মহাকাশদপ্তর
বর্ষশেষ পর্যালোচনা : মহাকাশ দপ্তর
Posted On:
07 JAN 2019 11:33AM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০৩ জানুয়ারী, ২০১৯
মনুষ্য বাহিত যান মহাকাশে পাঠানো নিয়ে ঘোষনা : দেশের ৭২তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাকার থেকে ভাষন দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষনা করেছিলেন যে, ২০২২ সালের মধ্যে ভারত মহাকাশে মনুষ্য বাহিত যান পাঠানোর সংকল্প হাতে নিয়েছে। এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন এ ধরনের মহাকাশ যান পাঠিয়েছে। গত বছর ২৮ অগাস্ট নতুন দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতীয় মহাকাশ গবেষনা সংস্হা বা ইসরোর চেয়ারম্যান ডঃ কে শিভন বলেন, ইসরো একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছে। ইসরো এছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির সন্ধান দিয়েছে, যেমন- ক্রিউ এসকেপ সিস্টেম বা মহাকাশযান থেকে বৈজ্ঞানিকদের নিষ্ক্রমণ, তাপ সুরক্ষা ব্যবস্হা, ভাসমান ব্যবস্হা অব্যহত রাখা প্রভৃতি। এই প্রযুক্তিগুলি সফলভাবে প্রদর্শিত হয় স্পেশ ক্যাপসুল রিকভারি এক্সপেরিমেন্ট বা এসআরই-২০০৭, ক্রিউ মডিউল, অ্যাটমসফারিক রি-এন্ট্রি এক্সপেরিমেন্ট বা কেয়ার-২০১৪-র সাহায্যে।
ইসরোর উৎক্ষেপণ :
ক) ইসরোর পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল তার ৪২তম উৎক্ষেপণে (পিএসএলভি-সি৪০) ৭১০ কেজির কার্টোস্যাট-২ রিমোট সেন্সিং উপগ্রহটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ করে। ৩০টি সহযাত্রী উপগ্রহ নিয়ে সমেত বছর ১২ই জানুয়ারি। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র শার থেকে ঐ উৎক্ষেপণ যানটি সফর শুরু করে। এরমধ্যে ভারতীয় উপগ্রহ ছিল দুটি, বাকি আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রের যে ২৮টি উপগ্রহ ছিল, তার মধ্যে ছিল কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, কোরিয়া, ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপগ্রহ ছিল।
খ) ২০১৮-র ২৯ মার্চ ভারতের জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (জিএসএলভি-এফ০৮) সফলভাবে জিস্যাট-৬এ উপগ্রহটি জিওসিনক্রোনাস ট্রান্সফার কক্ষে উৎক্ষেপণ করে। প্রসঙ্গত, জিস্যাট-৬এ একটি সংযোগমূলক উপগ্রহ যেটি মোবাইল সংযোগ পরিষেবায় সাহায্য করে থাকে।
গ) ২০১৮-র ১২ এপ্রিল ইসরোর পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল পিএসএলভি সি৪১ তার ৪২তম উৎক্ষেপণে ১,৪২৫ কেজির আইআরএনএসএস-২ উপগ্রহটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ করে। এই উপগ্রহটিও শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।
ঘ) ২০১৮-র ১৬ সেপ্টেম্বর সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র শা থেকে পোলার স্যাটেলাইন লঞ্চ ভেহিকল (পিএসএলভি-সি৪২) সফলভাবে উৎক্ষেপণ করে দুটি উপগ্রহ নোভাসার এবং এস১-৪--।
ঙ) ২০১৮-র ২৯ নভেম্বর শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ইসরোর পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (পিএসএলভি-সি৪৩) সফলভাবে ৩১টি উপগ্রহকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে।
চ) জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক থ্রি (জিএসএলভি মার্ক থ্রি-ডি২) তার দ্বিতীয় উন্নয়নমূলক উৎক্ষেপণে জিস্যাট-২৯ সংযোগ বিষয়ক উপগ্রহটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ করে সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র শার থেকে।
ছ) ২০১৮-র ৫ ডিসেম্বর খুব ভোরে ফ্রেঞ্চ গায়ানার মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ইসরোর সবথেকে ভারী এবং প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে উন্নত সংযোগমূলক উপগ্রহ জিস্যাট-১১টি উৎক্ষেপণ করা হয়।
জ) ২০১৮-র ১৯ ডিসেম্বর শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে সংযোগমূলক উপগ্রহ জিস্যাট-৭এ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করে ইসরোর জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (জিএসএলভি এফ২)। ২০১৮র ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা পিএসএলভি মহাকাশ উৎক্ষেপণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কর্মসূচিটি (ষষ্ঠ পর্যায়) অনুমোদন করে। এই কর্মসূচির আওতায় ৩০টি পিএসএলভি উৎক্ষেপণে অর্থ প্রদান করা হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক থ্রি (জিএসএলভি মার্ক৩) মহাকাশ উৎক্ষেপণের ধারাবাহিকতা কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের কাজেও অর্থ মঞ্জুরের বিষয়টি মঞ্জুর করে।
শনি গ্রহের চেয়েও ছোট গ্রহের আবিস্কার :
আমেদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি (পিআরএল)-এর অধ্যাপক অভিজিৎ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদদের একটি দল সূর্যের মতো একটি তারার কাছাকাছি শনি গ্রহের চেয়েও ছোট একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছে। গ্রহটির নামকরণ করা হবে এপিআইসি ২১১৯৪৫২০১বি বা কে২-২৩৬বি। এই আবিস্কারের ফলে আমাদের সৌর জগতের আশেপাশে যেসব তারা রয়েছে এবং তার থেকে দূরে যেসব তারা রয়েছে, তার কাছাকাছি গ্রহের আবিস্কার যেসব দেশ করেছে, তাদের অন্যতম হয়ে গেল ভারত।
মহাশূন্যে যাত্রার জন্য মহাকাশযান থেকে নিষ্ক্রমণের যে ব্যাবস্হা রয়েছে সে সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সফল ভারতের ইসরো :
২০১৮-র ৫ জুলাই এই পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে ভারত। শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষাটি পরিচালনা করা হয়।
উপযুক্ত ভারতীয় শিল্প সংস্হাগুলিকে অভ্যন্তরীণভাবে প্রস্তুত করা লি-আয়ন প্রযুক্তি হস্তান্তর :
ইসরোর একটি বৃহৎ কেন্দ্র- বিক্রম সারাভাই মহাকাশ কেন্দ্র (ভিএসএসসি)-র সাহায্যে উপযুক্ত শিল্প সংস্হাগুলির প্রয়োজনে এই প্রযুক্তি হস্তান্তর করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
জম্মুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসরোর মধ্যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর :
২০১৮-র ১১ অক্টোবর জম্মুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরো এবং ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ বিজ্ঞানকেন্দ্র স্হাপনের ব্যাপারে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করা হয়। অপর একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে ঝাড়খন্ডের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেন্ট্রাল সায়েন্টিফিক ইন্সট্রুমেন্টস অর্গানাইজেশন-এর মধ্যে, যাতে, মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করা যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং ইসরোর মধ্যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর :
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে জরুরী জবাব পাওয়ার জন্য একটি অত্যাধুনিক সুসংহত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ গড়ে তোলার জন্য ২০১৮র ২০ সেপ্টেম্বর নতুন দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং ইসরোর মহাকাশ দপ্তরের মধ্যে একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়।
বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর :
২০১৮-য় ভারত বিভিন্ন বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এই সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর সম্পর্কে জানানো-ও হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ভারত ও তাজিকিস্তানের মধ্যে উন্নয়নের স্বার্থে মহাকাশ প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কিত সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর। ২০১৮-র ৮ অক্টোবর তাজিকিস্তানের দুশানবে-তে সমঝোতাপত্রটি স্বাক্ষরিত হয়।
আর একটি উল্লেখযোগ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে বহির্মহাকাশ অন্বেষণে সহযোগিতা বিষয়ক। উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতি গত বছর যখন ভারত সফরে আসেন, সেইসময় পয়লা অক্টোবর চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, বহির্মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ভারত ও আলজেরিয়ার মধ্যে ২০১৮-র ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তিটির কথাও।
২০১৮-র ১৯ জুলাই নতুন দিল্লিতে ভারত ও ব্রুনেই দারেসসালামের মধ্যে উপগ্রহ এবং মহাকাশযানগুলির টেলিমেট্রি ট্র্যাকিং সম্পর্কিত সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বহির্মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রয়োজনে আরও একটি সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে ২০১৮-র ২৬ জুলাই। ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে মাসকটে বহির্মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রয়োজনে সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ভারতের ইসরো এবং ওমানের মধ্যে। মহাকাশ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং প্রয়োগ ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্যই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। পাশাপাশি, মহাকাশ বিজ্ঞান এবং গ্রহ অন্বেষণ বা মহাকাশ যানের ব্যবহার এবং একইসঙ্গে মহাকাশ প্রযুক্তির প্রয়োগ-ও এই সমঝোতাপত্রের আওতায় এসেছে।
CG/SSS/NS
(Release ID: 1558827)
Visitor Counter : 610