প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
জাতির উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত ২’ (৯ম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ
Posted On:
23 FEB 2020 5:49PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৩.০২.২০২০
আমার প্রিয় দেশবাসী, এটা আমার সৌভাগ্য যে "মন কি বাত"-এর মাধ্যমে আমি আর একবার কচ্ছ থেকে কোহিমা, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত দেশের সমস্ত নাগরিককে নমস্কার জানাবার সুযোগ পেলাম। আপনাদের সকলকে নমস্কার। নিজের দেশের বিশালতা আর বৈচিত্র্যের কথা স্মরণ করে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে প্রতিটি ভারতীয়ের মন গর্বে ভরে ওঠে। এই বৈচিত্র্যের অনুভব নিয়তই আমাদের অভিভূত করে, আনন্দিত করে, প্রেরণা যোগায়। কিছুদিন আগে আমি দিল্লির হুনর হাটে, ছোট একটি জায়গায়, দেশের বিশালতা, সংস্কৃতি, পরম্পরা, খাদ্যাভ্যাস আর আবেগের বিবিধ রূপ দেখতে পেলাম। সাবেকী বস্ত্র ও হস্তশিল্প, গালিচা, বাসন, বাঁশ এবং পিতলের জিনিস, পাঞ্জাবের ফুলকারি, অন্ধ্রপ্রদেশের অসাধারণ চামড়ার কাজ, তামিলনাড়ুর চমৎকার সব চিত্রকলা, উত্তরপ্রদেশের পিতলের সামগ্রী, ভাদোহীর গালিচা, কচ্ছের তামার জিনিস, অনেক রকম বাদ্যযন্ত্র — সারা ভারতের কলানৈপুণ্য আর কৃষ্টির অনন্য নিদর্শন এবং তার পিছনে শিল্পীদের সাধনা, নিষ্ঠা আর নিজেদের শিল্পশৈলীর প্রতি ভালোবাসার এই কাহিনি আমাদের বিশেষ অনুপ্রেরণা জোগায়। হুনার হাটে এক দিব্যাঙ্গ মহিলার কথা শুনে বড় ভালো লাগল। তিনি আমাকে বললেন যে আগে ফুটপাথে বসে উনি নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করতেন। কিন্তু হুনর হাটের সঙ্গে সংযুক্ত হবার পর তাঁর জীবনটাই বদলে গেছে। আজ তিনি যে শুধু স্বনির্ভর হয়েছেন তাই-ই নয়, নিজের একটা বাসস্থানও কিনে নিতে পেরেছেন। হুনর হাটে আমার আরও কয়েকজন শিল্পীর সঙ্গে দেখা করার এবং কথা বলার সুযোগ হল। আমাকে বলা হয়েছে, হুনর হাটে যত কারিগর অংশ নিচ্ছেন তাঁদের ৫০ শতাংশের বেশি মহিলা। গত তিন বছরে এই হুনর হাটের মাধ্যমে প্রায় তিন লক্ষ কারিগর আর শিল্পী উপার্জন করার বিরাট সুযোগ পেলেন। এই হাট একদিকে যেমন কলানৈপুণ্য প্রদর্শনের এক মঞ্চ হয়ে উঠেছে সেই সঙ্গে দোসর হয়েছে এই সব মানুষের স্বপ্ন উড়ানের। এ এমন এক জায়গা যেখানে দেশের হরেক রকম বৈচিত্র্য চোখে পড়বেই। শিল্পকলা তো আছেই, সেই সঙ্গে আমাদের খাওয়া দাওয়ার বৈচিত্র্যও কিছু কম নয়। ওখানে একই লাইনে পর পর ইডলি দোসা, ছোলে বাটোরে, দাল বাটি, খমন-খান্ডভি — কত কী-ই যে বিক্রি হচ্ছিল। আমি নিজেও সানন্দে বিহারের সুস্বাদু লিট্টি-চোখার আস্বাদ নিলাম। বড় ভালো লাগল। ভারতের সর্বত্রই এই ধরনের মেলা, প্রদর্শনীর আয়োজন হয়ে আসছে। ভারতকে জানতে হলে, ভারতকে যথার্থ অনুভব করতে হলে সুযোগ পেলেই এই সব জায়গায় অবশ্যই যাওয়া দরকার। “এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত” আদর্শকে জীবন দিয়ে অনুভব করার এ এক দারুণ সুযোগ। এখানে শুধু যে আপনার নিজের দেশের শিল্পকলা আর সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটবে তাই নয়, সেই সঙ্গে আপনি দেশের মেহনতী শিল্পীদের, বিশেষত, মহিলাদের সমৃদ্ধির শরিক হতে পারবেন। এ সব জায়গায় অবশ্যই যাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশের এক মহান ঐতিহ্য রয়েছে। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে যে শিক্ষা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি, সর্বজীবের প্রতি দয়া, প্রকৃতির প্রতি অপার প্রেম তারই অঙ্গ বিশেষ — আমাদের সাংস্কৃতিক পরম্পরা। এদেশের আবহাওয়ায় আতিথ্য নিতে বিশ্বের আলাদা আলাদা প্রজাতির পাখিরাও ভারতে আসে। আমাদের দেশ সারা বছরই বেশ কয়েকটি প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আশ্রয় হয়ে ওঠে। ৫০০-রও বেশি আলাদা আলাদা প্রজাতির পাখি আলাদা আলাদা এলাকা থেকে এসে উপস্থিত হয়। আগে গান্ধীনগরে ‘কপ থারটিন’ সম্মেলনে এই নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং এই ব্যাপারে ভারতের প্রয়াস যথেষ্ট প্রশংসিতও হয়েছে। বন্ধুগণ, আমাদের জন্যে এটা একটা গর্ব করার বিষয় যে আগামী তিন বছর ভারত পরিযায়ী প্রজাতি নিয়ে আয়োজিত ‘কপ কনভেনশন’-এর নেতৃত্ব দেবে। কীভাবে আমরা এই সুযোগটির সদ্ব্যবহার করতে পারি সে ব্যাপারে আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ অবশ্যই পাঠাবেন। ‘COP convention’ নিয়ে এই আলোচনার সময় মেঘালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয় আমার মনে পড়ে গেল। সম্প্রতি biologist-রা এক নতুন প্রজাতির মাছ খুঁজে পেয়েছেন যা কেবলমাত্র মেঘালয়ের পাহাড়ের গুহায় পাওয়া যায়। গুহার মাটিতে থাকা জলজ প্রাণীর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় প্রজাতি। মাটির গভীরে অন্ধকার গুহায় যেখানে সূর্যালোক প্রায় পৌঁছতে পারেনা সেখানে এই মাছ পাওয়া যায়। বৈজ্ঞানিকরা পর্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেছেন যে এত গভীর ও অন্ধকার গুহায় এই মাছ কীভাবে জীবিত থাকে। এটা একটা আনন্দের বিষয় যে আমাদের ভারত বিশেষ করে মেঘালয় এক দুর্লভ প্রজাতির বাসস্থান। এই ঘটনা ভারতের জৈববৈচিত্র্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আমাদের আশপাশে এমন অনেক আশ্চর্য জিনিস আছে যা এখনও অনাবিষ্কৃত রয়েছে। এই সব আশ্চর্য জিনিস খোঁজ করার জন্য অনুসন্ধান জরুরি।
খ্যাতনামা তামিল মহিলা কবি অব্ওয়্যার (Avvaiyar) লিখেছেন— ‘KATRADHU KAIMANN ALAVAE AANAALUM, KALLAADHADHU ULAGALAVU’। অর্থাৎ আমরা যা জানি সেটা মাত্র এক মুঠো বালির সমান আর আমরা যা জানিনা, সেটা প্রায় পুরো ব্রহ্মাণ্ডের সমান। আমাদের দেশের বৈচিত্র্য সম্পর্কেও একথা বলা যায়। আমরা যা জানি তা নেহাতই নগণ্য। বিশ্বমানবতার জন্য আমাদের জীব বৈচিত্র্য এক অপূর্ব ভাণ্ডার যা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, সাজাতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে।
আমার আদরের যুব সাথীরা, আজকাল আমাদের দেশের বাচ্চাদের মধ্যে যুবাদের মধ্যে science এবং technology-র প্রতি আকর্ষণ ক্রমবর্ধমান। মহাকাশে রেকর্ড সংখ্যক Satellite-এর উৎক্ষেপণ, নতুন নতুন রেকর্ড, নতুন নতুন মিশন সকল ভারতবাসীকে গর্বিত করে। ‘চন্দ্রায়ন-২’-এর উৎক্ষেপণের সময় আমি যখন বেঙ্গালুরুতে ছিলাম তখন সেখানে উপস্থিত বাচ্চাদের মধ্যে অফুরন্ত উৎসাহ দেখেছি। তাদের চোখে-মুখে ঘুমের কোন নামগন্ধ ছিলনা। পুরো রাত ওরা একরকম প্রায় জেগেই ছিল। ওদের মধ্যে science, technology এবং innovation নিয়ে যে উৎসাহ দেখেছি তা আমি কখনো ভুলবোনা। বাচ্চা ও যুবাদের এই উৎসাহের আরো শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে, ওদের এই scientific temper-কে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে এক অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শ্রীহরিকোটা থেকে রকেট উৎক্ষেপণকে এখন আপনারা সামনে বসে দেখতে পাবেন। অতি সম্প্রতি এটা সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য visitor’s gallery বানানো হয়েছে যেখানে দশ হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। ইসরোর ওয়েবসাইটে দেওয়া লিংক-এর মাধ্যমে অনলাইন বুকিংও করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের রকেট উৎক্ষেপণ দেখানো এবং তাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য অনেক স্কুল তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের tour-এ নিয়ে যাচ্ছেন বলে আমাকে জানানো হয়েছে। আমি সব বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল ও শিক্ষকদের অনুরোধ করবো যে, আগামীদিনে আপনারা নিশ্চয় এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করবেন।
বন্ধুরা, আপনাদের আরও এক রোমাঞ্চকর খবর দিই। আমি ‘Namo App’-এ ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ নিবাসী পারস-এর comment পড়লাম। পারস চায় আমি ইসরোর (ISRO) 'যুবিকা কার্যক্রম' সম্বন্ধে যুব বন্ধুদের জানাই। তরুণদের বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ইসরোর ‘যুবিকা’ এক প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা। 2019-এ এই কর্মসূচি স্কুলের student-দের জন্য শুরু করা হয়েছিল। ‘যুবিকা’ অর্থাৎ যুব বিজ্ঞানী কার্যক্রম। এই কার্যক্রম আমাদের vision ‘জয় জওয়ান, জয় কিষান, জয় বিজ্ঞান, জয় অনুসন্ধান’-এর অনুসারী। এই প্রোগ্রামের মধ্যে নিজেদের exam শেষ হওয়ার পর, ছুটির সময় student-রা ইসরোর বিভিন্ন centre-এ গিয়ে space technology, space science এবং space applications সম্পর্কে শিখতে পারবে। যদি আপনি জানতে চান training কেমন ভাবে হয়, ঠিক কী ধরনের বা তা কতটা আকর্ষণীয়, তাহলে যারা গতবার training attend করেছিল তাদের experience অবশ্যই পড়ুন। যদি নিজে attend করতে চান তাহলে ইসরোর সঙ্গে যুক্ত ‘যুবিকা’র website-এ গিয়ে নিজের registration-ও করাতে পারেন। আমার যুব বন্ধুরা, আমি আপনাদের জানিয়ে দিই website-এর নাম, লিখে নিন এবং আজ অবশ্যই visit করুন -www.yuvika.isro.gov.in। লিখে নিয়েছেন তো?
আমার প্রিয় দেশবাসী, একত্রিশে জানুয়ারি 2020-তে লাদাখের মনোরম উপত্যকা এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হল। লেহ্ অঞ্চলের ‘কুশোক বাকুলা রিম্পোচি’ এয়ারপোর্ট থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান AN 32 যখন উড়ে গেল তখন এক নতুন ইতিহাস তৈরি হলো। এই বিমানে 10 শতাংশ Indian biojet fuel-এর মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছিল। এমনটা প্রথমবার হলো যে দুটি ইঞ্জিনেই এই মিশ্রণের ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, লেহ্-তে যে বিমানবন্দর থেকে এই বিমান উড়ে গেছে, তা শুধু ভারতেরই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত বিমানবন্দরগুলির মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে এই Biojet fuel, ‘non edible tree borne oil’ থেকে তৈরি। এই তেল ভারতের বিভিন্ন আদিবাসী এলাকা থেকে কেনা যায়। এই প্রচেষ্টার ফলে শুধু কার্বন নির্গমণ কম হবে তাই নয়, অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রে আমদানির উপর ভারতের নির্ভরতা কমবে। আমি এই বৃহৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত সকলকে অভিনন্দন জানাই। বিশেষত CSIR, Indian Institute of Petroleum, Dehradun-এর বৈজ্ঞানিকদের, যাঁরা biofuel দিয়ে বিমান ওড়ানোর কৌশল সম্ভব করে দেখিয়েছেন। ওঁদের এই প্রয়াস Make in India-কেও শক্তিশালী করে তোলে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের নতুন ভারতবর্ষ এখন আর পুরনো পথ ধরে অগ্রসর হতে প্রস্তুত নয়। বিশেষ করে New India-য় আমাদের মা ও বোনেরা এগিয়ে এসে এমন সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছেন যাতে পুরো সমাজে এক সদর্থক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিহারের পূর্ণিয়ার এক ঘটনা সমগ্র দেশবাসীকে প্রেরণাদান করে। এটা এমন এক এলাকা, যেখানে কয়েক দশক ধরে মানুষ বিধ্বংসী বন্যার সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। এই কারণে এখানে ফসল ফলানো এবং জীবিকা অর্জনের অন্যান্য উপায়গুলির সংস্থান খুবই কম। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেই সেখানকার কিছু মহিলা এক অন্য রাস্তা বেছে নিয়েছেন। বন্ধুরা, এই এলাকার মহিলারা তুঁত বা মলবরী গাছে রেশমকীটের গুটি থেকে রেশম তৈরি করতেন, যার থেকে ওঁরা খুব স্বল্প অর্থ উপার্জন করতেন। অপরদিকে রেশম ক্রেতারা গুটি থেকে রেশমের সুতো বানিয়ে অনেক বেশি লাভ করত। কিন্তু আজ পূর্ণিয়ার মহিলারা নতুন ভাবে শুরু করেছেন যাতে পুরো চিত্রটা পালটে গেছে। এই মহিলারা সরকারী সহযোগিতায় ‘মলবরী উৎপাদন সমূহ’ স্থাপন করেছেন। তাঁরা গুটিপোকা থেকে রেশমের সুতো তৈরি করে সেই সুতো দিয়ে নিজেরা শাড়ি তৈরি করাও শুরু করেছেন। আপনারা জেনে অবাক হবেন, আগে যাঁরা গুটিপোকা বেচে সামান্য অর্থ উপার্জন করতেন, তাঁরাই এখন সেই রেশমের সুতোর তৈরি শাড়ি বেচে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করছেন। ‘আদর্শ জীবিকা মহিলা মলবরী উৎপাদন সমূহ’-র দিদিরা যে বিস্ময়কর কাজ করেছেন, তার প্রভাব বর্তমানে অন্য অনেক গাঁয়ে দেখা যাচ্ছে। পূর্ণিয়ার অনেক গ্রামের কিসান দিদিভাইরা এখন কেবল শাড়িই তৈরি করছেন না, বড় বড় মেলাতে নিজেদের স্টল থেকে তাঁদের উৎপাদিত শাড়ি বেচছেনও। আজকের মহিলারা নতুন শক্তি, নতুন ভাবনা নিয়ে কীভাবে নতুন সাফল্য পাচ্ছেন এটা তার দৃষ্টান্ত।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশের মহিলা ও কন্যাদের উদ্যম, তাঁদের সাহস প্রত্যেকের কাছে গর্বের বিষয়। আমাদের আশপাশে এরকম অনেক উদাহরণ আছে, যার থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের কন্যারা কীভাবে পুরনো ধ্যান-ধারণা ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে। আমি আপনাদের সঙ্গে ১২ বছরের বালিকা কাম্যা কার্তিকেয়ন-এর উপলব্ধি ভাগ করে নিতে চাই। কাম্যা মাত্র ১২ বছর বয়সে Mount Aconcagua পর্বতমালা জয় করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এটি দক্ষিণ আমেরিকার অ্যান্ডিস্ পর্বতের সবচাইতে উঁচু শৃঙ্গ, যা প্রায় ৭০০০ মিটার উঁচু। এই মাসের শুরুতে কাম্যা ওই শৃঙ্গ জয় করে আর প্রথমেই সেখানে আমাদের তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করে। এই ঘটনা সব ভারতীয়র হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আমাকে এটাও বলা হয়েছে যে দেশকে গৌরবান্বিত করা এই মেয়েটির একটা নতুন মিশন আছে যার নাম ‘মিশন সাহস’। এই মিশনে সে সব মহাদেশের সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গগুলো জয় করার লক্ষ্য রেখেছে। এই অভিযানে ওকে নর্থ এবং সাউথ পোল-এ স্কি-ও করতে হবে। আমি কাম্যার এই ‘মিশন সাহস’-এর জন্য শুভকামনা জানাই। এত কম বয়সে কাম্যা যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তাতে ফিটনেস-এর বিরাট ভূমিকা আছে। “A nation that is fit will be a nation that is hit.” যে জাতি ফিট, সে হিট-ও হবে। যে দেশ ফিট, সে সবসময়ই হিট-ও হবে। এভাবেই আগত মাসগুলো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস–এর পক্ষেও খুব উপযুক্ত। ভারতের ভৌগোলিক গঠন এমনই যে আমাদের দেশে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসকে যথেষ্ট সুযোগ দেয়। একদিকে এখানে উঁচু উঁচু পাহাড় আছে তো অন্যদিকে দূর দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত মরুভূমি আছে। একদিকে যেখানে ঘন জঙ্গলের সমারোহ, অন্যদিকে সমুদ্রের অসীম বিস্তার। এজন্যই আমি বিশেষভাবে বলতে চাই যে আপনারাও নিজের পছন্দমতো জায়গা বেছে নিয়ে নিজস্ব রুচি অনুযায়ী activity ঠিক করুন এবং অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করুন। জীবনে তো অ্যাডভেঞ্চার থাকতেই হবে, তাই না বন্ধু?
১২ বছরের কাম্যার সাফল্যের পর ১০৫ বছর বয়স্ক ভাগীরথী আম্মার সাফল্যের কাহিনি শুনলে তো আরও অবাক হয়ে যাবেন। বন্ধুরা, যদি আমরা জীবনে উন্নতি করতে চাই, কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করে যেতে চাই, তাহলে প্রথম শর্ত এটাই যে আমাদের ভেতরের বিদ্যার্থী যেন কখনো না মরে যায়। ১০৫ বছরের ভাগীরথী আম্মা আমাদের এই প্রেরণা দেন। আপনারা হয়ত ভাবছেন ভাগীরথী আম্মা কে? ভাগীরথী আম্মা কেরালার কোল্লাম-এ থাকেন। খুব ছোটবেলায় উনি ওঁর মা-কে হারিয়েছেন। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার পর স্বামীকেও হারান। কিন্তু ভাগীরথী আম্মা নিজের উৎসাহ হারাননি, নিজের উদ্যম ও আবেগ হারাননি। ১০ বছরেরও কম বয়সেই ওঁকে স্কুল ছাড়তে হয়। ১০৫ বছর বয়সে তিনি আবার স্কুলে পড়া শুরু করেন। এত বয়স হওয়া সত্ত্বেও ভাগীরথী আম্মা লেভেল-ফোর পরীক্ষা দেন এবং খুব উৎসাহের সঙ্গে রেজাল্ট-এর অপেক্ষা করতে থাকেন। উনি পরীক্ষায় ৭৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, অঙ্কে ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। আম্মা এখন আরও পড়াশোনা করতে চাইছেন। এর পরের ধাপের পরীক্ষাগুলো দিতে চাইছেন। এটা বলতেই হবে যে ভাগীরথী আম্মার মতন মানুষই দেশের শক্তি। প্রেরণার এক বিরাট স্রোত। আমি আজ বিশেষভাবে ভাগীরথী আম্মাকে প্রণাম জানাই।
বন্ধুরা, জীবনে প্রতিকূল সময়ে আমাদের উৎসাহ, আমাদের ইচ্ছাশক্তি যে কোন পরিস্থিতিকে বদলে দিতে পারে। সম্প্রতি আমি মিডিয়াতে একটি গল্প পড়েছি, যেটা আমি আপনাদের সঙ্গে share করতে চাই।
এই ঘটনাটা হল মুরাদাবাদের হমিরপুর গ্রামে সলমনের জীবন কাহিনি! আজন্ম দিব্যাঙ্গ সলমন। সলমনের পা দুটো কমজোর ছিল। এমন প্রতিবন্ধকতায় সলমন হার মানেননি এবং নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জীবিকা শুরু করার। একই সঙ্গে সলমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁর মতো দিব্যাঙ্গ- দেরও সাহায্য করবেন। দেখতে দেখতে তাঁর সঙ্গে আরও তিরিশ জন দিব্যাঙ্গ সাথী যোগ দিলেন। তারপর সলমন নিজের গ্রামে চটি ও ডিটেরজেন্ট বানানোর কাজ শুরু করে দিলেন। সলমনের নিজেরই চলাফেরায় অসুবিধে ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি অন্যদের চলার সুবিধার জন্য চপ্পল বানাবার সিদ্ধান্ত নেন। বড় কথা হলো সলমন নিজেই তাঁর সহযোগী দিব্যাঙ্গদের training দিলেন। ওঁরা নিজেরাই সবাই মিলে ম্যানুফ্যাকচারিং ও মার্কেটিং করতে শুরু করলেন। নিজেদের শ্রমে তাঁরা নিজেরা শুধু উপার্জন করলেন না নিজেদের কোম্পানিকেও প্রফিট এনে দিলেন। এখন ওঁরা সবাই মিলে দিনে দেড়শো জোড়া চপ্পল বানাচ্ছেন। শুধু তাই-ই নয় সলমন এখন আরও ১০০ দিব্যাঙ্গদের রোজগারের ব্যবস্থা করবার সংকল্প করেছেন। আমি এঁদের সবার উদ্যোগ ও উদ্যমকে স্যালুট জানাচ্ছি। এমনই সংকল্পের শক্তি দেখিয়েছেন গুজরাটের কচ্ছ এলাকার অজরক গ্রামের মানুষেরা। ২০০১ সালের ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের পর সবাই যখন গ্রাম ছেড়ে চলে গেল ইসমাইল ক্ষত্রী নামে এক ব্যক্তি গ্রামে থেকেই পরিবারের বংশানুক্রমিক শিল্পকলা অজরক প্রিন্টের কাজ চালিয়ে যান। দেখতে দেখতে প্রাকৃতিক রঙের অজরক শিল্প সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠলো এবং গ্রামের সবাই তাঁদের এই প্রাচীন শিল্পধারায় নিয়োজিত হলেন। গ্রামের মানুষেরা শুধু যে তাঁদের এই প্রাচীন শিল্পকলার প্রসার করলেন তা-ই নয়, সেই সঙ্গে আধুনিক ফ্যাশনকেও সামিল করলেন। এখন তাবড় ডিজাইনার, বড় বড় ডিজাইন সংস্থা অজরক প্রিন্টের ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। গ্রামের পরিশ্রমী মানুষের দৌলতে অজরক প্রিন্ট একটা বড় ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে। দুনিয়ার বড় বড় খরিদ্দারেরা এখন এই প্রিন্টে আকৃষ্ট হচ্ছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সদ্য দেশে মহাশিবরাত্রি পালিত হল। ভগবান শিব ও মাতা পার্বতী-র আশীর্বাদ দেশের চেতনাতে জাগ্রত রেখেছে। মহাশিবরাত্রিতে ভোলে বাবার আশীর্বাদ আপনাদের ওপর বর্ষিত হোক। আপনাদের সব মনষ্কামনা পূর্ণ হোক, আপনাদের উদ্যম, স্বাস্থ্য ও সুখ অটুট থাকুক। দেশের প্রতি আপনারা কর্তব্যপরায়ণ হয়ে উঠুন।
বন্ধুরা, মহাশিবরাত্রির পরেই বসন্ত ঋতুর মহিমা বাড়তে থাকবে। আর কিছুদিনের মধ্যেই হোলির উৎসব, তারপরে পরেই গুড়ি পরব ও নবরাত্রি পরব আসবে। তারপর আসবে রামনবমী। পরব আর উৎসব আমাদের সামাজিক জীবনের অচ্ছেদ্য অংশ। সব উৎসবের পিছনেই কোন না কোন বার্তা লুকিয়ে থাকে, যা শুধু সমাজ নয় পুরো দেশের ঐক্যকে সুদৃঢ় করে। হোলির পর চৈত্র শুক্লাপ্রতিপদে ভারতের বিক্রমাব্দের নববর্ষ শুরু হয়ে যাবে। সেই উপলক্ষে ও ভারতীয় নববর্ষের জন্য আমি আপনাদের আগাম শুভেচ্ছা জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী ‘মন কি বাত’ পর্যন্ত ছাত্ররা পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। যাদের পরীক্ষা শেষ তারা আনন্দে থাকবে। যারা পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত আর যারা পরীক্ষা শেষের মজায় আছেন, সবাইকে আমার শুভ কামনা! আগামী ‘মন কি বাত’-এ আরও অনেক বিষয় নিয়ে আবার আসব। অনেক অনেক ধন্যবাদ! নমস্কার!
CG/CB
(Release ID: 1604103)
Visitor Counter : 204