প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

নতুন দিল্লিতে প্রথম আন্তর্জাতিক বিচার বিষয়ক সম্মেলন ২০২০ উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 24 FEB 2020 7:40PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

 

 

ভারতের প্রধান বিচারপতি জাস্টিস বোবড়ে, আইন মন্ত্রী শ্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, মঞ্চে উপস্থিত সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিগণ, ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল, এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত অন্যান্য উচ্চ আদালতের বিচারপতিগণ, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টগুলির সম্মানিত বিচারপতিগণ, অতিথিগণ, ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ!!

 

বিশ্বের কোটি কোটি নাগরিকের জীবনে ন্যায়ের গরিমা সুনিশ্চিত করেন আপনারা। এমন দিগ্‌গজ ব্যক্তিত্বদের মাঝে আসা একটি অত্যন্ত সুখকর অভিজ্ঞতা।

 

ন্যায়ের যে আসনে আপনারা বসেন, তা সামাজিক জীবনে ভরসা এবং বিশ্বাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন।

 

বন্ধুগণ,

 

এই সম্মেলন একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের গোড়ার দিকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই দশক ভারত সহ গোটা বিশ্বে অনেক সম্ভাব্য বড় পরিবর্তনের দশক। এই পরিবর্তন সামাজিক, আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত প্রতিটি ক্ষেত্রেই হবে।

 

এই পরিবর্তন যেন যুক্তি ও ন্যায়সঙ্গত হয়, এই পরিবর্তন যেন সকলের হিতে হয়, ভবিষ্যতের প্রয়োজন পূরণের স্বার্থে হয়, সেজন্য বিচার বিভাগ এবং পরিবর্তিত বিশ্ব নিয়ে গভীর আলাপ-আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

বন্ধুগণ,

 

এটা ভারতের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন এমন কালখন্ডে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন আমাদের দেশ রাষ্ট্রপিতা মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মজয়ন্তী পালন করছে।

 

পূজনীয় বাপুর জীবন সত্য ও সেবার প্রতি সমর্পিত ছিল, যা যে কোনও বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি বলে মানা হয়।

আমাদের বাপুজী নিজেও তো উকিল ছিলেন, ব্যারিস্টার ছিলেন। তাঁর জীবনে প্রথম মামলা লড়ার অভিজ্ঞতার কথা তিনি বিস্তারিতভাবে নিজের আত্মকথায় লিখে গেছেন।

 

গান্ধীজী তখন বোম্বাই বা আজকের মুম্বাইয়ে থাকতেন। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তখন লড়াই চলছে। কোনোভাবে প্রথম যে মামলাটি পেলেন, তাতে তাঁকে বলা হয়েছিল যে, তাঁকে এর পরিবর্তে আরেকজনকে কমিশন দিতে হবে। গান্ধীজী স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিলেন, মামলা পাই বা না পাই, কমিশন দেবো না।

 

সত্যের প্রতি, নিজের ভাবনার প্রতি গান্ধীজীর মন এতই স্পষ্ট ছিল। আর এই স্পষ্টতা কোথা থেকে এসেছে?

 

তাঁর লালন-পালন, পারিবারিক শিষ্টাচার এবং ভারতীয় দর্শনের নিরন্তর অধ্যয়ন থেকে।

 

বন্ধুগণ,

 

ভারতীয় সমাজে আইনের শাসন সামাজিক শিষ্টাচারের ভিত্তিতে রচিত হয়েছে।

 

আমাদের দেশে বলা হয়, ‘ক্ষত্রয়েস্য ক্ষত্রম্‌ য়ত ধর্মঃ’ অর্থাৎ, আইন-ই হ’ল ‘রাজার রাজা’, আইন-ই হ’ল ‘সর্বোচ্চ’।

 

হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের দেশে এই ভাবনা চালু থাকার কারণ হ’ল – প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে বিচার ব্যবস্থার প্রতি অগাধ আস্থা।

 

বন্ধুগণ,

 

সম্প্রতি এমন কিছু বড় সিদ্ধান্ত আমরা দেখেছি, যা নিয়ে গোটা বিশ্বে আলাপ-আলোচনার ঝড় উঠেছে। সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে থেকেই অনেক ধরনের আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছিল। কিন্তু কী হ’ল? ১৩০ কোটি ভারতবাসী বিচারপতিদের সিদ্ধান্তকে পূর্ণ সহমতের সঙ্গে স্বীকার করে নিয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে ভারত ন্যায়ের প্রতি আস্থার এই মূল্যবোধ নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই মূল্যবোধ আমাদের সংবিধানকেও প্রেরণা যুগিয়েছে। গত বছর আমাদের সংবিধানেরও ৭০ বছর পূর্ণ হ’ল।

 

সংবিধান রচয়িতা ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর বলেছিলেন, “সংবিধান নিছকই একটি আইনজ্ঞের দস্তাবেজ নয়, এটি একটি জীবনের বাহন। আর এর আত্মা হ’ল সর্বদাই সময়ের আত্মা”। এই ভাবনাকে আমাদের দেশের আদালতগুলি, আমাদের সুপ্রিম কোর্ট এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই আত্মা আমাদের আইনসভা এবং প্রশাসনকে প্রাণবন্ত রেখেছে।

 

পরস্পরের মর্যাদাকে বুঝে, সম্মান জানিয়ে অনেক সমস্যা মোকাবিলার সময় দেশের জন্য সংবিধানের এই তিনটি স্তম্ভই সঠিক পথ খুঁজেছে।

 

আজ আমরা গর্ব করে বলতে পারি, এভাবে ভারতে একটি সমৃদ্ধ পরম্পরা বিকশিত হয়েছে। বিগত পাঁচ বছরে ভারতের ভিন্ন ভিন্ন সংস্থা এই পরম্পরাকে আরও শক্তিশালী করেছে। দেশে এমন প্রায় ১ হাজার ৫০০টি পুরনো আইন বাতিল করা হয়েছে, আজকের সময়ে যেগুলির প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছিল। আর এমন নয় যে, এই আইনগুলি বাতিলের ক্ষেত্রে কোনও তাড়াহুড়ো করা হয়েছে।

 

তেমনই, অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে সমাজকে শক্তিশালী করে তোলা বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

 

রূপান্তরকামীদের অধিকার সংশ্লিষ্ট আইন, তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন কিংবা দিব্যাঙ্গদের অধিকারের পরিধি বৃদ্ধিকারী আইন প্রণয়নে সরকার অত্যন্ত সংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এই সম্মেলনে একটি বিষয় রাখা হয়েছে - ‘লিঙ্গ বৈষম্য মুক্ত বিশ্ব’।

 

বিশ্বের যে কোনও দেশ, যে কোনও সমাজ লিঙ্গ বৈষম্য মুক্ত না হলে পূর্ণ বিকশিত হতে পারে না, ন্যায়প্রিয়তার দাবিও রাখতে পারে না। আমাদের সংবিধানে ‘সমতার অধিকার’ – এর মাধ্যমেই লিঙ্গ বৈষম্য থেকে মুক্তি সুনিশ্চিত করা হয়েছে।

 

ভারত বিশ্বের সেই বিরল দেশগুলির একটি, যেখানে স্বাধীনতার সময় থেকেই মহিলাদের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। আজ ৭০ বছর পর নির্বাচনে মহিলাদের অংশগ্রহণ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে।

 

এখন একবিংশ শতাব্দীর ভারত, এই অংশগ্রহণে অন্যান্য মাত্রাগুলিতেও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

 

‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ – এর মতো সফল অভিযানের ফলে প্রথমবার ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মেয়েদের নিবন্ধীকরণ ছেলেদের তুলনায় বেশি।

 

এভাবে সামরিক বিভাগে মহিলাদের নিযুক্তি, ফাইটার পাইলট নির্বাচন প্রক্রিয়্‌ খনির গভীরে রাতে কাজ করার স্বাধীনতা এরকম অনেক পরিবর্তন সরকার এনেছে।

 

আজ ভারত বিশ্বের বিরল দেশগুলির অন্যতম, যেখানে পেশাদার মহিলাদের ২৬ সপ্তাহের সবেতন ছুটি দেওয়া হয়।

 

বন্ধুগণ,

 

এই পরিবর্তনের আবহে ভারত নতুন নতুন উচ্চতা স্পর্শ করার পাশাপাশি, নতুন নতুন পরিভাষা গড়ে তুলছে, আর পুরনো ভাবনাচিন্তায় পরিবর্তন আনছে।

 

একটা সময় ছিল, যখন বলা হ’ত, দ্রুতগতিতে উন্নয়ন আর পরিবেশ রক্ষা একসঙ্গে সম্ভব নয়। ভারত এই দৃষ্টিভঙ্গীও বদলে দিয়েছে। আজ ভারত যেভাবে দ্রুতগতিতে উন্নয়নের পথে হাঁটছে, তেমনই আমাদের অরণ্যের পরিধিও দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে। ৫-৬ বছর আগে ভারত বিশ্বের একাদশ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ছিল। ৩-৪ দিন আগে যে রিপোর্ট এসেছে, সেই অনুসারে ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

 

অর্থাৎ, ভারত এটা করে দেখিয়েছে যে, পরিকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি, পরিবেশও সুরক্ষিত রাখা যায়।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ এই উপলক্ষে ভারতের বিচার ব্যবস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। যাঁরা উন্নয়ন এবং পরিবেশের ভারসাম্যকে ঐকান্তিকভাবে বুঝেছে, এক্ষেত্রে নিরন্তর পথ দেখিয়েছে।

 

অনেক জনস্বার্থ মামলা বিচারের সময় সুপ্রিমকোর্টও পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিভাষিত করেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আপনাদের সামনে সর্বদাই বিচারের পাশাপাশি, দ্রুত বিচারের সমস্যাও রয়েছে। এর অনেকটা সমাধান প্রযুক্তি করতে পারে।

 

বিশেষ করে, আদালতে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট-ভিত্তিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারতের বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত লাভবান হবে।

 

সরকারও দেশের প্রত্যেক আদালতকে ই-কোর্ট ইন্টিগ্রেটেড মিশন মোড প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছে। ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিড চালু করার পর আদালতের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সহজ হবে।

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মানুষের বিবেকের সমাহারে ভারতের বিচার ব্যবস্থা আরও দ্রুত গতিসম্পন্ন হবে। ভারতের আদালতগুলি এই বিষয়ে গভীর ভাবনাচিন্তা করে দেখতে পারে যে, কোন কোন ক্ষেত্রে কোন স্তর পর্যন্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেওয়া যায়।

 

এছাড়া, পরিবর্তিত সময়ের নানা সাইবার অপরাধ থেকে তথ্য সংরক্ষণ সুনিশ্চিত করার বিষয় আদালতগুলির সামনে নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি করছে। এই সমস্যাগুলিকে মাথায় রেখে এই সম্মেলনে এমন অনেক বিষয় নিয়ে নিবিড় আলাপ-আলোচনা হবে এবং কিছু ইতিবাচক পরামর্শ উঠে আসবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই সম্মেলন থেকে ভবিষ্যতের জন্য অনেক উন্নত সমাধানের পথ খুলবে।

আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য সমাপ্ত করছি!!

 

ধন্যবাদ!!!

 

 

CG/SB/SB



(Release ID: 1604244) Visitor Counter : 192


Read this release in: English