প্রতিরক্ষামন্ত্রক

বর্ষশেষ পর্যালোচনা – ২০১৮ : প্রতিরক্ষা মন্ত্রক

Posted On: 07 JAN 2019 6:24PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৭ জানুয়ারি, ২০১

 

২০১৮ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে এক ঘটনাবহুল বর্ষ। সরকার উত্তর প্রদেশ ও তামিলনাডু-তে একটি করে প্রতিরক্ষা করিডর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সাজ-সরঞ্জাম নির্মাণ ক্ষেত্রে ভারতকে স্বনির্ভর করে তুলতে এই উৎপাদন কেন্দ্র সুদূরপ্রসারী ভূমিকা নেবে। মহিলাদের ক্ষমতায়নের দিক থেকেও বিগত বছরটি এক মাইলফলক হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ভারতীয় নৌ-বাহিনীর জলযান তারিণীর সাহায্যে মহিলা নাবিকরা বিশ্ব পরিক্রমা করে দেশে ফিরে আসে। উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশ, মণিপুর, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশে সাহসী এই মহিলা নাবিকরা সাত সমুদ্র জয় করে বিশ্বে ভারতের গৌরব বৃদ্ধি করেছে।

 

তামিলনাডুর চেন্নাইয়ে গত ১১ – ১৪ এপ্রিল দশম দ্বিবার্ষিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী সাফল্যের সঙ্গে আয়োজিত হয়। প্রধানমন্ত্রী গত ১২ এপ্রিল প্রদর্শনীর সূচনা করেন। এবারের প্রদর্শনীর মূল বিষয় ছিল – ভারত : এক উদীয়মান প্রতিরক্ষা সাজ-সরঞ্জাম উৎপাদন কেন্দ্র। ভারত বিশ্বের হাতে গোণা কয়েকটি দেশের সঙ্গে এক সারিতে উঠে এসেছে, যারা সেনা যুদ্ধ বিমানে আকাশপথে জ্বালানি ভরার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। হাল্কা ওজনের যুদ্ধ বিমান তেজস - এ মাঝ আকাশে জ্বালানি ভরা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন গত ২৭ নভেম্বর প্রতিরক্ষা জ্ঞান শক্তি মিশনের সূচনা করেন। এই মিশনের উদ্দেশ্য হ’ল – প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতকে আত্মনির্ভর করে তুলতে দেশেই মেধা-সম্পত্তির বিকাশে বৈদেশিক উৎস থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তর।

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী যোধপুর বায়ুসেনা ঘাঁটিতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের যৌথ সম্মেলন এবং ‘পরাক্রম পর্ব’ কর্মসূচির সূচনা করেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সেনাবাহিনীর সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে তিন বাহিনীর উপ-প্রধানদের আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পাঁচ গুণ বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকা করেছে। বিদেশ মন্ত্রী শ্রীমতী সুষমা স্বরাজ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন গত ৬ই সেপ্টেম্বর নতুন দিল্লিতে ভারত-মার্কিন মন্ত্রিপর্যায়ের ২ + ২ আলোচনায় অংশ নেন। মার্কিন বিদেশ সচিব মিঃ মাইকেল পম্পিও এবং প্রতিরক্ষা সচিব মিঃ জেমস্‌ ম্যাটিজ আলোচনায় অংশ নেন।

 

দেশ যখনই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, সেনাবাহিনী তখনই দেশবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে যাবতীয় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় বিগত বছরেও সেনাবাহিনী মানবিক সহায়তা ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় তিতলি, কেরলের বন্যা, ঘূর্ণিঝড় গজ সহ একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাহিনী জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করেছে।

 

প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তর – ভারত সরকার উত্তর প্রদেশ ও তামিলনাডু’তে একটি করে প্রতিরক্ষা করিডর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও, গত ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তর প্রদেশ বিনিয়োগকারী সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বুন্দেখন্ডে এ ধরণের আরও একটি করিডর গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেন। তামিলনাডুর চেন্নাইতে গত ১১ – ১৪ এপ্রিল দশম প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ১২ এপ্রিল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এই প্রথম ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন সক্ষমতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হয়।

 

স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া এবং অটল উদ্ভাবন মিশনের সহযোগিতায় প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তর প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উৎকর্ষতার জন্য উদ্ভাবন বিষয়ক একটি প্রকল্প শুরু করেছে। উদ্দেশ্য – প্রতিরক্ষা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত সমস্যাগুলির সমাধান করা, প্রতিরক্ষা বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা কমানো। এছাড়াও, দপ্তরে একটি প্রতিরক্ষা বিনিয়োগকারী সেল গঠন করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা উৎপাদন সম্পর্কিত যে কোনও বিষয়ে তথ্য প্রদানের জন্য এই বিভাগটি একক সমাধান কেন্দ্র হিসাবে কাজ করবে। এমনকি, পৃথক পৃথক বিষয়ে তথ্য প্রদানের জন্য সতন্ত্র নোডাল আধিকারিক নিয়োগ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও ভারতীয় বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রতিরক্ষা সাজ-সরঞ্জাম উৎপাদনের জন্য গত জানুয়ারি মাসে একটি নতুন সরলীকৃত প্রণালী শুরু করা হয়েছে। হিন্দুস্থান অ্যারোনোটিক্স লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানুয়ারি মাসে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধ বিমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পরীক্ষা সাফল্যের সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে। মাঝ আকাশে ২০ মিনিট ধরে এই পরীক্ষা চালানো হয়। মাঝগাওঁ ডক শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের পক্ষ থেকে স্ক্ররপিন শ্রেণীর তৃতীয় ডুবো জাহাজ ‘করঞ্জ’ – এর সূচনা হয়।

 

ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থাগুলি থেকে ৭ লক্ষ ৪৪ হাজার অ্যাসল্ট রাইফেল, ৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ক্লোজ কোয়াটার কার্বাইন এবং ৪১ হাজার হাল্কা ওজনের মেশিন গান সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কাছ থেকে ২৫ শতাংশ এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থাগুলি থেকে ৭ শতাংশ হারে ঐ সমস্ত সামগ্রী সংগ্রহ করা হবে। প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির উৎপাদন মূল্য গত অর্থবর্ষে ৫৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা থেকে ৮.২১ শতাংশ বেড়ে ২০১৭ – ১৮’তে ৫৮ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তর এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলিতে এক সুদৃঢ়, মজবুত ও নমনীয় সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এক সুসংবদ্ধ সাইবার নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের চাহিদাগুলি পূরণে ভারত’কে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে গত ৪ঠা আগস্ট ব্যাঙ্গালুরু’তে ডিফেন্স ইন্ডিয়া স্টার্ট আপ চ্যালেঞ্জ শীর্ষক এক কর্মসূচির সূচনা করেন। প্রতিরক্ষা সাজ-সরঞ্জাম রপ্তানি বৃদ্ধিতে দপ্তর গত বছরের অক্টোবর মাসে একটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে। একইভাবে, প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও সরল করে তুলতে দপ্তর বর্তমানে চালু আদর্শ কার্যসম্পাদন প্রণালীতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করেছে। এর ফলে, প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক লেনদেনের অনুকূল পরিবেশ লক্ষ্যণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

ভারতীয় সেনাবাহিনী

 

বহু বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সেনাবাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন অভিযান ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ফলে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এবং রাজ্যের অভ্যন্তরে ছায়াযুদ্ধ এক প্রকার বন্ধ করা গেছে। কাশ্মীর উপত্যকায় স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রেখে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে নিরন্তর কাজ করে চলেছে।

 

ভারত – মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে এবং জঙ্গী দমন করতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর নাগরিক-বান্ধব প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সেনাবাহিনীর অবস্থান আরও মজবুত হয়েছে। সেই সঙ্গে, নিরাপত্তা ও স্থিতাবস্থা জোরদার হয়েছে।

 

২০১৮ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী মিত্র দেশগুলির সেনাবাহিনীর সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও কৌশলগত অভিযান পরিচালন ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করে তুলতে একাধিক যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের সন্ত্রাস ও বৈরিতা দমন সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। মালয়েশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যৌথ মহড়া হয়েছে। সেদেশের ঘন অরণ্য অঞ্চল এলাকায় এই মহড়া পরিচালিত হয়। প্রতিবেশী দেশ নেপাল সেনাবাহিনীর সঙ্গেও উত্তরাখন্ডের পিথোরাগড়ে পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রাস দমনের ওপর জোর দিয়ে যৌথ মহড়া পরিচালিত হয়েছে। ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ‘মৈত্রী’ যৌথ মহড়ায় বৈরিতা দমন ও জঙ্গী কার্যকলাপ রোধের কলাকৌশল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অনুশীলন পরিচালিত হয়।

 

ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দু’সপ্তাহ ধরে ‘যুদ্ধাভাস’ যৌথ মহড়া উত্তরাখন্ডে আয়োজিত হয়। এই মহড়ায় দুই সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদার আধিকারিকরা সন্ত্রাস ও বৈরিতা দমনে নিজেদের কলাকৌশল আদান-প্রদান করে। একইভাবে, ভারত ও তাজিকিস্তানের মধ্যে যৌথ মহড়ায় শহরাঞ্চলে যে কোনও ধরণের বড় বিপদ বা দুর্যোগ প্রতিরোধে দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যথোপযুক্ত কৌশল গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়। বিমস্টেক গোষ্টীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গেও সেনা প্রশিক্ষণ নিয়ে মহড়া পরিচালিত হয়। এছাড়াও, ভারত-জাপান যৌথ মহড়া এবং ভারত-রাশিয়া যৌথ মহড়া আয়োজিত হয়েছে।

 

মিত্র দেশগুলির সেনা আধিকারিকদের প্রশিক্ষণদান কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমি-তে আফগান সেনা ও বিমানবাহিনীর মহিলা আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ছিল – দৈহিক কসরত, অস্ত্র চালনা, আকার-ইঙ্গিতে যোগাযোগ স্থাপন, নেতৃত্বদানের ক্ষমতার বিকাশ প্রভৃতি। জঙ্গী ও শত্রু দমনের মতো বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারত ও চিনের মধ্যে সপ্তম পর্যায়ের হ্যান্ড-ইন-হ্যান্ড মহড়া আয়োজিত হয়েছে।

 

বন্যা, ভূমিধ্বস, ঘুর্ণিঝড় প্রভৃতির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে প্রয়োজন-ভিত্তিতে সেনা মোতায়েন করেছে।

 

কেরলের ভয়াবহ বন্যায় সেনাবাহিনী ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এই কাজে ৬০টি নৌকা, জীবনদায়ী ১০০টি জ্যাকেট সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও, বহু দূরবর্তী ও প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ১৩টি অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়।

 

ক্রীড়া ক্ষেত্রেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাফল্য বরাবরের মতো এ বছরেও অক্ষুণ্ন রয়েছে। চীনে আয়োজিত এশিয়ান ড্রাগন বোট চ্যাম্পিয়নশিপে সেনাবাহিনীর নায়েব সুবেদার সুরজ সিং নেগি ১০ মিটার X ৫০০ মিটার ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক পান। আর্জেন্টিনায় আয়োজিত যুব অলিম্পিক গেমস্‌ - এ পুণে আর্মি স্পোর্টস ইন্সটিটিউটে প্রশিক্ষিত জেরেমি লালরিনুগা ৬২ কিলোগ্রাম বিভাগে মোট ২৭৪ কিলোগ্রাম ভারোত্তলন করে দেশকে প্রথম সোনা এনে দেন। জুনিয়র এশিয়ান অ্যাথলেটিক্সেও ৫ হাজার মিটার দৌড়ে মাদ্রাজ ইঞ্জিনিয়ার্স গ্রুপে অজিত কুমার স্বর্ণ পদক পান।

 

সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি শ্রী রাম নাথ কোবিন্দ গত ১০ মে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু যুদ্ধ ক্ষেত্র সিয়াচেন পরিদর্শনে যান। সিয়াচেন বেস ক্যাম্পে মোতায়েন সেনাদের চরম প্রতিকূল আবহাওয়ায় নিজেদেরকে মানিয়ে নিয়ে দেশের স্বার্থ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের অকুন্ঠ প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি।

 

অরুণাচল প্রদেশে শিলা গিরিখাদের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাপক তুষারপাতের ফলে স্থানীয় মানুষ সহ বহু পর্যটক ও তাঁদের ৩২০টি গাড়ি আটকে পড়ে। পারদ শূন্যাঙ্কের নীচে পৌঁছে যাওয়ায় পর্যটকদের জটিল পরিস্থিতি থেকে সেনাবাহিনী তাঁদের নিরাপদে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

 

মাতৃভূমির সুরক্ষায় শহীদ সেনানীদের আত্মত্যাগ ও দৃঢ় সংকল্পকে স্মরণীয় করে রাখতে পরাক্রম পর্ব আয়োজন করা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন নতুন দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে পরাক্রম পর্ব আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা করেন। সাড়া দেশ জুড়ে এই কর্মসূচি উদযাপিত হয়। সেনাবাহিনী ছাড়াও অসামরিক ব্যক্তি, এনসিসি ক্যাডেট এবং বিদ্যালয় পড়ুয়ারা এতে অংশ নেন।

 

ভারতীয় নৌ-বাহিনী

 

নৌ-বাহিনী পশ্চিমাঞ্চলীয় ও পূর্বাঞ্চলীয় শাখা বিদেশে একাধিক নৌ-মহড়ায় সামিল হয়। পশ্চিমাঞ্চলীয় শাখার মুম্বাই ও ত্রিকান্দ জলযান দুটি রিইউনিয়ন আইল্যান্ডে যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকার সিমন্স টাউনে আয়োজিত আইবিএসএএমএআর মহড়ায় পশ্চিমাঞ্চলীয় শাখার কলকাতা ও ত্রিকান্দ জলযান দুটি মহড়ায় ভারতীয় বাহিনীর হয়ে অংশ নেয়।

 

পূর্বাঞ্চলীয় শাখার সেহাদ্রি, কামরোতা ও শক্তি – এই তিনটি যুদ্ধ জাহাজকে গুয়ামে আয়জিত মালাবার যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়। দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু-তে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পূর্বাঞ্চলীয় শাখার জাহাজ আইএনএস রানাকে পাঠানো হয়। এছাড়াও, প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় নৌ-বাহিনীর চারটি জাহাজকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নৌ-বাহিনীকে প্রশিক্ষণের জন্য মোতায়েন করা হয়। এই জাহাজগুলি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাকার্তা ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ সফর করে।

 

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং দেশের স্বার্থ সুরক্ষায় উপকূল এলাকায় নিরন্তর নজরদারির জন্য ভারতীয় নৌ-বাহিনী পর্যায়ক্রমে মিশন-ভিত্তিক সেনা মোতায়েন করে থাকে। মিশন-ভিত্তিক সেনা মোতায়েন কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর নৌ-বাহিনীর জাহাজ ও যুদ্ধ বিমানগুলিকে ওমান উপসাগর, পারস্য উপসাগর, এডেন উপসাগর, লোহিত সাগর এবং ভারত মহাসাগর সন্নিহিত আন্দামান সাগর, মালাক্কা প্রণালী এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মোতায়েত করা হয়ে থাকে।

 

ভারতীয় নৌ-বাহিনী যে কোনও ধরণের সঙ্কটজনক ও যুদ্ধ পরিস্থিতির মোকাবিলায় সর্বদাই প্রস্তুত রয়েছে। এই লক্ষ্যে কমান্ড পর্যায়ে যুদ্ধাভ্যাস পরিচালনা সংক্রান্ত মহড়া গ্রহণ করা হয়। মহড়াগুলিতে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং উপকূল রক্ষী বাহিনী অংশ নেয়।

 

নৌ-বাহিনীর পক্ষ পোর্ট ব্লেয়ারে গত ৬-১৩ মার্চ আয়োজিত ‘মিলন মহড়ায়’ ১৬টি দেশের ৩০ জন প্রতিনিধি এবং ৮টি দেশের ১১টি জাহাজ অংশ নেয়। মাঝ সমুদ্রে অনুসন্ধান ও উদ্ধার তথা যে কোনও ধরণের অভিযান পরিচালনায় বিভিন্ন দেশের নৌ-বাহিনীর মধ্যে আরও ভালো সমন্বয় গড়ে তোলাই এই মহড়া আয়োজনের উদ্দেশ্য। সামরিক ক্ষেত্রে সেশেলস্‌ বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে ভারতের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় ড্রোনিয়ার যুদ্ধ বিমান সরবরাহ করা হয়েছে। এ ধরণের প্রথম যুদ্ধ বিমানটি ২০১৩-তে সেদেশকে সরবরাহ করা হয়েছিল।

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির লক্ষ্যে ভারত সরকারের উদ্যোগের অঙ্গ হিসাবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক ভূখন্ডের সুরক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি রূপায়ণের ব্যাপারে কৌশলগত সমীক্ষা চালানোর ব্যাপারে একটি টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। এতে ডিআরডিও, বার্ক, আইআইটি, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, শিল্প সংস্থা এবং তিন সেনাবাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।

 

ভারতীয় বিমান বাহিনী

 

ভারতীয় বিমানবাহিনীর শক্তি ও সক্ষমতা বাড়াতে রাফালের মতো সর্বাধুনিক বিমান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দৃষ্টিশক্তির বাইরে গিয়েও আকাশ থেকে আকাশে শত্রু পক্ষকে আঘাত হানার ক্ষমতা এই যুদ্ধ বিমানে রয়েছে। বাহিনীতে মাঝারি আকারবিশিষ্ট সব মরশুমে পরিবহণ উপযোগী যুদ্ধ বিমান হারকিউলিস বাহিনীতে সামিল করা হয়েছে। অন্ধকারেও স্পষ্টভাবে দেখার উপযোগী বিশেষ ধরণের চশমা সংগ্রহ করেছে, যা বিমানবাহিনীকে অন্ধকারেও এই যুদ্ধ বিমান চালাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, ভারতীয় বিমান বাহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৫টি চিনুক হেলিকপ্টার সংগ্রহ করবে। ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে এগুলির সরবরাহ শুরু হবে।

 

বিমান বাহিনীর কাছে বর্তমানে যে সমস্ত যুদ্ধ বিমান রয়েছে, সেগুলির মানোন্নয়নের কাজ চলছে। হিন্দুস্থান অ্যারোনোটিক্স লিমিটেড বা হ্যাল মিরাজ – ২০০০ শ্রেণীর যুদ্ধ বিমানগুলির মানোন্নয়নের কাজ করছে। মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমানের কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

 

প্রতি ১০ হাজার ঘন্টা উড়ানের ক্ষেত্রে যুদ্ধ বিমান দুর্ঘটনার সংখ্যা চলতি অর্থবর্ষে লক্ষ্যণীয়ভাবে কমেছে। যুদ্ধ বিমান ওড়ানোর ক্ষেত্রে সুরক্ষামূলক যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তার দরুণ দুর্ঘটনার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে গগণ শক্তি মহড়া পরিচালিত হয়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখার স্বার্থেই এ ধরণের মহড়া পরিচালিত হয়। এছাড়াও, বিমানবাহিনী অন্যান্য দেশের বিমানবাহিনীর সঙ্গে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন মহড়ায় অংশ নিয়ে থাকে।

 

যুদ্ধ বিমানের পাইলট হিসাবে মহিলাদের স্থায়ী-ভিত্তিতে নিয়োগ – ভারতীয় বিমানবাহিনীতে মহিলাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ১৯৯৩ সালে শুরু হলেও তা ছিল স্বল্প মেয়াদের। পাঁচ বছরের মেয়াদে তাঁদের নিয়োগ করা হ’ত। ২০১৬-তে এই প্রথমবার তিন জন মহিলা আধিকারিককে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছে। নবনিযুক্ত এই মহিলা ফাইটারদের দেশের অগ্রবর্তী ঘাঁটিগুলিতে মোতায়েন বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রনগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেফাজতে টাইগার মথ হার্বার্ড ও ডাকোটা শ্রেণীর পুরানো দিনের যুদ্ধ বিমান রয়েছে। এই যুদ্ধ বিমানগুলি বিমানবাহিনীর ঐতিহ্যের স্বরূপ বহন করছে। এ ধরণের যুদ্ধ বিমান ভারতীয় নাগরিকদের বিমান বাহিনীর সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং যুবসম্প্রদায়কে বাহিনীতে সামিল হওয়ার উৎসাহ যোগায়।

 

ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী

 

ভারতীয় উপকূল অঞ্চলে নজরদারির পাশাপাশি, ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজ ও যুদ্ধ বিমানগুলি প্রয়োজনের ভিত্তিতে অন্যান্য দেশের সমুদ্র অঞ্চলে নজরদারি চালিয়ে থাকে। ২০১৮-তে উপকূল রক্ষী বাহিনী মালদ্বীপে নিরাপত্তার স্বার্থে তিনটি যুদ্ধ জাহাজ পাঠায়। বাহিনীর ডোর্নিয়ার শ্রেণীর একটি যুদ্ধ বিমানও এই দ্বীপরাষ্ট্রের উপকূল অঞ্চলে নজরদারির জন্য মোতায়েন করা হয়।

 

ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী নৌ-বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রেখে সমগ্র উপকূল অঞ্চলে নজরদারি ও টহলদারির কাজ করে থাকে। ২০০৯ সাল থেকে উপকূল রক্ষী বাহিনী ১৮০টি মহড়া চালিয়েছে, উদ্দেশ্য ছিল – নজরদারির কাজকর্মে সহযোগিতা বজায় রাখতে আরও দক্ষতা অর্জন, সেই সঙ্গে আদর্শ কর্মপরিচালন প্রণালীর কার্যকর রূপায়ণ।

উপকূলবর্তী এলাকায় নজরদারি ও টহলদারির পাশাপাশি উপকূল রক্ষী বাহিনী ভারতের ৪৬ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকার্য চালিয়ে থাকে। গত বছরের ১৬ – ১৭ই জানুয়ারি চেন্নাইয়ে সমুদ্রে অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংক্রান্ত কর্মশিবিরের আয়োজন করে। শিবিরের পাশাপাশি, মহড়ারও আয়োজন করা হয়। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংক্রান্ত মহড়া আন্দামান ও নিকোবরের পোর্ট ব্লেয়ারে গত ১৯-২১ মার্চ আয়োজিত হয়।

 

গত আগস্ট মাসে কেরলের ভয়াবহ বন্যায় উপকূল রক্ষী বাহিনী এক ব্যাপক বিপর্যয় মোকাবিলা তথা উদ্ধার অভিযান চালায়। এই অভিযানে বাহিনীর ৮টি জাহাজ, ৪টি ড্রোনিয়ার যুদ্ধ বিমা ও ৩টি হেলিকপ্টার কাজে লাগানো হয়। বন্যা বিধ্বস্ত কেরলের বিভিন্ন জেলায় বাহিনীর ৩৬টি বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে মোতায়েন করা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব আরব সাগরে সৃষ্ট সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘লুবান’ – এর প্রেক্ষিতে বাহিনী ব্যাপক ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান গ্রহণ করে। বাহিনীর বিপর্যয় মোকাবিলা দলগুলিকে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে কোচি, জেমিনি প্রভৃতি এলাকায় মোতায়েন করা হয়। এছাড়া, ১২টি জাহাজ, ৫-৬টি ড্রোনিয়ার শ্রেণীর যুদ্ধ বিমান, ২টি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়। মাঝ সমুদ্রে থাকা মৎস্যজীবীদের সতর্ক করে বন্দরে ফিরিয়ে আনতে ঐ হেলিকপ্টারগুলিকে কাজে লাগানো হয়।

 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রেক্ষিতে উপকূল রক্ষী বাহিনীর ৩টি বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে গোপালপুরে এবং ৪টি দলকে পারাদ্বীপে মোতায়েন করা হয়। এছাড়াও, হলদিয়াতে বাহিনীর ৬টি দলকে জরুরি পরিস্থিতিতে কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়। সমুদ্রে যাওয়া মৎস্যজীবীদের নিরাপদে বন্দরে ফিরিয়ে আনতে এবং সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে তাঁদের সচেতন করে তুলতে একাধিক জাহাজ ও কয়েকটি বিমানকে কাজে লাগানোও হয়। একইভাবে, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘গজ’র প্রেক্ষিতে বাহিনী সমুদ্রে যাওয়া মৎস্যজীবীদের নিরাপদে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

 

ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী পেশাদারি কলা-কৌশল বিনিময় এবং ঘনিষ্ঠ বোঝাপড়া গড়ে তুলতে বাংলাদেশ উপকূল রক্ষী বাহিনী, জাপান উপকূল রক্ষী বাহিনী, শ্রীলঙ্কা উপকূল রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়।

 

উপকূল রক্ষী বাহিনীকে ১৬টি অত্যাধুনিক হাল্কা ওজনের হেলিকপ্টার মার্ক – ৩ সরবরাহের জন্য হ্যাল-কে বরাত দেওয়া হয়। ২০২০ – র মার্চ মাস নাগাদ এই ধরণের প্রথম দুটি হেলিকপ্টার বাহিনীর হাতে আসবে বলে স্থির হয়েছে। সর্বাধুধিক প্রযুক্তিতে সুসজ্জিত এই হেলিকপ্টারগুলি নজরদারি, পারস্পরিক সহায়তা এবং যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম।

 

প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও)

 

২০১৮-তে দূরপাল্লার ভূমি থেকে ভূমি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি – ৫ – এর তিনবার পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ক্ষেপণাস্ত্রের ৭টি পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে সবকটি সাফল্য পেয়েছে। ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের মোকাবিলায় ডিআরডিও ইন্টারসেপ্টর বা মাঝ আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি গড়ে তুলেছে। আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য দৃষ্টিগোচরহীন ক্ষেপণাস্ত্র ‘অস্ত্র’ আবিষ্কার করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের সুপারসোনিক ক্ষমতা রয়েছে, যা আকাশে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে তাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলবে। এছাড়াও, সংস্থা আধুনিক প্রজন্মের অ্যান্টি রেডিয়েশন ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবনের লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ১০০ কিলোমিটার দূরের বস্তুকে আঘাত হানতে নিক্ষেপ করা সম্ভব হবে। রাজস্থানের জয়সলমীরের সংস্থা স্ট্যান্ড অফ অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়। অভিযানের সময়ে এমআই – ৩৫ হেলিকপ্টার থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্রের নিক্ষেপণ পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়। আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য স্মার্ট অ্যান্টি এয়ার ফিল্ড উইপন গত মে মাসে পরীক্ষা করে দেখা হয়। এখনও পর্যন্ত এই অস্ত্রটির আটবার পরীক্ষা করা হয়েছে। ডুবো জাহাজ বিধ্বংসী অত্যাধুনিক হাল্কা ওজনবিশিষ্ট টরপেডো জাহাজ, হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধ বিমান থেকে নিক্ষেপ করা সম্ভব। শত্রু পক্ষকে ধরাশায়ী করার ক্ষেত্রে ডিআরডিও-র এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।

 

সড়ক সীমান্ত সংস্থা

 

বর্তমানে সড়ক সীমান্ত সংস্থা ২৭ হাজার ৪০৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ৮৮৩টি সড়ক নির্মাণ বা রক্ষণা-বেক্ষণে কাজ করছে। নির্মীয় মান প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার সড়কের মানোন্নয়ন বা দুই লেনবিশিষ্ট করা হচ্ছে। দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সীমান্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে তুষারাবৃত্ত ১২৬টি সড়ক পরিষ্কারের পাশাপাশি, ৭টি বিমানঘাঁটি রক্ষণা-বেক্ষণের কাজ করে থাকে।

 

এছাড়াও, সীমান্ত সড়ক সংস্থা পার্বত্য এলাকায় সেতু নির্মাণ, সুড়ঙ্গ তৈরি, সড়ক নির্মাণ প্রভৃতি কাজ করে থাকে। ইন্দো-চিন সীমান্ত সড়ক প্রকল্পে সংস্থাটি ২৮টি সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করেছে। সংস্থার কর্মীদের বিভিন্ন তথ্য রেকর্ড রাখার জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপের সাহায্যে দেশের প্রত্যন্ত ও দূরবর্তী অঞ্চলে কর্মরত ৩৬ হাজার কর্মীর তথ্য পাওয়া যাবে। এর ফলে, কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।

 

২০১৮ – ১৯ অর্থবর্ষে আরএমইডিএফ কল্যাণমূলক প্রকল্পের আওতায় ১৪ হাজার ২০৫ জন সুবিধাভোগীকে ৪৬ কোটি ১৬ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বৃত্তি প্রদান কর্মসূচির আওতায় ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৫৪৫ জন সুফলভোগীকে ১৪৬ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা এবং এই প্রকল্পের আওতায় গত মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ হাজার ৫৭২ জন সুবিধাভোগীকে ২৯ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।

 

জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনী (এনসিসি)

 

জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনীর জন্য নতুন যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল, তার উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে এবং এই কর্মসূচির পরিণাম আসতে শুরু হয়েছে। বাহিনীতে ক্যাডেটদের তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও, প্রশিক্ষণের জন্য শিবির আয়োজন করা হয়। এখনও পর্যন্ত ৩৫টি ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ অভিযান; নেতৃত্বদানের ক্ষমতা বিকাশে ৬টি অভিযান; বায়ু সৈনিক অভিযান; স্থল সৈনিক অভিযান; রক ক্লাইম্বিং অভিযান হয়েছে। এছাড়াও, প্রতি বছর বাহিনীর ক্যাডেটরা সাধারণতন্ত্র দিবসে কুচকাওয়াজে অংশ নিয়ে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম সম্পাদনের পাশাপাশি, ক্যাডেটরা বিভিন্ন সমাজ সেবা ও স্বেচ্ছা শ্রম কর্মসূচিতেও অংশ নিয়ে থাকে। এই ধরণের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে – পরিবেশ সুরক্ষা অভিযান, তামাক বিরোধী অভিযান, মিশন ইন্দ্রধনুষের প্রচার ও প্রসার; জাতীয় যোগ দিবস; স্বচ্ছ ভারত অভিযান; সুস্থ ভারত যাত্রা এবং বিপর্যয়ে ত্রাণ সহায়তা।

 

এছাড়াও, ক্যাডেটদের যুব বিনিময় কর্মসূচিতে সামিল করা হয়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে নেপাল, ভুটান, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা সহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ক্যাডেট বিনিময় হয়েছে।

 

 

CG/BD/SB


(Release ID: 1558969) Visitor Counter : 1475


Read this release in: English