নতুন উত্তর-পূর্ব সিনেমা আলোচনা: কণ্ঠস্বর, দৃষ্টিভঙ্গি এবং চলচ্চিত্র শিক্ষার ভবিষ্যৎ
#আইএফএফআইউড, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
গোয়ায় ২০২৫-এর ৫৬তম আন্তর্জাতিক ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব (আইএফএফআই) এর অষ্টম দিনে কলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে "নতুন উত্তর-পূর্ব সিনেমা ও চলচ্চিত্র বিদ্যালয়" শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এই অধিবেশনে এই অঞ্চলের চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং গল্পগুলিকে তুলে ধরার ঐতিহ্য নির্মাণে চলচ্চিত্র বিদ্যালয়গুলির রূপান্তরমূলক ভূমিকার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। উত্তর-পূর্বের নেতৃস্থানীয় বক্তারা এই অঞ্চলে সিনেমার ক্রমবর্ধমান ভূদৃশ্য সম্পর্কে ব্যক্তিগত ভ্রমণ, অভিজ্ঞতা এবং মতামত বিনিময় করেছেন৷

“স্বীকৃতির জন্য সংগ্রাম অব্যাহত থাকে, যা আমাদের তৈরি সিনেমাকে রূপ দেয়।” — হাওবাম পবন কুমার মণিপুরের একজন প্রবীণ চলচ্চিত্র নির্মাতা হাওবাম পবন কুমার ১৯৯০-এর দশকে আনুষ্ঠানিক চলচ্চিত্র শিক্ষার চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। এমন একটা সময়ে যখন কেবল এফটিআইআই পুনে এবং এসআরএফটিআই কলকাতা নামে দুটি প্রধান প্রতিষ্ঠান ছিল, তখন- উত্তর-পূর্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষী চলচ্চিত্র নির্মাতারা প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা এবং সীমিত সুযোগের সম্মুখিন হয়েছিলেন। এসআরএফটিআই-তে ভর্তির জন্য তার ছয় বছরের যাত্রার কথা পবন তুলে ধরেছন, যখন এই সময় তিনি কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা আরিবাম শ্যাম শর্মার অধীনেও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তিনি তুলে ধরেছেন যে কীভাবে এই কঠোর প্রশিক্ষণ তার নৈপুণ্যকে পরিমার্জিত করেছে, এবং একটি সমালোচনামূলক সিনেমার দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি করতে এবং এর আখ্যান গল্প বলার সূক্ষ্মতা বুঝতে তা কতটা সাহায্য করেছে। বছরের পর বছর ধরে অগ্রগতি করা সত্ত্বেও, তিনি জোর দিয়েছেন যে উত্তর-পূর্বের চলচ্চিত্র নির্মাতারা এখনও তাদের কাজ ফুটিয়ে তোলার জন্য স্বীকৃতি এবং প্ল্যাটফর্মের জন্য প্রচেষ্টা করে চলেছে। কীভাবে তার চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট থেকে তার নিজস্ব সম্প্রদায় তাকে তার ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করেছে সেকথাও সকলের সামনে ব্যাখ্যা করেন তিনি৷

“সত্যিকারের গল্পগুলো ঘর থেকে আসে, এবং তা বোঝাই একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার কণ্ঠস্বরকে গড়ে তোলে।” — মহর্ষি তুহিন কাশ্যপ
কীভাবে এসআরএফটিআই-তে থাকার সময় একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে তার দৃষ্টিভঙ্গি গভীরভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল সে সম্পর্কে তুলে ধরেছেন মহর্ষি তুহিন কাশ্যপ। প্রাথমিকভাবে মূলধারার বলিউডের চাকচিক্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, কাশ্যপ আসামে নিহিত খাঁটি গল্পগুলি অন্বেষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি তার চলচ্চিত্র শিক্ষাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে, সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেগুলিকে পর্দায় প্রতিফলিত করতে এবং সৃজনশীল অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আলিঙ্গন করতে শেখানোর জন্য এসআরএফটিআইকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিজের ভূমি এবং ইতিহাস বোঝা নিছক একটি একাডেমিক অনুশীলনই নয় - এটি স্থানীয় এবং বিশ্বব্যাপী উভয় ক্ষেত্রেই অনুরণিত গল্প বলার জন্য অপরিহার্য৷

“উত্তর-পূর্ব সিনেমার একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্দায় দেখা এবং শোনার যোগ্য।” — রীমা বোরা
আনুষ্ঠানিক পাঠ্যক্রমগুলিতে উত্তর-পূর্ব সিনেমার অনুপস্থিতি মোকাবেলা করার সময়ও কীভাবে এফটিআইআই তার সিনেমাটিক সংবেদনশীলতা এবং ব্যক্তিগত বিকাশকে লালন করেছে তা ভাগ করে নিয়েছেন রীমা বোরা। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সিনেমার ইতিহাস - ইশানু থেকে গঙ্গা শিলোনি পাখি পর্যন্ত, এবং ১৯৩৫ সাল থেকে আসামি সিনেমার অগ্রণী ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও - উত্তর-পূর্ব সিনেমা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় আলোচনায় অবহেলিত রয়েছে। বোরা অরুণাচল প্রদেশে একটি নতুন ফিল্ম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রশংসা করেছেন, এবং এটিকে উত্তর-পূর্বের ভাষা, ঐতিহ্য এবং আখ্যানকে বৃহত্তর দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

“সেরা গল্প আসে আপনার নিজের দেশ থেকে। ফিল্ম স্কুল আপনাকে শেখায় সেই গল্পগুলো কীভাবে বলা যায়।” — ডমিনিক সাংমা
ডোমিনিক সাংমা, মডারেটরের ভূমিকায় থেকে গল্প বলা ও শিক্ষার বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে গোটা আলোচনাকে পরিচালনা করেছেন। মৌখিক গল্পকথনের ঐতিহ্য থেকে প্রেরণা নিয়ে, সাংমা জোর দিয়ে বলেন যে আন্তর্জাতিক সিনেমার সঙ্গে পরিচয় তার ন্যারেটিভ কাঠামো বোঝার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং প্রসারিত করেছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সবচেয়ে আকর্ষণীয় গল্পগুলি প্রায়শই একজনের সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং সম্প্রদায়ের অন্তর্দৃষ্টি থেকে উদ্ভূত হয়। সাংমার মত অনুযায়ী, চলচ্চিত্র শিক্ষা নির্মাতাদেরকে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, তাত্ত্বিক জ্ঞান এবং আত্মবিশ্বাস প্রদান করে যাতে তারা এই গল্পগুলো কার্যকরভাবে পর্দায় উপস্থাপন করতে পারে।

আলোচনাটি সমাপ্ত হয়েছে এই সহমতের ভিত্তিতে যে চলচ্চিত্র স্কুলগুলি প্রতিভা বিকাশ, সাংস্কৃতিক পরিচয় সংরক্ষণ এবং উত্তর-পূর্বের নির্মাতাদের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রাসঙ্গিক সিনেমা তৈরি করার ক্ষমতা প্রদানের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। এছাড়াও এটি পরিকাঠামো, পরামর্শ এবং প্ল্যাটফর্মে ধারাবাহিক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে, যাতে উত্তর-পূর্বের গল্পকারদের কণ্ঠ আরও সুপ্রকাশিত হয়।

আইএফএফআই সম্পর্কে :
১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়া (আইএফএফআই) দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো এবং বৃহত্তম চলচ্চিত্র উৎসব হিসেবে পরিচিত। এটি যৌথভাবে আয়োজন করে ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এনএফডিসি), তথ্য ও ভারত সরকারের সম্প্রচার মন্ত্রক এবং এন্টারটেইনমেন্ট সোসাইটি অফ গোয়া (ইএসজি) ও গোয়া রাজ্য সরকার। উৎসবটি একটি বৈশ্বিক চলচ্চিত্র শক্তিকে পরিণত হয়েছে—যেখানে পুনরুদ্ধারকৃত ক্লাসিক সিনেমা সাহসী পরীক্ষার সঙ্গে মিশে যায়, এবং কিংবদন্তি মাস্টাররা প্রথমবারের নির্মাতাদের সঙ্গে স্থান ভাগাভাগি করে। আইএফএফআই-কে সত্যিই উজ্জ্বল করে তোলার মত বিষয়গুলি হচ্ছে এর প্রাণবন্ত সংমিশ্রণ—আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী, মাস্টারক্লাস, শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং উচ্চ-উৎসাহী ওয়েভস ফিল্ম বাজার, যেখানে ধারণা, চুক্তি এবং সহযোগিতার জন্ম হয়। ২০-২৮ নভেম্বর গোয়ার অত্যাশ্চর্য উপকূলীয় পটভূমিতে মঞ্চস্থ, ৫৬তম সংস্করণটি ভাষা, ধারা, উদ্ভাবন এবং কণ্ঠস্বরের এক চমকপ্রদ বর্ণালীর প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরেছে যা বিশ্ব মঞ্চে ভারতের সৃজনশীল প্রতিভার এক নিমগ্ন উদযাপন।
For more information, click on:
IFFI Website: https://www.iffigoa.org/
PIB’s IFFI Microsite: https://www.pib.gov.in/iffi/56/
PIB IFFIWood Broadcast Channel: https://whatsapp.com/channel/0029VaEiBaML2AU6gnzWOm3F
X Handles: @IFFIGoa, @PIB_India, @PIB_Panaji
***
PS/DM/KMD
Release ID:
2195599
| Visitor Counter:
5