স্বাস্থ্যওপরিবারকল্যাণমন্ত্রক
কোভিড আক্রান্ত মা তাঁর শিশুকে স্তন্যপান করাতে পারেন কিন্তু, যখন তিনি স্তন্যপান করাবেন না, তখন শিশুর থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখবেন – নতুন দিল্লির লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ মঞ্জু পুরী
“টিকা দেহে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, দেহের অন্য কোনও টিস্যুর ওপর প্রভাব ফেলে না”
Posted On:
26 JUL 2021 5:11PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৬ জুলাই, ২০২১
গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ টিকাকরণ সম্পর্কে সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে একজন মা ও তাঁর শিশু কিভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখবেন, সে বিষয়ে নতুন দিল্লির লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ মঞ্জু পুরী বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন ।
মহিলারা গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ টিকা নিতে পারেন বলে অনুমতি পাওয়া গেছে। এই টিকা কিভাবে সাহায্য করবে?
মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ-এর সময় প্রথম ঢেউ-এর তুলনায় অনেক বেশি মহিলা গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। গর্ভাবস্থায় কোভিডের ফলে গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে সেই সময়, যখন ইউটেরাসের আকার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এর ফলে, শরীরে যখন অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা বেশি হয়, তখন অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবেই রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং মা ও শিশু উভয়ের জীবন ঝুঁকিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই, টিকা গর্ভবতী মহিলাদের গুরুতর অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে পারে।
এমনকি, মায়ের টিকাকরণ হলে নবজাতকও কিছুটা সুরক্ষা পায়। টিকাকরণের পর মায়ের শরীরে যে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়, তা গর্ভাবস্থায় মায়ের রক্তের মাধ্যমে ভ্রূণে পৌঁছে যায় এবং ভ্রূণটিকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। একইভাবে, মাতৃদুগ্ধের মধ্য দিয়ে অ্যান্টিবডি নবজাতকের দেহে প্রবেশ করতে পারে।
কিছু মানুষ এটা বিশ্বাস করেন যে, টিকা নিলে মহিলাদের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব বাড়তে পারে। এটা কি সত্যি?
সোস্যাল মিডিয়ার দৌলতে এ ধরনের গুজব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার বিভ্রান্তিকর তথ্য ভাইরাসের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক।
কোভিড-১৯ টিকার বয়স তুলনামূলক যদিও কম, তবুও একথা বলতেই হয়, বিভিন্ন সময়োপযোগী প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে টিকার উদ্ভাবন হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে টিকা দেহে একটি নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই, কোনও টিকাই দেহের টিস্যুর ওপর প্রভাব ফেলে না। আসলে আমরা বিভিন্ন ধরনের টিকা নিয়ে থাকি। এমনকি, গর্ভাবস্থাতেও বিভিন্ন টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের টিকা দেওয়ার উদ্দেশ্যই হ’ল বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে মা ও তাঁর নবজাতককে সুরক্ষা কবচ দেওয়া।
এটা মনে রাখতে হবে যে, আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলি গর্ভাবস্থায় টিকাকরণের বিষয়টি অনুমোদন করেছে। যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও যাচাই করে দেখে সমস্ত বিষয় সন্তুষ্ট হওয়ার পর গর্ভাবস্থায় টিকাকরণের বিষয়টিতে ছাড়পত্র মিলেছে। তবে, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও বিজ্ঞান-নির্ভর তথ্য বা সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়নি, যা থেকে জানা যায় টিকা বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে উঠতে পারে। আসলে কোভিড-১৯ টিকাগুলি কোনোভাবেই প্রজননক্ষম অঙ্গগুলির ওপর প্রভাব ফেলে না।
কোভিড থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে একজন গর্ভবতী মহিলা কি ধরনের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেবেন?
আমাদের সমাজে গর্ভধারণ ও শিশুর জন্ম দেওয়া একটি সামাজিক ঘটনা। কিন্তু, মহামারীর সময় এই সামাজিক ঘটনাও মা ও শিশু উভয়ের কাছেই সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে একজন প্রসূতি মা-কে আমরা সর্বদাই পরামর্শ দিই যে, মাস্ক ব্যবহার করতে এবং পরিবারের সদস্যদের থেকেও দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখতে। এরকম পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ, প্রসূতি মা হয়তো বাড়ির বাইরে যান না, কিন্তু পরিবারের সদস্যরা কাজের প্রয়োজনে বাইরে যান। এইভাবে অন্যদের থেকে তাঁর সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।
তাই, প্রত্যেক মহিলাকে গর্ভাবস্থায় যাবতীয় কোভিড আদর্শ আচরণবিধি মেনে চলা উচিৎ। এমনকি, শিশুর জন্মের পরও এই আচরণ মেনে চলা প্রয়োজন, যাতে তাঁর ও নবজাতকের কোনও রকম জটিলতা না দেখা দেয়।
যদি একজন গর্ভবতী মহিলার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, তা হলে কি করা উচিৎ?
প্রথমত, যদি কোনও গর্ভবতী মহিলা কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার যে কোনও ধরনের উপসর্গ দেখা গিয়ে থাকে, তা হলে অবিলম্বে নমুনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। যত তাড়াতাড়ি নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে, রোগের উপশম তত দ্রুত শুরু হবে। আসলে কোভিড-১৯ চিকিৎসা পরিষেবা অন্যদের মতো গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রেও একই। কিন্তু, গর্ভাবস্থায় কোভিড চিকিৎসা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
আক্রান্ত হয়েছেন বলে, জানা গেলে সংশ্লিষ্ট মহিলা নিজেকে অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে নেবেন, প্রচুর পরিমাণে জল খাবেন, ঘন ঘন দেহের তাপমাত্রা মেপে দেখবেন এবং দেহে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে কিনা, তা প্রতি ৪-৬ ঘণ্টায় যাচাই করবেন। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবনের পরও যদি দেহের তাপমাত্রা কমে না আসে, তা হলে তিনি দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এমনকি, দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
এছাড়াও, যে সমস্ত মহিলার মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্থূলতার মতো শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাঁদের অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণের প্রয়োজন। প্রয়োজন-সাপেক্ষে তাঁদের হাসপাতালেও ভর্তি করতে হতে পারে। তাই, চিকিৎসকের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ বজায় রাখুন।
আমরা সর্বদাই কোভিড পরবর্তী সুস্থতার সময় হেলথ চেকআপের পরামর্শ দিয়ে থাকি, যাতে মা ও তাঁর ভ্রূণ দুই-ই ভালো থাকে।
মায়ের থেকে ভ্রূণ কি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে পারে?
অত্যন্ত স্বাভাবিক এই উদ্বেগের নিরসনে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। ইতিমধ্যেই আমরা কয়েকটি ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি এবং জানতে পেরেছি, গর্ভাশয়ে প্লাসেন্টা নামে একটি অঙ্গ গঠিত হয়, যেখানে ভ্রূণ বাড়তে থাকে। এই প্লাসেন্টা ভ্রূণের সুরক্ষা কবচ হিসাবে কাজ করে। এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যা থেকে জানা গেছে, নবজাতক কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এটা জানা যায়নি নবজাতক মায়ের গর্ভাশয়ে থাকাকালীন সময়েই বা জন্ম নেওয়ার অব্যবহিত পরেই আক্রান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে আমি একই কথা বলবো, যা আমি আগেও ব্যাখ্যা করেছি। প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলাকেই কোভিড-১৯ থেকে বাঁচতে ও তাঁর গর্ভস্থ শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে সম্ভাব্য সবরকম সতর্কতামূলক অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
কোভিড আক্রান্ত মা তাঁর নবজাতকের সুরক্ষায় কি ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা মেনে চলবেন?
কোভিড আক্রান্ত মা তাঁর শিশুকে স্তন্যপান অব্যাহত রাখবেন। তবে, যখন তিনি স্তন্যপান করাবেন না, তখন শিশুর থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখবেন। একজন পরিচারিকা যিনি আক্রান্ত নন, তিনি শিশুর যাবতীয় দেখভালে সাহায্য করতে পারেন। নবজাতককে স্তন্যপান করানোর আগে পরিচারিকা নিজের হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন। সেই সঙ্গে, ফেসমাস্ক, ফেসশিল্ড প্রভৃতি সুরক্ষামূলক পদ্ধতি অবলম্বন করবেন। এমনকি, বারবার তাঁকে আশেপাশের সমস্ত জিনিস স্যানিটাইজ করতে হবে।
অবশ্য, মা-কে সাহায্য করার জন্য যদি কোনও পরিচারিকা না থাকেন, তা হলে নবজাতককে স্তন্যপান করানোর সময় নিজে মাস্ক ব্যবহার করবেন এবং চেষ্টা করবেন শারীরিক দূরত্ব যতটা বেশি বজায় রাখা যায়। মা ও শিশু দু’জনকেই বাতাস চলাচলের উপযোগী ঘরে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে, নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং যে ঘরে দু’জনে রয়েছেন, সেখানে সমস্ত জিনিসপত্র স্যানিটাইজ করতে হবে।
প্রসব পরবর্তী হতাশা ও উদ্বেগ মহিলাদের মধ্যে অত্যন্ত সাধারণ বিষয়। মহামারীর সময় মহিলাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় কোনও রকম বৃদ্ধি আপনি লক্ষ্য করেছেন কি?
গর্ভাবস্থায় এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে মহিলাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দেখা গেছে। গর্ভাবস্থায় ও প্রসব পরবর্তী সময়ে মহিলাদের হরমোনাল ও মনস্তাত্ত্বিক অনেক পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে একজন মহিলার সামাজিক সহায়তা অনেক বেশি প্রয়োজন। তাই, সামাজিক সহায়তা ছাড়া তিনি একাকিত্ব, নিঃসঙ্গ এবং হতাশা বোধ করতে পারেন।
প্রত্যেকের জন্য ১৫ দিন আইসোলেশনে থাকা অত্যন্ত কঠিন। এটা গর্ভবতী মহিলা ও সদ্যোজাত মায়ের কাছে আরও বেশি সমস্যার। এরকম সময় শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে মা ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লে তা তাঁর মানসিক অবস্থায় গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, এরকম সময় প্রত্যেক মহিলাকে লাগাতার সাহায্য করা ও পাশে থেকে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। যদি কোনও মহিলা আইসোলেশনে থাকেন, তা হলে পরিবারের সদস্য ও অন্যান্যরা ভিডিও কলের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এবং যদি দেখা যায় তাঁর মানসিকতায় বড় পরিবর্তন এসেছে বা নিঃসঙ্গতার জন্য হতাশা বোধ করছেন, সেক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
আমরা সবসময় গর্ভবতী মহিলা ও সদ্য মায়েদের দুটি অত্যন্ত সহজ-সরল প্রশ্ন করে থাকি। এর একটি হ’ল – নিত্যনৈমিত্তিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে এখন তাঁর কোনও আগ্রহ রয়েছে কিনা এবং দ্বিতীয়টি হ’ল – গত দু’সপ্তাহে কোনও সময়ে তিনি বিষণ্নতা বোধ করেছেন কিনা বা কারণ ছাড়াই কেঁদেছেন কিনা। এই প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে বিষয়টি নিয়ে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের অব্যবহিত পর মহিলাদের এরকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পাশাপাশি, পারিবারিক সদস্যদের সংশ্লিষ্ট মহিলার আচার-আচরণে পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তার ওপর নজর রাখা প্রয়োজন।
আপনার মহিলা রোগীদের আপনি কি পরামর্শ দিতে চাইবেন?
আমরা সর্বদাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে বলবো। প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলার পাশাপাশি, কোভিড আদর্শ আচরণ মনে চলা জরুরি বলে পরামর্শ দিই, সঠিক সময়ে টিকা নিতে এবং বহু মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকি।
যদি তাঁদের মধ্যে জ্বর, গলাব্যাথা, অরুচি অথবা গন্ধ না পাবার মতো কিছু স্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলে থাকি।
CG/BD/SB
(Release ID: 1739109)
Visitor Counter : 10282