স্বাস্থ্যওপরিবারকল্যাণমন্ত্রক
শিশুদের বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী ও ধারণার কথা জানাতে অভিভাবকদের উৎসাহ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- এইমস-এর মনস্তত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবং কেন্দ্রীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ডাঃ রাজেশ সাগর
‘ইতিবাচক পরিবেশ, উৎসাহের অভাব বা লোকের সঙ্গে মেলামেশা না করলে শিশু মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে’
‘যাঁরা শিশুদের দেখভাল করবেন তাঁদের শিশুদের সঙ্গে কথা বলার সময় নম্র হতে হবে কারণ শিশুরা বুঝতে পারেনা তাদের মনের ভিতর কি হচ্ছে’
সুরক্ষিত পরিবেশ বর্তমান মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সংকট থেকে শিশুদের রক্ষা করতে পারে- ডাঃ রাজেশ সাগর
Posted On:
23 JUL 2021 4:54PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লী, ২৩ জুলাই, ২০২১
নতুন দিল্লীর অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস-এর মনস্তত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবং কেন্দ্রীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ডাঃ রাজেশ সাগর মহামারীর কারণে শিশু মনে কি প্রভাব পড়তে পারে এবং বিভিন্ন সমস্যার কিভাবে সমাধান করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রশ্নঃ- কিভাবে মহামারী শিশু মনে প্রভাব ফেলতে পারে?
উত্তরঃ- শিশুরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর, নরম মনের। যেকোন রকমের মানসিক চাপ, আতঙ্ক তাদের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে। যার ফলে দীর্ঘমেয়াদে শিশু মানসিক অবসাদগ্রস্ত হতে পারে। এই মহামারী ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তাদের স্কুল বন্ধ, অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে এবং কাছের বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগটাও খুব কমে গেছে। এর পাশাপাশি কেউ কেউ বাবা-মায়ের মধ্যে একজন অথবা দু’জনকেই হারিয়েছে। কেউ আবার আত্মীয় বা যে তাকে দেখভাল করতো তাকে মহামারীর জন্য হারিয়েছে। এইসব বিষয়গুলি শিশুদের মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। যে পরিবেশে তারা বেড়ে ওঠে, যা তাদের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ- শিশুরা সেই অবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অবসাদগ্রস্থ শিশুদের সঙ্গে যখন আপনারা কথা বলেন তখন সবথেকে বড় কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন?
মানসিকভাবে চাপে থাকার সময় প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো শিশুদের একইরকম প্রতিক্রিয়া হয়না। কোনো কোনো বাচ্চা নির্দিষ্ট কোনো জিনিসকে আঁকড়ে ধরে থাকে, কেউ কেউ অবসাদগগ্রস্ত হয়ে পড়ে, কেউ আবার আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে, কেউ কেউ অবসন্ন হয়ে পরে। তাই শিশুর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়াটি অত্যন্ত কষ্টকর। যখন আমরা জানতে পারি আশেপাশের পরিবেশের কারণে শিশুর মনে প্রভাব বিস্তার হচ্ছে তখন আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারি। শিশুরা অনেক সময় একটি ঘটনাকে তাদের নিজেদের মতো করে নেয়। আতঙ্কিত হওয়া, অসুস্থ হওয়া অথবা নিকটজনদের মৃত্যু তাদের মনে প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। কখনও আবার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা তাদের ভয়, উদ্বেগ বা আতঙ্কের কথা জানাতে পারেনা।
তাই শিশুদের আচার-আচরণের ওপর নজর রাখা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিষয়ে শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গী এবং ভাবনা প্রকাশ করানোর জন্য প্রাপ্ত বয়স্কদের সাহায্য করার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের তাই বিভিন্ন বিষয়ে তাদের ভাবনা এবং মতামত প্রকাশ করাতে উৎসাহ দিতে হবে, যাতে তারা নিজেদের মনের মত পরিবেশে তাদের কথা জানাতে পারে। তারা যদি কথায় না বোঝাতে পারে তাহলে আঁকা, রঙ করা সহ অন্যান্য মাধ্যমের সাহায্যে তাদের মনের ভাব জানাতে উৎসাহিত করতে হবে। শিশুদের ওপর এই মহামারীর প্রভাব কতটা পরেছে তা সরাসরি কোনো প্রশ্নের মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়। কারণ শিশুরা জানেনা তাদের ভিতরে কি চলছে। এ কারণে যারা বাচ্চাদের দেখভাল করবেন তাদেরকে শিশুদের সঙ্গে নম্রভাবে মতবিনিময় করতে হবে। শিশুদের বোঝার জন্য সৃজনশীল পন্থা-পদ্ধতি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে সংক্রমণ, মৃত্যুর মতো বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতি নিয়েও শিশুদের চিন্তা-ভাবনা বুঝতে হবে।
প্রশ্নঃ- একটি শিশুর জীবনে প্রথম ৫-৬ বছরকে বলা হয় ভিত গড়ার সময়। এই সময় শিশুর বিকাশে বিভিন্ন উৎসাহব্যাঞ্জক উপকরণের প্রয়োজন। মহামারী কিভাবে শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং কেমন করে এই প্রভাব কমানো সম্ভব বলে আপনার ধারণা?
উত্তরঃ- প্রকৃতপক্ষে একটি শিশুর জীবনে প্রথম ৫ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শিশুটিকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে পারি। ইতিবাচক পরিবেশ ও উৎসাহের ঘাটতি থাকায় এবং সামাজিক মেলেমেশা না করতে পারায় শিশু মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
কোনো শিশু যাতে সংক্রমিত না হয় তার জন্য আমরা ব্যবস্থা নেব। কিন্তু আমাদের এমন একটি আনন্দে পরিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে যেখানে শিশুরা বিভিন্ন কাজে নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখতে পারে। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেও শিশুদের ব্যস্ত রাখার অনেক উপাদান আছে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের এমন কিছু পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে যেগুলি শিশুদের আনন্দ দেবে কিন্তু নিরাপত্তার ঘাটতি হবে না। এর ফলে মহামারীর কারণে শিশুদের মধ্যে প্রতিকূল প্রভাব কমানো সম্ভব।
প্রশ্নঃ- বড় ছেলেমেয়েরাও বর্তমান শিক্ষা পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। তাদের জন্য আপনি কি পরামর্শ দেবেন?
উত্তরঃ- অনিশ্চয়তার শিকার বড় ছেলেমেয়েদেরাও । এই মহামারী তাদের লেখাপড়া এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং যারা বাচ্চাদের দেখভাল করেন তাদের ভূমিকা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগোতে সাহায্য করতে হবে এবং বোঝাতে হবে মহামারীর কারণে পৃথিবী জুড়ে তাদের মতোই অনেক শিশু একই পরিস্থিতির সম্মুখীন। বাবা-মায়ের ভূমিকাও এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের শিশুদের বাস্তব সম্পর্কে জানাতে হবে। পুরো প্রক্রিয়ায় বাবা-মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষা পর্ষদগুলি পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিকল্পের ব্যবস্থা করেছে। তাই আমি মনে করি আমরা এমন একটা জায়গায় পৌঁছাবো যখন শিশুদের শিক্ষা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবেনা।
প্রশ্নঃ- মহামারীর পরিস্থিতির মধ্যে বাবা-মা’রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনি বাবা-মা’দের কি পরামর্শ দেবেন?
উত্তরঃ- কাজের জায়গা এবং ব্যক্তিগত পরিসরের মধ্যে যে পার্থক্য ছিল সেটা এখন নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক মা-বাবাই তাঁদের সন্তানের শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন চাহিদা পূরণে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে সমস্যায় পরছেন। বিভিন্ন বয়সী শিশুদের চাহিদা আলাদা। তাদের প্রয়োজন, সময়, বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকার ধরণও আলাদা। বাড়িতে যদি উত্তেজনার পরিবেশ থাকে তাহলে শিশুর মানসিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে। বর্তমানে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে তার থেকে রেহাই পেতে নিরাপদ পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুরা যাতে ব্যস্ত থাকে বাবা-মা’দের সেদিকটি খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। বাবা-মা’দের দৈনন্দিন কাজকর্মের ফাঁকে বাচ্চাদের জন্য সময় বার করতে হবে। যাঁরা মানসিক চাপের থেকে নিজেদের বার করতে পারছেন না তাঁদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব অথবা পেশাদারদের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।
CG/CB /NS
(Release ID: 1738164)