করছে। তিনি বলেন যে ৭৫০০ তম কেন্দ্র জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ৬ বছর আগে ভারতে ১০০টিও এই ধরণের কেন্দ্র ছিল না। অতি দ্রুত ১০,০০০টি এই কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জনের আহ্বান জানান তিনি। ব্যয়বহুল ওষুধের ক্ষেত্রে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি প্রতি বছর প্রায় ৩,৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারছেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি নারীদের আত্মনির্ভরতার ক্ষেত্রে সহায়তা দান করেছে। কারণ মহিলারা ১,০০০-এরও বেশি কেন্দ্র পরিচালনা করছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে জানান এই প্রকল্পটির বিষয়ে প্রচার চালাতে উৎসাহ ভাতা আড়াই লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। এমনকি দলিত আদিবাসী মহিলা এবং উত্তর পূর্বের মানুষের জন্য অতিরিক্ত ২ লক্ষ উৎসাহ ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও জানান যে, ভারতের তৈরি ওষুধ এবং শল্য চিকিৎসার বিষয়ে চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা বজায় রাখতে উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বিপুল সংখ্যায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, জনঔষধি কেন্দ্রগুলিতে এখন ৭৫টি আয়ুশ ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। আয়ুশ ওষুধ কম দামে পেয়ে রোগীরা উপকৃত হচ্ছেন এবং আয়ুর্বেদ ও আয়ুশ ঔষধ ক্ষেত্র লাভবান হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান যে, দীর্ঘকাল ধরে সরকারের চিন্তাভাবনা ছিল স্বাস্থ্যকে কেবলমাত্র রোগ ও চিকিৎসার বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা। তবে স্বাস্থ্যের বিষয়টি কেবল রোগ এবং চিকিৎসার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিকাঠামোর সঙ্গেও যুক্ত। তিনি উল্লেখ করেন যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সামগ্রিক পদক্ষেপের জন্য সরকার রোগের কারণগুলি চিহ্নিত করেছে। তিনি স্বচ্ছ ভারত অভিযান, বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ, আয়ুষ্মান ভারত, মিশন ইন্দ্রধনুষ, পোষণ অভিযান ও যোগাভ্যাসের বিষয় তুলে ধরেন এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সরকার সামগ্রিকভাবে গুরুত্ব দিয়েছে বলেও জানান। রাষ্ট্রসঙ্ঘ ২০২৩ সালকে মোটা দানা শস্যের আন্তর্জাতিক বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি মোটা দানা শস্যের বিষয়ে প্রচারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। কারণ এটি কেবল পুষ্টিকর খাদ্যশস্য সরবরাহ করে না, কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে। 

দরিদ্র পরিবারগুলির ওপর চিরিৎসার বিশাল বোঝার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে এবং দেশের প্রতিটি দরিদ্র ব্যক্তির কাছে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সহজলভ্য করে তোলা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, হার্টস্টেন্ট, হাঁটুর অপারেশন সম্পর্কিত সরঞ্জামের দাম বহু গুণে হ্রাস করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আয়ুষ্মান যোজনায় দেশের ৫০ কোটিরও বেশি দরিদ্র পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমামূল্যে চিকিৎসা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত দেড় কোটিরও বেশি মানুষ এর সুবিধা নিয়েছেন এবং প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী ভারতে করোনা টিকা তৈরির জন্য বিজ্ঞানীদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং বলেন, আজ ভারত শুধুমাত্র নিজেদের ব্যবহারের জন্যই নয়, বিশ্বকেও টিকা দিয়ে সাহায্য করছে। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী মানুষের টিকাকরণের বিষয়ে সরকার বিশেষভাবে আগ্রহী। সরকারি হাসপাতালগুলিতে এই টিকা বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে মাত্র ২৫০ টাকায় এই টিকা মিলছে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন।

প্রধানমন্ত্রী এদিন কার্যকরি চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত শ্রেষ্ঠ কর্মী গড়ে তোলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক হাসপাতাল থেকে এআইআইএমএস-এর মতো মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সম্প্রসারণের সরকার সামগ্রিকভাবে কাজ শুরু করেছে। 

প্রধানমন্ত্রী গত ৬ বছরে চিকিৎসা পরিকাঠামো উন্নতিসাধনে সরকারের প্রয়াসের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০১৪ সালে এমবিবিএস পাঠক্রমে ৫৫ হাজার আসন সংখ্যা ছিল। গত ৬ বছরে এর সঙ্গে আরও ৩০ হাজার আসন সংখ্যা যুক্ত করা হয়েছে। একইভাবে ৩০ হাজার স্নাতকোত্তর আসনের সঙ্গে ২৪ হাজার নতুন আসন সংখ্যা যুক্ত করা হয়েছে। ১৮০টি নতুন মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলা হয়েছে বিগত ৬ বছরে। গ্রামে দেড়লক্ষ স্বাস্থ্য ও সুস্থতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার কেন্দ্রে পরিষেবার কাজ চলছে। এই কেন্দ্রগুলিতে গুরুতর অসুস্থতার চিকিৎসাও করা হচ্ছে এবং যথাযথ পরীক্ষার কাজও চলছে। শ্রী মোদী বাজেটে স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর স্বাস্থ্য যোজনা’ এক্ষেত্রে যথাযথ সাহায্য করতে পারে বলেও তিনি জানান। প্রতিটি জেলায় রোগ পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে এবং ৬০০টিরও বেশি ক্রিটিক্যাল কেয়ার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে তিনি জানান। ৩টি লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে একটি করে মেডিকেল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার কাজ চলছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

শ্রী মোদী বলেন, এখন সরকার সকলের জন্য কম খরচে চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে। এই চিন্তাভাবনা নিয়ে এখন নীতি ও কর্মসূচি তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী জনঔষধি প্রকল্পের নেটওয়ার্ক দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে বহু সংখ্যক মানুষের কাছে এর পরিষেবা পৌঁছে যেতে পারে।  

অনুষ্ঠানের ভাষণে শ্রী গৌরা বলেন, ২০১৪ সাল থেকে সরকার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষ সহ সাধারণ মানুষের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, আগামী অর্থ বর্ষে সরকার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ২.২৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে। যা চলতি অর্থ বর্ষের তুলনায় ১৩৭ শতাংশ বেশি। 

কোভিড মহামারীর কঠিন সময়ে ‘প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনঔষধি কেন্দ্র’ দেশে জরুরি পরিষেবা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে যেভাবে কাজ করেছে তার জন্য উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে নিয়মিত কাজকর্ম পরিচালিত হচ্ছে এবং নাগরিকদের ওষুধ সরবরাহ সুনিশ্চিত হয়েছে।  

পয়লা মার্চ থেকে ৭ মার্চ দেশজুড়ে ‘জনঔষধি সপ্তাহ’ উদযাপন করা হয়। এবছরের বিষয় ভাবনা হলো ‘জনঔষধি – সেবা ভি রোজগার ভি’। জেনেরিক ওষুধের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এই বিষয় ভাবনা স্থির করা হয়েছে। জনঔষধি সপ্তাহ উপলক্ষে সাত দিন ধরে একাধিক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

***

 

 

CG/SS/SKD



(Release ID: 1703069) Visitor Counter : 200


Read this release in: English , Urdu , Hindi , Telugu