শিল্পওবাণিজ্যমন্ত্রক

অক্সিজেন যোগান, বন্টন এবং মজুত পরিকাঠামোর সম্প্রসারণে কেন্দ্রের একগুচ্ছ উদ্যোগ

Posted On: 10 MAY 2021 4:13PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১০ মে, ২০২১

দেশে অক্সিজেনের বিপুল চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকার অক্সিজেনের যোগান বৃদ্ধি, বন্টন ব্যবস্থাপনা এবং অক্সিজেন মজুত পরিকাঠামোর সম্প্রসারণে একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে। সমগ্র অক্সিজেন সরবরাহ শৃঙ্খলের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অক্সিজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত সংখ্যায় ট্যাঙ্কারের বন্দোবস্ত এবং সর্বত্র অক্সিজেন মজুত ব্যবস্থার মানের উন্নতি তথা সংগ্রহের নিয়ম নীতি আরও সহজ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দেশে অক্সিজেনের যোগান বাড়াতে উৎপাদন ক্ষমতায় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রেশার স্যুইং অ্যাবজর্ভশন প্ল্যান্ট স্থাপন, চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত তরল অক্সিজেন আমদানি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সংগ্রহে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক করতে ট্যাঙ্কারের যোগান, নাইট্রোজেন ও আর্গন ট্যাঙ্কারগুলির রূপান্তরণ, কন্টেনার আমদানি, দেশে ট্যাঙ্কার উৎপাদন তথা রেল ও বিমানে ট্যাঙ্কার পরিবহণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যাতে পরিবহণের সময় সাশ্রয় করা যায়। পরিবহণ ব্যবস্থায় নজরদারির জন্য ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এমনকি, ট্যাঙ্কারবাহী ভারি যানবাহণ চালানোর জন্য ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণে জোর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অক্সিজেনের মজুত ভান্ডার এবং হাসপাতালগুলিতে ক্রায়োজেনিক ট্যাঙ্কারের সংখ্যা বাড়াতে এবং চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহে জোর দেওয়া হচ্ছে। অত্যাবশ্যক সামগ্রী সরবরাহ করতে, তা দ্রুত সংগ্রহ করার জন্য জেনারেল ফিনান্সিয়াল রুল বা আইন শিথিল করা হয়েছে।
দেশে ২০২০-র অগাস্টের তুলনায় চলতি মে মাসে দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা ৫,৭০০ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ৯,৪৪৬ মেট্রিক টন হয়েছে। একই ভাবে উৎপাদনশীলতাও দৈনিক ৬,৮১৭ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ৭,৩১৪ মেট্রিক টন হয়েছে। অক্সিজেন ব্যবহারের পরিমাণ গত বছরের অগাস্ট থেকে এবছরের মে পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২৯ শতাংশ হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি ক্ষেত্রে ইস্পাত সংস্থাগুলি চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত অক্সিজেনের দেশব্যাপী চাহিদা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে। ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে গত ৪ মে চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত তরল অক্সিজেন উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩,৬৮০.৩০ মেট্রিক টন। একই ভাবে দৈনিক চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত তরল অক্সিজেনের সরবরাহ এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে গড় ১,৫০০ মেট্রিক টন/১,৭০০ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে গত ২৫ এপ্রিলে দাঁড়ায় ৩,১৩১ মেট্রিক টনে। এধরণের অক্সিজেনের সরবরাহ গত ৪ মে আরও বেড়ে দাঁড়ায় দৈনিক ৪,০৭৬.৬৫ মেট্রিক টন। উৎপাদিত অতিরিক্ত অক্সিজেনের পাশাপাশি দেশে চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত তরল অক্সিজেনের চাহিদাও গত মার্চে দৈনিক ১,৩০০ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে গত ৬ মে ৮,৯২০ মেট্রিক টন হয়েছে। দেশে কোভিড-১৯ প্রথম ঢেউয়ের সময় গত ২৯ সেপ্টেম্বর একদিনেই সর্বাধিক ৩,০৯৫ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন বিক্রি হয়েছিল। অবশ্য দৈনিক এই বিক্রির পরিমাণ গত ৩ মে পাঁচ গুণেরও বেশি বেড়ে ৮,০০০ মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে।
দেশে অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে উৎপাদন কেন্দ্রগুলির সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হয়েছে। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজ্যে অতিরিক্ত অক্সিজেন উৎপাদন ইউনিট চালু করার পাশাপাশি অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থাগুলিকেও কাজে লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে। ইস্পাত ক্ষেত্রগুলিতে দৈনিক অতিরিক্ত ৬৩০ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বিদেশ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন আমদানি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৬ হাজার মেট্রিকটন এধরণের অক্সিজেন সরবরাহের বরাত দেওয়া চূড়ান্ত হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক বিভিন্ন দেশ থেকে অক্সিজেন সংগ্রহের ক্ষেত্রে সক্রিয় সহযোগিতা করছে।
পিএম কেয়ার ফান্ড থেকে ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এধরণের কনসেনট্রেটর যোগান দেওয়ার জন্য গত ২৯ এপ্রিল আগ্রহপত্র জমা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এছাড়াও ওএনজিসি-র পক্ষ থেকে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর যোগান দেওয়ার জন্য যে দরপত্র আহ্বান করা হয়, তাতে ভাল সাড়া মিলেছে।
রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সমানুপাতিক হারে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য বন্টন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি রাজ্যের জন্য অক্সিজেন বন্টন সংক্রান্ত নির্দেশ জারি করা হয়েছে। মহামারীর ঢেউ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ায় ক্রমবর্ধমান অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়ছে। এই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক সুস্পষ্টভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতি রাজ্যের জন্য অক্সিজেনের চাহিদার পরিমাণ মূল্যায়ণ করছে।
দেশে অক্সিজেন ট্যাঙ্কারের যোগান বাড়াতে একগুচ্ছ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে নাইট্রোজেন ও আর্গন ট্যাঙ্কারগুলিকে অক্সিজেন ট্যাঙ্কারে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ট্যাঙ্কারের চাহিদা মেটাতে আমদানি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১০১টি ট্যাঙ্কার আমদানি করা হয়েছে এবং ২৪৮টি ট্যাঙ্কার আমদানি করা হচ্ছে। আগামী ১০ দিনে আরও ৫৮টি ট্যাঙ্কার আমদানি করা হবে। এছাড়াও দেশে ১০০টি ট্যাঙ্কার নির্মাণের কাজ চলছে।
অক্সিজেন ট্যাঙ্কার পরিবহণে সময় সাশ্রয় করতে রেল ও বিমানে করে ট্যাঙ্কার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় রেল এখনও পর্যন্ত ২৬৮টি ট্যাঙ্কারে ৪,২০০ মেট্রিক টন চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত তরল অক্সিজেন বিভিন্ন রাজ্যে সরবরাহ করেছে। এছাড়াও রেল ৬৮টি অক্সিজেন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে বিভিন্ন রাজ্যে তরল অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছে। খালি ট্যাঙ্কারগুলি বিমানে করে বিভিন্ন অক্সিজেন উৎপাদন ইউনিটে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এধরণের ২২২টি ট্যাঙ্কার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় বিমান বাহিনী ১,২৯৩ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৭৫টি কন্টেনার বিদেশ থেকে নিয়ে এসেছে।
দেশে অক্সিজিনের সরবরাহে নজরদারির জন্য ওয়েব ও অ্যাপ ভিত্তিক অক্সিজেন ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু হয়েছে। অক্সিজেন ট্যাঙ্কারবাহী যানবাহণগুলির চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নিগম এবং লজিস্টিক সেক্টর স্কিল কাউন্সিল অতিরিক্ত ২,৫০০ চালককে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেন মজুত রাখার ক্রায়োজেনিক ট্যাঙ্কের সংখ্যা ২০২০-র মার্চে ৬০৯টি থেকে বাড়িয়ে ৯০১টি করা হয়েছে। একই ভাবে মেডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যাও ২০২০-র মার্চে ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার থেকে বেড়ে গত মে মাসে ১১ লক্ষ ১৯ হাজার হয়েছে।
চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত অত্যাবশ্যক সামগ্রীর সংগ্রহ প্রক্রিয়া দ্রুত করতে জেনারেল ফিনান্সিয়াল রুল বা আইন শিথিল করা হয়েছে। কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধ ও মোকাবিলার জন্য অত্যাবশ্যক সামগ্রীর সংগ্রহ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতেই এই উদ্যোগ। অত্যাবশ্যক কোভিড সামগ্রী সংগ্রহে ১০০ শতাংশ মাশুল আগেই মিটিয়ে দেওয়ার অনুমতি মিলেছে।

CG/BD/AS



(Release ID: 1717676) Visitor Counter : 264


Read this release in: English