স্বাস্থ্যওপরিবারকল্যাণমন্ত্রক

নোভেল করোনা ভাইরাস নিয়ে রাজ্যসভায় স্বতঃপ্রণোদিত বিবৃতি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধন

Posted On: 05 MAR 2020 10:27PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৫ মার্চ, ২০২০

 

 

রাজ্যসভায় আজ স্বতঃপ্রণোদিত বিবৃতিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধন জানালেন ২০১৯ – এর ৩১শে ডিসেম্বর চীনের নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে চীনের সব প্রদেশ ও ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই ভাইরাস সংক্রমণের অনেকগুলি ঘটনা সামনে এসেছে। ৪ মার্চ পর্যন্ত চীনে সংক্রমণের সংখ্যা ৮০ হাজার ২৭০। মৃত্যু হয়েছে ২৯৮১ জনের। যদিও চীনে সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা হ্রাসমান, তথাপি, হুবেই প্রদেশ ও উহান শহরে এখনও সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে। চীনের বাইরে হংকং, ম্যাকাও এবং তাইওয়ান সহ ৭৮টি দেশে ১২ হাজার ৮৫৭টি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। মৃতের সংখ্যা ২২০। ৩০টি দেশে স্থানীয়ভাবেই রোগ ছড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এই সংক্রমণকে উদ্বেগজনক আখ্যা দিয়ে এর ঝুঁকির মাত্রা সর্বোচ্চ ঘোষণা করেছে। যদিও ‘হু’ কোভিড ১৯-কে মহামারী বলে ঘোষণা করেনি কিন্তু সব দেশকেই সতর্ক থাকতে বলেছে। তবে ‘হু’ – এর পরামর্শ দেওয়ার আগেই ১৭ জানুয়ারি থেকে ভারত প্রয়োজনীয়তা সতর্কতা অবলম্বন করেছে এবং সেইমতো কাজ করছে।

এদেশে ৪ মার্চ পর্যন্ত ২৯টি সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে কেরলে আগেই তিনটি সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। ওই তিনজনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং তাঁদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত তিন দিনে দেশে আগত যাত্রীদের মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন দিল্লির, যিনি ইতালিতে গিয়েছিলেন, একজন তেলেঙ্গানার, যিনি দুবাইতে গিয়েছিলেন এবং সিঙ্গাপুর থেকে আগত এক ব্যক্তি সংস্পর্শে আসেন। ওই দু’জনেরই অবস্থা স্থিতিশীল। উত্তর প্রদেশের আগ্রায় ৬ জনের মধ্যে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। রাজস্থানে একজন ইতালীয় পর্যটক ও তাঁর স্ত্রীর শরীরে এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই দলে অন্য ১৪ জন পর্যটক এবং তাঁদের ভারতীয় বাস চালক দিল্লিতে ফেরার পর দেখা যায় তাঁদের ক্ষেত্রেও সংক্রমণ ঘটেছে। বর্তমানে তাঁদের সকলেরই অবস্থা স্থিতিশীল। গতকাল দিল্লিতে একজনের মধ্যে সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে, যিনি সম্প্রতি ইতালিতে গিয়েছিলেন। তাঁর অবস্থাও স্থিতিশীল।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তুতি ও মোকাবিলায় বিষয়টি নিয়মিত খতিয়ে দেখছেন। ভারত সরকার এই রোগ প্রতিরোধে এবং এই রোগ যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে। আমিও পরিস্থিতির প্রতিদিন পর্যালোচনা করছি। আমার পৌরোহিত্যে বিদেশ মন্ত্রী, অসামরিক পরিবহণ মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, জাহাজ প্রতিমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে একটি মন্ত্রীগোষ্ঠী গঠন করা হয়েছে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য। ২০২০’র ৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রীগোষ্ঠী গঠনের পর চারবার বৈঠক হয়েছে। ক্যাবিনেট সচিব নিয়মিত সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রকের সঙ্গে মিলে পর্যালোচনা করছেন। আমার নিজের মন্ত্রকও পরিস্থিতির দিকে নিয়মিত নজর রাখছে। একদিন অন্তর রাজ্যগুলির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সও করা হচ্ছে। নোভেল করোনা ভাইরাস ভারতে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করতে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথম ভ্রমণ নির্দেশিকাটি প্রচারিত হয় ১৭ জানুয়ারি। পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিয়মিত এটি পাল্টানো হচ্ছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পৌঁছনো মাত্রই ভিসা এবং ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়াজাপানের নাগরিকদের জন্য সবরকমের ভিসা অবিলম্বে বাতিল করা হয়েছে। আগেই চীন প্রজাতন্ত্রের নাগরিকদের ভিসা ও ই-ভিসা বাতিল করা হয়েছিল, যা এখনও বলবৎ আছে। যে সমস্ত বিদেশি নাগরিক চীন, ইরান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানে পয়লা ফেব্রুয়ারি ও তারপর ভ্রমণ করেছেন, তাঁদেরও ভিসা ও ই-ভিসা বাতিল করা হয়েছে। শুধুমাত্র ওইসব দেশের কূটনীতিক, রাষ্ট্রসঙ্ঘ বা আন্তর্জাতিক সংস্থার আধিকারিক ওসিআই কার্ড যাঁদের আছে এবং বিমান কর্মীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে, ভারতে প্রবেশের সময় তাঁদের স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক। আন্তর্জাতিক উড়ানে যেসব যাত্রী ভারতে আসবেন, তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য ও ভ্রমণের ইতিহাস দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকদের চীন, ইরান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, ইতালি ও জাপান ভ্রমণে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোভিড ১৯ – এ আক্রান্ত অন্য দেশগুলিতে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

১৮ জানুয়ারি থেকে যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ এবং কোচিতে এই ব্যবস্থা করা হয়। পরে, সব মিলিয়ে ২১টি বিমানবন্দরে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথমেই চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইরান, ইতালী, হংকং, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, তাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর থেকে সরাসরি আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং – এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গতকাল থেকে আন্তর্জাতিক সব উড়ানের সব যাত্রীকেই স্ক্রিনিং- এর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৪ মার্চ পর্যন্ত ৬ হাজার ২৪১টি উড়ানের ৬ লক্ষ ১১ হাজার ১৬৭ জন যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এর জন্য সবকটি বিমানবন্দরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও, ১২টি বড় সমুদ্র বন্দর এবং ৬৫টি ছোট বন্দরে চীন থেকে আগত যাত্রী এবং জাহাজ কর্মীদের চিহ্নিত করে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা গেলে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪ মার্চ পর্যন্ত সবকটি বন্দরে ১৬ হাজার ৭৬ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।

উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, বিহার এবং সীমাসশস্ত্র বল ও ভূমি বন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সীমান্তবর্তী এলাকার চেকপোস্টগুলিতে স্ক্রিনিং শুরু হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে মানুষকে সচেতন ও সতর্ক করার জন্য গ্রামসভার আয়োজন করা হয়েছে। ৮টি কেন্দ্রীয় দল সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে ঘুরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছে। ৩ হাজার ৮২৩টি গ্রামসভার আয়োজন করা হয়েছে। সীমান্ত চেক পোস্টে ১১ লক্ষ ২০ হাজার ৫২৯ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।

 

৩১ জানুয়ারি ও পয়লা ফেব্রুয়ারি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দিল্লি ও উহানের মধ্যে চলাচল করে। ফিরিয়ে আনে ৬৫৪ জন যাত্রীকে, যার মধ্যে ৬৪৭ জন ভারতীয় নাগরিক এবং ৭ জন মালদ্বীপের। মানেসরের সেনা কোয়ারানটাইন সেন্টার এবং চাওলার আইটিবিপি শিবিরে উদ্ধার করা যাত্রীদের রাখা হয়। ১৪ দিন পর তাঁদের সকলকেই পরীক্ষা করা হয়। তাঁদের শরীরে সংক্রমণ না মেলায় ১৮ ফেব্রুয়ারি তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া, ভারতীয় বিমান বাহিনী গত ২৬ ফেব্রুয়ারি উহান থেকে ১১২ জনকে উদ্ধার করে। এর মধ্যে ৭৬ জন ভারতীয়, বাকিরা মায়ানমার, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মাদাগাস্কারের নাগরিক।

চীনের অন্যান্য অঞ্চলে ভারতীয়দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার জন্য ভারতীয় দূতাবাস এবং বাণিজ্য দূতাবাসগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া আরও একবার সফলভাবে উদ্ধারকার্য চালায়। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে জাপানে ইয়োকোহামা বন্দরে কোভিড ১৯ আক্রান্ত ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজ থেকে ৫ জন বিদেশি নাগরিক এবং ১১৯ জন ভারতীয়কে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তাঁরা বর্তমানে ১৪ দিনের জন্য মানেসরে সেনাশিবিরে আছেন। গোটা দেশেই নজর রাখা হচ্ছে কোভিড ১৯ আক্রান্ত দেশগুলি থেকে আসা যাত্রীদের ওপর। ৪ মার্চ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৫২৯ জনকে সামাজিক নজরদারিতে রেখে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রতিদিন তাঁদের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসকরা। গোটা দেশেই হাসপাতালগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্রের পাশাপাশি, রাজ্যগুলিও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম এবং এন-৯৫ মাস্ক যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রেখেছে। পুণের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভিরোলজি কোভিড ১৯ – এর সংক্রমণের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল কেন্দ্র। এছাড়াও, ১৫টি গবেষণাগারে আধুনিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও ১৯টি গবেষণাগারকে প্রস্তুত করা হয়েছে নমুনা পরীক্ষার জন্য। এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হবে। একটি ২৪X৭ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, যার ফোন নম্বর 011 2397 8046। এ পর্যন্ত ৯ হাজার ২০০-রও বেশি কল এসেছে, যার মধ্যে ৬৬৭টি আন্তর্জাতিক কল।

ভারত সরকার নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। উদ্বেগের বিষয় ইরানের তেহরান ও কোয়ামে আটকে থাকা ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য। তাঁদের চিকিৎসা ও ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ইরান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভারত সরকার যোগাযোগ রেখে চলেছে। স্থানীয়ভাবেও যাতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেদিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যগুলিকে করণীয় কার্যপরিকল্পনা জানানো হয়েছে। ৬ মার্চ সব রাজ্য ও হাসপাতালগুলির জন্য একটি জাতীয় স্তরে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এটি পরে প্রসারিত হবে জেলাস্তরে। মন্ত্রকের বরিষ্ঠ আধিকারিকদের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে পাঠানো হয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে। তাঁরাই প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। জেলাশাসকরা নোডাল অফিসার হিসাবে স্থানীয় স্তরে কাজ করবেন।

 

 

SDG/AP/SB



(Release ID: 1605480) Visitor Counter : 164


Read this release in: English