প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

জন ঔষধি দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জন ঔষধি পরিযোজনার সুবিধাভোগীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথন

Posted On: 11 MAR 2020 6:56PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৭ মার্চ, ২০২০

 

 

নমস্কার!!

 

প্রযুক্তির মাধ্যমে সারা দেশে হাজার হাজার জন ঔষধি কেন্দ্রে বসে যাঁরা এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, সেই সমস্ত বন্ধুদের হোলির শুভেচ্ছা, আপনাদের সকলকে এই কর্মসূচিতে অনেক অনেক স্বাগত জানাই।

 

এরকম অনেক জন ঔষধি কেন্দ্রে আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনেক সহযোগী বসে রয়েছেন। আপনাদেরকেও জন ঔষধি দিবস উপলক্ষে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও সহযোগিতার জন্য সমস্ত জন ঔষধি কেন্দ্রের সঞ্চালকদের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন।

 

বন্ধুগণ,

 

জন ঔষধি দিবস নিছকই একটি প্রকল্প উদযাপনের দিন নয়, কোটি কোটি ভারতবাসী লক্ষ লক্ষ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার দিন, যাঁরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন, আজ তাঁদের মাধ্যমে অন্যান্য প্রতিবেশীদের সচেতন করার বড় সুযোগ, যাতে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তিও এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন। প্রত্যেক ভারতবাসীর স্বাস্থ্যের জন্য আমরা চার দফা পদক্ষেপ নিয়েছি।

 

প্রথমত, প্রত্যেক ভারতবাসীকে অসুস্থ হওয়া থেকে বাঁচানো।

 

দ্বিতীয়ত, অসুস্থ হলে সুলভে ভালো চিকিৎসা।

 

তৃতীয়ত, চিকিৎসার জন্য উন্নত ও আধুনিক হাসপাতাল, পর্যাপ্ত সংখ্যক ভালো চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী সুনিশ্চিত করা হয়েছে। আর,

 

চতুর্থত, সংশ্লিষ্ট সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য মিশন মোডে কাজ করা।

 

প্রধনমন্ত্রী ভারতীয় জন ঔষধি পরিযোজনা, অর্থাৎ পিএম-বিজেপি – এই প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। দেশের প্রত্যেক ব্যক্তিকে সুলভে উন্নত চিকিৎসা প্রদানের সংকল্প-নির্ভর এই প্রকল্প। আমি অত্যন্ত আনন্দিত, এখনও পর্যন্ত সারা দেশে ৬ হাজারেরও বেশি জন ঔষধি কেন্দ্র চালু হয়েছে। এই নেটওয়ার্ক যত প্রসারিত হবে, তত বেশি মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হবেন। আজ প্রত্যেক মাসে সারা দেশে এই কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে ১ কোটিরও বেশি পরিবার সুলভে চিকিৎসার সুবিধা পাচ্ছেন।

 

আপনারা নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে জানেন, জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিতে বাজারের তুলনায় ৫০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৯০ শতাংশ বেশি সুলভে ওষুধ পাওয়া যায়। যেমন, ক্যান্সারের একটি ওষুধের দাম বাজারে ৬ হাজার ৫০০ টাকা, যা জন ঔষধি কেন্দ্রে মাত্র ৮৫০ টাকায় পাওয়া যায়। এর মানে, এখন আগের তুলনায় অনেক কম খরচে চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে।

 

আমাকে বলা হয়েছে যে, এভাবে এখনও পর্যন্ত সারা দেশে জন ঔষধি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে কোটি কোটি গরিব ও মধ্যবিত্ত বন্ধুদের আগের তুলনায় প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। দেশের ১ কোটিরও বেশি পরিবারে দুই – আড়াই হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় কম কথা নয়। এই জন ঔষধি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

 

বন্ধুগণ, আজকের এই কর্মসূচিতে জন ঔষধি কেন্দ্রের সঞ্চালক বন্ধুরাও যুক্ত হয়েছেন। আপনারা সকলে প্রশংসনীয় কাজ করছেন। আপনাদের এই কাজকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সরকার এই প্রকল্পে কিছু পুরস্কার চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই পুরস্কারগুলির মাধ্যমে জন ঔষধি কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি নতুন স্বাস্থ্যকর প্রতিওযোগিতা শুরু হবে, যার মাধ্যমে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি উপকৃত হবেন। দেশ উপকৃত হবে।

 

আসুন, আজকের কথোপকথন শুরু করি।

 

আমাকে বলা হয়েছে যে, সবার আগে আসামের গুয়াহাটি থেকে প্রশ্ন আসবে।

 

প্রশ্ন-১) প্রধানমন্ত্রীজী, আমার নাম অশোক কুমার বেটালা। আমি আসামের গুয়াহাটির বাসিন্দা। আমার বয়স ৬০ বছর। আমার ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা রয়েছে। হৃদযন্ত্রেরও সমস্যা রয়েছে। পাঁচ বছর আগে আমার শল্য চিকিৎসা হয়েছে। তখন থেকে নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছি। গত ১০ মাস ধরে জন ঔষধি কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ওষুধ সংগ্রহ করছি।

 

যখন থেকে জন ঔষধি কেন্দ্র থেকে ওষুধ নিচ্ছি, তখন থেকে মাসে ২ হাজার ৫০০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এই সাশ্রয় করা টাকা আমি আমার নাতনির নামে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারছি।

 

আপনাকে এ ধরনের অসংখ্য প্রকল্পের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আপনি আমার মানসিক চাপ তো দূর করেছেন, কিন্তু করোনা ভাইরাস নিয়ে যে আতঙ্ক চলছে, তা নিয়ে অনেক কিছু শোনা যাচ্ছে। এই ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কী করা উচিৎ?

 

উত্তর-১) সবার আগে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। জন ঔষধি প্রকল্পের ফলে আপনার যে টাকা সাশ্রয় হচ্ছে, তা আপনি নাতনির উন্নত ভবিষ্যতের জন্য জমা করছেন। আর যে করোনা ভাইরাসের কথা বলেছেন, সে ব্যাপারে সত্যিই অনেকেই চিন্তিত।

 

আমি মনে করি, এতে আপনাদের এবং আমাদের সতর্ক থাকার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে সমস্ত রাজ্য সরকার এক্ষেত্রে যথোচিত সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং তার তদারকি করছে। আমাদের দক্ষ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন। যথেষ্ট পরিকাঠামো রয়েছেন এবং সচেতন নাগরিকরাও রয়েছেন। আমাদের বিন্দুমাত্র অসতর্ক থাকলে চলবে নয়া। কিভাবে সতর্ক থাকতে হবে, তা জনগণকে ভিন্ন ভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বলা হচ্ছে। আমি আরেকবার আপনাদের সামনে তা তুলে ধরছি।

 

বন্ধুগণ,

 

প্রথমত, প্রয়োজন ছাড়া আমাদের কোথাও জমায়েত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যতবার সম্ভব হাত ধুতে হবে। নিজের মুখ, নাক বারবার স্পর্শ করার অভ্যাস ছাড়তে হবে। কারও এই অভ্যাস থাকলে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং হাত ধুয়ে খাবার খাবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশি ও হাঁচির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। যেখানেই হাঁচি ও কাশির ছিটে পড়ে, সেখানে এই ভাইরাস কয়েকদিন জীবিত থাকতে পারে। সেজন্য বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। আরেকটি অভ্যাস আমাদের অবশ্যই করতে হবে। কাশি ও হাঁচির সময় ধোয়া কাপড়  বা রুমাল দিয়ে মুখ ও নাক ঢাকতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

যে বন্ধুদের এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে, তাঁদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষিত পরিবেশে রাখা হয়েছে। কিন্তু কারও যদি মনে হয় যে, তিনি কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা হলে তাঁর ঘাবড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। নিজের মুখ মাস্ক দিয়ে ঢেকে কোনও নিকটবর্তী হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যান। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও সংক্রমণের ভয় থাকে, সেজন্য তাঁদেরও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। এই বন্ধুদের মাস্কের পাশাপাশি, হাতে দস্তানাও পরা উচিৎ এবং অন্যান্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা উচিৎ।

 

মাস্ক পরা নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। কিন্তু হাঁচি বা কাশির সময়ে নাক ও মুখ ঢাকা অবশ্য কর্তব্য। যাঁরা মাস্ক পরছেন, তাঁদের একটি জিনিস লক্ষ্য রাখা উচিৎ, মাস্ক অ্যাডজাস্ট করতে গিয়ে বারবার হাত মুখে চলে যায়, সেক্ষেত্রে সুরক্ষার বদলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে।

 

বন্ধুগণ,

 

এরকম সময়ে দ্রুতগতিতে গুজব ছড়ায়। কেউ বলেন, এটা খাবেন, সেটা খাবেন না। কেউ চারটি নতুন জিনিস এনে বলবেন, এগুলো খেলে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আমাদের প্রত্যেককে এ ধরনের গুজবকে উপেক্ষা করতে হবে। যাই করবেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করবেন। আর হ্যাঁ, সারা পৃথিবী এখন অভিবাদনের ক্ষেত্রে নমস্কার জানানোর অভ্যাস চালু করছেন। আমরা যদি কোনও কারণে এই অভ্যাস ছেড়ে দিয়ে থাকি, তা হলে হাত মেলানোর বদলে আবার সেই অভ্যাসে ফিরে যাওয়ার এটাই উচিৎ সময়।

 

মোদীজীকে সাদর প্রণাম। স্যর, আমার নাম মুকেশ আগরওয়াল, আমি দেরাদুণে বেশ কয়েকটি জন ঔষধি কেন্দ্র সঞ্চালনা করি। এখানে এমন কিছু রোগী রয়েছেন, যাঁদের করুণ অবস্থা দেখে তাঁদের সাহায্য করার জন্য আমি এই প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার প্রেরণা পেয়েছি। যাঁদের দাম দিয়ে ওষুধ কেনার ক্ষমতা নেই, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতায় আমি দাতব্য প্রয়াস ট্রাস্ট গঠন করে এর মাধ্যমে তাঁদেরকে বিনামূল্যে ওষুধ দিই। সুলভ ওষুধের তালিকা আমরা টাঙিয়ে রাখি। পরবর্তী সময়ে সরকারের জন ঔষধি প্রকল্প সম্পর্কে জেনে এই উদ্যোগে সামিল হতে পেরে নিজেকে ধন্য বলে মনে করছি।

 

প্রশ্ন-২) নমস্কার প্রধানমন্ত্রীজী!!

 

আমার নাম দীপা শাহ্‌, আমি উত্তরাখন্ডের দেরাদুনের বাসিন্দা। আমার বয়স ৬৫ বছর।

 

২০১১ সালে আমার প্যারালিসিস হয়েছিল। তখন থেকে ওষুধ খাচ্ছি। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে আমি জন ঔষধি কেন্দ্র থেকে ওষুধ কিনছি। আমার স্বামীও দিব্যাঙ্গ। তাই, প্রত্যেক মাসে আমাদের ওষুধের খরচ বাবদ ৩ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা অনুসারে, এই ওষুধগুলি যতটা সস্তা, ততটাই গুণমানসম্পন্ন। আগে কথা বলা ও চলাফেরা করতে আমার কষ্ট হ’ত, এখন অনেকটাই ভালো আছি। সেজন্য আপনাকে অনুরোধ, এখনও মানুষের মনে জেনেরিক ওষুধ নিয়ে যত ভ্রম রয়েছে, সেগুলি দূর করার জন্য কিছু করুন।

 

উত্তর-২) আপনি ঠিক কথা বলেছেন। জেনেরিক ওষুধ নিয়ে অনেক গুজব ছড়ানো হয়। আগের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অনেকের মনে হতে পারে, এই ওষুধগুলি কিভাবে এত শস্তা হয়, এগুলির মধ্যে কোনও ত্রুটি নেই তো। সস্তা উপকরণ দিয়ে রঙিন ট্যাবলেট বানিয়ে বিক্রি করছে না তো! যাঁরা এ ধরনের ভ্রমের শিকার তাঁরা দীপাজীর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। আপনাকে দেখে সারা দেশের মানুষের মনে বিশ্বাস জাগবে যে, জেনেরিক ওষুধের শক্তি কত। আপনি আজ প্রমাণ সহ তা তুলে ধরেছেন। আমি মনে করি, যে কোনও পরীক্ষাগারের থেকে বড় আপনার অভিজ্ঞতা।

 

আমি এ ধরনের সমস্ত বন্ধুদের বলতে চাই যে, এই জেনেরিক ওষুধগুলি বাজারের অন্য যে কোনও ওষুধের মতোই গুণমানসম্পন্ন। এই ওষুধগুলি উন্নত পরীক্ষাগার দ্বারা শংসাপ্রাপ্ত। নির্মাতাদের কাছ থেকে কেনার আগে সমস্ত ধরনের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তবেই সরকার এই ওষুধগুলি কেনে। কোনও ওষুধ নির্মাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে, অভিযোগের যথাযথতা যাচাই করে প্রয়োজনে ওষুধ নির্মাতাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

 

এই ওষুধগুলি সস্তা হওয়ার কারণ হ’ল এগুলি ভারতেই তৈরি হয়। ভারতে নির্মিত জেনেরিক ওষুধের চাহিদা সারা পৃথিবীতে রয়েছে। সরকার নির্দেশ দিয়েছে যে, সমস্ত হাসপাতালের চিকিৎসকদের জেনেরিক ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লেখা বাধ্যতামূলক। কিছু বিশেষ পরিস্থিতি ছেড়ে দিলে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনে জেনেরিক ওষুধই লিখতে হবে। এখানে উপস্থিত সমস্ত উপকৃতদের প্রতি আমার অনুরোধ যে, আপনারা যথাসম্ভব নিজেদের অভিজ্ঞতা অন্যদের বলুন। এর মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ এই জন ঔষধি কেন্দ্র দ্বারা লাভবান হবেন।

 

প্রশ্ন-৩) নমস্কার প্রধানমন্ত্রীজী !!

 

আমি জেবা খান, আমি পুণের বাসিন্দা, আমার বয়স ৪১ বছর। আমি কিডনীর রোগী, জন ঔষধি কেন্দ্র থেকে পাওয়া ওষুধ আমার চিকিৎসায় অনেক সহায়ক হয়েছে।

 

বিগত ছ’মাস ধরে আমি জন ঔষধি কেন্দ্র থেকে ওষুধ নিচ্ছি। আগের তুলনায় মাসে ১ হাজার ৪০০ – ১ হাজার ৫০০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এই টাকা সাশ্রয় হওয়ায় আমার তিন কন্যার লেখাপড়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে।

 

এই জন ঔষধি কেন্দ্র চালু করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি ওষুদের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। স্টেন্টের দামও সস্তা করেছেন। ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা সুনিশ্চিত করেছেন। আপনি সবসময়েই যোগ ও আয়ুর্বেদের উপকারিতা নিয়ে কথা বলেন।

 

এখন আপনার প্রতি দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের আশা-আকাঙ্খা আরও বেড়ে গেছে। কোটি কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্খার এই চাপ আপনি কিভাবে সামলাবেন?

 

উত্তর-৩) সবার আগে আমি আপনার উন্নত স্বাস্থ্য কামনা করি। আপনার মেয়েদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ওষুধের মাধ্যমে দু’ধরনের লাভ হয়েছে। আপনি জীবনে যে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন, তা মোকাবিলায় প্রয়োজন সবচেয়ে মূল্যবান ওষুধ কম দামে পাওয়ায় আপনি আর্থিকভাবে উপকৃত হয়েছেন। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ায় শস্তা ওষুধের পাশাপাশি, আপনি ডায়ালিসিসের সুবিধাও পাচ্ছেন। আর নিজের পরিবারকেও ভালোভাবে দেখাশোনা করতে পারছেন। আমার মনে হয়, যখন কোনও সরকারি প্রকল্প গোটা পরিবারের উপকারে লাগে, সমাজের উপকারে লাগে, তখন তা আশীর্বাদের কারণ হয়ে ওঠে।

 

দেখুন, যখন আপনাদের মতো কোটি কোটি বন্ধুর জীবনে পরিবর্তনের কথা শুনি, তখন আমার উপর কোনও চাপ থাকে না। আশা-আকাঙ্খাকে আমি চাপ বলে মনে করি না, উৎসাহ পাই।

 

আজ দেশের গরিব ও মধ্যবিত্তদের মনে বিশ্বাস জেগেছে যে, তাঁদের নির্বাচিত সরকার উন্নত, আধুনিক ও সুলভ চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রসারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এতে আশা-আকাঙ্খা যত বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের প্রচেষ্টাও তত ব্যাপক হচ্ছে।

 

এখন দেখুন, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে প্রায় ৯০ লক্ষ গরিব রোগী ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। প্রধানমন্ত্রী ডায়ালিসিস প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৬ লক্ষেরও বেশি রোগী বিনামূল্যে ডায়ালিসিস পরিষেবার দ্বারা উপকৃত হয়েছেন।

 

শুধু তাই নয়, ১ হাজারেরও বেশি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করার ফলে ইতিমধ্যেই রোগীদের ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। স্টেন্ট ও হাঁটু প্রতিস্থাপনের খরচ কম করায় লক্ষ লক্ষ রোগী নতুন জীবন পেয়েছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে যক্ষ্মা মুক্ত করার লক্ষ্যে আমরা দ্রুতগতিতে কাজ করে চলেছি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে আধুনিক হেলথ্‌ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে যে ৩১ হাজারেরও বেশি এ ধরনের কেন্দ্র চালু হয়েছে, সেগুলিতে ১১ কোটিরও বেশি বন্ধুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্ভব হয়েছে।

 

এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন কোটি উচ্চ রক্তচাপ, প্রায় ৩ কোটি ডায়াবেটিস, ১ কোটি ৭৫ লক্ষ মুখে ক্যান্সার, ৭০ লক্ষ সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার, ১ কোটিরও বেশি স্তন ক্যান্সার – এরকম অনেক কঠিন রোগের পরীক্ষা এই কেন্দ্রগুলিতে করা সম্ভব হয়েছে। দেশের মানুষকে যেন চিকিৎসা পরিষেবার জন্য অনেক দূরে না যেতে হয়, সেই লক্ষ্য পূরণের স্বার্থে সারা দেশে ২২টি এইম্‌স গড়ে তোলা হচ্ছে। সারা দেশে ৭৫টি জেলা হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ফলে এখন স্বীকৃত মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৭ হয়েছে।

 

এ বছর সারা দেশে ৭৫টি নতুন মেডিকেল কলেজ নির্মাণের প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়েছে। ফলে, দেশে ৪ হাজারেরও বেশি স্নাতকোত্তর এবং প্রায় ১৬ হাজার এমবিবিএস আসন বৃদ্ধি পাবে। যথাযথ সংখ্যায় ভালো চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি পরিবর্তন করা হচ্ছে। এই লক্ষ্য পূরণে ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

 

দেশে উন্নতমানের ওষুধ উৎপাদনের জন্য গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আপনারা হয়তো শুনেছেন, সম্প্রতি সমস্ত স্বাস্থ্য সরঞ্জামকেও ওষুধের পরিভাষার আওতায় আনা হয়েছে। ভারতে যখন অধিক মাত্রায় এই ওষুধ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম উৎপাদন হবে, তখন এগুলির দাম আরও কমানো সম্ভব হবে। এরকম অনেক প্রচেষ্টা চলছে, যা দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার-সাধন করবে।

 

প্রশ্ন-৪) আমার নাম অলকা মেহরা, আমার বয়স ৪৫ বছর, আমি আপনার শহর বারাণসীর বাসিন্দা। আগামীকাল আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস। আমি নিজে জন ঔষধি কেন্দ্র পরিচালনা করি। এখন এই জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিতে মাত্র ১ টাকায় স্যানিটেরি প্যাড পাওয়া যায়, ফলে গ্রামীণ মহিলারা অনেক উপকৃত হয়েছে। আপনি এরকম অনেক প্রকল্প মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে চালু করেছেন।

 

শৌচাগার থেকে শুরু করে স্যানিটেরি প্যাড, উজ্জ্বলা যোজনা ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি সমাজের পুরনো ভাবনাকে বদলানোর চেষ্টা করেছেন। এই সিদ্ধান্তগুলি নেওয়ার সময় আপনার মনে হয়নি, যে সমাজে কী প্রতিক্রিয়া হবে?

 

উত্তর-৪) অলকাজী, হর হর মহাদেব।

আপনাদের সবাইকে, দেশের সমস্ত ভগিনী ও কন্যাদের আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের অগ্রিম শুভেচ্ছা। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে, আগামীকাল কয়েকজন ভগিনীই আমার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট সঞ্চালনা করবে। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক বোন অনেক প্রেরণাদায়ী বার্তা পাঠাচ্ছেন, যা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। আর, দেশের নারী শক্তির সামর্থ্য সম্পর্কে অনেক বিশেষ তথ্যও জানতে পেরেছি। মহিলাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পুরনো ভাবনা থেকে দেশকে বের করে আনার কাজ তো আমাদেরকেই করতে হবে।

 

যদি কোনও বিষয় যথাযথ হয়, তা হলে আমি দেখেছি, সমাজ অবশ্যই সেই বিষয়টিকে বোঝে, শুধু একজন পদক্ষেপ নেওয়ার মতো ব্যক্তির প্রয়োজন হয়। এই প্রকল্পগুলিও এভাবেই চালু হয়েছে। সরকার শুধু একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। বাকি কাজ সমাজ নিজে থেকেই এগিয়ে নিয়ে গেছে।

 

এই প্রকল্পগুলি আজ দেশে মহিলাদের স্বাস্থ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। পুত্র সন্তানের তুলনায় কন্যা সন্তানের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। বিদ্যালয়গুলিতে স্বতন্ত্র শৌচাগার নির্মাণের ফলে মেয়েরা আর স্কুলছুট হচ্ছে না। সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযানের ফলে মা ও শিশুর উভয়ের জীবন সঙ্কট অনেক হ্রাস পেয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনার মাধ্যমে সরকার দেশের ১ কোটি ২০ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা সরাসরি জমা করেছে। মিশন ইন্দ্রধনুষের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫০ লক্ষ শিশু এবং ৯০ লক্ষেরও বেশি গর্ভবতী মহিলার টিকাকরণ হয়েছে। জন ঔষধি যোজনার মাধ্যমে সমাজের গরিব ও মধ্যবিত্তরা উপকৃত হয়েছেন। এর মাধ্যমেও আমাদের কন্যা ও ভগিনীরা বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছেন। আজ এই প্রকল্পের সঙ্গে অনেক ভগিনী যুক্ত হয়েছেন।

 

বাজারে যে স্যানিটারি প্যাড ১০ টাকায় পাওয়া যায়, তা এখন জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিতে মাত্র ১ টাকায় পাওয়া যায়। আপনাদের হয়তো মনে আছে, নির্বাচনের সময় আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিতে আড়াই টাকা মূল্যের স্যানিটেরি প্যাডের দাম আমরা ১ টাকা করে দেবো। দ্বিতীয়বার, সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার ১০০ দিনের মধ্যেই আমরা এই প্রতিশ্রুতি পালন করেছি। এই স্যানিটেরি ন্যাপকিনগুলি শস্তা ও পরিবেশ-বান্ধব। আপনারা অধিক সংখ্যক মেয়েদেরকে এই প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ভোলেবাবা আপনাদের আরও শক্তি ও সামর্থ্য দিন। আপনারা সুস্থ থাকুন – এটাই আমার কামনা।

 

প্রশ্ন-৫) নমস্কার প্রাইম মিনিস্টার সাহেব, আমার নাম গুলাম নবী ডার। আমি জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা। আমার বয়স ৭৪ বছর। আমার থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপ এবং গ্যাস্ট্রাইটিজের সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকরা আমাকে নিয়মিত ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়েছেন। আগে বাজার থেকে ওষুধ কিনতাম, বিগত দুই – আড়াই বছর ধরে জন ঔষধি কেন্দ্র থেকে ওষুধ কিনছি। আমার মাসিক আয় ২০-২২ হাজার টাকা। আগে এর অনেকটা অংশই ওষুধের পেছনে চলে যেত। এখন জন ঔষধি কেন্দ্র থেকে ওষুধ নিয়ে মাসে ৮-৯ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আপনাকে অনুরোধ জানাই, এই পরিষেবা কিভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের পার্বত্য অঞ্চলগুলিতে চালু করা যায়, সেই চেষ্টা করুন।

 

উত্তর-৫) গুলাম নবী সাহেব, আপনার নামে দিল্লিতে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছেন। তিনিও জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ। আর এক সময় দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রীও ছিলেন। আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করে আপনার কথা বলবো। গুলাম নবীজী, আপনার যা সমস্যা তাতে নিয়মিত ওষুধ তো খেতেই হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আপনার মতো অনেকে জম্মু ও কাশ্মীরে বসেই জন ঔষধি যোজনার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন।

 

আপনি ঠিকই বলেছেন যে, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত পার্বত্য ও আদিবাসী ক্ষেত্রগুলিতে এই জন ঔষধি যোজনার প্রসার অত্যন্ত প্রয়োজন। এই সমস্ত ওষুধ যাতে সেইসব অঞ্চলের রোগীরা সুলভে পেতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সরকার নিরন্তর এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখে যে নতুন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা এই ধরনের পরিষেবা প্রসার ত্বরান্বিত করবে। আগে ঐ অঞ্চলগুলিতে যে কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হ’ত। এখন আর সেসব সমস্যা নেই। বিগত দেড় বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীরে অভূতপূর্ব দ্রুততায় উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যেই সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি বন্ধুকে আয়ুষ্মান যোজনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ৩ লক্ষ বয়স্ক নাগরিক, মহিলা ও দিব্যাঙ্গজনদের সরকারি পেনশন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

 

শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে ঐ রাজ্যে ২৪ হাজারেরও বেশি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। আড়াই লক্ষ শৌচালয় নির্মাণ এবং ৩ লক্ষ ২৫ হাজারেরও বেশি গৃহে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে সেখানে দুটি এইমস্‌ এবং কয়েকটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এখন যে গতিতে জম্মু ও কাশ্মীরে উন্নয়ন হচ্ছে, তা আরও ত্বরান্বিত হবে। এখন সত্যি সত্যিই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ অউর সবকা বিসওয়াস’ – এর ভাবনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

প্রশ্ন-৬) প্রধানমন্ত্রী স্যর, আমার নাম গীতা, আমি তামিলান্ডুর কোয়েম্বাটোর থেকে বলছি। আমার বয়স ৬২ বছর। আমি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করাচ্ছি। যখন থেকে জন ঔষধি কেন্দ্রের ওষুধ পাচ্ছি, তখন থেকে বছরে প্রায় ৩০ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য এটি অনেক বড় কথা। সেজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি প্রতিবেশী ও অন্যান্য পরিচিতদেরও জন ঔষধি কেন্দ্রগুলি থেকে ওষুধ নিতে বলি।

 

আপনি যেহেতু যোগ ও আয়ুর্বেদ নিয়ে কথা বলেন, আমি জানতে চাই যে, এগুলির মাধ্যমে কি ডায়াবেটিসের মতো রোগ নিরাময় হতে পারে?

 

উত্তর-৬) ধন্যবাদ গীতাজী, আপনার যেমন সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যরাও যাতে এভাবে উপকৃত হন, তা আপনি সুনিশ্চিত করছেন। আপনার মতো সচেতন নাগরিকই এই দেশকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। আপনি শুধু নিজের কথা ভাবছেন না, অন্যদের উপকারের কথাও ভাবছেন - একজন নাগরিক হিসাবে এটা আমাদের বড় দায়িত্ব। প্রত্যেক অসহায় রোগী যাতে সুলভে ভালো চিকিৎসা পান, এটা দেখা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু কাউকে যেন চিকিৎসার চক্করেই পড়তে না হয়, সেই চেষ্টা করা উচিৎ। রোগমুক্ত হওয়ার চেয়ে ভালো রোগহীন থাকা। সেজন্য সরকার স্বচ্ছ ভারত, যোগ দিবস, ফিট ইন্ডিয়া’র মতো অভিযান চালু করেছে।

 

দেখুন, আজ দেশে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো অনেক রোগ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এগুলি সব ভুল জীবনশৈলীর ফলে গড়ে ওঠা অসুখ। এগুলির সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। এগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। আমাদের জীবনশৈলীই যখন এগুলির কারণ, তখন আমাদের অভ্যাসে পরিবর্তন আনলেই এগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সেজন্য আমাদের জীবনশৈলীতে ফিটনেস ও পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস আপন করে নিতে হবে।

 

যোগ এই কাজটাই করে। যোগের মাধ্যমে অঙ্গ সঞ্চালনের পাশাপাশি, আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসেরও ব্যায়াম হয়। যোগ আমাদের এক প্রকার অনুশাসিত জীবনযাপনের প্রেরণা যোগায়। ভগিনীদের জন্য এই অনুশাসন বেশি প্রয়োজন। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের ভগিনীরা অন্যদের যত্ন নিতে নিতে নিজের যত্নের কথা ভুলে যান। এটা ঠিক নয়। বাড়ির মা ও বোনেরা সমস্ত কাজ করেন, তাঁদের ফিটনেস সুনিশ্চিত করা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দায়িত্ব।

 

প্রশ্ন-৭) স্যর, আমার নাম পঙ্কজ কুমার ঝা, আমি বিহারের মুজফফরপুরে থাকি।

 

সাত বছর আগে আমাদের গ্রামে নক্‌শালবাদীরা একটি বোমা পুঁতে রেখেছিল, সেটির বিস্ফোরণে আমার হাত উড়ে গেছে। হাত উড়ে গেলেও আমি সাহস হারাইনি। একদিন খবরের কাগজে জন ঔষধি যোজনা সম্পর্কে জানতে পারি আর এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি। গত তিন বছর ধরে এই কাজ করছি। এখন জনগণের সেবার পাশাপাশি, প্রতি মাসে আমার কেন্দ্র থেকে ৪-৫ লক্ষ টাকার ওষুধ বিক্রি হয়।

 

আমার প্রশ্ন হ’ল আরও বেশি করে দিব্যাঙ্গদের এই প্রকল্পের সঙ্গে কিভাবে যুক্ত করতে পারি?

 

উত্তর-৭) দেখুন পঙ্কজ, সবার আগে আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আপনার সাহস অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আপনি সঠিক অর্থেই এই জন ঔষধি ভাবনার প্রতিনিধিত্ব করছেন।

 

এই প্রকল্প সুলভ ওষুধের পাশাপাশি, আজ দিব্যাঙ্গজন সহ অনেক যুব বন্ধুদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। জন ঔষধি কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি, বিতরণ কেন্দ্র, উন্নত টেস্টিং ল্যাবের মতো অনেক পরিষেবার বিস্তারলাভ করছে। এ থেকে হাজার হাজার নবীন বন্ধুদের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

 

দিব্যাঙ্গজনদের ক্ষেত্রে আমি সবসময়েই মনে করি, তাঁদের সামর্থ্যকে আরও বেশি কাজে লাগানো উচিৎ। একবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অর্থনীতিতে দিব্যাঙ্গজনদের দক্ষতা, দেশের উন্নয়নে তাঁদের উৎপাদনশীলতার অধিক অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। সেজন্য বিগত পাঁচ বছরে আমরা দিব্যাঙ্গজনদের সুবিধা এবং তাঁদের দক্ষতা উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছি। দিব্যাঙ্গদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য অধিকার প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নিশ্চিতভাবেই জন ঔষধির মতো প্রকল্পেও আমাদের দিব্যাঙ্গদের অধিক অংশীদারিত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে।

 

আমাদের মাননীয় মন্ত্রী ও সাংসদরা আপনাদের সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রে বসে থেকে আজকের দিনটিকে জন ঔষধি কেন্দ্রগুলির জন্য একটি উৎসবের রূপ দিয়েছেন। সেজন্য আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। সাধারণ মানুষও নিজেদের ব্যস্ত কর্মজীবন থেকে সময় বের করে এই জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিতে এসে আমাদের প্রচেষ্টার পেছনে যে জনশক্তি রয়েছে, তার প্রমাণ দিয়েছেন। সরকার দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিস্তারের জন্য যথাসম্ভব প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জন ঔষধি যোজনাকে আরও কার্যকর করে তোলার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, এটাও প্রয়োজন, যাতে দেশের প্রত্যেক নাগরিক স্বাস্থ্যের প্রতি নিজেদের দায়িত্ব বোঝেন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিচ্ছন্নতা, যোগ, পরিমিত আহার, ক্রীড়া ও অন্যান্য ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমি সমস্ত বাবা-মায়েদের অনুরোধ করবো যে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য আপনারা যতটা আগ্রহ দেখান, তাঁদের খেলাধূলা, শরীরচর্চার প্রতিও ততটাই আগ্রহ দেখাবেন। দিনে অন্তত চারবার প্রত্যেক শিশু যদি ঘাম হওয়ার মতো পরিশ্রম না করে, তা হলে তা চিন্তার বিষয়! ফিটনেস নিয়ে আমাদের প্রচেষ্টাই সুস্থ ভারতের সংকল্পকে বাস্তবায়িত করবে।

 

আমি আরেকবার জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিকে এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য যাঁরা এই জন ঔষধি কেন্দ্রগুলি পরিচালনা করছেন, তাঁদেরকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। দেশের কোটি কোটি মানুষ আজও এই ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত নন। আমি আপনাদের সবাইকে এবং সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুদেরও অনুরোধ জানাই যে, মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে, সেবার দৃষ্টিকোণ থেকে আপনারা যথাসম্ভব প্রচার ও সম্প্রচার করুন, যাতে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষও এই পরিষেবা থেকে লাভবান হন। আপনাদের এই প্রচেষ্টা যাতে অনেক মানুষের জীবন বাঁচায় এবং প্রত্যেকের উন্নত স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করে – এই কামনা করি। আপনাদের সবাইকে হোলির পবিত্র উৎসবের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আর শুরুতেই যেমন বলেছি, করোনা ভাইরাসের নাম শুনেই ভয় পাবার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হ’ল – সচেতন হওয়া, গুজবে কান দেবেন না। করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে যা যা করা উচিৎ ও যা যা করা উচিৎ নয় – এই তালিকা সমস্ত সরকারি মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, সেগুলি মেনে চলুন। শুধু এটুকু করলেই আমরা এই বিপদ থেকে মুক্ত থাকবো। আরেকবার আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাই।

 

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

 

CG/SB/SB


(Release ID: 1606032) Visitor Counter : 320


Read this release in: English