স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ আগরতলায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পর্ষদের (এনইসি) ৭২তম পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে ভাষণ দেন
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও সংবেদনশীলতা দিয়ে এই অঞ্চলকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছেন
পুরো দেশ এবং বিশ্ব এখন মোদীজির 'অষ্টলক্ষ্মী' ধারণাটি গ্রহণ করছে
Posted On:
21 DEC 2024 6:48PM by PIB Agartala
নয়াদিল্লি, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ আজ ত্রিপুরার আগরতলায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পর্ষদের(এনইসি)-র ৭২তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী জ্যোতিরাদিত্য এম সিন্ধিয়া, ত্রিপুরার রাজ্যপাল শ্রী ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডঃ) মানিক সাহা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব শ্রী গোবিন্দ মোহন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং সিকিমের রাজ্যপালদের পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীরা এবং মেঘালয়ের সম্প্রদায় ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী এবং অন্যান্য বিশিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে পৌরোহিত্য করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গত ১০ বছর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সৃষ্টিকরেছে । তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী যেভাবে এই অঞ্চলকে বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছেন তা সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য রূপান্তরমুখী। শ্রী শাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলটি দিল্লির কাছে কেবল ভাষণের বিষয় ছিল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও সংবেদনশীলতা দিয়ে এই অঞ্চলকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অভূতপূর্ব পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে শুধু যোগাযোগের দূরত্বই কমানো হয়নি, প্রধানমন্ত্রী মোদী এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে দিল্লির মানুষের মনের দূরত্ব দূর করতেও কাজ করেছেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন স্বয়ং উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অগ্রাধিকার দিয়েছন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তা সমগ্র কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয় হয়ে উঠে। তিনি বলেন, অনেক বিভিন্নতা সত্ত্বেও আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে ২০০টিরও বেশি জনজাতি গোষ্ঠী এবং ১৯৫টিরও বেশি উপভাষা রয়েছে, ১০ বছর আগে ভাষার সংঘাতের কারণে তা আমাদের দুর্বলতা এবং বিভিন্ন সংঘাতে পরিণত হয়েছিল। শ্রী শাহ বলেন, আজ সেই দুর্বলতাকে শক্তি ও ক্ষমতায় রূপান্তরিত করার কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীজি। তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে আজ ২০০টিরও বেশি আদিবাসী গোষ্ঠী সমগ্র বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এবং ১৯৫টিরও বেশি উপভাষা ও ভাষা উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিশ্বের ৩৬টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের অন্যতম করে তুলতে অবদান রেখেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী ও জলসম্পদের পাশাপাশি শুধু উত্তর-পূর্বাঞ্চলেই সাড়ে সাত হাজার প্রজাতির বেশি ফুল রয়েছে। মোদী সরকার গত ১০ বছরে এই প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যগুলি সংরক্ষণ করতে এবং এই অঞ্চলটিকে একটি পছন্দের পর্যটন গন্তব্যে রূপান্তরিত করার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা করেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা সমবায় মন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছে মোদী সরকার। গত ১০ বছরে বেশ কয়েকটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং প্রায় ১০,৫৭৪ জন সশস্ত্র যুবক আত্মসমর্পণ করেছে এবং মূলস্রোতে যোগ দিয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি এনেছে এবং উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে পুরো দেশ এবং বিশ্ব এখন মোদীজির 'অষ্টলক্ষ্মী' ধারণাটি গ্রহণ করছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজ গোটা দেশ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি ব্যক্তি ও রাজ্যের সমৃদ্ধি চায়, যাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। তিনি বলেন, মোদী সরকারের ১০ বছরে এত বৈচিত্র্যের সঙ্গে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সব ধরনের ভিত্তি কাঠামো তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এখন সময় এসেছে এই ভিত্তির ওপর এক শক্তিশালী, উঁচু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কাঠামো গড়ে তোলার। তিনি বলেন, সরকার বরাবরই উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং মোদী সরকারের লক্ষ্য হল এই অঞ্চলের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করে বাকি ভারতের সমকক্ষ করে তোলা।
শ্রী শাহ বলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারের সময় ডোনার (উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন) মন্ত্রক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মোদীজি পুরো মন্ত্রিসভাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফর এবং সেখানে রাত্রিযাপনের আহ্বান জানান, যার ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এই অঞ্চলে ৭০০ দিনের বেশি রাতেরও বেশি কাটান। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে ৬৫ বার উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফর করেছেন এবং প্রতিটি সফরের সময় তিনি এই অঞ্চলের জন্য উন্নয়নমূলক উপহার নিয়ে এসেছেন।
শ্রী অমিত শাহ বলেন, উত্তর-পূর্বের সংস্কৃতি সংরক্ষণে মোদী সরকার কোনও প্রয়াস ছাড়েনি। শ্রী শাহ বলেন, বিভিন্ন শান্তি চুক্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন উপভাষাকে কেবল ক্ষমতায়িত ও সংরক্ষণই করেনি, এই অঞ্চলের স্থানীয় ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের পক্ষেও সওয়াল করেছে। এর ফলে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠার লক্ষ্যে দেশকে আরও জোরদার করার সময় এসেছে। এই লক্ষ্যে ডোনার মন্ত্রক এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদ (এনইসি) 'অ্যাক্ট ইস্ট, অ্যাক্ট ফাস্ট, অ্যাক্ট ফার্স্ট' – এর মন্ত্র রূপায়ণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ৫০ বছর ধরে এনইসি উচ্চাকাঙ্ক্ষা, চাহিদা এবং চ্যালেঞ্জগুলির সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসাবে কাজ করেছে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করতে কাজ করেছে। তিনি বলেন, ভারত সরকার এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির নীতিগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে এনইসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যাতে তৃণমূল স্তরে উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়। তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীকে উন্নয়নের সঙ্গে সংপৃক্ত করা এবং সমগ্র অঞ্চলকে একটি অনন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে উত্তর-পূর্বের উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করার জন্য এনইসি দায়বদ্ধ।
শ্রী শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী একটি ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তুলেছেন এবং এর ভিত্তিতে রাজ্যগুলোকে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রককে অবশ্যই বিনিয়োগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। তিনি বলেন, এই অঞ্চল থেকে যোগাযোগ এখন আর কোনো সমস্যা নয়, এবং কিছু সময়ের মধ্যে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও আর কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে এনক্লেভস এক্সচেঞ্জ বা ছিটমহল হস্তান্তর এর পর উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করতে আমাদের লক্ষ্য খুব শীঘ্রই অর্জিত হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্প-বাস্তুতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে এবং এখানে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশ্ব বাজারও উন্মুক্ত করবে। শ্রী শাহ জোর দিয়ে বলেন যে, এর জন্য প্রতিটি রাজ্যকে তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার সমস্ত বিনিয়োগকারীদেরকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায়মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সেমিকন্ডাক্টর এবং ডিসপ্লে ম্যানুফ্যাকচারিং ইকোসিস্টেমের উন্নয়নের জন্য তিনটি সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ইউনিটগুলির মধ্যে একটি ‘টাটা সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসেম্বলি এবং টেস্ট প্রাইভেট লিমিটেড’ প্রায় ২৭,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে আসামে স্থাপন করা হবে, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হবে। তিনি আরও বলেন, এর ফলে ২০,০০০ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান এবং ৬০,০০০ পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। শ্রী শাহ আরও বলেন, ভবিষ্যতের এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে, ভারত সরকারের শিক্ষামন্ত্রক উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সহযোগিতায় যুবসমাজকে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা ও জ্ঞান দিয়ে সমর্থ করে তোলার জন্য পাঠক্রম তৈরি করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এর ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্যেই বিপুল সংখ্যক যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে।
শ্রী শাহ বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একে ত্বরান্বিত করার জন্য প্রচেষ্টাকে আরো তীব্র করতে হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল শুধুমাত্র অঞ্চল ও রাজ্যগুলির উন্নয়নের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ থাকতে পারে না; বরঞ্চ ব্যক্তি, গ্রাম ও রাজ্যগুলির উন্নয়নে ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ব্যক্তির উন্নয়নের জন্য গ্রামের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি এই অঞ্চলটিকে দুধ, শাকসবজি, ডিম, মাছ ও মাংস উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে হবে। তিনি বলেন, জৈব পণ্য, দুধ, শাকসবজি, ডিম এবং এই জাতীয় পণ্যগুলি এই অঞ্চলে ব্যক্তির উন্নয়নকে চালিত করতে পারে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রতিটি ব্যক্তি সমৃদ্ধ হবেন, ততক্ষণ একটি সমৃদ্ধ উত্তর-পূর্বের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে পারে না।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জৈব চাষ করা হয়। তিনি বৈঠকে উপস্থিত সমস্ত রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্য সচিবদেরকে ভারত সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ অর্গানিক্স লিমিটেড (এনসিওএল)-এ যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এনসিওএল-এর উদ্দেশ্য হল সমবায়ের মাধ্যমে জৈব চাষের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কৃষককে সংযুক্ত করা এবং প্যাকেজিং, বিপণন ও রফতানির জন্য পরিকাঠামো তৈরি করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সমস্ত রাজ্যকে এনসিওএল-এর সঙ্গে চুক্তি করা এবং কৃষকদেরকে এর সঙ্গে যুক্ত করা উচিত, যাতে তাঁদের জৈব পণ্য বিশ্ব বাজারে পৌঁছাতে পারে। শ্রী শাহ আরও বলেন, মোদী সরকার উত্তর-পূর্বের প্রতিটি রাজ্যে এবং অসমের মতো বড় রাজ্যগুলিতে প্রতিটি জেলায় একটি করে জৈব শংসাপত্র পরীক্ষাগার (অর্গানিক সার্টিফিকেশন ল্যাব) স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি মাটি এবং কৃষি পণ্য উভয়ের জন্যই নির্ভরযোগ্য জৈব শংসাপত্র সুনিশ্চিত করবে। আমুল ও 'ভারত'-এর মতো ব্র্যান্ডের মাধ্যমে আমাদের পণ্যসমূহ বিশ্ব বাজারে পৌঁছাতে পারবে।
শ্রী শাহ বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা মোদী সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়। তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘মিশন পাম অয়েল’ উত্তর-পূর্বের সমস্ত রাজ্যের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে তৈলবীজের উৎপাদন কম, এবং আমরা এখনও ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে স্বনির্ভর নই, তবে মিশন পাম অয়েল এই ক্ষেত্রে আমাদেরকে স্বনির্ভর করে তুলতে পারে। শ্রী শাহ বলেন, এখন পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১০টি নতুন তেল কল গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও সমবায় মন্ত্রী বলেন, মোদী সরকার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে এবং প্রতিটি রাজ্যের জন্য একটি নির্দিষ্ট কৌশল তৈরি করে আমরা গত ১০ বছরে অগ্রগতি অর্জন করেছি। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই কৌশলের ফলে পুলিশ, সেনাবাহিনী, অসম রাইফেলস এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) সফলভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি খুব ভাল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। শ্রী শাহ বলেন, গত ১০ বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিংসার ঘটনা ৭১% হ্রাস পেয়েছে এবং অসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু ৮৬% হ্রাস পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় ১০,৫৭৪ জন সন্ত্রাসবাদী আত্মসমর্পণ করেছে এবং বেশ কয়েকটি শান্তি চুক্তির কারণে ভারত সরকার উত্তর-পূর্ব জুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছে।
শ্রী শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মাদকমুক্ত ভারতের জন্য একটি অভিযান শুরু করেছেন, যার মধ্যে উত্তর-পূর্বের একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে, কারণ ভারতে মাদক প্রবেশের একটি প্রধান পথ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্য দিয়েই। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই লক্ষ্যে গত ৬ বছরে উল্লেখযোগ্য কাজ করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের গতি এখনও যথেষ্ট নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত সমস্ত রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীদেরকে জেলা পর্যবেক্ষণ কমিটিগুলোর জেলা পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের উপর জোর দিতে এবং সেগুলির কার্যকর পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মাদকাসক্তি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয় এবং আমাদের লক্ষ্য হল ভারতকে সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত করা, আর এই অভিযানে উত্তর-পূর্বাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বের সমস্ত রাজ্যে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই আইনগুলির সম্পূর্ণ রূপায়ণের পর, তিন বছরের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রদান করা হবে, এমনকি সবচেয়ে জটিল মামলাগুলির ক্ষেত্রেও, যার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছানো মামলাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, বছরের পর বছর ধরে এই রাজ্যগুলোতে পুলিশের মূল লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করার দিকে। যাইহোক, এখন যেহেতু উত্তর-পূর্বে সহিংসতা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, তাই এই অঞ্চলের প্রতিটি নাগরিককে সম্পত্তি, সম্মান ও পারিবারিক সুরক্ষার সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার সময় এসেছে, যেগুলো এই তিনটি আইনের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।.
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়তার সাথে বলেন, উত্তর-পূর্ব পুলিশের সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের এখনই সময়। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে শান্তি বিরাজ করায়, এখন নাগরিকদের তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। এর জন্য উত্তর-পূর্বের প্রতিটি রাজ্যে পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি, প্রশিক্ষণ এবং লক্ষের পরিবর্তন প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, এই পরিবর্তন অর্জনের পূর্বশর্ত হল এই অঞ্চলের সমস্ত রাজ্যে এই তিনটি নতুন আইনের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন।
অমিত শাহ বৈঠকে উপস্থিত সমস্ত রাজ্যপালদের এই প্রক্রিয়াটি ব্যক্তিগতভাবে পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানান, কারণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নাগরিকরা এফআইআর দায়ের করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেতে পারে এমন আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, চার দশক ধরে উত্তর-পূর্বের সমস্ত রাজ্যে পুলিশ বাহিনীকে পুরোপুরিভাবে বিদ্রোহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপর নজর দিতে হয়েছিল এবং এখন যেহেতু বিদ্রোহ আর কোনও বড় সমস্যা নয়, তাই নাগরিকদের তাদের অধিকার প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
অমিত শাহ বলেন, পিএম-ডিভাইন প্রকল্পের জন্য যে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ৬৬০০ কোটি টাকা, তা শীঘ্রই বাড়িয়ে ৯ হাজার কোটি টাকা করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সড়ক, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, ক্রীড়া পরিকাঠামো এবং পর্যটন প্রকল্প সহ ১১১ টিরও বেশি প্রকল্প কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষ এর সাপেক্ষে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাজেট ১৫৩% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেম্বু মিশনের মাধ্যমে সরকার সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সমৃদ্ধ করার জন্য একটি সুনির্দিস্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
শ্রী শাহ জোর দিয়ে বলেন, মোদী সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেবে এবং এর জন্য বাজেটের কোনও ঘাটতি হবে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং সমবায় মন্ত্রী বলেছেন যে রেল সংযোগের জন্য ৮১,০০০ কোটি টাকা এবং সড়ক সংযোগের জন্য ৪১,০০০ কোটি টাকার পরিকল্পনা হয়েছে। তিনি বলেন, ৬৪টি নতুন বিমান রুট চালু করা হয়েছে এবং বাকি কাজ আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে।
শ্রী শাহ বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে এনই-এসএসি-র (নর্থ ইস্টার্ন স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার) সর্বাধিক ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, যতক্ষণ না ভৌগোলিক পরিস্থিতি সহ উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যের উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, ততক্ষণ উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে বন্যা সমস্যা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে পথ তৈরি করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণের জন্য বাজেট কমপক্ষে ৩০% হ্রাস করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, বন্যার জল ঘুরিয়ে এবং বড় পুকুর তৈরি করে বন্যা প্রতিরোধ, কৃষি ও পর্যটন-এই তিনটি লক্ষ্যই অর্জন করা যেতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন যে, আসাম পরীক্ষামূলকভাবে ১৫টি বড় জলাশয় তৈরি করেছে এবং সমস্ত রাজ্যের বন্যা ত্রাণ ও জল সংরক্ষণের জন্য এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা উচিত। শ্রী শাহ আরও বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার দুর্নীতি হ্রাস করে এবং প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের (ডিবিটি) অগ্রগতিতে সহায়তা করে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, শুধু শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ উত্তর-পূর্বাঞ্চলই যথেষ্ট নয়। উত্তর-পূর্বের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, শিল্প, সাহিত্য এবং ভাষার সংরক্ষণ এবং তাদের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা কেবল উত্তর-পূর্বের জন্যই নয়, সমগ্র দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির প্রতিটি সমস্যার সমাধানে তাঁদের পাশে রয়েছে। তিনি আস্থা প্রকাশ করেন যে, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত যখন সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হবে, তখন উত্তর-পূর্বাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অঞ্চল।
***
SKC/DM/ADK/KG/PS/KMD
(Release ID: 2086923)
Visitor Counter : 10