অর্থমন্ত্রক

২০১৯-২০ ও তার পরের জন্য আর্থিক কর্মসূচি


২০১৯-২০-তে রাজকোষ ঘাটতিকে জাতীয় আয়ের ৩.৪ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্যমাত্রা

Posted On: 01 FEB 2019 4:45PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

 

২০১৯-২০-র অন্তর্বর্তী বাজেটে ২০১৯-২০ বর্ষের জন্য আর্থিক বা রাজকোষ ঘাটতি জাতীয় আয়ের ৩.৪ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। আজ সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়েল এই লক্ষ্যমাত্রার কথা বলেন। তাঁর বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৮-১৯-এ রাজকোষ ঘাটতিকে ৩.৩ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। ২০১৯-২০-তে এই ঘাটতিকে সংহত করার জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে, কৃষকদের জন্য আয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তাবাবদ ২০১৮-১৯-এর সংশোধিত বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০-র প্রস্তাবিত বাজেটে ৭৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকদের আয় বাবদ অর্থের পরিমাণ বাদ দেওয়া হলে ২০১৮-১৯-এ রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ ৩.৩ শতাংশের নিচে এবং ২০১৯-২০-তে এই পরিমাণ ৩.১ শতাংশেরও নিচে ধরে রাখা সম্ভব হত।

এবারের বাজেটে ব্যাপক অর্থনৈতিক কাঠামোগত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ২০১৮-১৯-এর রাজস্ব ঘাটতি ছিল ৪,১৬,০৩৪ কোটি টাকা যা, জাতীয় আয়ের ২.২ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০১৮-১৯-এর চলতি খাতে ঘাটতি ২০১৭-১৮ বর্ষের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭-১৮-য় এই ঘাটতি ছিল জাতীয় আয়ের ১.৯ শতাংশ, যা ২০১৮-১৯-এ বেড়ে ২.৭ শতাংশে পৌঁছে যায়। তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম জাতীয় জিনিসপত্রের আমদানি কারণেই যে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে, তার জন্যই চলতি খাতে ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, সামান্য এই বৃদ্ধি সত্ত্বেও রাজকোষ ঘাটতি ও জাতীয় আয়ের অনুপাত যথাযথ রাখা সম্ভব হয়েছে এবং এই হার জাতীয় আয়ের ৩ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব হবে।

আগামী বছরের জন্য অর্থনীতির ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য হবে ব্যয়ের ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানো। এই কাজ করা সম্ভব হলে আর্থিক দায়িত্ব এবং বাজেট পরিচালন আইন (এফআইবিএম) অনুসারে কাজ করা সম্ভব হবে বলে মধ্যবর্তী আর্থিক নীতি তথা আর্থিক নীতি-কৌশল বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় সরকারের মোট কর রাজস্ব ২০১৯-২০-র বাজেটে ২৫৫২১৩১ কোটি টাকা হবে বলে এই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের তুলনায় মোট কর রাজস্বের পরিমাণ ১৩.৫ শতাংশ বা ৩০৩৯৫৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯-২০-র বাজেটে প্রত্যক্ষ কর বাবদ আয়ের পরিমাণ ২০১৮-১৯-এর সংশোধিত বাজেটের ১২,০০০০০ থেকে বেড়ে ১৩,৮০০০০ কোটি টাকা হবে, যার অর্থ এই ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি হবে। ২০১৯-২০-র শেষ নাগাদ প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহের পরিমাণ জাতীয় আয়ের ৬.৬ শতাংশের সমতুল হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, পরোক্ষ কর ২০১৯-২০-র বাজেটে ১১.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে ১০৪২৮৩৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১১৬৬১৮৮ কোটি টাকা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৯-২০-তে জিএসটি বাবদ সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলেই পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কর নয়, এই ধরণের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ ২০১৯-২০-তে ২৭২৬৪৭ কোটি টাকা হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৮-১৯-এর সংশোধিত বাজেটে এই পরিমাণ ছিল ২৪৫২৭৬ কোটি টাকা। এই ক্ষেত্রে বৃদ্ধির পরিমাণ হয়েছে ২৭৩৭১ কোটি টাকা বলে মধ্যবর্তী আর্থিক নীতি তথা আর্থিক নীতি-কৌশল বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন, মুদ্রাস্ফীতির হার কম থাকার ফলে মোট ব্যয়ের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হয়েছে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ ১৩.৩০ শতাংশ বা ৩২৬৯৬৫ কোটি টাকা। ২০১৯-২০-র বাজেটে মূলধনী ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৬২৯২ কোটি টাকা। কৃষিক্ষেত্রে বর্ধিত আর্থিক সহায়তা, সুদ পরিশোধ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির ফলেই মোট ব্যয় তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ‘এক নজরে বাজেট’ সংক্রান্ত নথিতে জানানো হয়েছে।

২০১৯-২০-র বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে ৩২৭৬৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ২০১৮-১৯-এ এই বাবদ বরাদ্দ ছিল ৩০৪৮৪৯ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী শ্রী গোয়েল তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন যে জাতীয় শিক্ষা মিশনের জন্য বরাদ্ধ ২০১৮-১৯-এর সংশোধিত বাজেটের ৩২,৩৩৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০১৯-২০-র বাজেটে ৩৮,৫৭২ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, সুসংহত শিশু বিকাশ কর্মসূচির (আইসিডিএস) জন্যও বরাদ্দ ২০১৮-১৯-এর সংশোধিত বাজেটের ২৩,৩৫৭ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০১৯-২০-তে ২৭,৫৮৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তপশিলি জাতি এবং উপজাতিদের উন্নয়নের জন্যও বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০১৮-১৯-এর বাজেটে তপশিলি জাতির জন্য বরাদ্দ ছিল ৫৬৬১৯ কোটি টাকা যা সংশোধিত বাজেটে বাড়িয়ে ৬২৪৭৪ কোটি টাকা করা হয়েছিল। ২০১৯-২০-র বাজেটে এই পরিমাণ বাড়িয়ে ৭৬৮০১ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৩৫.৬ শতাংশ বেশি। তপশিলি উপজাতির ক্ষেত্রেও বরাদ্দ ২০১৮-১৯-এর ৩৯,১৩৫ কোটি টাকা থেকে ২৮ শতাংশ বাড়িয়ে ২০১৯-২০-তে ৫০,০৮৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

বিলগ্নিকরণ বাবদ আয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা এ বছরে ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সরকার আশাবাদী। ২০১৯-২০-র বাজেটে এই ক্ষেত্রে ৯০ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী শ্রী গোয়েল তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন যে সারা দেশের ৫৭টি কেন্দ্রীয় মালিকানাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মোট ১৩ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। ২০১৭-১৮-য় সরকার ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ বিলগ্নিকরণ থেকে সংগ্রহ করেছে।

মধ্যবর্তী আর্থিক নীতি তথা আর্থিক নীতি-কৌশল বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ঋণ নয়, এই ধরণের মূলধন সংগ্রহের পরিমাণ ২০১৮-১৯-এর সংশোধিত পরিমাণের থেকে ৯৩৫৩ কোটি টাকা বেড়ে ২০১৯-২০-র বাজেটে ১০২৫০৮ কোটি টাকা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই খাতে বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিলগ্নিকরণ বাবদ ৯০ হাজার কোটি টাকা (২০১৮-১৯-এর সংশোধিত বাজেটে ৮০ হাজার কোটি টাকা) প্রাপ্তিকে দেখানো হয়েছে। ২০১৯-২০-তে মোট ঋণ গ্রহণের পরিমাণ প্রায় ১১ শতাংশ বেড়ে ৭০৩৯৯৯ কোটি টাকা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৮-১৯-এ এই পরিমাণ ছিল ৬৩৪৩৯৮ কোটি টাকা।

গত বছর সরকার আর্থিক সিকিউরিটির লেনদেনের ক্ষেত্রে আরোপিত এবং সংগৃহীত স্ট্যাম্প ডিউটির জন্য সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এবারের বাজেট পেশ করে শ্রী গোয়েল তাঁর বক্তৃতায় বলেন, অর্থ বিলের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনীগুলি আনা হবে। নতুন এই সংশোধনীতে একটি লেনদেনের জন্য একবার স্ট্যাম্প ডিউটি ধার্য করা এবং তা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সংগ্রহ করার প্রস্তাব থাকছে। এইভাবে সংগৃহীত স্ট্যাম্প ডিউটি কোন অঞ্চলের গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত হয়েছে তার ভিত্তিতে রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া হবে।

আর্থিক সংহতির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে শ্রী গোয়েল তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন, আমরা ২০২০-২১ নাগাদ রাজকোষ ঘাটতিকে ৩ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার পথে এগিয়ে চলেছি। সরকার এখন থেকে আর্থিক ঘাটতি সংহতকরণের পাশাপাশি, ঋণ সংহতকরণের ওপর জোর দেবে। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ভারতের ঋণ ও জাতীয় আয়ের অনুপাত ছিল ৪৬.৫ শতাংশ। এফআরবিএম আইনে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের মধ্যে ঋণ ও জাতীয় আয়ের অনুপাতকে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিচের টেবিলে ২০১৮-১৯-এর সংশোধিত বাজেট এবং ২০১৯-২০-র প্রস্তাবিত বাজেটের হিসাব, অন্যদিকে, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২-এর অনুমানের একটি ছবি দেওয়া হয়েছে।

আর্থিক সূচক – জাতীয় আয়ের শতকরা হারের ভিত্তিতে পরিবর্তনশীল লক্ষ্যমাত্রা

 

সংশোধিত বাজেট

বাজেট প্রস্তাব

(অনুমান)

২০১৮-১৯

২০১৯-২০

২০২০-২১

২০২১-২২

রাজকোষ ঘাটতি

৩.৪

৩.৪

৩.০

৩.০

রাজস্ব ঘাটতি

২.২

২.২

১.৭

১.৫

প্রাথমিক ঘাটতি

০.২

০.২

০.০

০.০

মোট কর রাজস্ব

১১.৯

১২.১

১২.১

১২.২

কর নয়, এমন রাজস্ব

১.৩

১.৩

১.৩

১.৩

কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণ

৪৮.৯

৪৭.৩

৪৫.৪

৪৩.৪

 

(সূত্র : মধ্যবর্তী আর্থিক নীতি তথা আর্থিক নীতি-কৌশল বিবৃতি)

 

CG/PB/DM


(Release ID: 1562264)
Read this release in: English