রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়
৭৩ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্-সন্ধ্যায় ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতি শ্রী রাম নাথ কোবিন্দ মহোদয়ের জাতির উদ্দেশে ভাষণ
Posted On:
14 AUG 2019 10:25PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১৪ আগস্ট, ২০১৯
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ,
নমস্কার,
১) ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্-সন্ধ্যায় আপনাদের সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন!
এই স্বাধীনতা দিবস ভারতমাতার সমস্ত সন্তানের জন্য খুবই খুশির দিন, তা তিনি দেশেই থাকুন, কি বিদেশে। আজকের দিনে আমাদের সবার মনে দেশপ্রেমের ভাবনা আরও গভীরভাবে অনুভূত হয়। এই উপলক্ষে আমরা সেই অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বিপ্লবীদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে থাকি, যাঁরা আমাদের স্বাধীন করার জন্য লড়াই, ত্যাগ এবং বলিদানের মহান আদর্শ তুলে ধরেছেন।
২) স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের এই ৭২ বছরের অভিযাত্রা, আজ এক বিশেষ লক্ষ্যে এসে পৌঁছেছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর ২রা অক্টোবরে আমরা জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করবো। গান্ধীজি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক ছিলেন। তিনি সমাজকে সমস্ত রকম অন্যায় থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টায় আমাদের পথপ্রদর্শকও ছিলেন।
৩) গান্ধীজির দেখানো পথ আজও আমাদের জন্য সমান প্রাসঙ্গিক। তিনি আমাদের আজকের গভীর সমস্যাগুলি সম্পর্কে আগেই অনুমান করতে পেরেছিলেন। গান্ধীজি এটা বিশ্বাস করতেন যে, প্রকৃতির বিভিন্ন সম্পদ সুবিবেচকের মত ব্যবহার করতে হবে, যাতে উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য সর্বদা বজায় থাকে। তিনি প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীল মানসিকতায় সামঞ্জস্য বজায় রেখে জীবনযাপনের শিক্ষা দিয়েছিলেন। বর্তমান সময়ে চালু থাকা আমাদের অনেক প্রচেষ্টা গান্ধীজির ভাবনাচিন্তারই যথার্থ রূপায়ণ। অনেক কল্যাণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের দেশের মানুষের জীবন উন্নততর করা হচ্ছে। সৌরশক্তির উপযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে বিশেষ জোর দেওয়ার বিষয়টিও গান্ধীজির দর্শনেরই অনুরূপ।
৪) ২০১৯ সাল গুরু নানক দেবজির ৫৫০তম জন্মজয়ন্তী বর্ষও বটে। তিনি ভারতের সবচেয়ে জ্ঞানী, মহান ও প্রভাবশালী সন্ন্যাসীদের অন্যতম। মানবতার ক্ষেত্রে তাঁর ব্যাপক প্রভাব রয়েছ। শিখ ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে সাধারণ মানুষের মনে তাঁর প্রতি যে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রয়েছে, তা শুধু আমাদের শিখ ভাই-বোনদের মধ্যেই সীমিত নেই। ভারত ও বিশ্বের সর্বত্র বসবাসকারী কোটি কোটি শ্রদ্ধাশীল মানুষ তাঁর প্রতি গভীর আস্থা রাখেন। গুরু নানক দেবজির সমস্ত অনুগামীদের আমি এই পুণ্য জন্মজয়ন্তী বর্ষে আন্তরিক শুভকামনা জানাই।
প্রিয় দেশবাসীগণ,
৫) যে মহান প্রজন্মের মানুষেরা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাঁদের জন্য তা নেহাতই এক রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের মধ্যে সীমিত ছিল না। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, প্রত্যেক ব্যক্তির জীবন ও সামাজিক ব্যবস্থাকে উন্নততর করা।
৬) এই প্রেক্ষিতে আমি বিশ্বাস করি যে, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের সাম্প্রতিক পরিবর্তন দ্বারা সেখানকার জনগণ অনেক বেশি লাভবান হবেন। তাঁরাও এখন ওই সমস্ত অধিকার এবং পরিষেবার আওতায় আসবেন, যা দেশের বাকি অংশের নাগরিক পেয়ে থাকেন। তাঁরাও এখন সাম্যের ভাবনাকে উৎসাহিত করার মতো বিভিন্ন প্রগতিশীল আইন ও সেগুলির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ‘শিক্ষার অধিকার’ আইন কার্যকর হওয়ায় সমস্ত শিশুর জন্য শিক্ষা সুনিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ‘তথ্যের অধিকার’ পাওয়ার ফলে এখন সেখানকার লোক জনকল্যাণের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন; পরম্পরাগতভাবে বঞ্চিত থাকা সেখানকার মানুষ শিক্ষা বা চাকরিতে সংরক্ষণ এবং অন্য সুবিধাও পাবেন। এছাড়া, তিন তালাকের মত অভিশাপের অবসান ঘটায় সেখানে আমাদের মেয়েরাও ন্যায়বিচার পাবেন এবং ভয়মুক্ত জীবনযাপনের সুযোগ পাবেন।
৭) এই বছরের গরমে, আপনারা সমস্ত দেশবাসী ১৭তম সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। এই অভিজ্ঞতার জন্য দেশের সমস্ত নির্বাচকেরই অভিনন্দন প্রাপ্য। তাঁরা ব্যাপক সংখ্যায়, প্রবল উৎসাহে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছেছেন। এতে শুধু যে নিজেদের অভিমত জানিয়েছেন তাই নয়, সেই সঙ্গে নির্বাচনের সঙ্গে জুড়ে থাকা নিজেদের কর্তব্যও পালন করেছেন।
৮) প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনে আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় এক নতুন অধ্যায়ের শুভসূচনা হয়ে থাকে। এই নির্বাচনগুলির মাধ্যমে আমাদের দেশের মানুষ নিজেদের প্রত্যাশা ও আস্থার নতুন অভিমত প্রকাশ করেন। এই জাতীয় অভিমত প্রদানের সূচনা স্বাধীনতার সেই আবেগের সঙ্গে হয়েছিল, যা ১৯৪৭-এর ১৫ই আগস্ট তারিখে সমস্ত দেশবাসী অনুভব করেছিলেন। এখন এটা আমাদের দায়িত্ব এই গৌরবময় দেশকে নতুন উচ্চতায় তুলে ধরার জন্য সেই আবেগ ও উদ্দীপনায় আমরা যেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি।
৯) আমি খুশি যে সংসদের সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে লোকসভা ও রাজ্যসভা দু’কক্ষেই যথেষ্ট সাফল্য পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণীত হয়েছে। এই সফল সূচনা থেকে আমার বিশ্বাস যে, আগামী পাঁচ বছরে সংসদে সাফল্যের এটাই হবে সূচক। আমি চাইব যে, রাজ্য বিধানসভাগুলিতেও সংসদের এই প্রভাবশালী কর্মসংস্কৃতি বজায় থাকুক।
১০) গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সংসদ ও বিধানসভাগুলিতে এরকম আদর্শ কর্মসংস্কৃতির নজির স্থাপন করা জরুরি। তা কেবল এজন্য নয় যে, নির্বাচিত সদস্যরা নিজেদের নির্বাচকদের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পেরেছেন, বরং এই জন্য যে, দেশ গঠনের অভিযানে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান এবং কল্যাণকামী ব্যক্তির একজোট হয়ে কাজ করা উচিৎ। একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার এই ভাবনার শক্তিতেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। নির্বাচক ও জনপ্রতিনিধির মধ্যে, নাগরিক ও সরকারের মধ্যে আর নাগরিক সমাজ ও প্রশাসনের মধ্যে আদর্শ বোঝাপড়াতেই আমাদের দেশ গঠনের অভিযান আরও শক্তিশালী হবে।
১১) এই সম্মিলিত কাজে সরকারের ভূমিকা হ’ল সাধারণ মানুষকে সাহায্য করা ও তাঁদের সক্ষম করে তোলা। এজন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলি এবং নীতি প্রণয়নকারীদের উচিৎ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে সমস্ত সঙ্কেত তাঁরা পান, সেগুলিতে সম্পূর্ণ মনযোগী হয়ে দেশবাসীর ভাবনা এবং ইচ্ছেগুলিকে সম্মান জানানো। ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমার সফর করার সুযোগ হয়। এই সফরগুলিতে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত দেশের মানুষের সঙ্গেও মিলিত হওয়ার সুযোগ পাই। আমি অনুভব করেছি, ভারতের মানুষের রুচি ও স্বভাব যতই আলাদা হোক না কেন, কিন্তু তাঁদের স্বপ্ন প্রায় একইরকম। ১৯৪৭-এর আগে, সমস্ত ভারতীয়দের একটাই লক্ষ্য ছিল যে, দেশ স্বাধীন হোক। আজ আমাদের লক্ষ্য হ’ল উন্নয়নের গতি দ্রুত হোক, শাসনব্যবস্থা দক্ষ এবং পারদর্শী হোক, যাতে সাধারণ মানুষের জীবন উন্নততর হয়।
১২) ভোটের ফলেও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাগুলি স্পষ্ট দেখা যায়। এই প্রত্যাশা পূরণে সরকার নিজস্ব ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, ১৩০ কোটি দেশবাসী নিজেদের কুশলতা, প্রতিভা, উদ্যম তথা উদ্ভাবনের মাধ্যমে ব্যাপক মাত্রায় আরও বেশি উন্নয়নমুখী সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে। আমরা ভারতবাসী বহু শতাব্দীকাল ধরে এই সামর্থগুলি নিজেদের মধ্যে সঞ্চিত রেখেছি। আমাদের দেশ এই ক্ষমতার জোরেই হাজার হাজার বছর ধরে এগিয়ে গেছে, আমাদের সভ্যতা বিকশিত হয়েছে। ভারতের দীর্ঘ ইতিহাসে আমাদের দেশবাসীকে বহুবার নানা সমস্যা এবং কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে। এমন কঠিন সময়েও আমাদের সমাজ প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে অগ্রগতির পথে হেঁটেছে। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। সরকার, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য, তাঁদের সাহায্যার্থে উন্নততর বুনিয়াদী পরিষেবা এবং সামর্থের ব্যবস্থা করছে। এরকম ইতিবাচক পরিসরে আমাদের দেশবাসীরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন, তা আমাদের কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি।
১৩) দেশবাসীর জীবনকে উন্নত করতে, সরকার অনেক বুনিয়াদী পরিষেবা প্রদান করে থাকে। দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষের জন্যে গৃহনির্মাণ করে, প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ, শৌচালয় এবং জলের ব্যবস্থা করে সরকার বুনিয়াদী পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করছে। প্রত্যেক দেশবাসীর বাড়িতে নলের সাহায্যে পানীয় জল পৌঁছে দিতে, কৃষক ভাই-বোনেদের সেচের জল পৌঁছে দিতে এবং দেশকে কোথাও বন্যা, আবার কোথাও খরা সমস্যার কার্যকরী সমাধানের জন্যে জল শক্তির সদ্ব্যবহারের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। জল নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির পাশাপাশি, আমাদের নাগরিকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। দেশের সকল অংশে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। প্রত্যেক গ্রামকে সড়কপথে সংযুক্ত করার কাজ এগিয়ে চলেছে আর উন্নত রাজপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলযাত্রাকে নিরাপদ ও সুবিধাজনক করে তোলা হচ্ছে। মেট্রোরেল পরিষেবার মাধ্যমে অনেক শহরে মানুষের যাতায়াত সহজ করে তোলা হচ্ছে। ছোট শহরগুলিতেও বিমান পরিষেবা চালু করা হচ্ছে। নতুন নতুন সমুদ্রবন্দর নির্মান করা হচ্ছে। পাশাপাশি, অনেক হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিমান বন্দর, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল এবং সমুদ্রবন্দরকে আধুনিক করে তোলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে ব্যাঙ্কিং পরিষেবাকে অধিক স্বচ্ছ ও সংহত করে তোলা হচ্ছে। শিল্পপতিদের জন্য কর ব্যবস্থা এবং পুঁজির সংস্থান সহজ করা হচ্ছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মাধ্যমে সরকার, জনগণের কাছে নাগরিক পরিষেবা ও উপযোগী তথ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
১৪) সরকার, অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে স্বাস্থ্য-পরিষেবা প্রদান করছে। দিব্যাঙ্গজনদের মূলধারার সঙ্গে যুক্ত করতে তাঁদের বিশেষ পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য সরকার আইন ও বিচার-ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করেছে। দেশবাসীদের জীবনকে সহজ করে তুলতে অনুপযোগী আইনগুলিকে রদ করা হয়েছে।
১৫) সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে লাভবান হতে হলে আমাদের সমস্ত নাগরিকদের সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হবে। সমাজের কল্যাণে এবং আমাদের সবার উন্নতির জন্যে এই সকল বুনিয়াদী সরকারি পরিষেবার সদ্ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে।
১৬) উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গ্রামীণ সড়ক এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা তখনই ফলপ্রসূ হবে, যখন আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা এগুলির সদ্ব্যবহার করে মান্ডিগুলিতে পৌঁছে তাঁদের উৎপাদিত ফসলের বর্ধিত মূল্য পাবেন। বিত্ত এবং রাজস্ব ক্ষেত্রে সংস্কার এবং ব্যবসার নিয়মগুলিকে সরল করার মাধ্যমে আমরা তখনই সম্পূর্ণ লাভবান হবো, যখন আমাদের ছোট ছোট শিল্পোদ্যোগ তথা স্টার্ট আপ কিংবা ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় শিল্পোদ্যোগ পর্যন্ত সকলে নতুন ভাবে এগিয়ে যাবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। প্রত্যেক বাড়িতে শৌচালয় এবং জল সরবরাহের মাধ্যমে আমরা তখনই সম্পূর্ণ উপকৃত হবো যখন এই পরিষেবাগুলির মাধ্যমে আমাদের মা-বোনেদের ক্ষমতায়ন হবে এবং তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। তাঁরা অন্দরমহল ও বাড়ির চৌহদ্দি পেরিয়ে নিজেদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবেন; নিজেদের ইচ্ছা অনুসারে জীবনধারণের স্বাধীনতা থাকবে; তাঁরা ঘর-গৃহস্থালী সামলানো কিম্বা কর্মরত মহিলা হিসাবে নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবেন।
১৭) সমাজ এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্যে গড়ে তোলা পরিকাঠামোর সদ্ব্যবহার করা আর তা রক্ষা করা, আমাদের সকলের কর্তব্য। এই পরিকাঠামো প্রত্যেক ভারতবাসীর, আমাদের সকলের, কারণ এগুলি জাতীয় সম্পত্তি। জাতীয় সম্পত্তির নিরাপত্তাও স্বাধীনতা রক্ষার সঙ্গে জড়িত। আমাদের যে কর্তব্যনিষ্ঠ নাগরিকরা জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করেন, তাঁরা দেশপ্রেমের সেই ভাবনা এবং সংকল্পের পরিচয় দেন যে ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের সামরিক, আধাসামরিক বাহিনীর লোকেরা সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরায় থাকেন কিংবা আমাদের পুলিশবাহিনীর কর্মীরা দেশে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখেন। মনে করুন, আপনি কোনও দ্বায়িত্ববোধহীন ব্যক্তিকে কোনও ট্রেন কিংবা অন্য সার্বজনিক সম্পত্তিতে পাথর ছুঁড়তে কিম্বা ভাঙচুর করতে দেখে তাকে আটকানোর মাধ্যমে দেশের মূল্যবান সম্পত্তি রক্ষা করতে পারেন। এভাবে আপনি আইন মেনে চলার পাশাপাশি, নিজের অন্তরাত্মার আওয়াজ শুনে এক দায়িত্ববান নাগরিকরূপে নিজের কর্তব্যও পালন করেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
১৮) যখন আমরা দেশের সমন্বয়মূলক সংস্কৃতির কথা বলি, তখন আমাদের সকলের পারস্পরিক আচার-আচরণকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের এমনই সম্মানজনক আচরণ করা উচিত, যেরকম আচরণ আমরা নিজের জন্য প্রত্যাশা করি। ভারতের সমাজ তো সর্বদাই সহজ ও সরল ছিল এবং ‘বাঁচো এবং বাঁচতে দাও’ নীতি মেনে চলতো। আমরা ভাষা, ধর্ম, এবং অঞ্চলের ঊর্ধ্বে উঠে পরস্পরকে সম্মান করে এসেছি। হাজার বছরের ইতিহাসে, ভারতীয় সমাজ কখনও কোনও দুর্ভাবনা কিংবা পূর্বাগ্রহগ্রস্থ হয়ে কাজ করেনি। মিলেমিশে পাশাপাশি থাকা, সৌভ্রাতৃত্ববোধ, নিরন্তর সংস্কার করতে থাকা আর সমন্বয়কে গুরুত্ব দেওয়া, আমাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের বুনিয়াদী অংশ ছিল। আমাদের নিয়তি এবং ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও এর মুখ্য ভূমিকা থাকবে। আমরা অন্যদের ভাল চিন্তাভাবনাগুলিকে সানন্দে নিজের করে নিয়েছি, আর সর্বদাই ঔদার্যের পরিচয় দিয়েছি।
১৯) অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আমরা সেই ভাবনারই পরিচয় দিয়ে থাকি। আমাদের কাছেও বিশেষ অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা আছে, তা আমাদের সহযোগী দেশের সঙ্গে বিনিময় করে আমরা খুশি হই। আমরা দেশে থাকি কিম্বা বিদেশে আমাদের সেই সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সর্বদা আমাদের মনের গহনে সজীব রাখতে হবে।
২০) ভারত যুবশক্তির দেশ। আমাদের সমাজের প্রকৃত রূপ নির্ধারণে যুবসমাজের অংশীদারিত্ব ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আমাদের তরুণশক্তি খেলাধুলো থেকে বিজ্ঞান পর্যন্ত এবং জ্ঞানের অন্বেষণ থেকে সফ্ট স্কিল পর্যন্ত নিজেদের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে। এটা খুবই খুশির কথা যে, তরুণদের শক্তির প্রবাহকে যথার্থ দিশা দেখাতে দেশের বিদ্যালয়গুলিতে জিজ্ঞাসার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা হবে আমাদের ছেলে-মেয়েদের এবং আগামী প্রজন্মের জন্য অমূল্য উপহার। তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি বিশেষ মনযোগ দিতে হবে, কারণ তাঁদের স্বপ্নেই তো আমরা ভবিষ্যৎ ভারতের ঝলক দেখতে পাই।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ,
২১) আমি বিশ্বাস করি যে, সমাজের প্রান্তিকতম মানুষের জন্য ভারত নিজের সংবেদনশীলতা বজায় রাখবে; ভারত নিজের আদর্শে অটল থাকবে; ভারত নিজের মূল্যবোধকে সংহত রাখবে এবং সাহসিকতার ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা ভারতের মানুষ, নিজেদের জ্ঞান ও বিজ্ঞানের শক্তিতে চাঁদ ও মঙ্গলে পৌঁছে যাওয়ার যোগ্যতা রাখি। একইসঙ্গে, আমাদের সংস্কৃতির বিশেষত্ব এটাই যে, আমরা প্রকৃতির জন্য এবং সমস্ত জীবের জন্য ভালবাসা ও করুণার মনোভাব পোষণ করি। উদাহরণ হিসেবে গোটা দুনিয়ার জঙ্গলে বাঘের তিন -চতুর্থাংশের সুরক্ষিত বসবাস আমরাই নিশ্চিত করেছি।
২২) আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের কন্ঠস্বর হয়ে ওঠা কবি সুব্রহ্মানিয়া ভারতী একশো বছরেরও আগে যে ভবিষ্যৎ ভারতের যে কল্পনা করেছিলেন, তা আজ আমাদের প্রয়াসের মাধ্যমে সফল হতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেছিলেন –
মন্দরম কর্পোম, বিনয় তন্দরম কর্পোম,
ওয়ানয় অলপ্পম, কডল মিনয় অলপ্পম।
চন্দিরঅ মন্ডলোত্তু, ইয়ল কণ্ডু তেলিবোম,
সন্দী, তেরুপেরুক্কুম সাত্তিরম কর্পোম।।
অর্থাৎ,
আমরা শাস্ত্র এবং কর্মকুশলতা দু’টিই শিখবো,
আমরা আকাশ এবং মহাসাগরের সীমানা মাপবো।
আমরা চাঁদের প্রকৃতিকে গভীরভাবে জানবো,
আমরা সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার শিল্পকলাকে শিখবো।।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ,
২৩) আমার এই কামনা যে, আমাদের মিশ্র সংস্কৃতি, আমাদের আদর্শ, আমাদের করুনা, আমাদের জিজ্ঞাসা এবং আমাদের সৌভ্রাতৃত্ব যেন চিরকাল অটল থাকে। আর আমরা সবাই জীবনের এই মূল্যবোধের ছত্রছায়ায় এগিয়ে যেতে থাকি।
২৪) এই কথাগুলি বলে আমি আপনাদের সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের আগাম শুভকামনা জানাই।
ধন্যবাদ
জয় হিন্দ!
CG/SB/SB
(Release ID: 1582044)
Visitor Counter : 1189