প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
12 FEB 2020 12:58PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের অভিভাষণের ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে উপস্থিত হয়েছি। মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয় নিজের বক্তব্যে নতুন ভারতের দূরদৃষ্টি তুলে ধরেছেন। মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের এই বক্তব্য একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের গোড়ায় আমাদের সকলের জন্য আলোকবর্তিকা প্রদর্শনকারী, প্রেরণাদায়ী, দেশের কোটি কোটি মানুষের মনে আস্থা জাগানো অভিভাষণ।
এই আলোচনায় সভার সকল অভিজ্ঞ সদস্যরাই নিজের নিজের বক্তব্যে তাঁদের ভাবনাকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। শিক্ষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রত্যেকেই নিজের মতো করে চেষ্টা করেছেন। শ্রী অভিনন্দন চৌধুরীজী, ডঃ শশী থারুরজী, শ্রী ঔবেসিজী, রামপ্রতাপ যাদবজী, শ্রীমতী প্রীতি চৌধুরীজী, শ্রী মিশ্রজী, শ্রী অখিলেশ যাদবজী, এরকম অনেক নাম রয়েছে, সবার নাম নিলে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু আমি বলতে চাই যে, প্রত্যেকেই নিজের নিজের বক্তব্যে তাঁদের ভাবনাকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। কিন্তু একটা প্রশ্ন উঠেছে যে, সরকার এই কাজগুলো এতো তাড়াহুড়ো করে কেন করছে? সব কাজ একসঙ্গে কেন করছে?
আমি শুরুতেই শ্রী সর্বেশ্বর দয়ালের একটি কবিতার একটি পঙক্তি তুলে ধরতে চাইবো। এই পঙক্তিতে আমাদের সরকারের স্বভাব ও মর্যাদা ভাবনা পরিস্ফূট হয়েছে। এই প্রেরণার ফলেই আমরা গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে সরে গিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। সর্বেশ্বর দয়াল লিখেছিলেন –
গড্ডালিকা প্রবাহে তাঁরাই চলেন যাঁদের
চরণ দুর্বল এবং হেরে যাওয়া,
আমাদের তো নিজেদের সফর থেকে যা পাই
এমন অনির্মিত পন্থাই প্রিয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ভারতের জনগণ এমনি সরকার বদলাননি, তার কর্মসংস্কৃতি বদলের প্রত্যাশা রেখেই পরবর্তন এনেছেন। একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন ইচ্ছা নিয়ে এখানে আমাদের পরিষেবা প্রদানের সুযোগ এসেছে। কিন্তু আমরা যদি এখনও সেভাবেই চলি, যেভাবে আপনারা কাজ করতেন, যে পথে চলতে চলতে আপনাদের সেভাবে চলার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। এভাবে চললে ৭০ বছর পরও এই দেশ থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল হ’ত না। আপনাদের মতো করে যদি চলতাম, তা হলে আজও তিন তালাকের তলোয়ার মুসলমান বোনেদের ভয় দেখাতো। আপনাদের মতো করে চললে নাবালকরাও ধর্ষণ করলে ফাঁসির সাজা পাবে – এই আইন পাশ হ’ত না। আপনাদের মতো করে চললে রামজন্মভূমি মামলা আজও বিবাদের মধ্যেই ফেঁসে থাকতো। আপনাদের ভাবনা নিয়ে চললে করতারপুর করিডর কোনদিনই চালু হতো না।
আপনাদের পদ্ধতিতে, আপনাদেরই মতো করে চললে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত বিবাদ কোনওদিন মিটতো না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি যখন মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়কে দেখি ও শুনি, আমি সবার আগে শ্রী কিরেণ রিজিজুজীকে মনে মনে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, তিনি ‘থিঙ্ক ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’ চালু করেছিলেন। আর সেই ‘থিঙ্ক ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’ – এর প্রচার ও প্রসার অত্যন্ত সুচারুভাবে করেছিলেন। তিনি যত ভালো বক্তব্য রাখেন, ততভালো শরীর চর্চাও করেন। সেজন্য এই ‘থিঙ্ক ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’কে শক্তিশালী করার জন্য তাঁর প্রচার ও প্রসারের জন্য আমি মাননীয় সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে, এই দেশ সর্বদাই সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করে গেছে। কখনও কখনও সমস্যাগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার স্বভাবও এই দেশ দেখেছে। সমস্যাগুলি বেছে নিয়ে অগ্রাধিকার অনুযায়ী, সমাধানের সামর্থহীন নেতাদেরও এই দেশ দেখেছে। কিন্তু আজ বিশ্ববাসী ভারতের কাছে যেমন প্রত্যাশা করে …. আমরা যদি সমস্যাগুলিকে প্রতিস্পর্ধা না দেখাতাম, সাহস করে সমাধানের চেষ্টা না করতাম, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার গতি ত্বরান্বিত না করতাম, তা হলে দীর্ঘকাল ধরে দেশকে অনেক সমস্যা জর্জরিত করে রাখতো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এরপরও যদি আমরা কংগ্রেসের পথে চলতাম, তা হলে ৫০ বছর পরও দেশকে শত্রু সম্পত্তি আইনের জন্য অপেক্ষা করতে হ’ত, ৩৫ বছর পরও অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের জন্য অপেক্ষা করতে হ’ত, ২৮ বছর পরও বেনামী সম্পত্তি আইন চালু হ’ত না, ২০ বছর পরও চিফ অফ ডিফেন্সের নিযুক্তি সম্ভব হ’ত না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমাদের সরকারের দ্রুতগতিতে কাজ করার কারণ হ’ল আমরা গড্ডালিকা প্রবাহে না চলে নতুন পথ বানিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। সেজন্য আমরা একথা খুব ভালোভাবেই বুঝি যে, স্বাধীনতার ৭০ বছর পর দেশবাসী আর দীর্ঘ প্রতীক্ষার জন্য প্রস্তুত নন। আর থাকাও উচিৎ নয়। সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি যে, যাতে গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিমাণও বাড়ে। প্রত্যয়ের পাশাপাশি, যথযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতাও বাড়ে। সংবেদনশীলতার পাশাপাশি, সমাধানও সুনিশ্চিত হয়। আমরা দ্রুতগতিতে কাজ করার ফলেই জনগণ আমাদের পাঁচ বছরের কাজ দেখে সেই গতিতে কাজ করার জন্য আমাদেরকে অধিক শক্তি প্রদান করে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন।
দ্রুতগতিতে কাজ না করলে এতো কম সময়ে ৩৭ কোটি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতো না, ১১ কোটি মানুষের বাড়িতে শৌচালয়ের কাজ সম্পূর্ণ হ’ত না, ১৩ কোটি পরিবারে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ হ’ত না, গৃহহীনদের জন্য ২ কোটি গৃহনির্মাণ হ’ত না, দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা দিল্লির ১ হাজার ৭০০-রও বেশি অবৈধ কলোনীর ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরতো না। আজ তাঁরা নিজেদের বাড়িতে থাকার অধিকার পেয়েছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এখানে উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষকে কত দশক অপেক্ষা করতে হয়েছে। রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের সামর্থ্য ছিল না বলে রাজনৈতিক দাড়িপাল্লা ভারি ছিল না বলে – এই অঞ্চল দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার। আমাদের জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভোটের দাড়িপাল্লায় মাপার ক্ষেত্র নয়। ভারতের ঐক্য ও সংহতি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য দূরদূরান্তে বসে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের উন্নয়ন এবং তাঁদের সামর্থ্য ভারতের উন্নয়নে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য আমরা কাজ করেছি, তাঁদের শক্তিকে সংহত করে শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রত্যেক নাগরিকের মনে আস্থা বৃদ্ধির কাজ করেছি।
গত পাঁচ বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এতদিন যাঁদের মনে হ’ত দিল্লি অনেক দূর, আজ দিল্লি তাঁদের দরজায় এসে উপস্থিত হয়েছে। লাগাতার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত ঐ অঞ্চলে সফর করছেন, রাতের পর রাত সেখানে থাকছেন, টিয়ার-২, টিয়ার-৩ শহরগুলি এবং ছোট ছোট এলাকায় গিয়ে সেখানকার মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে, তাঁদের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে তাঁদের আস্থা অর্জন করছেন। একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী নাগরিক পরিষেবা, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে ব্রডগেজ রেল, বিমানবন্দর থেকে শুরু করে মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের চেষ্টা আমরা করে গেছি।
এই আস্থার পরিণাম বর্তমান সরকারের আমলে দেখা যাচ্ছে। এখানে একজন বোড়ো সমস্যার কথা তুলেছেন। বলা হয়েছে যে, এ ধরণের পদক্ষেপ প্রথমবার নেওয়া হয়েছে - আমরা এটা করতে পারিনি। তিনি ঠিকই বলেছেন। ফলিত প্রয়োগ অনেক হয়েছে, আর এখনও প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু যাই হয়েছে সবটাই রাজনৈতিক দাড়িপাল্লায় মাপজোক করে করা হয়েছে। অর্ধেক মন নিয়ে করা হয়েছে। শূন্যস্থান পূরণের জন্য করা হয়েছে। সেজন্য চুক্তি অনেক সম্পাদিত হয়েছে, খবরের কাগজে ছবিও ছাপা হয়েছে, অনেক প্রশংসা পেয়েছেন, অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে সেসব কথা আজও বলছেন। কিন্তু স্বাধীনতার এতো বছর পরও কাগজে-কলমে বোড়ো সমস্যা সমাধানের চুক্তি সম্পাদিত হয়নি। ইতিমধ্যে ৪ হাজারেরও বেশি নির্দোষ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ফলে অনেক ধরণের রোগ, যা বোড়ো সমাজ জীবনকে সঙ্কটগ্রস্ত করে তুলেছে। এখন যে চুক্তি হ’ল তা একভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য তো বটেই দেশের সাধারণ মানুষের জন্যও সুবিচারের বার্তা প্রদানকারী ঘটনা। এটা ঠিক যে, আমরা নিজেদের কৃতিত্বের কথা বারবার ফলাও করে প্রচার করার চেষ্টা করি না, কিন্তু আমরা পরিশ্রম করবো, চেষ্টা করে যাবো।
কিন্তু এই চুক্তির একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সকল সশস্ত্র গোষ্ঠী একসঙ্গে সমস্ত অস্ত্রসমর্পণ করেছে, সকল আত্মগোপনকারী আত্মসমর্পণ করেছেন। দ্বিতীয়তঃ, ওই সকলে চুক্তিতে চুক্তিপত্রে লিখেছেন যে, এরপর বোড়ো আন্দোলনের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, আর কিছু বাকি নেই। ভারতে সবার আগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলেই সূর্যোদয় হয়। কিন্তু এতদিন এখানে নতুন সকাল আসতো না। সূর্য উঠতো ঠিকই কিন্তু অন্ধকার দূর হতো না। আজ আমি বলতে পারি যে, আজ নতুন সকাল এসেছে, নতুন সূর্যোদয় হয়েছে। আপনারা নিজেদের চশমা বদলালে তবেই এই আলো দেখতে পাবেন।
আমি আপনাদের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। কারণ, আপনারা আমার বক্তব্যের মাঝে মাঝেই বিশ্রামের সুযোগ দিচ্ছেন।
গতকাল এখানে স্বামী বিবেকানন্দের কাঁধে বন্দুক ভাঙা হয়েছে। আপনারা এটা কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়েছেন, তাই আমি এর উল্লেখ করবো না। কিন্তু আমার একটি ছোট গল্প মনে পড়ে। একবার কয়েকজন রেলে সফর করছিলেন। আপনারা সকলেই জানেন, যখন রেলগাড়ি জোরে চলে তখন তার লাইন থেকে কেমন আওয়াজ শোনা যায়, তো একজন সাধু রেলের কামরায় বসে বলছিলেন যে, দেখো রেললাইনও কেমন কথা বলছে। এই নির্জীব লাইনগুলিও আমাদের বলছে, প্রভু আমার জীবনতরী পার করো - প্রভু তোমার অসীম লীলা। অন্য একজন সাধু বলেন, আমি তো অন্য কথা শুনতে পাচ্ছি, লাইনগুলি যেন বলছে, প্রভু তোমার অসীম লীলা - প্রভু তোমার অসীম লীলা। তাঁদের সঙ্গে একজন মৌলবিও বসে ছিলেন, তিনি বললেন, আমি শুনতে পাচ্ছি, আল্লা তোমার রহমত - আল্লা তোমার রহমত। তাঁদের সঙ্গে একজন পালোয়ানও বসে ছিলেন। তিনি বললেন, আমি কিন্তু শুনতে পাচ্ছি, খা রাবরি, কর কসরত - খা রাবরি, কর কসরত।
গতকাল বিবেকানন্দজীর নামে যা বলা হয়েছে, যাঁর মনে যেরকম, সেরকমই শুনতে পেয়েছেন। এটা বোঝার জন্য আপনাদের এত দূর যেতে হ’ত না, কাছেই অনেক কিছু ছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমার কৃষকদের নিয়েও কিছু কথা হয়েছে। মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়ও তাঁর অভিভাষণে উল্লেখ করেছেন যে, বিগত দিনগুলিতে অনেক কাজ অনেক নতুন ভাবনা নিয়ে নতুন পদ্ধতিতে করা হয়েছে। কিন্তু এখানে একটু অন্যভাবে চেষ্টা হয়েছে, জানি না, অজ্ঞানতাবশত নাকি এসব কথা বলা হয়েছে। কারণ, কিছু বিষয় এমন রয়েছে, যেগুলি জানলেও আমরা এভাবে বলতাম না।
আমরা জানি যে, দেড় গুণ করতে হলে আলাদা করে করতে হয়। দীর্ঘকাল ধরে যা আটকে ছিল, আমাদের শাসনকালের আগে থেকে ঝুলে ছিল। কিন্তু কৃষকদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে, সেজন্য আমরা এগুলি বাস্তবায়িত করেছি। আমি অবাক! অনেক সেচ প্রকল্প এবং সড়ক নির্মাণ প্রকল্প প্রায় ২০ বছর আগে শুরু হয়েও ৮০ – ৯০ শতাংশ কাজ বাকি ছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন করার কেউ ছিলেন না। এরকম ৯৯টি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের সাক্ষী হতে হয়েছে আমাদের। ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি খরচ করে সেগুলিকে যুক্তিযুক্তভাবে বাস্তবায়িত করেছি। এখন কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার মাধ্যমে অনেক কৃষকের মনে বিশ্বাস গড়ে উঠেছে, কৃষকদের পক্ষ থেকে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বিমার টাকা জমা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাঁদের যে লোকসান হয়েছে, তা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য এই বিমা যোজনা থেকে কৃষকদের ৫৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অগ্রাধিকার হ’ল কৃষকের আয় বৃদ্ধি। আমাদের অগ্রাধিকার হ’ল কৃষকদের চাষের জন্য বিনিয়োগ মূল্য কম করা। আগে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের নামে কী চলতো, তা সকলেই জানেন। আমরা ক্ষমতায় আসার আগে দেশে বছরে ৭ লক্ষ টন ডাল ও তিল কেনা হয়েছে। এখন আর এত ডাল ও তিল আমদানি করতে হচ্ছে না। ই-ন্যাম যোজনার মাধ্যমে আজকের কৃষক নিজেদের মোবাইল ফোনে তাঁর উৎপাদিত ফসলের বাজারদর কোথায় কত, তা জানতে পারছেন। আর সরাসরি সেই বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে পারছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, ইতিমধ্যেই দেশের প্রায় ১.৭৫ কোটি গ্রামের কৃষক এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আর গত বছর ই-ন্যামের মাধ্যমে তাঁরা প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার ফলন বিক্রি করেছেন। আমাদের কৃষকদের চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটাতে কৃষির পাশাপাশি, পশুপালন, মৎস্যচাষ এবং মুরগী পালনের মতো অনেক উদ্যোগ লাভদায়ক হয়েছে। আমরা সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। সোলার পাম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনই অনেক নতুন নতুন সুবিধা যুক্ত হওয়ার ফলে আজ কৃষকের আর্থিক স্থিতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
২০১৪ সালে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার আগে কৃষি মন্ত্রকের বাজেট ছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। আর পরবর্তী সময়ে এটি পাঁচ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দেড় লক্ষে পৌঁছেছে। পিএম-কিষাণ সম্মান যোজনার মাধ্যমে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা জমা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে, মাঝে কোনও দালালদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। কোনও ফাইল চালাচালির সমস্যা হয়নি। একটা ক্লিক করলেন, আর পৌঁছে গেল। কিন্তু আমি এখানে মাননীয় সদস্যদের অনুরোধ জানাবো যে, রাজনীতি করতে থাকুন, করা উচিৎ-ও। কিন্তু আমার বিশ্বাস, রাজনীতির স্বার্থে কৃষকদের স্বার্থ নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করবেন না। আমি এ বিষয়ে সেই মাননীয় সদস্যদের অনুরোধ জানাই, আপনারা নিজেদের রাজ্যে দেখা কৃষকদের নামে বাড়িয়ে বলছেন ….. আপনারা এটা সুনিশ্চিত করুন যে, আপনার রাজ্যের কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পিএম-কিষাণ সম্মান নিধির টাকা পৌঁছেছে কিনা। আপনাদের দ্বারা পরিচালিত রাজ্য সরকার কৃষকদের তালিকা কেন্দ্র সরকারকে কেন পাঠাচ্ছে না। সেসব রাজ্যের কৃষকদের এই প্রকল্পের সঙ্গে কেন যুক্ত করছেন না। ক্ষতি কার হয়েছে, কাদের ক্ষতি হয়েছে? সেসব রাজ্যের কৃষকদের হয়েছে। একথা কোনও মাননীয় সদস্য অস্বীকার করতে পারবেন না। অনেকে চাপা স্বরে স্বীকার করলেও জোর গলায় হয়তো বলতে পারবেন না। অনেক জায়গায় অনেক কিছু হয় কিন্তু হয়তো তাঁরা জানেন, সেজন্য যে মাননীয় সদস্যরা অনেক কিছুবলেছেন, তাঁদেরকে বলবো, সেই রাজ্যগুলির দিকে তাকান, যেখানে কৃষকদের অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে, বড় বড় কথা বলে ভোট নেওয়া হয়েছে, শপথ গ্রহণ করে রাজ্য সরকার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু তারপর আর প্রতিশ্রুতি পালন করেননি। এখানে যে মাননীয় সদস্যরা সেসব রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাঁরা নিজের নিজের রাজ্যে কৃষকদের অধিকার সুনিশ্চিত্ করুন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, সর্বদলীয় বৈঠকে আমি সবাইকে একটি অনুরোধ করেছিলাম, আর আপনারাও নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। তারপর, অধিবেশনের গোড়ার দিকে সাংবাদিকদেরও বলেছিলাম, এই অধিবেশনে উভয় কক্ষেই আমরা সবাই শুধু আর্থিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। দেশের আর্থিক পরিস্থিতির সমস্ত বিষয় নিয়ে নিবিড় আলোচনা চাই।
সংসদের উভয় কক্ষে সরাকার পক্ষ এবং বিরোধী পক্ষের সমবেত সামর্থ্য, সমবেত প্রতিভার সমাহারে দেশে ও বিশ্বে আজ যে আর্থিক পরিস্থিতি সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ, কোন্ লক্ষ্য স্থির করে এগোলে আমার লাভ হবে! আমি চাই যে, এখনও সময় আছে, আপনারা অধিবেশনের বাকি সময়টা ব্যবহার করুন, নিবিড়ভাবে আলোচনা করুন, ব্যাপক চর্চা করুন, নতুন নতুন উপদেশ দিন, যাতে ভারত বিশ্বে উদ্ভূত সমস্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পূর্ণশক্তিতে এগিয়ে যেতে পারে। আমি আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাই।
হ্যাঁ, আমি মনে করি, আর্থিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা আমাদের সকলের মিলিত দায়িত্ব। আর এই দায়িত্বের ভারে আমরা পুরনো কথাগুলি ভুলতে পারি না। কারণ, অতীতের নিরিখেই আমরা বর্তমানকে যাচাই করতে পারি। একথা সত্যি কিন্তু আমাদের মাননীয় সদস্যরা প্রশ্ন করবেন, এটা কেন হয়নি, কবে হবে, কিভাবে হবে, কতদিনের মধ্যে হবে? আপনাদের এই দুশ্চিন্তা, অনেকে ভাবেন আপনারা সমালোচনা করছেন, আমি তা মনে করি না; আপনারা সমালোচনা করলে আমি খুশি হই, আপনারা আমাকে ঠিক চিনেছেন! আপনারা বিশ্বাস করেন যে, করলে মোদীই করবে, আর সেজন্য আপনাদের প্রশ্নকে আমি সমালোচনা বলে মনে করি না, প্রেরণা বলে মনে করি। আর সেজন্য আমি এই প্রশ্নগুলিকে স্বাগত জানাই। বাস্তবকে স্বীকার করার চেষ্টা করি। আর সেজন্য যতজন প্রশ্ন তুলেছেন, আমি বিশেষভাবে তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, কেন হয়নি, কবে হবে, কিভাবে হবে? এই প্রশ্নগুলি খুব ভালো। এতে দেশের জন্য আপনাদের বক্তব্য বুঝতে অসুবিধা হয়। আমরা সবাই জানি যে, আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ববর্তী কালখন্ড কেমন ছিল! প্রায় প্রতিদিনই প্রত্যেক কাগজের শিরোনামে প্রকাশিত হ’ত নানা দুর্নীতির কথা, সংসদেও দুর্নীতি নিয়ে তুলকালাম হ’ত।
অপেশাদার ব্যাঙ্কিং-কে ভুলতে পারে! দুর্বল পরিকাঠামো নীতি কে ভুলতে পারেন! আর বাঁদরের পিঠেভাগের মতো সম্পদ বন্টন – হে ঈশ্বর, কী করে রেখেছিলেন! এমন পরিস্থিতি থেকে দেশকে বের করে আনতে এবং সুদূরপ্রসারী উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি, এর পরিণামেই আজ অর্থ-ব্যবস্থায় ‘ফিসক্যাল ব্যালেন্সশিট’ তৈরি হয়েছে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর ‘ম্যাক্রো ইকোনমি স্ট্যাবিলিটি’-ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ, কারণ আপনারা আমার উপর আস্থা রেখেছেন। একাজও আমরাই করবো, হ্যাঁ, একটা কাজ করবো না, হতে দেব না – তা হল আপনাদের বেকারত্ব দূর হতে দেবো না!
জিএসটি নিয়ে এত বড় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে, কর্পোরেট কর হ্রাস করা থেকে শুরু করে আইবিসি চালু করা, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে আরও উদারীকরণ, ব্যাঙ্কগুলির বিলগ্নিকরণ পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সময়ের দাবি পূরণ। অর্থনীতির সুদূরপ্রসারী সুফল পেতে আমাদের সরকার এই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি নিয়েছে। আমরা এর সুফল এখনই অনুভব করছি, সেজন্য ভবিষ্যতেও আরও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই সংস্কারগুলি ছিল বহু আকাঙ্ক্ষিত। আপনাদের সঙ্গে যে পণ্ডিত অর্থনীতিবিদরা রয়েছেন, তাঁরাও এ ধরনের পরিবর্তন চাইতেন। কিন্তু করে উঠতে পারেননি। আমরা তাঁদের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের কাজ করছি। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং দেশের অর্থ-ব্যবস্থা শক্তিশালী করার স্বার্থে আমরা এরকম বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২০’র মধ্যে ছয় বার জিএসটি-র রাজস্ব ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সংগৃহীত হয়েছে। আমি যদি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের কথা বলি, তা হলে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২২ বিলিয়ন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ২৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এতেই প্রমাণ হয়, ভারতের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস বাড়ছে। ভারতে আর্থিক উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে – এই প্রত্যয় এখন দৃঢ় হচ্ছে। তবেই তো বিনিয়োগ বাড়ছে। আমাদের বিরুদ্ধে অনেক গুজব রটানো সত্ত্বেও যে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা অনেক বড় কথা।
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী হ’ল প্রভূত পরিমাণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি উন্নত পরিকাঠামো এবং অধিক মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে যত বেশি সম্ভব কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
দেখুন, আমি কৃষকদের থেকে অনেক কিছু শিখি। কৃষকরা প্রখর গ্রীষ্মে ক্ষেতে হাল চালিয়ে অপেক্ষা করেন। তাঁরা তখনই বীজ বপন করেন না। সঠিক সময়ে বীজ বপন করা হয়। বিগত ১০ মিনিট ধরে যা চলছে, সেটা আমার হাল চাষ। সরাসরি আপনাদের মস্তিষ্কে স্থান তৈরি হচ্ছে। এখন একটি একটি করে বীজ বপন করবো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, মুদ্রা যোজনা, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া – এই প্রকল্পগুলি দেশে স্বরোজগারের ক্ষেত্রে জোয়ার এনেছে। শুধু তাই নয়, এদেশের কোটি কোটি মানুষ প্রথমবার মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে রুজি-রুটি উপার্জন করতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি, তাঁরা আরও ১, ২ কিংবা ৩ জনকে কর্মসংস্থান দিতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রথমবার যাঁরা মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেয়েছেন, তাঁদের ৭০ শতাংশই হলেন আমাদের মা ও বোনেরা, যাঁরা সক্রিয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে আগে অংশগ্রহণ করতেন না। ফলে, অর্থনীতির পরিসর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাঁরাও অবদান রাখতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই ২৮ হাজারেরও বেশি স্টার্ট আপ চিহ্নিত হয়েছে। আর অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলছি, এর অধিকাংশই টিয়ার-২, টিয়ার-৩ শহরগুলিতে অবস্থিত। অর্থাৎ, আমাদের দেশের যুবসম্প্রদায় নতুন সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ২২ কোটিরও বেশি ঋণ মঞ্জুর হয়েছে এবং কোটি কোটি যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হয়েছে।
আজ বিশ্ব ব্যাঙ্কের ‘ডেটা অন আন্ত্রেপ্রেনার্স’ তালিকায় ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গেছে। সেপ্টেম্বর ২০১৭ থেকে নভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ইপিএফও পে-রোল ডেটা’তে ১ কোটি ৪৯ লক্ষ নতুন উপভোক্তা জুড়েছে। কর্মসংস্থান না হলে কর্মীরা টাকা জমা না করলে ….. আমি গতকাল একজন কংগ্রেস নেতার ঘোষণা শুনেছি। তিনি ঘোষণা করেছেন, ছ’মাসের মধ্যে মোদীকে মানুষ লাঠিপেটা করবেন। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। প্রস্তুতির জন্যই তো ছ’মাস লেগে যাবে। কিন্তু আমি ঠিক করেছি, আগামী ছ’মাসে রোজ সকালে আরও বেশি সূর্য প্রণাম করবো। গত ২০ বছর ধরে যত ধরনের নোংরা গালি শুনছি, আমি নিজেকে গালিপ্রুফ বানিয়ে নিয়েছি। ছ’মাস ধরে এত সূর্য প্রণাম করবো যে আমার পিঠও লাঠিপেটা সহ্য করার শক্তি অর্জন করবে। আমি আগে থেকে এই ঘোষণা করার জন্য তাঁর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে ছ’মাস ধরে শরীরচর্চা বৃদ্ধির সুযোগ দিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ আর ডিজিটাল অর্থনীতি কোটি কোটি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ খুলে দিচ্ছে। দক্ষতা উন্নয়ন, নতুন দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি করা শ্রম আইন সংস্কারের জন্য সংসদে ইতিমধ্যেই একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। আরও কিছু প্রস্তাব হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই সভা সেগুলিকে গুরুত্ব দেবে, যাতে দেশে কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টিতে কোনও সমস্যা না হয়। আমরা বিগত শতাব্দীর ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি না, আমাদের পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে নতুন ভাবনায় সমৃদ্ধ এ ধরনের অনেক পরিবর্তনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আমি এই সভার সমস্ত মাননীয় সদস্যদের কাছে প্রার্থনা জানাই যে, যত দ্রুত সম্ভব শ্রম আইন সংস্কারের বিষয়টি ত্বরান্বিত করুন। তা হলে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। আর আমি বিশ্বাস করি, ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার সমৃদ্ধ ভারতীয় অর্থনীতি, ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস, ইজ অফ লিভিং ……
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, একথা সত্যি যে, আমরা আগামী দিনে ১৬ কোটির পরিকাঠামো মিশন নিয়ে এগিয়ে চলেছি। কিন্তু আমাদের বিগত কার্যকালে আপনারা হয়তো দেখেছেন, দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে আমরা পরিকাঠামোকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পরিকাঠামো হ’ল অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এটি যত শক্তিশালী হবে, তা অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করবে, নতুন নতুন শিল্পোদ্যোগ গড়ে উঠবে, অনেক বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেজন্য আমরা পরিকাঠামো উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছি। আগে পরিকাঠামো মানেই ছিল সিমেন্ট আর কংক্রিটের গল্প, আর দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া, আর দালালদের রমরমা। সেজন্য পরিকাঠামো শব্দটির সঙ্গে দুর্নীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল।
আজ আমরা একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক ভারত নির্মাণের জন্য যে পরিকাঠামো গড়ে তুলছি, সেখানে স্বচ্ছতাই মূল অবলম্বন। আর আমাদের জন্য পরিকাঠামো শুধুই সিমেন্ট আর কংক্রিকেটের খেলা নয়, আমার জন্য পরিকাঠামো হ’ল দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের ভিত্তি, কার্গিল থেকে কন্যাকুমারী এবং কচ্ছ থেকে কোহিমাকে একসূত্রে গেঁথে রাখার শক্তি পরিকাঠামোর মধ্যে রয়েছে। প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবায়নের মেলবন্ধন ঘটায় এই পরিকাঠামো।
জনগণের স্বপ্নে ডানা জুড়তে, সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে ভোক্তাকে জুড়তে, শিশুর সঙ্গে বিদ্যালয়ের সম্পর্ক তৈরি করতে, কৃষকের সঙ্গে বাজারকে জুড়তে, ব্যবসায়ীর সঙ্গে ভোক্তাকে জুড়তে, একজন গরিব গর্ভবতী মাকে হাসপাতালের সঙ্গে জুড়তে পরিকাঠামো উন্নয়নই শেষ কথা। সেচ থেকে শুরু করে শিল্প পর্যন্ত, সামাজিক পরিকাঠামো থেকে শুরু করে গ্রামীণ পরিকাঠামো পর্যন্ত, সড়ক থেকে শুরু করে সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত আর আকাশপথ থেকে শুরু করে জলপথ পর্যন্ত আমরা যে এমন অনেক উদ্যোগ নিয়েছি – তা দেশবাসী গত পাঁচ বছর ধরে প্রত্যক্ষ করেছেন। আর মানুষ যে দেখেছেন, এটাও তাঁদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে আমাদের উন্নত পরিকাঠামো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি একটি উদাহরণ দিতে চাই। আমাদের দেশে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে কিভাবে কাজ হয় তা দিল্লিকে দিয়েই বোঝা যায়। দিল্লিতে ট্রাফিক ব্যবস্থা, পরিবেশ দূষণ, হাজার হাজার ট্রাক দিল্লির উপর দিয়ে যাচ্ছে। ইউপিএ সরকারের লক্ষ্য ছিল, ২০০৯ সালের মধ্যে দিল্লির চারপাশের এক্সপ্রেসওয়েগুলির কাজ সম্পূর্ণ করা। ২০১৪ সালে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখলাম, ঐ প্রকল্পের কাজ তখনও ফাইলবন্দিই রয়েছে। অবশেষে, আমরা ২০১৪ সালে এই অসম্পূর্ণ পেরিফেরাল এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করি এবং দ্রুততার সঙ্গে তা সম্পূর্ণ করা হয়। এখন প্রতিদিন ৪০ হাজারেরও বেশি ট্রাক দিল্লিতে না ঢুকে সরাসরি ঐ এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চলে যাচ্ছে। দিল্লিকে পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচাতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটাই পার্থক্য। পরিকাঠামোর গুরুত্বকে বুঝতে একটু সময় লাগে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আরও কিছু বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, শশী থারুরজী, আমি ভুল কিছু বললে ক্ষমা করবেন। এখানে কেউ কেউ সংবিধানকে বাঁচানোর প্রসঙ্গ তুলেছেন। আমি তাঁদের সঙ্গে সহমত। কংগ্রেস দলের উচিৎ, মন্ত্রের মতো সংবিধান বাঁচানোর কথা দিনে অন্তত ১০০ বার উচ্চারণ করা। তাঁরা যদি সংবিধানের গুরুত্ব বুঝতেন, তা হলে আমাদের সংবিধান নিয়ে এত ছিনিমিনি খেলতেন না। সেজন্য আপনারা যতবার সংবিধান শব্দটি উচ্চারণ করবেন, কিছু পদক্ষেপ বারবার আপনাদের ভুলের কথা মনে করিয়ে দেবে। আপনাদের সেই ইচ্ছাকে মনে করিয়ে দেবে, আর আপনারা এই সত্যটি বুঝতে পারবেন যে, এই দেশের জন্য সংবিধান কতটা মূল্যবান।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এখন আপনারা সংবিধান বাঁচানোর কথা বলছেন, কিন্তু দেশে জরুরি অবস্থা চালু করার সময় কথাটা তাঁদের মনে ছিল না। তাঁরা সেই সময় এমনকি বিচারালয় এবং জনগণের ন্যায় সমীক্ষার অধিকারও হরণ করেছিলেন। যাঁরা মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, এক ডজনেরও বেশি বার বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচিত সরকার ফেলে দিয়েছেন। তাঁদের উত্তরসূরীদের তো বারংবার সংবিধান বাঁচানোর কথা বলে যেতেই হবে। সেজন্য তাঁদেরই বার বার সংবিধান বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও মন্ত্র জপ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
পিএম এবং পিএমও-র উপর ন্যাশনাল অ্যাডভাইসারি কাউন্সিল …… এর মাধ্যমে রিমোর্ট কন্ট্রোলে সরকার পরিচালনাকারীদের সংবিধানের গুরুত্ব বোঝার প্রয়োজন রয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, সংবিধানের হয়ে ওকালতি করার নামে দিল্লি ও সারা দেশে কী কী হচ্ছে, তা দেশবাসী খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন। সাধারণ মানুষের নীরবতাও একদিন সাকার হয়ে উঠবে।
সর্বোচ্চ আদালত ও সংবিধানের প্রতি আনুগত্য গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বার বার বলছে যে, আন্দোলন এমন হওয়া উচিৎ নয়, যাতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হয়। আন্দোলন এমন হওয়া উচিৎ নয়, যা হিংসার আশ্রয় আশ্রয় নেয়।
আজ সংবিধান বাঁচানোর কথা যাঁরা বলছেন, সেই বামপন্থী ও কংগ্রেসের নেতারাই ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করার জন্য আন্দোলনকারীদের ইন্ধন যোগাচ্ছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, একজন কবি বলেছিলেন - এতই পর্দা তোমার যে বস্ত্র ব্যবসায়ীর গায়ে লেগে বসে আছো। এতই পর্দা তোমার যে বস্ত্র ব্যবসায়ীর গায়ে লেগে বসে আছো, সত্য লুকিয়ে থাকে না, সামনেও আসে না। পাবলিক সব জানে, সব বোঝে!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, বিগত দিনে যে ভাষা উচ্চারিত হয়েছে, যে ধরনের বক্তব্য শোনা গেছে, যা নিয়ে আজ এই সভাতেও শোরগোল উঠেছে, বড় বড় নেতারা যেভাবে জড়িয়ে পড়ছেন, তা অত্যন্ত দুঃখের কথা। পশ্চিমবঙ্গের পীড়িত মানুষেরা এখানে বসে আছেন, তাঁরা যদি এখানে মুখ খোলেন, তা হলে দাদা আপনাদের সমস্যা হবে। কিভাবে নির্দোষ মানুষদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তা আপনারা খুব ভালোভাবেই জানেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, কংগ্রেসের সময়ে সংবিধানের কী অবস্থা ছিল, জনগণের অধিকার কতটা সুরক্ষিত ছিল, তা আমি তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই। আমরা যেমন মনে করি, আপনাদের কাছেও যদি সংবিধান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়, তা হলে এত বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতের সংবিধান চালু করতে আপনাদের কে মানা করেছিল! আমার জম্মু ও কাশ্মীরের ভাই বোনেদের ভারতের সংবিধানে প্রদত্ত অধিকারগুলি থেকে বঞ্চিত রাখার পাপ কারা করেছেন? আর শশীজী আপনি তো জম্মু ও কাশ্মীরের জামাই ছিলেন। আরে ঐ রাজ্যের মেয়েদের কথা যদি ভাবতেন, তা হলে আপনিও নিশ্চয়ই ঐ রাজ্যে ভারতের সংবিধান চালু করার কথা বলতেন। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, একজন মাননীয় সাংসদ বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীর তাদের পরিচয় হারিয়েছে। আরেকজন যা বলেছেন, তার মানে জম্মু ও কাশ্মীর একটি নিছক ভূ-খন্ডের সমার্থক। কাশ্মীরকে যারা নিছকই ভূখন্ড হিসাবে দেখেন, তাঁরা এই দেশ সম্পর্কে কিছুই জানেন না, তাঁরা নিজেদের বৌদ্ধিক দারিদ্র্যের পরিচয় দেন। কাশ্মীর হ’ল ভারতের মুকুট-মণি। এর পরিচয় বোমা-বন্দুক এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের সমার্থক করে তোলা হয়েছিল। যারা আজ জম্মু ও কাশ্মীরের পরিচয়ের কথা বলেন, তারাই ১৯৯০ সালের ১৯শে জানুয়ারি কাশ্মীরের আসল পরিচয়কে মাটিতে পুঁতে দিয়েছেন। কাশ্মীরের আসল পরিচয় হ’ল সুফী পরম্পরা। কাশ্মীরের আসল পরিচিতি হ’ল সর্বধর্ম সমভাব। এই পরিচয়ের প্রতিনিধি হলেন, মা লালদেড়, নন্দঋষি, সৈয়দ বুলবুল শাহ ও মীর সৈয়দ আলি হমদানিরা।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, অনেকে বলেছিলেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করলে আগুন জ্বলবে। তাঁরা কত বড় ভবিষ্যৎ বক্তা। আজও যাঁরা একথা বলছেন, তাঁদেরকে বলতে চাই, সেই ভবিষ্যৎ দ্রষ্টারা এখন জেলে রয়েছেন। আর এই সভাকক্ষে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদেরকে বলতে চাই, এই সভা সংবিধানের রক্ষা করে, সংবিধানের প্রতি সমর্পিত, সংবিধানের গৌরব বৃদ্ধি করে, সংবিধানের প্রতি দায়িত্ব পালনকারী সদস্যে পরিপূর্ণ এই সভাকক্ষ। আমি সমস্ত মাননীয় সদস্যের অন্তরাত্মাকে স্পর্শ করতে চাই, যদি তাঁদের অন্তরাত্মা থাকে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, গত বছর ৫ই আগস্টে মেহবুবা মুফতি মহোদয়া কী বলেছিলেন, তা আমি সংবিধানের প্রতি সমর্পিত মানুষদের শোনাতে চাই। তিনি বলেছিলেন, ভারত …… কথাটা ভালো করে শুনুন, তিনি বলেছিলেন, “ভারত কাশ্মীরকে ধোকা দিয়েছে। আমরা যেদেশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেই দেশ আমাদের ধোকা দিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, আমরা ১৯৪৭ সালে ভুল দেশ বেছেছিলাম”। সংবিধান ভক্তরা কী তার এই ভাষাকে মেনে নেবেন? তার জন্য ওকালতি করবেন? তেমনই শ্রী ওমর আব্দুল্লাজী বলেছিলেন, “৩৭০ ধারা বাতিল এমন ভূমিকম্প আনবে, যে কাশ্মীর ভারত থেকে আলাদা হয়ে যাবে”।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ফারুক আব্দুল্লাজী বলেছিলেন, “৩৭০ ধারা বাতিল করা কাশ্মীরের জনগণের স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করা। ৩৭০ ধারা বাতিল হলে কাশ্মীরে ভারতের তেরঙ্গা উত্তোলনের জন্য কেউ বাঁচবে না”। ভারতের সংবিধানের প্রতি সমর্পিত কোনও ব্যক্তি কী এই ভাষা ও ভাবনাকে স্বীকার করতে পারেন? তাঁরা কি এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত? আমি এই প্রশ্নগুলি তাঁদেরকে করছি, যাঁদের অন্তরাত্মা জাগ্রত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, কাশ্মীরের জনগণের প্রতি যাঁদের আস্থা নেই, তাঁরাই এ রকম ভাষা বলতে পারেন। আমাদের কাশ্মীরের জনগণের ওপর ভরসা আছে। তাঁদের উপর ভরসা রেখেই আমরা ৩৭০ ধারা বাতিল করেছি। আর আজ কাশ্মীরে দ্রুতগতিতে উন্নয়নযজ্ঞ চলছে। আজ দেশের কোনও অঞ্চলের পরিস্থিতির অবনতির অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়, তা সে কাশ্মীর হোক কিংবা উত্তর-পূর্বাঞ্চল অথবা কেরল। আমাদের মন্ত্রীরাও বিগত দিনগুলিতে নিয়মিত জম্মু ও কাশ্মীর সফরে রয়েছেন। সেই রাজ্যের জনগণের সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা বলছেন আর তাঁদের কথা শুনেই সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি আজ এই সভায় জম্মু ও কাশ্মীরের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য, উন্নয়নের জন্য, সেই রাজ্যের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার পুনরুচ্চারণ করছি। আমরা সবাই সংবিধানের প্রতি সমর্পিত। পাশাপাশি, আমি লাদাখ সম্পর্কেও বলতে চাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমাদের দেশে সিকিম এমন একটা রাজ্য, যা দেশের প্রথম জৈব রাজ্য হিসাবে পরিচিত হয়েছে। দেশের অনেক রাজ্য সিকিমের মতো ছোট রাজ্য থেকে প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। সিকিমের কৃষক ও নাগরিকরা এজন্য অভিনন্দনযোগ্য। লাদাখ সম্পর্কেও আমার মনে এমনই স্পষ্ট চিত্র রয়েছে। আমরা যেমন প্রতিবেশী দেশ ভুটানের পরিবেশ নিয়ে প্রশংসা করি, সারা পৃথিবীতে ‘কার্বন নিউট্রাল’ দেশ হিসাবে স্বনামধন্য। আমাদের প্রত্যেকের সংকল্প করা উচিৎ, আমরাও লাদাখকে ‘কার্বন নিউট্রাল’ অঞ্চল হিসাবে গড়ে তুলবো। তা হলে একে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে একটি মডেল রূপে তুলে ধরা সম্ভব হবে। আমি যখন লাদাখ যাবো, তখন যাতে সেখানকার জনগণের সঙ্গে বসে এর একটি নক্শা তুলে ধরতে পারি, সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এই সভা একটি আইন প্রণয়ন করেছে। পূর্ববর্তী একটি আইন সংশোধনের মাধ্যমে এই আইন উভয় সভায় গৃহীত হয়েছে, নোটিফিকেশনও হয়ে গেছে। এখন আইন প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের কথা বলছি। কিছু মানুষ বলছেন, এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়োর কি আছে? কয়েকজন মাননীয় সদস্য বলেছেন, এই সরকার বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ করছে। আবার কেউ বলেছেন, আমরা নাকি দেশকে টুকরো করতে চাই। তাঁরা সভার ভেতরে যত কথা বলেছেন, বাইরে গিয়ে আরও অনেক কিছু বলেছেন। কাল্পনিক ভয় সৃষ্টি করার জন্য পূর্ণশক্তি দিয়ে লেগে পড়েছেন। তাঁরা বলছেন, যাঁরা দেশকে টুকরো টুকরো করতে যায়, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবেন না। কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানও এই ভাষায় কথা বলে আসছে।
পাকিস্তানও ভারতের মুসলমানদের মনে ভ্রম সৃষ্টি করার অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি এটা দেখে, যাঁদেরকে ভারতের জনগণ ক্ষমতার সিংহাসন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন, তাঁরাই আজ এমন কাজ করছেন, যা আগে কখনও এদেশে কল্পনাও করা যেত না। আমাদের মনে করানোর চেষ্টা করছেন, জয় হিন্দ ধ্বনি উচ্চারণকারীরা মুসলমান ছিলেন। এটাই সমস্যা, কংগ্রেসের চোখে তাঁরা সর্বদাই শুধু মুসলমান। কিন্তু আমাদের চোখে তাঁরা ছিলেন ভারতীয়। যেমন – খান আব্দুল গফফ্র খান .….
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমার সৌভাগ্য যে, ছোটবেলায় খান আব্দুল গফফ্র খানজীর চরণ স্পর্শ করার সুযোগ হয়েছিল। এজন্য আমি গর্বিত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, খান আব্দুল গফফ্র খান-ই হোন কিংবা আসফাক উল্লা খান, বেগম হজরত মহল হন কিংবা বীর শহীদ আব্দুল করিম অথবা আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এপিজে আব্দুল কালাম – আমাদের চোখে এরা প্রত্যেকেই ভারতীয় ছিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, কংগ্রেস ও তাদের মতো দলগুলি যেদিন ভারতকে ভারতের চোখে দেখতে শুরু করবে, সেদিন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে। স্যর, আমি কংগ্রেস ও তাদের সহযোগী দলগুলির কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে তারা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে শোরগোল তুলে রেখেছেন। তারা যদি এভাবে বিরোধিতা না করতেন, তা হলে হয়তো দেশবাসী এত সহজে এই আইনের স্বরূপ সম্পর্কে অবহিত হতেন না। এই দেশ দেখেছে, কারা দলের জন্য বাঁচেন আর কারা দেশের জন্য। আর আমি চাই, ‘আলোচনা শুরু হলে কথা তো দূর অবধি যাবেই’।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, যে কারও মনেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা থাকতে পারে। কিন্তু কাউকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য কাগজে দাগ টেনে ভারতকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। এই বিভাজনে যেভাবে পাকিস্তানে হিন্দু, শিখ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন হয়েছিল, তার কল্পনাও করা যায় না। আমি কংগ্রেসের বন্ধুদের থেকে জানতে চাই, আপনারা কি ভূপেন্দ্র কুমার দত্তের নাম শুনেছেন। কংগ্রেসের জন্য জানা অত্যন্ত জরুরি, যাঁরা এখানে নেই তাঁদেরও জানা উচিৎ।
ভুপেন্দ্র কুমার দত্ত এক সময়ে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তিনি ২৩ বছর জেলে কাটিয়েছেন। তিনি এমন মহাপুরুষ ছিলেন, যিনি সুবিচারের স্বার্থে জেলের ভেতর ৭৮ দিন অনশন করেছিলেন। আর এটা একটা রেকর্ড। দেশ ভাগের পর, ভুপেন্দ্র কুমার দত্ত পাকিস্তানেই থেকে গিয়েছিলেন। তিনি সেদেশের সংবিধান সভার সদস্যও ছিলেন। ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত সেই সংবিধান সভায় যে কথা বলেছিলেন, সেটি আপনাদের শোনাতে চাই। যাঁরা আমাদের দোষারোপ করছেন, তাঁদের এটা বোঝা খুব দরকার।
ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত বলেছিলেন, “পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরা বাস্তবিকই পূর্ব-নির্ধারিত। তাঁদের মধ্যে আমরা যে ১ কোটির মতো মানুষ পূর্ববঙ্গে রয়েছি, তাঁরা সম্পূর্ণ হতাশায় দিন কাটাচ্ছি”। দেশ বিভাগের কিছুদিন পরই পাকিস্তানের সংবিধান সভায় ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত এই বক্তব্য রেখেছিলেন। এরপর, পাকিস্তানের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, ভূপেন্দ্র কুমার দত্তকে ভারতে শরণার্থী হয়ে আসতে হয়। আর ভারতমাতার কোলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আরেকজন বড় স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে গিয়েছিলেন, তাঁর নাম যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল। তিনি সমাজের অত্যন্ত নিপীড়িত, শোষিত, দলিত সমাজের প্রতিনিধিত্ব করতেন। তাঁকে পাকিস্তানের প্রথম আইন মন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৫০ সালের ৯ই অক্টোবর দেশ বিভাগের ২-৩ বছর পরই তিনি পদত্যাগ পত্রে লিখেছিলেন, “আমার বলা উচিৎ যে, পাকিস্তান থেকে হিন্দুদের তাড়ানোর কাজ পশ্চিম পাকিস্তানে পুরোপুরি সফল হয়েছে। আর পূর্ব পাকিস্তানে সাফল্যের কাছাকাছি”। আরেকটি জায়গায় তিনি লিখেছেন “পাকিস্তান মুসলিম লীগকে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট করতে পারেনি এবং নিরাপত্তাও দিতে পারেনি, এখন তারা হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের তাড়াতে চায়, যাতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে কোনও রকম প্রভাব না পড়ে”। এই যোগেন্দ্রনাথা মন্ডলকেও পরে ভারতে আসতে হয়েছিল এবং তাঁর মৃত্যুও ভারতমাতার কোলেই হয়েছে। এত দশক পরও পাকিস্তানের দৃষ্টিকোণ বদলায়নি। সেদেশে আজও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। সম্প্রতি নানকানা সাহিবে কী হয়েছে, তা সারা দেশ ও বিশ্ব দেখেছে। আর এমন নয় যে, এসব শুধু হিন্দু আর শিখদের সঙ্গেই হয়, অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সঙ্গেও এমনটাই হয়। খ্রিস্টানদেরও এমনই অত্য্যাচার সহ্য করতে হয়।
এই সভায় আলোচনার সময় গান্ধীজীর বক্তব্য নিয়েও বলা হয়েছে। সিএএ নিয়ে সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে গান্ধীজীর ভাবনার নাকি মিল নেই।
কংগ্রেস দল তো অনেক দশক আগেই গান্ধীজীর ভাবনাকে ত্যাগ করেছে। সেজন্য দেশবাসী আপনাদের থেকে কিছুই প্রত্যাশা করেন না। কিন্তু যার ভিত্তিতে কংগ্রেসের রুজি-রুটি আমি আজ তাঁর কথা বলতে চাই।
১৯৫০ সালে নেহরু – লিয়াকত চুক্তি হয়েছিল। ভারত ও পাকিস্তানে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তি অনুসারে, পাকিস্তানে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের সঙ্গে উপর কোনও বৈষম্যমূলক ব্যবহার করা হবে না। এখন কংগ্রেসকে জবাব দিতে হবে, নেহরুজীর মতো এত বড় ধর্মনিরপেক্ষ মহান দার্শনিক, এত বড় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি সেই সময় সংখ্যালঘু শব্দটির পরিবর্তে ‘সমস্ত নাগরিক’ শব্দটি কেন ব্যবহার করেননি? তাঁর মতো মহান উদার ব্যক্তি এমনটি কেন করেননি ভাই? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনও কারণ রয়েছে। আপনারা এই সত্যকে কতদিন লুকিয়ে রাখবেন?
ভাই ও বোনেরা, মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয় এবং সমস্ত মাননীয় সদস্যগণ, আমি সেই সময়ের কথা বলছি, নেহরুজী সেই চুক্তিতে ‘সংখ্যালঘু’ এই শব্দটি কেমন করে মেনে নিয়েছিলেন। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনও কারণ রয়েছে। আমি এখন সেই কথাটি বলবো, যা সেই সময়ে নেহরুজী বলেছিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, নেহরুজী ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটি কেন প্রয়োগ করেছেন, এই প্রশ্নের জবাব আপনি দেবেন না। কারণ আপনার অসুবিধা রয়েছে। কিন্তু নেহরুজী নিজেই এর জবাব দিয়ে গেছেন। এই চুক্তি স্বাক্ষরের এক বছর আগে আসামের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় গোপীনাথজী তাঁকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তার জবাবে নেহরুজী যা লিখেছিলেন, আমি সেখান থেকে একটি অংশ আপনাদের শোনাতে চাই।
নেহরুজী লিখেছিলেন, “আপনাদের হিন্দু ‘শরণার্থী’ এবং মুসলিম ‘অভিবাসী’ এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। আর দেশকে এই শরণার্থীদের দায়িত্ব নিতেই হবে। নেহরু – লিয়াকত চুক্তির পর ১৯৫০ সালের ৫ই নভেম্বর এই সভাকক্ষে দাঁড়িয়ে নেহরুজী বলেছিলেন, “এতে কোনও সন্দেহ নেই, যে সমস্ত আক্রান্ত মানুষেরা ভারতে বসবাসের জন্য এসেছেন, তাঁরা নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী। এটি যদি আইনসম্মত নাও হয়, তা হলে আইনে পরিবর্তন আনা উচিৎ”।
১৯৬৩ সালে এই লোকসভায় ‘কল অ্যাটেনশন মোশন’ হয়েছে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী নেহরু তৎকালীন বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। প্রস্তাবের জবাবে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শ্রী দিনেশজী যখন বলছিলেন, তাঁর বক্তব্যের শেষ দিকে নেহরুজী একটা সংশোধনী টিপ্পনিতে বলেছিলেন, “পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন সেখানকার হিন্দুদের উপর সাংঘাতিক চাপ সৃষ্টি করছে”। পাকিস্তানের পরিস্থিতি দেখে শুধু গান্ধীজী নয়, নেহরুজীও এরকম দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এত এত দস্তাবেজ, চিঠিপত্র, স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্ট – এই সবকিছুই এ ধরণের আইনের সপক্ষে ওকালতি করে।
আমি এই সভায় দাঁড়িয়ে এতসব তথ্যের ভিত্তিতে, বিশেষ করে কংগ্রেস দলের কাছে জানতে চাই, কংগ্রেসের সহযোগী দলগুলিও আমার প্রশ্নটি বুঝবেন। আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই, পণদিত নেহরু কি হিন্দু – মুসলিমের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করতেন? পন্ডিত নেহরু কি হিন্দুরাষ্ট্র বানাতে চাইতেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, কংগ্রেসের সমস্যা হ’ল, তাঁরা কথা বানান, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেন এবং দশকের পর দশক ধরে সেসব প্রতিশ্রুতি এড়িয়ে যান। আজ আমাদের সরকার রাষ্ট্রনির্মাতাদের ভাবনা অনুসারে, সিদ্ধান্তগুলি নিচ্ছে বলে কংগ্রেসের সমস্যা হচ্ছে। আমি এই সভার মাধ্যমে আরেকবার এদেশের ১৩০ কোটি নাগরিকদের দায়িত্বের সঙ্গে সংবিধানের মর্যাদা বুঝে বলতে চাই – সিএএ আইনের মাধ্যমে ভারতের কোনও নাগরিকের ওপর কোনও ধরণের প্রভাব ফেলবে না। সে তিনি হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রীস্টান যাই হন না কেন – কারও সমস্যা হবে না! এর মাধ্যমে ভারতীয় সংখ্যালঘুদের কোনও লোকসান হবে না। তবুও যাদেরকে দেশের জনগণ নস্যাৎ করে দিয়েছে, তাঁরা ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে এই খেলা খেলছেন।
আমি কংগ্রেস দলকে বিশেষভাবে জিজ্ঞেস করতে চাই, যাঁরা সংখ্যালঘুদের নামে রাজনৈতিক খেলা খেলেন, কংগ্রেসের কি ১৯৮৪ সালের দিল্লির দাঙ্গা মনে আছে, আপনারা আমাদের শিখ ভাইদের গলায় টায়ার বেঁধে তাঁদের জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁরা কি সংখ্যালঘু ছিলেন না? শুধু তাই নয়, শিখ দাঙ্গায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আপনারা মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসিয়ে দেন। শিখ দাঙ্গায় অভিযুক্তদের সাজা পেতে দেখার জন্য সেই বিধবা মায়েদের তিন-তিন দশক সুবিচারের প্রতীক্ষায় থাকতে হয়েছে। তাঁরা কি সংখ্যালঘু নন? সংখ্যালঘু মাপার জন্য কি দুটো দাড়িপাল্লা থাকবে? আপনারা কি এটাই চান?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, কংগ্রেস দল এত বছর দেশ শাসন করেছে, আজ দেশের দুর্ভাগ্য হ’ল যাদের কাছে দায়িত্বশীল বিপক্ষ রূপে দেশের প্রত্যাশা ছিল, তাঁরা আজ ভুলপথে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই পথ আপনাদেরকেও সমস্যায় ফেলবে, দেশকেও সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দেবে। আর এই সাবধান বাণী এজন্য বলছি, আমাদের সবার দেশের জন্য ভাবা উচিৎ। দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করা উচিৎ।
আপনারা ভাবুন, যদি রাজস্থান বিধানসভা কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, কোনও ব্যবস্থা গড়ে তোলে আর রাজস্থানের জনগণ তা মানতে রাজি না হয়, মিছিল মিটিং করেন, হিংসা, বহ্ন্যুৎসব করে – আপনাদের সরকারের কী অবস্থা হবে। মধ্যপ্রদেশের সাংসদরা এখানে রয়েছেন। মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় কোনও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মানুষ যদি এভাবে পথে বেরিয়ে পড়েন, এভাবে দেশ চলতে পারে কি?
আপনারা এত ভুল করেছেন বলেই তো ওদিকে বসতে হচ্ছে। আপনাদেরই দুষ্কর্মের পরিণাম-স্বরূপ জনগণ আপনাদের ওদিকে বসিয়েছেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে প্রত্যেকেরই নিজের কথা বলার অধিকার রয়েছে। কিন্তু মিথ্যে আর গুজব ছড়িয়ে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে আমরা কেউ দেশের কল্যাণ করতে পারবো না।
আর সেজন্য আমি সংবিধান নিয়ে যাঁরা বলছেন, তাঁদেরকে বিশেষ অনুরোধ করছি, আসুন – সংবিধানকে সম্মান করুন।
আসুন, সবাই মিলে দেশ চালাই! আসুন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই, আমরা ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার অর্থনীতির সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাই।
আসুন, দেশের ১৫ কোটি পরিবার, যাঁরা খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জল পায় না, তা পৌঁছে দেয়ার সংকল্প নিই।
আসুন, দেশের প্রত্যেক গরিবকে পাকাবাড়ি করে দেয়ার জন্য মিলেমিশে কাজ করি।
আসুন, দেশের কৃষক, জেলে, পশুপালকদের আয় বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
আসুন, প্রত্যেক পঞ্চায়েতে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দিই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যেন মিলেমিশে কাজ করতে পারি – এই ভাবনা নিয়ে মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে, আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। আপনাকেও বিশেষ বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।
CG/SB/SB
(Release ID: 1602894)
Visitor Counter : 556