প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

'রাইজিং নর্থ ইস্ট ইনভেস্টর্স সামিট ২০২৫' এর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী

আমাদের বৈচিত্র্যময় দেশের মধ্যে উত্তর পূর্বাঞ্চল সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময় : প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 23 MAY 2025 12:57PM by PIB Agartala

নয়াদিল্লী, ২৩ মে ২০২৫, পিআইবি।।  আজ নতুন দিল্লির ভারত মণ্ডপমে ২০২৫ সালের রাইজিং নর্থ ইস্ট ইনভেস্টর্স সামিটের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উষ্ণ অভিবাদন জানিয়ে, প্রধানমন্ত্রী উত্তর- পূর্বাঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে গর্ব, উষ্ণতা ও অত্যন্ত আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেছেন।  ভারত মণ্ডপমে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অষ্টলক্ষ্মী মহোৎসবের কথা স্মরণ করে তিনি উল্লেখ করেন যে, আজকের অনুষ্ঠান উত্তর-পূর্বের জন্য বিনিয়োগের একটি উৎসব।  সামিটে শিল্প নেতাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উপস্থিতির উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলে সুযোগের জন্য উৎসাহের অভাব নেই। তিনি সমস্ত মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারগুলিকে অভিনন্দন জানান, তাদের পক্ষ থেকে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টার জন্য।  উত্তর-পূর্ব রাইজিং সামিটের প্রতি তার শুভকামনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এই অঞ্চলের অব্যাহত বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় দেশ হিসেবে উল্লেখ করে শ্রী মোদি বলেন, "উত্তরপূর্ব আমাদের বৈচিত্র্যময় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় অঞ্চল"।  বাণিজ্য, ঐতিহ্য, বস্ত্র ও পর্যটন নিয়ে এই অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের বৈচিত্র্যই হল এর সবচেয়ে বড় শক্তি। তিনি বলেন, উত্তরপূর্ব দেশের একটি সমৃদ্ধ জৈব-অর্থনীতির অঞ্চল। বাঁশ শিল্প, চা উৎপাদন, তেল, ক্রীড়া ও দক্ষতার জন্যে এবং একটি উদীয়মান ইকো-পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও এই অঞ্চল অধিক পরিচিত। তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চল জৈব পণ্যের জন্য রাস্তা দেখাচ্ছে এবং একটি শক্তির কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসছে। তিনি নিশ্চিত করেন যে, উত্তরপূর্ব অষ্টলক্ষী'র সারমর্ম ধারণ করে, যা সমৃদ্ধি এবং সুযোগ নিয়ে আসে।  তিনি বলেন, এই শক্তির মাধ্যমে প্রতিটি উত্তরপূর্ব রাজ্য বিনিয়োগ ও নেতৃত্বের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে।

উন্নত ভারতের সাফল্য অর্জনে পূর্ব ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরে, প্রধানমন্ত্রী উত্তরপূর্বকে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের জন্য, পূর্ব কেবল একটি দিক নয় বরং একটি দৃষ্টি—ক্ষমতা, কার্যকর, শক্তিশালীকরণ এবং রূপান্তর—যা এই অঞ্চলের জন্য নীতির কাঠামো সংজ্ঞায়িত করে”। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এই পদ্ধতি পূর্ব ভারত, বিশেষ করে উত্তরপূর্বকে ভারতের প্রবৃদ্ধির পথের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।

 উত্তর পূর্বাঞ্চলে গত ১১ বছরে সাক্ষী থাকা পরিবর্তনশীল পরিবর্তনগুলির উপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অগ্রগতি কেবল পরিসংখ্যানের মধ্যে প্রতিফলিত হয় না, বরং এটি বাস্তবে দৃশ্যমান। তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ কেবল সরকারের নীতিগত ব্যবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে একটি আবেগপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য।  কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ৭০০ এরও বেশি উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলির সফরের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী, যা তাদের এই অঞ্চলের প্রতি প্রতিশ্রুতি, মানুষের স্বপ্ন এবং সেই বিশ্বাসকে উন্নয়ন নীতিতে রূপান্তর করার প্রচেষ্টার নিদর্শন বলে উল্লেখ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলি কেবল ইট ও সিমেন্ট এর মধ্যেই সীমিত রাখা নয় বরং আবেগের সংযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এটি।  'লুক ইস্ট' থেকে 'এক্ট ইস্ট'-এ পরিবর্তনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি দৃশ্যমান ফলাফল দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "যে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে একসময় কেবল সীমান্ত অঞ্চলের মত মনে করা হত, এখন এটি এখন ভারতের উন্নয়নের কাহিনীর অগ্রদূত হয়ে উঠছে।"

শ্রী মোদী উল্লেখ করেন যে, শক্তিশালী পরিকাঠামো পর্যটন খাতকে আকর্ষণীয় করতে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, উন্নত সড়ক, বিদ্যুৎ পরিকাঠামো এবং লজিস্টিক নেটওয়ার্কগুলি যেকোনো শিল্পের মেরুদণ্ড গঠন করে, যা নির্বিঘ্ন বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে সহজ করে তোলে। তিনি মন্তব্য করেন যে, পরিকাঠামো উন্নয়নের ভিত্তিস্বরূপ এবং সরকার উত্তর-পূর্বে একটি পরিকাঠামো বিপ্লব শুরু করেছে। এই অঞ্চলের অতীতের চ্যালেঞ্জগুলোকে স্বীকার করেন তিনি। সেই সাথে উল্লেখ করেন যে, এটি এখন সম্ভাবনার ভূমি হিসেবে উঠে আসছে। তিনি বলেন, সংযোগ উন্নত করতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, অরুণাচল প্রদেশে সেলা টানেল এবং আসামে ভূপেন হাজারিকা সেতুর মত প্রকল্পগুলোর উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি। গত দশকে প্রধান উন্নয়নগুলো সম্পর্কে তুলে ধরেছেন শ্রী মোদী, যার মধ্যে ১১,০০০ কিলোমিটার হাইওয়ে নির্মাণ, নতুন বিস্তৃত রেললাইন, বিমানবন্দরের সংখ্যা দ্বিগুণ করা, ব্রহ্মপুত্র এবং বরাক নদীতে নৌপথের উন্নয়ন এবং শত শত মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করার মত বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই অঞ্চলে ১,৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উত্তরপূর্ব গ্যাস গ্রিড স্থাপন করা হয়েছে, যা শিল্পগুলোর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করে। শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন যে হাইওয়ে, রেলওয়ে, নৌপথ এবং ডিজিটাল সংযোগ উত্তর-পূর্বের পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করছে, শিল্পগুলোর জন্য প্রথম মুভার অ্যাডভান্টেজ অর্জনের জন্য একটি উষ্ণ পরিবেশ তৈরি করছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, আগামী দশকে এই অঞ্চলের বাণিজ্য সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ভারতের অ্যাসিয়ান সহযোগিতা সংস্থার সাথে ব্যবসার আয়তন বর্তমানে প্রায় ১২৫ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী বছরগুলিতে ২০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করার প্রত্যাশা রয়েছে। যে কারণে উত্তর-পূর্ব একটি কৌশলগত বাণিজ্য সেতু এবং অ্যাসিয়ান বাজারের জন্য প্রবেশদ্বার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি সরকারি পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির গতি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যাতে আঞ্চলিক সংযোগকে আরও উন্নত করা হয়। ভারত-মায়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় হাইওয়ের গুরুত্বকে জোর দিয়ে তিনি বলেন, এটি মায়ানমার থেকে থাইল্যান্ডে পর্যন্ত সরাসরি প্রবেশাধিকারের সুযোগ প্রদান করবে এবং  থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং লাওসের সাথে ভারতের সংযোগকে শক্তিশালী করবে।  ক্যালাডান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট প্রকল্পের গতি বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী, যা কলকাতা বন্দরের সাথে মায়ানমারের সিটওয়ে বন্দরের সংযোগ ঘটাবে এবং মিজোরামের মধ্য দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ প্রদান করবে। তিনি বলেছেন যে, এই প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গ এবং মিজোরামের মধ্যে ভ্রমণের দূরত্ব উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনবে, বাণিজ্য ও শিল্পের বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

গুয়াহাটি, ইম্ফল এবং আগরতলাকে বহু-মাত্রিক লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, মেঘালয় ও মিজোরামে ভূমি কাস্টম স্টেশন স্থাপন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুযোগগুলিকে আরও সম্প্রসারিত করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এই অগ্রগতি উত্তর-পূর্বকে ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যে একটি উত্থানশীল শক্তি হিসেবে গড়ে তুলছে, যা বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নতুন পথ উন্মুক্ত করছে।

ভারতকে বিশ্ব স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা প্রদানকারী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরে, প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'হীল ইন ইন্ডিয়া' উদ্যোগটি একটি বৈশ্বিক আন্দোলন হিসেবে উন্নয়ন করা হচ্ছে। তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের সমৃদ্ধ জৈব বৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জৈব জীবনশৈলীর কথা উল্লেখ করে এটিকে সুস্থতার জন্য একটি নিখুঁত গন্তব্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভারতের 'হীল ইন ইন্ডিয়া' মিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে অন্বেষণ করতে বলেন। তিনি পুনরায় উল্লেখ করে বলেন যে, এই অঞ্চলের জলবায়ু এবং পরিবেশগত বৈচিত্র্য সুস্থতা-চালিত শিল্পগুলোর জন্য বিশাল সম্ভাবনা প্রদান করবে।

 উত্তর-পূর্ব ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী , যা সংগীত, নৃত্য এবং উৎসবের সাথে নিবিড় ভাবে যুক্ত। তিনি বলেন, এই অঞ্চলটি বৈশ্বিক সম্মেলন, কনসার্ট, এবং গন্তব্য বিবাহের জন্য একটি আদর্শ স্থান, যা এটিকে একটি সম্পূর্ণ পর্যটন প্যাকেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলছে। তিনি বলেন, উন্নয়ন যখন উত্তর-পূর্বের প্রতিটি কোণে পৌঁছায়, তখন  পর্যটনে এর ইতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হয়। তাই এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এগুলো শুধুমাত্র একটি পরিসংখ্যানই নয়—এই উত্থান গ্রামে হোমস্টে বাড়ানোর, যুব গাইডদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং পর্যটন এবং সফর দক্ষতায় সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। উত্তর-পূর্বের পর্যটনকে আরও উন্নীত করার প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে, তিনি ইকো-টুরিজম এবং সাংস্কৃতিক পর্যটনে বিপুল বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন। শান্তি এবং আইন-শৃঙ্খলা যে কোনও অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সে কথা উল্লেখ করে, শ্রী মোদী বলেন, “আমাদের সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করে।” তিনি বলেন, উত্তরপূর্ব অঞ্চলে একসময় অবরোধ ও সংঘাতের সংস্কৃতি ছিল, যা স্থানীয় যুবকদের জন্য সুযোগকে ব্যাহত করেছিল। এই প্রসঙ্গে সরকারে শান্তি চুক্তির জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন তিনি। সেই সাথে এও উল্লেখ করেন যে, গত ১০-১১ বছরে ১০,০০০ এরও বেশি যুবক শান্তির পথে ফিরে এসেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এই পরিবর্তনটি এই অঞ্চলে নতুন কর্মসংস্থান ও উদ্যোগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। মুদ্রা প্রকল্পের প্রভাবের কথাও শ্রী মোদী উল্লেখ করেছেন, যা উত্তরপূর্ব অঞ্চলের লাখ লাখ যুবকদের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উত্থান ও যুবকদের ভবিষ্যতের জন্য দক্ষতা উন্নয়নের প্রসঙ্গও তিনি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, উত্তরপূর্বের যুবকরা শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই নন, বরং উদীয়মান ডিজিটাল এরও উদ্ভাবক। তিনি ১৩,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি অপটিক্যাল ফাইবার সম্প্রসারণ, ফোর জি এবং ফাইভ জি কভারেজ, এবং প্রযুক্তি খাতে বাড়তে থাকা সুযোগগুলির মতো অগ্রগতিগুলির উপরও জোর দেন। যুব উদ্যোক্তারা এখন এই অঞ্চলে বড় স্টার্টআপ শুরু করছেন, যা উত্তরপূর্ব ভারতের ডিজিটাল গেটওয়ের ভূমিকাকে আরও দৃঢ় করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 উন্নয়নে দক্ষতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এই অগ্রগতির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ প্রদান করে। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের উদ্যোগে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, গত দশক ধরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিক্ষা খাতে ২১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন, যার মধ্যে ৮০০টিরও বেশি নতুন স্কুলের প্রতিষ্ঠা, এই অঞ্চলের প্রথম এইমস, নয়টি নতুন মেডিকেল কলেজ এবং দুটি নতুন আইআইটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন। উপরন্তু, মিজোরামে ভারতের গণযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি এবং এই অঞ্চলে প্রায় ২০০টি নতুন দক্ষতা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রথম ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় উত্তর-পূর্বে তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে খেলো ভারত কর্মসূচির অধীনে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা হচ্ছে। তিনি নির্দেশ করেছেন যে, আটটি খেলো ভারত কেন্দ্রের উৎকর্ষতা কেন্দ্র এবং ২৫০টিরও বেশি খেলো ভারত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা এই অঞ্চলের ক্রীড়া প্রতিভার বিকাশের জন্যে সহায়তা করছে। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে, উত্তর-পূর্ব এখন বিভিন্ন খাতে শীর্ষ স্তরের প্রতিভার যোগান দিচ্ছে, শিল্প ও বিনিয়োগকারীদেরকে এই অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা সদ্ব্যবহার করার জন্য আহ্বান রাখেন তিনি।

 জৈব খাদ্যের জন্য বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা চাহিদার ওপর জোর দিয়েছেন শ্রী মোদী। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি হল একটি ভারতীয় খাদ্য ব্র্যান্ড বিশ্বের প্রতিটি খাওয়ার টেবিলে উপস্থিত করা। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে তিনি  উত্তর পূর্বকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত দশকে, উত্তর পূর্বে জৈব চাষের ক্ষেত্র দ্বিগুণ হয়েছে। এই অঞ্চলটি উচ্চমানের চা, আনারস, কমলা, লেবু, হলুদ এবং আদা উৎপাদন করছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, অসাধারণ স্বাদ এবং উচ্চ মানের কারণে এই পণ্যের আন্তর্জাতিক চাহিদা বাড়ছে।  অংশীদারদের এই বাড়তে থাকা বাজারে সুযোগ নিতে উৎসাহিত করেছেন তিনি। উত্তর পূর্ব -কে ভারতের জৈব খাদ্য রপ্তানির একটি মূল চালক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

 উত্তর পূর্বে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট স্থাপনের সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও উন্নত সংযোগ ইতিমধ্যে এই উদ্যোগকে সমর্থন করছে, তবে বৃহৎ খাদ্য পার্ক তৈরি, কোল্ডস্টোরেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং পরীক্ষার ল্যাব সুবিধা প্রদানের জন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি তেল পাম মিশনের উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করেন। উত্তর পূর্বের মাটি ও জলবায়ুকে তেল পাম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত হিসেবে মনে করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উদ্যোগটি কৃষকদের জন্য একটি শক্তিশালী আয়ের সুযোগ প্রদান করে এবং ভারতের ভোজ্য তেল আমদানির উপর নির্ভরতা কমায়। তিনি আরও জানান, পাম তেল চাষ শিল্পগুলির জন্য একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি করে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে এই অঞ্চলের কৃষি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে উৎসাহিত করে।

“ দুটি কৌশলগত খাত—বিদ্যুৎ এবং সেমি কন্ডাকটর সেক্টরের জন্য উত্তর পূর্ব একটি প্রধান গন্তব্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে” বলে জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী, জলবিদ্যুৎ এবং সৌরশক্তিতে  সরকারের ব্যাপক বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করেছেন, যা উত্তর-পূর্বের সকল রাজ্যেই চলছে এবং যেখানে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ইতোমধ্যেই অনুমোদিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, প্রকল্প এবং পরিকাঠামোর বিনিয়োগের সুযোগের বাইরে, উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমন সৌর মডিউল, সেল, সংরক্ষণ সমাধান এবং গবেষণার উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে সর্বাধিক করার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন যে, বর্তমানে অধিক স্বনির্ভরতা ভবিষ্যতে বিদেশী আমদানির উপর নির্ভরতা কমাবে। দেশের নিজস্ব সেমি কন্ডাকটর উৎপাদনে আসামের বাড়তে থাকা ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই উদ্যোগ ভারতের সেমি কন্ডাকটর সিস্টেমকে শক্তিশালী করছে। তিনি ঘোষণা করেন যে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর কারখানা থেকে প্রথম 'মেড ইন ইন্ডিয়া' চিপ শীঘ্রই উন্মোচন করা হবে, যা এলাকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তিনি নিশ্চিত করেন যে এই উন্নয়ন আধুনিক প্রযুক্তির জন্য নতুন সুযোগকে উন্মুক্ত করছে এবং ভারতের উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প বৃদ্ধিতে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অবস্থানকে আরও মজবুত করছে।

“উত্তরপূর্ব উত্থান শুধু একটি বিনিয়োগকারী সম্মেলন নয়—এটি একটি আন্দোলন এবং কার্যক্রমের আহ্বান,”। একথা জোর দিয়ে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতের ভবিষ্যৎ উত্তরপূর্বের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে তাদেরকে বৃদ্ধির জন্য একত্রিত হতে উৎসাহিত করেন। ভাষণের সমাপ্তিতে, তিনি অংশীদারদেরকে এই অঞ্চলে বিনিয়োগ এর জন্যে আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেন যে উত্তরপূর্বের সম্ভাবনার প্রতীক অষ্টলক্ষ্মী —কে বিকশিত ভারতের জন্য একটি নির্দেশক শক্তিতে রূপান্তর করতে একসাথে কাজ করতে হবে। তিনি আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন যে পরবর্তী উত্তরপূর্ব উত্থানের সময় ভারত অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

এদিনের এই বিনিয়োগ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, শ্রী জ্যোতিরাদিত্য এম. সিন্ধিয়া, মণিপুরের রাজ্যপাল, শ্রী অজয় কুমার ভল্লা, আসামের মুখ্যমন্ত্রী, শ্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, শ্রী পেমা খান্দু, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী, শ্রী কনরাড সাংমা, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী, শ্রী লালদুহোমা, নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী, শ্রী নেপিহু রিও, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী, শ্রী প্রেম সিং তামাং, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী, শ্রী মানিক সাহা, উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন বিষয়ক কেন্দ্রীয় রাজ্যমন্ত্রী, ড. সুকান্ত মজুমদার এবং অন্যান্য আরও অনেকে।

KMD/DM


(Release ID: 2130895)
Read this release in: English