প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর
'সিকিম@৫০' এর উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
গত এক দশকে, আমাদের সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভারতের উন্নয়ন যাত্রার কেন্দ্রে রেখেছে: প্রধানমন্ত্রী
Posted On:
29 MAY 2025 12:00PM by PIB Agartala
নয়াদিল্লি, ২৯ মে ২০২৫, পিআইবি।। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাংটকে ‘সিকিম@৫০’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন। অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু ছিল ‘যেখানে অগ্রগতি মিলিত হয় উদ্দেশ্যের সাথে, এবং প্রকৃতি বেড়ে উঠে বৃদ্ধি’র সাথে। এই বিশেষ দিনে, সিকিমের ৫০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাজ্যের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে এখানকার জনগণের উৎসাহ, শক্তি এবং তাঁদের উদ্দীপনা দেখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে উপস্থিত থাকতে পারছি না।” তবে অদূর ভবিষ্যতে সিকিম সফরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং সিকিমবাসীদের সাফল্য এবং উদযাপনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ সিকিমবাসীদের অতীতের ৫০ বছরের অর্জন উদযাপনের দিন৷ এরজন্য প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী এবং তার দলের শ্রমের ব্যাপক প্রশংসা করেন, যারা এই মহান অনুষ্ঠানটিকে স্মরণীয় করে তুলেছেন। তিনি সিকিমের জনগণকে আবারো তাদের রাজ্যের গোল্ডেন জুবিলি অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “৫০ বছর আগে, সিকিম একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য যাত্রা শুরু করেছিল। সিকিমের মানুষ কেবল ভারতের ভূগোলের সাথে নয়, এর আত্মার সাথেও সংযুক্ত হয়েছিলেন বলে শ্রী মোদি উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, যখন সবার কথা শোনা হয় এবং সকলের অধিকার রক্ষা করা হয়, তখন উন্নয়নের জন্যও সমান সুযোগ তৈরি হয়। তিনি বলেন, আজ সিকিমের প্রতিটি পরিবারের বিশ্বাস আরও গভীর হয়েছে। শ্রী মোদি জোর দিয়ে বলেন, এই বিশ্বাসের ফলেই সারা দেশ সিকিমের অসাধারণ উন্নতি প্রত্যক্ষ করেছে। সিকিমকে দেশের গর্ব বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে সিকিম প্রকৃতির সাথে মিলিত হয়ে উন্নয়নের একটি মডেলে পরিণত হয়েছে। এই রাজ্যটি একটি ব্যাপক জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে, ১০০% জৈব রাজ্যের মর্যাদায় পৌঁছেছে এবং সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে উদিত হয়েছে। শ্রী মোদি উল্লেখ করেন যে, আজ সিকিম দেশের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, এই অর্জনগুলো সিকিমের মানুষের সক্ষমতার একটি সাক্ষ্য। শ্রী মোদি বলেন, গত পাঁচ দশকে সিকিম থেকে অনেক তারকা উঠে এসেছেন, যারা ভারতের দিগন্তকে আলোকিত করেছেন। তিনি সিকিমের প্রতিটি সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধির জন্য তাদের অবদানের প্রশংসা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সাল থেকে সরকার 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ' অর্থাৎ সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন এর মূলনীতি অনুসরণ করে আসছে৷ তিনি বলেন, একটি উন্নত ভারতের জন্য ভারসাম্যের প্রয়োজন, যাতে এটা নিশ্চিত হয় যে কোন অঞ্চল এগিয়ে যাওয়ার সময় অন্য কোনো অঞ্চল পিছিয়ে না থাকে। ভারতের প্রতিটি রাজ্য এবং অঞ্চলের নিজস্ব ব্যতিক্রমী শক্তি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মাথায় রেখে, গত দশকে সরকার উত্তর-পূর্বকে উন্নয়নের কেন্দ্রে রেখেছে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সরকার 'অ্যাক্ট ইস্ট' নীতিকে 'অ্যাক্ট ফাস্ট' এর আত্মার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।" দিল্লিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উত্তর-পূর্ব বিনিয়োগ সম্মেলনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শীর্ষ শিল্পপতি এবং বড় বিনিয়োগকারীরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যারা সিকিম সহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, আগামী বছরের মধ্যে, সিকিম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুবকদের জন্য অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
শ্রী মোদী বলেন, “আজকের অনুষ্ঠানে সিকিমের ভবিষ্যৎ যাত্রার একটি ঝলক দেখা যাচ্ছে৷” এদিন সিকিমের উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এই প্রকল্পগুলি অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, সংস্কৃতি, এবং ক্রীড়া সুবিধাকে উন্নত করবে। তিনি এসব প্রকল্পের সফল উদ্বোধনের জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সিকিম, গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে, ভারতের উন্নয়ন কাহিনীতে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে উঠছে৷ এ ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে দিল্লির দূরত্ব একসময় অগ্রগতির জন্য একটি বাধা ছিল, সেই অঞ্চলে এখন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এই পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বড় কারণ হলো যোগাযোগের উন্নতি৷ একটি পরিবর্তন যা সিকিমের মানুষ প্রথমবার প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আরো একটি সময়ের কথা স্মরণ করেন যখন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং চাকরির জন্য ভ্রমণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তিনি উল্লেখ করেন যে, গত দশকে পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি জানান, এই সময়ে সিকিমে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার নতুন জাতীয় মহাসড়ক নির্মিত হয়েছে। গ্রামে শতাধিক কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মিত হয়েছে। অটল সেতুর নির্মাণ সিকিমকে দার্জিলিংয়ের সাথে সংযুক্ত করেছে৷ সিকিমকে কালিম্পংয়ের সাথে সংযুক্ত করার জন্য কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বাগডোগরা-গ্যাংটক এক্সপ্রেসওয়ে সিকিমে আসা-যাওয়া অনেক বেশি সহজ করে দেবে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, তিনি এই এক্সপ্রেসওয়েটিকে গোরখপুর-শিলিগুড়ি এক্সপ্রেসওয়ের সাথে সংযুক্ত করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন, যা এই অঞ্চলের পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।
উত্তর-পূর্বের সমস্ত রাজ্যের রাজধানী শহরগুলিকে দ্রুত রেলপথের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কাজে ভাল অগ্রগতি হচ্ছে৷ শ্রী মোদী বলেন, সেবক-রংপো রেললাইন সিকিমকে জাতীয় রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে একীভূত করবে। তিনি জানান, যেখানে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা সম্ভব নয়, সেখানে বিকল্প হিসেবে রোপওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। শ্রী মোদী আরও জানান যে, আজকের দিনে বেশ কয়েকটি রোপওয়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে, যা সিকিমের মানুষের জন্য সুবিধা বাড়াবে। তিনি মন্তব্য করেন যে, গত দশকে, ভারত নতুন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এগিয়ে গেছে এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন একটি প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে রয়ে গেছে। গত ১০-১১ বছরে, প্রতিটি রাজ্যে বড় হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। শ্রী মোদী আরও উল্লেখ করে বলেন যে, দেশে এইমস এবং মেডিকেল কলেজগুলির উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ঘটেছে৷ সিকিমের মানুষের জন্য এদিন ৫০০ বেডের একটি হাসপাতাল উৎসর্গ করার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি, যাতে সবচেয়ে অবহেলিত পরিবারগুলোও এখানে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালের বিল্ডিং নির্মাণের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করার পাশাপাশি এটি যাতে সাশ্রয়ী এবং উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে পারে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি তুলে ধরেন যে, আয়ুষ্মান ভারত স্কিমের অধীনে সিকিমে ২৫,০০০ এরও বেশি মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, দেশব্যাপী ৭০ বছর বা তার বেশি বয়স্ক সকল প্রবীণ নাগরিক এখন ৫ লক্ষ পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য যোগ্য। তিনি আরও নিশ্চিত করেছেন যে, সিকিমের বৃদ্ধ সদস্যদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের চিন্তা করার দরকার হবে না, কারণ সরকার তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটি উন্নত ভারতের ভিত্তি চারটি শক্তিশালী স্তম্ভের উপর নির্ভর করে৷ এগুলো হল- গরীবদের, কৃষকদের, মহিলাদের, এবং যুবকদের ক্ষমতায়ন”৷ একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ ক্রমেই এই স্তম্ভগুলোকে শক্তিশালী করছে। তিনি ভারতের কৃষি উন্নতির জন্য তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সিকিমের কৃষকদের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সিকিম কৃষি উন্নতির নতুন ঢেউয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে”৷ শ্রী মোদী, জোর দিয়ে বলেন যে, সিকিম থেকে জৈব পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন যে সম্প্রতি, সিকিমের বিখ্যাত ডালে খুরসানি মরিচ প্রথমবারের মতো রপ্তানি করা হয়েছে এবং মার্চ ২০২৫-এ প্রথম চালান বিদেশে পাঠানো হয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, আসন্ন বছরগুলিতে, সিকিমের আরও অনেক পণ্য বৈশ্বিকভাবে রপ্তানি করা হবে। তিনি নিশ্চিত করেন যে, এই প্রচেষ্টাগুলোকে সমর্থন করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে৷
সিকিমের জৈব পণ্যকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আরেকটি পদক্ষেপ গ্রহণের কথাতুলে ধরে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে দেশের প্রথম জৈব মৎস্য ক্লাস্টার সোরেঙ জেলার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই উদ্যোগ সিকিমকে জাতীয় এবং বৈশ্বিক উভয় স্তরে একটি নতুন পরিচয় এনে দেবে। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন যে, জৈব চাষের পাশাপাশি সিকিম এখন জৈব মৎস্যের জন্যও স্বীকৃত হবে৷ তিনি বলেন, জৈব মাছ এবং মাছের পণ্যের জন্য বৈশ্বিকভাবে উল্লেখযোগ্য চাহিদা রয়েছে। এই উন্নয়ন সিকিমের যুবকদের জন্য মৎস্য খাতের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷
সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকটির কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন যে, প্রতিটি রাজ্যের জন্য একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পর্যটন গন্তব্য উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, সিকিম এখন শুধুমাত্র একটি পাহাড়ি স্টেশন হওয়ার সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বিকশিত হওয়ার সময় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সিকিমের সম্ভাবনা অতুলনীয়, এটি একটি সম্পূর্ণ পর্যটন প্যাকেজ প্রদান করে৷" তিনি বলেন, সিকিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি হ্রদ, জলপ্রপাত, পর্বত এবং শান্ত বৌদ্ধ বিহারেরও বাড়ি। শ্রী মোদী বলেন, কাঞ্জনজঙ্ঘা একটি জাতীয় উদ্যান, এটি একটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, এটি এমন একটি ঐতিহ্য যা কেবল ভারতকে নয় গোটা বিশ্বকে গর্বিত করে। তিনি উল্লেখ করেন, যে নতুন স্কাইওয়াকটি নির্মাণাধীন, যে গোল্ডেন জুবিলী প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করা হচ্ছে এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর একটি মূর্তি উন্মোচন করা হচ্ছে, এসব প্রকল্প সিকিমের নতুন উন্নতির শিখরের প্রতীকী কিছু।
"সিকিমের অ্যাডভেঞ্চার ও ক্রীড়া পর্যটনের জন্য বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে" – একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রেকিং, পর্বত বাইকিং এবং উচ্চতা প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এই অঞ্চলে বিরাজমান হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন যে, সিকিমকে সম্মেলন পর্যটন, স্বাস্থ্য পর্যটন এবং কনসার্ট পর্যটনের একটি কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য রয়েছে। গোল্ডেন জুবিলি কনভেনশন সেন্টার এই ভবিষ্যতের প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মন্তব্য করে, প্রধানমন্ত্রী জানান যে গ্যাংটকের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের পারফর্ম করার সুযোগ রয়েছে এবং এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও তিনি একমত যে সিকিম প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সাদৃশ্য সুন্দরভাবে তুলে ধরতে সক্ষম৷
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের বৈঠক আয়োজন করার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিযে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে এই এলাকার সম্ভাবনাকে তুলে ধরা হয়েছে৷ সিকিম সরকার যেভাবে দ্রুত এই দৃষ্টিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করছে তারজন্য শ্রী মোদি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ভারত এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তি এবং একটি ক্রীড়া সুপারপাওয়ার হওয়ার পথে রয়েছে। উত্তর-পূর্বের যুবকরা, বিশেষ করে সিকিমের যুবকরা, এই স্বপ্ন অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। শ্রী মোদি সিকিমের ধনী ক্রীড়া ঐতিহ্যকে স্বীকার করেছেন, ফুটবল কিংবদন্তি ভাইচুং ভূঁটিয়া, অলিম্পিয়ান তারুন্দীপ রাই এবং খেলোয়াড় জসলাল প্রধানের মতো ব্যক্তিত্বদের কথা উল্লেখ করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এমন একটি ভবিষ্যৎ এর কথা কল্পনা করেছেন যেখানে সিকিমের প্রতিটি গ্রাম ও শহরে নতুন চ্যাম্পিয়ন তৈরি হবে। তিনি বলেন, “ক্রীড়া শুধুমাত্র অংশগ্রহণের জন্য নয় বরং সংকল্পের সাথে বিজয় অর্জনের জন্য হওয়া উচিত৷” গ্যাংটকের নতুন ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়নদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন যে, খেলো ভারত প্রকল্পের অধীনে, সিকিম বিশেষ মনোযোগ পাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, প্রতিভা সনাক্তকরণ, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি এবং টুর্নামেন্টগুলো সব স্তরে সাহায্য পাচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে সিকিমের যুবকদের উদ্দীপনা ও আবেগ ভারতকে অলিম্পিক গৌরবে উন্নীত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, সিকিমের মানুষ পর্যটনের ক্ষমতা বোঝেন৷ তিনি বলেন, পর্যটন কেবল বিনোদন নয়, বরং বৈচিত্র্যের উদযাপন৷ পহেলগামের হামলা কেবল ভারতীয়দের বিরুদ্ধে আক্রমণ ছিল না, এটি মানবতার এবং ভ্রাতৃত্বের বিরুদ্ধে একটি আক্রমণ৷ তিনি উল্লেখ করেন যে সন্ত্রাসীরা কেবল অনেক পরিবারের সুখ চুরি করেনি, বরং ভারতের জনগণের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা করেছে। শ্রী মোদী ঘোষণা করেন যে, "আজ গোটা বিশ্ব ভারতীয়দের নজিরবিহীন একতার সাক্ষী হয়েছে এবং দেশ সন্ত্রাসীদের এবং তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে সর্বত্র এই স্পষ্ট বার্তা পাঠানোর জন্য একত্রিত হয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন যে, তারা ভারতীয় কন্যাদের কপালের সিন্দুর মুছিয়ে যন্ত্রণা দিয়েছে, কিন্তু ভারত অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলি ধ্বংসের পরে পাকিস্তান ভারতীয় অসামরিক ও সৈন্যদের লক্ষ্যবস্তু করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এই প্রক্রিয়া প্রকাশ্যে এসে পড়ে। শ্রী মোদি জোর দিয়ে বলেন যে, ভারত পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি বিমানঘাঁটি ধ্বংস করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যা দেশের কৌশলগত সক্ষমতাকে তুলে ধরেছে৷
শ্রী মোদী বলেন, “সিকিমের ৫০ বছরের মাইলফলক রাজ্য হিসেবে সকলের জন্য একটি অনুপ্রেরণা এবং উন্নয়নের যাত্রা সিকিম এখন আরও দ্রুততার দিকে ধাবিত হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার ১০০ বছর এবং সিকিমের রাজ্য হিসেবে ৭৫ বছর পূর্ণ হবে৷এই মাইলফলের জন্য সিকিম কেমন হবে সে বিষয়ে লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তিনি। সিকিমের ভবিষ্যতের জন্য একটি রোডম্যাপ পরিকল্পনা, পর্যালোচনা এবং একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে, শ্রী মোদী সিকিমের অর্থনীতিকে উন্নত করার এবং এটি একটি ‘সুস্বাস্থ্য রাজ্য’ হিসেবে গঠনের গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, যুবকদের জন্য আরও সুযোগ তৈরিতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। সিকিমের যুবসমাজকে শুধু স্থানীয় চাহিদার জন্যই নয়, বরং বৈশ্বিক চাহিদাও মেটানোর জন্য প্রস্তুত হতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ আন্তর্জাতিকস্তরে যে সমস্ত ক্ষেত্রে যুবকদের উচ্চ চাহিদা থাকবে, সেই সমস্ত ক্ষেত্রে নতুন দক্ষতা বিকাশের সুযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি৷
সিকিমকে যাতে আগামী ২৫ বছরে উন্নয়ন, ঐতিহ্য এবং বৈশ্বিক স্বীকৃতির সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়া যায় তারজন্য প্রধানমন্ত্রী সকলকে একটি সম্মিলিত অঙ্গীকার নিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "আমাদের স্বপ্ন হলো সিকিম শুধু ভারতের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি সবুজ মডেল রাজ্যে পরিণত হোক৷" সিকিমের প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি নিরাপদ বাড়ি নিশ্চিত করার লক্ষ্যের উপর জোর দিয়ে প্রতিটি বাড়িতে সৌরশক্তির বিদ্যুৎ পৌঁছানোর দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, "সিকিমকে কৃষি-স্টার্টআপ এবং পর্যটন স্টার্টআপের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় হতে হবে এবং জৈব খাবারের রপ্তানিতে বৈশ্বিকভাবে তার পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷" তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সিকিম এমন একটি স্থান হওয়া উচিত যেখানে প্রতিটি নাগরিক ডিজিটাল লেনদেন গ্রহণ করবে এবং এই রাজ্যে বর্জ্য থেকে সম্পদ তৈরির উদ্যোগগুলিকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে। শ্রী মোদী এই বলে বক্তব্যের সমাপ্তি টানেন যে, "আগামী ২৫ বছর হবে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যগুলি অর্জন এবং সিকিমের বৈশ্বিক মঞ্চে উপস্থিতি প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসর্গিত৷" এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সকলকে এগিয়ে যেতে আহ্বান রাখেন৷
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিকিমের রাজ্যপাল, শ্রী ওম প্রকাশ মাথুর, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী, শ্রী প্রেম সিং তামাং এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য, এদিন প্রধানমন্ত্রী সিকিমে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং উদ্বোধন করেছেন। প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে নামচি জেলায় ৭৫০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের একটি নতুন ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল; গ্যালশিং জেলার পেলিংয়ে সাঙ্গাচোলিংয়ে যাত্রী রোপওয়ে; সিকিম জেলার সাঙ্গখোলায় অটল অমৃত উদ্যানের সামনে ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ী”জির মূর্তি সহ অন্যান্য প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী ৫০ বছরের অন্তর্ভূক্তির স্মারক মুদ্রা, স্মৃতিচিহ্ন মুদ্রা এবং ডাকটিকিটেরও সূচনা করেছেন৷
***
KMD/DM/...... 29-05-2025… Word- 2013.. (Release ID: 2132238)
(Release ID: 2132422)