মানবসম্পদবিকাশমন্ত্রক

লকডাউনের সময় শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে প্রশংসিত কৃষ্ণনগর সংগঠন

Posted On: 03 JUL 2020 2:24PM by PIB Kolkata

কোলকাতা, ৩ জুলাই, ২০২০

 

 

তাপস মল্লিক এবং তাঁর বিশ্ব বাঁচাও সমিতির উদ্যোগকে মানবতার এক অনন্য নিদর্শন হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। লকডাউনের জেরে আর্থিক কষ্টে পড়া বহু মানুষের জন্য অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিশ্ব বাঁচাও সমিতিও তাদের মতই আরও একটি প্রতিষ্ঠান তবে তাদের ভাবনা একটু অন্যরকম, তারা লকডাউনের সময় অভাবী ছাত্র ছাত্রী দের পড়াশোনায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে তার জন্য চেষ্টা করে চলেছেন।

 

জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময়, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বারংবার সকল গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, গ্রামবাসী, প্রতিবেশী এবং অন্যদের একত্রিত হয়ে এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে একে অপরকে সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়েছেন। দেখা গেছে আমাদের চারপাশে কষ্ট করে বেঁচে থাকা অসংখ্য মানুষকে ন্যুনতম সুবিধা দেবার জন্য হাজারে হাজারে মানুষ তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন আর তা দেখে আরও বহু মানুষ অনুপ্রাণিত হয়েছেন। বহু কৃষক তাদের প্রতিবেশী পরিবারগুলিকে বিনা মূল্যে খাবার দিয়েছেন, এমনও দেখা গেছে যাদের নিজের পরিবারকে ঠিক ভাবে খাওয়ানোর মত জিনিসপত্র বাড়ীতে মজুত নেই তারাও যা কিছু ছিল তা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। শ’য়ে শ’য়ে  এন জি ও, বিভিন্ন সংগঠন দৈনন্দিন প্রয়োজনের জিনিসপত্র নিয়ে দুর্গত মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সুন্দরবন অঞ্চলে এমনও নজির দেখা গেছে যেখানে একটি এনজিও তাঁর অতিথিশালার সব ঘর  চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের থাকার জন্য একেবারে নিখরচায় দিয়ে দিয়েছেন যাতে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য দীর্ঘ দূরত্বে পাড়ি দিতে না হয় এবং সংক্রমণের আশংকা না থাকে।

 

বিশ্ব বাঁচাও সমিতির উদ্যোগও এমনই, তবে একটু অন্যভাবে। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার একটি বর্ধিষ্ণু শহর কৃষ্ণনগর, আর সেখানেই ব্যবসা তাপস মল্লিকের। চারিদিকের  দম বন্ধ করা পরিবেশ দেখে তাপস এবং তাঁর সহযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন এই সমস্ত দুর্গত মানুষদের জন্য কিছু একটা করতেই হবে। তাপসের বক্তব্য ‘আসলে আমার চারপাশের লোকেদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখে ভীষণ হতাশ লাগছিল। লক্ষ্য করলাম কৃষক এবংস্ব -নিযুক্ত লোকেরা সরকারের নানা আর্থিক প্যাকেজ এবং অন্যান্য সাহায্যের মাধ্যমে সংসার টা কোনমতে হলেও চালিয়ে নিচ্ছিল কিন্তু এমন বহু চাকরিজীবী যারা ছোট ছোট সংস্থায় কাজ করতেন তারা পড়লেন বিপদে। অনেকের চাকরি চলে গেলো, কারো আবার চাকরি না গেলেও বেতন বন্ধ হয়ে গেল। এই পরিস্থিতিতে আমি আমার বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের অনুরোধ করলাম তারা যে যেরকম ভাবে পারে তাই দিয়ে যেন এই অভাবী মানুষ গুলোর পাশে এসে দাঁড়ায়। বিশেষ করে সেই সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের পাশে যারা উঁচু  ক্লাসে পড়াশোনা করে, মানে ক্লাস নাইন থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত’। আস্তে আস্তে স্থানীয় মানুষ তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। ‘প্রথম দিকে আমি একা শুরু করলেও এখন আমার সাথে প্রায় ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবক আছেন’ বললেন বিশ্ব বাঁচাও সমিতি গঠনের অন্যতম কারিগর তাপস বাবু। যে সমস্ত অভাবী শিক্ষার্থী যারা অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিতে পারে না তাদের পড়াশোনা করানোর লক্ষ্যে এই সংস্থাটি উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি এবং তাঁর সঙ্গী সাথীরা বিন্দুবাসিনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিকে অনুরোধ করেছিলেন লকডাউন চলাকালীন ঐ বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ গুলি তাদের দেওয়ার জন্য যাতে দরিদ্র ও অভাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার নির্ধারিত সব রকম স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিনামূল্যে কোচিং ক্লাস শুরু করা যায়, পরিচালন সমিতি তাদের সেই আবেদনে  তাৎক্ষণিক ভাবে সাড়া দিয়ে ক্লাস শুরু করার অনুমতি দেয়।

 

বর্তমানে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থী বিপ্লব মজুমদার, সুকামাল বিশ্বাস, অচিন্ত্য মজুমদার প্রমুখের মত নামী শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ পাচ্ছে। ভালুকা উচ্চ বিদ্যালয়, বেলপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়, সূর্য সেন উচ্চ বিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫ জন শিক্ষক ছাত্র ছাত্রীদের নিয়মিত পড়াচ্ছেন। বিভিন্ন ব্যাচে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য কেন্দ্রটি সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে, মাস্ক পরে চলে শিক্ষাদানের কাজ। শিক্ষার্থীদের খাতা, কলম, মুখোশ এবং সাবান ও স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয়েছে। তাপস বাবু জানিয়েছেন যে তারা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্তদান শিবির, লকডাউনের সময় রান্না করা খাবার সরবরাহ, মা ও শিশুর জন্য স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করেছেন এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু করার আশা রাখেন।

 

 

SDG



(Release ID: 1636117) Visitor Counter : 121


Read this release in: English