PIB Headquarters
ভারতের শ্রম সংস্কার: সরলীকরণ, কর্মীদের নিরাপত্তা, ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নতি
Posted On:
21 NOV 2025 4:44PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২১ নভেম্বর ২০২৫
মূল বিষয়
সরকার ২৯-টি শ্রম আইনকে একত্রিত করে চারটি সুসংহত শ্রম বিধি কার্যকর করেছে। এই চারটি বিধি হল: মজুরি বিধি ২০১৯, শিল্প সম্পর্ক বিধি ২০২০, সামাজিক সুরক্ষা বিধি ২০২০ এবং পেশাগত সুরক্ষা বিধি ২০২০। এই ঐতিহাসিক সংস্কারের মাধ্যমে পুরানো নিয়মগুলিকে আধুনিক করে একটি সরল ও কার্যকর কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যা কর্মীদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি, ব্যবসা করার প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে তুলেছে।
দেশের উন্নয়নের কেন্দ্রে শ্রমশক্তি
শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভর ভারতের মূল ভিত্তি। এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখা যায় কর্মসংস্থানের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিতে ২০১৭-১৮ সালের ৪৭.৫ কোটি থেকে ২০২৩-২৪ সালে তা ৬৪.৩৩ কোটি হয়েছে, যেখানে বেকারত্বের হার কমেছে এবং ১.৫৬ কোটি মহিলা সংগঠিত কর্মীবাহিনীতে যুক্ত হয়েছেন। এই ইতিবাচক পরিবর্তন সামাজিক-অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটাচ্ছে। কর্মীদের অধিকার জোরদার করতে সরকার ২৯-টি শ্রম আইনকে মজুরি বিধি, শিল্প সম্পর্ক বিধি, সামাজিক সুরক্ষা বিধি এবং পেশাগত সুরক্ষা বিধি - এই চারটি ব্যাপক শ্রম বিধিতে একীভূত করেছে। এই ঐতিহাসিক সংস্কারটি কর্মীদের জন্য সুরক্ষা, মর্যাদা, স্বাস্থ্য এবং কল্যাণমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভারতকে একটি ন্যায্য ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত শ্রম পরিবেশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
২৯-টি শ্রম আইনকে বিধিবদ্ধ করার যুক্তি
শ্রম আইনে সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। দেশের পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক ও শিল্প পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনি কাঠামোকে আধুনিক ও সরল করতে সরকার নিরন্তর কাজ করে চলেছে। মোট ২৯টি বিদ্যমান শ্রম আইনকে চারটি বিধিতে সংহত করার উদ্দেশ্য দীর্ঘদিনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে শ্রম ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও সমসাময়িক করে তোলা। এই সংস্কারের মূল কারণগুলি হল: একাধিক আইনের কারণে সৃষ্ট নিয়ম পালনের জটিলতা কমানো, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কারণে সৃষ্ট বাস্তবায়নের জটিলতা দূর করা, এবং স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ের পুরনো আইনগুলিকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে আজকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ব্যবসা করার স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানো এবং প্রতিটি শ্রমিকের জন্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও মজুরি সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
চারটি শ্রম বিধি প্রণয়ন
শ্রম আইনকে বিধিবদ্ধকরণের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল 'একক নথিভুক্তি', 'একক লাইসেন্স' এবং 'একক রিটার্ন'-এর ধারণা চালু করে নথিভুক্তি ও লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সরল করা, যার ফলে, কর্মসংস্থান বাড়াতে নিয়ম পালনের বোঝা কমবে। দ্বিতীয় জাতীয় শ্রম কমিশন এই আইনগুলিকে কার্যকরী ভিত্তিতে চার বা পাঁচটি শ্রম বিধিতে ভাগ করার পরামর্শ দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী, সরকার সমস্ত অংশীদারের (সরকার, নিয়োগকর্তা ও ট্রেড ইউনিয়ন) সঙ্গে আলোচনার পর ২৯-টি আইনকে চারটি শ্রম বিধিতে (মজুরি বিধি, শিল্প সম্পর্ক বিধি, সামাজিক সুরক্ষা বিধি এবং পেশাগত সুরক্ষা বিধি) পরিণত করে, যা ২০১৯ ও ২০২০ সালে কার্যকর হয়।
বিধি ১: মজুরি বিধি, ২০১৯
মজুরি বিধি, ২০১৯ চারটি পুরনো আইনকে সরল ও সংহত করেছে, যার প্রধান লক্ষ্য হল, নিয়োগকর্তাদের জন্য নিয়ম পালন সহজ করা এবং কর্মীদের অধিকার জোরদার করা। এই বিধির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে - সংগঠিত ও অসংগঠিত উভয় ক্ষেত্রের সকল কর্মীর জন্য ন্যূনতম মজুরির আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা, ন্যূনতম জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী একটি 'ফ্লোর ওয়েজ' বা সর্বনিম্ন মজুরি র্নির্ধারণ এবং নিয়োগ ও মজুরিতে লিঙ্গ বৈষম্য নিষিদ্ধ করা। এছাড়াও, অতিরিক্ত কাজের জন্য কর্মীদের কমপক্ষে দ্বিগুণ হারে ওভারটাইম মজুরি দিতে হবে এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে 'ইনস্পেক্টর' পদটিকে 'ইনস্পেক্টর-কাম-ফেসিলিটেটর'-এ পরিবর্তন করে এটিকে কম শাস্তিমূলক এবং আরও পরামর্শমূলক করা হয়েছে।
বিধি ২: শিল্প সম্পর্ক বিধি, ২০২০
শিল্প সম্পর্ক বিধি,২০২০ তিনটি পুরনো আইনকে একত্রিত করে তৈরি করা হয়েছে, যা শিল্পের টিকে থাকার ওপর শ্রমিকের জীবন নির্ভর করে - এই বিষয়টি স্বীকার করে। এই বিধিটি স্থায়ী মেয়াদী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চালু করেছে, যেখানে এক বছর পর গ্র্যাচুইটি-সহ সমস্ত সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রত্যাহার হওয়া কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি 'পুনঃদক্ষতা তহবিল' তৈরি করা হয়েছে। শ্রমিকদের সম্মিলিত দর কষাকষিকে শক্তিশালী করার জন্য ৫১% সদস্যপদ থাকলে ইউনিয়নকে আলোচনাকারী ইউনিয়ন হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এই কোড শিল্প ও শ্রমিকের সংজ্ঞাকে প্রসারিত করেছে, লে-অফ/ছাঁটাই/বন্ধের সীমা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ করেছে এবং অভিযোগ কমিটিগুলিতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে। দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য দুই সদস্যের শিল্প ট্রাইব্যুনাল এবং সরাসরি ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়াও, ধর্মঘট/তালাবন্ধের জন্য ১৪ দিনের নোটিশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং ছোটখাটো অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের পরিবর্তে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে, যা আইন মানতে উৎসাহ দেবে।
বিধি ৩: সামাজিক সুরক্ষা বিধি, ২০২০
সামাজিক সুরক্ষা বিধি, ২০২০ মোট নয়টি বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা আইনকে একীভূত করেছে এবং এই কোড অসংগঠিত, গিগ ও প্ল্যাটফর্ম শ্রমিক-সহ সকল কর্মীর জন্য জীবন, স্বাস্থ্য, মাতৃত্ব ও ভবিষ্যনিধি সুবিধা প্রসারিত করেছে। কর্মীদের ব্যাপক সুবিধা দিতে ইএসআইসি-এর পরিধি ভারত জুড়ে বাড়ানো হয়েছে এবং ঝুঁকিযুক্ত কাজের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইপিএফ আবেদনের জন্য নিয়োগকর্তাদের জমা দেওয়ার পরিমাণ ২৫%-এ নামানো হয়েছে এবং ইপিএফ সংক্রান্ত তদন্তের জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। গিগ ও প্ল্যাটফর্ম শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে নতুন সংজ্ঞা যোগ করা হয়েছে এবং তাদের স্কিমগুলির জন্য একটি নিবেদিত সামাজিক সুরক্ষা তহবিল প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে সংগ্রাহকরা তাদের বার্ষিক টার্নওভারের ১-২% পর্যন্ত অবদান রাখবেন। বাড়িতে-কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার সময় দুর্ঘটনাকে এখন কর্মসংস্থান-সম্পর্কিত হিসাবে গণ্য করা হয়েছে এবং স্থায়ী মেয়াদী কর্মীরা এক বছর পরেই গ্র্যাচুইটি পাওয়ার যোগ্য হবেন। আইন প্রয়োগে স্বচ্ছতা ও সহজতা আনতে 'ইনস্পেক্টর-কাম-ফেসিলিটেটর' ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং ছোটখাটো অপরাধের ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের পরিবর্তে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে, যা ব্যবসা করার স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াবে।
পেশাগত সুরক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কাজের পরিবেশ বিধি, ২০২০
পেশাগত সুরক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কাজের পরিবেশ বিধি, ২০২০ তৈরি করা হয়েছে ১৩-টি কেন্দ্রীয় শ্রম আইনকে একত্রিত, সরল ও যুক্তিসঙ্গত করে। এই বিধির প্রধান লক্ষ্য হল কর্মীদের অধিকার ও নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যবসাবান্ধব নিয়ন্ত্রক পরিবেশ তৈরি করা। এই ভারসাম্য বজায় রাখার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়বে, যা ভারতের শ্রমবাজারকে আরও কার্যকর, ন্যায্য ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তুলবে।
প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি
পেশাগত সুরক্ষা বিধি, ২০২০ ১৩-টি কেন্দ্রীয় আইনকে একত্রিত করেছে। এর মূল দিকগুলি হল : একক নিবন্ধন ব্যবস্থা; ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত সকল কর্মীর জন্য সুরক্ষা; পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বার্ষিক ভাতা ও সুবিধা; মহিলাদের জন্য রাতের শিফটে কাজের অনুমতি; এবং বিনামূল্যে বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এই কোড ব্যবসা করার প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে এবং ইনস্পেক্টর-কাম-ফেসিলিটেটর ব্যবস্থা চালু করেছে।
শ্রম বিধিগুলির রূপান্তরকারী শক্তি
ভারতের নতুন শ্রম বিধিগুলি আইনকে সরল, ন্যায্য ও আধুনিক করেছে, যা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই বিধিগুলি একটি সুসংহত কাঠামোর মাধ্যমে সকল শ্রমিকের অধিকার, সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও মজুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এই সংস্কারের মূল পরিবর্তনগুলি হল - নিয়মাবলী আধুনিকীকরণ করে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে শ্রম আইনকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা; একক নিবন্ধন, একক রিটার্ন-সহ প্রক্রিয়াগুলিকে সহজ করে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা, যার ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হবে; এবং ডিজিটাল প্রক্রিয়া ও ঝুঁকি-ভিত্তিক পরিদর্শনের মাধ্যমে আইন প্রয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি মজবুত করা।
উপসংহার
নতুন শ্রম বিধিগুলি ভারতের শ্রম পরিবেশে একটি রূপান্তরকারী পদক্ষেপ - যা শ্রমিকদের কল্যাণ এবং উদ্যোগগুলির কর্মদক্ষতার মধ্যে ভারসাম্য এনেছে। এই বিধিগুলি নিয়ম পালন সহজ করে, সুরক্ষা বাড়ায় এবং মজুরিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করে। এই সংস্কারগুলি একটি আরও ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ এবং প্রবৃদ্ধি-ভিত্তিক অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করে, যা শ্রমিক ও শিল্প উভয়কে ক্ষমতায়িত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুস্থায়ী অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করে।
তথ্যসূত্র
Labour.gov.in
https://labour.gov.in/sites/default/files/labour_code_eng.pdf
https://labour.gov.in/sites/default/files/the_code_on_wages_2019_no._29_of_2019.pdf
Ministry of Labour & Employment
https://www.pib.gov.in/newsite/pmreleases.aspx?mincode=21
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2147928#:~:text=As%20per%20the%20latest%20data,47.5%20crore%20in%202017%2D18
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2160547
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2147160
Click here to see pdf
SSS/AS.....
(Release ID: 2193075)
Visitor Counter : 5