প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর নিয়ে যৌথ বিবৃতি

Posted On: 31 OCT 2019 3:55PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৯ অক্টোবর, ২০১৯

 

 

 

দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক কিং সলমন বিন আব্দুলাজিজ আল সৌদ-এর নিমন্ত্রণে ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী মহামান্য শ্রী নরেন্দ্র মোদী ২৯শে অক্টোবর সৌদি আরবে সরকারি সফর করলেন।

 

দুই নেতার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং তাঁদের মানুষের মধ্যে যে ঐতিহাসিক নিকট সম্পর্ক রয়েছে তার পর্যালোচনা করা হয়। তাঁরা সাধারণভাবে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে মতবিনিময় করেন। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং সভ্যতার যে বন্ধন দু’দেশের মানুষের মধ্যে সেই বন্ধুত্ব এবং অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়। দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নে গতি আনতে সাধারণ সুবিধাগুলি নিয়েও আলোচনা হয়।

 

২০১০-এর মার্চে ‘রিয়াধ ঘোষণা’য় যা বলা হয়েছিল, সেই কৌশলগত অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করতে গভীর দায়বদ্ধতা পুনরায় স্বীকার করল দুই পক্ষই। এর আগে ২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক সলমন বিন আব্দুলাজিজ আল সৌদ-এর ভারত সফর, ২০১৬-র এপ্রিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সৌদি আরব সফর এবং ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের মাননীয় ক্রাউন প্রিন্স উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর নতুন দিল্লি সফরে ঐ ঘোষণা অনুযায়ী দুই দেশের সম্পর্কের কথা বারবার ঝালিয়ে নেওয়া হয়েছে।

 

স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ কাউন্সিল গঠনে দুই পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এই দলিলে সই করেছেন সৌদি আরবের পক্ষে ক্রাউন প্রিন্স উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং ভারতের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশেই সরকারি এবং বেসরকারিভাবে যে সমস্ত চুক্তি ও সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে সে ব্যাপারেও তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

 

সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, মানবশক্তি এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ নিয়ে যে উন্নতি হয়েছে তারও প্রশংসা করা হয়েছে দু’পক্ষের তরফে। এর ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে উচ্চস্তরের আলোচনা এবং সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও সন্তোষ প্রকাশ করেছে দুই দেশ। বিশ্বে শান্তি, স্থিরতা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্যে উভয়ের দায়িত্ব স্বীকার করা হয়েছে দুই দেশের তরফে।

 

মাননীয় প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমন বিন আব্দুলাজিজ আল সৌদ, ক্রাউন প্রিন্স, উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে দেখা করেন। দুই নেতার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। দুই নেতাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অগ্রগতির প্রশংসা করেন। যে সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল ২০১৬-র এপ্রিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রিয়াধ সফর এবং ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমন বিন আব্দুলাজিজ আল সৌদ, ক্রাউন প্রিন্স, উপ-প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর ভারত সফরের মাধ্যমে। যে কারণে দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রটি শক্তিশালী হয়েছে।

 

দুই পক্ষই আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যে কোন ধরনের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। কোন দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর যে কোন ধরনের আঘাত প্রতিরোধে সারা বিশ্বের দায়িত্ব সম্পর্ককেও আলোচনা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের ওপর দুই দেশই জোর দিয়েছে। ইয়েমেনের ঐক্য এবং সেখানকার রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের গুরুত্বের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। প্যালেস্তাইনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি রক্ষার ব্যাপারেও দু’পক্ষ আশা প্রকাশ করেছে যাতে আরবের শান্তি উদ্যোগ এবং সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রস্তাব কার্যকর করা যায় এবং প্যালেস্তাইনের মানুষের অধিকার রক্ষা হয় ও জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭-র প্রস্তাব অনুযায়ী একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তার প্রতিষ্ঠা হয়।

 

ভারত মহাসাগরে জলপথের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের গুরুত্বেও সম্মত হয়েছে দুই দেশ। উপসাগরীয় অঞ্চলেও বিষয়টি বজায় রাখার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। পাশাপাশি, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

 

সব দেশ এবং সব সমাজেই সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থা যে একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। কোন একটি বিশেষ জাতি, ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে এর জন্য দায়ী করার বিরুদ্ধে মত দিয়েছে দুই দেশ। দুই পক্ষই সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ওপর জোর দিয়েছে এবং কোন দেশের বিরুদ্ধে কেউ যাতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের মতো অস্ত্র ব্যবহার না করতে পারে সে ব্যাপারেও একমত হয়েছে দুই দেশ।

 

ভারতের পক্ষ থেকে সৌদি আরবের অসামরিক অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী কাজের নিন্দা করা হয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কেন্দ্রে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য দু’পক্ষই আহ্বান জানিয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযান, তথ্য বিনিময়, প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধিতে রাজি হয়েছে দুই দেশ যা দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি মেনেই করা হবে।

 

দুই পক্ষই উল্লেখ করেছে যে দুটি দেশেই অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটছে এবং ব্যবসা ও লগ্নির প্রসার ঘটছে। এই ক্ষেত্রে কৌশলগত সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সে ব্যাপারেও সহমত দুই দেশ। গত কয়েক বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে যে ইতিবাচক ধরণ দেখা গেছে তাতে খুশি তারা এবং ২০৩০-এর লক্ষ্য অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে এই সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দুই দেশ। দুই দেশের শিল্প-বাণিজ্য মহলকে আহ্বান জানানো হয়েছে একে অপরের সুযোগগুলি খুঁটিয়ে দেখে যেমন, পরিকাঠামো, খনি, চিরাচরি ও পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ, কৃষি, প্রযুক্তি হস্তান্তর, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ কর্মী ইত্যাদি বিষয়ে পারস্পরিক সুবিধাগুলি উপযোগ করার জন্য।

 

এই সফরে বিদ্যুৎ, অসামরিক পরিবহণ, নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, রুপে কার্ডের সূচনা, মেডিকেল পণ্য বিধি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিক সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে।

 

সফরের শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে এবং তাঁর প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ আতিথেয়তার দেওয়ার জন্য সৌদি আরবের সরকার এবং সে দেশের নাগরিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

 

তিনি বলেন, ২০২০-তে জি-২০ বৈঠকে সৌদি আরবকে ভারত অভ্যর্থনা এবং সমর্থন জানাবে। রিয়াধে আগামী জি-২০ দেশগুলির শিখর সম্মেলনে যোগ দেওয়ার দিকে তিনি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন। জি-২০ কাঠামোর মধ্যে সৌদি আরবের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন তিনি।

 

দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সুখ ও স্বাস্থ্য কামনা করেন এবং বন্ধু ভারতীয় নাগরিকদের শুভেচ্ছা জানান।

 

দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক তাঁকে দেওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ স্বীকার করেন। তাঁর পরবর্তী ভারত সফরে যাতে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে সেগুলি যাতে সম্পূর্ণ হয়, তার ওপর তিনি জোর দেন।

 

 

 

CG/AP/DM


(Release ID: 1589753) Visitor Counter : 99


Read this release in: English