প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

কোভিড-১৯ মোকাবিলা নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 20 MAR 2020 8:41AM by PIB Kolkata

নতুনদিল্লি, ১৯ মার্চ ২০২০

 

 

প্রিয় দেশবাসী,

 

সারা বিশ্ব এখন এক গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলেছে। সাধারণত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে,তা কয়েকটি রাজ্য বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।কিন্তু এবার যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তাতে গোটা মানবজাতি সংকটের মুখে পড়েছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এত দেশের ওপর প্রভাব পড়েনি যা করোনা ভাইরাস সংক্রমণে হয়েছে।

গত দুমাসের বেশি সময় ধরে আমরা ক্রমাগত মারাত্মক করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত খবর শুনছি বা দেখছি ।এই দুমাস, ১৩০ কোটি ভারতীয় নাগরিক সচেতন এবং যথোচিতভাবে গোটা বিশ্বে ছড়িযে পড়া এই মহামারীর মোকাবিলা করেছেন।  

যদিও,গত কয়েক দিন ধরে মনে হচ্ছে যে, আমরা এই সঙ্কটকে এড়াতে পেরেছি এবং সব কিছু ঠিকঠাক চলছে, কিন্তু সারা বিশ্ব জুড়ে করোনা যে মহামারীর আকার ধারণ করেছে তাতে আত্মসন্তুষ্টির অবকাশ নেই। তাই প্রত্যেক ভারতীয়কে সজাগ এবং সাবধান থাকতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

যখনই আমি আপনাদের কাছ থেকে কিছু চেয়েছি, আপনারা আমাকে বিমুখ করেন নি।শুধুমাত্র আপনাদের আশীর্বাদের শক্তি নিয়েই আমরা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি।

আজও আমি সমস্ত নাগরিকের কাছে কিছু চাইতে এসেছি।

আমি আগামী কয়েক সপ্তাহের জন্য আপনাদের কাছ থেকে অদূর ভবিষ্যতে কিছু সময় দেবার অনুরোধ রাখছি।

 

বন্ধুগণ,

 

এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান, করোনা সংক্রমণের মহামারী এড়াতে নিশ্চিত ভাবে কোনো সমাধান সূত্র খুঁজে বের করতে পারে নি। এর কোনো প্রতিষেধকও আবিষ্কার হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।যে সব দেশগুলিতে এই সংক্রমণ ছড়িয়েছে, সেই দেশগুলিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে এই রোগের আরও কিছু বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই দেশগুলিতে, প্রথম কয়েকদিন পর থেকে, এই সংক্রমণ বিস্ফোরক আকার ধারন করেছে। দ্রুতগতিতে মানুষ এই করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন।

ভারত সরকার, প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে চলেছে এবং করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করছে।

বেশ কিছু দেশ দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং অনেক বেশি মানুষকে পৃথক ভাবে রেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে। করোনা সংক্রমণের এই ক্রমবর্ধমান সমস্যা, ১৩০ কোটির মানুষের উন্নয়নশীল দেশের কাছে সমস্যার কারণ হতে পারে।

আজ যেখানে উন্নত দেশগুলির উপর কোভিড-১৯ এতটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে, তখন এটা ভাবার অবকাশ নেই যে ভারতে তার প্রভাব পড়বে না।

এই মহামারীর মোকাবিলায়, আমাদের দুটি মূলমন্ত্র মনে রাখতে হবে, তা হলো স্থিরসঙ্কল্প এবং ধৈর্য। আজ, আমাদের ১৩০ কোটি ভারতবাসীকে দৃঢ় সঙ্কল্প নিতে হবে যে, আমাদের কিছু নাগরিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা এই পরিস্থিতি জয় করবো। কেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি যে সমস্ত নির্দেশিকা জারি করবে তা মেনে চলবো।

আজ আমাদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে নিজে সংক্রমিত হবো না এবং অন্যকে সংক্রমিত হতে দেব না।

 

বন্ধুগণ,

 

এই সংক্রমণের সময়, একটি মন্ত্রই প্রাসঙ্গিক, তা হলো,"আমরা সুস্থ তো সারা বিশ্ব সুস্থ"।

এমন এক পরিস্থিতি, যখন এই রোগের সেরে ওঠার পন্থা কারো জানা নেই, তখন নিজেদের সুস্থ রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

এই রোগ নিরাময়ে ধৈর্যর বড় ভূমিকা রয়েছে এবং নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে। ধৈর্যর পরীক্ষা আমরা কি ভাবে দেব? জন সমাবেশ, ভীড় এড়িয়ে চলে এবং বাড়ি থেকে না বেড়িয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে সামাজিক দূরত্ব তৈরি করার বিশষ গুরুত্ব রয়েছে।

আমাদের সঙ্কল্প আর ধৈর্য এই মহামারি আটকাতে বিশেষ ভুমিকা নেবে।

তাই এটা ভাবা ঠিক নয় যে আপনারা ক্রমাগত বাজার যাবেন, মানুষজনের ভীড় রয়েছে এমন জায়গায় যাবেন অথচ আপনি সংক্রমিত হবেন না।আপনার এই পদক্ষেপে শুধুমাত্র আপনি নন, আপনার পরিবারের সদস্যদের প্রতিও আপনি অবিচার করবেন।

তাই আগামী কয়েক সপ্তাহ, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ী থেকে না বেরনোর আবেদন জানাচ্ছি।

যতটা সম্ভব, ব্যবসাবাণিজ্য বা চাকুরী, কাজ ,বাড়ী থেকেই করার আবেদন জানাচ্ছি।

যারা সরকারি কাজে যুক্ত, স্বাস্থ্যপরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, জনপ্রতিনিধি ,সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত− তারা বাকিদের থেকে নিজেদের আলাদা রাখবেন।

আমি আরও একটা আবেদন জানাচ্ছি যে, বয়স্ক মানুষ যারা রয়েছেন, ৬৫ বছরের ওপর প্রবীন নাগরিকরা আগামি কয়েক সপ্তাহ বাড়ি থেকে বেরোবেন না।

বর্তমান প্রজন্ম হয় তো এই পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত নয়, তবে প্রবীনরা জানেন যুদ্ধর সময় রাত্রি বেলায় প্রায়শই এমন ব্ল্যাক আউট হয়ে যেত।এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে চলত।

 

বন্ধুগণ,

 

আমি আরো একটি বিষয়ে আপনাদের সমর্থন চাইছি, তা হলো "জনতা কার্ফু"।

জনতা কার্ফু, মানে হলো, নাগরিকরা নিজেদের ওপর কার্ফু জারি করবেন।

এই রবিবার,অর্থাৎ ২২ শে মার্চ,সমস্ত নাগরিক সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্য্যন্ত এই কার্ফু মেনে চলবেন। আমরা এই সময় বাড়ি থেকে বেরব না। রাস্তা বা পাড়াতে ঘুরে বেড়ানো থেকে বিরত থাকব।

 

বন্ধুগণ,

 

২২ মার্চ আমাদের দেশের প্রতি আত্মসংযম প্রকাশের একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকুক।২২মার্চের   ‘জনতা কার্ফু’ এর সাফল্যের ওপর আমরা আমাদের যে অভিজ্ঞতা অর্জন করবো তা আমাদের আগামীতে সমস্যা মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।   

আমি সমস্ত রাজ্য সরকারগুলিকে অনুরোধ করছি যে, তারা এই জনতা কার্ফু সফল করতে এগিয়ে আসুক।

 

আমি যুব সম্প্রদায়, NCC, NSS এবং সিভিল সোসাইটি সহ অনান্য সংস্থাকে অনুরোধ করছি আগামি দু-দিন জনসচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিন।

আমি প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে সম্ভব হলে তাঁরা যেন রোজ কমপক্ষে ১0 জন লোকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে বিশদ ভাবে জানান,  এই করোনা ভাইরাসের থেকে তাদের আত্মরক্ষা করার উপায় কি কি, এবং জনতা কার্ফু এর বিষয়টি ঠিক কি।

এই জনতা কার্ফু আমাদের এবং আমাদের দেশের জন্য লিটমাস টেস্ট এর কাজ করবে।যখন করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্ব জুড়ে মহামারীর আকার নিয়েছে তখন এটাই দেখার সময় এসেছে যে ভারত তার মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত।

 

বন্ধুগণ,

 

২২ মার্চ জনতা কার্ফু সফল করতে যে সমস্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে আমি আরও একটি বিষয় সংযোজন করতে চাই।বিগত দু মাস ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে হাসপাতাল,বিমান বন্দর,সংবাদমাধ্যম, যানবাহন পরিষেবা,সরকারি কাজ,হোম ডেলিভারি এবং পুলিশ প্রশাসনের কাজে সাহায্য করে চলেছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সমস্ত কাজের কোনটাই সাধারণ বলে বিবেচিত হবার নয়। যদিও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই, তবুও তাঁরা দিনরাত এক করে কাজ করে চলেছেন। দেশ তাদের  প্রতি কৃতজ্ঞ।

আমি চাই আগামি ২২ মার্চ, আমরা সকলে এদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আগামি রবিবার ঠিক বিকেল ৫ টায়, আমরা সকলে আমাদের বাড়ির দরজা বা বারান্দায় বা জানলায় দাঁড়িয়ে ৫ মিনিট তাদের সম্মান জানাই। এর সাথে আমরা করতালি দিয়ে, বাসন বাজিয়ে,ঘন্টা ধ্বনি দিয়ে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি। এর সাথে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ঠিক ৫টায় গোটা দেশ জুড়ে সাইরেন বাজাবার অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

বন্ধুগণ,

 

এই বিপর্যয়ের সময় হাসপাতালগুলির ওপরেও যে চাপ বাড়ছে, সেবিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এই সময় হাসপাতাল গুলিতে না যেতেই অনুরোধ করব। দরকার পড়লে ফোন করে স্থানীয় চিকিত্সকদের থেকে পরামর্শ নেবার অনুরোধ জানাচ্ছি। যেসব অস্ত্রোপচার  আপৎকালীন নয়, সেগুলিকে এক মাসের জন্য পিছিয়ে দেবার অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

বন্ধুগণ,

 

এই বিশ্ব মহামারী অর্থনীতিতেও ভীষণ ভাবে প্রভাব ফেলেছে।করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষিত্র সরকার, অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কভিড-১৯ অর্থনৈতিক রেসপন্স টাস্ক ফোর্স গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই টাস্ক ফোর্স সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এবং পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে । অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির সমাধানে সব রকম পদক্ষেপ যেন নেওয়া হয় সে দিকে নজর দেবে।

এই মহামারীর দরুন দেশের মধ্যবিত্ত,নিম্ন মধ্যবিত্ত,এবং দরিদ্র মানুষদের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ  হচ্ছে । আমি উচ্চবিত্ত এবং বাণিজ্য জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনদের অনুরোধ জানাব যে, যাঁরা তাদের পরিষেবা দিচ্ছেন তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করুন। আগামী কয়েকদিন হয়তো এই সকল মানুষরা কর্মক্ষেত্রে বা আপনাদের বাড়িতে আসতে পারবেন না। এই অবস্থায় তাদের প্রতি মানবিকতা প্রদর্শন করুন এবং তাদের বেতন ছাঁটাই করবেন না।

আমি সমস্ত দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি যে দুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস,ওষুধসহ অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের কমতি হবে না। আতঙ্কিত হয়ে এই সব জিনিসপত্র অতিরিক্ত মাত্রায় না কিনতে অনুরোধ করছি।

 

বন্ধুগণ,

 

গত দুমাসের বেশি সময় ধরে ১৩০ কোটি দেশবাসীর প্রত্যেকে, নিজের মত করে এই জাতীয় সঙ্কটের মোকাবিলা করেছেন।

আমার আপনাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে, ভবিষ্যতেও আপনারা এই একই ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। হ্যা, আমি মানছি যে এই সময় অনেক কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, অনেক গুজব ছড়াবে। অনেক সময় সহ নাগরিকদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা পূরণও হবে না।

কিন্তু এই সঙ্কট এতটাই গভীরে যে সব নাগরিককে এই সমস্যাগুলির মধ্যে আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে এগুলির মোকাবিলা করতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

করোনা ভাইরাসের থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সকলের সব ক্ষমতা একত্রিত করতে হবে। বিশ্বজোড়া এই মহামারী ঠেকাতে কেন্দ্র, রাজ্য, স্থানীয় প্রশাসন সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই গভীর সঙ্কটের থেকে উত্তরণে আপনাদের সকলের চেষ্টায় মানবতার জয় হবে,ভারত জয়ী হবে! দিন কয়েকের মধ্যেই নবরাত্রি উৎসব শুরু হবে। এই উৎসবে ‘শক্তি'র আরাধনা করা হয়। ভারত সেই পূর্ণ শক্তি, পূর্ণ উদ্যম নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আর আমার তাতে আপনাদের প্রতি শুভেচ্ছা রইল। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

 

CG/PM/CB



(Release ID: 1607269) Visitor Counter : 5508


Read this release in: English