প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
২৫ জুন, ২০১৯ তারিখে লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ জ্ঞাপক বক্তব্য
Posted On:
28 JUN 2019 9:55PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৫ জুন ২০১৯
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, সপ্তদশ লোকসভা গঠনের পর রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের ভাষণের জবাবি ধন্যবাদ প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে, ধন্যবাদ জানাতে আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি।
রাষ্ট্রপতি মহোদয় তাঁর ভাষণে আমরা ভারতকে কোথায় নিয়ে যেতে চাই, কিভাবে নিয়ে যেতে চাই, দেশের সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণের জন্য কোন্ বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিতে চাই, কোন্ কাজে জোর দিতে চাই – এসবের চিত্র আঁকার চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন যে, দেশের সাধারণ মানুষ যে আশা-আকাঙ্খা নিয়ে আমাদের সবাইকে এই সভায় প্রতিনিধি নির্বাচিত করে পাঠিয়েছেন, আমরা যেন এখানে সেগুলি পূরণ করতে পারি; এই বক্তব্যের জন্য তাঁকে আমরা দেশের কোটি কোটি মানুষের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
একটি শক্তিশালী, সুরক্ষিত, সমৃদ্ধ, সার্বভৌম দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের দেশের অনেক মহাপুরুষ। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়ে, অধিক গতি, অধিক তীব্রতার সঙ্গে আমাদের সবাইকে মিলেমিশে এগিয়ে যেতে হবে – এটাই সময়ের দাবি, এটাই দেশের প্রত্যাশা। আর আজকের আন্তর্জাতিক আবহে এই সুযোগ যেন ভারত না হারায়।
আমি মনে করি, এই মনোভাব নিয়ে আমরা সকলে যদি মিলেমিশে দেশের আশা-আকাঙ্খা পূর্ণ করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি, তা হলে আমরা অনায়াসেই সমস্ত সমস্যা ও বাধা অতিক্রম করতে পারব।
এই আলোচনায় প্রায় ৬০ জন সম্মানিত সাংসদ অংশগ্রহণ করেছেন, যাঁরা প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তাঁরা অনেক সুচারুভাবে নিজের বক্তব্য রাখার এবং আলোচনাকে সার্থক করে তোলার চেষ্টা করেছেন। আর যাঁরা অভিজ্ঞ, তারাও নিজের মতো করে এই আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
শ্রী অধীর রঞ্জন চৌধুরী মহোদয়, শ্রী টি আর বালু মহোদয়, শ্রী দয়ানিধি মারান মহোদয়, শ্রী সৌগত রায় মহোদয়, শ্রী জয়দেব মহোদয়, শ্রীমতী মহুয়া মৈত্র মহোদয়া, শ্রী পি বি মিধুন রেড্ডি মহোদয়, শ্রী বিনায়ক রাউত মহোদয়, শ্রী রাজীব রঞ্জন সিং মহোদয়, শ্রী পিনাকি মিশ্র মহোদয়, শ্রী নামা নাগেশ্বর রাও মহোদয়, মহম্মদ আজম খান মহোদয়, আসদুদ্দিন ওবৈসি মহোদয়, শ্রী প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি, ডঃ হিনা গাওইত সহ অন্যান্য অনেকেই এই আলোচনাকে সার্থক করে তুলেছেন বলে আমি হৃদয় থেকে তাঁদেরকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।
এটা সত্যি কথা যে, আমরা সবাই মানুষ, ৩০ দিন আগে আমরা যেভাবে নির্বাচনী ভাষণ দিচ্ছিলাম আজও অনেকের বক্তব্যে কিছুটা হলেও সেই প্রভাব রয়ে গেছে। মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে এই প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। কিন্তু এটাই প্রকৃতির নিয়ম। সেজন্য ....... দেখুন, আপনিও যেভাবে এই গরিমাপূর্ণ পদে আসীন হয়ে সুচারুভাবে এই সভা সঞ্চালন করেছেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, আপনি এই পদে নতুন হওয়া সত্ত্বেও কারও মনে হয়নি যে – আপনাকে সমস্যায় ফেলেন।
এভাবে দ্রুত সকলের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে এত সুন্দরভাবে সভা পরিচালনার জন্য আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। পাশাপাশি, নতুন অধ্যক্ষ মহোদয়কে সহযোগিতার জন্য দলমত নির্বিশেষে সমস্ত বক্তাদেরকেও কৃতজ্ঞতা জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, অনেক দশক পর দেশবাসী শক্তিশালী জনাদেশ দিয়েছেন। একটি সরকারকে দ্বিতীয়বার নির্বাচন করেছেন, আগের থেকে অনেক বেশি ক্ষমতা প্রদান করেছেন। আজকের এই সময়ে আমরা একটি স্পন্দিত গণতন্ত্রের জনপ্রতিনিধি রূপে দেশবাসীর জন্য গর্ব করতে পারি। আমাদের জনগণ কতটা সচেতন এবং তাঁরা নিজের থেকেও দেশকে বেশি ভালোবাসেন বলেই এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। সেজন্য দেশবাসীকে আমি অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
আমি আনন্দিত, আমার গোটা টিম আনন্দিত যে, ২০১৪ সালে যখন আমরা সম্পূর্ণ নতুন ছিলাম, তখন দেশের সামনে যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলি থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে যে সমস্ত প্রয়োগ করেছিলাম, সেগুলি সফল হয়েছে। জনগণ সেগুলি পছন্দ করছেন বলেই তাঁরা আমাদের আবার সুযোগ দিয়েছেন। এটা গণতন্ত্রের বড় শক্তি। এই নির্বাচনে যাঁরা জিতেছেন কিংবা যাঁরা হেরেছেন – তাঁরা সকলেই এই সরকারের পাঁচ বছরের কঠোর পরিশ্রম জনগণের নানা সুখ ও পরিষেবার স্বার্থে পূর্ণ সমর্পণ, পূর্ণ রূপে ‘সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায়’ – এই নীতিগুলির সফল প্রয়োগের ফল এবারের নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, একজন ব্যক্তি হিসাবে জীবনে এর থেকে বড় কোনও আনন্দ হতে পারে না, যখন জনতা জনার্দন, যাঁদের আমি ঈশ্বরের রূপ বলে মনে করি, তাঁরা আপনার কাজকে অনুমোদন করে। এটা নিছকই নির্বাচনে জয় ও হার, পরিসংখ্যানের খেলা নয়, এটা জীবনের সেই আস্থার প্রতিফল, যেখানে প্রতিশ্রুতি কাকে বলে, উৎসর্গীকৃত হয়ে কাজ করা কাকে বলে, জনগণের জন্য বেঁচে থাকা, তাঁদের জন্য লড়াই করা, স্বপ্ন দেখা কাকে বলে এসব পাঁচ বছরের অখন্ড একনিষ্ঠ এবং অবিরত তপস্যার ফলে পাওয়া গেলে এই আনন্দ একটি অধ্যাত্মের অনুভূতি এনে দেয়। সেজন্য আমি জয়-পরাজয়ের পরাকাষ্ঠায় নির্বাচনকে বিচার করি না। আমি আরেকটু এগিয়ে ভাবি, সেজন্য আমি ১৩০ কোটি জনগণের স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্খা পূরণের কথাই সবসময় ভাবতে পারি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ২০০৪ সালে যখন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী রূপে এই সেন্ট্রাল হল – এ বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়েছিলাম, তখন অত্যন্ত সহজভাবে বলেছিলাম যে, আমার সরকার দরিদ্রদের প্রতি সমর্পিত। আজ পাঁচ বছর কাজ করার পর অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি যে, আমার প্রতিশ্রুতিকে দেশের জনগণ ইভিএম – এর বোতাম টিপে স্বীকার করে নিয়েছেন। যখন আলোচনা শুরু হয়েছে, প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে আসা শ্রী প্রতাপ সারেঙ্গি এবং জনজাতি সমাজের প্রতিনিধি আমার ভগিনী ডঃ হিনা গাওইত যেভাবে তাঁদের বক্তব্য পেশ করেছেন, যেভাবে খুঁটিনাটি বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছেন, তারপর আমার মনে হয়, আমি আর কিছু না বললেও কী বলতে চাইছি, সেই বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে গেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমাদের দেশের মহাপুরুষদের মধ্যে যাঁরা রাজনৈতিক জীবনের পথ-প্রদর্শক হয়ে উঠেছেন, তাঁরা প্রায় সকলেই সমাজের প্রান্তিক মানুষটির উন্নয়নের কথা বলেছেন। কেউ একে অন্ত্যোদয় বলেছেন। আবার কেউ বলেছেন, সমাজের শেষ প্রান্তে বসে থাকা মানুষটির উন্নয়ন। পূজনীয় বাপুজী, বাবাসাহেব আম্বেদকর, রাম মনোহর লোহিয়া কিংবা দীনদয়াল উপাধ্যায় প্রত্যেকেই এই বিষয়ে জোর দিয়েছেন। বিগত পাঁচ বছরে আমাদের মনেও এই একটি লক্ষ্য ছিল - যাঁদের কেউ নেই, আমাদের সরকার যেন তাঁদের হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই আমরা এমন একটি সংস্কৃতি স্বীকার করে নিয়েছিলাম; আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাইছি না। কিন্তু এই সংস্কৃতিতে দেশের সাধারণ মানুষকে নিজেদের অধিকারের জন্য ব্যবস্থাগুলির সঙ্গে লড়াই করতে হ’ত। সহজভাবে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার তাঁরা পেতেন না। আর তাঁরা সেই অধিকার পান কিংবা না পান, অভিযোগ করুন কিংবা না করুন – এটা মনে করা হ’ত যে, এভাবেই চলবে।
আমি জানি যে, এসব অভ্যাস পরিবর্তনে কতটা পরিশ্রম করতে হয়। রাজ্যগুলিতেও জনমুখী কাজের জন্য অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ৭০ বছরের রোগ পাঁচ বছরে সারিয়ে তোলা কঠিন কাজ। কিন্তু আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি যে, আমরা সঠিক লক্ষ্যে এগোচ্ছি। সমস্ত প্রতিকূলতার সম্মুখীণ হয়েও আমরা লক্ষ্যচ্যুত হইনি। আর দেশবাসীর মনে এখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এই দেশ দুধ আর জল আলাদা করে নিতে পারছে। সেজন্য তাঁরা এখন আর শৌচালয়কে কেবলই চার দেওয়ালে আবব্ধ একটি ঘর হিসাবে ভাবে না। বাড়ি বাড়ি গ্যাসের উনুন পৌঁছে দেওয়ায় ভালোভাবে রান্না সম্ভব হচ্ছে এবং প্রতিটি ব্যবস্থার পেছনে সরকারের কী উদ্দেশ্য, সেটা তাঁরা বুঝতে পারছেন। আমরা তো গ্যাসের উনুন চাইনি, আমরা তো বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই সারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছি, সরকার নিজে থেকে এগুলি কেন করছে? কিন্তু তাঁরা ফলভোগ করছেন বলেই সরকারের প্রতি একটি বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। এতদিন কেন পাইনি আর এখন কেন পাচ্ছি – এর মধ্যে একটি দীর্ঘ যাত্রাপথ রয়েছে। সেই যাত্রাপথ বিশ্বাসে ভরপুর। ফলে তাঁরা সরকারের নিজের ভাবছেন এবং দেশে একটি নতুন সামর্থ অনুভব করছেন আর তাঁদের সেই অনুভূতিকে সম্বল করেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
এটা সত্যি যে, যেভাবে একটি কল্যাণকারী রাষ্ট্র রূপে এই দেশ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তখন সহজভাবে বাঁচার উপযোগী নানা প্রকল্পই সাধারণ মানুষের প্রয়োজন। তবেই গরিবদের কল্যাণ হবে, তাঁদের উত্থান হবে, তাঁদের ক্ষমতায়ন হবে। পাশাপাশি আধুনিক ভারত শক্তিশালী হয়ে উঠবে। উন্নয়নের ধারা এভাবেই এগিয়ে যাওয়া উচিৎ, যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও তাঁদের জীবনে সকল প্রয়োজনসাধনে ভরপুর প্রচেষ্টা করবে। আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণের জন্যই দেশের সকল প্রকল্প আধুনিকতামুখী হওয়া প্রয়োজন।
আমরা সেজন্যই হাইওয়ে কিংবা আইওয়ে, ওয়াটারওয়ে কিংবা রেলওয়ে কিংবা এয়ারওয়ে, স্টার্ট আপ হোক কিংবা ইনোভেশন, টিঙ্কারিং ল্যাব থেকে শুরু করে চন্দ্রযান পর্যন্ত যাত্রার কল্পনা আধুনিক ভারতকে অনেক সমস্যা অতিক্রম করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়ক হয়েছে।
এখানে অনেক সুন্দর করা বলা হয়েছে। কিছু তীব্র সমালোচনাও হয়েছে। সেসব সমালোচনায় নির্বাচনী সভার প্রভাব রয়েছে। প্রত্যেক দলের নিজস্ব কিছু এজেন্ডা ছিল। সেজন্য আমি কিছু বলছি না। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে যে, আমাদের উচ্চতাকে কেউ কম করতে পারবে না; এমন ভুল আমরা করতে পারি না। কারও উচ্চতা কম করার জন্য আমরা এখানে সময় নষ্ট করতে চাই না। আমরা নিজেদের উচ্চতা বৃদ্ধি করার জন্য উৎসর্গীকৃত।
আপনাদের উচ্চতা আপনাদের কাছেই থাকুক। কারণ, আপনারা এত উঁচুতে চলে গেছেন যে আর মাটি দেখতে পারছেন না। আপনারা উঁচুতে চলে গেছেন যে, আপনাদের শিকড় উপড়ে গেছে। যাঁরা মাটিতে রয়েছেন, তাঁদেরকে আপনাদের তুচ্ছ বলে মনে হয়। সেজন্য আপনাদের আরও উঁচুতে উঠলে আমরা খুশি। আমি প্রার্থনা করি, আপনাদের উচ্চতা আরও বাড়ুক। আপনাদের উচ্চতা নিয়ে আমাদের কোনও প্রতিযোগিতা নেই। কারণ, আমরা উচ্চতার স্বপ্ন দেখি না, আমরা শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখি।
আমরা স্বপ্ন দেখি, শিকড়ের গভীরে যুক্ত হওয়ার, শিকড়ের শক্তি নিয়ে দেশকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার। সেজন্য আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনও প্রতিযোগিতা নেই। আপনাদের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য শুভেচ্ছা জানাই। আরেকটি জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি, কেউ কেউ যাঁদেরকে ভালোবাসেন, পছন্দ করেন, তাঁদের নাম উচ্চারণ না করলে তাঁদের সমস্যা হয়। তাঁরা মনে করেন, নাম উচ্চারণ না করলেই কাউকে অপমান করা হ’ল - এরকম ভাবা উচিৎ নয়।
কিন্তু আমি এটাও চ্যালেঞ্জ করে বলছি, ২০০৪ সালের আগে অটল বিহারী বাজপেয়ীজীর নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় ছিল। ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত শাসন ক্ষমতায় থাকা সরকার একবারও কোনও প্রসঙ্গে অটল বিহারী বাজপেয়ীজীর নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করেনি, তাঁদের ভালো কাজের উল্লেখও করেননি। শুধু অটলজী কেন, তাঁরা নরসীমা রাও সরকারের প্রশংসাও করেননি। শুধু তাই নয়, তাঁদের এখনকার কারও বক্তব্যে ডঃ মনমোহন সিং – এর প্রশংসা শুনেছেন কখনও! তাঁরা অনেক বড় বড় মানুষ, তাঁদের তুলনায় আমি কিছুই নই, আমি তো সাধারণ মানুষ। কিন্তু আমি সম্ভবত, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, আবারও বলছি সম্ভবত, যাচাই করে দেখবেন, আমিই প্রথম লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রদত্ত ভাষণে দু’বার বলেছি যে, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্যে যত সরকার ক্ষমতায় এসেছে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের অবদান রয়েছে।
এই সভাতেও আমি অনেকবার বলেছি যে, আজ আরেকবার বলছি যে, আমরা এরকম মানুষ নই, আমার বক্তব্যের সমর্থনে একটি উদাহরণ দিচ্ছি, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালনের আগে আমার দীর্ঘকাল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। গুজরাট রাজ্যের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন সমারোহের সময় আমরা এমন কিছু কাজ করেছি, যা দলমতের ঊর্ধ্বে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে করেছি। এর মধ্যে একটির উল্লেখ এখানে করতে চাই, আমরা গুজরাট রাজ্য গঠনের পর থেকে ৫০ বছর ধরে যতজন রাজ্যপাল ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁদের ভাষণগুলি সংগ্রহ করে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলাম। সেটি এখন গুজরাটের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আপনারা আমাকে বলুন, ৫০ বছর ধরে যাঁরা রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাঁরা কারা ছিলেন?
তাঁরা প্রত্যেকেই তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশংসা করেছেন। আর সেই সরকারগুলি আমাদের দলের ছিল না। কিন্তু আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে যাঁরাই ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁদের সরকারের সমস্ত খুঁটিনাটিকে ইতিহাসের অংশ করে নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছি। কোনও খবরের কাগজে সম্পাদকীয় সংকলন নয়, রাজ্যপালনের ভাষণের সংকলন।
সেজন্য আমি বলতে চাই যে, দেশে আগে যে কাজ হয়েছে, তা কারা করেছেন, সেই হিসাব না করে আমরা ইতিহাসকে স্বীকার করে নিতে চাই। অথচ, তাঁদের আমলে নরসীমা রাও-কে ভারতরত্ন দিতে পারতেন এবং দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই ডঃ মনমোহন সিং-কে ভারতরত্ন দিতে পারতেন।
কিন্তু তাঁদের আমলে পরিবারের বাইরে কারও কিছু পাবার সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু আমরা, আমাদের ভাবনা এমনই যে, প্রণবদা কোন্ দলের মানুষ, কোন্ দলের জন্য তিনি সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেদিকে না তাকিয়ে দেশের জন্য তাঁর অবদানকে সম্মান জানিয়ে তাঁকে ভারতরত্ন প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। সেজন্য দয়া করে – একথা বলতে আমার ভালো লাগছে না। কিন্তু বারংবার আমাদের শোনানো হচ্ছে বলে বলছি, ‘দাজ ফার অ্যান্ড নো ফারদার’।
আজ আমি নথিভুক্ত করাতে চাই যে এবং সেজন্য দয়া করে বারংবার বলবেন না। আমরা কারও অবদানকে অস্বীকার করি না। আমরা যখন বলি যে, ১২৫ কোটি ভারতবাসী দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তখন সেই ১২৫ কোটির মধ্যে আপনারাও রয়েছেন। সেজন্য দয়া করে আমাদের আলোচনাকে এতো সীমাবদ্ধ করে দেবেন না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, যাঁরা প্রতিটি কথায় শ্লোগান দিচ্ছিলেন, কে করেছে, কে করেছে? তাঁদেরকে মনে করাতে চাই যে, আজ ২৫শে জুন। অনেকেই জানেন না যে ২৫শে জুন কি? ২৫শে জুন রাতে দেশের আত্মাকে নিষ্পেষিত করা হয়েছিল। ভারতের গণতন্ত্র সংবিধানের পাতায় জন্ম নেয়নি। ভারতের গণতন্ত্র অনেক শতাব্দী ধরেই ভারতবাসীর আত্মা, এই আত্মাকে নিষ্পেষিত করা হয়েছিল। দেশের সংবাদ মাধ্যমকে দাবিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেশের মহাপুরুষদের জেলবন্দী করা হয়েছিল। সমগ্র ভারতকে জেলখানায় পরিণত করা হয়েছিল। শুধু ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এতো কিছু করা হয়েছিল। আদালতের আদেশ ছিল কিন্তু সেই আদেশকে কিভাবে অগ্রাহ্য করা যায়, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হ’ল ২৫শে জুন প্রয়োগ করা জরুরি অবস্থা।
আজ ২৫শে জুন আমরা গণতন্ত্রের প্রতি আরেকবার আমাদের সমর্পণ, আমাদের সংকল্প এবং সংকল্প ও শক্তিকে গণতন্ত্রের প্রতি সমর্পিত করতে হবে। সংবিধানের কথা বলা আর সংবিধানকে অগ্রাহ্য করার পাপ করা - এই দুঃস্বপ্ন কেউ ভুলতে পারবেন না। এই পাপের যাঁরা অংশীদার তাঁদের কলঙ্ক কখনও মিটবে না। সেই দুঃস্বপ্নের কথা বারংবার স্মরণ করা প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, আমাদের সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে দেশে আবার এরকম কোনও পরিস্থিতি না আসে। কারও বদনাম করার জন্য এসব কথা বলছি না।
গণতন্ত্রের প্রতি আস্থার গুরুত্ব কী, এটা বোঝানোর জন্য গণতন্ত্রকে কিভাবে প্রহার করা হয়েছিল, এটা স্মরণ করানোটাও প্রয়োজন। সে সময়ে সংবাদ মাধ্যমের অফিসগুলোতে তালা ঝুলছিল। সমস্ত স্বাধীনচেতা মানুষ ভাবতেন যে, আজ সন্ধ্যাতেই পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের জনগণের সামর্থ দেখুন, তাঁদের শক্তি দেখুন, জাতপাত, ধর্ম-সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণ তখন গণতন্ত্রের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন এবং গণতন্ত্রকে পুনঃস্থাপিত করেছিলেন। এটাই আমাদের দেশের ভোটদাতাদের শক্তি। এবারও তাঁরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় ও ভাষার উপরে উঠে শুধুই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে মতদান করেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, রাষ্ট্রপতিজী তাঁর ভাষণে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমটি মহাত্মা গান্ধীর জন্মের সার্ধশতবর্ষ উদযাপন এবং দ্বিতীয়টি স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন। ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন এবং সমাজ জীবনে কিছু তারিখ থাকে, যা নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঞ্চার করে, সংকল্প পূরণের জন্য মানুষের মনে সমর্পণভাব জাগিয়ে তোলে। ভারতে আজ আমাদের জীবনে পূজনীয় বাপুজীর থেকে আর বড় প্রেরণা আর কেউ নেই। আজ আমাদের কাছে স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গীকৃত বীরদের থেকে বড় আর কেউ নেই। এই সুযোগ তাই আমাদের হাতছাড়া করলে চলবে না।
যাঁরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য নিজেদের জীবন ও যৌবন উৎসর্গ করেছেন, অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন, তাঁদের স্মরণে এবং স্বাধীনতার জন্য গণআন্দোলনকে সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব প্রদানকারী পূজনীয় বাপুজীর স্মরণে এই তারিখগুলিকে ঘিরে আমরা দেশে আরেকবার সকল গঠনমূলক কাজের জন্য প্রাণশক্তি সঞ্চার করতে পারি। এটি কোনও সরকার কিংবা দলের এজেন্ডা হতে পারে না, এটি সমগ্র দেশের এজেন্ডা। দলমত নির্বিশেষে সমগ্র দেশের মানুষকে উদ্দীপ্ত করে তুলতে হবে। রাষ্ট্রপতিজী আমাদের এই কথা স্মরণ করিয়েছেন, আমাদের জন্য এটি সংকল্প গ্রহণের মূহুর্ত। রাজনীতির ময়দানে আমরা পরস্পরকে যতই দোষারোপ করি না কেন, সেগুলির ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী দেশবাসীর মনোভাব নিয়ে আজ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি পালনে দেশের জন্য বাঁচার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
আমি এই সভায় উপস্থিত সমস্ত জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ জানাই যে, সার্বজনিক জীবনে নেতৃত্ব প্রদানকারী সমস্ত সমাজকর্মীদের অনুরোধ জানাই, রাষ্ট্রপতি মহোদয় আমাদের যে আদেশ দিয়েছেন, আমাদের কাছে তাঁর যে প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আর এই দুই গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্যকে নতুন ভারত নির্মাণের ক্ষেত্রে জনসাধারণকে যুক্ত করার জন্য আমরা কিভাবে ব্যবহার করতে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে।
ভারতে পরাধীনতার কালখন্ড দীর্ঘ হলেও, সেই কালখন্ডে এমন কোনও কাল নেই, যখন দেশের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে স্বাধীনতার আওয়াজ ওঠেনি, ত্যাগ-আত্মবলিদানের পরম্পরা গড়ে ওঠেনি। ১৮৫৭ সালে একটি সংগঠিত বিদ্রোহ হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজীর অনেক বড় অবদান ছিল। তিনি দেশের সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সিপাহীতে পরিণত করেছিলেন। তাঁরা ঝাড়ু দিতেন স্বাধীনতার জন্য, বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখাতেন স্বাধীনতার লক্ষ্যে, খাদিবস্ত্র পরিধান করতেন – তাও স্বাধীনতার জন্য।
এটা পূজনীয় বাপুজী করে দেখিয়েছেন – সমগ্র ভারতে আবহ গড়ে তোলেন। আর ১৯৪২ – এ ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে আপামর ভারতবাসী অংশগ্রহণ করেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ১৯৪২ – ৪৭ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘টার্নিং পয়েন্ট’। আমরা কি ‘গান্ধী – ১৫০’ এবং ‘স্বাধীনতা – ৭৫’ উদযাপনকে সেই ১৯৪২ – এর উদ্দীপনা নিয়ে দেশকে বিভিন্ন সংকট ও সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে, অধিকারের উপরে কর্তব্যকে স্থান দিয়ে দেশবাসীকে দায়িত্ব পালনে প্রেরণা যোগাতে এগিয়ে আসতে পারি?
আমি মনে করি, রাষ্ট্রপতিজী বিষয়টি আমাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণভাবে উপস্থিত করেছেন। যখন দেশে স্বাধীনতার দাবি উঠেছিল, অনেকেই বিদ্রুপ করেছিলেন – কিভাবে চালাবে, কী চালাবে? কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মনে আকাঙ্খা প্রবল ছিল, স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুবরণকারীদের যে মনোভাব ছিল, স্বাধীন ভারতের জন্য বেঁচে থাকার মনোভাব গড়ে তোলার ক্ষমতা বর্তমান নেতৃত্বের রয়েছে।
আমি চারদিকে হাত ঘুরিয়ে বলছি, শুধু নিজের জন্য বলছি না, শুধু সরকার পক্ষের জন্য বলছি না। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে স্বাভাবিকভাবেই আমার তৎকালীন লাভ হবে – আমার চিন্তার পরিধি এত ছোট নয়, ছোট ভাবনাকে আমি পছন্দ করি না – সেজন্য কখনও কখনও আমার মনে হয় যে, ১২৫ কোটি দেশবাসীর স্বপ্ন নিয়ে বাঁচলে ছোট দৃষ্টি আর ভাবনার অধিকার আমার নেই।
যখন সাহস করেছি উঁচু উড়ানের
তখন আকাশের উচ্চতা দেখার প্রয়োজন নেই।
এই ভাবনা নিয়ে আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন সাহস, নতুন দৃঢ় ভাবনা নিয়ে এগোবো। এই সরকারের বয়স এখন মাত্র তিন সপ্তাহ। কিন্তু আমাদের এখানে প্রবাদ রয়েছে – পুত্রের লক্ষ্ণ দোলনাতেই বোঝা যায়। গত তিন সপ্তাহে আমি কোথাও গিয়ে জয়জয়কার শোনা কিংবা মালা গলায় পরার পথ বেছে নিইনি। প্রায় ছ’মাস ধরে সারা দেশে নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করার পর কিছুদিন বিশ্রামের পথ বেছে নেওয়ার পথও আমাদের পছন্দ নয়।
ওটা আমাদের পথ নয়, আমরা তো দেশের স্বার্থে বাঁচার জন্য এসেছি। তিন সপ্তাহের মধ্যে এই সরকার কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে – এক গতিশীল সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে দেশকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে; ক্ষুদ্র কৃষক, ছোট দোকানদার কিংবা ক্ষেত মজুরদের জন্য তাঁদের বয়স ষাট বছর হলে পেনশন প্রদানের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি।
আমাদের পিএম কিষাণ সমৃদ্ধি যোজনায় আমরা সমস্ত কৃষকদের এর আওতায় উপকৃত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সেনা জওয়ানদের সন্তানসন্ততিদের ছাত্রবৃত্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি, সমাজের সুরক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ কর্মচারীদের সন্তানসন্ততিদের ছাত্রবৃত্তির খাতিরে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সভায় মানবাধিকার সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি।
২০২২ – এর মধ্যে নানা স্বপ্নের বাস্তবায়নের ভাবনা, মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা, সর্বদলীয় বৈঠকের আয়োজন, সমস্ত রাজনৈতিক দলের সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনায় বসা – মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে এই সমস্ত উদোগ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার স্বার্থে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছি। হিসাব করলেদ প্রতিদিন গড়ে তিনটি করে কাজ করেছি। আর সেজন্য মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, রাষ্ট্রপতি মহোদয় নিজের ভাষণে এসব উল্লেখ করেছেন। তার মানে এই নয় যে, পূর্ববর্তী সরকারগুলি কোনও কাজ করেনি।
কেউ কেউ বলছিলেন, অমুক বাঁধ – তমুক বাঁধ তৈরি হয়েছে। আরও অনেক অবদানের কথা বলেছিলেন, আমি খুশি হতাম তাঁদের বক্তব্যে যদি বাবাসাহেব আম্বেদকরের নাম উল্লেখিত হ’ত। ভারতে জল সংরক্ষণ নিয়ে যত প্রাথমিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সবই বাবাসাহেবের নেতৃত্বে শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু এটা সীমার পর অনেক উঁচুতে উঠে গেলে ধরাতলের অনেক কিছু নজরে আসে না। বাবাসাহেব জলপথ সংস্কার, সেচ, নেভিগেশন নিয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এসব বিষয়ে তাঁর বক্তব্য আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি বলতেন, ‘মানুষ জলের সদ্ব্যবহার থেকেও বেশি করে জলাভাবের শিকার’! বাবাসাহেবের এই দুশ্চিন্তা উপলব্ধি করে আমাদের যথোচিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনেক বাঁধের পাশাপাশি, আজ এখানে সর্দার সরোবর বাঁধের নামও উচ্চারিত হয়েছে। সেজন্য আমি কিছুটা সময় চেয়ে নিচ্ছি মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়। কারণ, না হলে মানুষের কাছে অনেক ভুল তথ্য পূঁছবে। যাঁরা ভুলের বেসাতি করেন, তাঁরা ভ্রম সৃষ্টি করে মজা পান। তাঁরা সত্যকে প্রকাশ্যে আসতে দেন না। আমি আজ বলার পরও যে সত্যটা তাঁরা মেনে নেবেন – তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবুও আমি নিজের কর্তব্য পালন করে খুশি হব।
১৯৬১ সালে পণ্ডিত নেহরু এই সর্দার সরোবর বাঁধের শিলান্যাস করেছিলেন। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এটা নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু ১৯৬১’তে শিলান্যাসের পর কয়েক দশক লেগে যায় প্রকল্পটি মঞ্জুর হতে। অর্থাৎ প্রকল্প মঞ্জুর না করেই শিলান্যাস হয়েছিল। তখন সেই প্রকল্পের বাজেট ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু দেরীতে মঞ্জুর হওয়া এবং ঢিমেতালে কাজ হওয়ায় ১৯৮৬-৮৭ সালে এর খরচ ৬২ হাজার কোটিতে পৌঁছয়। কিন্তু বাঁধ অসম্পূর্ণ থাকে। আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রকল্পটিকে ত্বরান্বিত করতে উত্তর প্রদেশ সরকার আরোপিত নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে অনশনে বসেছিলাম। তবেই এই প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে। আর তারপর আমি প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১৫ দিনের মধ্যে অবশিষ্ট প্রতিকূলতাগুলিকে দূর করে এই কাজ সম্পন্ন করি।
আজ এই বাঁধের মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি মানুষ জল পাচ্ছেন। ৭টি মহানগর, ১০৭টি নগরপালিকা এবং ৯ হাজার গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। জলকষ্ট কাকে বলে তা রাজস্থান ও গুজরাটের মানুষের থেকে বেশি কেউ জানেন না। সেজন্য এবার আমরা আলাদা করে জলশক্তি মন্ত্রালয় গড়ে তুলেছি। দেশে জল সঙ্কটের সমাধানের ক্ষেত্রে আরও গভীর চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। এবারের বর্ষাতেও আমাদের যত বেশি সম্ভব জল সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সমস্ত সম্মানিত সাংসদদের প্রতি আমার অনুরোধ, দেশের এনজিও-গুলিকে অনুরোধ জানাই, দেশে জলের গুরুত্ব সম্পর্কে জনমানসে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপনাদের আরও সক্রিয় হতে হবে এবং তা সরকারি ব্যবস্থার বাইরে থেকে কাজ করতে হবে, জল বাঁচাতে হবে। আপনাদের এই সক্রিয়তা সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় সহায়ক হবে। জলসঙ্কট দু’ধরণের মানুষকে সবচেয়ে বেশি বিপদে ফেলে। প্রথমত, দরিদ্র শ্রেণীর মানুষকে এবং দ্বিতীয়ত, আমাদের মা-বোনেদের।
আমাদের সমাজবাদী বন্ধুদের কী হয়েছে আমি জানি না, লোহিয়াজী বলতেন, দেশের মহিলাদের সবচেয়ে বড় দুটো সমস্যা হ’ল জল ও শৌচালয়ের অভাব। লোহিয়াজী নিয়মিত বলে গেছেন, মা-বোনেদের এই দুই সমস্যা থেকে মুক্ত করো। আমরা লোহিয়াজীর এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে মা-বোনেদের ইজ্জত রক্ষা করতে বাড়িতে বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণ করে তাঁদের দ্বিতীয় প্রধান সমস্যাটি দূর করার ক্ষেত্রে কাজে সাফল্য পেয়েছি। আর এখন ‘প্রত্যেক বাড়িতে জল’ এই মন্ত্র নিয়ে এগোতে হবে।
আমি জানি যে, এটি অত্যন্ত কঠিন ও বড় কাজ। হতে পারে, কেউ দাঁড়ি-পাল্লায় মেপে আমাদের ফেল করিয়ে দেবেন। বলবেন, মোদী তুমি ১০০-তে ৭০ নম্বরও পাবে না, ৫০ পাবে। তবুও আমি বলবো যে, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, সবাইকে হাত লাগাতে হবে। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, জল সঞ্চয় মন্ত্রালয় গড়ে তুলছি। জল সঞ্চয়ের পর আমাদের পরবর্তী দায়িত্ব হ’ল জলসেচ’কে সুচারুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। সারা পৃথিবীতে এটা প্রমাণিত যে, আখ চাষে ক্ষুদ্র সেচ অত্যন্ত লাভজনক। আমাদের কৃষকদেরকেও এটা বোঝাতে হবে। সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থের যোগান সম্ভব। কিন্তু জল বাঁচাতে হবে। এভাবেই আমাদের ভাবতে হবে কিভাবে বিন্দু বিন্দু জল বাঁচিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
কৃষি আমাদের দেশের অর্থ বযবস্থার মেরুদন্ড। আমাদের গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থারও মেরুদন্ড। কিন্তু পুরনো পদ্ধতিগুলি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যে পদ্ধতিতে ইনপুট কস্ট কম, সেরকম জিরো বাজেটিং চাষে ফলিত প্রয়োগ সাফল্যের মুখ দেখছে। এতে উৎপাদন কমে না। উৎকর্ষ আজকের হলিস্টিক হেলথকেয়ারের মান অনুসারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের সবাইকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে যে কোনও প্রকল্পকে নিছকই সরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কৃষকদের ভালোর জন্য এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের দেশে কৃষি ক্ষেত্রে কর্পোরেট দুনিয়ার কোনও বিনিয়োগ নেই। আমাদের কর্পোরেট বিশ্বকে এক্ষেত্রে প্রেরণা যোগাতে হবে। তাদের জন্য যদি কোনও নিয়ম-নীতি প্রণয়ণ করতে হয় – তা করতে হবে। কেউ কেউ ভাবেন ট্র্যাক্টর উৎপাদন করাকে কৃষি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা বলা যেতে পারে। আমি সেটা বলছি না। আমাদের প্রত্যক্ষ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে, গুদামঘর নির্মাণে, হিমঘর নির্মাণে কর্পোরেট বিনিয়োগ চাই – এটাই সময়ের দাবি। এই বিনিয়োগ কিভাবে আনা যায়, তা নিয়ে আমাদের ভাবনাচিন্তা করতে হবে।
কৃষকদের এপিওএস – এর মাধ্যমে অধিক সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের জন্য বীজ থেকে বাজার পর্যন্ত একটি সুন্দর ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়বে। সেজন্য আমাদের এই ক্ষেত্রগুলিতে জোর দিতে হবে।
আমরা ২০১৪ সালে দেখেছি, ডালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছিল। কিন্তু দেশের কৃষকদের মনোভাব দেখুন, যখন আমি তাঁদের বেশি করে ডাল উৎপাদনে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, তাঁরা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের প্রয়োজন মেটাতে অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন। এভাবে দেশে ডালের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের দেশের কৃষকদেরতিল উৎপাদনের জন্য প্রেরণা যোগাতে হবে, যাতে দেশকে এক বিন্দুও ভোজ্যতেল আমদানি না করতে হয়।
আমি মনে করি যে, দেশের কৃষকদের প্রেরণা যোগালে তাঁরা আমাদের এই সাফল্য এনে দিতে পারবে। এই বিষয়গুলি সম্পর্কে একটি ভবিষ্যৎ দৃষ্টি নিয়ে গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থায় কৃষকের শক্তি এবং দেশের প্রয়োজনীয়তা পূরণের কাজ আমরা করতে পারি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এটা সত্যি যে সমালোচনার জন্য সব ধরণের পরিসংখ্যানের ব্যবহার করা যায়। কারও শাসনকালে কোনও সাফল্য এসে থাকলে সেটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, কিন্তু অন্যের সাফল্য এলে সেটা খারাপ – এই দৃষ্টিভঙ্গী দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারে না। আমরা যখন বিশ্বের ত্রয়োদশ কিংবা একাদশ অর্থ ব্যবস্থা রূপে স্বীকৃতি পাই, তখন অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে এই সভার বেঞ্চগুলিতে তালি বাজানো হয়েছিল। কিন্তু আমরা যখন বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থায় ষষ্ঠ স্থানে পৌঁছে যাই, তখন সেই হাতগুলি নীরব কেন? আমরা প্রত্যেকেই তো এদেশের নাগরিক। তা হলে দেশ বিশ্বে একাদশ স্থানে পৌঁছলে আনন্দিত হলে, ষষ্ঠ স্থানে পৌঁছলে আরও বেশি আনন্দিত হওয়া উচিৎ।
আপনারা কতদিন আর এতো উঁচুতে থাকবেন যে, নীচটা দেখতেই পারছেন না। ভারতকে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন সবাই কেন দেখতে পাব না। সবাই মিলে যদি দেশকে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে পারি, তা হলে কার লোকসান হবে? আমরা প্রত্যেকেই তো লাভবান হব। সেজন্য আমি মনে করি, দলমত নির্বিশেষে সকলেরই এই লক্ষ্যপ্রাপ্তির জন্য পরিশ্রম করা উচিৎ। আমাদের দেশে আমার ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্বপ্ন নিয়ে অনেক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ হয়েছে। কিন্তু কেউ কি অস্বীকার করতে পারেন যে, আমাদের দেশে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র প্রয়োজন রয়েছে!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি কারও সমালোচনা করার জন্য নিজের সময় নষ্ট করতে চাই না। আমার অনেক কাজ রয়েছে। কিন্তু, দেশবাসীকে কিছু তথ্য জানানোর প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের দেশে প্রায় ২০০-২২৫ বছরের অস্ত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশ যখন স্বাধীন হয়েছে, তখনও দেশে ১৮টি অস্ত্র উৎপাদনের কারখানা ছিল। সেই সময়ে অস্ত্র ক্ষেত্রে চিন ‘জিরো’ ছিল। আজ চিন সমস্ত বিশ্বে প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি করে। আর আমরা এখন বিশ্বে সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারী দেশ। আমাদের দেশকে এই বাস্তব সত্য থেকে বের করে আনতে হবে। আপনারা হয়তো ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নিয়ে হাসিঠাট্টা করে রাতে ভালো ঘুমাবেন। কিন্তু দেশের ভালো হবে না।
অধ্যক্ষ মহোদয়, আমাকে বক্তব্য রাখতে দেওয়ার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই সভার প্রত্যেককে কৃতজ্ঞতা জানাই। ভারত কিভাবে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি অর্থ ব্যবস্থার অন্যতম হয়ে উঠবে? ভারতকে রপ্তানিতে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কে কিভাবে উৎসাহ যোগাবো, স্টার্ট আপ – এর ক্ষেত্রে আমাদের নবীন প্রজন্ম ইতিমধ্যেই বিশ্বে নিজেদের সুনাম অর্জন করেছেন। আমাদের মূলমন্ত্র হওয়া উচিৎ ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ, জয় বিজ্ঞান’ আর এখন ‘জয় অনুসন্ধান’ - এই চারটি বিষয়কে কিভাবে অগ্রাধিকার দেব। তাহলেই আমরা নবীন প্রজন্মের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে পারব। আমাদের দেশে পর্যটনের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা দেশ নিয়ে এত হীনভাব পোষণ করি যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে মানুষকে ভারতের দিকে আকর্ষণ করতে পারি না।
গত পাঁচ বছরে আমরা স্বচ্ছতা অভিযানে সফল হয়েছি। এখন আমরা পর্যটনে জোর দিতে পারি। এর মাধ্যমেই ভারতে রোজগারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি, বিশ্বে ভারতের একটি নতুন পরিচয় গড়ে উঠবে। সেজন্য আগামী দিনে দেশে আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এই পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ১০০ লক্ষ কোটি টাকাও কম হবে।
এত বড় স্বপ্ন নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং সারা পৃথিবী থেকে আমরা যা পেতে পারি, সেই সমস্ত ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। এগুলির পেছনে আমাদের স্বপ্ন নতুন ভারত আধুনিক ভারত এবং আমাদের স্বপ্ন ইজ অফ লিভিং। সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও সুগম করে তোলা। এই সমস্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। দেশের গ্রামে গ্রামে শহরে শহরে প্রত্যেকের জন্য সমান সুযোগ গড়ে তোলার কথা ভেবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
আজ বিশ্বে আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের কথা বলি। আমাদের দেশের নবীন প্রজন্মের মানুষকে বিশ্বের প্রয়োজন অনুসারে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা সাফল্য পেতে পারি। দক্ষতা উন্নয়নের পরিমাণ কে আরও বাড়াতে হবে এবং কোনও সুযোগই হাতছাড়া করা চলবে না। রাষ্ট্রপতি মহোদয় একথাই বলেছেন, কিভাবে আমরা দেশকে আধুনিকতার লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
সরকার একটি বাজারের জন্য জেএএম – এর ব্যবস্থা করেছে। আমি চাই যে, যেখানে যেখানে আপনাদের রাজ্য সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, সে যে কোনও দলেরি হোক না কেন, আপনারা সবাই জেএএম পোর্টালটি ব্যবহার করুন। এর মাধ্যমে অনেক অর্থের সাশ্রয় হবে, অনেক মানুষ উপকৃত হবেন। ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র শিল্পোৎপাদিত পণ্য সরকারের দরজায় পৌঁছে যেতে পারে। আমার অনুরোধ, আমরা সকলে যেন এই লক্ষ্য মাথায় রেখে কাজ করি।
আমাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে। আমাদের দোষারোপ করা হচ্ছে যে, অমুককে কেন জেলে ঢোকাচ্ছেন না। কেমন করে ঢোকাবো, এখন কি জরুরি অবস্থা চলছে। গণতন্ত্রে সরকার চাইলেই জেলে ঢোকাতে পারে না। এটা বিচার-ব্যবস্থার কাজ। আমরা আইন মেনে চলতে পছন্দ করি। কেউ যদি আদালত থেকে জামানত পেয়ে থাকে, তা হলে তিনি সেটা উপভোগ করুন। আমরা প্রতিশোধস্পৃহা নিয়ে কাজ করি না। কিন্তু আমাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে। ঈশ্বর আমাদের যতটা বুদ্ধি ও শক্তি দিয়েছেন, তা আমরা সততার সঙ্গে প্রয়োগ করবো। কারও প্রতি বিদ্বেষ থেকে কোনও আচরণ করবো না। আমাদের দেশের সংস্কৃতি থেকে এই শিক্ষা পেয়েছি। আমাদের ভুল পথে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দুর্নীতি দূরীকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক কার্যকরি হবে নিঃসন্দেহে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আমাদের দেশে কেনো মতভেদ হবে। আমরা সবাই মানি যে, সন্ত্রাসবাদ মানবতার বড় শত্রু। যাঁরা মানবতায় বিশ্বাস রাখেন, তাঁরা সবাই একত্রিত হয়ে এই বিষয় নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতের হবে।
আমরা যদি মহিলা ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলি – কংগ্রেস দল কয়েকবার ভালো সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু না জানি কেন ........ সম্ভবত, তাঁরা এতো উঁচুতে বিচরণ করেন যে, অনেক কিছু দেখতে পান না। পঞ্চাশের দশকে ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছিল, তখনই এটিকে বাস্তবায়িত করার সুযোপ ছিল। কিন্তু কংগ্রেস করতে পারেনি। তারা হিন্দু কোড বিল প্রণয়ন করে নিজেদের দায় সেরেছে।
এর ৩৫ বছর পর কংগ্রেসের সামনে দ্বিতীয় সুযোগ এসেছিল। শাহবানু মামলায় সুপ্রিম কোর্ট পূর্ণ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর দেশে একটি লিঙ্গ নিরপেক্ষ আইন প্রণয়নে সুন্দর আবহ গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সেই উচ্চতা থেকে নীচের মাটি দেখতে না পারার জন্য তারা সেই সুযোগ হাতছাড়া করেছে। তারও ৩৫ বছর পর আজ আরেকবার কংগ্রেসের সামনে সুযোগ এসেছে। আমরা বিল এনেছি। এদেশের নারীর গৌরবকে কোনও সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়োজন নেই।
আমি চাই যে, কংগ্রেস দল, বিশেষ করে, একটি বিষয়ে সমর্থন করুক। শাহবানুর মামলা যখন চলছিল, তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের এক মন্ত্রী টিভি সাক্ষাৎকারে চমকে দেওয়ার মতো একটি বক্তব্য রেখেছিলেন। আমি নিজের কানে শুনিনি, তাই হুবহু বলতে পারব না। আমি যেভাবে শুনেছি, সেভাবে বলছি। তিনি বলেছিলেন যে, মুসলমানদের উত্থানের দায়িত্ব কংগ্রেসের নয়। দেখুন, এটি অত্যন্ত গম্ভীর বিষয়। তিনি বলেছিলেন, মুসলমানদের উত্থানের দায়িত্ব কংগ্রেসের নয়। ইফ দে ওয়ান্ট টু লাই ইন দ্য গাটার লেট দেম বি! তাঁরা আমাদের দেশের নাগরিক, তাঁদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ...... পাবেন পাবেন পাবেন, অবশ্যই পাবেন – আপনাদের সবাইকে ইউটিউবের লিঙ্ক পাঠিয়ে দেব।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি বেশি সময় নিই না। কিন্তু রাষ্ট্রপতি মহোদয় গান্ধী ১৫০ এবং স্বাধীনতা ৭৫ উদযাপনের কথা বলেছেন ..... আমরা দেখেছি যে আমাদের দেশে কোনও না কোনও কারণে সমস্ত আলোচনা অধিকার-কেন্দ্রীক হয়। প্রত্যেকেই অধিকার চান, অধিকার নিয়ে ভাবেন। এখন সময় এসেছে যে, আমরা দেশকে অধিকারের চিন্তা থেকে রূপান্তরিত করে কর্তব্যের দিকে নিয়ে যাই। জনপ্রতিনিধিদের কাজ হ’ল জনচেতনা জাগানো। জনপ্রতিনিধিদের কাজ হ’ল এরকম সময়ে নেতৃত্ব প্রদান করা। আর একথা আমি প্রথম বলছি না, আমরা সবাই শুনেছি যে, কর্তব্যের শক্তি কত বেশি হয়।
মহাত্মা গান্ধী বলতেন, প্রত্যেক অধিকারই একটি সংশ্লিষ্ট কর্তব্যকে বহন করে! লোহিয়াজী বলতেন, কর্তব্য সম্পাদনের সময়ে লাভ-লোকসান দেখা উচিৎ নয়। আমি তাঁর এই উক্তিকে একটু বিস্তারিতভাবে বোঝাতে আরেকটি উক্তি উল্লেখ করতে চাই, ‘বিশ্বকে ভারত একটি বড় শিক্ষা দিয়েছে যে, আমাদের দেশে সবার উপরে কর্তব্য আর এই কর্তব্যগুলি থেকেই অধিকার জন্মায়। আজকের আধুনিক বস্তুবাদী বিশ্বে যেখানে চারদিকে সংঘর্ষ দেখা যায়, প্রত্যেকেই নিজের অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলে, কর্তব্য নিয়ে কেউ ভাবেন না – এটাই সংঘর্ষের কারণ। এটাই বাস্তব যে, অধিকার এবং পরিষেবা নিয়ে আমরা লড়াই করি। কিন্তু এটা করতে গিয়ে আমরা যদি কর্তব্যগুলিকে ভুলে যাই, তা হলে এই অধিকার ও পরিষেবাগুলিও আমাদের কাছে থাকবে না’।
আমি মনে করি, তাঁর দর্শন অত্যন্ত স্পষ্ট। যে মহাপুরুষ এই কথাগুলি বলে গিয়েছেন, তাঁকে আমরা ভুলে গেছি। আমরা কি সেই মহাপুরুষকে স্মরণ করে তাঁর বক্তব্যকে অনুধাবন করতে পারি? ১৯৫১ সালের ১৪ই জুলাই নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের প্রথম ম্যানুফেস্টো যখন ঘোষণা হচ্ছিল, সেই সময়ে যে মহাপুরুষ উপরের উক্তিটি করেছিলেন, তাঁর নাম পণ্ডিত নেহরু।
আমি মনে করি যে, সেই সময়ে পণ্ডিত নেহরু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, দেশকে কর্তব্যের পথে পরিচালিত করার জন্য পণ্ডিতজীর সেই ইচ্ছাকে অনুধাবন করে আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। আমরা সবাই মিলে এগিয়ে গেলে দেশবাসীর মনোভাবে পরিবর্তন আসতে বাধ্য।
আমাদের দেশের অভিজ্ঞতা এমনই যে, মহাত্মা গান্ধী যখন নবীন প্রজন্মকে আহ্বান করেছিলেন, ‘বই ছাড়ো, স্বাধীনতার জন্য এগিয়ে এসো’। তখন সবাই বেরিয়ে পড়েছিলেন। গান্ধীজী বলেছিলেন, বিদেশি দ্রব্য ত্যাগ করো, স্বদেশী দ্রব্য গ্রহণ করো। আপামর ভারতবাসী এই আহ্বানেও সাড় দিয়েছিলেন। লালবাহাদুর শাস্ত্রী যখন ডাক দিয়েছিলেন, ‘এক বেলার খাবার ছাড়ুন, অন্ন উৎপাদন করুন’। দেশবাসী তাও করে দেখিয়েছেন। আমার মতো ছোট মানুষ যখন দেশবাসীকে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম, দেশবাসী তাতেও সাড়া দিয়েছেন। এর মানে এই দেশ আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য তৈরি ছিল, তৈরি আছে।
আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি নতুন ভারত নির্মাণের জন্য, আধুনিক ভারত নির্মাণের জন্য মিলেমিশে এগিয়ে যাই। রাজনীতির নিজস্ব সীমাবদ্ধতা থাকে, দেশকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। কারণ, দল থেকে দেশ বড় হয়। দেশের কোটি কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণের জন্য রাষ্ট্রপতি মহোদয় আমাদের যেভাবে পথ-প্রদর্শন করেছেন, সেজন্য তাঁকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে ...... শুধু তাঁর ভাষণের জন্যই ধন্যবাদ নয়, তাঁর ভাষণের প্রাণশক্তিকে রাষ্ট্রহিতে কিছু করার মাধ্যমে সত্যিকারের ধন্যবাদ জানাই।
এই আশা নিয়ে, এই আলোচনা সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য সমস্ত সম্মানিত সাংসদদের অভিনন্দন জানিয়ে আমার বক্তব্যকে এখানেই সম্পূর্ণ করছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
SSS/SB/SB
(Release ID: 1576297)
Visitor Counter : 860