প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর

রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের জবাব প্রধানমন্ত্রীর

'সরকারের গত ১০ বছর জানা যাবে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য'

"মোদী ৩.০ বিকশিত ভারতের ভিত্তি মজবুত করতে কোনও প্রয়াস ছাড়বে না"

Posted On: 07 FEB 2024 8:45PM by PIB Agartala

নয়াদিল্লি, ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪৷৷ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের জবাব দিয়েছেন।

সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫তম সাধারণতন্ত্র দিবস দেশের যাত্রাপথে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক এবং রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে ভারতের আত্মবিশ্বাসের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতিকে তাঁর অনুপ্রেরণামূলক ভাষণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন যা বিকশিত ভারতের সংকল্প পূরণে দেশকে পথ দেখিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর 'ধন্যবাদ প্রস্তাব' নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য সভার সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "রাষ্ট্রপতিজি তার ভাষণে ভারতের ক্রমবর্ধমান আত্মবিশ্বাস, তার জনগণের ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি এবং অপার সম্ভাবনার উপর জোর দিয়েছেন"।

সভার পরিবেশ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিরোধীরা আমার আওয়াজ দমন করতে পারবে না, কারণ দেশের মানুষ এই কণ্ঠস্বরকে শক্তি জুগিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে আগের বিপর্যয় থেকে বের করে আনতে অত্যন্ত বিবেচনার সঙ্গে কাজ করেছে।

ঔপনিবেশিক মানসিকতার চিহ্নগুলি দূর করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার ওপরও জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী যা পূর্ববর্তী সরকারগুলি উপেক্ষা করেছিল। দেশীয় পণ্য, ঐতিহ্য এবং স্থানীয় মূল্যবোধ সম্পর্কে অতীতের হীনমন্যতার কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ সবকিছুর সুরাহা এখন আন্তরিকতার সঙ্গে করা হচ্ছে।

নারী শক্তি, যুবশক্তি, দরিদ্র এবং অন্নদাতা – এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ জাতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির ভাষণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের এই চারটি মূল স্তম্ভের বিকাশ ও অগ্রগতি দেশকে উন্নত করে তুলবে। শ্রী মোদী বলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত অর্জন করতে হলে বিংশ শতাব্দীর দৃষ্টিভঙ্গি কাজে আসবে না।

প্রধানমন্ত্রী এসসি, এসটি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের অধিকার ও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, ৩৭০ ধারা বাতিল করার ফলে এই সম্প্রদায়গুলি জম্মু ও কাশ্মীরে দেশের বাকি অংশের মতো সমান অধিকার লাভ নিশ্চিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বাবাসাহেবকে সম্মান জানানোর বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন এবং আদিবাসী মহিলার দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। গরিব মানুষের কল্যাণে সরকারি নীতির কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তফসিলি জাতি, উপজাতি, ওবিসি এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর জোর দেন। পাকা বাড়ি, স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে স্বচ্ছতা অভিযান, উজ্জ্বলা গ্যাস প্রকল্প, বিনামূল্যে রেশন এবং আয়ুষ্মান যোজনার কথা তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে গত ১০ বছরে তপশিলি জাতি ও জনজাতি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে, স্কুলে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে, স্কুলছুটের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, একটি নতুন কেন্দ্রীয় জনজাতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং একলব্য মডেল স্কুলের সংখ্যা ১২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ করা হয়েছে। তিনি জানান, উচ্চশিক্ষায় তফসিলি জাতিভুক্তি ৪৪ শতাংশ, তফসিলি উপজাতি শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্তি ৬৫ শতাংশ এবং ওবিসি শিক্ষার্থী ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সবকা সাথ সবকা বিকাশ শুধুমাত্র একটি স্লোগান নয়, এটি মোদীর গ্যারান্টি"৷ মিথ্যা আখ্যানের ওপর ভিত্তি করে হতাশার মেজাজ ছড়ানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তাঁর স্বাধীন চিন্তাভাবনা ও স্বপ্ন স্বাধীন স্বপ্নেও ঔপনিবেশিক মানসিকতার কোনও জায়গা নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির জগাখিচুড়ির বিপরীতে, এখন বিএসএনএলের মতো উদ্যোগগুলি ৪ জি এবং ৫ জি রোল আউটে নেতৃত্ব দিচ্ছে, হ্যাল রেকর্ড উৎপাদন করছে এবং এশিয়ার বৃহত্তম হেলিকপ্টার কারখানা হ্যাল কর্ণাটকে হচ্ছে। এলআইসিও রেকর্ড শেয়ারের দামে সমৃদ্ধ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সংসদকে জানান যে দেশে পিএসইউর সংখ্যা ২০১৪ সালের ২৩৪ থেকে বেড়ে আজ ২৫৪ হয়েছে এবং তাদের বেশিরভাগই বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রেকর্ড রিটার্ন দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত এক বছরে দেশের পিএসইউ সূচক দ্বিগুণ বেড়েছে। গত ১০ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নিট মুনাফা ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২.৫০ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির নিট মূল্য ৯.৫ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৭ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি আঞ্চলিক আশা-আকাঙ্খার বিষয়টি খুব ভালোভাবেই বোঝেন রাজ্যগুলির উন্নয়নে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহায়তা করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। রাজ্যগুলির উন্নয়নের লক্ষ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিযোগিতামূলক সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তা ব্যবস্থার ওপর জোর দেন।

কোভিড মহামারীর চ্যালেঞ্জগুলির উপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী মোদী সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে ২০ টি বৈঠকের সভাপতিত্ব করার কথা স্মরণ করেন এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য পুরো ব্যবস্থাকে কৃতিত্ব দেন। 

তিনি জি-২০-র গৌরব সমস্ত রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন কারণ সারা দেশে এই উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি বিদেশী অতিথিদের বিভিন্ন রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন।

উন্নয়নকামী জেলা কর্মসূচির সাফল্যের জন্য রাজ্যগুলিকে কৃতিত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী৷

মানব দেহের কাজকর্মের সঙ্গে দেশের কাজকর্মের তুলনা টেনে প্রধানমন্ত্রী পুনরায় বলেন, একটি রাজ্য যদি বঞ্চিত ও অনুন্নত থাকে, তবে দেশকে উন্নত বলে বিবেচনা করা যায় না।

শ্রী মোদী বলেন, সকলের জন্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা সুনিশ্চিত করা এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নই আমাদের নীতিগুলির মূল লক্ষ্য। আগামী দিনগুলিতে, আমাদের দৃষ্টি দেওয়া হবে জীবনযাত্রাকে সহজতর করে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের দিকে। দারিদ্র্য থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ যাতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, সে বিষয়ে তিনি জোর দেন তিনি।

দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা মানুষদের প্রতি সরকারের সহায়তার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী ঘোষণা করেন যে, বিনামূল্যে রেশন প্রকল্প, আয়ুষ্মান যোজনা, ওষুধে ৮০ শতাংশ ছাড়, কৃষকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী সম্মান নিধি, দরিদ্রদের জন্য পাকা বাড়ি, জলের সংযোগ এবং নতুন শৌচাগার নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে চলবে। তিনি বলেন, "মোদী ৩.০ বিকশিত ভারতের ভিত্তি মজবুত করতে কোনও প্রয়াস ছাড়বে না। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৫ বছরে চিকিৎসা পরিকাঠামোর অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে এবং চিকিৎসা আরও সাশ্রয়ী হবে, প্রতিটি বাড়িতে নলবাহিত জল থাকবে, প্রধানমন্ত্রী আবাসের সুবিধা, গোটা দেশে নলবাহিত জল, রান্নার গ্যাস, সৌরশক্তির কারণে কোটি কোটি বাড়িতে বিদ্যুতের বিল শূন্য হয়ে যাবে, স্টার্টআপ বাড়বে, পেটেন্ট ফাইলিং নতুন রেকর্ড ভাঙবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সংসদকে আশ্বাস দিয়ে বলেন যে, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্ব প্রতিটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ভারতীয় যুবকদের দক্ষতা প্রত্যক্ষ করবে, গণপরিবহণ ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটবে, আত্মনির্ভর ভারত অভিযান নতুন উচ্চতা অর্জন করবে, মেড ইন ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর এবং ইলেকট্রনিক্স বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করবে এবং দেশ অন্যান্য দেশের উপর শক্তির নির্ভরতা হ্রাস করার লক্ষ্যে কাজ করবে। তিনি সবুজ হাইড্রোজেন এবং ইথানল মিশ্রণের দিকে জোর দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী ভোজ্য তেল উৎপাদনে আত্মনির্ভর হওয়ার বিষয়ে ভারতের বিশ্বাসকে পুনরায় নিশ্চিত করেছেন।

আগামী পাঁচ বছরের চিন্তাভাবনা অব্যাহত রেখে প্রধানমন্ত্রী প্রাকৃতিক চাষ এবং বাজরাকে সুপারফুড হিসাবে প্রচারের কথা বলেন। কৃষিতে ড্রোনের ব্যবহার নতুন করে বাড়বে।  তেমনই ন্যানো ইউরিয়া সমবায়ের ব্যবহারকেও জনআন্দোলন রূপে প্রচার করা হচ্ছে। মৎস্য ও পশুপালনে নতুন রেকর্ডের কথাও বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী মোদী আগামী ৫ বছরে পর্যটন ক্ষেত্রকে কর্মসংস্থানের একটি বিশাল উৎস হয়ে ওঠার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি দেশের অনেক রাজ্যের অর্থনীতিকে শুধুমাত্র পর্যটনের মাধ্যমে চালিত করার সক্ষমতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "ভারত বিশ্বের জন্য একটি বিশাল পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠতে চলেছে৷

প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং ফিনটেকের ক্ষেত্রে অগ্রগতির কথাও তুলে ধরে বলেন, আগামী পাঁচ বছর ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক ভবিষ্যত উপস্থাপন করবে।

তৃণমূল স্তরে অর্থনীতির রূপান্তরের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির কথা উল্লেখ করেন। ৩ কোটি লাখপতি দিদি নারী ক্ষমতায়নের নতুন চিত্রনাট্য লিখবেন। বিকশিত ভারতের প্রতি সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত তার সোনালী অধ্যায় পুনরুদ্ধার করবে"।

ভাষণ শেষ করে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে সভা ও দেশের সামনে প্রকৃত ঘটনা উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং অনুপ্রেরণামূলক ভাষণের জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতিকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷

*****

SKC/DM/KMD



(Release ID: 2003744) Visitor Counter : 65


Read this release in: English