স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

দিল্লির কিছু অংশে সাম্প্রতিক আইন-শৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি নিয়ে লোকসভায় এক আলোচনার জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

Posted On: 12 MAR 2020 8:05PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১১ মার্চ, ২০২০

 

 

লোকসভায় ১৯৩ নম্বর বিধির আওতায় দিল্লির কিছু অংশে সাম্প্রতিক আইন-শৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি নিয়ে এক আলোচনার জবাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ দিল্লির হিংসায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং দাঙ্গায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এই দাঙ্গায় নিহতদের পরিবারগুলিকে আশ্বস্ত করে শ্রী শাহ বলেন, ধর্ম বা রাজনৈতিক যোগ নির্বিশেষে  ষড়যন্ত্রকারীদের আটক করে সকলকে শাস্তি দেওয়া হবে। সভায় দেশ ও দিল্লিবাসীকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, দিল্লির দাঙ্গায় যুক্ত কোনও ব্যক্তিকেই রেয়াত করা হবে না এবং নির্দোষ কোনও ব্যক্তিকেই হয়রানির শিকার হতে হবে না।

দিল্লি পুলিশের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী শাহ বলেন, বাহিনীর দক্ষতার জন্যই ২৫শে ফেব্রুয়ারি রাত্রি ১১টার পর থেকে আর একটিও দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি। গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টো নাগাদ প্রথম ঘটনার খবর পাওয়ার ৩৬ ঘন্টার মধ্যেই দাঙ্গা পরিস্থিতিকে আয়ত্তে আনা সম্ভব হয়েছে। দিল্লি পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে শ্রী শাহ বলেন, এদের দক্ষতার জন্যই দিল্লির ৪ শতাংশ এলাকায় এবং ১৩ শতাংশ জনসংখ্যার মধ্যে হিংসাত্মক ঘটনাকে সীমিত রাখা সম্ভব হয়েছে।

হিংসাত্মক ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে শ্রী শাহ বলেন, দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকায় বিপুল জনবসতির দরুণ হিংসা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল জনঘনত্বপূর্ণ এই এলাকাগুলিতে বিভিন্ন ধর্ম বা শ্রেণীর মানুষ বসবাস করেন। পুলিশের গাড়ি এবং অ্যাম্বুলেন্সগুলি ঐ দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকায় সময় মতো পৌঁছতে না পারার কারণ হ’ল এই এলাকাগুলির রাস্তা অত্যন্ত সংকীর্ণ। তাই, পুলিশের সময় মতো হস্তক্ষেপেও বিলম্ব ঘটেছে। দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি ৩০-৪০ কোম্পানি দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর কর্মীদের মোতায়েন করা হয়।

 

এখনও এই এলাকাগুলিতে আধা-সেনাবাহিনীর ৮০টিরও বেশি কোম্পানি মোতায়েন রয়েছে। পুনরায় হিংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে, যাতে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সেজন্য বিশেষ স্ট্রাইক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।

দাঙ্গার পর দিল্লি পুলিশ যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সে প্রসঙ্গে শ্রী শাহ জানান, এখনও পর্যন্ত ৭০০টিরও বেশি এফআইআর হয়েছে। এছাড়াও, ২ হাজার ৬৪৭ জন ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের জন্য ২৫টিরও বেশি কম্প্যুটার ব্যবহার করা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে তাঁদের কাছে থাকা যে কোনও ধরনের ফুটেজ দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। বহু সাধারণ মানুষ দাঙ্গার ফুটেজ নিয়ে পুলিশের কাছে এসেছেন। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে ১ হাজার ১০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত দাঙ্গাকারীদের গ্রেফতারের জন্য ৪০টি দল গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। দাঙ্গায় প্ররোচনা দিতে উত্তর প্রদেশ থেকে বহু মানুষ দিল্লিতে আসেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, দাঙ্গার পেছনে ছিল সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। পুলিশের পক্ষ থেকে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপগুলির মধ্যে প্রথমেই গত ২৪ তারিখ রাত্রি ১০টা নাগাদ উত্তর প্রদেশ – দিল্লি সীমান্ত সীল করে দেওয়া হয়।

শ্রী শাহ বলেন, দাঙ্গার ঘটনার তদন্তের জন্য পদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের অধীনে দুটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক কাজকর্ম সম্পর্কে একটি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। দাঙ্গার ঘটনায় ১৫২টি অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে বলেও তদন্তে জানা গেছে। অস্ত্র আইনে ৪৯টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে বলেও তিনি জানান। জানুয়ারির পর হাওলা লেনদেনের ঘটনায় কয়েকটি সংস্থা তদন্তের কাজ শুরু করেছে। দাঙ্গায় অর্থ যোগানের দায়ে দিল্লি পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। সাম্প্রদায়িক হিংসায় মদত যোগানোর অভিযোগে আইসিসের সঙ্গে যোগসাজস রয়েছে, এমন দুই ব্যক্তিকে সাম্প্রদায়িক হিংসায় উস্কানির জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত শান্তি রক্ষা কমিটির ৬৫০টিরও বেশি বৈঠক হয়েছে।

শ্রী শাহ বলেন, দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য একটি দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি কমিশন গঠনের ব্যাপারে দিল্লি হাইকোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সভায় শ্রী শাহ জানান, সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হবে। সাম্প্রদায়িক হিংসায় মদত দেওয়ার জন্য ২২ থেকে ২৬শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সোস্যাল মিডিয়ায় ৬০টিরও বেশি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এই অ্যাকাউন্টগুলির বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় ২৫টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

সভাকক্ষে উপস্থিত সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শ্রী শাহ বলেন, দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের ধর্মের ভিত্তিতে না বিবেচনা করে, তাঁদের প্রত্যেককে ভারতীয় হিসাবে দেখা উচিৎ। দিল্লির হিংসাত্মক ঘটনায় ৫২ জন নিহত হয়েছেন এবং ৫২৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও, ৩৭১টি দোকান ও ১৪২টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। পুলিশ দাঙ্গাবাজদের পক্ষ নিয়েছিল বলে কথিত অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে শ্রী শাহ বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শান্তি বজায় রাখতে দাঙ্গাবাজদের বিরত করার জন্য পাথর ছোঁড়ার আঘাত থেকে রক্ষা পেতে পুলিশকে নিরাপদ আশ্রয় নিতে হয়েছিল। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ৫ হাজারেরও বেশি কাঁদানে গ্যাসের সেল ব্যবহার করে এবং ৪০০টি বুলেট ফায়ার করতে হয়।

 

দাঙ্গার প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে শ্রী শাহ বলেন, বিরোধীরা গত বছরের ১৪ই ডিসেম্বর রামলীলা ময়দানে যে র‍্যালির আয়োজন করেছিল, তারপর ১৬ই ডিসেম্বর থেকে শাহীনবাগে ধর্ণা অবস্থান শুরু হয়। তিনি জানান, গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড এগেনস্ট হেট্‌ নামে একটি হোয়াটস্‌অ্যাপ গ্রুপ শুরু হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কিছু নেতা উস্কানিমূলক ভাষণ দেয়। এই সমস্ত ঘটনার দরুণ বিভিন্ন এলাকায় ৮-৯টি গোষ্ঠী বিক্ষোভ প্রতিবাদ শুরু করে এবং এদের এই বিক্ষোভ প্রতিবাদ পুঞ্জীভূত হয়ে দাঙ্গার রূপ নেয়। শ্রী শাহ বলেন, স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্য চরিতার্থ এবং সিএএ সম্পর্কিত অমূলক ভীতি প্রচার করে সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়। বলা হয়, তাঁদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে। কিন্তু একথা সত্যি নয়। শ্রী শাহ পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, সিএএ-তে কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সংস্থান নেই।

আরও একবার দিল্লি পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে শ্রী শাহ বলেন, বাহিনী যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দিয়েছে এবং ৩৬ ঘন্টার মধ্যেই দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনতে দক্ষতার পরিচয় রেখেছে। বাহিনীর এই দক্ষতার সুবাদে দিল্লির অন্যান্য জায়গায় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।

 

 

CG/BD/SB


(Release ID: 1606182)
Read this release in: English