স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহের ত্রিদিবসীয় জম্মু-কাশ্মীর সফরের প্রথমদিনে আজ তিনি শ্রীনগরে নিরাপত্তা সমীক্ষা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের শহীদ জওয়ান পারভেজ আহমেদ দার-এর বাড়িতে যান এবং তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন, তাঁর স্ত্রীকে সরকারি চাকরি দেন
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শ্রীনগর থেকে শারজা আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা উদ্বোধন করেন
জম্মু-কাশ্মীর ইয়ুথ ক্লাবগুলির সদস্যদের সঙ্গে বার্তালাপে বলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজির নেতৃত্বে আমরা একটি নতুন কাশ্মীর গড়ে তোলার সূত্রপাত করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জম্মু ও কাশ্মীর সরকার একটি লক্ষ্য রেখেছে যে প্রত্যেক পঞ্চায়েত এবং শহরের প্রত্যেক ওয়ার্ডে একটি করে ইয়ুথ ক্লাব গড়ে উঠবে
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আড়াই বছর আগে পর্যন্ত পাথর ছোঁড়া, সন্ত্রাসবাদ ও হিংসার খবর আসত আজ সেই জম্মু-কাশ্মীরের যুব উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে উন্নতির কথা শোনা যায়
এই পরিবর্তনের হাওয়াকে কোনও শক্তিই ঠেকাতে পারবে না আর কাশ্মীরে একটি নতুন যুগের সূত্রপাত হবে
কাশ্মীরের প্রায় ৭০ শতাংশ জনসংখ্যার বয়স ৩৫ বছরের কম। এই জনসংখ্যার মানুষের মনে আশা জাগিয়ে তাঁদের সাহস বাড়ানো হয়েছে, তাঁদের উন্নয়ন কর্মগুলির সঙ্গে যুক্ত করা
Posted On:
23 OCT 2021 10:00PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৩ অক্টোবর, ২০২১
সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত যোজনা প্রত্যেক গরীবের জন্য শুরু করা হয়েছে। কাশ্মীরে এই যোজনা প্রত্যেক কাশ্মীরবাসীর জন্য চালু করা হয়েছে আর আজ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রত্যেক কাশ্মীরি পরিবারের চিকিৎসার খরচ প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত যোজনা এবং ‘সেহত’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে।
৫ আগস্ট, ২০১৯ তারিখটি কাশ্মীরের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখার মতো তারিখ। সেদিন কাশ্মীরে একটি নতুন সূত্রপাত হয়েছে। আতঙ্ক, সন্ত্রাসবাদ, ভয়, দুর্নীতি, পরিবারবাদের সমাপ্তি ঘটিয়ে শান্তি, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি এবং সহ-অস্তিত্বের একটি নতুন যুগের সূত্রপাত হয়েছে।
একদিন এমন অবশ্যই আসবে যখন কাশ্মীর ভারতের উন্নয়নে অবদান রাখবে। তখন আর কাশ্মীর ভারতের থেকে নেওয়ার জন্য হাত পাতবে না, ভারত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে। কাশ্মীর একটি স্বতন্ত্র রাজ্যে পরিণত হবে আর এই দায়িত্ব জম্মু ও কাশ্মীরের নবীন প্রজন্মের ওপর বর্তায়। ২০১৯-এর ৫ আগস্টের আগে কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায় কি এ দেশের মন্ত্রী, উপ-রাষ্ট্রপতি কিংবা রাষ্ট্রপতি হওয়া সম্পর্কে ভাবতে পারতেন? ৭০ বছরের শাসন কী দিয়েছে? ৮৭ জন বিধায়ক, ছয়জন সাংসদ আর তিনটি পরিবার। কিন্তু মোদীজি এই দু’বছরে ৩০ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধিকে কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। যাঁরা চিৎকার করছেন, তাঁরা এজন্য চিৎকার করছেন যে শাসন ক্ষমতা তিনটি পরিবারের হাত থেকে বেরিয়ে রাজ্যের প্রত্যেক গরীব পরিবারের কাছে চলে এসেছে।
শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি গণতন্ত্রকে তৃণমূলস্তরে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন আর জম্মু-কাশ্মীরে এত বছর পর গণতন্ত্রের শুভ সূচনা ঘটেছে। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা শুরু হওয়ার ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায় সবচাইতে বেশি সুযোগ পেয়েছে। গ্রামের যুবক-যুবতীরাই এখন পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত প্রধান, জেলা পঞ্চায়েত সদস্য, বিধায়ক এবং জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন আর তাঁরা আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশের সংসদেও যেতে পারবেন। আগে এই সুযোগ মাত্র কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু নরেন্দ্র মোদীজি একটি নতুন সূত্রপাত করেছেন। এ রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের উচিৎ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া।
জম্মু কাশ্মীরে দুর্নীতি অনেক হ্রাস পেয়েছে। এক টাকাও না খরচ করে এখন প্রত্যেক বাড়িতে রান্নার গ্যাস পৌঁছে গেছে। ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন, ছাত্রবৃত্তি পাচ্ছেন আর স্বচ্ছ পদ্ধতিতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন। আপনার যদি মেধা থাকে তাহলে কোনও সুপারিশ ছাড়াই নিযুক্তিপত্র বাড়িতে চলে আসবে।
এই স্বচ্ছ ব্যবস্থা চালু করা এবং দুর্নীতির অবসান জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করছে। দুর্নীতি এই রাজ্যটির শিকড় থেকে ঘুণের মতো খেয়ে ফাঁপা করে দিয়েছিল, সেই দুরাবস্থা থেকে বের করে আনার কাজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি করলেন। জম্মু-কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়কে, এখানকার গরীব পরিবারগুলির মেধাবী শিশুদেরকে বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়ার জন্য এখন আর জম্মু-কাশ্মীরের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিছু মানুষ দাবি করেছিলেন যে এখানে সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু আসলে সন্ত্রাসবাদ হ্রাস পেয়েছে আর পাথর ছোঁড়ার মানসিকতাও দূর হয়েছে। যাঁরা জম্মু ও কাশ্মীরের শান্তি প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে চান, তাঁদের সঙ্গে আমরা কঠোরভাবে মোকাবিলা করব। সন্ত্রাসবাদ সমাপ্ত করার কাজ এখানে উপস্থিত ৪৫ হাজার যুবক-যুবতীকে করতে হবে। আপনারা শান্তি ও উন্নয়নের দূত হয়ে গোটা জম্মু-কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বার্তা নিয়ে যাবেন যে এছাড়া আমাদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আর কোনও পথ নেই।
ভারত সরকার সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের জন্য একটি নতুন শিল্পোদ্যোগ নীতি প্রণয়ন করেছে আর মোদীজি এতে কাশ্মীরি যুব সম্প্রদায়ের জন্য অনেক নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। গোটা দেশে এত আকর্ষণীয় শিল্পোদ্যোগ নীতি অন্য কোনও রাজ্যে নেই। সেজন্য স্বাধীনতার পর থেকে এতদিন পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছিল। কিন্তু এই নতুন শিল্পোদ্যোগ নীতি প্রণয়নের ছয় মাসের মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরে ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে ২০২২ সালের মধ্যে আমরা রাজ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আনতে পারব।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ তাঁর তিনদিনের জম্মু-কাশ্মীর সফরের প্রথমদিন আজ শ্রীনগরে নিরাপত্তা সমীক্ষা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপাল শ্রী মনোজ সিনহা এবং অন্যান্য বরিষ্ঠ আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের শহীদ জওয়ান পরভেজ আহমেদ দার-এর বাড়িতে যান এবং তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। শ্রী অমিত শাহ তাঁর আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর স্ত্রীকে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র দেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র এবং সমবায় মন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শ্রীনগর থেকে শারজা আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবার উদ্বোধন করেন। শ্রী অমিত শাহ জম্মু-কাশ্মীর ইয়ুথ ক্লাবগুলির সদস্যদের সঙ্গে বার্তালাপও করেন। এই অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশ থেকে যুবক-যুবতীরা অংশগ্রহণ করেন। এই অনুষ্ঠানে জম্মু-কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপাল শ্রী মনোজ সিনহা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী জিতেন্দ্র সিংও উপস্থিত ছিলেন।
শ্রী অমিত শাহ তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রায় ২ বছর ৩ মাস পর তিনি এখানে এসেছেন এবং জম্মু ও কাশ্মীরের যুবক-যুবতীদের সঙ্গে দেখা করে তিনি আনন্দিত। তিনি আরও বলেন, যে কোনও ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের বাহক হয় যুব সম্প্রদায় আর তাঁদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনও পরিবর্তনই সম্ভব নয়। শ্রী শাহ বলেন যে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আমরা একটি নতুন কাশ্মীর গড়ে তোলার সূত্রপাত করেছি। তিনি বলেন, যে কাশ্মীরে আড়াই বছর আগে পাথর ছোঁড়া, সন্ত্রাসবাদ ও হিংসার খবর আসত, আজ সেই জম্মু-কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায় বিকাশ, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও পড়াশোনায় সাফল্য নিয়ে কথা বলছে। কত বড় পরিবর্তন এসেছে! তিনি বলেন যে এই পরিবর্তনের হাওয়াকে কোনও শক্তিই আটকাতে পারবে না আর কাশ্মীরে একটি নতুন যুগের সূচনা হবে, আর সেজন্যই এ ধরনের অনুষ্ঠান অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপাল শ্রী মনোজ সিনহার নেতৃত্বে পরিচালিত বেশ কিছু কর্মসূচির মধ্যে সবচাইতে বেশি উপযোগী হবে ইয়ুথ ক্লাবের প্রয়োগ। তিনি বলেন যে কাশ্মীরের প্রায় ৭০ শতাংশ জনসংখ্যার বয়স ৩৫ বছরের কম। যদি এই ৭০ শতাংশ জনসংখ্যার মানুষের মনে আশা জাগানো যায়, তাঁদের সাহস বাড়ানো যায়, তাঁদেরকে উন্নয়নের কাজে সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তাঁদের পড়াশোনা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের চিন্তা করা হয়, আর যদি তাঁদের কাশ্মীরের শান্তি ও উন্নয়নের রাজদূত করে তোলা হয়, তাহলে কাশ্মীরের শান্তি প্রক্রিয়ায় কখনও কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।
শ্রী অমিত শাহ বলেন যে গোটা জম্মু-কাশ্মীরে ৪,৫০০ ইয়ুথ ক্লাব নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪,২২৯টি ইয়ুথ ক্লাব গ্রামাঞ্চলে রয়েছে যেগুলি সেসব অঞ্চলের যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, কোনও না কোনরকম ক্রীড়া গতিবিধির সঙ্গে তাঁদের যুক্ত করার কাজ করছে। তাঁদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ভাবনাচিন্তা করছে। তিনি বলেন যে এটি একটি বহুমাত্রিক কর্মসূচি। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নও এগিয়ে চলে, আর্থিক বিকাশ ও অনুদানও পাওয়া যায়, পরামর্শ এবং দিশা পাওয়া যায় আর স্বাস্থ্যের উন্নয়নের কিছু বিষয়কে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল যুব সম্প্রদায়কে খেলাধূলার সঙ্গে যুক্ত করা। কারণ, খেলা আমাদের পরাজয় এবং জয়ের সঙ্গে পরিচয় করায় আর যুব সম্প্রদায় এর মাধ্যমে পর্যটন ও মনোরঞ্জনের সঙ্গেও যুক্ত হন।
শ্রী অমিত শাহ বলেন যে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজির নেতৃত্বে জম্মু ও কাশ্মীরের সরকার একটি লক্ষ্য রেখেছে, যাতে প্রত্যেক পঞ্চায়েতে এবং শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ইয়ুথ ক্লাব তৈরি হয়। প্রত্যেক ইয়ুথ ক্লাবকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছে। ১৫০-রও বেশি ক্লাবকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। গোটা জম্মু-কাশ্মীরে স্পোর্টস এনগেজমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য, কমিউনিকেশন, স্কিল, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সঙ্গে এই ইয়ুথ ক্লাবগুলিকে যুক্ত করে কেন্দ্রীয় সরকার সমগ্র জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য এই ইয়ুথ ক্লাবগুলিকে বহুমাত্রিকভাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী বলেন যে প্রত্যেক ব্যক্তির জীবন সম্ভাবনায় ভরপুর থাকে। কিন্তু এটা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে যে তাঁর সামনে যে সম্ভাবনাগুলি রয়েছে, সে সেগুলিকে কিভাবে কাজে লাগাবে। আজকের যুব সম্প্রদায়কে ঠিক করতে হবে যে তাঁরা কি নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে বসে থাকতে চান, নাকি আশাবাদী মানসিকতা নিয়ে সম্ভাবনাগুলির সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে সবার থেকে এগিয়ে থাকতে চান। তিনি আরও বলেন যে, ভারতের প্রত্যেক যুবক-যুবতীর জন্য অপার সম্ভাবনা রয়েছে, আর প্রধানমন্ত্রী মোদী স্টার্ট-আপ এবং আরও কিছু কর্মসূচি যুব সম্প্রদায়ের জন্যই শুরু করেছেন। মোদীজি এরকম বেশ কিছু প্ল্যাটফর্ম চালু করেছেন যেগুলির মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের ছোট ছোট গ্রামগুলির যুবক-যুবতীরাও গ্রামে থেকেই বিশ্বমঞ্চে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াতে পারবেন। শ্রী শাহ বলেন, এসব সম্ভাবনা ব্যবহার করার জন্য আপনাদের যে দিশা-নির্দেশ, তথ্য এবং সুযোগ চাই, আপনাদের এলাকার ইয়ুথ ক্লাবগুলিই এই তিনটি বিষয় আপনাদের সামনে এনে হাজির করবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী যুব সম্প্রদায়কে বলেন, জীবনের লক্ষ্য কখনও ছোট রাখা উচিৎ নয়। লক্ষ্য ঠিক করার সময় এটা ভাবা উচিৎ নয় যে, সেটি পূরণ হবে কি হবে না! কারণ, লক্ষ্য পূরণ আপনাদের হাতে নেই। আপনারা লক্ষ্য স্থির করে সেই দিশায় চলতে শুরু করুন। ঈশ্বর অবশ্যই আপনাদের সাহায্য করবেন এবং আপনারা একটার থেকে আরেকটা বড় লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন। তিনি বলেন যে অনেকেই ছোট ছোট লক্ষ্য রাখেন আর তাঁদের কিছুই হয়নি। কিন্তু যাঁরা বড় লক্ষ্য রেখেছেন, তাঁদেরকে শুরুতে একটু হতচকিত দেখা গেলেও তাঁরা উৎসাহ ও পরিকল্পনামাফিক পরিশ্রম করেন, তা থেকে নিশ্চিতভাবে সফল হন। শ্রী অমিত শাহ বলেছেন, যখন শ্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন দেশের ২০ হাজার গ্রাম এমন ছিল যেখানে বিদ্যুতের খুঁটি পর্যন্ত ছিল না। অন্য কোনও প্রধানমন্ত্রী হলে হয়তো এই লক্ষ্য রাখতেন যে এই ২০ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু মোদীজি এই লক্ষ্য রাখেন যে ২০২২-এর আগে দেশের প্রত্যেক গ্রামেই শুধু নয়, প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে, আর আজ দেশের প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর কাজ সুনিশ্চিত হয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীজি প্রত্যেকবার কাশ্মীরের উন্নয়নের সমীক্ষা করেন আর এভাবেই প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত যোজনার কথা উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রীজি বলেন যে কাশ্মীর অনেক আঘাত সহ্য করেছে। সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত যোজনা প্রত্যেক গরীব মানুষের জন্য কাজ করছে, কাশ্মীরে এই প্রকল্প প্রত্যেক কাশ্মীরবাসীর জন্য কাজ করছে আর প্রত্যেক কাশ্মীরি পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত যোজনা এবং ‘সেহত’ প্রকল্পের মাধ্যমে সুনিশ্চিত হচ্ছে।
শ্রী অমিত শাহ বলেন যে ৫ আগস্ট, ২০১৯ তারিখটি কাশ্মীরের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখার মতো তারিখ। কাশ্মীরে একটি নতুন সূত্রপাত হয়েছে। এখন আতঙ্ক, সন্ত্রাসবাদ, ভয়, দুর্নীতি, পরিবারবাদ সমাপ্ত হয়ে শান্তি, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সহ-অস্তিত্বের একটি নতুন যুগের সূত্রপাত হয়েছে। এই কাজে জম্মু-কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়কে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, এই বিষয়ে অনেক গুজব রয়েছে। আমরা কী পেয়েছি? আজ ৪৫ হাজারেরও বেশি যুবক-যুবতী এখানে বসে আছেন, আর সবাই বলছেন যে আমরা সুযোগ পেয়েছি। তাঁরা বলছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার থেকে কাশ্মীর সাহায্য পাচ্ছে আর পাওয়া উচিৎ, কারণ কাশ্মীর অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। কিন্তু একদিন অবশ্যই এমন আসবে যখন কাশ্মীর ভারতের উন্নয়নে অবদান রাখবে। শুধু নেবে না, ভারতকে অনেক কিছু দেওয়ার মতো একটি প্রদেশ হয়ে উঠবে আর এই দায়িত্ব জম্মু-কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়ের ওপর ন্যস্ত রয়েছে।
শ্রী অমিত শাহ জম্মু-কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়কে বলেছেন যে, তাঁর নিজের পরিবারের কোনও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নেই, তিনি কোনও মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীর পুত্র-কন্যা নন। কিন্তু গণতন্ত্রের মহিমা এমনই যে তিনি নিচে থেকে উঠে এসে এতবড় দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হতে পেরেছেন। তিনি রাজ্যের যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাসা করেন যে ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের আগে জম্মু-কাশ্মীরের যুবক-যুবতীরা কেউ কি এ দেশের মন্ত্রী, উপ-রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রপতি হওয়া নিয়ে চিন্তা করতে পারতেন? তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ৭০ বছরের শাসন ব্যবস্থা তাঁদের কী দিয়েছে? ৮৭ জন বিধায়ক, ছয়জন সাংসদ আর তিনটি পরিবার। কিন্তু মোদীজি কাশ্মীরবাসীর সেবায় এই রাজ্যের মানুষের নির্বাচিত ৩০ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি দেওয়ার এই কাজ এত কম সময়ে করেছেন। তিনি বলেন যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৪,২৯১টি নির্বাচন কেন্দ্রে নির্বাচন হয়েছে। ব্লক উন্নয়ন পরিষদে, ২৮১টি তহসিল পঞ্চায়েতে এবং জেলা পরিষদের ২৮০টি আসনের জন্য নির্বাচন হয়েছে আর জনগণের মধ্য থেকে প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে ভোট দিয়েছেন আর প্রায় ৩০ হাজার জনপ্রতিনিধি আজ নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের সেবা করছেন। শ্রী শাহ বলেন যে, যাঁরা চিৎকার করছিলেন, তাঁরা এজন্যই চিৎকার করছিলেন। কাশ্মীরের শাসন ব্যবস্থা এখন তিনটি পরিবারের হাত থেকে বেরিয়ে এক একজন গরীবের হাতে চলে এসেছে। শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি গণতন্ত্রকে তৃণমূলস্তরে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন আর জম্মু-কাশ্মীরে এত বছর পর গণতন্ত্রের শুভসূচনা করেছেন।
শ্রী অমিত শাহ বলেন যে, সারা দেশে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের সূত্রপাত অনেক বছর আগে হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে হয়নি। তিনি বলেন যে, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা শুরু হওয়ায় সবচাইতে বড় সুযোগ এসেছে জম্মু-কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়ের সামনে। শ্রী শাহ বলেন যে, এখন গ্রামের যুবক-যুবতীরাই পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত প্রধান, জেলা পঞ্চায়েত সদস্য, জেলা পঞ্চায়েত প্রধান, বিধায়ক এমনকি জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন। আপনাদের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে দেশের সংসদে যেতে পারবেন। এই সুযোগ এর আগে এই রাজ্যের হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীজি একটি নতুন সূত্রপাত করেছেন, আর যুব সম্প্রদায়ের উচিৎ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আরও বলেন, জম্মু-কাশ্মীরে দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে। এক টাকাও খরচ না করে প্রত্যেকের বাড়িতে রান্নার গ্যাস পৌঁছেছে। ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করতে পারছে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে। কারোর যদি মেধা থাকে, দক্ষতা থাকে তাহলে কারোর সুপারিশ ছাড়াই নিযুক্তিপত্রও বাড়িতে চলে আসবে। তিনি বলেন যে আজ কোনও বিধবার সাহায্যের টাকা, কোনও বৃদ্ধের পেনশন, কোনও ছাত্রছাত্রীর ছাত্রবৃত্তি এবং কৃষকদের পাঠানো কেন্দ্রীয় সরকারের বার্ষিক ৬ হাজার টাকা সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে আসছে। শ্রী অমিত শাহ জম্মু-কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়কে জিজ্ঞাসা করেন, ২০১৯-এর ৫ আগস্টের আগে এসব কিছু কি সম্ভব ছিল? তিনি বলেন যে, প্রশাসনে এই স্বচ্ছতা নিয়ে আসা এবং দুর্নীতি সমাপ্ত করার মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। দুর্নীতি এই রাজ্যের শিকড়কে ঘুণের মতো ফাঁপা করে দিয়েছিল, আজ তা থেকে জম্মু-কাশ্মীরকে বের করে আনার কাজ এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি করলেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, তাঁকে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে স্বাধীনতার পর কেন্দ্রীয় সরকার মাথাপিছু সবচাইতে বেশি সাহায্য যদি কোনও রাজ্যকে পাঠিয়ে থাকে সেটি হল জম্মু ও কাশ্মীর! কিন্তু, তা সত্ত্বেও, এই রাজ্য থেকে কি দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূর হয়েছে? এই রাজ্যের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক পরিকাঠামো কি গড়ে উঠেছে?
হয় নি! মৌলিক পরিকাঠামো এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের পথ এখন তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আগে এই রাজ্যের ছেলে-মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য রাজ্যে যেতে হত। কিন্তু এখন সরকার রাজ্যের মধ্যেই সাতটি নতুন মেডিকেল কলেজ তৈরি করেছে, আর ১১টি নার্সিং কলেজ তৈরি করেছে। জম্মু-কাশ্মীরের যুবক-যুবতীদের, এ রাজ্যের দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের ডাক্তার ও নার্স হওয়ার জন্য এখন আর জম্মু-কাশ্মীরের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষ বলছিলেন যে, আমাদের এসব পদক্ষেপের ফলে জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ বেড়ে যাবে। কিন্তু ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এ রাজ্যে সন্ত্রাসবাদের ফলে ২,০৮১ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, যা গড়ে প্রতি বছর ২০৮ জন। ২০১৪ থেকে ২০২১-এর মধ্যে প্রতি বছর এ রাজ্যে সন্ত্রাসবাদের কবলে গড়ে ৩০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণ হয় যে সন্ত্রাসবাদ হ্রাস পেয়েছে আর পাথর ছোঁড়া তো সমাপ্ত হয়েই গেছে। তিনি বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, যাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের শান্তি প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে চান, আমরা কঠোরভাবে তাঁদের মোকাবিলা করব। উন্নয়নের এই জয়যাত্রা শুরু হয়েছে আর একে কেউ আটকাতে পারবে না। এখন পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী, সেনা, নিরাপত্তাকর্মী এবং নাগরিক সহ প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের কি এই হত্যালীলা বন্ধ করতে হবে না? আতঙ্ক এবং উন্নয়ন দুটো কি একসঙ্গে সম্ভব?
তিনি বলেন, এটা হতে পারে না! উন্নয়নের প্রথম শর্ত হল, সেখানে শান্তি থাকতে হবে। সরকার সেজন্য চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু সন্ত্রাসবাদ সমাপ্ত করার কাজ এখানে উপস্থিত ৪৫ হাজার যুবক-যুবতীকে করতে হবে। আপনাদের প্রত্যেককে শান্তি এবং উন্নয়নের দূত হয়ে সমগ্র জম্মু-কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বার্তা নিয়ে যেতে হবে যে, সন্ত্রাসবাদ আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ নয়।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং আমাদের কাশ্মীরের মধ্যে উন্নয়নের তুলনা যদি করেন, তাহলে দেখবেন যে, তাঁরা দারিদ্র্য, অন্ধকার আর ধোঁয়া ছাড়া আর কী দিয়েছে? আমাদের কাশ্মীরের মানুষের জন্য উন্নয়নের একটি নতুন জয়যাত্রা শুরু হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্ত যুবক-যুবতীকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি যুব সম্প্রদায়ের জন্য একটি অনেক বড় উদ্যোগ নিয়েছেন। গত দু’বছর ধরে সমস্ত সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে ২৫ হাজারেরও বেশি সরকারি চাকরি প্রদান করা হয়েছে কোনরকম দুর্নীতি ছাড়াই। আগামীকালও ৭ হাজার মানুষকে নিযুক্তিপত্র দেওয়া হবে। খাদি বিকাশ বোর্ডে আরও প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সূত্রপাত হয়েছে। শ্রী অমিত শাহ বলেন যে, ভারত সরকার সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের জন্য একটি নতুন শিল্পোদ্যোগ নীতি নিয়ে এসেছে, আর এই নীতি অনুযায়ী কাশ্মীরি যুবক-যুবতীদের জন্য অনেক নতুন নতুন সুযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে। গোটা দেশে এত আকর্ষণীয় শিল্পোদ্যোগ নীতি অন্য কোনও রাজ্যে নেই। এর ফলে স্বাধীনতার পর থেকে যে রাজ্যে ১৫ হাজার কোটির সামান্য বেশি বিনিয়োগ এসেছে, সেখানে নতুন শিল্পোদ্যোগ নীতি প্রণয়নের ছয় মাসের মধ্যেই ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, ২০২২ সালের মধ্যে আমরা ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ অতিক্রম করে যাব। যখন বিনিয়োগ এবং শিল্পোদ্যোগ আসে, এর পাশাপাশি কর্মসংস্থানও আসে। এই কর্মসংস্থান থেকে রাজ্য সরকার কর পায়, আর সেই কর দিয়ে রাজ্য সরকার রাজ্যের উন্নয়ন করে। কৃষিরও উন্নয়ন হয়, আর কৃষিজাত পণ্য বিক্রির ব্যবস্থাও হয়। এইসব কিছুর জন্য বিনিয়োগ আসা প্রয়োজন আর এখন তা শুরু হয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, জম্মু-কাশ্মীরে মোট নয়টি মেডিকেল কলেজ এবং ১৫টি নার্সিং কলেজ গড়ে তোলার কাজ চলছে। সেগুলির মধ্যে সাতটির কাজ শুরু হয়ে গেছে। জম্মু-কাশ্মীরে ১৯৪৭সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মেডিকেলের ৫০০টি আসন ছিল। এখন নতুন মেডিকেল কলেজগুলি খোলার পর ইতিমধ্যেই এমবিবিএস-এর জন্য ১,১৫০টি আসন হয়েছে, আরও ১,১০০টি হতে চলেছে। এর পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরে আইআইটি, এনআইটি, আইআইএম, এনআইএফটি, আইআইএমসি, ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এবং পলিটেকনিক কলেজ শুরু হয়েছে। গত ৭০ বছরে এসব কেন হয়নি? কারণ, তাঁদের উন্নয়নের ইচ্ছাই ছিল না। তাঁরা মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করতেন, আর শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য রাজনৈতিক খেলা খেলতেন। নিজেদের পরিবারের হাতে শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চাইতেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এসব করা শাসন ক্ষমতার কাজ নয়। তাদের কাজ হল, দেশের টাকা এবং উন্নয়ন সমাজের প্রান্তিকতম ব্যক্তিটির কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি এটাই চান। তাঁর ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচিগুলি সারা দেশের মধ্যে সবচাইতে ভালোভাবে জম্মু-কাশ্মীরে চালু করা হয়েছে। এখানে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। প্রত্যেক বাড়িতে শৌচালয় তৈরি হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে প্রায় ৫৫ হাজার গৃহহীন দরিদ্র মানুষকে পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১১ হাজার গৃহহীন তাঁদের বাড়ি পেয়েছেন। জল জীবন মিশনের মাধ্যমে দুটি জেলায় প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছনোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে আর ১১টি জেলায় এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। বাকি সাতটি জেলায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই অভিযান সম্পূর্ণ হবে। আগামী বছর সমগ্র জম্মু-কাশ্মীরের প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। সমস্ত বিদ্যালয়, অঙ্গনওয়াড়ি এবং হাসপাতালে নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘সেহত’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিককে চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রদান করা হচ্ছে।
শ্রী অমিত শাহ বলেন, দেশের সবচাইতে বেশি করোনা টিকার ১০০ শতাংশ প্রথম ডোজ জম্মু-কাশ্মীরে দেওয়া হয়েছে। তার দ্বিতীয় ডোজের কাজও এ রাজ্যে ৫০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। জনসংখ্যার হিসেবে সবচাইতে বেশি অক্সিজেন প্ল্যান্ট জম্মু-কাশ্মীরে স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সৌভাগ্য’, ‘ইন্দ্রধনুষ’, ‘উজ্জ্বলা’ ও ‘উজালা’ যোজনার মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরে ১০০ শতাংশ লক্ষ্য পূরণ করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের পাঁচটি ছাত্রবৃত্তি প্রকল্পে ১০০ শতাংশ কাজ হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫.৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রী ছাত্রবৃত্তি পেয়েছে। পিএম কিষাণ যোজনার ছত্রছায়ায় ১২ লক্ষ কৃষককে আনা হয়েছে। নতুন শিল্পোদ্যোগ নীতিতে নিজস্ব শিল্পোদ্যোগ গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রায় ৫ লক্ষ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে। সরকারি কাজে চতুর্থ শ্রেণীর প্রায় ১০ হাজার খালি পদের মধ্যে ৮,৯০০ পদে নিযুক্তির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। সেবা আয়োগ পরীক্ষার ব্যবস্থা করে আরও ৮৩০ জনকে নির্বাচন করেছে। পাহাড়ি মানুষজন এবং আন্তর্জাতিক সীমায় বসবাসকারী ও আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার গুর্জর ভাই-বোনেরাও সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন। জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ২০২০-তে ৩৬,৭০০জন পর্যটক এসেছিলেন আর ২০২১-এর মার্চ পর্যন্ত পর্যটকের সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার জন হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, প্রায় ৭০ বছর ধরে তিনটি পরিবার এ রাজ্যে শাসন করেছে, আর আমরা আড়াই বছর ধরে শাসন করছি। তাঁদের শাসনকালে কেন ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার কোনও জবাব দিতে পারবেন? ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের পরও যেভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে, ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিছু বিদেশি শক্তিও তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল, আমরা যদি কার্ফু না বলবৎ করতাম, তাহলে হয়তো অসংখ্য বৃদ্ধ পিতাকে তাঁদের নবীন সন্তানের জানাজা কাঁধে নিয়ে যেতে হত। কার্ফু লাগানোর ফলে জম্মু-কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়ের জীবন বেঁচেছে। ইন্টারনেট বন্ধ করার ফলেও অনেকের প্রাণ বেঁচেছে। আজ পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে, সবাই রোজগার করতে পারছেন, পড়াশোনা করছেন, এগিয়ে যাচ্ছেন, শিল্পোদ্যোগ আসছে, পর্যটকরা আসছেন। তাঁরা এই সময়ে আবার সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিয়ে, চাপ সৃষ্টি করে, আমাদের বদনাম করে কার্ফু ওঠাতে চাইছেন। কার্ফু ওঠালেই সন্ত্রাসবাদ বাড়বে। ওদের নানা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হবে। নিরপরাধ মানুষ মারা যাবে, আর কিছু মানুষ তাঁদের রাজনৈতিক রুটি সেঁকতে থাকবে। অনেক দীর্ঘস্থায়ী মঙ্গলের জন্য আপনাদের কিছু সময় কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। যেমন রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা আমাদের তেতো ওষুধ খাওয়ান, এরকমই এই কষ্টগুলি। কিন্তু এর ফলে আপনাদের সন্তানরা নিরাপদ রয়েছে। আমার কাশ্মীরের যুব ভাই-বোনেরা সুরক্ষিত আছেন। উপ-রাজ্যপাল মনোজজি এবং মোদীজি প্রতিদিন কাশ্মীর নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন, আলাপ -আলোচনা করেন। তাঁরা বলেছেন যে, এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই, কাশ্মীরই আমাদের মেইন ল্যান্ড। কাশ্মীরকে আগে ভারতের মুকুটের মণি বলা হত। আমি বলি, কাশ্মীর ভারতের হৃদয়। প্রত্যেক ভারতবাসী চান যে, আমাদের কাশ্মীরে শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আসুক। এই অভিযান নিয়ে মোদীজি এগিয়ে যাচ্ছেন। যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ছাড়া কোনও পরিবর্তন সম্ভব নয়। আপনাদের সাহস করে এগিয়ে যেতে হবে। কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আপনাদের ওপর রয়েছে। সবাই একজোট হয়ে এগোন। আমরা কোনও গুজবে কান দেব না। গণতন্ত্রের কোনও লোকসান হতে দেব না।
শ্রী অমিত শাহ বলেন, আমি কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে এসেছি। আপনারা মোদীজির সঙ্গে যুক্ত হোন, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যুক্ত হোন। কাশ্মীরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে যাত্রা শুরু হয়েছে তাতে সামিল হোন। অনেক প্রকল্প কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি হয়েছে। মোদীজি এ রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষের মনে শান্তি, তাঁদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেখতে চান। আজ প্রশাসন আপনাদের দিকে বন্ধুর হাত বাড়িয়েছে, ইয়ুথ ক্লাব তৈরি করেছে, আপনাদের সুযোগ দিয়েছে। আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন, আর এই পরিস্থিতির সুযোগ নিন। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করুন। যারা আপনাদের বিভ্রান্ত করতে চায়, সেই মানুষদের চিনুন, তাদের জবাব দিন। কাশ্মীরের শান্তিতে কাউকে আমরা বাধা দিতে দেব না। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, কাশ্মীরের উন্নয়ন যাত্রা এখন থেমে থাকতে পারে না। জম্মু-কাশ্মীরকে একটি আদর্শ রাজ্য আর পরিকাঠামোর দৃষ্টিতে সমৃদ্ধ করে তোলার কর্মযজ্ঞকে কেউ আটকাতে পারবে না!
CG/SB/DM/
(Release ID: 1766271)
Visitor Counter : 581