জলশক্তি মন্ত্রক
জল জীবন মিশনের আওতায় পশ্চিমবঙ্গকে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় অনুদান
২০২১-২২-এ পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল বরাদ্দে ৪ গুণ বৃদ্ধি
Posted On:
01 JUN 2021 8:36PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ১ জুন, ২০২১
জল জীবন মিশনের আওতায় ২০২১-২২-এ পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৬ হাজার ৯৯৮ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে নিয়মিত ভাবে দীর্ঘ মেয়াদি ভিত্তিতে পাইপ বাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দিতে এই বিপুল অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৯-২০-তে এই খাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৯৯৫ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা। ২০২০-২১-এ তা আরও ১ হাজার ৬১৪ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বর্ধিত বরাদ্দ অনুমোদন করে ২০২৪-এর মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে পাইপ বাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দিতে রাজ্যকে সবরকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৯-এর ১৫ আগস্ট জল জীবন মিশন শুরু করার কথা ঘোষণা করেন। দেশের গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি পরিবারে ২০২৪-এর মধ্যে পাইপ বাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দিতে এই মিশনের সূচনা হয়। কোভিড-১৯ মহামারীজনিত লকডাউন সত্বেও গত ২১ মাসে জল জীবন মিশন রূপায়ণের কাজে গতি অব্যাহত থেকেছে, যাতে নির্ধারিত সময়-সীমার মধ্যে প্রতিটি পরিবারে জল সংযোগের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যায়। গত ২১ মাসে দেশে প্রায় ৪ কোটি ২৫ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারে পাইপ বাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার ফলে জল সংযোগের পরিধি বেড়ে ২২ শতাংশ থেকে ৩৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
জল জীবন মিশন ঘোষণার সময় পশ্চিমবঙ্গে ১ কোটি ৬৩ লক্ষ ২৫ হাজার গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে কেবল ২ লক্ষ ১৪ হাজার পরিবারে পাইপ বাহিত জল সংযোগের সুবিধা ছিল। কিন্তু গত ২১ মাসে রাজ্যে আরও ১৪ লক্ষ পরিবারে জল সংযোগের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ায় পরিধি ৮.৫৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯.৯০ শতাংশ হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, জাতীয় স্তরে গ্রামীণ পরিবারগুলিতে জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গড় হার ৩৯ শতাংশ।
২০২০-২১-এ পশ্চিমবঙ্গে ৫৫ লক্ষ ৫৮ হাজার পরিবারে জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য স্থির হলেও ১২ লক্ষ ৪৮ হাজার পরিবার এই সুবিধা পেয়েছে। কর্মসূচি রূপায়ণে শ্লথ গতি এবং তহবিল সদ্ব্যবহারে উদাসীনতার ফলে রাজ্য বরাদ্দকৃত তহবিলের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। এখন পশ্চিমবঙ্গ কর্মসূচি রাপায়ণে আরও গতি সঞ্চারের পরিকল্পনা করেছে, যাতে ২০২০-২১-এর মধ্যে ৪৩ লক্ষ ১০ হাজার গ্রামীণ পরিবারে পাইপ বাহিত জল সংযোগের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যায়। এই লক্ষ্য পূরণে রাজ্যকে কর্মসূচি রূপায়ণের গতি চার গুণ বাড়াতে হবে।
রাজ্যের সঙ্গে সম্প্রতি এক বৈঠকে জল শক্তি মন্ত্রকের জল জীবন মিশন কর্তৃপক্ষ বার্ষিক কর্ম-পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে এবং ২০২৪-এর মধ্যে প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে জল সংযোগ পৌঁছে দিতে উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রনয়ণে রাজ্যকে সাহায্য করছে।
২০১৯-এর দোসরা অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ১০০ দিনের অভিযানের অঙ্গ হিসেবে রাজ্য সমস্ত বিদ্যালয় ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাইপ বাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২০-২১-এ ৭৫ হাজার ১৩৭টি বিদ্যালয় এবং ৯১ হাজার ৭৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাইপ বাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য ধার্য হলেও কেবল ১০ হাজার ৪৬টি বিদ্যালয় এবং ৬ হাজার ৪৩০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এই সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এমনকি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ সমস্ত শিশু শিক্ষণ এবং ডে কেয়ার সেন্টারগুলিতে পাইপ বাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বিদ্যালয়ে আসা পড়ুয়াদের সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য বিধিতে মানোন্নয়নের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।
উল্লেখ করা যেতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে ১ হাজার ২৫১টি গ্রামে পানীয় জলের উৎসে আর্সেনিক ও অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থের সংমিশ্রণ রয়েছে বলে জানা গেছে। এর প্রেক্ষিতে রাজ্যকে সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাইপ বাহিত পানীয় জলের সংযোগ সুনিশ্চিত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, পরিবার পিছু দৈনিক প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ৮ থেকে ১০ লিটার বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে। রাজ্যে জলের গুণমান পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ২২০। জাতীয় জল জীবন মিশনের আওতায় এনএবিএল স্বীকৃত সমস্ত জলের নমুনা পরীক্ষাগারগুলির মানোন্নয়নে রাজ্যগুলিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যাতে ন্যূনতম খরচে জলের নমুনা পরীক্ষা করাতে পারেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। এদিকে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আরও ১৩৮টি জল নমুনা পরীক্ষাগার এনএবিএল-এর স্বীকৃতি পাবে।
জল জীবন মিশনের আওতায় প্রতিটি গ্রামে একটি করে জল এবং স্বাস্থ্যবিধি কমিটি গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই কমিটিতে ১২ থেকে ১৫ জন পর্যন্ত সদস্য থাকবেন, যার মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব থাকবে মহিলাদের। সমাজের দুর্বলতর শ্রেণীর মানুষের মধ্যে থেকেও কমিটিতে প্রতিনিধিত্বকারী সদস্যদের রাখার কথা বলা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৪১ হাজার ৩৫৭টি গ্রামের মধ্যে কেবল ২ হাজার ৮৪০টি গ্রামে এধরণের কমিটি রয়েছে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অনুদান সদ্ব্যবহারে প্রতিটি গ্রামের জন্য পঞ্চবার্ষিকী গ্রাম পরিকল্পনা প্রনয়ণ করতে বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচি খাতে প্রদেয় অর্থ কাজে লাগানো যাবে।
সারা দেশে জল জীবন মিশন রূপায়ণের ফলে গ্রামগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ ঘটছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, গ্রামাঞ্চলে পানীয় জল সরবরাহ খাতে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এরমধ্যে, ২০২১-২২-এ জল জীবন মিশনের জন্য বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অনুদান হিসেবে পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলিকে জল এবং স্বাস্থ্য বিধান খাতে ২৬ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে জল জীবন মিশন রূপায়ণে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বর্ধিত কেন্দ্রীয় বরাদ্দ সহ রাজ্যের অংশ মিলিয়ে এবং পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অনুদানের অর্থ কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ পরিবারগুলিতে পাইপ বাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তহবিলে কোন ঘাটতি থাকছে না। তাই রাজ্যকে এই কর্মসূচি রূপায়ণে উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজে আরও গতি আনতে হবে যাতে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে পাইপ বাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়া যায়।
CG/BD/AS
(Release ID: 1723533)
Visitor Counter : 1135