সংস্কৃতি মন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

আধ্যাত্মিক শক্তিকেন্দ্র: মহাকুম্ভ ২০২৫-এর অগ্রভাগে সমস্ত আখড়া

Posted On: 23 JAN 2025 4:02PM by PIB Agartala

নয়াদিল্লি, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫: মহাকুম্ভ মেলায় আখড়াগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই অনুষ্ঠানের হৃদয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সনাতন ধর্মের বিভিন্ন প্রথা ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী এই আখড়াগুলোর নাম এসেছে ‘অখণ্ড’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘অবিভাজ্য’। আদি শঙ্করাচার্যের সময় থেকে (৬ষ্ঠ শতাব্দীতে) শুরু হওয়া এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আধ্যাত্মিক চর্চা ও রীতিনীতির ধারক হয়ে রয়েছে, যা কুম্ভমেলার মূলভিত্তি গড়ে তুলেছে। তাদের স্বতন্ত্র প্রথা এবং অগ্রগামিতা - কাঠামোর মাধ্যমে আখড়াই মহাকুম্ভের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে বিরাজ করে আসছে, এবং তাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কোটি কোটি ভক্তকে এখানে টেনে আনে।

কুম্ভমেলায় আখড়াগুলো শুধুমাত্র পূজা বা আরাধনার কেন্দ্র হিসেবেই নয়, বরং আধ্যাত্মিক শিক্ষা এবং শারীরিক প্রশিক্ষণের কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। আখড়া ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল শাস্ত্রের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রচার এবং যুদ্ধকলার মাধ্যমে শারীরিক প্রতিরক্ষার দ্বৈত উদ্দেশ্য পূরণের জন্য। আজও এই আখড়াগুলো পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে তাদের মূল আদর্শ বজায় রেখেছে। আখড়াগুলোর নেতৃত্বে থাকা মহামণ্ডলেশ্বররা আধ্যাত্মিক ও সাংগঠনিক উভয় দিক সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের নেতৃত্বই কুম্ভ মেলার আচার-অনুষ্ঠান এবং শোভাযাত্রাগুলোকে সার্থক করে তোলে।

আখড়ার ১৩ প্রতি শ্রেণীর মধ্যে শৈব, বৈষ্ণব এবং উদাসীন সম্প্রদায় তাদের গভীর আধ্যাত্মিক গুরুত্বের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই আখড়াগুলো কুম্ভমেলার বৈচিত্র্যে বিশেষ অবদান রাখে। প্রত্যেকেই তাদের ভক্তি, উপাসনা এবং জীবনের অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনা করে। শৈব আখড়াগুলোর নেতৃত্বে থাকেন নাগা সন্ন্যাসীরা, যাঁরা মহাদেব শিবের উপাসক এবং তাঁদের আধ্যাত্মিক ও যুদ্ধকুশলতার জন্য পরিচিত। ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র যেমন বর্শা ও তরোয়াল বহন করা এই নাগা সন্ন্যাসীরা কুম্ভমেলার শোভাযাত্রা এবং আচার-অনুষ্ঠানে, বিশেষত শাহী স্নানের সময়, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

শৈব আখড়ার নাগা সন্ন্যাসীরা, বিশেষত জুনা আখড়ার সন্ন্যাসীরা, কুম্ভমেলার অন্যতম শ্রদ্ধেয় অংশগ্রহণকারী। কঠোর তপস্যা এবং যুদ্ধকলায় দক্ষতার জন্য পরিচিত এই নাগা সন্ন্যাসীরা কুম্ভমেলার আধ্যাত্মিক যোদ্ধাদের ঐতিহ্য বহন করেন। বিপুল সংখ্যক দীক্ষিত নাগা সন্ন্যাসীসহ জুনা আখড়া কুম্ভমেলায় একটি প্রধান আধ্যাত্মিক শক্তি হিসেবে রয়ে গেছে, যা ভক্তদের আধ্যাত্মিক আলোকপ্রাপ্তি ও শারীরিক শৃঙ্খলার সন্ধান দিতে আকর্ষণ করে।

শ্রী পঞ্চ দশনাম আবাহন আখড়া কুম্ভমেলার অন্যতম ঐতিহাসিক আখড়া, যার ইতিহাস ১,২০০ বছরেরও বেশি পুরোনো। মহন্ত গোপাল গিরির নেতৃত্বে থাকা এই আখড়াটি ছড়ি-যাত্রার পবিত্র ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এই যাত্রায় একটি পবিত্র দণ্ড বহন করা হয়, যা ঐশ্বরিক কর্তৃত্বের প্রতীক। আবাহন আখড়ার ভূমিকা প্রাচীন আচার-অনুষ্ঠান সংরক্ষণের দিকে নিবদ্ধ, যা আধুনিক সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ীও মানিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর স্থায়ী উপস্থিতি সনাতন ধর্মের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আখড়াগুলোর চিরন্তন গুরুত্বকে তুলে ধরে।

বৈষ্ণব আখড়াগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রী পঞ্চ নির্মোহী আনি আখড়া, শ্রী পঞ্চ নিরবাণী আনি আখড়া, এবং শ্রী পঞ্চ দিগম্বর আনি আখড়া। এই আখড়াগুলোও কুম্ভমেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আখড়াগুলো শ্রী বিষ্ণুর আরাধনায়—বিশেষত তাঁর হনুমান রূপের আরাধনায় নিবেদিত। তাদের ধর্মধ্বজা (ধর্মীয় পতাকা) উত্তোলন, যেখানে শ্রী হনুমানের প্রতিচ্ছবি থাকে, তা ভক্তদের প্রতি ঐশ্বরিক সুরক্ষা ও আশীর্বাদ প্রদানকে নির্দেশ করে। এটি কুম্ভমেলার আধ্যাত্মিক পরিবেশকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।

এবারের মহাকুম্ভ আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন চিহ্নিত করছে, কারণ প্রথমবারের মতো ১,০০০-এরও বেশি নারী বিভিন্ন আখড়ায় অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছেন। ইতিমধ্যেই অনেক নারী সন্ন্যাস গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলেন রাধেনন্দ ভারতী, যিনি সংস্কৃতে পিএইচ.ডি. করছেন। আখড়াগুলোতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি আধ্যাত্মিক জীবনে তাঁদের ভূমিকার প্রতি ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতির প্রতিফলন। এমনকি কিছু আখড়া নারীদের জন্য আলাদা স্থানও তৈরি করেছে, যা তাঁদের আধ্যাত্মিক বিকাশে সহায়তা করছে।

এই আধ্যাত্মিক আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে শ্রী পঞ্চদশনাম জুনা আখড়া, যা কুম্ভের বৃহত্তম ও অন্যতম প্রভাবশালী আখড়া। এই আখড়াটি ইতোমধ্যে ২০০-রও বেশি নারীকে সন্ন্যাসে দীক্ষিত করেছে, এবং এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি জুনা আখড়া তাদের নারী সন্ন্যাসীদের সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে 'সন্ন্যাসিনী শ্রী পঞ্চদশনাম জুনা আখড়া' রেখেছে, যা আধ্যাত্মিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সম্মাননীয় পরিচিতি লাভ করেছে। লিঙ্গ সমতার এই অঙ্গীকারের মাধ্যমে আখড়াগুলো কেবল তাদের অভ্যন্তরীণ কাঠামো পুনর্গঠন করছে না, বরং ভারতীয় সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক জীবনে নারীদের সক্রিয়ভাবে অবদান রাখতে ক্ষমতাবান করে তুলছে।

সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও প্রভাবশালী আখড়াগুলোর একটি হচ্ছে মহা নির্বাণী আখড়া, যা লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এটিই প্রথম আখড়া যারা নারীদের জন্য মহামণ্ডলেশ্বর পদ সৃষ্টি করেছে। আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই আখড়া নিরন্তর কাজ করছে। নারী মহামণ্ডলেশ্বরদের অংশগ্রহণ, যেমন সাধ্বী গীতা ভারতী এবং সন্তোষ পুরী, আখড়ার এই প্রতিশ্রুতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই আখড়া নারীদের আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনার সমান সুযোগ সুনিশ্চিত করছে।

লিঙ্গ সমতার পাশাপাশি মহা নির্বাণী আখড়া পরিবেশ সংরক্ষণেও জোর দিচ্ছে। আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে তারা পরিবেশ রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। কুম্ভমেলার আধ্যাত্মিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে এই উদ্যোগগুলি পরিবেশ সচেতনতা এবং সুস্থায়ী ব্যবস্থাপনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আচার-অনুষ্ঠান ও মেলার কার্যক্রমে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা আখড়ার গভীর প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক।

কুম্ভমেলায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্নর আখড়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি, যা কিন্নর সম্প্রদায়ের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক স্থান তৈরি করেছে। সমাজে ঐতিহ্যগতভাবে উপেক্ষিত এই সম্প্রদায়ের জন্য আধ্যাত্মিক চর্চায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এবার প্রথমবারের মতো, মহাকুম্ভে একটি কিন্নর আখড়া অংশগ্রহণ করেছে, যা এই মেলা এবং সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই আখড়া সমতার ও সম্মানের আদর্শকে ধারণ করে, কিন্নর সম্প্রদায়কে সনাতন ধর্মের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।

মহাকুম্ভ ২০২৫: আখড়ার চিরন্তন প্রাসঙ্গিকতা:

মহাকুম্ভ মেলা— বিশেষ করে ২০২৫ সালের এই মহাকুম্ভ মেলা  আধ্যাত্মিক জীবনে আখড়াগুলোর চিরকালীন প্রাসঙ্গিকতার প্রমাণ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো সনাতন ধর্মের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে শুধু সংরক্ষণই করছে না, বরং আধুনিক চিন্তাধারাকে গ্রহণ করে অন্তর্ভুক্তি ও সমতার আদর্শও প্রতিষ্ঠা করছে। মহাকুম্ভে আখড়াগুলো লক্ষ লক্ষ ভক্তকে অনুপ্রাণিত করছে, তাদের আধ্যাত্মিক উন্নয়ন, শৃঙ্খলা এবং ঐক্যের পথে পরিচালিত করছে। যখন জাঁকজমকপূর্ণ শোভাযাত্রা এবং পবিত্র আচার-অনুষ্ঠানগুলো অনুষ্ঠিত হয়, তখন এই আখড়াগুলো মহাকুম্ভের হৃদয় ও আত্মা হয়ে ওঠে। তারা ভক্তদের সঙ্গে দেবতার এবং পরস্পরের সঙ্গে আরও গভীর সংযোগ স্থাপনের পথ প্রদর্শন করে, আধ্যাত্মিক ঐক্যের একটি অনন্য উদাহরণ স্থাপন করে।

https://kumbh.gov.in/en/spiritualgurus

Click here to see in PDF:

***

SKC/ADK/KMD


(Release ID: 2095708) Visitor Counter : 19


Read this release in: English