প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

উগান্ডার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

Posted On: 27 JUL 2018 11:46AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৫ জুলাই, ২০১

 

মাননীয় প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভেনি,

মাননীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট,

উগান্ডা সংসদের অধ্যক্ষ মাননীয়া রেবেকা কাড়াগা,

মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণ,

মাননীয় সাংসদবৃন্দ,

উপস্থিত বিশিষ্টজন,

ভাই ও বোনেরা,

 

নমস্কার।

বালা মুসিজা।

 

সংসদের এই বিশেষ কক্ষে বক্তব্য পেশের আমন্ত্রণ পেয়ে আমি নিজেকে বিশেষভাবে সম্মানিত বোধ করছি। অন্যান্য সংসদেও এই ধরণের সুযোগ আমি লাভ করেছিলাম। তবে, এটি হল আমার কাছে এক বিশেষ উপলক্ষ কেননা, ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ধরণের সম্মানলাভ এই প্রথম। শুধু তাই নয়, ভারতের ১২৫ কোটি জনসাধারণও এই ঘটনায় সম্মানিত। এই সংসদ এবং উগান্ডার জনসাধারণের উদ্দেশে তাঁদের শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও মৈত্রীর বার্তা আমি এখানে বহন করে নিয়ে এসেছি।

 

অধ্যক্ষ মহোদয়া, আজ এখানে আপনার এই উপস্থিতি আমাদের দেশের লোকসভার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়কারণ, সেখানেও অধ্যক্ষ হলেন একজন মহিলা। আজ এখানে বেশ কিছু তরুণ সাংসদকেও আমি দেখতে পাচ্ছি যা গণতন্ত্রের পক্ষে খুবই শুভ ও মঙ্গলজনকআমি যখনই উগান্ডা সফরে আসি ‘আফ্রিকার এই মুক্তো’ আমাকে মুগ্ধ করে। অনুপম সৌন্দর্য, বিরাট সম্পদ এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের দেশ হল উগান্ডা। এর হ্রদ ও নদ-নদী এক বিশাল অঞ্চলের সভ্যতাকে লালন করে এসেছে।

 

এক বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আরেকটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচিত সাংসদদের কাছে বক্তব্য পেশের সময় যে ঐতিহাসিক পথ অনুসরণ করে আজ আমি এখানে এসে উপস্থিত হয়েছি, সে সম্পর্কে আমি পূর্ণ মাত্রায় সচেতন। আমাদের সুপ্রাচীন নৌ সম্পর্ক, ঔপনিবেশিক শাসনের সেই অন্ধকারময় অধ্যায়, মিলিত স্বাধীনতা সংগ্রাম, পরস্পর বিভক্ত বিশ্ব জগতে স্বাধীন দেশ হিসাবে আমাদের অনিশ্চয়তার পথে যাত্রা, নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধার সূচনা এবং আমাদের তরুণ সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে মিল ও ঐক্য সেই ইতিহাসকে গড়ে তুলেছে। এ সমস্ত কিছুই আমাদের পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করেছে।

 

মাননীয় প্রেসিডেন্ট,

 

উগান্ডা এবং ভারতকে পরস্পরের কাছে নিয়ে আসার জন্য যে সমস্ত বিষয়ের বিশেষ অবদান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল আমাদের দু’দেশের জনসাধারণএক শতাব্দীরও বেশি সময়কাল পূর্বে সাহসী শ্রমিকরা ভারত মহাসাগরের উপকূলকে যুক্ত করেছিল রেলপথের মাধ্যমে।

 

আপনাদের এই উজ্জ্বল উপস্থিতি আমাদের দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে মূল্যবান মৈত্রী ও সংহতি বন্ধনেরই এক বিশেষ প্রতীক।

 

নিজেদের দেশে এবং সেইসঙ্গে এই অঞ্চলে আপনারা শান্তি ও স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছেন। নানা ধরণের চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথে আপনারা আপনাদের দেশ ও অঞ্চলকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারী ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে দেশকে আপনারা করে তুলেছেন অন্তর্ভুক্তিমূলক।

 

আপনাদের নেতৃত্বের চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি ভারতীয় বংশোদ্ভূত উগান্ডাবাসীকে তাঁদের কাঙ্খিত স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তনের পথ করে দিয়েছে। এইভাবেই তাঁদের আবার পুনর্জন্ম ঘটেছে। যে দেশের প্রতি তাঁদের রয়েছে গভীর টান ও ভালোবাসা, সেই দেশকে আবার নতুনভাবে গড়ে তুলতেও আপনাদের চিন্তাভাবনা সাহায্য করেছে।

 

দীপাবলি উৎসব পালনের আবহে আপনাদের সংসদ কক্ষের সূচনাকালে এমন অনেক আস্থা ও সম্ভাবনার বাতি আপনারা প্রজ্জ্বলিত করেছেন যা ভারত ও উগান্ডাকে যুক্ত করেছে পরস্পরের সঙ্গে।

 

এ সমস্ত কিছুর মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র হল নীল নদের উৎসস্থলে অবস্থিত জিনজা যেখানে মহাত্মা গান্ধীর ভস্মাবশেষের অংশ বিসর্জিত হয়েছিল।

 

আফ্রিকা ও আফ্রিকাবাসীর সঙ্গে জীবন-মরণে ওতপ্রতোভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি।

 

গান্ধীজির মূর্তির প্রতিষ্ঠাস্থল পবিত্র জিনজায় আমরা গড়ে তুলব একটি গান্ধী ঐতিহ্য কেন্দ্র।

 

মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী আগত প্রায়। তাঁর জীবনের ব্রত ও সঙ্কল্প আফ্রিকাকে স্বাধীনতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাঁর জীবন ও বাণীর বিশ্বজনীন তথা অনন্ত মূল্যবোধ আজও অমলিন। তাই, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপায় এই ধরণের একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার থেকে বড় আর কিছুই হতে পারে না।

 

মাননীয় সাংসদবৃন্দ,

 

ভারতের নিজস্ব স্বাধীনতা সংগ্রাম আফ্রিকার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। তা শুধুমাত্র আফ্রিকায় গান্ধীজির একুশ বছরের অবস্থানকাল বা তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত প্রথম অসহযোগ আন্দোলন মাত্র নয়। ভারতের কাছে স্বাধীনতা আন্দোলনের নৈতিক বিষয়গুলি অথবা তা অনুসরণ করার শান্তিপূর্ণ পথ শুধুমাত্র ভারতের সীমান্ত অথবা ভারতবাসীর ভবিষ্যতের মধ্যেই কোনদিন বেঁধে রাখা হয়নি

 

তা ছিল প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনতা, মর্যাদা, সমতা ও সুযোগ-সুবিধার লক্ষ্যে এক সার্বজনীন অনুসন্ধান প্রচেষ্টা। আফ্রিকার ক্ষেত্রে তা যতটা প্রযোজ্য, অন্যকোন দেশের ক্ষেত্রে তা ততটা নয়

 

আমাদের স্বাধীনতার ২০ বছর আগে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধকে যুক্ত করেছিলেন বিশ্বের, বিশেষত আফ্রিকার ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সঙ্গে।

 

এমনকি, ভারত যখন স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে, আফ্রিকার ভাগ্য বা অদৃষ্টের কথা তখনও আমরা বিস্মৃত হইনি। মহাত্মা গান্ধী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, আফ্রিকা যদি পরাধীনতা থেকে মুক্তি না পায়, তাহলের ভারতের স্বাধীনতা থেকে যাবে অসম্পূর্ণ।

 

স্বাধীন ভারত তাঁর এই কথা কখনই বিস্মৃত হয়নি।

 

বানদুং-এ ভারত আফ্রিকা-এশিয়া বন্ধন প্রচেষ্টাকেই অনুসরণ করেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণ বিদ্বেষের বিরুদ্ধে আমরা ছিলাম দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ। ভূতপূর্ব রোডেশিয়ায় যা এখন জিম্বাবোয়ে নামে পরিচিত, গিনি বাসাউ, অ্যাঙ্গোলা এবং নামিবিয়ায় আমরা সাহসিকতার সঙ্গেই নেতৃত্ব দিয়েছিলাম।

 

গান্ধীজির শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ নেলসন ম্যান্ডেলা, ডেসমন্ড টুটু, অ্যালবার্ট লুথুলি, জুলিয়াস নাইরে এবং কোয়াম নক্রুমার মতো নেতাদের অনুপ্রাণিত করেছিল।

 

ভারত ও আফ্রিকার সুপ্রাচীন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের বিশেষ বল ও শক্তির সাক্ষী হল ইতিহাস। আফ্রিকার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলি নিশ্চিত হয়েছে গান্ধীজির মত ও পথকে অনুসরণ করেই 

 

আফ্রিকার স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারত নীতিগত সমর্থন জানিয়ে এসেছে বাণিজ্যিক যোগাযোগের মধ্য দিয়েকিন্তু আফ্রিকার স্বাধীনতার তুলনায় আমাদের দেশের স্বার্থ কখনই বড় করে দেখা হয়নি।

 

মাননীয় সাংসদবৃন্দ,

 

বিগত সাত দশকে আমাদের অর্থনৈতিক তথা আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের বিষয়গুলিকে উৎসাহিত করেছে দু’দেশের অর্থনৈতিক চাহিদা, নৈতিক মূল্যবোধ এবং আবেগের বন্ধন।

 

বিপণন ব্যবস্থা ও সহায়সম্পদের ন্যায্য ও সমবন্টনই ছিল আমাদের লক্ষ্য। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠাকে আরও উন্নত করতে আমরা একযোগে পরিশ্রম করে এসেছি।

 

দক্ষিণের দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের বৈচিত্র্যকরণে আমরা কাজ করেছি।

 

শুধুমাত্র পেশাদারিত্বের সুযোগ-সুবিধার অন্বেষণেই আমাদের দেশের শিক্ষক ও চিকিৎসকরা আফ্রিকায় পাড়ি দেননি, স্বাধীন দেশ হিসেবে উন্নয়নের সাধারণ চাহিদাগুলির মধ্যে সংহতিসাধন প্রচেষ্টাতেই তাঁদের সেই আফ্রিকা যাত্রা।

 

২০১৫ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত ভারত-আফ্রিকা ফোরামের তৃতীয় শীর্ষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট মুসেভেনির একটি উক্তি আমি এখানে তুলে ধরছি। তিনি বলেছিলেন – “ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আমরা যুক্তভাবে সংগ্রাম চালিয়ে এসেছি। পারস্পরিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যেও আসুন, আমরা একযোগে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই।”

 

মাননীয় সাংসদবৃন্দ,

 

ভারত ও আফ্রিকা বর্তমানে আত্মবিশ্বাসী, সুরক্ষিত, যুবশক্তির বলে বলীয়ান, উদ্ভাবন প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত এবং উৎসাহী জনসাধারণের দেশ হিসাবে উজ্জ্বল প্রতিশ্রুতিময় এক ভবিষ্যতের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

 

আফ্রিকা যে ক্রমশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে উগান্ডা তারই একটি দৃষ্টান্ত।

 

এখানে লিঙ্গ ক্ষেত্রে সমতা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মানোন্নয়ন, সংযোগ ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রের প্রসার ঘটে চলেছে

 

ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগের এক বিশেষ অঞ্চল হয়ে উঠেছে এই দেশ। বেশ কিছু উদ্ভাবন প্রচেষ্টাও আমরা এখানে লক্ষ্য করেছি।

 

ভারতবাসী হিসেবে আফ্রিকার প্রতিটি সাফল্যে আমরা উল্লসিত হই কারণ, আমাদের মধ্যে রয়েছে মৈত্রী সম্পর্কের এক নিবিড় বন্ধন।

 

মাননীয় সাংসদবৃন্দ,

 

আফ্রিকার অংশীদার হতে পেরে ভারত গর্বিত।

 

এই মহাদেশের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উগান্ডা।

 

গতকাল উগান্ডার জন্য আমি দুটি ঋণ সহায়তার কথা ঘোষণা করেছি। প্রথমটি হল বৈদ্যুতিক সংযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দ্বিতীয়টি হল কৃষি ও দুগ্ধোৎপাদনের জন্য ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা।

 

অতীতের মতোই উগান্ডার জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে আমরা সাহায্য ও সমর্থন যুগিয়ে যাব, তা সে কৃষি, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, শক্তি ও পরিকাঠামো, সরকারি ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ – যাই হোক না কেন।

 

আন্তর্জাতিক সৌর সমঝোতায় যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি এবং এই সংসদের আমি বিশেষ প্রশংসা করি।

 

মাননীয় সাংসদবৃন্দ,

 

উগান্ডার মতোই আফ্রিকার এক বিরাট অংশের সঙ্গে আমাদের কর্মপ্রচেষ্টা ও অংশীদারিত্বকে আমরা নিবিড় করে তুলেছি।

 

গত চার বছরে আমাদের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং আমি আফ্রিকার কমপক্ষে ২৫টি দেশে সফর করেছি। আমাদের মন্ত্রীরা আফ্রিকার প্রায় সবক’টি দেশই সফর করে এসেছেন।

 

২০১৫-র অক্টোবরে আফ্রিকা-ভারত ফোরামের তৃতীয় শীর্ষ বৈঠকে ৫৪টি দেশের ৪০ জনেরও বেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারি পর্যায়ের আধিকারিকদের স্বাগত জানাতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করেছি।

 

আন্তর্জাতিক সৌর সমঝোতার উদ্বোধনী শীর্ষ বৈঠকে আফ্রিকার বহু নেতাকেই আতিথ্যদান করার সুযোগ আমাদের হয়েছে।

 

গত বছর আফ্রিকা উন্নয়ন ব্যাঙ্কের প্রথম বৈঠকের আয়োজন করতে পেরে আমার নিজের রাজ্য গুজরাটও বিশেষ গর্ববোধ করেছে।

 

আফ্রিকায় ১৮টি নতুন দূতাবাস আমরা স্থাপন করছি।

 

মাননীয় সাংসদবৃন্দ,

 

উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান অংশীদারিত্বের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল আফ্রিকার ৪০টিরও বেশি রাষ্ট্রে ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ১৮০টির মতো ঋণ সহায়তা কর্মসূচি।

 

ভারত-আফ্রিকা ফোরামের সর্বশেষ বৈঠকটিতে সহজ শর্তে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা এবং ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান সহায়তার আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম।

 

প্রতি বছর আফ্রিকার ৮ হাজারেরও বেশি তরুণ ও যুবক-যুবতী বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণ লাভ করে থাকে।

 

আমাদের প্রচেষ্টা সর্বদাই অগ্রাধিকারের পথ অনুসরণ করে চলবে।

 

ভারতীয় সংস্থাগুলি আফ্রিকায় ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে।

 

আফ্রিকার সঙ্গে বর্তমানে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় এই পরিমাণ ২১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, ভারতে আফ্রিকার রপ্তানি বাণিজ্যও ক্রমশঃ প্রসার লাভ করছে।

 

ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনমূলক অংশীদারিত্বের প্রসারের মধ্য দিয়ে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কও ক্রমশঃ প্রসার লাভ করছে।

 

প্যান আফ্রিকা ই-নেটওয়ার্ক আফ্রিকার ৪৮টি দেশকে যুক্ত করেছে ভারতের সঙ্গে। প্রত্যেকটি দেশকেই তা অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। আফ্রিকায় ডিজিটাল উদ্ভাবন প্রচেষ্টায় তা এক নতুন মেরুদণ্ডের ভূমিকা পালন করে চলেছে।

 

উপকূল অঞ্চলের কয়েকটি দেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব ক্রমশঃ প্রসার লাভ করছে। নীল অর্থনীতির সুফলগুলিকে নিরন্তরভাবে আহরণ করাই এর উদ্দেশ্য।

 

যে সমস্ত রোগ-ব্যাধি এক সময়ে আফ্রিকার ভবিষ্যতের পক্ষে বিপজ্জনক ছিল, তা দূর করতে ভারতের ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। স্বাস্থ্য পরিচর্যাকে সকলের জন্য সুলভ ও ব্যয়সাশ্রয়ী করতেও তা সাহায্য করে চলেছে।

 

বিশিষ্ট সাংসদবৃন্দ,

 

সমৃদ্ধির লক্ষ্যে যুক্তভাবে কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি শান্তির খোঁজেও আমরা রয়েছি একে অপরের পাশে।

 

ভারতীয় সেনাবাহিনী সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আফ্রিকার প্রতি যাতে সেখানকার শিশুদের ভবিষ্যৎ শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

 

১৯৬০ সালে আমাদের প্রথম কঙ্গো মিশনের সময় থেকে শুরু করে আফ্রিকায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১২টিরও বেশি শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর মোতায়েন আমাদের গর্বিত করেছে।

 

বিশ্বে রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশনের সবক’টিতেই ১৬৩ জন ভারতীয় আত্মোৎসর্গের এক সর্বোচ্চ নজির স্থাপন করেছেনযে কোন দেশের পক্ষে তা হল সর্বোচ্চ সংখ্যক। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ শুধুমাত্র আফ্রিকাতেই শহীদত্ব বরণ করেছেন।

 

বর্তমানে আফ্রিকায় পাঁচটি শান্তিরক্ষা অভিযানে কাজ করে চলেছেন ৬ হাজারেরও বেশি ভারতীয়।

 

লিবারিয়ায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রথম মহিলা পুলিশ ইউনিটে ভারতীয় নারীরা এক বিশেষ ভূমিকা পালনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন

 

সন্ত্রাস ও জলদস্যু মোকাবিলায় এবং আমাদের সমুদ্র অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখতে একযোগে কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি, আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতাও ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

 

বিশিষ্ট সাংসদবৃন্দ,

 

আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের এই কর্মপ্রচেষ্টা ১০টি বিশেষ নীতি অনুসরণ করে চলবে।

 

প্রথমত, আমাদের অগ্রাধিকারগুলির শীর্ষে রয়েছে আফ্রিকা। এই অঞ্চলের সঙ্গে আমাদের কর্মপ্রচেষ্টাকে আমরা আরও গভীর ও নিবিড় করে তোলার কাজে যুক্ত থাকব। অতীতের মতোই তা হবে নিরন্তর ও নিয়মিত।

 

দ্বিতীয়ত, আপনাদের অগ্রাধিকারগুলির ভিত্তিতেই গড়ে উঠবে আমাদের উন্নয়নের অংশীদারিত্ব। খুব সহজ শর্তেই এই অংশীদারিত্ব গড়ে উঠবে যা আপনাদের ওপর কোন চাপ সৃষ্টি করবে না বরং, আপনাদের সম্ভাবনার পথকে তা আরও মসৃণ করে তুলবেআপনাদের ভবিষ্যৎকে কোনভাবেই তা রুদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত করবে না। আফ্রিকার মেধা ও দক্ষতার ওপর আমরা নির্ভর করব। যতদূর সম্ভব স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, সুযোগ-সুবিধার পথকেও আমরা ক্রমশঃ উন্মুক্ত করে তুলব।

 

তৃতীয়ত, আমাদের বাজারকে উন্মুক্ত রেখে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রচেষ্টাকে আমরা আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলব। আফ্রিকায় বিনিয়োগের জন্য ভারতীয় শিল্প ব্যবস্থাকে আমরা সাহায্য ও সমর্থন যুগিয়ে যাব।

 

চতুর্থত, আফ্রিকার উন্নয়নে সাহায্য করতে ভারতের অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমরা যুক্ত করব ডিজিটাল বিপ্লবকে। সরকারি পরিষেবার যোগানকে আরও উন্নত করে তুলব। প্রসার ঘটাব স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার। ডিজিটাল সাক্ষরতার পাশাপাশি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্যও আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। প্রান্তিক মানুষদের আমরা যুক্ত করব মূল স্রোতের সঙ্গে। নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যে শুধুমাত্র রাষ্ট্রসঙ্ঘের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের মধ্যেই আমাদের এই অংশীদারিত্বের সম্পর্ক থেমে থাকবে না। ডিজিটাল যুগে আফ্রিকার তরুণরা যাতে তাঁদের নিজেদের স্থান করে নিতে পারে সেজন্য আমরা তাঁদের প্রস্তুতিতে সাহায্য করব।

 

পঞ্চমত, বিশ্বের ৬০ শতাংশ কৃষিযোগ্য জমি রয়েছে আফ্রিকায়। অথচ, বিশ্বের মোট উৎপাদনের মাত্র ১০ শতাংশের মতো অবদান রয়েছে এখানকার দেশগুলির। তাই, আফ্রিকার কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে আমরা আপনাদের সঙ্গে কাজ করে যাব।

 

ষষ্ঠত, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যাগুলির মোকাবিলায় আমাদের এই অংশীদারিত্ব কাজ করে যাবে। এক বিশ্ব জলবায়ু শৃঙ্খল নিশ্চিত করে তোলার কাজে, জীব বৈচিত্র্যের সংরক্ষণে এবং বিশুদ্ধ ও দক্ষ জ্বালানি অবলম্বনে আমরা একযোগে কাজ করে যাব আফ্রিকার সঙ্গে।

 

সপ্তমত, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের মোকাবিলায় আমাদের সহযোগিতা ও পারস্পরিক ক্ষমতাকে আমরা আরও শক্তিশালী করে তুলব। সাইবার ক্ষেত্রকে আমরা করে তুলব নিরাপদ ও সুরক্ষিত। শান্তিরক্ষা ও তার প্রসারে আমরা সমর্থন ও সহযোগিতা করে যাব রাষ্ট্রসঙ্ঘকে।

 

অষ্টমত, সমুদ্র এলাকাকে উন্মুক্ত এবং সবক’টি জাতির কল্যাণে তা মুক্ত করে তুলতে আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে আমরা কাজ করে যাব। আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে এবং পূর্ব ভারতীয় মহাসাগরে বিশ্বের প্রয়োজন সহযোগিতার, প্রতিযোগিতার নয়। এই কারণেই ভারত মহাসাগরের সুরক্ষা সম্পর্কে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি হল সহযোগিতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সকলের সুরক্ষা ও সমৃদ্ধিই তার লক্ষ্য।

 

নবমত, আন্তর্জাতিক কর্মপ্রচেষ্টা আফ্রিকায় যত প্রসার লাভ করবে, আমরা ততই সকলে একযোগে চেষ্টা করে যাব যাতে আফ্রিকা আর কখনও উচ্চাশা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি মঞ্চ হয়ে না উঠতে পারে বরং, আফ্রিকার তরুণ ও যুবকদের আশা-আকাঙ্ক্ষার তা একটি ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়ায়।

 

দশমত, ভারত ও আফ্রিকা যেভাবে একযোগে ঔপনিবেশিক শাসনের মোকাবিলা করে এসেছে, ঠিক সেইভাবেই ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বমূলক এক গণতান্ত্রিক বিশ্ব শৃঙ্খলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা যৌথভাবে কাজ করে যাব। ভারত ও আফ্রিকায় সমগ্র মানবজাতির এক-তৃতীয়াংশের ভাষা ও ভূমিকা সেখানে প্রাধান্য পাবে। আফ্রিকার জন্য সমান মর্যাদার স্থান ছেড়ে না দিলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য ভারতের সংস্কার প্রচেষ্টাও অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। আমাদের বিদেশ নীতির মূল উদ্দেশ্য হল আফ্রিকার জন্য সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা।

 

বিশিষ্ট সাংসদবৃন্দ,

 

বর্তমান দশকটি হল স্বাধীনতা ও সমতার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা ও গড়ে ওঠা জাতিগুলির জন্য

 

এটি হল এমনই এক যুগ যেখানে সুযোগ-সুবিধার আলো আলোকিত করবে সমস্ত মানুষের মুখাবয়ব।

 

এটি হল এমনই এক সময়, যখন আমাদের পৃথিবীতে রয়েছে আরও আশাবাদী এক ভবিষ্যৎ। তাই, সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশকেই বিশ্বের বাকি অংশের সঙ্গে সমান পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে।

 

ভারত আপনাদের সঙ্গে নিয়ে আপনাদের জন্যই সেই কাজ করে যাবে।

 

আমাদের অংশীদারিত্ব আফ্রিকায় ক্ষমতায়নকে প্রতিষ্ঠিত করবে।

 

স্বচ্ছতার সঙ্গেই আপনাদের এই প্রচেষ্টার সঙ্গে আমরা সংহতিসাধন করে যাব। যথাযোগ্য শ্রদ্ধা ও সমতার নীতিতেই চালিত হবে আমাদের এই প্রচেষ্টা।

 

আমরা সোচ্চার হব আপনাদের জন্যই, আপনাদের সঙ্গে নিয়েই।

 

ভারতের দুই-তৃতীয়াংশ এবং আফ্রিকার দুই-তৃতীয়াংশ নাগরিকেরই বয়ঃসীমা বর্তমানে ৩৫ বছরের নিচে। তাই, ভবিষ্যৎ যদি হয় আজকের তরুণদের, তাহলে এই শতাব্দীকে তৈরি করে যাওয়ার, গড়ে দিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও কিন্তু আমাদের।

 

উগান্ডায় কথিত আছে যে “আনাইয়েজিতাহিদিফুয়াফাইদি” যার অর্থ হল, যে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে সেই লাভবান হয়।

 

ভারত সেই অতিরিক্ত প্রচেষ্টাই চালিয়ে এসেছে আফ্রিকার জন্য এবং সর্বদাই তা করে যাবে। আর তা হবে আফ্রিকার স্বার্থ ও কল্যাণেই।

 

ধন্যবাদ। আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

আসান্তে সানা

 

CG/SKD/DM/…


(Release ID: 1540400) Visitor Counter : 303


Read this release in: English