প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

জাতির উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত ২’ (১০ম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ

Posted On: 29 MAR 2020 1:35PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৯.০৩.২০২০

 

 

আমার প্রিয় দেশবাসী,  অন্যান্যবার ‘মন কি বাত’-এ আমি কত রকমের বিষয় নিয়ে হাজির হই, কিন্তু আজ দেশ এবং দুনিয়ার মনে একটিই এবং শুধু মাত্র একটিই কথা — করোনা মহামারী থেকে তৈরি হওয়া ভয়ঙ্কর সংকট। এই সময়ে আমার অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিত হবে না। গুরুত্বপূর্ণ কথা অনেক বলা যাবে, কিন্তু আজ আমার মন চাইছে এই মহামারী নিয়েই কিছু বলি। তবে সবার আগে আমি আমার সমস্ত দেশবাসীর কাছে মাপ চেয়ে নিচ্ছি। আমার মন বলছে, আমার কিছু সিদ্ধান্তের জন্য যে আপনাদের প্রচণ্ড অসুবিধার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, সেজন্য আপনারা আমাকে নিশ্চয়ই মার্জনা করে দেবেন। বিশেষ করে আমার গরীব ভাই-বোনেরা নিশ্চয়ই ভাবছেন যে এ কেমন প্রধানমন্ত্রী, যে আমাদের এই রকম মুস্কিলে ফেলে দিল! তাঁদের কাছেও আমি বিশেষভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। হয়ত অনেকে আমার ওপর বিরক্তও হয়েছেন যে সবাইকে ঘরে বন্ধ করে রেখেছে, এ কেমন ব্যাপার!  

আমি আপনাদের অসুবিধে — আপনাদের সমস্যা বুঝতে পারছি, কিন্তু ভারতের মত ১৩০ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্য আর কোনো রাস্তা ছিল না। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ হল জীবন আর মৃত্যুর যুদ্ধ, আর এই যুদ্ধ আমাদের জিততেই হবে। আর সেজন্যেই কঠিন হওয়া জরুরি। কারুর ইচ্ছে করে না এত কঠোর পদক্ষেপ নিতে, কিন্তু গোটা দুনিয়ার অবস্থা দেখার পর মনে হয় এছাড়া গত্যন্তর ছিল না। আপনাদের এবং আপনাদের পরিবারগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমি আবার একবার আপনাদের যাবতীয় অসুবিধার জন্য মাপ চাইছি। বন্ধুগণ, কথায় আছে — ‘এবংএবংবিকারঃ, অপিতরুনহাসাধ্যতেসুখং’, অর্থাৎ  রোগ এবং তার প্রকোপের ব্যাপারে শুরুতেই ব্যবস্থা নিতে হয়,  কারণ পরে যখন তা আয়ত্বের বাইরে চলে যায় তখন প্রতিকার করাই মুশকিল হয়ে যায়। আজ গোটা ভারত, প্রত্যেক ভারতবাসী তা-ই করছেন। ভাই-বোন, মা এবং প্রবীণেরা, করোনা ভাইরাস সারা দুনিয়াকে বন্দি করে দিয়েছে। সে জ্ঞান, বিজ্ঞান, ধনী, দরিদ্র, দুর্বল, শক্তিমান — সকলকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। একে কোনো রাষ্ট্রসীমায় বাঁধা যায় না, কোনো এলাকা বা আবহাওয়ারও এ তোয়াক্কা করে না। এই ভাইরাস মানুষকে শুধু মারা নয়, একেবারে শেষ করে দেবার জেদ ধরে বসে আছে, আর সেই জন্যেই সব্বাইকে, পুরো মানবজাতিকে একজোট হয়ে এই ভাইরাসকে খতম করার সংকল্প নিতে হবে। কিছু মানুষের মনে হচ্ছে, 'লকডাউন' পালন করে তাঁরা অন্যের উপকার করছেন। এরকম ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়। এই লকডাউন আপনাদের নিজেদের বাঁচার জন্যে। আপনাদের নিজেকে বাঁচতে হবে, নিজের পরিবারকে বাঁচাতে হবে। এখন আগামী বেশ কিছু দিন পর্যন্ত আপনাদের এই ধৈর্য দেখাতে হবে, লক্ষণরেখাটি মেনে চলতে হবে। সাথীরা, আমি জানি, আইন কেউ ভাঙতে চান না, নিয়মকেও ভাঙতে চান না, তবু কিছু লোক যে তা করছেন তার কারণ হল, তাঁরা পরিস্থিতির গুরুত্বটাই এখনও বুঝতে পারছেন না। এঁদের একথাই বলব যে, লকডাউনের নিয়ম যদি ভাঙেন তাহলে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচা মুশকিল হয়ে যাবে। সারা পৃথিবীতে কিছু লোক, যাঁরা এই রকম ভুল করেছিলেন, তাঁরা আজ পস্তাচ্ছেন। বন্ধুরা, কথিত আছে – ‘আরোগ্যমপরমভাগ্যম / স্বাস্থ্যংসর্বার্থসাধনম’ অর্থাৎ আরোগ্যই সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য, এবং স্বাস্থ্যই দুনিয়ার সমস্ত সুখের সাধন। নিয়ম যাঁরা ভাঙছেন তাঁরা আসলে নিজেদের জীবন নিয়েই ছেলেখেলা করছেন। 

বন্ধুগণ, এই লড়াইয়ে এমনও অনেক যোদ্ধা আছেন যাঁরা ঘরে নয়, ঘরের বাইরে থেকে করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করছেন যাঁরা আমাদের ফ্রন্টলাইন সোলজার্স-সামনের সারির যোদ্ধা। এর মধ্যে বিশেষ করে আমাদের সেই সব ভাইবোনেরা রয়েছেন যাঁরা নার্সিংয়ের কাজ করেন, রয়েছেন ডাক্তার এবং প্যারামেডিকেল কর্মীরা। সেই সব বন্ধুরা যাঁরা করোনাকে পরাজিত করেছেন, তাঁদের থেকে আমাদের প্রেরণা নিতে হবে। গত কয়েক দিনে আমি এই রকম কিছু মানুষের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি,  তাঁদের উৎসাহ দিয়েছি এবং তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আমার নিজেরও উৎসাহ বেড়ে গেছে। আমি তাঁদের থেকে অনেক কিছু শিখেছি। এবারের ‘মন কি বাত’-এ আমি সেই সব বন্ধুদের অনুভব, তাঁদের কথাবার্তার কিছু অংশ আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। প্রথমে আমাদের মধ্যে আসবেন শ্রী রামগম্পা তেজা-জী। যিনি একজন তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত। আসুন, তাঁর কথা শুনি।

রামগম্পা তেজা : নমস্কার।

মোদিজি  :   কে, রাম বলছেন?

রামগম্পা :   হ্যাঁ, আমি রাম বলছি।

মোদিজী   : হ্যাঁ, রাম, নমস্কার।

রামগম্পা : নমস্কার, নমস্কার।

মোদিজী   : আমি শুনেছি, আপনি করোনা সংক্রমণের এই গভীর বিপদ কাটিয়ে উঠেছেন।

রামগম্পা : হ্যাঁ।

মোদিজী   : আমি আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। আপনি এই বিপদ কাটিয়ে উঠেছেন এ ব্যাপারে আপনার অভিজ্ঞতার কথা কিছু বলুন।

রামগম্পা : আমি আই-টি সেক্টরের একজন কর্মী। কাজের প্রয়োজনে আমাকে দুবাইতে একটি মিটিংয়ে যেতে হয়েছিল। সেখানে আমার অজান্তেই এই সংক্রমণ ঘটে যায়। দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে জ্বর এবং বাকি সব উপসর্গ দেখা দেয়। পাঁচ-ছয় দিন বাদে ডাক্তারেরা যখন করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করলেন তখন সেটা পজিটিভ এল। তখন আমি হায়দ্রাবাদে গান্ধী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হই এবং চোদ্দদিন বাদে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সকলে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিল।

মোদিজী   : অর্থাৎ যখন আপনার সংক্রমণ ধরা পড়ে? 

রামগম্পা : হ্যাঁ।

মোদিজী   :   এই ভাইরাসটি যে খুব মারাত্মক সেটা তাঁদের আগেই জানা ছিল নিশ্চয়ই।

রামগম্পা : হ্যাঁ।

মোদিজী   : রোগ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার একদম প্রথম প্রতিক্রিয়া কী ছিল?   

রামগম্পা : প্রথমে তো খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শুরুতে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে রোগটা আমার হয়েছে, কী করেই বা হল। কারণ, ভারতে তখন দু-তিনজনের সংক্রমণ হয়েছে। তাঁদের বিষয়ে কিছু জানতাম না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আমাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ওখানে প্রথম দু-তিন দিন এমনিই কেটে যায়। কিন্তু ওখানকার ডাক্তার এবং নার্স যাঁরা আছেন আমার সঙ্গে তাঁরা খুব ভালো ব্যবহার করেছিলেন। প্রত্যেক দিন আমাকে ফোন করে কথা বলতেন এবং ভরসা দিতেন যে কিছু হবে না, আপনি ঠিক হয়ে যাবেন। দিনে দু-তিনবার ডাক্তার এবং নার্সরা আমার সঙ্গে কথা বলতেন। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম বটে কিন্তু তারপরে মনে হত এতসব ভালোমানুষের সঙ্গে আছি, এক্ষেত্রে কী করা উচিত সেটা তাঁরা জানেন কাজেই আমি নিশ্চয়ই ভালো হয়ে যাব। এই রকমই মনে হয়েছিল।

মোদিজী   :   পরিবারের বাকি লোকদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল?   

রামগম্পা : যখন আমি হাসপাতালে ভর্তি হলাম, প্রথমে তো সকলে খুব চাপের মধ্যে ছিল, সবার অতিরিক্ত খেয়াল দেবার কারণে একটু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু হ্যাঁ, সবার আগে ওদের পরীক্ষা করাই। সকলেই নেগেটিভ আসে যেটা খুব বড় আশীর্বাদ ছিল আমার ও আমার পরিবারের জন্য, আমার আশেপাশের মানুষদের জন্য। তারপর তো প্রতিদিন অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ডাক্তাররা আমাকে ও আমার পরিবারকে এই কথা-ই জানান।

মোদিজী  : আপনি কী কী সাবধানতা অবলম্বন করেন? আপনার  পরিবার কী কী বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখে?

রামগম্পা : প্রথম যখন জানতে পারি তখন আমি  কোয়ারান্টাইনে এ ছিলাম। তারপর আরও চোদ্দ দিন ডাক্তাররা আমায়  নিজের বাড়িতে  থাকার  পরামর্শ  দেয়। তারা বলে নিজের ঘরে হাউস কোয়ারান্টাইনে থাকতে। সুতরাং  ফেরার পর আমি নিজের বাড়িতেই আছি। নিজের ঘরেই থাকি বেশীরভাগ, সবসময় মাস্ক পড়ে  থাকি। খাওয়ার সময় হাত ধোয়া  ভীষণ জরুরি, সেই সব খেয়াল রাখি।

মোদিজী : ঠিক আছে রাম, আপনি সুস্থ হয়ে এসেছেন, আপনাকে ও আপনার পরিবারকে আমার শুভ কামনা রইল।

রামগম্পা : ধন্যবাদ

মোদিজী  :    কিন্তু আমি চাই আপনার অভিজ্ঞতা।

রাম     :     হ্যাঁ।

মোদিজী  :    আপনি তো তথ্যপ্রযুক্তির পেশার সাথে যুক্ত?

রাম     :     হ্যাঁ 

মোদিজী  : আমি চাই আপনি অডিও বানিয়ে সবার সাথে শেয়ার করুন, স্যোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল  করুন। এর ফলে মানুষ ভয় পাবেনা, খুব সহজেই জানতে পারবে কি করনীয়।

রাম     :     হ্যাঁ, আমি বাইরে  আসা ইস্তক দেখছি লোকে কোয়ারান্টাইন  মানে জেল  যাওয়ার  মত ভাবছে। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নয়। সবার জানা দরকার সরকারী নজরদারীতে আলাদা থাকাটা তাদের জন্য, তাদের পরিবারের জন্য। আমি সবাইকে বলতে চাই, পরীক্ষা  করান, কোয়ারান্টাইনকে ভয় পাবেন না। কোনো লজ্জা থাকা উচিত  নয় আলাদা নজরদারীতে থাকার বিষয়টার উপর।

মোদিজী : ঠিক আছে রাম, অনেক অনেক শুভ কামনা আপনাকে।

রাম     : ধন্যবাদ!

মোদিজী  : ধন্যবাদ ভাই, অনেক ধন্যবাদ!

বন্ধুরা, করোনা আক্রান্ত  হওয়ার  সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার পর রাম ডাক্তারের প্রত্যেকটা নির্দেশ পালন করেন এবং তার ফলস্বরূপ সে এখন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে। আমাদের সঙ্গে এখন আর এক বন্ধু আছেন যিনি করোনাকে পরাজিত করেছেন। এঁর গোটা পরিবার সংকটাপন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাঁর তরুন ছেলে ফেঁসে গিয়েছিল। আসুন, কথা বলি আগ্রার শ্রী অশোক কপুরের সঙ্গে।

মোদিজী         : অশোকজি, নমস্কার

অশোক কাপুর : নমস্কার। আমার সৌভাগ্য যে আপনার সাথে কথা বলতে পারছি।

মোদিজী         :  আমারও সৌভাগ্য। আপনার পুরো পরিবার এই সংকটে পড়েছিল?

অশোক কাপুর : আজ্ঞে হ্যাঁ।

মোদিজী         : আমি জানতে চাই আপনি এই সংক্রমণের ব্যাপারে জানতে পারলেন কিভাবে? ঠিক  কি হয়েছিল? হাসপাতালে কি হয়েছিল? আপনার  কথা শুনে যদি এমন কিছু জানতে পারি যা দেশের কাজে আসবে আমি তাই করব।

আশোক কাপুর  :  নিশ্চয়ই। আমার দুই ছেলে। ওরা ইতালি গিয়েছিল। ওখানে জুতো শিল্প মেলায় ছিল। আমরা জুতোর কারবার করি, কারখানা আছে জুতো তৈরির। ওরা ইতালি গিয়েছিল, মেলায়। আমার জামাইও গিয়েছিল। ও দিল্লিতে থাকে। ওর একটু অসুবিধা হচ্ছিল বলে ও রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল যায়। ওখানে ওকে পজিটিভ বলে আর সাফদারজাং পাঠিয়ে দেয়। আমাদের কাছে ফোন আসে যে আপনারাও ওঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন সুতরাং আপনারাও পরীক্ষা করান। তাই আমার দুই ছেলে পরীক্ষা করাতে চলে যায় আগ্রা জেলা হাসপাতালে। সেখানে ওদের বলে গোটা পরিবারকে নিয়ে আসতে। আমরা সবাই যাই।

মোদিজী         : আচ্ছা

অশোক কাপুর : পরের দিন ওঁরা আমাদের ছয়জনকে মানে আমার দুই ছেলে, আমি — আমার বয়স তিয়াত্তর বছর, আমার স্ত্রী, এক বউমা ও ষোলো বছরের নাতি — সকলকে পজিটিভ বলে আর জানায় যে আমাদের দিল্লি যেতে হবে।

মোদিজী         : হে ভগবান!

অশোক কাপুর : কিন্তু স্যার, আমরা  ভয় পাইনি। ভাবলাম, মন্দের ভাল, অন্তত জানতে তো পেরেছি।  আমরা  দিল্লির সাফদারজাং হাসপাতালে চলে যাই। আগ্রা থেকেই আমাদের পাঠানো হয়। ওরা আমাদের বিনামূল্যে দুটো অ্যাম্বুলেন্সে পাঠায়। আমরা খুব কৃতজ্ঞ আগ্রার ডাক্তারদের কাছে, এখানকার প্রশাসনের কাছে। এঁরা আমাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে।

মোদিজী         : আপনারা অ্যাম্বুলেন্সে আসেন?

অশোক কাপুর :    হ্যাঁ অ্যাম্বুলেন্সেই এসেছি। ভালোই ছিলাম, বসেছিলাম, যেরকম অ্যাম্বুলেন্সে বসা যায় আর কি। ওঁরা আমাদের দুটো অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিলেন, সঙ্গে ডাক্তারও দিয়েছিলেন, আর আমাদের সাফদারজং হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। সাফদারজং হাসপাতালে ডাক্তাররা গেটে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা আমাদেরকে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে নিয়ে গেলেন। আমাদের ছয়জনকে আলাদা আলাদা রুম দেওয়া হল। রুমগুলো ভালোই ছিল, সব ব্যবস্থাই ছিল। আমরা চৌদ্দ দিন হাসপাতালে একান্তেই কাটিয়েছি। ডাক্তারদের কথা বলতে গেলে এটুকুই বলবো যে তাঁরা আমাদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করেন, আমাদের ভালোভাবে চিকিৎসা করেন। আসলে তাঁরা সেই বিশেষ পোশাকটি পড়তেন তো তাই বোঝা যেত না কে ডাক্তার, কে ওয়ার্ড বয়, বা কে নার্স। তাঁরা যা যা বলতেন, আমরা শুনতাম। তাই আমাদের কারও ১ শতাংশও কোন সমস্যা হয়নি।

মোদিজী         :    মনে হচ্ছে আপনার আত্মবিশ্বাসও বেশ দৃঢ়।

অশোক কাপুর :    হ্যাঁ, আমি একদম সুস্থ আছি। আমিতো আমার হাঁটুর অপারেশনও করিয়েছি, তার পরেও আমি একদম ভালো আছি।

মোদিজী         :    না, কিন্তু যখন আপনার পরিবারকে এত বড় সংকটের মোকাবিলা করতে হলো, যার মধ্যে একটি ষোলো বছরের বাচ্চাও ছিল...

অশোক কাপুর :    মহাশয় ওর পরীক্ষা ছিল। আই-সি-এস-সি’র পরীক্ষা। আমরা ওকে পরীক্ষা দিতে দিইনি। আমি বললাম পরে দেখা যাবে। প্রাণ থাকলে তবেই পরবর্তীতে এরকম অনেক পরীক্ষা দিতে পারবে। এই নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই।

মোদিজী         :    হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছেন। আপনার অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনি আপনার পরিবারকে ভরসা জুগিয়েছেন, তাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়েছেন।

অশোক কাপুর :    হ্যাঁ, সেই কঠিন সময়ে আমাদের পরিবারের প্রত্যেকে একে অপরের মনোবল বাড়াতাম। আমাদের দেখা হতো না ঠিকই, কিন্তু ফোনে আমরা কথা বলে নিতাম। আর আমাদের সম্পূর্ণ দেখভাল, যতটা সম্ভব, ততটা ডাক্তাররা করেছেন। তার জন্য আমরা ওঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। হাসপাতালের কর্মীরা, নার্সরা, আমাদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।

মোদিজী         :    আমার পক্ষ থেকে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

অশোক কাপুর :    অনেক ধন্যবাদ। আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়ায় আমি আপ্লুত।

মোদিজী         :    আমরাও

অশোক কাপুর :    এর পরেও বলব মহাশয় যদি আমাদেরকে কোন ব্যাপারে প্রয়োজন হয়, তা সে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য কোথাও যাওয়াই হোক, বা অন্য কোন কাজে, আমাদেরকে বলবেন, আমরা সব সময়ই প্রস্তুত।

মোদিজী         :    আপনারা আপনাদের মত করে আগ্রাতেই সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারেন। ক্ষুধার্ত কাউকে দেখলে তাকে খাবার দিতে পারেন। গরিব মানুষের কথা চিন্তা করুন আর কি কি নিয়ম পালন করা উচিত তা লোকজনকে বোঝান। লোকেদের জানান যে কীভাবে নিয়ম পালন করেই, নিয়মের মধ্যে থেকেই আপনি এবং আপনার পরিবার এই সংক্রমণ থেকে মুক্ত হয়েছেন। তাঁদের বোঝান যে নিয়ম পালন করলেই দেশ এই সংকটের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

অশোক কাপুর :    মহাশয়, আমরা আমাদের ভিডিও বানিয়ে বিভিন্ন চ্যানেলে দিয়েছি।

মোদিজী         :    আচ্ছা।

অশোক কাপুর :    চ্যানেলে ইতিমধ্যে সেগুলো দেখিয়েছে যাতে সচেতনতা বৃদ্ধি হয়।

মোদিজী         :    সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে এ বিষয়ে আরও বেশি প্রচার করতে হবে।

অশোক কাপুর :    আমরা যে কলোনিতে থাকি তা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি যে আমরা ফিরে এসেছি বলে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। কারও যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে গিয়ে যেন পরীক্ষা করায়। যাঁরা যাঁরা আমাদের সংস্পর্শে আসবেন তাঁরা যেন পরীক্ষা অবশ্যই করান। ঈশ্বরের কৃপায় সবাই যেন ভাল থাকেন।

মোদিজী         :    আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

অশোক কাপুর :    আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আমার তো এটা ভেবেই খুব আনন্দ হচ্ছে যে আপনার সঙ্গে কথা হয়ে গেল। আপনাকে একবার দেখেছিলাম আমেদাবাদে, এখন আপনার সঙ্গে কথাও হয়ে গেল। আমাদের বাড়ি মণি নগরে।

মোদিজী         :    আচ্ছা আচ্ছা।

অশোক কাপুর :    আপনাকে সেখানে দেখেছিলাম একবার, আমার দাদা সেখানে থাকেন।

মোদিজী         :    আচ্ছা, এখন আপনারা সপরিবারে আগ্রায় থাকেন?

অশোক কাপুর :    হ্যাঁ আমরা আগ্রাতে থাকি ।আমার আরও দুই ভাই মণি নগর এবং আমেদাবাদে থাকেন।

মোদিজী         :    আচ্ছা আচ্ছা বেশ।

অশোক কাপুর :    সেটা তো আপনার নির্বাচনক্ষেত্র ছিল, যখন আপনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

মোদিজী         :    হ্যাঁ আমি সেই অঞ্চলেরই বিধায়ক ছিলাম।

অশোক কাপুর :    হ্যাঁ, মহাশয় আমি একবার সেখানেই ছিলাম যখন আপনার প্রচার চলছিল। খুব ভালো লাগলো আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে।

মোদিজী         :    অনেক ধন্যবাদ, অনেক শুভেচ্ছা।

অশোক কাপুর :    অনেক অনেক ধন্যবাদ।

বন্ধুরা, আমরা অশোকবাবু এবং তাঁর পরিবারের দীর্ঘায়ু কামনা করি। যেমন তিনি বললেন যে আতঙ্কিত না হয়ে, নির্ভয়ে যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সময় মতো ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করেই আমরা এই মহামারীটিকে পরাস্ত করতে পারি। বন্ধুরা, আমরা কীভাবে চিকিত্সার মাধ্যমে এই মহামারীটির মোকাবিলা করছি তার অভিজ্ঞতা জানতে, আমি এমন কয়েকজন ডাক্তারের  সঙ্গেও কথা বললাম যারা এই যুদ্ধে প্রথম সারির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁদের রোজনামচা এখন এই রোগীদেরকে ঘিরেই। আসুন দিল্লি থেকে ডাঃ নীতেশ গুপ্তের সঙ্গে আমরা কথা বলি।

মোদিজী        :    নমস্কার ডাক্তারবাবু।

ডাঃ নীতিশ গুপ্তা:   নমস্কার স্যার।

মোদিজী         :    নমস্কার নীতিশ-জী, আপনি তো বাহিনীতে একেবারে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। আমি জানতে চাইছি যে হাসপাতালে আপনার বাকি সাথীদের মনোবল কেমন আছে?  

ডাঃ নীতিশ গুপ্তা:   সবারই মনোবল তুঙ্গে আছে। আপনার আশীর্বাদ সবার সঙ্গে আছে। হাসপাতালগুলিকে আপনি যেভাবে সাহায্য করছেন, যে জিনিসটা আমরা চাইছি, সেটাই আপনি যোগান করছেন, যেভাবে সেনাবাহিনী সীমান্তে লড়াই করে, আমরাও ঠিক সেভাবে কাজে লেগে রয়েছি এবং আমাদের কেবলমাত্র একটাই কর্তব্য, রোগীকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো। 

মোদিজী           :   আপনি একদম ঠিক বলেছেন, এটা সত্যিই একটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি এবং আপনারাই সীমান্ত সামলাচ্ছেন। 

ডাঃ নীতেশ গুপ্তা :  হ্যাঁ সার।

মোদিজী           : আপনাদের তো রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের কাউন্সেলিংও করতে হচ্ছে…

ডা নীতেশ গুপ্তা   : হ্যাঁ সার, ওটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। কারণ রোগীরা যখন প্রথম জানতে পারেন তাঁদের কী হয়েছে তখন তাঁরা ভীষণ ভয় পেয়ে যান। ভাবেন এটা কী হচ্ছে আমার সঙ্গে…ওঁদের বোঝাতে হয় যে এটা কিছু না, আগামী ১৪ দিনে আপনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। এখনো পর্যন্ত আমরা এরকম ১৬জন রোগীকে বাড়ী পাঠাতে সক্ষম হয়েছি।

মোদিজী           : তাহলে এটা বলুন যে সব মিলিয়ে  আপনাদের সামনে কী-কী সমস্যা আসছে, ভীত ব্যক্তিদের কী নিয়ে সবচেয়ে সংশয় হচ্ছে?

ডাঃ নীতেশ গুপ্তা        : ওঁরা এটাই ভাবেন যে সামনে কী হবে? এবার ওঁদের কী হবে? আসলে ওঁরা দেখেছেন যে বাইরের দেশে এত লোক মারা যাচ্ছেন, তো ওঁরা ভাবেন ওঁদের সঙ্গেও এই পরিণতিই হবে। তখন আমাদের ওদেরকে বোঝাতে হয় যে আপনার এই সমস্যা এই দিনে ঠিক হবে। আপনার কেসটি ভীষণ অল্প, সাধারণ সর্দি-কাশীর কেসগুলো ঠিক এরকমই হয়। তাই ওঁরা যেরকম ৫-৭দিনে সেরে ওঠেন, আপনারাও উঠবেন। তারপর আমরা আপনাদের টেস্ট করব, সেটা নেগেটিভ এলে আপনাকে আমরা বাড়ী পাঠাতে পারব। এই জন্যই বার-বার, তিন-চার ঘন্টা অন্তর-অন্তর আমরা ওঁদের সঙ্গে

দেখা করি, ওঁদের জিজ্ঞেস করি কেমন আছেন। সারাদিন ওঁদের সঙ্গে কথা বললে ওঁদের সুবিধা হয়, ওঁদের ভাল লাগে।

মোদিজী           : ওঁদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। প্রথমে তো নিশ্চয় ভীষণ ভয় পেয়ে যান?

ডাঃ নিতেশ গুপ্তা : শুরুতে তো ভয় পেয়ে যান, কিন্তু যখন আমরা বোঝাই, তারপর যখন দ্বিতীয়-তৃতীয় দিনে এসে যখন ওঁরা নিজেরাই দেখেন যে ঠিক হয়ে যাচ্ছেন, তখন ওঁরা নিজেরাই বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে ওঁরা সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন।

মোদিজী           : কিন্তু প্রত্যেক ডাক্তারেরই এটা মনে হয় যে জীবনের শ্রেষ্ঠ সেবার সুযোগ তাঁর কাছে এসেছে, এই অনুভূতি কি সত্যিই সবার মধ্যে আসে?

ডাঃ নিতেশ গুপ্তা : হ্যাঁ সার, অবশ্যই আসে। আমি আমাদের টিমকে সবসময় উৎসাহ দিতে থাকি, বলি যে ভয় পাওয়ার কিছু হয়নি, এরকম কোন ভয়ের ব্যাপার নেই। যদি আমরা সবরকমসাবধানতা মেনে চলি, রোগীদের ও বোঝাই কী-কী সাবধানতা নিতে হবে, কী-কী করণীয়, তাহলে সব ঠিকঠাক ভাবে যাবে।

মোদিজী           : ঠিক আছে, আপনার ওখানে তো প্রচুর পেশেন্ট আসে এবং আপনি পুরো মন-প্রাণ দিয়ে আপনার কাজ করছেন। আপনার সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগল। এই লড়াইয়ে আমি আপনার পাশে আছি। লড়তে থাকুন।

ডাঃ নিতেশ গুপ্তা : আপনার আশীর্বাদ যেন আমাদের সঙ্গে থাকে, শুধু এটাই চাই।

মোদিজী           : অনেক-অনেক শুভকামনা, ভাই।

ডাঃ নিতেশ গুপ্তা : ধন্যবাদ স্যর.

মোদিজী           : ধন্যবাদ. নীতিশজী, আপনাকে অনেক সাধুবাদ জানাই। আপনাদের মতন মানুষদের প্রচেষ্টাতেই ভারত কোরোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিশ্চিত বিজয়ী হবে। আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা নিজেদের খেয়াল রাখুন। আপনাদের সঙ্গী-সাথীদের খেয়াল রাখুন। আপনাদের পরিবারের খেয়াল রাখুন। সারা পৃথিবীর অভিজ্ঞতা আমাদের এটাই জানিয়েছে যে এই অসুখে রোগগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এই হঠাৎ করে ঘটা বৃদ্ধির কারণেই বিদেশের উন্নত নানান স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আমরা ব্যর্থ হতে দেখেছি। ভারতে এরকম পরিস্থিতি যাতে না আসে তার জন্য আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা করে যেতে হবে। আরেকজন ডাক্তার পুণে থেকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, ডাক্তার বোরসে…

মোদিজী        :    নমস্কার।

ডাঃ বোরসে   :    নমস্কার। নমস্কার।

মোদী জি       :   নমস্কার। আপনি তো পুরোপুরি জন-সেবা ঈশ্বর-সেবা, এই বিশ্বাসে ভর করে কাজ করছেন। তাই আমি আপনার সঙ্গে আজ কিছু কথা বলতে চাই যা দেশবাসীর কাছে আপনার বার্তা হিসেবে পৌঁছবে। ওঁরা জানতে চান কখন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত এবং ঠিক কখন কোরোনার টেস্ট করা উচিত। আপনি তো ডাক্তার হিসেবে কোরোনার রোগীদের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন…তাই আপনার কথায় একটি ভীষণ শক্তি আছে, আমি আপনার বক্তব্য শুনতে চাই।

ডাঃ বোরসে   :    স্যার, এখানে পুণেতে বি জে মেডিক্যাল কলেজ আছে। আমি ওখানকার অধ্যাপক। আর এখানে পুণে পুরসভার হাসপাতাল আছে, যার নাম নায়ডু হাসপাতাল. ওখানে জানুয়ারি ২০২০ থেকে একটা স্ক্রিনিং সেন্টার চালু হয়েছে। ওখানে এখনো পর্যন্ত ১৬টি কোভিড-১৯ পজিটিভ কেস  বেরিয়েছে। এবার যে ১৬ জন পজিটিভ  রোগী পাওয়া তার মধ্যে থেকে ৭ জনকে আমরা ট্রিটমেন্ট করে, কোয়ারান্টাইন  করে, আইসোলেট করে ছেড়ে  দিয়েছি, সার। এবং বাকি যে ক’টা কেস আছে, তারাও স্থিতিশীল রয়েছেন, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন.  শরীরে ভাইরাস থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ভাল আছেন, সুস্থ হয়ে উঠছেন, কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সেরে উঠছেন। এখন এখানে বেশ কম রোগী  স্যার, মাত্র ১৬টি কেস। কিন্তু  মনে হচ্ছে যে যুব সম্প্রদায়ও  এই রোগের কবলে পড়ছে । এবং যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে  এই রোগ তেমন জটিল নয়। হাল্কা অসুখ হিসেবে এটা এখানে দেখা দিয়েছে এবং রোগীরা  যথেষ্ট ভাল আছেন, সুস্থ হয়ে উঠছেন। এখন যে ৯ জন বাকি আছেন, তাঁরাও সুস্থ হয়ে উঠবেন, তাঁদের অবস্থার আর অবনতি হবে না  আমরা প্রত্যেকদিন তাঁদের ওপর নজর রাখছি, ৪-৫ দিনে তাঁরাও একদম সেরে উঠবেন। আমাদের এখানে যারা সন্দেহভাজন, অর্থাৎ যারা বিদেশ থেকে এসেছেন এবং যারা তাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, এরকম মানুষদের আমরা থুতু নিচ্ছি, স্যার। ওরোফারিঞ্জ্যাল থুতু নিচ্ছি আমরা, যে নাকের কফ নিচ্ছি আমরা তার রিপোর্ট এলে যদি সেটা পজিটিভ আসে তো সেই পেশেন্টকে আমরা পজিটিভ ওয়ার্ডে ভর্তি করছি। এবং নেগেটিভ এলে আমরা হোম  কোয়ারান্টাইনের  পরামর্শ দিচ্ছি, বুঝিয়ে দিচ্ছি কী ভাবে কোয়ারান্টাইন করতে হবে, বাড়ি গিয়ে কী-কী করতে হবে, তারপর বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

মোদী জি       :    কী-কী উপদেশ দিচ্ছেন, বাড়িতে থেকে কী করতে হবে, কী বলছেন যদি আমাদের একটু বলেন।

ডাঃ বোরসে   :   স্যার, যদি আপনি বাড়িতে থাকেন তাহলে বাড়িতেই আপনাকে কোয়ারান্টাইন করতে হবে। প্রথমত, কমপক্ষে ছয় ফিট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়তঃ, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে ও বারবার হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। যদি আপনার কাছে  স্যানিটাইজার নাও থাকে, তাও সাধারণ সাবান আর জল দিয়ে হাত ধুতে পারেন। এবং তা বার বার করতে হবে। যদি আপনার কাশি বা হাঁচি পায় তাহলে মুখে রুমাল, সর্বদা রুমাল লাগিয়ে তাতে কাশবেন।  এতে যত ড্রপলেট থাকবে তা খুব বেশি দূর পর্যন্ত যেতে পারবে না বা নিচে পড়বে না। যেহেতু ড্রপলেট নিচে পড়বে না তাই হাতে লেগে তা অন্যত্র ছড়াবার সম্ভাবনাও থাকবে না। এটাই বোঝাচ্ছি স্যার। এছাড়াও বোঝাচ্ছি যে তাঁদের বাড়িতে আলাদা নজরদারীতে থাকতে হবে, বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। এখনতো লক ডাউন হয়ে গেছে, আসলে এই অবস্থায় তাঁদের লকডাউনেই থাকতে হবে কিন্তু তাঁরা যথাযথভাবে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। তাদের কমপক্ষে চৌদ্দ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়ে অবহিত করাচ্ছি, বার্তা দিচ্ছি স্যার।

মোদি         : খুব ভালো ডাক্তার। আপনি ও আপনার টিম মন-প্রাণ ঢেলে সেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আমার বিশ্বাস, যতজন রোগী এসেছেন, তারা সবাই যেন সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে নিজের বাড়ি ফিরে যাবে আর আপনাদের সকলের সাহায্যে আমাদের দেশ এই যুদ্ধে জয়ী হবে।

ডাক্তার       : স্যার, আমাদের বিশ্বাস আমরা জিতব। এই লড়াইয়ে বিজয়ী হব।

মোদি         : ডাক্তার, আপনাকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। ধন্যবাদ।

ডাক্তার       : অনেক ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ স্যার।

    বন্ধুরা, আমাদের এই সকল ডাক্তার বন্ধু আপনাকে এই দেশকে সংকট থেকে মুক্ত করার জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যে সকল বিষয়ে তারা আমাদের অবগত করাচ্ছেন তাও শুধু শুনলেই হবে না, জীবন চর্চায় তা সামিলও করতে হবে। আজ ডাক্তারদের ত্যাগ, তপস্যা, আত্মোৎসর্গের মনোভাব দেখে আমার আচার্য চরকের বলা কিছু কথা মনে পড়ে গেল। ডাক্তারদের সম্পর্কে আচার্য চরক কি সঠিক বর্ণনাই না দিয়েছেন! আজ সেটাই আমাদের ডাক্তারদের জীবনেও আমরা তা দেখতে পাচ্ছি। আচার্য চরক বলেছেন -

ন আত্মার্থম ন অপি কামার্থম অতভূত দয়াং প্রতি।

বর্তাতে য়ত চিকিৎসায় স সর্বাম ইতি বর্তাতে।।

অর্থাৎ, ঐশ্বর্য বা কোন বিশেষ কামনা ছাড়াই শুধু রোগীর সেবা করার জন্য দয়া পরবশ হয়ে যিনি কাজ করেন, তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসক।

       বন্ধুরা, মনুষ্যত্ব ও সংবেদনশীলতায় পরিপূর্ণ নার্সদের আজ প্রণাম জানাই। আপনারা
যেভাবে নিঃস্বার্থ সেবা দিয়ে কাজ করে চলেছেন তা সত্যি অতুলনীয়। সৌভাগ্যক্রমে এই বছর অর্থাৎ ২০২০-তে পৃথিবী জুড়ে আন্তর্জাতিক নার্স ও মিডওয়াইফ বর্ষ হিসেবে উদ্‌যাপন করা হচ্ছে। এই বছরের বিশেষত্ব যে ২০০ বছর পূর্বে আঠারো শো কুড়ি সালে জন্ম নিয়েছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। তিনি মানব সেবাকে, নার্সিং-কে এক নতুন পরিচয় দিয়েছিলেন... এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে সাহায্য করেছিলেন। এই বছর বিশ্বের প্রতিটি নার্সের সেবা-নিষ্ঠ মনোভাবকে কুর্ণিশ জানায়। এই বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে সমগ্র নার্সিং সম্প্রদায় নিশ্চিতরূপে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। আমার বিশ্বাস, আপনারা সবাই এই পরীক্ষায় শুধু কৃতকার্যই হবেন না, বহু জীবন রক্ষা করতেও সক্ষম হবেন।

আপনাদের মত সমস্ত বন্ধুদের মনোবল ও দৃঢ় বিশ্বাসের জন্যই এত বড় যুদ্ধে আমরা লড়াই করতে পারছি। আপনাদের মত বন্ধু, তা তিনি ডাক্তার হন, নার্স হন, প্যারামেডিক্যাল, আশা কর্মী,
এ-এন-এম কর্মী, বা সাফাই কর্মাচারী, আপনাদের স্বাস্থ্যের চিন্তাও ভীষণ ভাবে রয়েছে এই দেশের। এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সরকার এইরকম প্রায় কুড়ি লক্ষ সাথী-বন্ধুদের জন্যে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বীমার ঘোষণা করেছে, যাতে আপনারা আরো বেশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই লড়াইতে দেশের নেতৃত্ব দিতে থাকেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে আমাদের আশেপাশেই এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা সমাজের সত্যিকারের নায়ক যাঁরা এই যুদ্ধের পুরোধা ভাগে রয়েছেন।  ‘নমো অ্যাপ’-এ বেঙ্গালুরুর নিরঞ্জন সুধাকর হেব্বালে লিখেছেন যে এইরকম মানুষ আমাদের প্রতিদিনের — নিত্য দিনের নায়ক। কথাটি ঠিক। এই রকম মানুষদের জন্যে আমাদের দৈনন্দিন জীবন কত সহজে চলে। কল্পনা করুন যে একদিন আপনাদের বাড়ির কলে জল আসা বন্ধ হয়ে গেল কিংবা বিদ্যুৎ হঠাৎ চলে গেল…  তখন এই প্রতিদিনের নায়করাই আমাদের সমস্যার সমাধান করে, বিপন্মুক্ত করে। একটু ভাবুন আপনার পাড়ার ছোটো মুদির দোকানটির কথা। এই দুঃসময়ে ওই দোকানদারও তো অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু কেন? এই জন্যেই তো, যাতে আপনার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পেতে কোনো অসুবিধেতে না পড়তে হয়? ঠিক ওই রকম ভাবেই সেই ড্রাইভার বা গাড়ি চালক বা ওই কর্মীদের নিয়ে একটু ভাবুন যাঁরা নিরলস ভাবে নিজেদের কাজ করে চলেছেন যাতে দেশের মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসের সাপ্লাই চেন বা পণ্য সরবরাহের শৃঙ্খলে কোনো ছেদ না পড়ে।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে সরকার ব্যাঙ্ক পরিষেবাকে চালু রেখেছে, আর ব্যাঙ্কিং সেক্টরে আমাদের লোক, ব্যাঙ্ক কর্মীরা আন্তরিকভাবে, নিবেদিত হয়ে এই লড়াইয়ের পুরোভাগে থেকে ব্যাংকগুলি সামলাচ্ছেন আর আপনাদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। আজকের এই সময়ে এই সেবা নেহাত নগণ্য নয়। আমরা সকল ব্যাঙ্ক কর্মীদের যতই ধন্যবাদজ্ঞাপন করি না কেন, তা যথেষ্ট নয়।ই-কমার্স বা ডিজিট্যাল বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত আমাদের অসংখ্য বন্ধু কোম্পানিগুলির  বিতরণ কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এই লোকগুলি এই কঠিন পরিস্থিতেও মুদির জিনিসপত্র বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন। একটু ভেবে দেখুন তো, আপনি এই প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার  মধ্যেও যে টিভি দেখতে পারছেন,  বাড়িতে বসেই ফোন আর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন… এই সবকে নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্যে, কেউ না কেউ, নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

এই সময়ে, আপনাদের মধ্যে অধিকাংশ যাঁরা ডিজিটাল পেমেন্ট সহজে এবং স্বচ্ছন্দেই করতে পারছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন যে এর পেছনেও অনেক মানুষ কাজ করে চলেছে। এঁরা সেই ব্যক্তি যাঁরা এই প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যেই দেশের অত্যাবশ্যকীয় কাজ সামলাচ্ছেন। সকল দেশবাসীর পক্ষে আমি এঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আর ওঁদের সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি যে ওঁরা যেন সবরকম সতর্কতা মেনে নিজেকে নিরাপদ রেখে চলেন আর নিজের পরিবারকেও সাবধানে রাখেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি এমন কিছু ঘটনার কথা জানতে পেরেছি যেখানে সন্দেহভাজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি বা যাঁদের হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে কিছু লোক খারাপ ব্যবহার করছে। এমন কথা শুনে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।  আমাদের এটা বুঝতে হবে যে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের একে অন্যের থেকে কেবল সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখতে হবে, ইমোশনাল বা হিউম্যান ডিসট্যান্স নয়। এমন মানুষজন কোনো অপরাধী নন, বরং ভাইরাসে সম্ভাব্য আক্রান্ত। এই সব মানুষজন অন্যদের সংক্রমণ থেকে  বাঁচাতে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে আর কোয়ারান্টাইনে থেকেছে। অনেক জায়গায় লোকজন নিজেদের দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করেছেন। এমনকি ভাইরাসের কোনো লক্ষণ দেখা না দিলেও তাঁরা নিজেদের কোয়ারান্টাইন করেছে। এটা তাঁরা এই কারণে করেছেন যে তাঁরা বিদেশ থেকে ফিরেছেন এবং দ্বিগুণ সাবধানতা অবলম্বন করছেন। এটা তাঁরা নিশ্চিত করতে চাইছেন, যে কোনো অবস্থাতেই আর এক জন যেন এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত না হন। এই কারণে, যখন লোকজন নিজেরাই এতটা দায়িত্বের পরিচয় দিচ্ছেন তখন তাঁদের  সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা উচিত নয় বরং সহানুভূতি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করা আবশ্যক।

করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার সবথেকে কার্যকরী পদ্ধতি হল সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং কিন্তু আমাদের এটা বূঝতে হবে যে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানে সোশ্যাল ইন্টার‍্যাকশন শেষ করে দেওয়া নয়, বস্তুতপক্ষে এই সময়টা নিজেদের যাবতীয় পুরনো সামাজিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করার সময়,  সেই সব সম্পর্ককে তরতাজা করার সময় — এক অর্থে এই সময় আমাদের এই বার্তা দিতে হবে যে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বাড়াও আর ইমোশনাল ডিসট্যান্স কমাও। আমি আবার বলছি, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বাড়াও আর ইমোশনাল ডিসট্যান্স কমাও। কোটা থেকে যশ বর্ধন আর মেঘ ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ লিখেছেন যে লকডাউনে ফ্যামিলি বন্ডিং বাড়াচ্ছেন। বাচ্চাদের সঙ্গে বোর্ড গেম আর ক্রিকেট খেলছেন। রান্নাঘরে নতুন নতুন পদ রান্না করছেন। জব্বলপুর থেকে নিরুপমা হর্ষজী ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ লিখছেন যে প্রথম বার নিজের লেপ বানানোর শখ পূরণ করার সুযোগ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে উনি বাগওয়ানির শখও পূর্ণ করছেন। ওদিকে রায়পুরের পরীক্ষিৎ, গুরুগ্রামের আর্যমন আর ঝাড়খণ্ডের সূরযজীর  পোস্ট পড়ার সুযোগ পেলাম যেখানে ওঁরা নিজেদের স্কুলের রি-ইউনিয়ন করার আলোচনা করছেন। ওনাদের এই আইডিয়া বেশ আকর্ষণীয়। হয়ত কয়েক দশকে আপনাদেরও নিজেদের স্কুল, কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ মেলে নি। আপনিও এই আইডিয়া ব্যবহার করে দেখুন। ভুবনেশ্বরের প্রত্যূষ দেবাশীষ আর কলকাতার বসুধা মাধোগড়িয়া জানিয়েছেন যে ওঁরা সেই সব বই পড়ছেন যেগুলো আজ অবধি পড়তে পারেন নি। সোশ্যাল মিডিয়াতেই আমি দেখেছি যে কিছু লোক বছরের পর বছর ধরে ঘরে পড়ে থাকা নিজেদের তবলা, বীণা জাতীয় বাদ্যযন্ত্র বের করে রেওয়াজ করা শুরু করে দিয়েছেন। আপনিও এমন করতে পারেন। এতে আপনি সঙ্গীতের আনন্দ তো পাবেনই, পুরনো স্মৃতিও তাজা হয়ে উঠবে। অর্থাৎ সঙ্কটের এই কালে বহু কষ্টে আপনি এমন একটা সময় পেয়েছেন যেখানে আপনি শুধু নিজের সঙ্গেই জুড়তে পারার সুযোগ

পান নি বরং নিজের প্যাশনের সঙ্গেও জুড়তে পারবেন। আপনি আপনার পুরনো বন্ধু আর পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পূর্ণ সুযোগও পাবেন।

রুরকি থেকে রাশি-জী ‘নমো অ্যাপ’-এ জানতে চেয়েছেন যে লকডাউনের সময় আমি আমার ফিটনেসের জন্য কী করি? এই পরিস্থিতিতে নবরাত্রির উপবাস রাখি কী করে? আমি আর একবার আপনাদের জানিয়ে দিই যে আমি আপনাদের বাইরে বেরোতে বারণ করেছি। কিন্তু আপনাদের নিজেদের অন্তরে উঁকি দেওয়ার জন্য অবসরও দিয়েছি। এটা সুযোগ, বাইরে বেরিও না, কিন্তু নিজের অন্তরে প্রবেশ করো, নিজে নিজেকে জানার প্রয়াস করো। নবরাত্রির উপবাসের কথা যেখানে আসছে, সেটা আমার এবং শক্তি ও ভক্তির মধ্যেকার বিষয়। যেখানে ফিটনেসের কথা আসছে, আমার মনে হয় আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাবে, আমি এইরকম করি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি কী করব, এই বিষয়ে কিছু ভিডিও আপলোড করব। ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ আপনারা  অবশ্যই সেই ভিডিও দেখবেন। যা আমি করি তার মধ্যে সম্ভবতঃ কিছু ব্যাপার আপনাদের কাজে লাগবে কিন্তু একটা  ব্যাপার বুঝে নিন যে আমি ফিটনেস এক্সপার্টও নই আর যোগা টীচারও নই, আমি শুধুমাত্র প্র্যাকটিশনার। হ্যাঁ, এটা মানি যে যোগের কিছু আসনের ফলে আমার অনেক লাভ হয়েছে। হতে পারে যে প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার   সময় আপনাদেরও এই ব্যাপারটা কাজে আসবে।

সাথী, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অভূতপূর্বও বটে আর চ্যালেঞ্জপূর্ণও বটে। এই জন্য এই সময় নেওয়া সব সিদ্ধান্ত এমন, যা দুনিয়ার ইতিহাসে কখনও দেখা যায় নি বা শোনা যায় নি। করোনাকে আটকানোর জন্য যাবতীয় যা পদক্ষেপ ভারতবাসী নিয়েছে, যে প্রয়াস এখন আমরা করছি — সেটাই করোনা মহামারীতে ভারতকে জয় এনে দেবে। প্রত্যেক ভারতীয়র সংযম আর সংকল্পও আমাদের মুশকিল পরিস্থিতি থেকে বের করে আনবে। একইসঙ্গে গরীবদের প্রতি আমাদের সমবেদনা আরও বেশি তীব্র হওয়া উচিত। আমাদের মানবতার প্রমাণ এখানেই যে কোথাও কোনো গরীব, দুঃখী, অভুক্ত মানুষ দেখতে পেলেই এই সঙ্কটের সময়ে আমরা প্রথমে তার পেট ভরানোর ব্যবস্থা করব, তার প্রয়োজনের কথা ভাবব আর এটা হিন্দুস্থান করতে পারে। এটা আমাদের সংস্কার, এটা আমাদের সংস্কৃতি।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ প্রতিটি ভারতীয়, নিজের জীবনকে রক্ষা করতে ঘরে বন্দী, কিন্তু আগামী সময়ে এই হিন্দুস্থান-ই নিজের দেশের বিকাশের জন্য সব প্রাচীর ভেঙে এগিয়ে যাবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনারা নিজেদের পরিবারের সঙ্গে ঘরেই থাকুন, সুরক্ষিত আর সাবধান থাকুন, আমাদের এই লড়াই জিততে হবে। অবশ্যই জিতব। অনেক অনেক ধন্যবাদ। ‘মন কি বাত’-এর জন্য আবার পরের মাসে মিলিত হব আর ততদিনে সঙ্কটকে শেষ করতে হয়ত আমরা সফলও হয়ে যাব, এই কল্পনা সঙ্গে নিয়ে, এই শুভকামনা সহ, আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 
 
 
CG/CB


(Release ID: 1608983) Visitor Counter : 2268


Read this release in: English