সংখ্যালঘুবিষয়কমন্ত্রক
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের বর্ষশেষ পর্যালোচনা
Posted On:
23 DEC 2019 11:10PM by PIB Kolkata
কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী মুখতার আব্বাস নাকভির সুদক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক ২০১৯ সালে সংখ্যালঘুদের শিক্ষাগত ক্ষমতায়ন, বিশেষ করে মুসলিম বালিকাদের জন্য, সংখ্যালঘু যুবাদের কর্মোপযোগী দক্ষতা উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মর্যাদা বজায় রেখে সার্বিক উন্নয়নের বিষয়টি মন্ত্রকের কাছে সর্বদাই প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
শিক্ষাগত ক্ষমতায়ন
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মোদী সরকারের প্রথম ছয় মাসে মুসলিম সহ ছয়টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮০ লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রীকে প্রাক-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক-পরবর্তী এবং মেধা তথা সংস্থানের ভিত্তিতে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক এই ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৬০ শতাংশ বালিকাও রয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে ২০১৯-এ মন্ত্রক ঐ ছয়টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া প্রায় ৩ লক্ষ বালিকাকে বেগম হজরত মহল বালিকা বৃত্তির সুবিধা প্রদান করেছে।
প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে মাদ্রাসাগুলিকে সামিল করতে গৃহীত কর্মসূচির আওতায় শিক্ষিকা সহ ৭৫০ জনেরও বেশি শিক্ষককে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য, মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রীদেরকে দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার অঙ্গ করে তোলা। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সামিল করার প্রসঙ্গে শ্রী নাকভি বলেছেন, মাদ্রাসায় প্রচলিত শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হিন্দি, গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করে তোলার কাজ চলছে। এমনকি, মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেশের একাধিক অগ্রণী প্রতিষ্ঠান যেমন আইআইটি, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্কুল-ছুট ৬৫০ জন পড়ুয়াকে প্রয়োজনীয় শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাঁদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে যাতে তাঁরা কাজের উপযোগী হয়ে উঠতে পারেন।
দক্ষতা উন্নয়ন / কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের উদ্যোগে পরিচালিত একাধিক কর্মসূচি যেমন গরিব নওয়াজ কর্মসংস্থান প্রকল্প, শিখো অউর কামাও, নই মনজিল, উস্তাদ, নই রশনি-র মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১ লক্ষ ২৫ হাজারেরও বেশি যুবক-যুবতীকে কর্মোপযোগী দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রক আগামী পাঁচ বছরে সারা দেশে ১০০টি হুনার হাট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের হাট আয়োজনের উদ্দেশ্যই হল বিশেষজ্ঞ হস্তশিল্পী ও চিরাচরিত হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বাজার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করা। ইতিমধ্যেই জয়পুর, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ, নতুন দিল্লির প্রগতি ময়দানে হুনার হাটের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও, আগামীদিনগুলিতে কলকাতা, লক্ষ্ণৌ, দেরাদুন, পাটনা, ইন্দোর, ভোপাল প্রভৃত শহরে এ ধরনের হাট আয়োজন করা হবে।
দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম ছয় মাসে মন্ত্রক দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১০০টি হুনার হাব গড়ে তোলার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এজন্য বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ হস্তশিল্পীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যাতে এ ধরনের হস্তশিল্প কেন্দ্রগুলিতে প্রচলিত রীতির পাশাপাশি আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটানো যায়।
প্রধানমন্ত্রী জন বিকাশ কার্যক্রম
দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে মন্ত্রক এই কর্মসূচির আওতায় ১০৪টি অভিন্ন পরিষেবা কেন্দ্র চালু করার অনুমোদন দিয়েছে। এই পরিষেবা কেন্দ্রগুলি আর্ত মানুষের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য ‘এক জানালা’ পরিষেবা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে থাকে। কর্মসূচির আওতায় এখনও পর্যন্ত ৫৩টি শৌচাগার, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ১৬টি ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুৎ পরিষেবা, ৩২৪টি অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ, ২২৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৫২টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ৩৩টি আবাসিক বিদ্যালয়, সাতটি ডিগ্রি কলেজ, ৯৮টি বিদ্যালয় ভবন ও হস্টেল, চারটি আইটিআই, ১০টি দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র, একটি মেডিকেল কলেজ এবং তিনটি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান হয় গড়ে তোলা হয়েছে বা গড়ে তোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ইউনানি কলেজ গড়ে তোলা হচ্ছে। সংখ্যালঘু বালিকাদের সুবিধার্থে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, কেরলের মাল্লাপুরম এবং পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে ছাত্রী নিবাস, বিদ্যালয় ভবন গড়ে তোলার কাজ চলছে।
হজ
২০২০-র হজ যাত্রা প্রক্রিয়াকে ১০০ শতাংশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করে ভারত বিশ্বের প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে। হজগামী ভারতীয় মুসলিমদের মক্কা-মদিনায় থাকা ও যাতায়াতের সুবিধা সহ অন্যান্য তথ্য প্রদানের সুবিধার্থে অনলাইনে আবেদনপত্র দাখিল, ই-ভিসা, হজ মোবাইল অ্যাপ, স্বাস্থ্য পরিচর্যা সংক্রান্ত ‘ই-মসিহা’, ‘ই-লাগেজ প্রি-ট্যাগিং’ সুবিধা চালু হয়েছে।
ভারত থেকে ২০২০-র বার্ষিক হজ যাত্রা নিয়ে সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী মন্ত্রী ও ভারত পক্ষে শ্রী নাকভি গত পয়লা ডিসেম্বর জেড্ডায় এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই প্রথমবার হজ পূণ্যার্থীদের ব্যক্তিগত মালপত্রের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রি-ট্যাগিং-এর সুবিধা চালু হয়েছে। এই সুবিধা চালু হওয়ার ফলে সৌদি আরবে মালপত্র পৌঁছনোর পর সংশ্লিষ্ট পূণ্যার্থী কিভাবে তাঁর সামগ্রী সংগ্রহ করবেন সে সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ তৎক্ষণাৎ পেয়ে যাবেন। এছাড়াও, পূণ্যার্থীদের সুবিধার্থে মোবাইল অ্যাপের সঙ্গে সিম কার্ডের যোগসূত্র গড়ে তোলা হয়েছে যাতে করে, পূণ্যার্থী তাঁর ফোনেই মক্কা-মদিনায় হজ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিবরণ সহজেই পেতে পারেন। মুম্বাইয়ে হজ ভবনে ১০০ লাইন-বিশিষ্ট তথ্য পরিষেবা ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। ভারতীয় পূণ্যার্থীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খতিয়ান সম্পর্কে এক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হয়েছে যাতে করে মক্কা-মদিনায় হজ চলাকালীন কোন পূণ্যার্থীর জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা যায়। হজ যাত্রা আয়োজক গোষ্ঠীগুলিকেও ১০০ শতাংশ ডিজিটাল প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে যাতে ভারতীয় হজ পূণ্যার্থীদের আরও ভালো সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা যায়। এই প্রথমবার হজ আয়োজক গোষ্ঠীগুলির বিভিন্ন বিবরণ সম্বলিত একটি পোর্টাল – http://haj.nic.in/pto/ চালু হয়েছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৯-এর হজ যাত্রায় রেকর্ড সংখ্যক ২ লক্ষ ভারতীয় মুসলিম কোন ভর্তুকি ছাড়াই হজে গিয়েছিলেন। মোট হজ পূণ্যার্থীর ৪৮ শতাংশই ছিলেন মহিলা। এছাড়াও, রেকর্ড সংখ্যক ২,৩৪০ জন মুসলিম মহিলা পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই হজে যান। মন্ত্রী শ্রী নাকভি ২০২০-র হজ প্রস্তুতি নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। এবার দেশের ২২টি কেন্দ্র থেকে ২ লক্ষ ভারতীয় মুসলিম হজে যাচ্ছেন। অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া থেকেও এবার হজে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
ওয়াকফ
মন্ত্রকের এক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের অঙ্গ হিসেবে দেশে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলির ১০০ শতাংশ ডিজিটাইজেশন সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন সারা দেশে নথিভুক্ত ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ। সামাজিক কল্যাণের স্বার্থে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলির সদ্ব্যবহার আরও বাড়াতে এ ধরনের সম্পত্তিগুলির ভৌগোলিক অবস্থান ও ডিজিটালকরণের কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ৪০ হাজার ওয়াকফ সম্পত্তির জিও-ট্যাগিং বা ভৌগোলিক অবস্থান নিরূপণ পদ্ধতির কাজ শেষ হয়েছে। আইআইটি রুরকি ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এই কাজ সম্পূর্ণ হয়।
প্রাক্তন বিচারপতি জাকিউল্লাহ খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি ওয়াকফ সম্পত্তিগুলির লিজ সংক্রান্ত নিয়মকানুন পর্যালোচনার পর তাদের রিপোর্ট মন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন।
ওয়াকফ সম্পত্তিগুলির সুষ্ঠু সদ্ব্যবহারের জন্য ‘কুয়ামি ওয়াকফ বোর্ড তারাক্কায়িতি কর্মসূচি’র আওতায় আটটি মুতাওয়ালিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এই প্রথমবার আর্ত মানুষের আর্থ-সামাজিক তথা শিক্ষাগত ক্ষমতায়নের জন্য ওয়াকফ সম্পত্তিগুলির সুষ্ঠু ব্যবহারের লক্ষ্যে মুতাওয়ালি প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুরস্কৃত ও উৎসাহিত করা হল।
CG/BD/DM
(Release ID: 1597289)
Visitor Counter : 925