প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

নতুন দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক স্যানিটেশন কনভেনশনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 04 OCT 2018 1:33PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২ অক্টোবর,২০১

 

মাননীয় রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গ্যুতারেস, পরিচ্ছন্নতার সংকল্প নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে সমাগত মাননীয় মন্ত্রিগণ, আমার মন্ত্রী পরিষদের সহযোগী মাননীয় সুষমা স্বরাজ, ঊমা ভারতী, হরদীপ পুরী, রমেশজি, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সমাগত বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ, ভাই ও বোনেরা।

 

ভারতে পূজনীয় বাপুর এই মাটিতে আপনাদের সকলকে হৃদয় থেকে অনেক অনেক স্বাগত জানাই। ১২৫ কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে নমস্কার। পরিচ্ছন্নতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রত্যেকের দায়বদ্ধতাকে সামগ্রিকভাবে মানবজাতির সামনে তুলে ধরা, প্রেরণা যোগানোর জন্য আপনাদের মতো বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং পরিচ্ছন্নতা ও ধারাবাহিক উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত থাকতে পারা, আমার কাছে অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়।

 

মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক স্যানিটেশন কনভেনশনে অংশগ্রহণ করে প্রত্যেকে নিজের দেশের অভিজ্ঞতাকে বিশ্ব নেতৃত্বের সামনে তুলে ধরা এক প্রকার এই শীর্ষ সম্মেলনে নিজেদের বক্তব্য এবং দূরদৃষ্টিতে সমৃদ্ধ করার জন্য আপনাদের প্রত্যেককে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।

 

আজ যখন বিশ্ব অনেক সমস্যার সম্মুখীন, তখন মানবতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কটের মোকাবিলায় এতগুলি দেশের প্রতিনিধির একত্রিত হওয়া এবং এই বিষয়ে পারস্পরিক দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা একটি অভূতপূর্ব ঘটনা।

 

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজকের এই আয়োজন, গ্লোবাল স্যানিটেশনের লক্ষ্যে আপনারা সবাই যে মূল্যবান সময় দিয়েছেন, তা আগামীদিনে মানবকল্যাণের সঙ্গে যুক্ত একটি মাইলফলক হিসাবে পরিগণিত হবে।

 

বন্ধুগণ, আজই আমরা মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবর্ষে গোটা বিশ্বে তাঁর জন্মদিন পালনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের সকলের পক্ষ থেকে পূজনীয় বাপুকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। পূজ্য বাপুর স্বপ্ন ছিল – পরিচ্ছন্ন ভারত। আজ সেই পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে যুক্ত সারা পৃথিবীর মহান ব্যক্তিদের স্বাগত জানানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আর এভাবেই শ্রদ্ধাঞ্জলির পাশাপাশি তাঁকে কার্যাঞ্জলি প্রদানেরও সৌভাগ্য হয়েছে।

 

আপনারা সবাই একদিন বাপুজির আশ্রমে কাটিয়েছেন। সাবরমতীর তটে অবস্থিত ঐ আশ্রম থেকেই তিনি দেশকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য তৈরি করেছিলেন। আপনারা সেখানে থেকে সেখানকার সহজ-সরল জীবনকে দেখেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই অভিজ্ঞতা পরিচ্ছন্নতার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সকলকে নতুন প্রাণশক্তি, নতুন চেতনা, নতুন প্রেরণা দিয়েছে।

 

একটু আগেই এখানে কয়েকজন স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী ব্যক্তিকে সম্মান ও পুরস্কার প্রদানের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সমস্ত পুরস্কার বিজেতাদের আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। বিশেষ করে, পূজনীয় আম্মাকে প্রণাম জানি। কারণ, যখন থেকে আমরা এই কাজ শুরু করেছি, পূজনীয়া আম্মা সক্রিয়ভাবে এই অভিযানটিকে একরকম নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এমনই অনেক অগণিত মানুষ এই মণীষীদের জীবন থেকে প্রেরণা পেয়ে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানকে জনআন্দোলনে পরিণত করেছেন। একটি বড় শক্তি হিসাবে গড়ে তুলেছেন। আমি এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁদের সকলকে প্রণাম জানাই।

 

বন্ধুগণ, স্বাধীনতার আন্দোলনের সময়ে গান্ধীজি একবার বলেছিলেন যে, আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন, স্বচ্ছতা এবং স্বাধীনতার মধ্যে কোনটা আগে বেছে নিতে চাই, তা হলে আমি স্বচ্ছতাকেই অগ্রাধিকার দেব। গান্ধীজি স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কিন্তু পরিচ্ছন্নতাকে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের চেয়েও অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।

 

তিনি ১৯৪৫ সালে নিজের ভাবনা-চিন্তাকে ভাষায় প্রকাশ করেছিলেন, আর তাঁর প্রকাশিত সংস্করণকে গঠনমূলক সংকল্প রূপে প্রস্তুত করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর সেই সংকল্পে পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। প্রশ্ন উঠতে পারে যে, গান্ধীজি বারবার পরিচ্ছন্নতার ওপর এত কেন জোর দিচ্ছিলেন? শুধু কী এজন্য যে, অপরিচ্ছন্নতা অসুস্থতাকে ডেকে আনে! আমার মনে বলে, না। তাঁর উদ্দেশ্য এত সীমিত ছিল না।

 

বন্ধুগণ, আপনারা যদি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাঁর বক্তব্যকে পাঠ করেন, তা হলে পাবেন যে আমরা যখন অপরিচ্ছন্নতাকে দূর করতে পারি না, তখন তা আমাদের মধ্যে সকল পরিস্থিতিকে মেনে নেওয়ার প্রবৃত্তি গড়ে তোলার কারণ হয়ে ওঠে। কোনও স্থান বা বস্তু যদি নোংরা দ্বারা বেষ্টিত থাকে, সেখানে উপস্থিত মানুষেরা যদি তা না বদলান, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন না করেন, তাঁরা হলে তা ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শুরু করেন। আর মানিয়ে নিতে শুরু করলে সেই নোংরাকে নোংরা বলেই মনে হয় না। তাঁর মননেই অপরিচ্ছন্নতার শিকড় গজিয়ে যায়।

 

কিন্তু যখন কেউ অপরিচ্ছন্নতাকে না মেনে নিয়ে, তা পরিস্কার করার চেষ্টা করেন, তখনই তাঁর চেতনাও উজ্জীবিত হয়। পূজনীয় বাপু যখন পরিচ্ছন্নতাকে জনআন্দোলনে পরিণত করেছিলেন, তার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন। গড্ডালিকা প্রবাহে চলতে থাকা চেতনার জড়তাকে সমাপ্ত করতে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। ভারতীয়দের মনে যখন এই চেতনা জাগে, তখন স্বাধীনতা সংগ্রামও এর দ্বারা প্রবাহিত হয় এবং দেশ স্বাধীন হয়।

 

আজ আমি আপনাদের সামনে, বিশ্ববাসীর সামনে এটা স্বীকার করি যে, আমরা যদি পূজনীয় বাপুর এই ভাবনাচিন্তার সঙ্গে পরিচিত হতাম, আপনারা যদি শিক্ষার্থী রূপে তাঁর দর্শন জানতে ও বুঝতে চেষ্টা না করতেন, তাঁর বক্তব্যকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে না ধরতেন, তা হলে হয়তো কোনও দেশের সরকার পরিচ্ছন্নতাকে প্রাধান্য দিত না।

 

আজ এই অগ্রাধিকার এজন্য গড়ে উঠেছে, আমি ১৫ আগস্টে লালকেল্লার প্রাকার থেকে এই মনোভাবের কথা ঘোষণা করেছিলাম, কারণ আমি মহাত্মা গান্ধীর ভাবনা ও আদর্শ দ্বারা অনেকটাই প্রভাবিত। সেজন্য আজ এই অভিযানে কোটি কোটি মানুষ যুক্ত হয়েছেন। আমি এজন্য অত্যন্ত গর্বিত যে, আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে ১২৫ কোটি ভারতবাসী এই স্বচ্ছ ভারত অভিযানকে বিশ্বে সর্ববৃহৎ গণআন্দোলনে পরিণত করেছে। ফলস্বরূপ, ২০১৪ সালের আগে দেশে গ্রামীণ পরিচ্ছন্নতার অনুপাত ছিল ৩৮ শতাংশ, যা আজ ৯৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা জনসাধারণের মধ্যে দায়িত্ববোধ সংযোজনের একটি বড় উদাহরণ।

 

ভারতে উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কর্ম মুক্ত গ্রামের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫ লক্ষ ছাড়িয়েছে। দেশের ২৫টি রাজ্য ইতিমধ্যেই উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কর্ম মুক্ত রাজ্য হিসাবে নিজেদের ঘোষণা করেছে।

 

বন্ধুগণ, চার বছর আগে বিশ্বে উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কর্মে অভ্যস্থ মানুষের ৬০ শতাংশ ভারতে বসবাস করতেন। আজ তা দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশে। অর্থাৎ আমাদের এই পরিশ্রম বিশ্ব মানচিত্রে দেশকে একটি নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনাময় দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের কার্যকরি বিনিয়োগ ও নিয়মিত তদারকি গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সর্বত্র একটি চরিত্রগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।

 

বন্ধুগণ, আমি যখন অভিযান শুরু করেছিলাম, তখন প্রশ্ন উঠেছিল যে, অনেক টাকা খরচ হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ থেকেও সামাজিক পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মন বদলালে পরিস্থিতি বদলাতে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয় না। মানুষ নিজে নিজেই কাজ করতে শুরু করেন। আপনারাই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন যে, স্বচ্ছ ভারত অভিযান ভারতের জনগণের মেজাজটাই বদলে দিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন সমীক্ষা চালিয়ে জানিয়েছে যে, ভারতের গ্রামে গ্রামে রোগের প্রকোপ কমে গেছে। এই খবর প্রত্যেকের মনে কতটা আনন্দ এনে দিতে পারে। ফলে, আমি নিশ্চিত যে, ভবিষ্যতে এই অভিযানের ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা বিশ্ববাসীর সামনে গবেষণার নতুন নতুন বাতায়ন খুলে দেবে।

 

ভাই ও বোনেরা, ১২৫ কোটি ভারতবাসী এই স্বচ্ছ ভারত অভিযানকে আশা ও পরিবর্তনের প্রতীক করে তুলেছে। ফলে, এই অভিযান আজ বিস্বের সর্ববৃহৎ ‘ডোমিনো এফেক্ট’ রূপে প্রতিষ্ঠা পেতে চলেছে।

 

বন্ধুগণ, আমি অত্যন্ত গর্বিত যে, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ফলে ভারতে পরিচ্ছন্নতার প্রতি প্রাচীন আগ্রহের পুনর্জাগরণ হয়েছে। পরিচ্ছন্নতার এই সংস্কার আমাদের প্রাচীন পরম্পরা, সংস্কৃতি এবং ভাবনায় নিহিত ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে অনেক বিকৃতি এসে আমাদের সমাজ জীবনকে গ্রাস করেছে। মানুষের জীবন ধারণের সঠিক পদ্ধতি বর্ণন করতে গিয়ে অষ্টাঙ্গ যোগ সম্পর্কে মহর্ষি পতঞ্জলি বলেছিলেন – শৌচ সন্তোষ তপঃ স্বাধ্যায় ঈশ্বর প্রণিধান নি নিয়মঃ।

 

অর্থাৎ, সমৃদ্ধ জীবনযাপনের জন্য যে ৫টি নিয়ম রয়েছে, সেগুলি হল – ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, সন্তুষ্টি, তপস্যা, আত্ম অধ্যয়ন এবং ঈশ্বর চেতনা। আপনারা লক্ষ্য করুন, পতঞ্জলি এই ৫টির মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

 

আজ যখন আমি এই প্রেক্ষাগৃহে আসছিলাম, মহামান্য অ্যান্টনিও গ্যুতারেসের সঙ্গে একটি প্রদর্শনী দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। সেখানে প্রদর্শিত হয়েছে, সিন্ধু সভ্যতায় কিরকম শৌচাগার এবং পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ছিল।

 

বন্ধুগণ, মহামান্য অ্যান্টরিও গ্যুতারেসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রসংঘ এক্ষেত্রে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। এই প্রক্রিয়ায় ২০৩০ সালের মধ্যে সমগ্র বিশ্বে পরিচ্ছন্নতা, শৌচকর্মমুক্ত উন্মুক্ত স্থান, নির্মল জ্বালানির মতো ১৭টি লক্ষ্য স্থির করে, লক্ষ্যসাধনের সংকল্প নিয়ে রাষ্ট্রসংঘ এগিয়ে চলেছে।

 

মহাসচিব মহোদয়, আমি আজ আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে, ভারত এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আপনাদের নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা সাফল্য পাবো। সমৃদ্ধ দর্শন, প্রাচীন ঐতিহ্যজাত প্রেরণা, আধুনিক প্রযুক্তি এবং কার্যকরি কর্মসূচির সাহায্যে সকলের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আজ ভারত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

 

আমাদের সরকার বর্জ্য নিষ্কাশন ও ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি, পুষ্টিকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশে ইতিমধ্যেই অপুষ্টির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুরু হয়েছে। বসুধৈব কুটুম্বকম্‌ - অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বকে একটি পরিবার কল্পনা করে আমরা যে কাজ করি, পুরোটাই বিশ্ব ও মানবজাতির কল্যাণে সমর্পণ করি।

 

বন্ধুগণ, গত চারদিনের এই সম্মেলনের পর আমরা সবাই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, বিশ্বকে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে চারটি ‘পি’র প্রয়োজন – পলিটিক্যাল লিডারশিপ, পাবলিক ফান্ডিং, পার্টানারশিপ এবং পিউপলস্‌ পার্টিসিপেশন। দিল্লি ঘোষণার মাধ্যমে আপনারা সবাই সর্বব্যাপী পরিচ্ছন্নতার এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সেজন্য আমি আপনাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

 

এই স্বচ্ছ ভারত মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেশের কোটি কোটি স্বচ্ছতা কর্মী, সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুগণ, যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রায় সমস্ত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এই আন্দোলনকে সচেতনতা বৃদ্ধির পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে একটি প্রেরণার আবহ গড়ে তুলেছে। আপনাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারাই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। কিন্তু আমাদের কাজ এখনও অনেক বাকি। আমরা এখানে শুধুই আত্মতৃপ্তি উদযাপনের জন্যে একত্রিত হইনি। আমরা বাকি থাকা কাজ সম্পূর্ণ করার জন্যে প্রেরণা পেতেই একত্রিত হয়েছি

 

আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মদিবসে পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ ভারত গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় সাফল্য ও সংকল্পকে একসঙ্গে কার্যাঞ্জলি অর্পণ করতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমরা ভারতবাসী তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেই ছাড়বে। সেজন্য আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে, কিন্তু ভারতবাসী পিছিয়ে থাকবে না।

 

আজ এখানে ভারত সরকারের ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে জাতির জনকের নামে একটি ডাকটিকিট উদ্বোধনের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ডাক বিভাগের সক্রিয়তা এবং ডাকটিকিট একটি প্রতীক, তা বর্তমানকে ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করে, সমাজকে পরিবর্তমান প্রভাবগুলির সঙ্গে যুক্ত করে।

 

আজ এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমরা শুনছিলাম, বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিয়ে – শ্রদ্ধেয় বাপুজি বিশ্ব মানব ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল পর সম্পূর্ণ মানুষ হিসাবে যখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কল্পনা করবে, তখন তাঁরা এই মহাপুরুষকে পাবেন। আর তাঁর প্রেরণা ছিল বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিয়ে। আমার মনে একটা ইচ্ছা জেগেছিল যে, মহাত্মা গান্ধীর জন্ম সার্ধশতবর্ষে বিশ্বের ১৫০টি দেশে, প্রত্যেক দেশের শ্রেষ্ঠ গায়ক ও বাদকরা একত্রে ‘বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিয়ে’ ভজনটি গাইবেন।

 

আমার এই ইচ্ছার কথা আমি শ্রদ্ধেয়া সুষমাজিকে বলেছিলামকিন্তু সুষমাজি ও তাঁর গোটা টিম যে ঐকান্তিকতা নিয়ে আমার ইচ্ছে বাস্তবায়নে লেগে পড়েছিলেন, আর বিদেশি গায়কদের গাওয়া গানের উচ্চারণে ও সুরে হুবহু একই রকম রাখতে যে পরিশ্রম করেছেন, তা অভাবনীয়। তাঁদের এই পরিশ্রমে একটি বৈষ্ণব ভজন এই প্রথম সমগ্র বিশ্বে এভাবে পরিবেশিত হ’ল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনাদের এই প্রচেষ্টায় মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতবর্ষ নিমিত্ত মাত্র। এটি আপনাদেরই মনের ইচ্ছা, যা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গায়কদের এক স্বর ও ধুনে ঐক্যবদ্ধ করেছে। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব মহোদয়ও বলছিলেন যে, তাঁর মাতৃভূমির বাঁশরিবাদকও আজ একই সুরে বাঁশি বাজিয়েছেন।

 

এই ঘটনা সমগ্র বিশ্বের সঙ্গীত জগত-কে বৈষ্ণব ভজনের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে। এই ভজন কোন্‌ ভাষায় গাওয়া হয়েছে, আর কোন্‌ কোন্‌ ভাষায় গাওয়া হয় – এসব কিছু না জেনেই বিশ্বের ১৫০টি দেশে বসবাসকারী অসংখ্য গায়ক এই গানটিকে হুবহু গেয়ে দিয়েছেন। তাঁদের অস্তিত্বে এই ধুন জায়গা না করে নিলে, এভাবে সাফল্যের সঙ্গে তাঁরা গাইতে পারতেন না। সেজন্য আমি আরেকবার সুষমাজি ও তাঁর টিমকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

 

আজ পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে আমরা যে সুফল পেয়েছি, তা আরও অধিক করার প্রেরণা যোগায়। আমরা কখনই দাবি করিনি যে, সবকিছু করে ফেলেছি। কিন্তু আমাদের মনে একটি বিশ্বাস গড়ে উঠেছে, যেসব কাজ করতে আমরা ভয় পেতাম, হাত লাগাতাম না, সেই আবর্জনায় হাত লাগিয়ে আমরা পরিচ্ছন্নতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছি। এই সাফল্যের জন্য ঊমা ভারতীজি ও রমেশজি, তাঁদের বিভাগ, তাঁদের টিম, ভিন্ন ভিন্ন সংগঠন এবং দেশের আপামর জনগণ অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। সরকারি দপ্তরের বাবুদের যে ছবি আমাদের মনে আঁকা ছিল, আজকের সাফল্য তাঁদের সেই বাবুগিরিকে গান্ধীগিরিতে রূপান্তরিত হওয়ার সাফল্যও বটে।

 

একটি টিম হিসাবে কাজ না করলে এত বড় সাফল্য আসতো না। ছোট-বড় অনেক আধিকারিকই এই কর্মসূচিকে ব্যক্তিগত কর্মসূচিতে পরিণত করেছিল। নিজেদের আবেগের সঙ্গে পরিশ্রমকে মিশিয়ে দিতে পেরেছেন বলেই দেশে এই পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই সফল কর্মকান্ডের জন্য আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

 

রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব মহোদয়ের নিজের মূল্যবান সময় দিয়ে পূজনীয় বাপুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমাদের মধ্যে এসেছেন। আর রাষ্ট্রসংঘের নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণে ভারত কিভাবে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এবং বিশ্ববাসীকে প্রেরণা যোগাচ্ছে, তা সরেজমিনে দেখে গেলেন। তাঁর এই উপস্থিতি আজকের এই কর্মসূচির শোভাবর্ধন করেছে। সেজন্য আমি তাঁকে অন্তর থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

 

আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

 

 

CG/SB/SB…


(Release ID: 1548541)
Read this release in: English