স্বাস্থ্যওপরিবারকল্যাণমন্ত্রক

করোনার ভবিষ্যৎ ঢেউয়ে শিশুরা বেশি প্রভাবিত হবে অথবা সেই সংক্রমণের তীব্রতা আরও বেশি হবে- এগুলি আসলে সবই জল্পনা : নতুন দিল্লীর লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিশু চিকিৎসা বিভাগের নির্দেশক ডাঃ প্রবীণ কুমার

“গর্ভবতী মহিলা ও স্তন্যদায়ী মায়েদের জন্য কোভিড টিকা ভ্রূণ ও নবজাতককে ভয়াবহ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে”
“এ পর্যন্ত কোভিডে প্রাপ্ত বয়স্কদের থেকে শিশু মৃত্যুর হার কম, সাধারণত যেসব শিশু জটিল অসুখে আক্রান্ত ছিল, তাদের মধ্যেই মৃত্যুর হার বেশি ছিল”

Posted On: 21 JUL 2021 6:40PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী, ২১ জুলাই, ২০২১

নতুন দিল্লীর লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিশু চিকিৎসা বিভাগের নির্দেশক ডাঃ প্রবীণ কুমার শিশুদের ওপর কোভিড-১৯এর প্রভাব, তাদের কোভিড সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা এবং গর্ভবতী মহিলা ও স্তন্যদায়ী মায়েদের টিকাকরণের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
প্রশ্নঃ- এই মহামারী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে? দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কমানোর জন্য কি কি করা উচিত?
উত্তরঃ- শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর যথেষ্ট বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুরা এক বছরেরও বেশি সময় ঘরে আটকে রয়েছে। এছাড়াও পরিবারের সদস্যদের শরীর খারাপ, বাবা-মায়েদের কাজ হারানো শিশুর ওপর চাপ বাড়ায়। এক একটি শিশুর মানসিক চাপ এক এক রকমভাবে প্রকাশিত হয়। কোনো কোনো বাচ্চা চুপ হয়ে যায় আবার কেউ কেউ খুব রেগে যায় এবং অতিসক্রিয়তা দেখায়।
বাবা-মাকে শিশুদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে এবং তাদের আবেগ বুঝতে হবে। শিশুদের বিভিন্ন লক্ষণ থেকে বোঝা যায় তারা কতটা চিন্তিত, তাদের কতটা মনখারাপ। অস্বাস্থ্যকরভাবে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমের অভ্যেস ঠিকঠাক না থাকা, মনঃসংযোগ না হওয়াও শিশুদের মনখারাপের প্রতিফলন হতে পারে। তাদের দুর্ভাবনা দূর করতে পরিবারের সদস্যদের সাহায্যের প্রয়োজন।
প্রশ্নঃ- আপনি কি মনে করেন পরবর্তী ঢেউ শিশুদের ওপর বেশি আঘাত হানবে? কোভিড-১৯এর যেকোন ভবিষ্যৎ ঢেউয়ের মোকাবিলায় শিশুদের চিকিৎসার জন্য দেশের কতটা প্রস্তুতির প্রয়োজন?
উত্তরঃ- আমরা সবাই জানি কোভিড-১৯ একটি নতুন ভাইরাস। এর অভিযোজনের ক্ষমতা রয়েছে। ভবিষ্যৎ ঢেউ শিশুদের ওপর বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারবে কি না অথবা এরফলে সংক্রমণের তীব্রতা বেশি হবে কি না সেগুলি সবই জল্পনা। মানুষ ভাবছে ভবিষ্যৎ ঢেউ হয়তো প্রাপ্ত বয়স্কদের থেকে শিশুদের ওপর বেশি প্রভাব বিস্তার করবে। এর একটা কারণ বেশিরভাগ প্রাপ্ত বয়স্কই আগামী কয়েক মাসের মধ্যে টিকা পেয়ে যাবেন। কিন্তু এখনও শিশুদের জন্য অনুমোদিত টিকা না থাকায় তাদের টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
যদিও আমরা জানিনা কিভাবে ভবিষ্যতে ভাইরাস শিশুদের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে কিন্তু আমাদের শিশুদের এই সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হবে। বাড়ির প্রাপ্ত বয়স্কদের কোভিড সংক্রান্ত আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক অনুষ্ঠানে কম যেতে হবে, যাতে অন্যের থেকে সংক্রমণ বাড়িতে না পৌঁছায়। এছাড়াও প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকা নিতে হবে, যার ফলে শিশুরাও সংক্রণের থেকে রেহাই পাবে।
আর এখনতো গর্ভবতী মহিলা এবং স্তন্যদায়ী মায়েদের জন্য টিকা রয়েছে। এরফলে গর্ভবতী মহিলার মধ্যে থাকা ভ্রুণ এবং নবজাতক শিশু এই ভয়াবহ সংক্রমণের থেকে খানিকটা রক্ষা পাবে।
প্রশ্নঃ- কোভিড-১৯এর দ্বিতীয় ঢেউ শিশুদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছিল?
উত্তরঃ- শিশুরা দ্বিতীয় ঢেউয়ে সমানভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। কোভিড-১৯ হল নতুন একটি ভাইরাস। এই ভাইরাস যেকোন বয়সী মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। কারণ আমাদের এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। এনসিডিসি/আইডিএসপি-র ড্যাশবোর্ড অনুযায়ী কোভিড সংক্রমিতদের মধ্যে ১২ শতাংশের বয়স ছিল ২০-র নিচে।
সম্প্রতি সেরোপজেটিভিটির লক্ষণ শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে সমানভাবে দেখা গেছে। তবে এ সংক্রান্ত সমীক্ষায় জানা গেছে দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রথম ঢেউয়ের থেকেও বেশি সংখ্যক শিশু সংক্রমিত হয়েছে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে কোভিডের কারণে প্রাপ্ত বয়স্কদের থেকে শিশু মৃত্যুর হার কম। যেসব শিশু জটিল অসুখে ভুগছিল তাদের মধ্যেই মৃত্যুর হার বেশি ছিল।
প্রশ্নঃ- সংক্রমিত শিশুদের চিকিৎসার সময় আপনরা কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন, বিশেষ করে যাদের হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছিল?
উত্তরঃ- মোটামুটি আমরা হাসপাতালে কোভিড সংক্রমিত শিশুদের জন্য শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে পরিস্থিতির সামাল দিয়েছি, তবে দ্বিতীয় ঢেউয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন চিকিৎসক, রেসিডেন্ট ডক্টর এবং নার্সরা সংক্রমিত হয়েছিলেন সেইসময় আমরাও সমস্যায় পরেছিলাম। রেফার করা কেসগুলোর চিকিৎসা করা একটু সমস্যার কারণই হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
প্রশ্নঃ- এমআইএস-সি কি? এমআইএস-সি চিকিৎসা করার সময় আপনারা কি ধরণের সমস্যায় পড়েছিলেন, এ বিষয়ে একটু বিস্তারিতভাবে জানান। আপনি কি মনে করেন বাবা-মায়েদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন? কিভাবে এর চিকিৎসা করা হয়?
উত্তরঃ- মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটোরি সিনড্রম (এমআইএস) শিশুদের ক্ষেত্রে একটি নতুন লক্ষণ। সাধারণত ১৯ বছর পর্যন্ত শিশু ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা গেছে। কোনো এলাকায় সংক্রমণের হার যখন যথেষ্ট বেশি হয়েছে তার ২-৬ সপ্তাহ পরে এই লক্ষণগুলি দেখা গেছে। মূলত ৩ রকমের লক্ষণ নজরে এসেছে। প্রদাহ জনিত বিভিন্ন লক্ষণ সহ জ্বর ক্রমশ বাড়তে থাকা, ক্ল্যাসিক্যাল কাওয়াসাকি ডিজিজ এবং এলভি ডিসফাংশন। এমআইএস-সি এর নির্ধারণের জন্য উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। যাঁরা এমআইএস-সি তে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হবে তাদের এইচডিইউ/আইসিইউ সুবিধাযুক্ত হাসপাতালে পাঠাতে হবে। দ্রুত শনাক্তকরণ হলে এই অসুখের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।

CG/CB/NS


(Release ID: 1737552) Visitor Counter : 2058


Read this release in: English