পেট্রোলিয়ামওপ্রাকৃতিকগ্যাসমন্ত্রক
বর্ষশেষ পর্যালোচনা ২০১৮- পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক
Posted On:
13 DEC 2018 6:42PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২০১৮
আর্থিক বিকাশে শক্তিক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার দরুন বিদ্যুতের উপযুক্ত ব্যবহার এবং জলবায়ুর প্রতি সুবিচারের মতো বিষয়ে দ্বৈত উদ্দেশ্য পূরণ করতে দেশের শক্তিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসার বিষয়টিকে সরকার গুরুত্ব দিয়ে আসছে। মন্ত্রক শক্তি ক্ষেত্রে সংস্কার, এই ক্ষেত্রের কার্যসম্পাদন এবং পরিবর্তনের ওপরও জোর দিচ্ছে। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রের সংস্কারের ব্যাপারে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাবের লক্ষে এই উদ্যোগগুলিকে বাস্তবায়িত করতে মন্ত্রক অনুসন্ধান ও উৎপাদন, গ্যাস ও তেল শোধন এবং বিপণন সহ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মত বিষয়গুলিতে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।
তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান তথা উৎপাদন
দেশের তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে অনুসন্ধানমূলক কাজকর্ম তথা উৎপাদন বাড়াতে বিগত এক বছরে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পেট্রোলিয়াম ও হাইড্রোকার্বন ক্ষেত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ নীতি-কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে সরকার একাধিক সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধান ও লাইসেন্স প্রদান নীতি বা ওপেন অ্যাকরেজ লাইসেন্স প্রদান নীতি- এই নীতির আওতায় চিরাচরিত ও অচিরাচরিত হাইড্রোকার্বন সম্পদের উৎপাদন তথা অনুসন্ধানে একক লাইসেন্স প্রদান ব্যবস্হা গ্রহণ করা হয়েছে। হাইড্রোকার্বনের মূল্য নির্ধারণ ও বিপণনে সুবিধা, উপকূলবর্তী ব্লকগুলি থেকে রয়্যালটি হারে হ্রাস সহ বিভিন্ন বিষয়ে একক লাইসেন্স প্রদান ব্যবস্হা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও হাইড্রোকার্বন ব্লক অনুসন্ধানের জন্য সারা বছর জুড়েই ইচ্ছাপত্র জমা দেওয়া যেতে পারে। প্রতি ৬ মাস অন্তর ব্লক হস্তান্তরের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত পয়লা অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের ওপেন অ্যাকরেজ লাইসেন্স প্রদান নীতির আওতায় ৫৯ হাজার ২৮২ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিশিষ্ট ৫৫টি ব্লকের নিলাম সম্পূর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৪টি ব্লকের নিলাম প্রক্রিয়া চলছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আবিস্কৃত ছোট মাপের তেল ও গ্যাস ভান্ডার সংক্রান্ত নীতি- এই নীতির আওতায় জাতীয় তেল সংস্হাগুলির মূল্য নির্ধারণ বর্হিভূত তেল ও গ্যাস ভান্ডারগুলির আগাম মূল্য নির্ধারণের জন্য ২০১৫-র সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা এ ধরণের ৬৯টি তেল ও গ্যাস ভান্ডারের মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব অনুমোদন করে। এই তেল ও গ্যাস ভান্ডারগুলি বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া রাজস্ব হস্তান্তর মডেল অনুসরণ করে পরিচালিত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এই নীতি অনুসরণের ফলে ছোট মাপের তেল ও গ্যাস ভান্ডারগুলির অগ্রগতি দ্রুততর হবে, সেইসঙ্গে তেল ও গ্যাসের উৎপাদনও বাড়বে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ৭ ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এ ধরণের তেল ও গ্যাস ভান্ডার গুলির জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে বরাত প্রক্রিয়া অনুমোদন করে। তৃতীয় পর্যায়ে ৫৯টি ব্লকের বরাত দেওয়া হবে। এই তেল ও গ্যাস ব্লকগুলিতে আনুমানিক ১৯৪.৬৫ মিলিয়ন মেট্রিকটন তেল ও তেলের সমপরিমান গ্যাস সঞ্চিত রয়েছে। এই পর্যায়ে বরাতদান প্রক্রিয়া গত ৯ই আগস্ট শুরু হয়েছে।
জাতীয় ভূকম্পক সমীক্ষা কর্মসূচি- দেশের যে জায়গাগুলিতে এখনও ভূমিকম্প সংক্রান্ত সমীক্ষার কাজ করা হয়নি, সেই সমস্ত জায়গাগুলিতে ২ডি সমীক্ষা পরিচালনার কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৬-র ১২ই অক্টোবর এই কর্মসূচি শুরু হয়। উদ্দেশ্য ছিল, ৪৮২৪৩ লাইন কিলোমিটার অংশে সমীক্ষা পরিচালনা করা। এই কর্মসূচি রূপায়ণে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ২৯৩২ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা। সমীক্ষার কাজ ২০১৯-২০ নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২৮৪৮৫ কিলোমিটার বিস্তৃত অংশের ২ডি ভূমিকম্প সমীক্ষা ও সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে।
হাইড্রোকার্বন সম্পদের পুর্নমূল্যায়ণ- দেশে হাইড্রোকার্বন সম্পদের সম্ভাব্য পরিমাণ অনুসন্ধানের জন্য রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ওএনজিসি, অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড ও অন্যান্য কয়েকটি সংস্হার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বহুপাক্ষিক দল গঠন করা হয়েছে। দেশের ২৬টি পলি মৃত্তিকা সমৃদ্ধ নদী অববাহিকা অঞ্চলে চিরাচরিত হাইড্রোকার্বন সম্পদের পরিমাণ ৪১.৮৭ বিলিয়ন টন। সর্বশেষ সমীক্ষার সময় এই সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৮.০৮ বিলিয়ন টন যা এবার প্রায় ৪৯ শতাংশ বেড়েছে।
প্রাকৃতিক গ্যাস
প্রাকৃতিক গ্যাস গ্রীড- দেশে জ্বালানী প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে এবং গ্যাস ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষে অতিরিক্ত ১৩৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন স্হাপনের কাজ চলছে। সুদীর্ঘ এই গ্যাস পাইপলাইনের মধ্যে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী উর্জা গঙ্গা প্রকল্পের আওতায় (জগদীশপুর- হলদিয়া এবং বোকারো-ধামড়া) পাইপলাইন প্রকল্প। ২৬৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই গ্যাসলাইন প্রকল্পটি রূপায়ণে খরচ ধরা হয়েছে ১২৪৯০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্প খাতে মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৫১৭৬ কোটি টাকা যোগাবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পটি রূপায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৭৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন বসানোর কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। পশ্চিমবঙ্গে বাদে বাকি চারটি রাজ্যে গ্যাস পাইপলাইন বসানোর জন্য ইতিমধ্যেই বরাত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
বারাউনি থেকে গুয়াহাটি পাইপলাইন- উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গ্যাস গ্রীড বা গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দিতে বারাউনি থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত ৭২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এই পাইপলাইনটি বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম ও আসামের ওপর দিয়ে যাবে। গ্যাস পাইপ সংগ্রহ ও তা বসানোর জন্য দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। ২০২১-এর ডিসেম্বর মাস নাগাদ প্রকল্প রূপায়ণের কাজ শুরু হবে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গ্যাস গ্রীড- সিকিম সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যে পাইপলাইনবাহিত গ্যাসের সুবিধা পৌঁছে দিতে ৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস সংস্হার মধ্যে একিট যৌথ উদ্যোগ গঠন করা হয়েছে। উত্তর-পূর্বের সমস্ত রাজ্যে গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দিতে ১৬৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন বসাতে হবে। প্রকল্প রূপায়ণে খরচ ধরা হয়েছে ৯২৬৫ কোটি টাকা।
কোচি-কোট্টানাড-বেঙ্গালোর-ম্যাঙ্গালোর পাইপলাইন (দ্বিতীয় পর্যায়)- রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড বা গেইল কেরালা ও তামিলনাড়ুতে ৮৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন গড়ে তোলার কাজ করছে। এই প্রকল্পখাতে ৫১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। কেরালাতে পাইপলাইন বসানোর কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে, আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ সমগ্র প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তামিলনাড়ুতেও পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
এন্নোর-থিরুভাল্লুল-বেঙ্গালুরু-পুদুচেরি-নাগাপট্টিনম-মাদুরাই-তুতিকোরিন পাইপলাইন- রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্হা ইন্ডিয়ান অয়েল তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটকে ১৩৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প রূপায়ণের কাজ করছে। প্রকল্প রূপায়ণ খাতে খরচ ধরা হয়েছে, ৪৪৯৭ কোটি টাকা। এন্নোর-মানালি এবং রামানাড-তুতিকোরিন অংশ পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে।
গ্যাস গ্রীড গড়ে তোলার লক্ষে অন্যান্য গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পগুলি রূপায়ণের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পগুলির কাজ শেষ করা হচ্ছে।
নগরকেন্দ্রীক গ্যাস বন্টন নেটওয়ার্ক- সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রাকৃতিক গ্যাসের যোগান আরও বাড়াতে দেশজুড়ে নগরকেন্দ্রিক গ্যাস বন্টন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই নেটওয়ার্কের ফলে, পরিবার, শিল্পসংস্হা এবং পরিবহন খাতে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্ন জ্বালানীর যোগান সুনিশ্চিত হবে। ২০১৭ পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যার কেবল ১৯ শতাংশ মানুষ নগরকেন্দ্রিক গ্যাস বন্টন ব্যবস্হার সুযোগ-সুবিধা পেতেন। নগরকেন্দ্রিক গ্যাস বন্টন ব্যবস্হার সুযোগ-সুবিধা আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে গত এপ্রিল মাসে ২২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১৭৪টি জেলায় নবম পর্যায়ে নগেরকেন্দ্রিক গ্যাস বন্টন প্রক্রিয়ার বরাত দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গত ২২ নভেম্বর ১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১২৯টি জেলার ৬১টি ভৌগলিক অঞ্চলের নগরকেন্দ্রিক গ্যাস বন্টন ব্যবস্হার শিলান্যাস করেন। একইসঙ্গে তিনি আরও ৫০টি ভৌগলিক অঞ্চলের জন্য ১০ পর্যায়ের নগরকেন্দ্রিক গ্যাস বন্টন প্রক্রিয়ার বরাত দানেরও সূচনা করেন।
টার্মিনালগুলিত তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি গ্যাসীয়করণ- দেশে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে একাধিক সংস্হার বিশ্ব গ্যাস বাজার থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে থাকে। আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস চারটি এলএনজি টার্মিনালে নিয়ে এসে জমা করা হয়। এই টার্মিনালগুলির বার্ষিক ধারণ ক্ষমতা ২৬.৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মুন্দ্রায় বার্ষিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন সম্পন্ন আরও একটি তরল প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনালের সূচনা করেন। এছাড়াও তামিলনাড়ুর এন্নোরে এবং ওড়িশার ধামড়ায় বার্ষিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন আরও দুটি গ্যাস টার্মিনাল গড়ে তোলা হচ্ছে।
বিপণন
প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা- দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারগুলিকে পরিস্রুত রান্নার গ্যাসের সংযোগ প্রদানের লক্ষে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা শুরু করা হয়। দারিদ্রসীমার নীচে থাকা ৫ কোটি পরিবারকে কোনও অর্থপ্রদান ছাড়ায় গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প রূপায়ণে ১২৮০০ কোটি টাকা বাজেট সংস্হান করা হয়েছে। এই প্রকল্পে তপশিলী জাতি ও উপজাতির মানুষ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সুফলভোগীরা, অন্তদ্বয় অন্ন যোজনার সুবিধাভোগীরা, বনবাসীরা, পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষ বিশেষ উপকৃত হচ্ছেন।
পহল- সুপ্রশাসনিক ব্যবস্হার অঙ্গ হিসাবে সরকার এই যোজনার মাধ্যমে রান্নার গ্যাসের গ্রাহকদেরকে ভর্তুকির মূল্যে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। গত ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচিতে ২৩ কোটি ৮ লক্ষ গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর উদ্যোগের দিক থেকে পহল গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্হান করে নিয়েছে। গ্যাস গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এখনও পর্যন্ত ৯৬,৬২৫ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসাবে জমা পড়েছে। এই কর্মসূচি কার্যকর রূপায়ণের ফলে সরকারের ৫০,০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
তেল বিপণন সংস্হাগুলির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলিকে আরও সুদক্ষ করে তোলা- জ্বালানীর গুণমান ও পরিমান সুনিশ্চিত করে গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়াতে মন্ত্রক সমস্ত বিপণন সংস্হার আঞ্চলিক কার্যালয়গুলিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্হির করে দিয়েছে। উদ্দেশ্য, জ্বালানী লেনদেনের সময় প্রতারণা এড়ানো। গত পয়লা নভেম্বর পর্যন্ত ৪০৩৫৪টি আঞ্চলিক কার্যালয়কে কম্পিউটার চালিত করে কাজকর্ম সম্পাদনে সুদক্ষ করে তোলা হয়েছে।
ডিজিটাল পেমেন্টে প্রসার ঘটানো- খুচরো তেল বিক্রয় কেন্দ্রগুলিতে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন পরিকাঠামোর লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি করা হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৫৩,৭৭১টি পেট্রোলপাম্পে ৯২৪০৮টি ই-ওয়ালেট সুবিধা সহ ১০০৮৭৬টি পয়েন্ট অফ সেলিং বা পিওএস সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে। সমস্ত এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটার এবং নগরকেন্দ্রিক গ্যাস বন্টন সংস্হাগুলিকে ভীম ইউপিআই অ্যাপে যুক্ত করা হয়েছে।
পেট্রোলপাম্পের সংখ্যা বাড়াতে বিজ্ঞাপন প্রকাশ- খুচরো বিক্রয়কেন্দ্র বা পেট্রোলপাম্পের সংখ্যা বাড়িয়ে দেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানী চাহিদা পূরণে এবং গ্রাহকদের সুবিধার্থে তেল বিপণন সংস্হাগুলি গ্রামাঞ্চল, প্রত্যন্ত ও দূরবর্তী অঞ্চল সহ অন্যান্য জায়গায় নতুন পেট্রোলপাম্প চালুর জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। আশা করা হচ্ছে এ ধরনের খুচরো বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্হানের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।
তৈল শোধনাগার- বর্তমানে দেশে মোট ২৩টি শোধনাগার চালু রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্হার, তিনটি বেসরকারি সংস্হার এবং বাকি ২টি যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা। এই শোধনাগারগুলির বার্ষিক শোধন ক্ষমতা ২৪৭.৫৬৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। উল্লেখ করা যেতে পারে, তেল শোধন ক্ষমতার দিকে থেকে দেশ এখন নিজের চাহিদাই মেটাচ্ছে না, সেইসঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমানে পেট্রোলজাত সামগ্রী রপ্তানীও করছে।
মোটরগাড়ি জ্বালানী পরিকল্পনা ও নীতি সমূহ
দেশে ভারত স্টেজ-৪ এবং স্টেজ-৬ শ্রেণীর জ্বালানীর ব্যবহার শুরু করা হচ্ছে- সারা দেশে গত বছরের পয়লা এপ্রিল থেকে পর্যায়ক্রমে ভারত স্টেজ-৪ শ্রেণীর মোটরগাড়ি জ্বালানীর ব্যবহার শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, আগামী ২০২০ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে দেশে ভারত স্টেজ-৬ শ্রেণীর মোটরগাড়ি জ্বালানীর ব্যবহার শুরু করা হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, দিল্লীতে দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক হয়ে উঠায় সরকার জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে গত পয়লা এপ্রিল থেকেই ভারত স্টেজ-৬ শ্রেণীর মোটরগাড়ি জ্বালানী সরবরাহ শুরু করেছে।
ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল কর্মসূচি- ইথানল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে সরকার ২০১৮-১৯ থেকেই ইথানল সংগ্রহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লাভজনক মূল্য স্হির করেছে। এছাড়াও, সরকার নষ্ট হয়ে যাওয়া খাদ্যশস্য থেকে ইথানল উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে। এই পদ্ধতিতে ইথানল উৎপাদনে উৎসাহিত করতে তেল বিপণন সংস্হাগুলি লিটার প্রতি ৪৭ টাকা ১৩ পয়সা উৎসাহ ভাতা দিচ্ছে।
খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর ইথানল উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে চিনিকলগুলিকে আর্থিক সাহায্যদানের লক্ষে একটি প্রকল্প শুরু করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুদ ছাড় বা ভর্তুকি হিসাবে ১৩৩২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
বায়ো-ডিজেল কর্মসূচি- তেল বিপণন সংস্হাগুলি চলতি বছরের মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৮ কোটি ১৪ লক্ষ লিটার বায়ো-ডিজেল সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তেল বিপণন সংস্হাগুলি ৭ কোটি ৯৭ লক্ষ লিটার বায়ো-ডিজেল সংগ্রহ করেছে।
দ্বিতীয় প্রজন্মের ইথানল- ইথানল উৎপাদনের বিকল্প পদ্ধতি হিসাব তেল বিপণন সংস্হাগুলি দ্বিতীয় প্রজন্মের ইথানল উৎপাদনের জন্য ১২টি জৈব তেল পরিশোধনাগার স্হাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে খরচ ধরা হয়েছে, ১০ হাজার কোটি টাকা।
জৈব জ্বালানী সংক্রান্ত জাতীয় নীতি, ২০১৮- দেশে জৈব জ্বালানী কর্মসূচির প্রসারে এবং এ ধরনের জ্বালানীর ব্যবহার বাড়াতে সরকার গত জুন মাসে জৈব জ্বালানী সংক্রান্ত জাতীয় নীতি প্রকাশ করেছে। এই নীতিতে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য থেকে ইথানল উৎপাদন করে তা পেট্রোলে মেশানোর সংস্হান রয়েছে। জৈব জ্বালানী উৎপাদনের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখার জন্য জাতীয় জৈব জ্বালানী সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আধুনিক মোটরগাড়ি জ্বালানী উদ্যোগে ভারতের অংশগ্রহণ- আন্তর্জাতিক শক্তিসংস্হার আওতায় এক প্রযুক্তিগত সহযোগিতামূলক কর্মসূচি যা আধুনিক মোটরগাড়ি জ্বালানী উদ্যোগ নামে পরিচিত, ভারত সেখানে সদস্য হিসাবে গত মে মাসে যোগদান করেছে। আন্তর্জাতিক স্তরের এই মঞ্চটির কাজ হল, আধুনিক মোটরগাড়ি জ্বালানী বা বিকল্প জ্বালানী উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
অয়েল বিদেশ লিমিটেড, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন সহ আরও কয়েকটি সংস্হা মিলে একটি ভারতীয় সংগঠন গঠন করা হয়েছে। এই সংগঠনটি আবুধাবির লোয়ার্ জাকুম তৈল ভান্ডারে ১০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করেছে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অঙ্গ হিসাবে মাকিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসবহনকারী একটি বিশালাকায় জলযান গত ৩০ মার্চ ধাবলে এসে পৌঁছায়।
ওমানের মুখাইজনা তৈল ভান্ডারে ১৭ শতাংশ শেয়ার ইন্ডিয়া অয়েল গত এপ্রিল মাসে অধিগ্রহন করেছে। এছাড়াও রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসবহনকারী একটি বিশালাকায় জলযান গত চৌঠা জুন দাহেজ বন্দরে এসে পৌঁছায়।
গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিসমূহ
ভারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতে যৌথভাবে একটি তৈলশোধনাগার ও পেট্রো-রসায়ন কমপ্লেক্স গড়ে তোলার জন্য সৌদি আরবের সংস্হার সঙ্গে মৌ স্বাক্ষর করেছে। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিক্ষেত্রে কৌশলগত অংশিদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য মন্ত্রী পর্যায়ের আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত ৭ই এপ্রিল নতুন দিল্লীতে ভারত থেকে নেপালে পেট্রোজাত পণ্য সরবরাহের জন্য পাইপলাইন প্রকল্পের সূচনা করেছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্পের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বচ্ছ ভারত অভিযান- কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক ২০১৭-১৮-র সর্বশ্রেষ্ঠ স্বচ্ছতা কর্মপরিস্পনার জন্য স্বচ্ছ ভারত জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। গত দোসরা অক্টোবর গান্ধীজয়ন্তীতে স্বচ্ছ ভারত জাতীয় পুরস্কারপ্রদান অনুষ্ঠানে মন্ত্রককে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
মহাত্মা গান্ধীর জন্মের স্বার্ধ-শতবাষিকী উদযাপনের অঙ্গ হিসাবে মন্ত্রক গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে দোসরা অক্টোবর পর্যন্ত স্বচ্ছতাই সেবা কর্মসচির আয়োজন করে। এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বেচ্ছায় শ্রমদানের পাশাপাশি বণ্যাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বচ্ছতার মনোভাব গড়ে তুলতে প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটাজাত সামগ্র্রীর ব্যবহার, স্বাস্হ্য শিবির প্রভৃতির আয়োজন করা হয়।
SSS/BD/NS
(Release ID: 1555871)
Visitor Counter : 911