আয়ুষ
১০৩২টি আয়ুষ, স্বাস্হ্য ও আরোগ্য কেন্দ্রকে দেওয়া হয়েছে ৮৯.৯২ কোটি টাকা
করা হচ্ছে ৯১টি সংহত আয়ুষ হাসপাতাল- দেওয়া হয়েছে আর্থিক সহায়তা
নীতি আয়োগ ও ইনভেস্ট ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় সংহত স্বাস্হ্য গবেষণা ও কর্মসূচি প্রস্তুত
Posted On:
08 JAN 2020 12:57PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০৬ জানুয়ারী, ২০১৯
স্বাস্হ্য পরিচর্যার আয়ুষ পদ্ধতিগুলি ভারতে জনস্বাস্হ্যের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়, কারণ তাদের মূল আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গভীরে বহমান এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের উপর আস্হা রাখে। বিশেষত জীবনশৈলী সম্পর্কিত পুরনো, দূরারোগ্য অসুখ এবং বয়স্কদের নানা রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতিগুলি বেশ সফল। এই দু’ধরণের ব্যাধি আমাদের দেশে স্বাস্হ্যের ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে।
আয়ুষ মন্ত্রক তার পঞ্চম বার্ষিকীতে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্হাকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে অর্জিত সাফল্য আরও জোরদার করার প্রয়াস চালায়। গোটা ২০১৯ সালটিতে মন্ত্রক আয়ুষ পদ্ধতিকে মূলস্রোতে আনার প্রচেষ্টা জারি রাখে এবং সে কাজে যথেষ্ট সাফল্য লাভ করে। এই প্রচেষ্টায় ছিল সাতটি কর্মকান্ড : আয়ুষ স্বাস্হ্য পরিষেবার সুযোগ বৃদ্ধি আয়ুষ গবেষণা, আয়ুষ শিক্ষা, আয়ুষ ওষুধপত্র এবং সম্পর্কিত ব্যাপারে উন্নতিতে সাহায্য করা, সচেতনতা গড়া, আয়ুষ পদ্ধতিকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ এবং আয়ুষ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রচলন।
আয়ুষ স্বাস্হ্য পরিষেবার সুযোগ বৃদ্ধি
কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তাপুষ্ট জাতীয় আয়ুষ মিশন হল আয়ুষ স্বাস্হ্য পরিচর্যার সুযোগ বাড়ানোর প্রধান মাধ্যম। আয়ুষ ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য, এই কর্মসূচি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারগুলিকে সহায়তা করে। আয়ুষ মন্ত্রক মারফৎ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতাধীন ১০ শতাংশ স্বাস্হ্য এবং আরোগ্য কেন্দ্রে রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত মাফিক, বতর্মানে চালু কেন্দ্রীয় আর্থিক সহায়তায় পুষ্ট জাতীয় আয়ুষ মিশনের ১,০৩২টি ডাক্তারখানাকে (ডিসপেনসারি) মন্ত্রক অনুদান দিয়েছে ৮৯.৯২ কোটি টাকা। এই চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিকে আয়ুষ স্বাস্হ্য ও আরোগ্য কেন্দ্রে উন্নীত করাই এর লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট ডিজিটাল পদ্ধতি মারফত ১০টি আয়ুষ স্বাস্হ্য এবং আরোগ্য কেন্দ্রের সূচনা করেন। দেশের দূরদূরান্ত এলাকাতেও মানুষের কাছে আয়ুষ স্বাস্হ্য পরিষেবার নাগাল পাওয়ার সুযোগ বাড়াতে এই ১,৪৩২টি স্বাস্হ্য এবং আরোগ্য কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় আয়ুষ বিমা প্রকল্পকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জাতীয় স্বাস্হ্য কর্তৃপক্ষের কাছে ১৯টি আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা এবং হাকিমি ও ১৪টি যোগ এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসা প্যাকেজের সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। জনস্বাস্হ্য পরিচর্যার মূল স্রোতে আয়ুষ স্বাস্হ্য পরিষেবাকে সামিল করার জন্য জাতীয় আয়ুষ মিশন ও জাতীয় স্বাস্হ্য মিশনের অধীনে প্রাকৃতিক স্বাস্হ্য কেন্দ্র, সমাজ স্বাস্হ্য কেন্দ্র এবং জেলা হাসপাতালে আয়ুষ চিকিৎসারও বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এই উদ্যোগে ২০১৯এর ৩০ জুন পর্যন্ত ৭৬২০টি প্রাথমিক স্বাস্হ্যকেন্দ্র, ২৭৫৮টি সমাজ স্বাস্হ্যকেন্দ্র এবং ৪৯৫টি জেলা হাসপাতালে অ্যালোপ্যাথির পাশাপাশি আয়ুষের সুযোগ পাওয়া যায়। এর সুবাদে দেশের বিভিন্ন অংশে মানুষ আয়ুষ চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন।
আয়ুষ মারফৎ দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্গের স্বাস্হ্য পরিচর্যা জোরদার করতে, আয়ুষ মন্ত্রক দেশে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারগুলিকে সাহায্য করছে। ৫০ শয্যার ৯১টি সংহত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে মন্ত্রক টাকা দিয়েছে। ২০১৯ সালে এ ধরণের ৬টি হাসপাতালে অর্থ সাহায্য পেয়েছে। আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা, ইউনানি এবং হোমিওপ্যাথি ওষুধ শিল্পের চাহিদা মেটানো এবং বনাঞ্চলের উপর চাপ কমানোর জন্য আয়ুষ মন্ত্রক ৪৮,০৫০ হেক্টর জমিতে ভেষজ গাছগাছড়া চাষেও সাহায্য করেছে। এজন্য ছাড়ের সুযোগ পেয়েছেন ৫৬৭১১ জন্য চাষি।
লেহতে জাতীয় সোয়া-রিগপা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মঞ্জুরি সোয়া-রিগপার ঐতিহ্য চাঙ্গা করে তোলার পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর সুবাদে আরও অনেক বেশি মানুষ সোয়া-রিগপার সুযোগ পাবেন। ভারতের হিমালয় লাগোয়া অঞ্চলের এক ঐতিহ্যবাহী বা পরম্পরাগত চিকিৎসা ব্যবস্হা হল এই সোয়া-রিগপা। সিকিম, অরুণাচলপ্রদেশ, দার্জিলিং (পশ্চিমবঙ্গ), হিমাচলপ্রদেশ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখে তার যথেষ্ঠ প্রচলন রয়েছে। জাতীয় সোয়া-রিগপা প্রতিষ্ঠান গোটা ভারতীয় উপ-মহাদেশে সোয়া-রিগপা চিকিৎসা ব্যবস্হাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলবে।
আয়ুষ মন্ত্রকের মোরারজি দেশাই জাতীয় যোগ প্রতিষ্ঠান দিল্লীর তিহড় কেন্দ্রীয় সংশোধনালয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিশ্ব যোগ দিবস, ২০১৯ উদযাপনের জন্য তিহাড় দেশে যোগ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল। এই প্রশিক্ষণ পায় ১৬ হাজারের বেশি কয়েদি।
পুণের প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ চিকিৎসার জাতীয় প্রতিষ্ঠান প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসার বিষয়ে লোকজনকে ওয়াকিবহাল করতে মহাত্মা গান্ধীর ১৫০ বছর জন্মজয়ন্তীতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। মহাত্মা মনেপ্রাণে প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসায় আস্হা রাখতেন। পুণের প্রতিষ্ঠানটি “নিসর্গোপচার মহোসব” এই থিমের আওতায় দেশের নানা জায়গায় প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ চিকিৎসার ১৫০টি শিবির পরিচালনার এক কর্মসূচি নিয়েছে। ২০১৯এর ২ অক্টোবর এর সূচনা। চলবে এক বছর ধরে। প্রথম শিবিরটি বসে গোয়ায়। অংশ নেয় প্রায় ৫ হাজার মানুষ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ চিকিৎসার উপকার পায়।
আয়ুষ নিয়ে গবেষণার বিকাশ
আয়ুর্বেদ, যোগ ও প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসা, ইউনানি, সিদ্ধা এবং হোমিওপ্যাথির জন্য নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্ষদগুলি আয়ুষ গবেষণার মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে আসছে। এগুলি মন্ত্রকের আওতাধীন স্বশাসিত সংস্হা। ২০১৯ সালে এই পর্ষদগুলি রোগের ৭০টি অবস্হায় চিকিৎসার জন্য মোট ১৪০টি চিরায়ত ওষুধকে নির্বাচন বৈধ করেছে। ভবিষ্যতের বিপুল সম্ভাবনা মাথায় রেখে, নীতি আয়োগ এবং ইনভেস্ট ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় সুসংহত স্বাস্হ্য গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আধুনিক ওষুধের সঙ্গে আয়ুষ ব্যবস্হাদির সংযুক্তির সম্ভাবনা আজ অবধি কাজে লাগানো হয়নি। সংহত স্বাস্হ্য গবেষণা কর্মসূচি সেদিকে নজর দেবে। এই প্রকল্পে দু-বছরের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ৪৯০ কোটি দাঁড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এটি গোটা বিশ্বে এক প্রভাব ফেলবে। মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলি জেলায় প্রাথমিক স্বাস্হ্য কেন্দ্রগুলিতে প্রজনন ও শিশু স্বাস্হ্য ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদের প্রয়োগ নিয়ে এক বড়সড় গবেষণা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। দশ হাজার গর্ভবতী মহিলাকে নিয়ে চলবে গবেষণার কাজ। কোন চিকিৎসা গবেষণা প্রকল্পের পক্ষে এ এক বিপুল সংখ্যক নমুনা।
২০১৯ সালে আয়ুষ মন্ত্রী শ্রীপাদ যশো নায়েক ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ইউনানি মেডিসিন ফর স্কিল ডিসঅর্ডারস-এর উদ্বোধন করেন। হায়দ্রাবাদে আগেকার সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ইউনানি মেডিসিনকে উন্নীত করে এই নতুন প্রতিষ্ঠানটি গড়া হয়েছে। মন্ত্রী দিল্লীর সফদরজঙ্গ হাসপাতালে সিদ্দি ক্লিনিকাল রিসার্চ ইউনিট এবং ইউনানি মেডিক্যাল সেন্টারের সূচনা করেন। ২০১৯এ চালু হয় আর এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান দিল্লী ক্যান্টনমেন্ট বেস হাসপাতালের প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট আয়ুর্বেদ প্যানিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট। সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি, গোরক্ষপুরের বিপুল এলাকায় এনসেফেলাইটিস নিয়ে এবং ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিডার প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করেছে, এটা এক উল্লেখযোগ্য গবেষণার কাজ।
আয়ুষ শিক্ষা
মন্ত্রক ২০১৯ সালে আয়ুষ শিক্ষা ক্ষেত্রের বিকাশ এবং আধুনিকীকরণের পথে চালিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সব আয়ুর্বেদ, ইউনানি, সিদ্ধা এবং হোমিওপ্যাথি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি এন্ট্রান্স টেস্ট-এর মাধ্যমে স্নাতক স্তরে ভর্তির ব্যবস্হা পুরোপুরি কার্যকর হয়। এ এক উল্লেখযোগ্য সাফল্য। দেশে আয়ুষ শিক্ষার মানোন্নয়নে এর দীর্ঘস্হায়ী প্রভাব পড়বে।
আয়ুর্বেদ, ইউনানি, সিদ্ধা এবং হোমিওপ্যাথির স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির জন্য অল ইন্ডিয়া পোস্ট গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রান্স টেস্ট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব ছিল ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি-র হাতে। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ন্যূনতম ১৫ শতাংশ সর্বভারতীয় কোটায় রেজিস্ট্রেশন, অ্যালটমেন্ট ও রিপোর্টিং সহ কাউন্সেলিং, ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম পরিচালনা করে। এরফলে সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত, বেসরকারি কলেজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ডিমড বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তির জন্য আবেদনকারী পড়ুয়ারা উপকৃত হন।
আয়ুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া, সুচারু ও দক্ষ করে তোলায়, অন্যান্য বারের তুলনায় ২০১৯এর এই বার্ষিক প্রক্রিয়া সময়ের অনেক আগেই সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়। নিজেদের জ্ঞানচর্চার বিভিনন বিভাগ বা শাখায় শিক্ষার জন্য মানদন্ড স্হাপন করে বলে আয়ুষ মন্ত্রকের অধীন ১০টি জাতীয় প্রতিষ্ঠান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিগত বছরটিতে এই প্রতিষ্ঠানগুলি খুব ভালোভাবে কাজ করেছে এবং কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে।
প্রাচীন ভারমাম চিকিৎসা পদ্ধতি ফের চালু করতে, জাতীয় সিদ্ধা প্রতিষ্ঠান, চেন্নাই কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সিদ্দা চিকিৎসা ব্যবস্হায় ভারমাম বিজ্ঞানের ইতিহাস এবং এ রোগ সারানোর ক্ষমতা অনুসন্ধান নিয়ে এক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের আগস্টে। চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সাড়া মেলে প্রচুর। স্নায়ু, হাড়, দেহতন্তু ক্ষয় রোগে ভারমাম চিকিৎসায় বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়। জাতীয় সিদ্ধা প্রতিষ্ঠান বর্মম চিকিৎসা চর্চা সংক্রান্ত বিশদ তথ্যে ভরা ভারমাম বিজ্ঞানের পাঠ্যবই সংকলন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্মমের জন্য এক বিশেষ বহির্বিভাগও খুলেছে। ২০১৯ সালে চিকুনগুনিয়া, সোরিয়াসিসের মত রোগ-বালাই এবং স্বাস্হ্য পরিচর্যা নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠান ১০টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্প শুরু করেছে।
আয়ুষ ভেষজ নীতি
আয়ুষ ওষুধের বিধিনিয়ম এবং নিয়ন্ত্রণ আয়ুষ ওষুধপত্রের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০১৯এর এই বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। আয়ুষ ভেষজ নীতি এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাপারে ২০১৯ সালের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য- ৯টি নিয়ামক পদের বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে আয়ুষ ওষুধ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিধিসম্মত ব্যবস্হা চালু করা। এটা আয়ুষ ওষুধ শিল্প পরিণত হয়ে ওঠার লক্ষণ। পরম্পরাগত এবং পরিপূরক ওষুধের জন্য বিশেষ নিয়মকানুন থাকা হাতে গোনা কয়েকটি দেশের মধ্যে এখন ভারতও পড়ে। রাজ্য লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে বাতিল করে অনলাইন লাইসেন্স আবেদনের জন্য ই-ঔষধি পোর্টাল জোরদার করা হয়েছে। জন ঔষধি প্রকল্পে আয়ুষ ওষুধকে ঢোকান হয়েছে।
২০১৯এ আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা, ইউনানি, এবং হোমিওপ্যাথি ওষুধের নিরাপত্তার জন্য লাইসেন্স প্রাপ্ত ওষুধের প্রভাবের উপর নজরদারি আরও জোরদার করা হয়। খবরের কাগজ এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের ওপরও কড়া নজর চলে। জাতীয় ফার্মাকো ভিজিল্যান্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার, পাঁচটি মধ্যবর্তী ফার্মাকো ভিজিল্যান্স সেন্টার এবং প্রান্তিক ফার্মাকো ভিজিল্যান্স সেন্টারকে নিয়ে ত্রিস্তরীয় নেটওয়ার্ক ব্যবস্হা বা নেটওয়ার্ক গড়ার জন্য অনুদান মঞ্জুর করা হয়েছে। পাঁচটি মধ্যবর্তী এবং একটি জাতীয় কেন্দ্রের অধীনে স্হাপন করা হয়েছে ৬৩টি প্রান্তিক ফার্মাকো ভিজিল্যান্স কেন্দ্র। ফার্মাকো ভিজিল্যান্স হল লাইসেন্সপ্রাপ্ত ওষুধ ব্যবহার করার ফলাফলের ওপর নজরদারি করা। আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা, ইউনানি, এবং হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাওয়ার দরুন কোন ক্ষতি হলে তা রিপোর্ট করা শুরু হয়েছে ২০১৯এর জানুয়ারি থেকে। ২০১৯এর অক্টোবরে এসব ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আড়াইশটির মতো রিপোর্ট এসেছে।
আয়ুষ মন্ত্রকের স্বায়ত্বশাসিত সংস্হা ভারতীয় চিকিৎসা ও হোমিওপ্যাথি প্রামান্য ভেষজপঞ্জী আয়োগ গাজিয়াবাদ আয়ুষ ভেষজপঞ্জী পরিমার্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই ভেষজপঞ্জী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা ভারতে বিক্রি, মজুত বা বন্টন কিংবা বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শনের জন্য আমদানি এবং উৎপাদন করা ওষুধপত্রের মানের এক সরকারি সার-সংক্ষেপ। আয়োগ ২০১৯ সালে ইউনানি এবং হোমিপ্যাথির ভেষজপঞ্জী সংক্রান্ত দুটি বই প্রকাশ করেছে।
আয়ুষ মন্ত্রকের আওতাধীন অন্য এক কার্যালয় ফার্মা কোপিয়াল ল্যাবরেটরি ফর ইন্ডিয়ান মেডিসিন আয়ুষ চর্চা আরও জোরদার এবং আধুনিক করার কাজ চালিয়ে গেছে। ২০১৯ সালে এই ল্যাবরেটরিটির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য :
ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোল কর্মী ও আধিকারিকদের জন্য চারটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
৪০টি সুগন্ধি দ্রব্যের বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেশ
ভেষজ গাছ-গাছরা নিয়ে ২টি সমীক্ষার জন্য পরিদর্শন
আগস্টে মুম্বাইয়ে জাতীয় স্তরের আরোগ্য মেলায় যোগদান
আগস্টে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের ল্যাবরেটরি সফর
আয়ুষ পদ্ধতি নিয়ে সচেতনতা গড়া
আয়ুষ পদ্ধতি নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি মন্ত্রকের এক বড় দায়িত্ব। ২০১৯-র ২১শে জুন এ ব্যাপারে সাফল্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন অনুষ্ঠান করাটা অন্যতম বড় কৃতিত্ব সংশ্লিষ্ট শত শত প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নিয়ে এবং তাদের সহযোগিতায় আন্তজার্তিক যোগ দিবসকে একজন আন্দোলনে রূপান্তিত করতে মন্ত্রক সফল হয়েছিল। ২০১৯এ পঞ্চম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপনের ব্যাপ্তি ও মাত্রা আগেকার বছরগুলিকে অতিক্রম করে যায়। ভারতের সব রাজ্য এবং জেলাতো বটেই, ১৪০টি বিদেশী রাষ্ট্রও সামিল হয় যোগ দিবস পালনে। দেশের মূল অনুষ্ঠানটি হয় ঝাড়খন্ডের রাঁচীতে। হাজার তিরিশেক যোগ সাধকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও যোগ অনুশীলন করেন। যোগের কসরত চলে বিশ্বের নামকরা সব জায়গায়। সিডনির অপেরা হাউসে, আইফেল টাওয়ার, প্যারিস, ওয়াশিংটনের ওয়াশিংটন মনুমেন্ট, ব্রাজিলে ব্রিসিলিয়া গির্জা, চিনের সাত্তলিন মন্দির, ডেড সি এবং নেপালে এভারেস্ট পর্বতের পাদদেশে চলে যোগচর্চা।
মন্ত্রক এবং তার স্বশাসিত সংস্হাগুলি আয়ুষ স্বাস্হ্য পরিচর্যার রোগ নিবারণমূলক ও স্বাস্হ্য বিকাশের দিক নিয়ে দেশের বিভিন্ন অংশে প্রায় ১০০ আলোচনাচক্র এবং কর্মশালার আয়োজন করে। এছাড়া, মন্ত্রকের আয়ুষ প্রতিষ্ঠানগুলি রুগিদের জন্য অন্তত ৫০টি শিক্ষা শিবির বসায়। আয়ুষ থিম নিয়ে ছিল বড় বড় দশটি প্রদর্শনীও।
মুম্বাইয়ের অমর চিত্রকলার সহযোগিতায়, আয়ুষ মন্ত্রক কমিক বই প্রফেসর আয়ুষ্মান প্রকাশ করে। শিশুদের জন্য প্রকাশিত এই বইয়ের বিষয় হল ভেষজ গাছপালা এবং তাদের গুনাগুন। কমিক বইটির লক্ষ্য হল ভেষজ গাছগাছড়া নিয়ে জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়ানো, বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ চেনানো এবং কাজে লাগানো, বাগানে ঔষধি গাছ লাগানো, খাদ্যে লতাগুল্ম ব্যবহার করতে পড়ুয়াদের উৎসাহ যোগানো, হাতের কাছে সহজে মেলে এমন সব ভেষজ গাছগাছালির ব্যবহার এবং ভাবী প্রজন্মের জন্য এসব উদ্ভিদের বিষয়ে পরম্পরাগত জ্ঞান টিকিয়ে রাখা। মজার ছলে এবং ব্যবহারিক দিক থেকে কার্যকর উপায়ে বইটিতে এসব তুলে ধরা হয়েছে।
গুরুচি নিয়ে বিশেষ প্রজাতি ভিত্তিক “জীবনের জন্য অমৃত” অভিযানে বৃক্ষরোপন অভিযান জোরদার করতে ১১টি প্রকল্পকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামর্থ্য বাড়াতে গাছ যথেষ্ঠ সহায়ক ভূমিকা নেয়।
আয়ুষকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া/ আয়ুষের বিশ্বায়ন
আয়ুষ ব্যবস্হা বিশ্বে প্রসারের প্রচেষ্টায় ২০১৯এ যথেষ্ট সাফল্য মিলেছে। আয়ুষ মন্ত্রক এবং মন্ত্রকের অধীন প্রতিষ্ঠান ও পর্ষদগুলি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সমঝোতাপত্র সই করেছে। আয়ুষের শিক্ষা, গবেষণা এবং অন্যান্য দিকে যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার বা শুরু করাই এর লক্ষ্য। বিমস্টেক গোষ্ঠীর দেশগুলি যৌথভাবে ভারতে আয়ুর্বেদ ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার বিমস্টেক বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে একমত হয়েছে। আয়ুষ মন্ত্রকের তরফে দিল্লীর অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট আয়ুর্বেদ ২০১৯এর ২২ অক্টোবর ঐতিহ্যবাহী ও পরিপূরক চিকিৎসা নিয়ে মেকং-গঙ্গা সহযোগিতার কর্মশালার আয়োজন করেছিল। আর এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা, ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় সবচেয়ে সমৃদ্ধ দুই দেশ ভারত এবং চিন তাদের মানুষের উপকারের জন্য সহযোগিতা করতে ২০১৯এর ১২ আগস্ট সমঝোতাপত্র সই করে।
অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট আয়ুর্বেদ ২০১৯ সালে যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতাপত্র সই করেছিল তার মধ্যে পড়ে : কলেজ অব মেডিসিন, বৃটেন, স্পনডিং রিহ্যাবিলিটেশন হসপিটাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রাঙ্কফুর্ট বায়োটেকনলজি ইনোভেশন সেন্টার, জার্মানি এবং অস্ট্রিলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটিতে।
আয়ুষ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি প্রবর্তন
বিগত বছরটিতে, মন্ত্রক ভবিষ্যৎমুখী এক উদ্যোগ নিয়েছিল- আয়ুষ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি প্রবর্তন। আয়ুষ গ্রিড প্রকল্প নামের এই উদ্যোগের লক্ষ্য, ক্ষেত্রটির সব স্তরকে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তোলা। মন্ত্রকের এই প্রকল্পকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ ক্ষেত্রে রূপান্তর ঘটানোর জন্য তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর উপর জোর দেন। আয়ুষে রূপান্তরের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগাতে মন্ত্রক বহু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করতে সক্ষম হয়েছি। তার মধ্যে আছে :
১) সদ্য রূপায়ণ করা আয়ুষ স্বাস্হ্য তথ্য ব্যবস্হাকে সম্প্রসারিত করে কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্ষদগুলির সব ইউনিটকে তার আওতায় আনা হয়েছে।
২) তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পগুলিকে সার্বিকভাবে সফল করতে বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের সঙ্গে সমঝোতাপত্র সই হয়েছে। এই সমঝোতাপত্র অনুযায়ী, ভাস্করাচার্য ইনস্টিটিউট ফর স্পেস অ্যাপ্লিকেশনস অ্যান্ড জিও-ইনফরমেটিক্স, আমেদাবাদ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় বৈদ্যুতিন শাসন বিভাগ মন্ত্রকের তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পগুলিকে সাহায্য দিতে শুরু করেছে।
৩) মন্ত্রকের যাবতীয় কাজকর্মে নজরদারি করতে একটি ড্যাশবোর্ড স্হাপন করা হয়েছে।
৪) আন্তর্জাতিক যোগ দিবস, ২০১৯ এবং ভেষজপঞ্জি আয়োগের জন্য পোর্টাল।
৫) আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা এবং ইউনানি ব্যবস্হার জন্য প্রামান্য পরিভাষা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর ফলে, তা ভবিষ্যতে এসব পরিভাষাকে বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হার রোগের আন্তর্জাতিক বর্গীকরণ-এ অন্তর্ভুক্ত হতে সাহায্য করবে। আয়ুষের বিশ্বায়নের পথ হবে আরও প্রশস্ত।
৬) ধারেকাছের যোগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অবস্হান খুঁজতে মানুষকে সাহায্য করতে চালু হয়েছে মোবাইল অ্যাপ।
CG/SM/NS
(Release ID: 1598696)
Visitor Counter : 2063