প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

অষ্টলক্ষ্মী মহোৎসবের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী

Prime Minister Shri Narendra Modi inaugurates the Ashtalakshmi Mahotsav

উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভারতের 'অষ্টলক্ষ্মী': প্রধানমন্ত্রী

Northeast is the 'Ashtalakshmi' of India: PM

Posted On: 06 DEC 2024 7:27PM by PIB Agartala

নয়াদিল্লি, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, পিআইবি৷৷ আজ নতুন দিল্লির ভারত মণ্ডপমে অষ্টলক্ষ্মী মহোৎসবের সূচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সমস্ত বিশিষ্টজনদের স্বাগত জানিয়ে শ্রী মোদী বলেন, আজ বাবাসাহেব ডঃ বি আর আম্বেদকরের মহাপরিনির্বাণ দিবস। তিনি বলেন, বাবাসাহেব আম্বেদকরের রচনা করা সংবিধান, যার ৭৫ বছর পূর্ণ হয়েছে, তা দেশবাসীর কাছে এক মহান অনুপ্রেরণা। শ্রী মোদী ভারতের সকল নাগরিকদের পক্ষ থেকে বাবাসাহেব আম্বেদকরকে শ্রদ্ধা জানান।

গত দু'বছরে জি-২০ বৈঠকের সফল আয়োজন সহ বহু জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর সাক্ষী ভারত মণ্ডপম হয়ে এসেছে বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান আরও বিশেষত্ব বহন করছে। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠান সমগ্র দিল্লিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রংমালায় উজ্জ্বল করে তুলেছে। আগামী তিন দিন ধরে প্রথম অষ্টলক্ষ্মী মহোৎসব উদযাপিত হবে বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এই অনুষ্ঠানটি দেশ তথা বিশ্বের কাছে সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের সম্ভাবনাকে তুলে ধরবে। 

তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে বহু ব্যবসায়িক চুক্তি হবে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি এই অঞ্চলের সংস্কৃতি, রন্ধনপ্রণালী এবং অন্যান্য আকর্ষণ তুলে ধরা হবে। তিনি আরও বলেন, পদ্ম পুরস্কার প্রাপকসহ বিশিষ্টজনের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনগণকে অনুপ্রাণিত করবে। এই দিনটি অন্যতম এবং এই ধরনের আয়োজন প্রথম বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এই অনুষ্ঠান উত্তর-পূর্ব ভারতে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধার দ্বার উন্মুক্ত করবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ যাবৎকাল পর্যন্ত ভারত উন্নয়নের অগ্রগতির ক্ষেত্রে ঘটনাক্রমে পশ্চিমা অঞ্চলের ভূমিকাকেই লক্ষ্য করেছে। শ্রী মোদী বলেন, পাশ্চাত্যকেন্দ্রিক সময়ের পর এই একুশ শতক পূর্বাঞ্চলের, অর্থাৎ এশিয়া ও ভারতের। শ্রী মোদী দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করে বলেন যে, আগামী দিনে ভারতের অগ্রগতির কাহিনী পূর্ব ভারত, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আগামী দশকগুলিতে ভারত গুয়াহাটি, আগরতলা, ইম্ফল, ইটানগর, গ্যাংটক, কোহিমা, শিলং এবং আইজলের মতো নতুন শহরগুলির নতুন সম্ভাবনাকে দেখতে পাবে এবং অষ্টলক্ষ্মীর মতো অনুষ্ঠান এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করবে।

ভারতীয় ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেবী লক্ষ্মীকে সুখ, স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির দেবী বলা হয়। দেবী লক্ষ্মীর আটটি রূপের তালিকা দিয়ে তিনি আরও বলেন, যখনই দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয় তখন আটটি রূপের পূজা করা হয়। শ্রী মোদী বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অষ্টলক্ষ্মী – আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও সিকিম। তিনি আরও বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই আটটি রাজ্য অষ্টলক্ষ্মীর আটটি রূপের প্রতিনিধিত্ব করছে।

প্রথম রূপটি আদি লক্ষ্মী বলে মন্তব্য করে শ্রী মোদী বলেন, আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি রাজ্যেই আদি সংস্কৃতি দৃঢ়ভাবে প্রসারিত। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিটি রাজ্য নিজ নিজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি লালন করে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মেঘালয়ের চেরি ব্লসম উৎসব, নাগাল্যান্ডের হর্নবিল উৎসব, অরুণাচলের কমলা উৎসব, মিজোরামের চাপচার কুট উৎসব, আসামের বিহু, মণিপুরী নৃত্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতে এত বিপুল বৈচিত্র্য রয়েছে।

দেবী ধন লক্ষ্মীর দ্বিতীয় রূপ এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের আশীর্বাদধন্য, যেখানে রয়েছে খনিজ, তেল, চা বাগান এবং জীব বৈচিত্র্যের এক বিশাল সঙ্গম। তিনি আরও বলেন, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এখানে এবং 'ধন লক্ষ্মী'র এই আশীর্বাদ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ।

দেবী লক্ষ্মীর তৃতীয় রূপ ধান্য লক্ষ্মী যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু - একথার উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল প্রাকৃতিক চাষ, জৈব চাষ এবং বাজরার জন্য বিখ্যাত। তিনি বলেন, সিকিম ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ জৈব রাজ্য হওয়ায় ভারত গর্বিত। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উৎপাদিত ধান, বাঁশ, মশলা এবং ঔষধি গাছগুলি সেখানকার কৃষিশক্তির সাক্ষ্য দেয়। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলী ও পুষ্টির সঙ্গে যুক্ত আজকের ভারত বিশ্বকে যে সমাধানগুলি উপহার দিতে চায় তাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এক বড় ভূমিকা রয়েছে।

অষ্টলক্ষ্মীর চতুর্থ রূপ গজ লক্ষ্মীর কথা বলতে গিয়ে শ্রী মোদী বর্ণনা করেন যে, দেবী গজ লক্ষ্মী পদ্মের উপর উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর চারপাশে হাতি রয়েছে। তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কাজিরাঙা, মানস-মেহাওয়ের মতো জাতীয় উদ্যান এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রয়েছে। তিনি আরও যোগ করে বলেন, এখানে আশ্চর্যজনক গুহা এবং আকর্ষণীয় হ্রদ রয়েছে৷ শ্রী মোদী বলেন, গজলক্ষ্মীর আশীর্বাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্র রূপে তুলে ধরার ক্ষমতা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল সৃজনশীলতা ও দক্ষতার জন্য পরিচিত, যার প্রতিনিধিত্ব করে পঞ্চম রূপ অষ্টলক্ষ্মী - সন্তান লক্ষ্মী, যার অর্থ উৎপাদনশীলতা এবং সৃজনশীলতা। তিনি আরও বলেন, আসামের মুগা সিল্ক, মণিপুরের মইরাং ফি, নাগাল্যান্ডের ওয়াংখেই ফি, চাখেশাং শালের মতো তাঁত ও হস্তশিল্পের দক্ষতা সকলের মন জয় করবে। এই জাতীয় কয়েক ডজন ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) ট্যাগযুক্ত পণ্য রয়েছে যা উত্তর-পূর্বের কারুশিল্প এবং সৃজনশীলতা প্রদর্শন করে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অষ্টলক্ষ্মীর ষষ্ঠ রূপ বীর লক্ষ্মীর বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শ্রী মোদী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল নারীশক্তির প্রতীক। তিনি মণিপুরের নুপি লান আন্দোলনের উদাহরণ এর কথা উল্লেখ করেন যা নারীদের শক্তিকে তুলে ধরেছিল। শ্রী মোদী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মহিলারা যেভাবে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে তাঁদের আওয়াজ তুলেছিলেন, তা ভারতের ইতিহাসে সর্বদাই স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। তিনি আরও বলেন, রানি গাইদিনলিউ, কনকলতা বড়ুয়া, রানি ইন্দিরা দেবী, লাল্নু রোপিলিয়ানির মতো লোককাহিনী থেকে শুরু করে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত সাহসী মহিলারা গোটা দেশকে অনুপ্রাণিত করেছেন। শ্রী মোদী বলেন, আজও উত্তর-পূর্বের কন্যারা এই ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করে চলেছেন। তিনি আরও বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মহিলাদের শিল্পোদ্যোগ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিশেষ শক্তি যুগিয়েছে, যার কোনও তুলনা নেই।

অষ্টলক্ষ্মীর সপ্তম লক্ষ্মী জয় লক্ষ্মীর অর্থ যিনি খ্যাতি ও গৌরব দান করেন, একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রতি সমগ্র বিশ্বের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ভারত যখন তার সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, তখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলই দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার অফুরন্ত সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে ভারতকে যুক্ত করেছে।

জ্ঞান ও শিক্ষার প্রতীক অষ্টলক্ষ্মীর অষ্টম লক্ষ্মী – বিদ্যালক্ষ্মীর কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, আধুনিক ভারত গঠনে শিক্ষার বহু প্রধান কেন্দ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রয়েছে যেমন আইআইটি গুয়াহাটি, এনআইটি শিলচর, এনআইটি মেঘালয়, এনআইটি আগরতলা এবং আইআইএম শিলং। তিনি আরও বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ইতিমধ্যেই তার প্রথম জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে এবং দেশের প্রথম জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় মণিপুরে নির্মিত হচ্ছে। তিনি বলেন, মেরি কম, বাইচুং ভুটিয়া, মীরাবাঈ চানু , লাভলীনা, সরিতা দেবীর মতো উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশকে অনেক মহান ক্রীড়াবিদ উপহার দিয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চল প্রযুক্তি সম্পর্কিত স্টার্ট-আপ, পরিষেবা কেন্দ্র এবং সেমিকন্ডাক্টরের মতো শিল্পের ক্ষেত্রেও এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলটি যুবকদের শিক্ষা ও দক্ষতার একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠছে।

উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী বলেন, "অষ্টলক্ষ্মী মহোৎসব উত্তর-পূর্বের উন্নত ভবিষ্যতের উদযাপন৷” শ্রী মোদী বলেন, শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারই প্রথমবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রক সৃষ্টি করেছিলেন।

তিনি বলেন, সেখানকার উন্নয়নে বিস্ময়কর গতি সঞ্চারিত হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ১৯৯০-এর দশকে তৈরি একটি নীতির কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে গতি আনতে কেন্দ্রীয় সরকারের ৫০টিরও বেশি মন্ত্রককে তাদের বাজেটের ১০ শতাংশ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগ করতে হয়। তিনি আরও বলেন, উপরোক্ত প্রকল্পে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করা হয়েছে, যা উত্তর-পূর্বের প্রতি বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের নিদর্শন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য সরকার পিএম ডিভাইন প্রকল্প, বিশেষ পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভেঞ্চার ফান্ডের মতো বহু বিশেষ প্রকল্প চালু করেছে। তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পগুলি বহু নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। শ্রী মোদী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্প সম্ভাবনাকে উৎসাহিত করতে সরকার 'উন্নতি; (UNNATI ) কর্মসূচিরও সূচনা করেছে। তিনি আরও বলেন, যখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এই ধরনের নতুন শিল্প স্থাপিত হবে, তখন দেশ ও বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা সেখানে নতুন সম্ভাবনার সন্ধান করবেন।

শ্রী মোদী বলেন, "আমরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করছি আবেগ, অর্থনীতি এবং বাস্তুতন্ত্র এই ত্রয়ীর সঙ্গে"। তিনি আরও বলেন, সরকার শুধুমাত্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিকাঠামো নির্মাণই করছে না, ভবিষ্যতের মজবুত ভিত্তিও স্থাপন করছে। বিগত দশকগুলিতে বহু রাজ্যে ট্রেন পরিষেবার অভাব সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা৷ একথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, ২০১৪ সালের পর তাঁর সরকার বাহ্যিক পরিকাঠামো ও সামাজিক পরিকাঠামোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এর ফলে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান ও পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন ঘটেছে। শ্রী মোদী বলেন, সরকার বহু বছর ধরে ঝুলে থাকা প্রকল্পগুলির রূপায়ণেও গতি সঞ্চার করেছে। বগি-বিল সেতুর দৃষ্টান্ত তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, ধেমাজি এবং ডিব্রুগড়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা বগি-বিল সেতুর কাজ শেষ হওয়ার আগে যেখানে যেতে সারাদিনের প্রয়োজন হত, এখন সেখানে মাত্র এক বা দুই ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়।

শ্রী মোদী বলেন, "গত এক দশকে প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে"। তিনি আরও বলেন, অরুণাচল প্রদেশে সেলা টানেল, ভারত-মায়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক মহাসড়ক, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও মিজোরামের সীমান্ত সড়ক প্রসারিত হয়েছে। গত বছর জি-২০ সম্মেলনের সময় ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডর (আই-ম্যাক) বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিল বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, আই-ম্যাক ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবক'টি রাজ্যের রাজধানীকে রেলপথে যুক্ত করার কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হতে চলেছে। তিনি আরও জানান, প্রথম বন্দে ভারত ট্রেনও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাত্রা শুরু করেছে। শ্রী মোদী বলেন, গত ১০ বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিমানবন্দর ও বিমান উড়ানের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও বরাক নদীতে জলপথ পরিবহন নির্মাণের কাজ চলছে এবং সাবরুম স্থলবন্দর থেকে জল যোগাযোগের ব্যবস্থাও উন্নত হচ্ছে।

মোবাইল ও গ্যাস পাইপলাইন সংযোগের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি রাজ্যকে উত্তর-পূর্ব গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে এবং ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকার ইন্টারনেট সংযোগের ওপরও বিশেষ নজর দিচ্ছে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে ২৬০০-রও বেশি মোবাইল টাওয়ার বসানো হচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১৩ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। উত্তর-পূর্বের সবক'টি রাজ্যে ৫জি সংযোগ পৌঁছে দেবার কাজে শ্রী মোদী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সামাজিক পরিকাঠামোয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অভূতপূর্ব কাজের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যান্সারের মতো রোগের চিকিৎসায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলার পাশাপাশি মেডিকেল কলেজগুলির প্রসার ঘটানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার আওতায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছেন। শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন, সরকার আয়ুষ্মান বয়: বন্দনা কার্ড চালু করেছে, যা ৭০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করবে।

শ্রী মোদী বলেন, যোগাযোগ ছাড়াও সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ঐতিহ্য, বস্ত্রবয়ন ও পর্যটনের ওপরও জোর দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই সুবিধার ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চল সম্পর্কে জানতে বিপুল সংখ্যক মানুষ এগিয়ে আসছেন। গত দশকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পর্যটকদের পরিদর্শনের সংখ্যাও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, বিনিয়োগ ও পর্যটন বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, অষ্টলক্ষ্মী রাজ্যের যুবসমাজ হল ভারত সরকারের এক বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এবং তাঁরা সর্বদাই উন্নয়ন চেয়েছেন। গত দশকে উত্তর-পূর্বের প্রতিটি রাজ্যে স্থায়ী শান্তির জন্য অভূতপূর্ব জনসমর্থন লক্ষ্য করা গেছে বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টার ফলেই হাজার হাজার যুবক হিংসার পথ ছেড়ে উন্নয়নের নতুন পথ গ্রহণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, গত এক দশকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বহু ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং রাজ্যগুলির মধ্যে সীমান্ত দ্বন্দ্বের সমাধানও অত্যন্ত আন্তরিকভাবে অগ্রসর হয়েছে। তিনি বলেন, এর ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিংসার ঘটনা অনেকাংশে কমে এসেছে। বহু জেলা থেকে আফস্পা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, আমরা সবাই মিলে অষ্টলক্ষ্মীর জন্য একটি নতুন ভবিষ্যত রচনা করব এবং সরকার এর জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা প্রকাশ করেন যাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের প্রতিটি বাজারে পৌঁছে যায় এবং এই লক্ষ্যেই প্রতিটি জেলার পণ্য 'এক জেলা এক পণ্য' অভিযানের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অষ্টলক্ষ্মী মহোৎসবের গ্রামীণ হাট বাজারে প্রদর্শনীতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বহু পণ্য দেখা যায়। উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমি উত্তর-পূর্বের পণ্যের জন্য ভোকাল ফর লোকাল-এর মন্ত্র প্রচার করি৷" তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য বিদেশি অতিথিদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চমৎকার শিল্প ও নৈপুণ্যকে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি দেবে। শ্রী মোদী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পণ্যগুলিকে তাঁদের জীবনযাত্রার অঙ্গ করে তোলার জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

শ্রী মোদী গুজরাটের পোরবন্দরে আয়োজিত মাধবপুর মেলায় অংশগ্রহণের জন্য জনসাধারণকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি আরও বলেন, মাধবপুর মেলা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কন্যা দেবী রুক্মিণীর বিবাহ উদযাপনের প্রতীক। ২০২৫ সালে মেলায় অংশগ্রহণের জন্য তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সকলকে আহ্বান জানান। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং অষ্টলক্ষ্মীর আশীর্বাদে ভারত নিশ্চিতভাবেই একবিংশ শতাব্দীতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে উন্নয়নের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে দেখবে বলে শ্রী মোদী দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

আজকের এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের মন্ত্রী শ্রী জ্যোতিরাদিত্য এম সিন্ধিয়া, আসামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা. শ্রী মানিক সাহা, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী কনরাড সাংমা, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী প্রেম সিং তামাং এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ডঃ সুকান্ত মজুমদার সহ আরও অনেকে৷

***

SKC/DM/KMD


(Release ID: 2081801) Visitor Counter : 12


Read this release in: English