প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

‘টাইমস্‌ নাও’ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 13 FEB 2020 9:56PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

 

 

আমি টাইমস্‌ নাও গোষ্ঠীর সমস্ত দর্শক, কর্মচারী, ফিল্ড, ডেক্স – এর সমস্ত সাংবাদিক ও সম্পাদক, ক্যামেরা ও লজিস্টিকের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক বন্ধুকে এই শীর্ষ সম্মেলনের জন্য শুভেচ্ছা জানাই।

 

এটি টাইমস্‌ নাও - এর প্রথম শীর্ষ সম্মেলন। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

 

বন্ধুগণ,

 

আপনারা এবারের থিম রেখেছেন ‘ইন্ডিয়া অ্যাকশন প্ল্যান ২০-২০’।

 

কিন্তু আজকের ভারত তো সম্পূর্ণ দশকের অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে কাজ করছে।

 

হ্যাঁ, পদ্ধতি ২০-২০’র মতোই, আকাঙ্ক্ষা পুরো সিরিজে ভালো প্রদর্শনের, নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টির, আর এই সিরিজ-কে ভারতের সিরিজ করে তোলার।

 

বিশ্বের সবচেয়ে নবীন দেশ এখন দ্রুতগতিতে খেলার মেজাজে রয়েছে। মাত্র আট মাসে এই সরকার সিদ্ধান্তের যে সেঞ্চুরি করেছে, তা অভূতপূর্ব।

 

আপনাদের ভালো লাগবে, গর্ব হবে যে ভারত এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এত দ্রুত কাজ করছে।

 

·        দেশের প্রত্যেক কৃষককে পিএম-কিষাণ যোজনার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত – Done

 

·        কৃষক, মজুর দোকানদারদের পেনশন দেয়ার প্রকল্প – Done

 

·        জলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঢিমেতালে কাজের পরম্পরা হটাতে জল শক্তি মন্ত্রক গঠন – Done

 

·        মধ্যবিত্তদের অসম্পূর্ণ গৃহ নির্মাণ সম্পন্ন করার জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল – Done

 

·        দিল্লির ৪০ লক্ষ মানুষের নিজস্ব বাড়ির অধিকার প্রদানকারী আইন – Done

 

·        তিন তালাক সংশ্লিষ্ট আইন – Done

 

·        শিশুদের অত্যাচার ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠিন সাজা প্রদানকারী আইন – Done

 

·        রূপান্তরকামীদের অধিকার প্রদানকারী আইন – Done

 

·        চিট ফান্ড স্কিমগুলির ধোকা থেকে বাঁচানোর আইন – Done

 

·        ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন অ্যাক্ট – Done

 

·        কর্পোরেট কর - এ ঐতিহাসিক হ্রাস – Done

 

·        পথ দুর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্যে কঠিন আইন – Done

 

·        চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ নিয়োগ – Done

 

·        দেশে পরবর্তী প্রজন্মের উপযোগী যুদ্ধ বিমান সরবরাহ – Done

 

·        বোড়ো শান্তি চুক্তি – Done

 

·        ব্রু-রিয়াং স্থায়ী সমাধান – Done

 

·        সুরম্য রাম মন্দির নির্মাণের জন্য ট্রাস্ট গঠন – Done

 

·        সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ - - Done

 

·        জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত – Done এবং

 

·        সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন - Done

 

আমি কখনও কখনও টাইমস্‌ নাও চ্যানেলটি দেখি। নিউজ ৩০, এত মিনিটে এতগুলি খবর, এটা অভিনব এবং বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণকারী।

 

এই বিশেষ থেকেই হয়তো মনে হয়েছে যে, সত্যিকরের তৎপরতা এখান থেকেই শুরু!!!

 

আমি না থেমে এমনই আরও অনেক সিদ্ধান্তের কথা আপনাদের শোনাতে পারি। শুধু সেঞ্চুরি নয়, ডবল সেঞ্চুরি মনে হতে পারে।

 

কিন্তু এই সিদ্ধান্তের তালিকা দিয়ে আমি আপনাদের যে জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, সেটা বুঝতে পারাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ দেশ অনেক দশক পুরনো সমস্যাগুলির সমাধান করার মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ যুব দেশকে যতটা গতিতে কাজ করা উচিৎ, আমরা ঠিক তেমনই কাজ করছি।

 

এখন ভারত আর সময় নষ্ট করবে না।

 

এখন ভারত দ্রুতগতিতে নতুন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাবে।

 

দেশের এই ক্রমপরিবর্তন সমাজের প্রত্যেক স্তরে প্রাণশক্তির সঞ্চার করেছে। সকলকে আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ করে তুলেছে।

 

·        আজ দেশের দরিদ্র মানুষের মনে এই আত্মবিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে যে, তাঁদের জীবনযাত্রার মান শুধরাতে পারে এবং তাঁরাই নিজেদের দারিদ্র্য দূর করতে পারে।

 

·        আজ দেশের যুবসম্প্রদায়ের মনে এই আত্মবিশ্বাসের জন্ম নিচ্ছে যে, তাঁরা চাকরি সন্ধানী না হয়ে চাকরিদাতা হবে। নিজেদের ক্ষমতায় সমস্ত সমস্যা দূর করতে পারবে।

 

·        আজ দেশের মহিলাদের মনে এই আত্মবিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে যে, তাঁরা প্রত্যেক ক্ষেত্রে নিজেদের কৃতিত্ব দেখাতে পারবে। নতুন নতুন রেকর্ড গড়তে পারবে।

 

·        আজ দেশের কৃষকদের মনে এই আত্মবিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে যে, তাঁরা চাষের পাশাপাশি, নিজেদের আয় বৃদ্ধির জন্য কৃষি-কেন্দ্রিক অন্যান্য উপায়ে আয় করতে পারবে।

 

·        আজ দেশের শিল্পোদ্যোগী ও ব্যবসায়ীদের মনে এই আত্মবিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে যে, তাঁরা একটি সুন্দর বাণিজ্য আবহে নিজেদের ব্যবসা চালাতে ও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

 

আজকের ভারত, আজকের নতুন ভারত দেশের অনেক সমস্যাকে পেছনে রেখে এগিয়ে এসেছে। স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষ ব্যাঙ্কিং প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, কোটি কোটি মানুষের বাড়িতে রান্নার গ্যাস সংযোগ ছিল না, শৌচালয় ছিল না।

 

দেশের মানুষের এমন অনেক সমস্যা ছিল, যেগুলি দূর করা সম্ভব হয়েছে।

এখন ভারতের লক্ষ্য হ’ল – আগামী পাঁচ বছরে আমাদের অর্থ-ব্যবস্থার পরিধি ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার করে তোলা। এই লক্ষ্য সহজ নয়, কিন্ত এমনও নয় যে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে না।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ ভারতের অর্থনীতি প্রায় ৩ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছে গেছে।

 

এখানে এত জ্ঞানী মানুষজন রয়েছেন, আমি আপনাদের একটি প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা কি কখনও শুনেছেন, দেশে কখনও ৩ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার অর্থনীতিতে পৌঁছনোর লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

 

শোনেননি, তাই তো!

 

আমরা ৭০ বছরে ৩ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছি। আগে কেউ কোনও দিন এই প্রশ্ন করেননি যে, এত সময় কেন লাগছে। কাজেই জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন পড়েনি। এখন আমরা লক্ষ্য রেখেছি, প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি, কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য প্রাণপন চেষ্টা করছি। এটাও পূর্ববর্তী সরকারগুলির সঙ্গে আমাদের সরকারের কর্মসংস্কৃতির পার্থক্য। দিশাহীনভাবে এগিয়ে যাওয়া থেকে অনেক ভালো কঠিন লক্ষ্য স্থির করে সেটা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাওয়া।

 

সম্প্রতি যে বাজেট এসেছে, সেটি দেশকে এই ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার অর্থনীতির দেশ করে গড়ে তোলার লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

এই লক্ষ্য পূরণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হ’ল ভারতে নির্মাণ শিল্পের প্রসার এবং উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি। সেজন্য আমাদের সরকার অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

আমরা সারা দেশে বৈদ্যুতিন, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি ক্লাস্টার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ন্যাশনাল টেকনিক্যাল টেক্সটাইল মিশন – এর মাধ্যমেও এক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। আমরা যা রপ্তানি করবো, সেগুলির উৎকর্ষ যাতে বজায় থাকে, সেজন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ দেশের ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের সহায়তার মাধ্যমে ভারতের অর্থ-ব্যবস্থাকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশেষ করে, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারত দ্রুতগতিতে সাফল্য অর্জন করেছে।

 

২০১৪ সালে দেশে ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকার বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম নির্মাণ হয়েছিল। গত বছর তা বেড়ে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

২০১৪ সালে ভারতে মাত্র দুটি মোবাইল ফোন নির্মাণ কারখানা ছিল। আর আজ ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন নির্মাতা দেশে পরিণত হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের ফলে দ্রুত সাফল্য আসবে। সারা দেশে ৬ হাজার ৫০০-রও বেশি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে গেলে, তা পারিপার্শ্বিক অঞ্চলগুলির অর্থ-ব্যবস্থাকে গতিশীল করবে।

 

এই প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে এটাও সত্যি যে, ভারতের মতো দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়া অর্থনীতির দেশের সামনে সমস্যাগুলিও বেশি থাকে। উত্থান-পতনও থাকে এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রভাবও বেশি সহ্য করতে হয়।

 

ভারত সর্বদাই এ ধরনের পরিস্থিতি অতিক্রম করে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও তা করতে থাকবে। আমরা পরিস্থিতি শুধরানোর জন্য আমরা নিরন্তর নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছি। বাজেটের পরও আমাদের অর্থমন্ত্রী নির্মলাজী নিয়মিত ভিন্ন ভিন্ন শহরে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। এর কারণ হ’ল – আমরা সকলের পরামর্শ মেনে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাই।

 

বন্ধুগণ,

 

অর্থ-ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি, আরেকটি বিষয় হ’ল, দেশে অর্থনৈতিক গতিবিধির ক্ষেত্রে উঠে আসা অনেক নতুন নতুন কেন্দ্র। এই নতুন কেন্দ্রগুলি কী? এই কেন্দ্রগুলি হ’ল আমাদের ছোট ছোট টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরগুলি।

 

এই শহরগুলিতেই সবচেয়ে বেশি গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা থাকেন।

 

আজ দেশের অর্ধেকেরও বেশি ডিজিটাল লেনদেন ছোট ছোট শহরগুলিতে হচ্ছে।

 

আজ দেশের যত স্টার্ট আপ নথিভুক্তিকরণ হচ্ছে, সেগুলির অর্ধেকেরও বেশি টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরগুলিতে অবস্থিত। আর সেজন্যই এই প্রথম কোনও সরকার ছোট ছোট শহরগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছে।

 

প্রথমবার কোনও সরকার এই ছোট শহরগুলির বড় বড় স্বপ্নগুলিকে সম্মান দিয়েছে। আজ ছোট শহরগুলির বড় স্বপ্নগুলিকে সাকার করে তুলতে শক্তি যোগাচ্ছে নতুন নতুন জাতীয় সড়কপথ এবং এক্সপ্রেসওয়েগুলি, উড়ান প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে ওঠা নতুন বিমানবন্দর, নতুন আকাশপথ তাদের বিমান যোগাযোগ সুনিশ্চিত করছে। এই শহরগুলিতে অসংখ্য বিমান পরিষেবা কেন্দ্র খুলেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগারে কর মকুব দ্বারা ছোট শহরের মানুষেরা বেশি উপকৃত হয়েছেন।

 

ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উৎসাহ যোগাতে আমরা যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তার দ্বারা ছোট ছোট শহরগুলির শিল্পপতিরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন।

 

এবারের বাজেটে সরকার যে নতুন স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সংশ্লিষ্ট ঘোষণা করেছে, এর মাধ্যমেও ছোট শহরগুলি সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাদের দেশে পূর্ববর্তী সরকারগুলি আরেকটি ক্ষেত্রে হাত দিতেও খুব ভয় পেত – তা হল কর ব্যবস্থা। বছরের পর বছর ধরে আমাদের কর ব্যবস্থায় কোনও পরিবর্তন হয়নি।

 

এতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশে প্রক্রিয়া-কেন্দ্রিক কর ব্যবস্থাই প্রচলিত ছিল। এখন তাকে জনগণ-কেন্দ্রিক করে তোলা হচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টা হ’ল – কর/জিডিপি অনুপাতে বৃদ্ধির পাশাপাশি, করের বোঝা কম করাও।

 

জিএসটি, আয়কর এবং কর্পোরেট কর প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের সরকার কর হ্রাস করেছে।

 

আগে পণ্য ও পরিষেবা ক্ষেত্রে কর – এর গড় দর ছিল ১৪.৪ শতাংশ, যা হ্রাস পেয়ে এখন ১১.৮ শতাংশ হয়েছে। এই বাজেটেই আয়করের ধাপ নিয়ে একটি বড় ঘোষণা ছিল। আগে কর ছাড় পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট বিনিয়োগ জরুরি ছিল। এখন আপনাদের একটা বিকল্প দেওয়া হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

কখনও কখনও দেশের নাগরিকদের কর দেওয়ার জন্য এই প্রক্রিয়া এবং প্রক্রিয়া পালনকারীদের অনেক সমস্যা হ’ত। আমরা এই সমস্যারও সমাধান খুঁজেছি। ফেসলেস অ্যাসেসমেন্টের পর এই বাজেটে আমি ফেসলেস আপিলেরও ঘোষণা পেয়েছি। অর্থাৎ, এখন যিনি যাচাই করবেন, তিনি জানতে পারবেন না, কোন শহরের কোন ব্যক্তির কর যাচাই করছেন। শুধু তাই নয়, যাঁর কর যাচাই হচ্ছে, তিনিও জানতে পারবেন না যে, সংশ্লিষ্ট আধিকারিক কে। অর্থাৎ, এই বিষয়ে সমস্ত দুর্নীতির সুযোগ শেষ।

 

বন্ধুগণ,

 

সরকারের এইসব প্রচেষ্টা সবসময়ে সংবাদ শিরোনামে আসে না। কিন্তু আজও আমরা বিশ্বের কয়েকটি হাতে গোণা দেশের অন্যতম। যেখানে করদাতাদের অধিকারকে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা ‘ট্যাক্স পেয়ার চার্টার’ প্রযোজ্য হবে।

 

এখন ভারতে কর নিয়ে হয়রানি অতীতের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখন দেশে কর প্রদান প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ প্রশংসিত হচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

 

সরকার সর্বদাই কর অভিযোগ সমিতি গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিগত ৪-৫ বছরে আমরা এক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছি। কিন্তু এখনও দীর্ঘ সফর বাকি রয়েছে।

 

আমি আপনাদের সামনে কিছু পরিসংখ্যান রেখে পরবর্তী বক্তব্য রাখতে চাই।

 

বন্ধুগণ,

 

বিগত পাঁচ বছরে দেশে দেড় কোটিরও বেশি গাড়ি বিক্রি হয়েছে।

 

৩ কোটিরও বেশি ভারতীয় ব্যবসার কাজে অথবা বেড়াতে বিদেশ যাত্রা করেছেন।

 

কিন্তু, ১৩০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার এই দেশে কেবল দেড় কোটি মানুষ আয়কর দেন।

 

এদের মধ্যে বছরে ৫০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঘোষিত আয়ের ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ।

 

আপনাদের আরেকটি পরিসংখ্যান দিচ্ছি। আমাদের দেশে বড় বড় ডাক্তার, উকিল, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, অনেক প্রতিষ্ঠিত পেশার মানুষ নিজ নিজ ক্ষেত্রে সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন, দেশের সেবা করছেন। কিন্তু এটাও সত্যি যে, দেশের প্রায় ২ হাজার ২০০ জন পেশাদার নিজেদের বার্ষিক আয় ১ কোটিরও বেশি বলে ঘোষণা করেছেন।

 

সারা দেশে মাত্র ২ হাজার ২০০ পেশাদার!

 

বন্ধুগণ,

 

যখন আমরা দেখি যে, মানুষ বেড়াতে যাচ্ছেন, পছন্দ মতো গাড়ি কিনছেন তখন খুব ভালো লাগে। কিন্তু যখন করদাতাদের সংখ্যা দেখি, তখন দুশ্চিন্তা হয়।

 

এই বৈপরিত্যও এদেশের পক্ষে সত্য।

 

যখন অনেক মানুষ কর দেন না, কর না দেওয়ার উপায় খুঁজে পান, তখন সেই ভার তাঁদেরই বহন করতে হয়, যাঁরা সততার সঙ্গে কর দেন। সেজন্য আজ প্রত্যেক ভারতীয়কে এই বিষয়ে আত্মসমালোচনার জন্য অনুরোধ জানাই। তাঁরা কি এই পরিস্থিতি মেনে নেবেন? ব্যক্তিগত আয়কর হোক কিংবা কর্পোরেট কর, পৃথিবীর যে দেশগুলিতে সবচেয়ে কম কর দিতে হয়, ভারত সেই দেশগুলির অন্যতম। আপনাদেরকে আমি যে অসাম্যের কথা বলেছি, তা কি দূর হওয়া উচিৎ নয়?

 

বন্ধুগণ,

 

সরকার যে কর সংগ্রহ করে, তা দিয়েই তো দেশের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হয়, পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়, এই করের টাকা দিয়েই নতুন নতুন বিমানবন্দর, মহাসড়ক, মেট্রো রেলের কাজ হয়।

 

দরিদ্রদের বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ, সুলভ রেশন, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি, পেট্রোল-ডিজেলে ভর্তুকি, ছাত্রবৃত্তি – এই সবকিছু সরকার করতে পারে। কারণ, দেশের কিছু দায়িত্ববান নাগরিক সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে নিয়মিত কর জমা দেন।

 

আর এজন্য দেশের ব্যক্তি, যাঁদের দেশ ও সমাজ অনেক কিছু দিয়েছে, তাঁদের এগিয়ে এসে নিজেদের কর্তব্য পালন করা উচিৎ। যাঁদের জন্য তাঁদের আয় এত বেশি যে, তাঁরা কর প্রদানে সক্ষম, তাঁদের সততার সঙ্গে কর দেওয়া উচিৎ।

 

আমি আজ টাইমস্‌ নাও - এর মঞ্চ থেকে সমস্ত দেশবাসীকে অনুরোধ জানাই যে, দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গকারীদের কথা মনে করে একটি শপথ গ্রহণ করুন, সংকল্প নিন। তাঁদের কথা মনে করুন, যাঁরা দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আত্মোৎসর্গ করেছিলেন।

 

দেশের সেই মহান বীর-বীরাঙ্গনাদের স্মরণ করে এই শপথ নিন। সততার সঙ্গে যত টাকা কর দেওয়া উচিৎ আপনি তাই দেবেন।

 

২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। নিজেদের সংকল্পকে এই মহান উৎসবের সঙ্গে জুড়ুন। আপনাদের কর্তব্যকেও এই মহান উৎসবের সঙ্গে জুড়ুন।

 

সংবাদ জগতের প্রতি আমার অনুরোধ, স্বাধীন ভারত নির্মাণে সংবাদ মাধ্যমের অনেক বড় ভূমিকা ছিল, এখন সমৃদ্ধ ভারত নির্মাণেও আপনারা নিজেদের ভূমিকা প্রসারিত করুন।

 

যেভাবে সংবাদ মাধ্যম, স্বচ্ছ ভারত অভিযান এবং সিঙ্গল ইয়ুস প্লাস্টিক নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির অভিযান চালিয়েছেন, তেমনই দেশের অন্যান্য সমস্যা ও প্র্য়োজন সম্পর্কেও নিরন্তর অভিযান চালনো উচিৎ।

 

আপনারা সরকারের সমালোচনা করতে চাইলে, আমাদের প্রকল্পগুলির ত্রুটি বের করতে চাইলে খোলাখুলিভাবে করুন। আপনাদের এই সমালোচনা আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফিডব্যাক প্রতিপন্ন হবে। কিন্তু দেশের জনগণকে নিরন্তর সচেতন করার কাজটিও করে যান। শুধু সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে সচেতনতা নয়, তাঁদের পথ প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও।

 

বন্ধুগণ,

 

একবিংশ শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী করে তুলতে প্রত্যেকের নিজের নিজের কর্তব্য পালন করে যেতে হবে। একজন নাগরিক হিসাবে দেশ আমার কাছে যতটা কর্তব্য পালনের প্রত্যাশা করে, তা যখন আমরা পালন করতে পারবো, তখন দেশ নতুন শক্তি পাবে, প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

 

এই নতুন প্রাণশক্তি, নতুন ক্ষমতা ভারতকে এই দশকেও নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।

 

এই দশক ভারতের স্টার্ট আপদের দশক হয়ে উঠবে।

 

এই দশক ভারতের আন্তর্জাতিক নেতাদের দশক হয়ে উঠবে।

 

এই দশক ভারতের ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-র শক্তিশালী নেটওয়ার্কের দশক হয়ে উঠবে।

 

এই দশক, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে পরিচালিত ভারতের দশক হয়ে উঠবে।

 

এই দশক, জল দক্ষ এবং জল পর্যাপ্ত ভারতের দশক হয়ে উঠবে।

 

এই দশক ভারতের ছোট ছোট শহর এবং আমাদের গ্রামগুলির দশক হয়ে উঠবে।

 

এই দশক, ১৩০ কোটি স্বপ্নের ও প্রত্যাশার দশক হয়ে উঠবে।

 

আমার বিশ্বাস, এই দশককে ভারতের দশক করে তুলতে টাইমস্‌ নাও - এর প্রথম শীর্ষ সম্মেলন থেকে অনেক পরামর্শ উঠে আসবে।

 

আর আলোচনা-সমালোচনা এবং উপদেশের পাশাপাশি, কিছু কথা কর্তব্য নিয়েও হবে।

 

আপনাদের সবাইকে আরেকবার অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

 

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

 

CG/SB/SB



(Release ID: 1603157) Visitor Counter : 114


Read this release in: English