প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

আসামের কোকড়াঝাড়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 09 FEB 2020 6:57PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

 

 

ভারতমাতা কি জয়

ভারতমাতা কি জয়

ভারতমাতা কি জয়

 

মঞ্চে উপস্থিত আসামের রাজ্যপাল, আমার সংসদের সহকর্মীরা, বিভিন্ন পর্ষদ ও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নেতৃবৃন্দ, উপস্থিত এনডিএফডি-র বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গীরা, এখানে উপস্থিত সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ এবং আমাদের আশীর্বাদ প্রদানের জন্য বিপুল সংখ্যায় আগত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা।

 

আমি আসামে অনেকবার এসেছি। এই কোকড়াঝাড়েও এসেছি। অনেক বছর, অনেক দশক ধরে এই গোটা অঞ্চলে আমি অনেকবার এসেছি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বারবার আপনাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য এসেছি। কিন্তু আজ যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা আপনাদের মুখে দেখতে পাচ্ছি, তা এখানকার ‘আরোনাই’ এবং ‘ডোখোনা’র বর্ণময় উৎসবের আবহে আরও আনন্দ দিচ্ছে।

 

সার্বজনীন জীবনে, রাজনৈতিক জীবনে আমি অনেক সভা ও শোভাযাত্রা দেখেছি, অনেক সভায় বক্তব্য রেখেছি। কিন্তু সারা জীবনে কখনও এতো বিশাল জনসমুদ্র দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। রাজনৈতিক জীবন নিয়ে যাঁদের পাণ্ডিত্য রয়েছে, তাঁরা হয়তো ভবিষ্যতে বলবেন যে, স্বাধীনতার পর ভারতে সবচেয়ে বড় জনসভা যদি কোথাও হয়ে থাকে, সেটি এখানে আজ আপনাদের পরাক্রমে সম্ভব হয়েছে। আমি হেলিকপ্টার থেকে দেখছিলাম। হেলিকপ্টার থেকে যেদিকেই তাকাচ্ছিলাম, শুধু মানুষের মাথা দেখতে পাচ্ছিলাম। সেতুর ওপর এতো মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন যে, আমার ভয় করছিল, কেউ পড়ে গেলে কী হবে?

 

ভাই ও বোনেরা, আপনারা এতো বিপুল সংখ্যায় আশীর্বাদ দিতে এসেছেন দেখে আমার বিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে। কখনও অনেকে বলেন, মোদীকে ডান্ডা মারা উচিৎ। কিন্তু এতো বিপুল সংখ্যায় মা ও বোনেদের আশীর্বাদের সুরক্ষাকবচ যে মোদীর উপর বর্ষিত হয়, তাকে যতই লাঠিপেটা করো না কেন, কিচ্ছু হবে না। আমি আপনাদের সবাইকে প্রণাম জানাই। মা ও বোনেরা, আমার ভাই ও বোনেরা, আমার নবীন বন্ধুরা, আমি আজ হৃদয় থেকে আপনাদের বুকে জড়িয়ে ধরতে এসেছি। আমার আসামের প্রিয় ভাই ও বোনেদের মনে একটি নতুন বিশ্বাস সঞ্চার করতে এসেছি। গতকাল সারা দেশ দেখেছে যে, কিভাবে আপনারা গ্রামে গ্রামে মোটর সাইকেলে করে শোভাযাত্রা বের করেছিলেন। গোটা এলাকায় দীপ জ্বালিয়ে দীপাবলী পালন করেছিলেন। হয়তো দীপাবলীর সময়েও এতো প্রদীপ জ্বলেনি। আমি গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছিলাম, টিভিতেও আপনাদের প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের দৃশ্য সারা দেশ দেখছিল। গোটা ভারতে আপনাদেরকে নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল। ভাই ও বোনেরা, এটা কোনও হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ দীপ প্রজ্জ্বলনের ঘটনা নয়, এটা দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূভাগে একটি নতুন আলো ও ঔজ্জ্বল্যের সূত্রপাত।

 

ভাই ও বোনেরা, আজকের দিনে আমরা সেই হাজার হাজার শহীদদের স্মরণ করবো, যাঁরা দেশের জন্য নিজের কর্তব্যপথে আত্মোৎসর্গ করেছেন। আজকের দিনটি বোড়োফা উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মাজী, রূপনাথ ব্রহ্মাজীর মতো নেতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অবদানকে মনে করার ও তাঁদের প্রণাম জানানোর দিন। আজকের দিনে এই চুক্তির ক্ষেত্রে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালনকারী অল বোড়ো স্টুডেন্টস্‌ ইউনিয়ন (আবসু), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অফ বোড়ো ল্যান্ড (এনডিএফবি)-র সঙ্গে যুক্ত সকল নবীন বন্ধু, বিটিসি-র প্রধান শ্রী হাগ্রামা মাহিলাড়ে এবং আসাম সরকারের দায়বদ্ধতা – আপনারা সবাই আমার এবং সারা ভারতের পক্ষ থেকে অভিনন্দনের অধিকারী। আজ ১৩০ কোটি ভারতবাসী আপনাদের শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছে।

 

বন্ধুগণ, আজকের দিনে আপনাদের সবার এই গোটা এলাকার সমস্ত গুরুজন, বুদ্ধিজীবী, কলা ও সংস্কৃতির ধারকবাহক ও সাহিত্যিকদের প্রচেষ্টাকে উদযাপন ও তাঁদের জন্য গর্ব করার সুযোগ এসেছে। আপনাদের সকলের সহযোগে এই এলাকায় স্থায়ী শান্তির পথ খুলে গেছে। আজকের দিনটি আসাম সহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য একবিংশ শতাব্দীর একটি নতুন সূত্রপাত, নতুন সকাল, নতুন প্রেরণাকে স্বাগত জানানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আজকের দিনটি সংকল্প গ্রহণের, উন্নয়ন ও বিশ্বাসের মূলধারাকে শক্তিশালী করার। এখন আর এই মাটিকে হিংসার অন্ধকারে ফিরে যেতে দেওয়া চলবে না। এখন আর এই মাটির কোনও মায়ের সন্তান-সন্ততি, কোনও বোনের ভাই কিংবা ভাইয়ের বোনের রক্তে লাল হবে না। আজ আমাকে সেই মা ও বোনেরাও আশীর্বাদ দিচ্ছেন, যাঁদের ঘরের ছেলেমেয়েদের একদিন কাঁধে বন্দুক নিয়ে অনিশ্চয়তার পথে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে হ’ত। কখনও কখনও মৃত্যু তাঁদের ছিনিয়ে নিত। আজ থেকে তাঁরা মায়ের কোলে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন। আজ আমাকে সেই মা ও বোনেরাও আশীর্বাদ দিচ্ছেন। কল্পনা করুন এত দশক ধরে দিনরাত গুলি বিনিময় হচ্ছিল। আজ সেই জীবন থেকে মুক্তির পথ খুলে গেছে। আজ নতুন ভারতের নতুন সংকল্পে আপনাদের সকলকে শান্তিপ্রিয় আসামকে শান্তি ও উন্নয়নপ্রিয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই।

 

বন্ধুগণ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শান্তি ও উন্নয়নের এই নতুন অধ্যায়ের সূচনা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা যখন মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মজয়ন্তী পালন করছি, তখন এই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শুধু ভারত নয়, এই সভাস্থল আজ গোটা বিশ্বের জন্য হিংসার পথ ছেড়ে অহিংসার পথ বেছে নেওয়ার প্রেরণাস্থল হয়ে উঠেছে। মহাত্মা গান্ধী বলতেন, অহিংসার পথে আমরা যা পাই, তা প্রত্যেকের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য হয়। এখন আসামের অনেক বন্ধু শান্তি ও অহিংসার পথ বেছে নিয়ে গণতন্ত্রকে স্বীকার করার পাশাপাশি, ভারতের সংবিধানকে তাঁদের মাথায় তুলে নিয়েছেন।

বন্ধুগণ, আমাকে বলা হয়েছে, আজ যখন আমরা কোকড়াঝাড়ে এই ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি উদযাপন করতে এসেছি, তখন গোলাঘাটে শ্রীমন্ত শঙ্করদেব সংঘের বার্ষিক সম্মেলনও চলছে।

 

মোই মোহাপুরুখ শ্রীমন্তো হোংকোর দেবোলোই গোভীর প্রোনিপাত জাসিসু।

মোই লোগোত অধিবেখোন খোনোরু হোফোলতা কামনা করিলোঁ।।

 

(আমি মহাপুরুষ শঙ্করদেবজীকে প্রণাম জানাই। আমি গোলাঘাটে শ্রীমন্ত শঙ্করদেব সংঘের অধিবেশনের সাফল্য কামনা করি)

 

ভাই ও বোনেরা, শ্রীমন্ত শঙ্করদেবজী আসামের ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি, সমগ্র ভারত তথা গোটা বিশ্বকে আদর্শ জীবনযাপনের পথ দেখিয়েছে। তিনি আসাম সহ সমগ্র বিশ্বকে বলেছিলেন,

 

সত্য শৌচ অহিংসা শিখিবে সমদম।

সুখ দুখ শীত উষ্ণ আত হৈব সম।।

 

অর্থাৎ - সত্য, শৌচ, অহিংসা, সাম, দাম ইত্যাদি থেকে শিক্ষা নাও। সুখ, দুঃখ, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত ইত্যাদির সহ্য করার জন্য নিজেকে তৈরি করো। তাঁর এই ভাবনায় ব্যক্তির আত্মবিকাশের পাশাপাশি, সমাজ উন্নয়নের বার্তাও নিহিত রয়েছে। আজ অনেক দশক পর এই অঞ্চলে ব্যক্তি বিকাশের পাশাপাশি, সমাজ উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হয়েছে।

 

ভাই ও বোনেরা, আমি বোড়োল্যান্ড আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমস্ত ব্যক্তিকে দেশের মূলস্রোতে ফিরে আসার জন্য অনেক অনেক স্বাগত জানাই। পাঁচ দশক পর অত্যন্ত সৌহার্দ্যের পরিবেশে বোড়োল্যান্ড আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক বন্ধুর আশা-আকাঙ্খা সম্মানিত হয়েছে। সমস্ত পক্ষ মিলেমিশে স্থায়ী শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য ধারাবাহিক হিংসায় আজ পূর্ণযতি টেনেছে। আমি দেশবাসীকে এটাও জানাতে চাই, আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, যাঁরা বিভিন্ন টীভি চ্যানেলের মাধ্যমে এই মুহূর্তটিকে প্রত্যক্ষ করছেন, তাঁরা দেখছেন যে, আপনারা একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ভারতে একটি নতুন আস্থার জন্ম দিয়েছেন। আপনারা শান্তির পথকে নতুন শক্তি যুগিয়েছেন।

 

ভাই ও বোনেরা, আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই। আজ এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি দাবি পূরণ করা হয়েছে। সেজন্য আপনাদের আন্দোলনেও পূর্ণযতি এসেছে। ১৯৯৩ সালে এবং তারপর ২০০৩ সালে যে চুক্তি হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ রূপে শান্তি স্থাপন করতে পারেনি। এখন কেন্দ্রীয় সরকার, আসাম সরকার এবং বোড়ো আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলি যে ঐতিহাসিক চুক্তিতে সহমত হয়ে হস্তাক্ষর করেছেন, তারপর আর কোনও দাবি বাকি নেই, এখন উন্নয়নকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে, আর উন্নয়নই শেষ কথা।

 

বন্ধুগণ, আমাকে ভরসা করুন। আমি আপনাদের দুঃখ, ব্যথা, আশা-আকাঙ্খা, সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সমস্ত ক্ষেত্রেই কাজ করে যাবো। কারণ আমি জানি, বন্দুক বোমা পিস্তলের পথ ছেড়ে আপনারা যখন ফিরে এসেছেন, তখন আপনাদের মানসিক স্থিতি কী তা আমি বুঝতে পারছি। এই শান্তির পথে কোনও কাঁটা যদি আপনাদের খোঁচা দেয়, তার যন্ত্রণা আমারও হবে। কারণ এই শান্তির পথ একটি প্রেমের ভালোবাসার পথ। আপনারা দেখবেন এই অহিংসার পথ গোটা আসামবাসীর হৃদয়ে আপনাদের স্থায়ী জায়গা করে দেবে। আপনারা ইতিমধ্যেই গোটা ভারতের হৃদয় জয় করেছেন। আপনারা সঠিক পথ বেছে নিয়েছেন।

 

বন্ধুগণ, এই চুক্তিতে বোড়ো জনজাতির বন্ধুরা ছাড়াও সমাজের অন্যান্য মানুষও উপকৃত হবেন। এই চুক্তির মাধ্যমে বোড়ো টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের অধিকারের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এই চুক্তিতে সমস্ত পক্ষের জয় হয়েছে। তারচেয়েও বড় কথা শান্তি ও মানবতার জয় হয়েছে। একটু আগেই আপনারা সকলে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে আমাকে সম্মান জানিয়েছিলেন। আমি চাই যে, আপনারা আরেকবার উঠে হাততালি দিন। সেটা আমার জন্য নয় - শান্তির জন্য।

 

আমি আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

 

চুক্তি অনুসারে, বিটিএডি-তে যে অঞ্চলগুলি অন্তর্ভুক্ত হবে, সেগুলির সীমা নির্ধারণের জন্য কমিশন গঠন করা হবে। এই অঞ্চল দেড় হাজার কোটি টাকার বিশেষ উন্নয়ন প্যাকেজ পাবে। এই অর্থ কোকড়াঝাড়, চিরাঙ্গ, বক্সা এবং উদালগুড়ির মতো জেলাগুলিকে উপকৃত করবে। বোড়ো জনজাতির প্রত্যেক অধিকার এবং বোড়ো সংস্কৃতির উন্নয়ন ও সংরক্ষণ সুনিশ্চিত হবে। এই চুক্তির পর এই অঞ্চলের রাজনৈতিক, আর্থিক ও শিক্ষার মতো প্রতিটি বিষয়ে উন্নতি হবে।

 

আমার ভাই ও বোনেরা, সরকার আসাম চুক্তির ৬ নম্বর ধারাটিকে দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি আসামের জনগণকে আশ্বস্ত করছি যে, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিটির রিপোর্ট আসার পর কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুততার সঙ্গে তৎপর হবে। আমরা ঝুলিয়ে রাখা কিংবা বিভ্রান্ত করার মানুষ নই। আমরা স্বভাব দায়িত্ব পালনের। সেজন্য অনেক বছর ধরে আসামে যে বিষয়গুলি ঝুলে ছিল, সেগুলি আমরা দ্রুত বাস্তবায়িত করবো।

 

বন্ধুগণ, আজ যখন বোড়ো অঞ্চলে নতুন আশা, স্বপ্ন ও উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছে, তখন আপনাদের সকলের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। আমার বিশ্বাস, বোড়ো টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল এখন এই অঞ্চলের প্রত্যেক সমাজকে সঙ্গে নিয়ে কোনও বৈষম্য ছাড়াই সকলকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের নতুন মডেল বিকশিত করবে। আমি এটা জেনে খুব খুশি হয়েছি যে, আসাম সরকার বোড়ো ভাষা ও সংস্কৃতির প্রচার, প্রসার ও সংরক্ষণের স্বার্থে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে এবং বড় প্রকল্পও রচনা করেছে। সেজন্য আমি রাজ্য সরকারকে অন্তর থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। বোড়ো টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল, আসাম সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার মিলেমিশে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিসওয়াস’ এই মন্ত্রকে একটি নতুন মাত্রা দেবে। ভাই ও বোনেরা, এর মাধ্যমে আসাম শক্তিশালী হবে এবং ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ এর ভাবনাও আরও শক্তিশালী হবে।

 

বন্ধুগণ, একবিংশ শতাব্দীর ভারত এখন দৃঢ় নিশ্চিত যে আমাদের এখন অতীতের সমস্যাগুলিতে জড়িয়ে থাকলে হবে না। আজ দেশ কঠিন থেকে কঠিন সমস্যার সমাধান চায়। দেশের সামনে যতই সমস্যা থাকুক না কেন, কখনও রাজনৈতিক কারণে, কখনও সামাজিক কারণে সেগুলিকে সরকার এড়িয়ে গেছে। এই এড়িয়ে যাওয়া সমস্যাগুলিই দেশের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে হিংসা, অস্থিরতা এবং অবিশ্বাসকে প্রশ্রয় দিয়েছে।

 

অনেক দশক ধরেই দেশে এরকম চলছিল। অনেকে তো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্যার সমাধানে হাতই দিতে চাননি। আন্দোলন চলছে - চলতে দাও, অবরোধ হচ্ছে – হতে দাও, হিংসা হচ্ছে – কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করো – এটাই ছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে দেশের হর্তাকর্তাদের দৃষ্টিকোণ। আমি মনে করি, এই দৃষ্টিকোণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু ভাই বোনকে মূলস্রোত থেকে এতটা দূরে সরিয়ে দিয়েছে যে, তাঁরা সংবিধান ও গণতন্ত্রকে আস্থা হারাতে বসেছিলেন। বিগত দশকগুলিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাজার হাজার নির্দোষ ব্যক্তি মারা গেছেন, হাজার হাজার নিরাপত্তা কর্মী শহীদ হয়েছেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ কখনও জানতেই পারেননি যে, উন্নয়নের মানে কী! এই সত্ত্ব পূর্ববর্তী সরকারগুলিও জানতো, বুঝতো এমনকি স্বীকারও করতো। কিন্তু এই পরিস্থিতি কিভাবে বদলাবে, সেক্ষেত্রে পরিশ্রম করার জন্য এগিয়ে আসেনি। এতো বড় সঙ্কটে হাত দিতে চায়নি। যেভাবে চলছে, চলতে দাও – এই ভাবনা নিয়ে থেকে গেছে।

 

ভাই ও বোনেরা, যখন দেশের স্বার্থ সবার ওপরে থাকে, তখন কোনও পরিস্থিতিতে এভাবে ছেড়ে দেওয়া যায় না। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত বিষয় এতই সংবেদনশীল ছিল, তাই আমরা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করা শুরু করেছি। আমরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন এলাকার ভাবনাগত সমস্যাগুলি এবং তাঁদের আশা-আকাঙ্খা বোঝার চেষ্টা করেছি। এই অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণের সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে মিশে তাঁদের মনে কথা জানার চেষ্টা করেছি। আমরা আস্থা অর্জন করেছি। আমরা তাঁদের পর ভাবিনি। আমরা তাঁদেরকে যেমন পর ভাবিনি, তাঁদের নেতাদেরকেও পর ভাবিনি নিজের ভেবেছি। এই নিবিড় যোগাযোগের ফলেই আজ যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গড়ে প্রতি বছর ১ হাজারেরও বেশি মানুষ সন্ত্রাসবাদের শিকার হ’ত, সেই অঞ্চলে পূর্ণ শান্তির বাতাবরণ গড়ে উঠেছে আর উগ্রবাদ সমাপ্ত হয়েছে।

 

যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রে আর্ম ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট প্রয়োগ করা হয়েছিল, আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয় এবং অরুণাচল প্রদেশের অধিকাংশ এলাকা আফস্‌পা মুক্ত হয়ে গেছে। যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কোনও শিল্পপতি বিনিয়োগের জন্য রাজি হতেন না, সেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে, নতুন নতুন শিল্প গড়ে উঠছে।

 

যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কোনও শিল্পপতি বিনিয়োগের জন্য রাজি হতেন না, সেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে, নতুন নতুন শিল্প গড়ে উঠছে। যেখানে নিজ নিজ বাসভূমির দাবিতে লড়াই চলছিল, সেখানে এখন ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ – এর ভাবনা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিংসার কারণে হাজার হাজার মানুষ দেশের অন্যত্র শরণার্থী হয়ে গিয়েছিলেন, এখন তাঁদেরকে নিজের এলাকায় পূর্ণ সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে মানুষ যেতে ভয় পেতেন, এখন সেই অঞ্চলকেই অনেকে পরবর্তী পর্যটন গন্তব্য হিসাবে বেছে নিচ্ছেন।

 

বন্ধুগণ, এই পরিবর্তন কিভাবে এসেছে? এই পরিবর্তন একদিনে আসেনি। এটি বিগত পাঁচ বছরের কঠিন পরিশ্রমের ফসল। আগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে শুধুই গ্রহীতা রূপে দেখা হ’ত। আজ তাঁদের উন্নয়নের গ্রোথ ইঞ্জিন হিসাবে দেখা হচ্ছে। আগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে দিল্লি থেকে অনেক দূরে মনে করা হ’ত। আজ দিল্লি আপনাদের দরজায় দাঁড়িয়ে আপনাদের সুখ-দুঃখকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমাকেই দেখুন ….. আমি আমার বোড়ো বন্ধুদের সঙ্গে, আসামের জনগণের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁদের দিল্লিতে ডেকে পাঠাইনি। আপনাদের মাঝে এসে, আপনাদের চোখে চোখ রেখে, আপনাদের আশীর্বাদ নিয়ে আজ আপনাদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়েছি। আমি সরকারের মন্ত্রীদের জন্য কর্মসূচি তৈরি করে, এটা সুনিশ্চিত করেছি যে, প্রতি ১০-১৫ দিন পর কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও না কোনও মন্ত্রী যেন উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফর করেন। তিনি রাত্রিবাস করবেন, মানুষের সঙ্গে মিশে তাঁদের সমস্যা সমাধান করুন। আমার মন্ত্রিসভার বন্ধুরা গত পাঁচ বছর ধরে আপনাদের সঙ্গে অধিকাংশ সময় কাটিয়ে আপনাদের সমস্যা বুঝে সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। আপনাদের কাছ থেকে সরাসরি ফিডব্যাক নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি প্রণয়ন করেছি।

 

বন্ধুগণ, ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যকে মিলিয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকারও কম বরাদ্দ হয়েছিল। আমরা চতুর্দশ অর্থ কমিশনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি।

 

বিগত তিন – চার বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৩ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক নির্মিত হয়েছে। নতুন জাতীয় সড়ক স্বীকৃত হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সমগ্র রেল নেটওয়ার্ককে ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ এবং পুরনো বিমানবন্দরগুলির আধুনিকীকরণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

 

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এত নদী, এত ব্যাপক জলসম্পদ রয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সাল পর্যন্ত এখানে একটিমাত্র জলপথ ছিল। ৩৬৫ দিন ধরে জলে ভরা নদীগুলিকে কাজে লাগানোর কথা কেউ ভাবেননি। এখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এক ডজনেরও বেশি জলপথ চালু করার কাজ চলছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুবশক্তিকে শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে নতুন পরিকাঠামো প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতায়নের কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য দিল্লি ও বেঙ্গালুরুতে নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণের কাজ চলছে।

 

বন্ধুগণ, নতুন নতুন রেল স্টেশন, নতুন রেলপথ, নতুন বিমানবন্দর, নতুন জলপথ কিংবা ইন্টারনেট সংযোগের কাজ দ্রতগতিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিস্তারলাভ করছে। আমরা অনেক দশক পুরনো ঝুলে থাকা প্রকল্পগুলিও বাস্তবায়িত করছি। পাশাপাশি, নতুন প্রকল্পগুলিও দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করছি। ফলে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত উন্নত হবে। পর্যটন আরও শক্তিশালী হবে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। গত মাসে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যে নির্মীয়মান গ্যাসগ্রিড প্রকল্পের জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে।

 

বন্ধুগণ, পরিকাঠামো শুধুই সিমেন্ট আর কংক্রিটের জঙ্গল হয় না। এর মানবিক প্রভাব থেকে মনে হয় যে, কেউ তো রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের কথা ভাবছেন। যখন বগিবিল সেতুর মতো দশকের পর দশক ধরে ঝুলে থাকা অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত করার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হচ্ছে, তখন তাঁদের সরকারের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা বেড়েছে। এই আবহেই বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি বুঝতে পেরেছে, এখন আর দূরে থাকা নয়, কাছে আসতে হবে, জড়িয়ে ধরতে হবে। যখন আমরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরতে পারবো, তখন সকলের জন্য সমানভাবে উন্নয়ন হবে। যখন মানুষ একসঙ্গে কাজ করার জন্য তৈরি হয়ে পড়েন, তখন একটার থেকে একটা বড় সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

 

বন্ধুগণ, এমনই একটি সমস্যা ছিল ব্রু-রিয়াং জনজাতি সম্প্রদায়ের পুনর্বাসনে। কিছুদিন আগেই ত্রিপুরা ও মিজোরামের মধ্যে অনেক উৎকন্ঠা নিয়ে বেঁচে থাকা ব্রু-রিয়াং জনজাতির পুনর্বাসনের ঐতিহাসিক চুক্তি হয়েছে। প্রায় আড়াই দশক পর হওয়া এই চুক্তির মাধ্যমে এখন হাজার হাজার পরিবারের নিজস্ব স্থায়ী বাড়ি, স্থায়ী ঠিকানা পাওয়া সুনিশ্চিত হয়েছে। ব্রু-রিয়াং জনজাতি সমাজের এই বন্ধুদের সুপরিকল্পিত পুনর্বাসনের জন্য সরকার একটি বিশেষ প্যাকেজ দেবে।

 

বন্ধুগণ, আজ দেশে আমাদের সরকারের সৎ প্রচেষ্টার ফলে এই ভাবনা বিকশিত হয়েছে যে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার মধ্যেই দেশের মঙ্গল। এই ভাবনা থেকেই কিছুদিন আগেই গুয়াহাটিতে ৮টি ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর প্রায় সাড়ে ছশো ক্যাডার হিংসার পথ ছেড়ে শান্তির পথ বেছে নিয়েছে। এই ক্যাডাররা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, বড় মাত্রায় বিস্ফোরক এবং গুলি সহ রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলির মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

 

বন্ধুগণ, গত বছরই ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা এবং সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমি মনে করি, এই চুক্তিও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। ১৯৯৭ সাল থেকেই এনএলএফটি নিষিদ্ধ সংগঠন ছিল। অনেক বছর ধরে এই সংগঠন হিংসাশ্রয়ী ছিল। ২০১৫ সালে আমাদের সরকার এনএলএফটি-র সঙ্গে কথা বলা শুরু করে। তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে। মাঝে কিছু মানুষকে রেখে সাহায্য নিয়েছে। এর কিছুদিন পর থেকেই এই বোমা-বন্ধুক-পিস্তলে বিশ্বাস রাখা গোষ্ঠীর লোকেরা হিংসাশ্রয়ী গতিবিধি ত্যাগ করে। নিয়মিত প্রচেষ্টার পর গত বছর ১০ আগস্টে চুক্তি সম্পাদনের পর এই সংগঠন অস্ত্র সমর্পণ করেছে। আর সমস্ত সদস্য ভারতের সংবিধানের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে মূলস্রোতে ফিরে আসে। ভাই ও বোনেরা, ভোটের জন্য, রাজনৈতিক লাভের জন্য দীর্ঘকাল সমস্যাগুলি জিইয়ে রাখা আর সেগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার ফলে আসাম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, দেশের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।

 

বন্ধুগণ, নানারকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার এই রাজনীতির মাধ্যমে দেশ বিরোধী কাজ করার একটি মানসিকতা গড়ে উঠেছে। যে ভাবনা, প্রবৃত্তি এবং রাজনীতি এমন মানসিকতাকে উৎসাহ যুগিয়ে গেছে। এমন মানুষেরা ভারতকে জানে না, আসামকেও বোঝে না। ভারতের সঙ্গে আসামের সংযোগ হ’ল হৃদয়ের, আত্মার সংযোগ। আসাম শ্রীমন্ত শঙ্করদেবজীর মূলবোধ নিয়ে বাঁচে। শ্রীমন্ত শঙ্করদেবজী বলতেন –

 

কোটি কোটি জন্মান্তরের যাহার, কোটি কোটি জন্মান্তরে যাহার

আসে মহাপুণ্যরাশি, সি সি কদাচিৎ মনুষ্য হোবয়, ভারত বরিষে আসি!!

 

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি অনেক জন্ম ধরে নিরন্তর পুণ্যার্জন করেছেন, তিনি এই ভারত দেশে জন্মগ্রহণ করেন। এই ভাবনা আসামের কোণায় কোণায়, আসামের প্রতিটি ধূলিকণায়, আসামের প্রত্যেক নাগরিকের মনে রয়েছে। এই ভাবনা থেকেই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে স্বাধীন দেশের নবনির্মাণে আসামের জনগণ নিজেদের রক্ত ও ঘাম ঝড়িয়েছে। এই মাটি স্বাধীনতার জন্য ত্যাগ-তপস্যার মাটি। আমি আজ আসামের প্রত্যেক বন্ধুকে আশ্বস্ত করতে এসেছি যে, আসাম বিরোধী, দেশ বিরোধী প্রত্যেক মানসিকতাকে, এগুলির সমর্থনকারীদের দেশ কখনও বরদাস্ত করবে না, ক্ষমাও করবে না।

 

বন্ধুগণ, এই সুযোগসন্ধানীরাই পূর্ণশক্তি দিয়ে আসাম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গুজব ছড়াচ্ছে যে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সিএএ – এর জন্য এই রাজ্যে বিদেশী অনুপ্রবেশ ঘটবে। আমি আসামের জনগণকে আশ্বস্ত করছি যে, এমন কিছুই হবে না।

 

ভাই ও বোনেরা, আমি দীর্ঘকাল আসামে একজন বিজেপি কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেছি। অনেক ছোট ছোট জায়গা সফরের সময় সহকর্মীদের সঙ্গে বসে কথা বলতাম, পাশাপাশি হাঁটতাম, এখানকার বন্ধুদের মুখে প্রায়ই ভারতরত্ন ভূপেন হাজারিকার জনপ্রিয় গানের পঙক্তিগুলি শুনতাম। ভূপেন হাজারিকাকে আমি খুব ভালোবাসতাম। কারণ, আমার জন্ম গুজরাটে, আর ভারতরত্ন ভূপেন হাজারিকা আমাদের গুজরাটের জামাই। এজন্য আমরা গর্বিত। আর তাঁর ছেলে, সন্তান-সন্ততিরা আজও গুজরাটি বলেন, আর সেজন্য গর্ব হয়। আর আমি যখন শুনতাম যে ….

 

গোটঈ জীবোন বিসারিলেউ, অলেখ দিবখ রাতী,

অহম দেহর দরে নেপাউঁ, ইমান রহাল মাটি।।

 

আসামের মতো রাজ্য, আসামের মতো মাটি, এখানকার মানুষের মতো আপনত্ব পাওয়া বড় ভাগ্যের বিষয়। আমি জানি যে, এখানকার ভিন্ন ভিন্ন সমাজের মানুষ, সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস কত সমৃদ্ধ! আপনাদের আশা-আকাঙ্খা, সুখ-দুঃখ, প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আমি বিস্তারিত জানি। যেভাবে বোড়ো সমাজের সঙ্গে যুক্ত বন্ধুরা নিজেদের সমস্ত ভ্রম দূর করে, সমস্ত দাবি ছেড়ে এগিয়ে এসেছেন, আমার আশা যে অন্যান্যদের সমস্ত ভ্রমও অতিদ্রুত সমাপ্ত হবে।

 

বন্ধুগণ, বিগত পাঁচ বছরে ভারতের ইতিহাস এবং বর্তমানে আসামের অবদানকে সমগ্র দেশের মানুষের কাছে তুলে দেওয়ার কাজ হয়েছে। প্রথমবার জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে আসাম সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কলা-সংস্কৃতি, এই অঞ্চলের যুব মেধা, এখানকার ক্রীড়া সংস্কৃতিকে সমগ্র দেশে ও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। আপনাদের স্নেহ, ভালোবাসা ও আশীর্বাদ আমাকে নিরন্তর আপনাদের হিতে কাজ করার প্রেরণা দেয়। এই আশীর্বাদ কখনও বিফলে যাবে না। কারণ, আপনাদের আশীর্বাদের শক্তি অনেক বেশি। আপনি নিজের সামর্থ্যের ওপর আস্থা রাখুন, আপনাদের এই বন্ধুর উপর বিশ্বাস রাখুন। আর মা কামাক্ষ্যার কৃপায় আস্থা রাখুন। মা কামাক্ষ্যায় আস্থা আর আশীর্বাদ আমাদের উন্নয়নের নতুন নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

 

বন্ধুগণ, গীতায় ভগবান কৃষ্ণ পাণ্ডবদের বলেছিলেন, যুদ্ধভূমিতে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র অর্জুনকে বলেছিলেন, গীতায় বিধৃত সেই বিখ্যাত উক্তি – ‘নির্বৈরঃ সর্বভূতেষু য়ঃ স মামেতি পাণ্ডব’।।

 

অর্থাৎ, যে কোনও প্রাণীর বিরুদ্ধে যার বৈরি মনোভাব নেই, তিনিই আমার আপন।

 

ভাবুন, মহাভারতের সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধেও ভগবান কৃষ্ণের এই বার্তা ছিল – ‘কারও সঙ্গে শত্রুতা করো না’!

 

দেশে যারাই মনে মনে কারও প্রতি শত্রুতা পোষণ করেন, তাঁদের প্রতি আমার অনুরোধ, এই মনোভাব ত্যাগ করুন। আপনারা উন্নয়নের মূলস্রোতে ফিরে আসুন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সকলের উন্নয়নে অংশীদার হন। হিংসার মাধ্যমে আগেও কিছু পাননি, ভবিষ্যতেও কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

 

বন্ধুগণ, আরেকবার বোড়ো বন্ধুদের, আসাম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এই বিশাল জনসমুদ্র, এমন দৃশ্য জীবনে আর কখনও দেখতে পাবো কিনা জানি না! অসম্ভব দৃশ্য। হয়তো ভারতের কোনও রাজনেতার একসঙ্গে এত মানুষের আশীর্বাদ পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে কিনা জানি না। আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করি। আপনাদের এতো ভালোবাসা, এতো আশীর্বাদ বর্ষিত হচ্ছে।

 

এই আশীর্বাদ, এই ভালোবাসা – আমার প্রেরণা যোগায়, আমাকে দেশের জন্য আপনাদের জন্য কাজ করার শক্তি যোগায়। আমি আপনাদের যতই কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই না কেন – তা যথেষ্ট নয়। যাঁরা অস্ত্র সমর্পণ করেছেন, তাঁদের অনুরোধ, আপনারা আস্থা রাকুন, আপনাদের নতুন জীবন শুরু হ’ল। সারা দেশের আশীর্বাদ, ১৩০ কোটি মানুষের আশীর্বাদ আপনাদের সমৃদ্ধ করবে। আমি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নানা অঞ্চলে, জম্মু ও কাশ্মীরে এবং নকশাল প্রভাবিত এলাকায় যারা এখনও পিস্তলের ওপর ভরসা রাখেন, তাদেরকে বলবো যে, এই বোড়ো যুবকদের থেকে কিছু শিখুন, প্রেরণা গ্রহণ করুন, ফিরে আসুন, মূলস্রোতে ফিরে আসুন, জীবনকে সন্ত্রাসমুক্ত করে বেঁচে থাকাকে উদযাপন করুন। এই আশা নিয়ে আরেকবার এই মাটিকে এবং এই মাটির প্রেরণা পুরুষদের প্রণাম জানিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার সঙ্গে পূর্ণ শক্তি দিয়ে বলুন, ১৩০ কোটি দেশবাসীর হৃদয় স্পর্শ করা আওয়াজে বলুন –

 

ভারতমাতা কি জয়

ভারতমাতা কি জয়

ভারতমাতা কি জয়

ভারতমাতা কি জয়

ভারতমাতা কি জয়

 

মহাত্মা গান্ধী অমর রহে, অমর রহে

মহাত্মা গান্ধী অমর রহে, অমর রহে

মহাত্মা গান্ধী অমর রহে, অমর রহে

 

আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

 

CG/SB/SB


(Release ID: 1602584) Visitor Counter : 201


Read this release in: English