রেলমন্ত্রক

১৪৬৫ কিলোমিটার রুটে ১৩৯টি লোকো ইঞ্জিনে কবচ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে

দিল্লি-মুম্বাই এবং দিল্লি-হাওড়া রেলপথে এই কাজ এগিয়ে চলেছে

Posted On: 08 DEC 2023 3:12PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ডিসেম্বর, ২০২৩

 

কবচ হল সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থা (এটিপি)। অত্যন্ত প্রযুক্তি নিবিড় এই ব্যবস্থায় একেবারে ওপরের বিশেষজ্ঞ মহল থেকে সুরক্ষা ছাড়পত্রের দরকার। কবচ ট্রেনকে সুনির্দিষ্ট গতি সীমার মধ্যে ধরে রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক, কেননা এতে ট্রেন চালক যদি ব্রেকের ব্যবহার করতে ভুলে গিয়ে থাকেন তাহলে স্বয়ংক্রিয় ব্রেক ব্যবহারের মাধ্যমে বিপদসঙ্কুল আবহাওয়াতেও ট্রেনকে নিরাপদে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই ব্যবস্থা পরীক্ষিতভাবে কার্যকর রূপ নেয়।

 

যাত্রীবাহি ট্রেনে কবচের পরীক্ষামূলক ব্যবহার প্রথম শুরু হয় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। এর থেকে অভিজ্ঞতা লাভ করে এবং নিরাপত্তা নির্ণায়ক সংক্রান্ত স্বাধীন তৃতীয় পক্ষের সুনির্দিষ্ট মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২০১৮-১৯ সালে কবচ সরবরাহের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে এর বরাত দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে ২০২০ সালের জুলাইয়ে জাতীয় স্বয়ংক্রিয় ট্রেন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কবচ মঞ্জুরি পায়। এর পরবর্তীকালে ১৪৬৫ কিলোমিটার সাউথ সেন্ট্রাল রেলপথে নিম্নলিখিত বিভাগে ১৩৯টি লোকো ইঞ্জিনে (ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট রেক) কবচ স্থাপন করা হয়েছে। নিম্নলিখিত এই বিভাগগুলি হল :

 

১) লিঙ্গামাপল্লী-ভিকারাবাদ-ওয়াদি এবং ভিকারাবাদ-বিদার বিভাগ (২৬৫ কিলোমিটার রুটে)

 

২) মানমাদ-মাদখেড-ধোন-গান্তকাল বিভাগ (৯৫৯ কিলোমিটার রুটে)

 

৩) বিদার-পারভানি বিভাগ (২৪১ কিলোমিটার রুটে)

 

বর্তমানে দিল্লি-মুম্বাই এবং দিল্লি-হাওড়া রেলপথে (প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার রুটে) কবচের বরাত দেওয়া হয়েছে এবং তার কাজ এগিয়ে চলেছে। ভারতীয় রেল পর্যবেক্ষণ এবং প্রস্তুতিমূলক কাজ হাতে নিয়েছে। বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) এবং অন্য আরও ৬০০০ কিলোমিটার রেলপথে বিস্তারিত সমীক্ষার কাজও এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে তিনটি ভারতীয় ওইএম-কে কবচের কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কবচের যথাযথ রূপায়ন এবং তার ব্যবহার বাড়াতে আরও ওইএম তৈরি করার প্রয়াস চলেছে।

 

নিরাপদ ট্রেন চলাচলে ভারতীয় রেল সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। ভারতীয় রেলপথে নিরাপত্তা সার্বিক সুনিশ্চিত করার লক্ষ্য হিসেবে আরও যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা হল-

 

১) বৈদ্যুতিক/বৈদ্যুতিন ইন্টারলকিং ব্যবস্থা ছাড়াও কেন্দ্রীয় পরিচালন ব্যবস্থার মাধ্যমে ৩১ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত ৬৪৯৮টি স্টেশনে পয়েন্ট ও সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু।

 

২) ৩১ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত ১১১৩৭টি লেবেল ক্রসিং গেটে ইন্টারলকিং ব্যবস্থা।

 

৩) ৩১ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত ৬৫৪৮টি স্টেশনে রেলপথে বিদ্যুতিকীকরণ সংযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করা।

 

৪) লোকো পাইলটগুলিকে অগ্রিম সতর্কতা প্রদান নিশ্চিত করতে ট্রেন ইঞ্জিনগুলিতে নজরদারি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (ভিসিডি)-র সুবিধা প্রদান।

 

৫) কুয়াশার ফলে যেখানে চোখে দেখা যাচ্ছে না সেক্ষেত্রে রেল কর্মীদের অগ্রিম সতর্কতা প্রদানের স্বার্থে দুটি ওএইচই মাঝের স্তম্ভটিতে রেট্রো রিফ্লেক্টিভ সিগমা বোর্ড স্থাপন করা।

 

৬) জিপিএস ব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে ওঠা কুয়াশা থেকে রক্ষাকারী যন্ত্র (এফএসডি) ইঞ্জিন চালকদেরকে দেওয়া হয়েছে যাতে তারা চলার পথে সেখানকার সিগন্যাল, রেলগেট সম্পর্কে অগ্রিম জানতে পারেন।

 

৭) রেলপথগুলির আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে ৬০ কেজি ৯০ আল্টিমেট টেনস্টাইল স্ট্রেনথ (উইটিএস) মাধ্যমে। কংক্রিট স্লিপারের পরিবর্তে স্থিতিস্থাপক আধুনিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে। গার্ডার ব্রিজের ক্ষেত্রে ইস্পাত চ্যানেল/এইচ-বিম স্লিপার ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

৮) মানবিক ত্রুটি দূর করতে পিকিউআরএস, টিআরটি, টি-২৮ জাতীয় ট্র্যাক মেশিনের মাধ্যমে ট্র্যাক নির্ণায়ক ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণ ঘটানো হয়েছে।

 

৯) নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে জয়েন্টগুলির জোড়া লাগানোর হাত থেকে রক্ষা পেতে ১৩০ মিটার/২৬০ মিটার দীর্ঘ রেল প্যানেলের সরবরাহ কমিয়ে আনা হচ্ছে।

 

১০) ঘন ঘন রেললাইন জোড়া লাগানোর পরিবর্তে বড় মাপের লাইন স্থাপন করা হচ্ছে যেখানে ফ্ল্যাশবাট ওয়েল্ডিং-এর মতো ব্যবস্থার মাধ্যমে জোড়া লাগানোর কাজ মজবুত করা হচ্ছে।

 

১১) ওএমএস অর্থাৎ (অসিলেশন মনিটারিং সিস্টেম) এবং টিআরসি (ট্র্যাক রেকর্ডিং কারস)-এর মাধ্যমে ট্র্যাকের জ্যামিতিক বিন্যাসের নজরদারি করা হচ্ছে।

 

১২) রেলপথে কোথাও ফাটল আছে কি না তা দেখতে নিয়মিত নজরদারি চালানো হচ্ছে।

 

১৩) ক্রসিং-এ থিক ওয়েব সুইচ এবং ওয়েলডেবল কাস্ট ম্যাঙ্গানিজ স্টিলের ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

১৪) নিরাপত্তা রক্ষার কাজে কর্মীদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে কি না তা দেখতে নির্দিষ্ট সময়ান্তর নজরদারির কাজ চালানো হচ্ছে।

 

১৫) বর্ষাকালীন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা, ওয়ার্ক সাইটে নিরাপত্তা রক্ষা, করিডর ব্লক, ইন্টিগ্রেটেড ব্লক প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিস্তারিত নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে।

 

১৬) রেলের সম্পদ (কোচ এবং ওয়াগনের) নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে দেশে রেল দুর্ঘটনা যথা সম্ভব কমিয়ে এনে নিরাপদ ট্রেন যাত্রা সুনিশ্চিত করা যায়।

 

১৭) প্রচলিত ইনটিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ) নকশায় নির্মিত কোচের পরিবর্তে লিঙ্কি হফম্যান বুশ (এলএইচবি) নকশার কোচ চালু করা হচ্ছে।

 

১৮) ২০১৯-এর জানুয়ারি মাসের মধ্যে সমস্ত ব্রডগেজ রেলপথে প্রহরা বিহীন লেভেল ক্রসিং তুলে দেওয়া হয়েছে।

 

১৯) রেল ব্রিজগুলির সুরক্ষার জন্য নিয়মিত নজরদারি চলছে। প্রয়োজনে সেগুলির মেরামত এবং বদল করা হচ্ছে।

 

২০) সমস্ত রেল কোচে রেলযাত্রীদের সতকর্তার স্বার্থে সহজেই তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে আগুনের বিপদ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। অগ্নি নিবারনে কী কী করণীয় সে ব্যাপারে যাত্রীদের আগাম সতর্কতা বিধানের পাশাপাশি দাহ্য, বিস্ফোরক বা নিষিদ্ধ কোনো বস্তু যাতে তারা বহন না করেন এবং রেল কোচে ধূমপানের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও জরিমানার কথা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে।

 

২১) নব নির্মিত পাওয়ার কার এবং প্যান্ট্রি কারগুলিতে অগ্নি নিরোধক ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সমস্ত রেল কোচগুলিতে ধোঁয়া শনাক্তকরণ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ধাপে ধাপে জোনাল রেলগুলিতেও অনুরূপ অত্যাধুনিক রেল কোচ নিয়ে আসা হচ্ছে।

 

যাত্রী নিরাপত্তায় গৃহীত এই জাতীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থার ফলে ভারতীয় রেলে উত্তরোত্তর যাত্রী সুরক্ষায় অগ্রগতি হয়েছে যা নিম্নলিখিত গ্রাফে স্পষ্ট।

রাজ্যসভায় আজ এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে একথা জানিয়েছেন রেল, যোগাযাগ এবং ইলেকট্রনিক ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

 

 

 

 

PG/AB/NS



(Release ID: 1984107) Visitor Counter : 39


Read this release in: English , Tamil