তথ্যওসম্প্রচারমন্ত্রক
কোভিড – ১৯ এর বিরুদ্ধে মোদীর অভূতপূর্ব যুদ্ধ
Posted On:
06 MAY 2020 6:59PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ৫ মে, ২০২০
প্রকাশ জাভড়েকর
প্রথম কোনো রাজনৈতিক নেতা হিসেবে যিনি সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব বুঝেছিলেন, তিনি সম্ভবত নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪ সালে নির্বাচনে বিজেপি এর মাধ্যমে সফল হয়েছিল। তার পর থেকেই তিনি এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে সমাজকে বাস্তবচিত্র দেখান এবং সকলকে অনুপ্রাণিত করেন। শ্রী মোদী, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য বেতার মাধ্যমকেও ব্যবহার করেছেন। এর সবথেকে বড় উদাহরণ হল তাঁর জনপ্রিয় বেতার অনুষ্ঠান, ‘মন-কি-বাত’।
আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ডিসেম্বরে চীনে যখন প্রথম করোনা ভাইরাসের খবর পাওয়া গিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী, সেই সময়ই অশনি সঙ্কেত দেখেছিলেন। ভারতে সেই সময় কেউ সংক্রমিত হন নি। ৩০ জানুয়ারী প্রথম একজন ভারতীয় রোগীর শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। কিন্তু মোদীজী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার প্রতিটি বৈঠকের শেষে বলতেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি একটি সঙ্কটে পরিণত হবে, যার জন্য কেউই প্রস্তুত নয়। তাই ভারতকে আগে থাকতেই সতর্ক হতে হবে। ভারত, আন্তর্জাতিক যাত্রীদের দেশে পৌঁছানোর পর শারীরিক পরীক্ষার কাজ শুরু করে । যখন সঙ্কট বাড়লো, তখন, বিমান ও রেলচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হল। যে সব যাত্রীরা সন্দেহের তালিকায় ছিলেন, মানেসারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যবস্থাপনায় তাদের নজরদারীতে রাখা হয়েছিল। সেই সময় আমরা বুঝতে পারছিলাম, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে। সেই দিন থেকে প্রধানমন্ত্রী,কোভিড – ১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতির পরিকল্পনা রূপায়িত করতে শুরু করেছিলেন।
• কোভিড চিকিৎসার নির্দিষ্ট হাসপাতালের কোনো ধারণাই তখন ছিল না। আর আজ ২ লক্ষেরও বেশি আইসোলেশন বেড এবং ১৫,০০০ আইসিইউ বেডের ব্যবস্থাযুক্ত প্রায় ৭০০টি এধরণের হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
• যে সব চিকিৎসক, কোভিড সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা করেন, তাঁদের সুরক্ষার জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের প্রয়োজন। ভারতে সেই সময় এই ধরনের সরঞ্জাম ছিল না। তাই ১ কোটি এই ধরণের সামগ্রী বিদেশ থেকে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর আজ ভারতের ৩৯ টি কারখানায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করা হচ্ছে।
• আমরা এন৯৫ সহ এধরণের মাস্ক তৈরি করতাম না। আর আজ ৮০ লক্ষ মাস্ক তৈরি করে বন্টন করা হয়েছে। ভারতে এখন প্রচুর এন৯৫ মাস্ক তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীরা এগুলি তৈরি করছেন।
• আগে ভারতে শুধু পুণেতেই একটি গবেষণাগার ছিল। যেখানে প্রতিদিন মাত্র ২০০টি নমুনা পরীক্ষা করা যেত। বর্তমানে দেশের প্রায় ৩০০টি পরীক্ষাগারে দৈনিক ২০,০০০ এরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
• আগে দেশে মাত্র ৮৪০০টি ভেন্টিলেটর ছিল। বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩০,০০০। শুধু তাই নয়, আশা করা হচ্ছে, ভারতীয় সংস্থাগুলি এরপর দেশে ৩০,০০০ ভেন্টিলেটর তৈরি করবে।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা শুনছেন এবং আমাদের অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিচ্ছেন। তিনি মনে করেন, এই উদ্যোগ অত্যন্ত ফলপ্রসূ হচ্ছে। একইভাবে প্রধানমন্ত্রী, লকডাউনের প্রভাব সম্পর্কে ধারণা করেছিলেন। তাই তিনি দরিদ্রদের রক্ষা করার জন্য ১,৭০,০০০ কোটি টাকার একটি বিরাট প্যাকেজ ঘোষণা করেন। ভারত, বিশ্বের বৃহৎতম খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় সমাজের প্রান্তিক মানুষ সহ মোট ৮০ কোটি মানুষকে ২ বা ৩ টাকা কিলোদরে ৫ কেজি গম বা চাল দিয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এপ্রিল, মে ও জুন মাসের জন্য বিনামূল্যে সকলকে মোট ১৫কেজি চাল বা গম এবং ৩ কেজি ডাল দেবেন। এরফলে প্রতিটি পরিবারের রেশনের মূল চাহিদা মিটবে।
স্বল্প আয়ের ২০ কোটি মহিলা, তাদের জনধন অ্যাকাউন্টে ৩ মাস ৫০০ টাকা করে পাচ্ছেন। এছাড়া ৮ কোটি ৪০ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে ২০০০ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। উজ্জ্বলা এলপিজি প্রকল্পে ৮ কোটি সুবিধাপ্রাপক বিনামূল্যে ৩টি করে গ্যাসের সিলিন্ডার পাচ্ছেন। প্রায় ৯ লক্ষ কর্মী কোভিড – ১৯ এর বিরুদ্ধে ভবিষ্যনিধি তহবিল থেকে ৩৬ কোটি টাকা তোলার সুযোগ পেয়েছেন।
মোদীজী ঘোষণা করেছেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং কর্মীদের কর্মচারী ভবিষ্যনিধি তহবিলে প্রদেয় অর্থ সরকার, তিন মাস দেবে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির মালিক এবং কর্মচারীদের সুবিধে হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, রেপো রেটের বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ৪ লক্ষ কোটি টাকার যোগানের সংস্থান রেখে লিক্যুইডিটির ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া মধ্যবিত্ত মানুষদের কথা মাথায় রেখে ইএমআই-এর টাকা জমা দেবার সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্র, কোভিড – ১৯ এর চিকিৎসার জন্য ১৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এবং রাজ্য বিপর্যয় ত্রাণ তহবিলে ১১,০০০ কোটি টাকা দিয়েছে। নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের সাহায্যের জন্য ৩১,০০০ কোটি টাকা রাজ্য সরকারগুলিকে পাঠানো হয়েছে। এই টাকা যাতে দ্রুত সুবিধেভোগীদের মধ্যে বন্টন করা হয়, রাজ্য সরকারগুলিকে সেইজন্য ব্যবস্থা নেবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কৃষি ক্ষেত্রে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, প্রধানমন্ত্রী তাও নিশ্চিত করেছেন। কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির যাতে স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে কৃষিপণ্য পরিবহণ দ্রুত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাম্পার ফলন নিশ্চিত করতে বীজ বপনের কাজে সুবিধের জন্য কৃষকদের অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
লকডাউন হল একটি বিরাট সিদ্ধান্ত। জনগণ, স্বেচ্ছায় অংশ না নিলে এটি কখনই সফল হবে না। প্রধানমন্ত্রী তাই সকলের সঙ্গে মতবিনিময় করে চলেছেন। সমাজের দরিদ্রতম মানুষটিও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী, তাঁদের উন্নতিতে কাজ করছেন। তাই তিনি দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনের জন্য তাঁর যাতে মানসিকভাবে প্রস্তুত হন, সেই উদ্দেশে ব্যবস্থা নিয়েছেন। ২২ মার্চ, ‘জনতা কারফিউ’-এ ১৩০ কোটি মানুষের দেশে ৯৯ শতাংশ মানুষ সেটিতে অংশ নিয়েছেন । ঐ দিন বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রী, কোভিড যোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে সকলকে থালা, ঘন্টা, শাঁখ বাজিয়ে এবং হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাতে বলেন। এভাবেই মানুষ অনুপ্রাণিত হয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে একযোগে কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী, সুরক্ষার জন্য ৪টি সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছিলেন।
• মাস্ক পরে থাকতে হবে।
• হাত নিয়মিত ধুতে হবে।
• সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এবং
• ঘরে থাকতে হবে।
সাধারণভাবে বলা যায়, সকলেই এগুলো মেনে চলছেন। সমাজের নানা অংশের মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী, এর পর সকলকে রাত ৯টার সময় ৯ মিনিট প্রদীপ জ্বালাতে বলেন। সকলেই সেটি উৎসাহের সঙ্গে পালন করেছিলেন। এমনকি বস্তিতে থাকা মানুষ এবং গৃহহীনরাও সেদিন বাতি জ্বালিয়ে ছিলেন। যখন তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন তারা এগুলি করছেন, তাঁদের জবাব ছিল, মোদীর জন্য আমরা রক্ষা পেয়েছি। তাই আমরা তাঁর কথা শুনবো। তেসরা মে করোনা যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে সশস্ত্র বাহিনী অভিনব পন্থা নিয়েছিল।
এইভাবে মোদীজী আগে থেকেই বিস্তারিত ভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সেই বিষয়গুলি সকলকে জানিয়েছিলেন। এভাবেই ভারত,বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের থেকেও ভালোভাবে কোভিড সমস্যা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে।
(লেখক, কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, তথ্য ও প্রযুক্তি এবং ভারী শিল্প ও রাষ্ট্রায়াত্ত্ব উদ্যোগ মন্ত্রী)
CG/CB/SFS
(Release ID: 1621535)
Visitor Counter : 193